এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • প্রসঙ্গ কোভিড ও ভ্যাকসিন : মাননীয় ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক, আপনাকে বলছি স্যার

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ জানুয়ারি ২০২২ | ১৪৩৬৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৬ (৭ জন)
  • আন্তর্জালে ভুয়ো খবর আর ভুলভাল হাস্যকর অবান্তর কথাবার্তার প্রবাহ নিরন্তরই চলে, চলতেই থাকে। তার বেশিরভাগই চোখে পড়েনা, এবং যা চোখে পড়ে তারও প্রায় সবটাই নীরবে উপেক্ষা করা ছাড়া গত্যন্তর থাকেনা। কারণ, প্রথমত, যেসব বিচিত্র ব্যাপার নিয়ে কথা হয় তার সব কিছু বিস্তারিত ভাবে জানা থাকেনা, আর জানা থাকলেও তার পেছনে পড়ে থাকতে গেলে নাওয়া খাওয়া ভুলতে হয়। কিন্তু, মাঝে মাঝে সত্যিই কিছু না বলে আর পারা যায়না, এবং এখন বোধহয় সেই মুহূর্ত আবার এসেছে। গত বছরখানেক যাবৎ কোভিড আর তার ভ্যাকসিন নিয়ে ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের নির্বোধ ও কুৎসিত শোরগোলে কান পাতাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    সত্যি, এ আর বাস্তবিকই নেওয়া যাচ্ছে না!

    ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব অবশ্য, বলা বাহুল্য, একটা নয়, অনেক। এবং, শুধু অনেক নয়, অনেক ধরনের। যেমন ধরুন, (১) চিন পরিকল্পনা করে সারা পৃথিবীতে মহামারি ছড়াচ্ছে (আর আমেরিকা ইউরোপ বসে বসে চুপচাপ বুড়ো আঙুল চুষছে --- চমৎকার, তাই না?)। (২) চিন আর আমেরিকা দু পক্ষ মিলে ইচ্ছে করে মহামারি ছড়াচ্ছে (এবং ইউরোপ আর রাশিয়াকে খেলায় না নিয়ে দুধুভাতু করে রেখেছে, আর তেনারাও সাইডলাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে চুপচাপ খেলা দেকচেন, অভিমানে কতাবাত্রা বোলচেন্নাকো)। (৩) করোনা ভাইরাস হচ্ছে উহানের ল্যাবরেটরিতে তৈরি জৈব অস্ত্র, গণহত্যার উদ্দেশ্যে বানানো (এ বাবা, ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় তবে এ ভাইরাসের ‘আরএনএ’–তে কাটাছেঁড়ার দাগ পাওয়া গেল না কেন?)। (৪) এ সবই হচ্ছে বিল গেটস সায়েবের কুকীর্তি, তিনি তিন বছর আগেই এক সেমিনারে মহামারির ঘোষণা করে রেখেছিলেন (পৃথিবীব্যাপী ষড়যন্ত্রের প্ল্যান আগেভাগেই সেমিনারে ঘোষণা করে দিচ্ছেন --- বেচারা --- ঘটে ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের মতন তীক্ষ্ণবুদ্ধির সাপ্লাই না থাকলে কেমন দুর্দশা হতে পারে, দেকেচেন্তো?)।

    তবে, ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের যে সংস্করণগুলো সোশাল মিডিয়ায় বাঙালি পোগোতিসিলদের মার্কেটে সবচেয়ে বেশি চলছে সেগুলো এইরকম। (১) এ হল এক ‘পুঁজিবাদী চক্রান্ত’, অর্থাৎ, বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো নাকি বড়বড় পুঁজিপতি, উচ্চপদাসীন বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে অতিমারির ভয় দেখিয়ে লকডাউন করে গরিবের রুটিরুজি কেড়ে নিচ্ছে, যাতে করে ধনীদেরকে আরও ধনী করে তোলা যায় (কিন্তু, গরিবরা কাজকর্ম না করলে ধনীর মুনাফা হবেটা কীভাবে?)। (২) এ হল ‘বিগফার্মা’-র তরফে মহামারির ভুয়ো আতঙ্ক ছড়িয়ে ভ্যাকসিন বেচার ষড়যন্ত্র (কিন্তু, যাদের সে স্বার্থ নেই, তারা লকডাউনের বেয়াদবি সহ্য করবে কেন?)। (৩) প্রাণঘাতী ভ্যাকসিন দিয়ে দিয়ে বদমাইস কোম্পানিগুলো মানুষকে মেরে ফেলতে চাইছে (তা, পিত্থিমি শ্মশান হয়ে গেলে খাবে কী বাওয়া?)। (৪) এ রোগটি যে খালি সম্পন্ন শহুরেদের হচ্ছে, এবং শহুরে শ্রমজীবী বস্তিবাসী আর গ্রামের কৃষকদের হচ্ছেনা, তাতেই প্রমাণ, এ আসলে পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো এক ভুয়ো আতঙ্ক মাত্র (তা, শহুরে রোগাক্রান্তরা তবে সাধ করে হাসপাতাল-ভ্রমণে যাচ্ছেন বুঝি?)। (৫) কোভিডের যেসব ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে সেগুলো কোনও কাজের নয়, কারণ, ইজরায়েলে টীকাকরণ অতিদ্রুত সম্পূর্ণ করার পরেও কোনও কাজ হয়নি (তথ্যটি সঠিক, নিশ্চিত তো?)। (৬) লকডাউন অর্থহীন, কারণ, সুইডেন তা না করেই বিন্দাস আছে (আবারও প্রশ্ন, তথ্যটি সঠিক, নিশ্চিত তো?)।

    এমন আরও আছে, যেমন আইটি আর ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি-র ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব। তবে, ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের সম্ভাব্য সমস্ত দিক নিয়ে সবিস্তার গবেষণামূলক লেখা ও সবকটি ভুয়ো-তত্ত্বের নিষ্পত্তিমূলক খণ্ডন পেশ করাটা এখানে আমার উদ্দেশ্য নয়। বরং, ওপরের দ্বিতীয়োক্ত ষড়যন্ত্র-তত্ত্বগুচ্ছ (১-৬) নিয়ে দু-এক কথা বললেই গুজবের বহরটা খানিক অন্তত বোঝা যাবে, তাই আপাতত সেটুকুই একে একে হোক।

    (১) লকডাউন করে কর্মস্থল আর গণপরিবহন বন্ধ করে দিলে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের যে অসীম দুর্দশা হয়, সে তো আর ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু, জোরজার করে এইটা চাপিয়ে দিলেই যে ধনীরা আরও ধনী হবে, এ দাবির অর্থ কী? দরিদ্র লোককে স্রেফ না খেয়ে বসিয়ে রেখে রেখে তো আর ধনীরা ধনী হয়না, ধনীরা ধনী হয় তাদেরকে খাটিয়ে, তাদের শ্রমজাত মুনাফা সংগ্রহ করে। কাজেই, গায়ের জোরে আইন জারি করে তাদেরকে ঘরে বসিয়ে রেখে পুঁজিবাদের কোনও লাভ নেই, ওভাবে লাভ হলে তো ধনী ও ক্ষমতাবানেরা সব সময়েই সে চেষ্টা করত, তার জন্য অতিমারির দরকার হত না। এত দিন যে কলকারখানা স্কুল কলেজ গণপরিবহন খোলা ছিল, সে তো আর সমাজতন্ত্রের জন্য নয়, পুঁজিবাদের স্বার্থেই। সরকারি ভরতুকি দেওয়া সস্তার লোকাল ট্রেনে চড়ে মফস্বলের শ্রমিকটি যে সাতসকালে কলকাতা এসে পৌঁছতেন হন্তদন্ত হয়ে, সেটা নিশ্চয়ই ‘ক্ষমতা অনুযায়ী সমাজকে দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী নেবার’ জন্য নয়, বরং এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যেই সারাদিন নিজেকে নিংড়ে দিয়ে পরিবার পালনের জন্য দিনান্তে (বা মাসান্তে) যৎসামান্য রসদ সংগ্রহের জন্য। সেটা বন্ধ হলে শ্রমিকের বিপদ তো বটেই, কিন্তু মালিকের লাভটা কী? অবশ্য, যদি বলেন, সঙ্কটের মুহূর্তে দরিদ্র শ্রমজীবীর প্রতি এই নিষ্ঠুর অবহেলাটাও পুঁজিবাদেরই অঙ্গ, তাতে আমার খুব বেশি আপত্তি নেই। কিন্তু, ওইভাবে এবং ওই অর্থে যদি পুঁজিবাদকে দায়ী করতে চান, তো অভিযোগের বর্শামুখটা ষড়যন্ত্রের দিক থেকে সরকারি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অসংবেদনশীলতার দিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে, আর তার জন্য প্রথমেই বিসর্জন দিতে হবে জলজ্যান্ত অতিমারিকে অস্বীকার করবার নির্বোধ সুখটিকে।

    এবং, লকডাউনের উল্টোপিঠটাও এখানে দেখতে হয়। এতে যে শুধু প্রচুর মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তাইই নয়, বেশ কিছু মানুষ আবার বাড়ি বসে বসে দিনের পর দিন বেতনও পেয়েছেন, সংখ্যায় অনেক অল্প হলেও। এই ঘটনাটিকে আবার বৃহৎ পুঁজির সঙ্গে মধ্যবিত্তের একাত্মতার প্রমাণ হিসেবে কেউ কেউ পেশ করতে চান, কিন্তু আসলে তারও কোনও মানে হয়না। পুঁজিবাদ খামোখা কারুকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে চাইবে কেন? লকডাউনের ফলে সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেলে, প্রচুর লোককে বসিয়ে মাইনে দিতে হলে, প্রচুর লোক মারা গেলে বা হাসপাতালে গেলে বা অসুস্থ অক্ষম হয়ে বাড়ি বসে রইলে পুঁজিবাদের মোটেই কোনও লাভ নেই, বরং চূড়ান্ত ক্ষতি। এসব করে পুঁজিবাদ নিজেই নিজের সর্বনাশ করবে কেন? যাঁরা এসব বলছেন তাঁরা কোভিড অতিমারি কতটা বোঝেন তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, পুঁজিবাদ কী বস্তু সেটা যে মোটেই বোঝেন না, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

    (২) এবার আসুন বিগফার্মার ষড়যন্ত্রের গল্পে। ভ্যাকসিন বানাবার কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র ভ্যাকসিন বেচার স্বার্থে অতিমারির ভুয়ো আতঙ্ক ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীকুল এবং প্রত্যেকটি দেশের সরকারকে হাত করে, গোটা পৃথিবী জুড়ে লকডাউন ঘটিয়ে দিচ্ছে --- এ অভিযোগ যে কতটা উদ্ভট অবাস্তব হাস্যকর হতে পারে, সে ব্যাপারে আপনার কোনও ধারণা আছে কি? না, পৃথিবী জুড়ে এতগুলো লোককে এইভাবে একসাথে সম্পূর্ণ বশংবদ বানিয়ে এতবড় চক্রান্ত আদৌ কার্যকর করা যায় কিনা সে প্রশ্নে আমি যাচ্ছিই না (সেটা অতি সঙ্গত প্রশ্ন ছিল যদিও), আমি শুধু এর অর্থনৈতিক অবাস্তবতার কথাটা বলতে চাইছি। ভাল করে ভেবে দেখুন।

    প্যান্ডেমিক-এ গোটা পৃথিবীর জিডিপি কমেছে মহাজাগতিক অঙ্কে --- ৫ ট্রিলিয়ন ডলার! সেখানে, ভ্যাকসিন-নির্মাতা ফার্মা কোম্পানিগুলোর মুনাফা সব মিলিয়ে বেড়েছে পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, দাবিটা এই রকম দাঁড়াচ্ছে যে, কেউ বা কাহারা ষড়যন্ত্র করে গোটা অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার হারাতে বাধ্য করেছিল, শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ব্যবসায়িক উদ্যোগের মুনাফা মাত্র পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার বাড়তে দেবে বলে! পুঁজিবাদের হত্তাকত্তাদের মাথা খারাপ হয়েছে বলে মনে হয় বুঝি আপনার?

    এখন গোটা পৃথিবীর জিডিপি ধরুন ৮৫ ট্রিলিয়ন ডলার মত, আর তার মধ্যে ফার্মা-দের ভাগ হল ৫০০ বিলিয়ন, মানে আধ শতাংশের একটু বেশি। আর, এদের মধ্যে যারা কোভিড ভ্যাকসিন বানিয়ে সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে তাদের মোট মুনাফা ৫০ বিলিয়ন, মানে তারও দশ শতাংশ। অর্থাৎ, ভ্যাকসিন ব্যবসার মুনাফা হচ্ছে গোটা পৃথিবীর অর্থনীতির .০৫ শতাংশ। তো এই ক্ষমতা নিয়ে ভ্যাকসিন নির্মাতা কোম্পানিগুলো নাকি গোটা পৃথিবীর অর্থনীতিকে স্তব্ধ করে দেবে, আর অর্থনীতির বাকি ৯৯.৯৫ শতাংশের দাবিদাররা তাতে বাধা না দিয়ে তা বসে বসে দেখবে আর বুড়ো আঙুল চুষবে --- ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের আবদারটা এইরকম! এই সঙ্কটের মুহূর্তে এইসব অবান্তর উদ্ভট কথাবার্তা নিয়ে চ্যাঁচামেচি করাটা যে একটা ভয়ঙ্কর দায়িত্বজ্ঞানহীন বোকামো হচ্ছে, তাতে কোনও সংশয় থাকতে পারে কি?

    (৩) এও শোনা যাচ্ছে, প্রাণঘাতী ভ্যাকসিন দিয়ে দিয়ে বদমাইস কোম্পানিগুলো নাকি মানুষকে মেরে ফেলতে চাইছে। মানে, শিব্রামের সন্দেশের ব্যবসার প্ল্যান আর কি! তাঁর এক অসামান্য গল্পে শিব্রাম চেয়েছিলেন, তিনি রোজ প্রচুর সন্দেশ বানিয়ে নিজেই কিনে খেয়ে নেবেন, এবং বিক্রির মুনাফা দিয়ে রোজই আরও আরও সন্দেশ বানিয়েই চলবেন। তাতে করে নিয়মিত সন্দেশও খাওয়া হবে, আর ব্যবসারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের বক্তব্য মোতাবেক, এখানে ফার্মা-দের পরিকল্পনাও সম্ভবত সেটাই --- করোনা আর ভ্যাকসিন দিয়ে সব লোকজনকে মেরে দিয়ে পৃথিবীটাকে এট্টু ঠাণ্ডা করে নিয়ে তারপর শান্তিতে মনে সুখে ওষুধপত্তর বানাবেন, আর নিজেদের বানানো ওষুধ নিজেরাই কিনে খেয়ে খেয়ে মুনাফার পাহাড় গড়বেন! ওষুধ খেয়ে শরীলটাও ঠাণ্ডা থাকবে, আর ব্যবসাটাও জমবে!

    (৪) কেউ কেউ এ যুক্তিও দিচ্ছেন যে, এই যে এ দেশে শুধু শহুরে সম্পন্নরা কোভিডের কবলে পড়ছেন, এবং দরিদ্র শহুরে শ্রমজীবী ও গ্রামীণ কৃষকেরা অনাক্রান্ত থাকছেন, এইটাই নাকি অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, কোভিড অতিমারি এক বানানো গল্প (আর, বানানো অতিমারির ভ্যাকসিনও যে বানানো গল্প হবে, তাতে আর আশ্চর্য কী!)। কিন্তু, যাঁরা এসব বলছেন তাঁরা আরেকটু ভাল করে খোঁজ নিলে জানতে পারতেন, সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে অতিমারি শহরাঞ্চলে আবদ্ধ থাকলেও, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউয়ে তা আর শহরে আবদ্ধ থাকেনি আদৌ। গ্রামে তা ঠিক কতটা ছড়িয়েছে, সেটা পুরোপুরি বোঝা যায়নি যদিও, নির্ভরযোগ্য সরকারি তথ্যের অভাবে। বস্তুত, অতিমারির দুই বছরে (২০২০ ও ২০২১) দেশে মোট মৃত্যু কত হয়েছে, আর কোভিডে মৃত্যুই বা ঠিক কত, সে ব্যাপারে সরকারি তথ্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। কোভিডে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে তথ্য রোজই গণমাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো সবই প্রতিষ্ঠিত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরি থেকে পাওয়া। কিন্তু গ্রামে প্রচুর রোগি এসব ব্যবস্থার আওতার বাইরে, এবং তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন ও মারা যাচ্ছেন অপরীক্ষিত ও অচিকিৎসিত অবস্থায়, যা সরকারি ব্যবস্থায় আদৌ নথিভুক্ত হচ্ছে না, এবং তা সরকারি তথ্যেও প্রতিফলিত হচ্ছেনা। এখন পাঠক অবশ্যই জানতে চাইবেন, জানা যদি না-ই যায়, তো আমরাই বা তবে জানলাম কীভাবে? হ্যাঁ, এ নিয়ে নির্ভরযোগ্য গবেষণা ও বিশ্লেষণ হয়েছে। অতি সম্প্রতি এক প্রামাণ্য গবেষণাপত্রে তিনটি স্বতন্ত্র উৎস থেকে পাওয়া পরোক্ষ তথ্যগুচ্ছ ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে, আসলে এই দুই অতিমারিময় বছরে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি তথ্যে প্রকাশিত সংখ্যার ছয় থেকে সাত গুণ পর্যন্ত হতে পারে! অবিশ্বাস্য লাগছে, তাই না? কিন্তু, মৃত্যুর কারণ হিসেবে 'ডেঙ্গু' লেখার জন্য সরকারি চিকিৎসক অরুণাচল দত্ত চৌধুরিকে কীভাবে বরখাস্ত হতে হয়েছিল সে সংবাদ যদি আপনার স্মরণে থাকে, এবং অতিমারিতে মৃত ও গণ-চিতায় অর্ধদগ্ধ রোগিদের লাশ কীভাবে দলে দলে গঙ্গায় ভেসে এসেছিল সে স্মৃতি যদি আপনাকে কিছুমাত্রও বিচলিত করে থাকে, তবে এ গবেষণাপত্রের সিদ্ধান্ত আপনার তত অসম্ভব বলে মনে না-ও হতে পারে।

    আচ্ছা, বাদ দিন। গ্রামের গরিবেরা কোভিডে মরেছে কি মরেনি, সে তর্ক ছেড়েই দিন না হয়। মনে করুন না কেন, এ অতিমারিতে সত্যিই তারা সম্পূর্ণ অনাক্রান্ত আছে। যদি তা হয়, সে তো পরম সুখের কথা। কিন্তু, যদি তাইই হত, তাতেও কি এ কথা প্রমাণ হত যে, কোভিড অতিমারি একটি ভুয়ো গুজব মাত্র? ভাল করে ভেবে দেখুন একটু। শহরের সম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ আক্রান্ত হননি, অতএব কোভিড আসলে তৈরি করা আতঙ্ক --- এ অভিযোগের প্রকৃত অর্থ কী? শহুরে রোগিরা বিল গেটসের ষড়যন্ত্রে এমনই সাথ দিচ্ছেন যে, তার চাপে শরীরে জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট এসে যাচ্ছে, এবং তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে লাখ টাকা খুইয়ে আসছেন? মানে কী, এ সব কথার? আপনারা নিজেরা পাগল হয়েছেন, না কি আমাদেরকে পাগল ভাবছেন, সেটা ভেঙে বলবেন একটু?

    (৫) অভিযোগ উঠেছে, করোনা-ভ্যাকসিন একটি অপরীক্ষিত ভুয়ো ওষুধ, মানুষকে ভয় দেখিয়ে এ ভ্যাকসিন নিতে বাধ্য করা হচ্ছে, যাতে বড় বড় ওষুধ কোম্পানিরা মুনাফা লুটতে পারে। বলা হচ্ছে, ভ্যাকসিন নিয়ে আদৌ যে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমে, এর নাকি কোনও প্রমাণ নেই। এর প্রমাণ হিসেবে আসছে ইজরায়েলের নাম, যেখানে নাকি সবার আগে ভ্যাকসিনেশন করেও ফল হয়নি। কথাটা কি সত্যি? দেখা যাক। গোটা পৃথিবীতে ইজরায়েলই সর্বপ্রথম গণটিকাকরণ শুরু করে, এবং সবচেয়ে দ্রুত তা রূপায়িত করে। ২০২০-র মে মাসেই ইজরায়েল সরকার ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি করে ফেলে, এবং ওই বছর ডিসেম্বরে ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়ে যায়। টিকার প্রথম প্রাপক ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু, যাঁর টিকা নেওয়ার ঘটনাটি লাইভ সম্প্রচারিত হয়। পরের বছর মার্চের মধ্যেই গোটা জনসংখ্যার পঞ্চাশ শতাংশ ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই পেয়ে যায়, এবং পঞ্চাশোর্ধ্বদের মধ্যে মাত্র লাখ খানেক মানুষ বাকি থাকেন। এর পর থেকে হুহু করে কমতে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয়েরই হার, তবে এত আগে থেকে নিয়ে নেওয়ার ফলে অনেকের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে আসে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে যথারীতি সংক্রমণ ও মৃত্যু আবারও কিছু বেড়েছিল, যদিও প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে অনেক কম, এবং সেটাও নেমে যায় অতি দ্রুত। অনেককে তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়, এবং বয়স্ক ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে চতুর্থ ডোজও। তৃতীয় ঢেউতেও সংক্রমণ বেড়েছে, কিন্তু অন্য দেশের চেয়ে অনেক কম, এবং মৃত্যু প্রায় নেই। কাজেই, ইজরায়েলে টিকা ব্যর্থ হবার গল্পটি এক অত্যন্ত বাজে মিথ্যে গল্প।

    এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার প্রশ্নে বাকি পৃথিবীর সঙ্গে ইজরায়েলের অভিজ্ঞতা মেলে কি? ভ্যাকসিন-নির্মাতারা টিকার যে কার্যকারিতা দাবি করেছেন, আদৌ গণ-টিকাকরণের পরে বাস্তব ফলাফল কি তাই পাওয়া যাচ্ছে? এর উত্তর পেতে গেলে সমস্ত পৃথিবীর অভিজ্ঞতা এক জায়গায় করে ঠিকঠাক তুলনা করতে হবে। বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতির প্রকট বিভিন্নতার কারণে সেটা বেশ কঠিন কাজ, যার জন্য এতদিন উপযুক্ত প্রামাণ্য গবেষণা পাওয়া কঠিন হচ্ছিল, প্রতিটি দেশের তথ্য আলাদা করে হাতড়াতে হচ্ছিল। সুখের বিষয়, সে পরিস্থিতি কেটে যাচ্ছে, এবং সুবিধাজনক ও প্রামাণ্য গবেষণার ফলাফল একটু একটু করে সামনে আসছে। এ রকম একটি সাম্প্রতিকতম গবেষণার কথা বলি। ‘ইন্টান্যাশনাল জার্নাল অফ ইনফেকশাস ডিজিসেস’ পত্রিকার জানুয়ারি ২০২২ সংখ্যায় কতিপয় চৈনিক গবেষক টিকাকরণ সংক্রান্ত বহু সংখ্যক তথ্যগুচ্ছকে এক জায়গায় করে একটি মোদ্দা বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন, যাকে পরিভাষায় বলে ‘মেটা-অ্যানালিসিস’। কী বোঝা গেছে তাতে? বোঝা গেছে এই যে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মোট সংক্রমণের ক্ষেত্রে ৮৯.১%, হাসপাতালে ভর্তি হবার ব্যাপারে ৯৭.২%, আইসিইউ-তে ঢোকার প্রশ্নে ৯৭.৪%, এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৯৯%। কী অর্থ এ সব সংখ্যার? হ্যাঁ, গোল পাকানো হচ্ছে তা নিয়েও। ‘অমুক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা অমুক শতাংশ’ বললেই ভ্যাকসিন-বিরোধী ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক হাঁহাঁ করে তেড়ে এসে বলছেন, আরে, তার মানে তো সংক্রমণ এগারো শতাংশ, হাসপাতালে ভর্তি তিন শতাংশ আর মৃত্যুহার এক শতাংশ। তা, সে তো ভ্যাকসিন-ট্যাকসিন না নিয়েই সংক্রমণ, হাসপাতাল-গমন, মৃত্যু ইত্যাদির হার এমনিতেই ওর চেয়ে কম, তাহলে ভ্যাকসিন নিয়ে কি ছাই লাভটা হচ্ছে? এখানে সমস্যাটা হচ্ছে, মাননীয় ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক মহাশয় বিল গেটস সায়েবের গোপন মনোবাসনাটি জেনে ফেললেও, ‘ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা’ বস্তুটি কী সেটাই এখনও জেনে উঠতে পারেন নি, মোট সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারের সঙ্গে তাকে গুলিয়ে বসে আছেন। অনেকেই ভাবছেন, একটা ভ্যাকসিনের ‘এফিকেসি’ বা ‘কার্যকারিতা’ ৮০ শতাংশ মানে হচ্ছে, একশো জনকে ওই ভ্যাকসিন দিলে আশি জনের সংক্রমণ হবে না, বাকি কুড়ি জনের হবে। সেটা হলে খুব খারাপ ব্যাপার, সন্দেহ নেই, কিন্তু ব্যাপারটা আসলে আদৌ তা নয় তো! ‘কার্যকারিতা’ ৮০ শতাংশ হবার মানে হচ্ছে, ভ্যাকসিন আদৌ না নিলে কোনও একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যায় যতটা সংক্রমণ হত, ওই ভ্যাকসিন-টা নিলে তার চেয়ে আশি শতাংশ কম হবে। সংক্রমণ বা মৃত্যুর মোট হারের সঙ্গে তার ধারণা ও পরিমাণ --- এ দুয়েরই আকাশ-পাতাল ফারাক।

    ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে যাঁরা সোশাল মিডিয়াতে এইসব ভুলভাল বলছেন, তাঁদের মধ্যে সবাই কিন্তু অজ্ঞ আনপড় নন। অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জার বিষয়, এবং আতঙ্কেরও, যে কিছু অভিজ্ঞ চিকিৎসকও এ ব্যাপারে মানুষকে ভুল বোঝানোর কাজে লিপ্ত হয়েছেন।

    একটা তথ্য দিয়ে এ প্রসঙ্গ শেষ করি। যখন ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়, তখন বিজ্ঞানীরা স্বয়ং এর কার্যকারিতা কতদূর হবে সে নিয়ে সংশয়ী ছিলেন, এবং খুবই বিনয়ী অবস্থানে ছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যদি অন্তত ৫০% হয় সেটাও চলতে পারে, এবং ৭০% হলে সেটা খুবই ভাল। অথচ, সব প্রত্যাশা ও সংশয় ছাপিয়ে প্রায় সমস্ত ভ্যাকসিনেরই কার্যকারিতা এখন ঘোরাফেরা করছে ৮০% থেকে ৯০% সীমার মধ্যে। একে নিছক সাফল্য বললে হবে না, অভাবনীয় সাফল্যই বলতে হবে। কাজেই, আপনি যদি একে ‘ষড়যন্ত্র’ বলেন, এবং আপনি যদি অজ্ঞ না হন, তো আপনি অকৃতজ্ঞ আচরণ করছেন কিনা, একটু ভেবে দেখবেন।

    (৬) সুইডেনের লকডাউন না করার সিদ্ধান্তও এক উত্তপ্ত চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে, যদিও, আসলে তত উত্তাপের বিশেষ কিছুই নেই। বলা হচ্ছে, সুইডেন অতিমারির প্রেক্ষিতে আদৌ লকডাউন করেনি, এবং সুইডিশরা তাতে নাকি চমৎকার আছে, কোনও অসুবিধে হয়নি, বা অন্তত লকডাউন করা দেশগুলোর থেকে বেশি অসুবিধে হয়নি। এখানে যা বলা হচ্ছে না, সেটা তবে এবার বলি একটু।

    সুইডেনে প্রথম কোভিড কেস ধরা পড়ে ২০২০-র জানুয়ারিতে, এবং অন্য দেশ থেকে সংক্রমণের খবরও আসতে থাকে ক্রমশ বেশি বেশি করে। সুইডেনের সরকার কঠোরভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, লকডাউন করা হবেনা, এবং সমস্ত কাজকর্ম চালু রাখা হবে, এবং এমন কি মাস্ক-ও পরার দরকার নেই। তাদের ধারণা ছিল, ব্যাপারটা অল্প কিছু জ্বরজারির ওপর দিয়ে যাবে, এর জন্য সব কিছু বন্ধ করে দেবার দরকার নেই। কিন্তু, স্পষ্টতই এ ভাবনা ছিল ভুল। সংক্রমণ ও মৃত্যু হুহু করে বাড়তে থাকে, এবং বছরখানেক পরে সংক্রমণ হার গিয়ে দাঁড়ায় সমতুল্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রদের দশ গুণ। হাসপাতালে ভর্তি হবার হিড়িকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-গুলোর সমস্ত বিছানা ভর্তি হয়ে যায়। এমন কি, এতে করে অর্থনীতি বাঁচবে বলে যে ধারণা করা হয়েছিল তা-ও ভুল বলে প্রমাণিত হয়, এবং জাতীয় আয় প্রায় নয় শতাংশ নেমে যায় ও বেকারি প্রায় দশ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটি যদি সুইডেনের মত একটি অত্যন্ত কম জনসংখ্যা ও উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থার দেশ না হত, তো এ হেন সিদ্ধান্ত গণহত্যার সামিল হয়ে দাঁড়াতে পারত। ফলত, শেষে ২০২০-র ডিসেম্বরে সরকার লকডাউন নামাতে বাধ্য হয়। অবশ্য, ২০২১-এর মে মাস থেকে গণটিকাকরণ সুষ্ঠুভাবে চালু হলে আবার লকডাউন তুলে নেওয়া হয়। কী বোঝা গেল এ সব তথ্য থেকে? না, সুইডেন লকডাউনের অকার্যকারিতার দৃষ্টান্ত নয়, বরং ঠিক উল্টো। সুইডেনের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, পোক্ত ও সুশৃঙ্খল স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং মানবোন্নয়নের সুদীর্ঘ উজ্জ্বল ইতিহাস-ওয়ালা একটি অত্যন্ত উন্নত দেশেও কোভিড বিধি অমান্য করলে কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে।

    এর অর্থ কি এই যে, আমাদের দেশে যেভাবে লকডাউন করা হয়েছে তার মধ্যে কোনও গণ্ডগোল নেই, বা তার সমালোচনা হতে পারেনা? না, তা অবশ্যই হতে পারে এবং হওয়া উচিত। কিন্তু, লকডাউন ব্যাপারটাই একটা লোক ঠকানো ষড়যন্ত্র --- এভাবে ভাবাটা বোধহয় নিছকই পাগলামি। লকডাউন করাটা যদি ‘পুঁজিবাদী চক্রান্ত’ হয়, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর জাইর বোলসোনারো যেভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যুর তোয়াক্কা না করে লকডাউনের বিরোধিতা করেছেন তাকে কী বলব --- পুঁজিবাদ বিরোধী সংগ্রাম? অনুগ্রহ করে একটু ভেবে দেখবেন।

    যাই হোক, খেপে গিয়ে অনেক কথাই বলে ফেললাম, এবার তাহলে গুটিয়ে আনা যাক।

    একট অভূতপূর্ব অতিমারির সম্মুখীন হয়েছি আমরা। তাতে মৃত্যু তো হচ্ছেই, এবং তার চেয়েও অনেক বেশি হচ্ছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, সঙ্কটকালীন চিকিৎসার সম্মুখীন হয়ে প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে যাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে তার জের হিসেবে শরীর দুর্বল অশক্ত হয়ে থাকা, নানা বিচিত্র উপসর্গ, কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর সমাধান ছিল অজানা। বিজ্ঞানীরা খুঁজছেন সমাধান, কিন্তু কোনও সমাধানই হাতের মোয়া নয় --- প্রয়োজন স্থৈর্য, প্রয়োজন ধৈর্য, প্রয়োজন কঠোর যুক্তিসম্মত অনুসন্ধান, প্রয়োজন সৃজনশীলতা, প্রয়োজন সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অবাধ সহযোগিতা ও আদানপ্রদান। সরকারগুলোর তরফে প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে যথেষ্ট অর্থ সংস্থান করে যুক্তিসম্মত ও সংবেদনশীল পদক্ষেপ, এবং অতিমারি সংক্রান্ত তথ্যাবলী বিষয়ে যথোপযুক্ত সংরক্ষণ, সহজপ্রাপ্যতা ও স্বচ্ছতার সুব্যবস্থা। এবং, আমাদের মত আমজনতার তরফে প্রয়োজন এ বিষয়ে সচেতনতা, এবং অন্যকে সচেতন থাকতে সাহায্য করা। কিন্তু, অবান্তর আজগুবি সব অভিযোগ তুলে ভুয়ো খবর ও গুজব ছড়াতে থাকলে তাতে কার লাভ?

    হ্যাঁ, অজানা বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে বিভ্রান্তি ও ভুলভ্রান্তি স্বাভাবিক বইকি, যেমনটি স্বাভাবিক নিরন্তর সমালোচনাও --- সেটা কাঙ্ক্ষিতও বটে। কিন্তু সে সমালোচনা যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক হওয়া চাই। বিজ্ঞানীরা যা এখনও জানতে পারেননি তা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকবেই, কিন্তু যা ইতিমধ্যে জানা গেছে সেটা একটু কষ্ট করে জেনে নিলেই হয়, মনে মনে কালনেমির লঙ্কাভাগ করা অর্থহীন। এবং, আজকাল নেটে যা পাওয়া যায়, তাতে বিভ্রান্তি খুব বেশি থাকার কথা না, যদি কী খুঁজতে হবে এবং কোথায় খুঁজতে হবে সেটা জানা থাকে। সেটা জেনে নেওয়াটাও কঠিন না, যদি জানার ইচ্ছেটা থাকে, এবং, 'জানা' কাকে বলে সে বিষয়ে একটা ধারণা থাকে। কিন্তু, দুঃখের বিষয়, সে ধারণাটুকু অনেকেই রাখেন না। ফলত, সকলেই নেটে ঠিক সেটাই খুঁজে পাচ্ছেন, যা পেলে তাঁরা খুশি হন। আর, সেটাই সোশাল মিডিয়াতে ক্রমাগত শেয়ার করে যাচ্ছেন, গণপরিসর বানভাসি হয়ে যাচ্ছে বর্জ্যপদার্থে। সবিস্ময়ে দেখছি, বাম র‍্যাডিক্যালদের একাংশ সোৎসাহে ও নির্বিচারে গিলছেন আমেরিকার কট্টর দক্ষিণপন্থী অ্যান্টি-ভ্যাকসারদের বানানো সব ভুয়ো খবর, আর প্রবল কর্তব্যবোধ সহকারে তা বমি করে দিচ্ছেন সোশাল মিডিয়ায়, অবশ্যই তার সঙ্গে ‘সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন’, ‘পুঁজিবাদী চক্রান্ত’, ‘মুনাফালোভী বহুজাতিক’ জাতীয় কিছু পরিচিত বাম-বুলি এবড়োখেবড়োভাবে মিশিয়ে। কেন যে এমন করছেন সে ব্যাখ্যা তাঁরা নিজেরাই সবচেয়ে ভাল দিতে পারবেন, তবে তাঁদের কীর্তিকলাপ দেখে মনে হচ্ছে, সঙ্কটের মুহূর্তে স্বাভাবিক যুক্তি-বুদ্ধি সবই বুঝি জলাঞ্জলি দিয়ে বসে আছেন।

    তাঁদের কাছে আমার সবিনয় নিবেদন, লকডাউনে মানুষের বিপন্নতা নিয়ে অবশ্যই সোচ্চার হোন, কিন্তু অনুগ্রহ করে অযৌক্তিক সন্দেহ আর ভুয়ো খবর ছড়াবেন না, আর কোভিড বিধি অমান্য করতে অন্যকে প্ররোচনাও দেবেন না। একটু মনে রাখবেন, দুর্ঘটনায় আপনার হাত-পা ভাঙলে তা সারাবেন কি সারাবেন না সেটা আপনার ব্যক্তিগত অধিকার হতে পারে, কারণ সেটা ছোঁয়াচে নয়, কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়া আর মাস্ক পরার ব্যাপারটা মোটেই ও রকম না। ভ্যাকসিন দেবার লক্ষ্য ব্যক্তিকে বাঁচানো নয়, একটি গোটা জনগোষ্ঠীকে বাঁচানো। ভ্যাকসিন দেবার পরেও নানা কারণে ব্যক্তিবিশেষের সংক্রমণ ও মৃত্যু হতে পারে --- বিরল হলেও --- যে কোনও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই, শুধু কোভিডের ক্ষেত্রে নয়। কিন্তু, ভ্যাকসিন দেবার পরে একটি বিশেষ জনসংখ্যায় সংক্রমণ ও মৃত্যু অনেকখানি কমে যায়, সেটুকুই লাভ। তাতে ব্যক্তিবিশেষ হিসেবে আপনি বাঁচবেন কিনা সে প্রশ্ন বাতুলতা, বরং আপনার দেশ ও সমাজের আরও কিছু বেশি মানুষ যে বাঁচবে, এটুকু আশ্বাসই যথেষ্ট। কাজেই, ভ্যাকসিন নেওয়া ও মাস্ক পরাটা যতটা না ব্যক্তির লাভ-ক্ষতির প্রশ্ন, তার চেয়েও বেশি যৌথ দায়িত্বের প্রশ্ন। আপনি যদি ভ্যাকসিন না নেন এবং মাস্ক না পরেন, তাহলে আপনার কোনও ক্ষতি নাও হতে পারে, কিন্তু সংক্রমণটা যাকে দিলেন তার অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। আর, খুব বেশি লোক যদি এইটা করেন, তাতে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে গোটা জাতি, যেমনটি ঘটেছে আমেরিকা ব্রাজিল সুইডেনে।

    মুখ ঢাকতে আর ছুঁচ ফোটাতে ভাল লাগেনা বলে অবাধে চলাফেরা করতে দিয়ে সংক্রমণ ছড়াতে দেওয়া হোক, এইটা যদি ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক ভ্যাকসিন-বিরোধীদের দাবি হতে পারে, তাহলে ওই একই কারণে ভ্যাকসিন-পন্থীরাও পাল্টা দাবি করতে পারেন, যিনি মাস্ক পরবেন না এবং ভ্যাকসিন নেবেন না, তাঁকে অবরুদ্ধ করা হোক। দুটোর কোনওটিই কাম্য নয়, কিন্তু একটির অস্তিত্ব অন্যটিকে ন্যায়সঙ্গত করে তুলতে পারে। ‘মাই বডি মাই রাইট’ শ্লোগান যদি ভ্যাকসিন-বিরোধীদের আশ্রয় হতে পারে, তো ওই একই কারণে তো তা ভ্যাকসিন-পন্থীরও আশ্রয় হয়ে উঠতে পারে।

    পারে না? বলুন!

    সাহায্যকারী তথ্যসূত্র

    1) https://www.gavi.org/vaccineswork/how-effective-are-covid-19-vaccines-real-world
    2) https://www.science.org/doi/10.1126/science.abm5154
    3) https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1201971221008572
    4) https://www.who.int/news-room/feature-stories/detail/vaccine-efficacy-effectiveness-and-protection
    5) https://www.healthdata.org/covid/covid-19-vaccine-efficacy-summary
    6) https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_pandemic_in_Sweden
    7) https://www.businessinsider.in/science/news/a-year-and-a-half-after-sweden-decided-not-to-lock-down-its-covid-19-death-rate-is-up-to-10-times-higher-than-its-neighbors/articleshow/85514410.cms
    8) https://www.worldometers.info/coronavirus/country/sweden/
    9) https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_vaccination_in_Israel
    10) https://www.worldometers.info/coronavirus/country/israel
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ জানুয়ারি ২০২২ | ১৪৩৬৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Somnath Roy | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১২:১৫502863
  • ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল বন্ধ করে নতুন করে সংক্রমণ আসা আটকানো যায় না, এরকম পেপার ্থাকলে জানান, আমি দেখিনি। তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার প্রাক-ডিসেম্বর ডেটা কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
    মূল লেখায় অবশ্য লেখক শুরুর থেকে দেশের ভিতরের লকডাউনের জয়গান গেয়ে গেছেন। বিভিন্ন সরকার এখনও সেই পথে হাঁটছে। ট্রান্সমিশন মডেল লকডাউনকে ফেইলিওর বললেও সেই নিয়ে আলোচনা খুব কম হয়। এই লেখার মন্তব্যেও আসেই নি মনে হয়।
  • dc | 171.49.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১২:৪৬502864
  • ট্রান্সমিশান মডেল কি লকডাউনকে ফেলিওর বলেছে? 
     
    একটু খুঁজে এই পেপারটা পেলাম। লকডাউন এফিসিয়েন্সি কে চারটে গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে, হাই, মিডিয়াম ইত্যাদি। এই পেপারের মতে অস্ট্রেলিয়ার লকডাউন এফিসিয়েন্সি সবচেয়ে বেশী ছিল (২০২০ সালে ছাপা)।
     
     
    আরেকটা পেপার, লকডাউনের উপযোগিতা নিয়েঃ 
     
     
    হু বা অন্যান্য সংস্থা প্রথম থেকেই বলেছিল যে লকডাউন করে ওয়েভের পিক কমানো সম্ভব, যাতে করে দেশগুলোর হেল্থকেয়ার সিস্টেম একেবারে বসে না যায়। 
  • lcm | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:১৪502865
  • লকডাউন তো মূলতঃ স্প্রেড স্লো করে দেওয়ার জন্য। অল্প সময়ের মধ্যে যাতে দ্রুত ছড়িয়ে না যায়।

    একটা ভাইরাস ছ মাস ধরে আস্তে আস্তে ১ কোটি মানুষের মধ্যে ছড়ানোর একটা ইমপ্যাক্ট, আর ছ দিনের মধ্যে ১ কোটি মানুষের মধ্যে ছড়ালে অন্য ইমপ্যাক্ট। দ্বিতীয়টা ট্যাকল করাই লকডাউনের মেইন পারপাস। কারণ অল্প সময়ের মধ্যে অনেক মানুষ আক্রান্ত হলে হাসপাতলের বেড এবং মেডিক্যাল সিস্টেমের ওপর চাপ বাড়লে মুশকিল।

    হিসেবে বলছে, চায়্না একটা শহরে - উহান এ - কমপ্লিট লকডাউন করেছিল ৭৬ দিন ধরে, মানে প্রায় আড়াই মাস ধরে - - কেউ ঢুকছে না, কেউ বেরোচ্ছে না। ওদের তথ্য অনুযায়ী তাতে কাজ হয়েছে। উহানে অনেকে মারা গেছে, কিন্তু অসুখ বাইরে বিশেষ যায় নি।

    লকডাউন এর সাইড এফেক্ট - বিশেষ করে ইকনমিক এবং সোশ্যাল - এত সাংঘাতিক রকমের বেশি - যে লকডাউন সফল বলে কিছু হয় না। যে কোনো রকমের লকডাউনে কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেনই।
  • dc | 171.49.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:০১502867
  • ঠিক, লকডাউনের আসল উদ্দেশ্য স্প্রেড কম করে পিক কমানো। লকডাউনের মানে এই না যে সংক্রমন একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্যই ট্রান্সমিশান মডেলের কথা বললাম। আর এই ২০২১-২২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল, প্লেনেই হোক বা জাহাজেই হোক, একেবারে বন্ধ করে দেওয়াও সম্ভব না, তাহলে গ্লোবাল ইকোনমি বন্ধ হয়ে যাবে, আমরা আবার সেই সাইড এফেক্টে ফিরে যাবো - "বিশেষ করে ইকনমিক এবং সোশ্যাল - এত সাংঘাতিক রকমের বেশি - যে লকডাউন সফল বলে কিছু হয় না। যে কোনো রকমের লকডাউনে কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেনই।"
  • lcm | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:০৫502868
  • Debasis Bhattacharya | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:৪৮502870
  • জবাবে বিলম্বের জন্য দুঃখিত। এখানে প্রচুর মন্তব্য এসেছে, তার সব কিছু জবাবের অপেক্ষা রাখে না। যে কটা জবাবের অপেক্ষা রাখে, তার মধ্যে মেডিক্যাল ইস্যু-গুলোর জবাব প্রায় সবই দিয়ে দিয়েছেন অন্যেরা, মূলত 'পাই', 'জয়' এবং 'ডিসি'। তাঁদেরকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। তবু, যে সব কথার জবাব এখনও দেওয়া যায়, সেগুলো দেবার চেষ্টা করছি। যে ক্রমে মন্তব্যগুলো এসেছে, সেই ক্রমেই জবাব দেব। অরূপশঙ্কর মৈত্র যা বলেছেন, তার জবাব আলাদাভাবে দেব। শেষের দিকেও অনেক মূল্যবান আলোচনা হয়েছে, সে সব পড়েছি আগ্রহের সঙ্গে, ধন্যবাদ তার জন্যেও। তবে, সে সবের জবাব দেবার প্রশ্ন সেভাবে নেই। 
     
     
     
    আশিস সেনগুপ্ত,
    আপনি প্রশ্ন করেছেন, (১) বিল গেটস কীভাবে অতিমারির ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারলেন, (২) RTPCR কিট এত দ্রুত কীভাবে তৈরি হতে পারল, এবং, (৩)  ইবোলা ও এইচআইভি-র ভ্যাকসিন আজও তৈরি হল না কেন। একে একে উত্তর দিই। 
    (১) বিগত দু-দশকে একাধিক অতিমারির সম্ভাবনা দ্রুত এসেছে এবং গেছে --- সার্স, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, ব্যাট ফ্লু। চেষ্টা করলে আপনারও মনে পড়বে। এবং, এ সবই হচ্ছে 'ফ্লু' জিনিসটার মারাত্মক সংস্করণ। ফলে, আবারও তা হতে পারে এবং এর চেয়েও বড় করে হতে পারে --- এটা অনুমান করা বিশেষজ্ঞদের কাছে খুব কঠিন না। বিল গেটস ছাড়াও আরও কেউ কেউ করেছেন। কাজেই, কেউ যদি এ কথা একবার বলেই ফেলে, 'অ্যাতো আগে থেকে সাবধান কোল্লি ক্যানো রে গুয়োর ব্যাটা' বলে না চেঁচালেও চলে। 
    (২) RTPCR কিট আকাশ থেকে পড়া জিনিস নয়, ওর পেছনে আছে অন্তত দু-জন নোবেলজয়ীর পুরোনো কাজ। ব্যবস্থাটি আগে থেকেই ছিল, এখন শুধু দরকারের মুহূর্তে এই বিশেষ রোগটির উপযোগী করে নিতে হয়েছে। এ নিয়ে ভাল ভাল লেখা নেটে পাবেন, আমার চেয়ে অনেক যোগ্য লোকেরা লিখেছেন সে সব। 
    (৩) ইবোলার ভ্যাকসিন আছে, আর এইচআইভি-র ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করলেই বেরোবে, কিন্তু করার মত টাকাপয়সা কেউ দিচ্চেনাকো। ওই যে, পাবলিক বলছে, পুঁজিবাদ! শুনেচেন্তো! 
     
     
     
    শেখর দত্ত  
    না, টিবি আর দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা কোভিডের চেয়ে বেশি নয়, আর বেশি হলেও তাতে করে কোভিড ও তার ভ্যাকসিন ষড়যন্ত্র বলে প্রমাণ হত না। এ দেশে ২০১৮ ও ১৯ সালে পথ দুর্ঘটনায় মরেছে লাখ তিনেকের কম, আর ২০২০ ও ২১ সালে কোভিডে মরেছে প্রায় পাঁচ লাখ। আর, টিবি নিয়ে যে সংখ্যাটা বলছেন সেটা টিবি-তে মৃত্যুর সংখ্যা না, সংক্রমণের সংখ্যা। 
    তবে, এই যে বলছেন, সরকার আরও সংবেদনশীল ও দক্ষ হলে ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের উৎপাত কমত, এ ব্যাপারে আপনার সাথে একমত। 
     
     
     
    ঠিক বলেছেন, মনুষ্যজাতি সংক্রান্ত কোনও ঘটনাকেই পুরো প্রাকৃতিক বলা যায় না। ভোজন, বর্জ্যত্যাগ ও মৈথুনের মত বিশুদ্ধ জৈবক্রিয়াও আমরা তত বিশুদ্ধভাবে করিনা। আরবী খেজুরের সঙ্গে বঙ্গীয় আমসত্ত্ব ও কেরালার মশলা মিশিয়ে চাটনি বানিয়ে খাই, পোর্সেলিনে মোড়া স্যানিটারি সিস্টেমে বসে মলত্যাগ করি, আর কারখানায় বানানো বর্ণগন্ধে মাতোয়ারা পাতলা রবারের থলি জায়গামত পরে নিয়ে মৈথুন করি। রোগ সারাবার ব্যাপারেও ওই একই কুকীর্তি। পাপের মনুষ্যজনম কোনও মতে কাইট্যা ফালান, অর বেশি কী আর কমু কন! 
     
     
    Goutam Chattopadhyay
    হ্যাঁ, ভ্যাকসিন প্রতিষেধকই বটে। তবে, রোগ সারাবার জিনিস, রোগ আটকাবার জিনিস, আর রোগ নির্ণয়ের জিনিস --- তিনটেকেই ওষুধ বলা হয়, কথাটাকে একটু বৃহদর্থে নিলে। আমি সেভাবে, একটু ঢিলে অর্থেই বলেছি। 
    না, কোভিডের ব্যাপারে ভ্যাকসিনই ভরসা, ওষুধের কোনও খবর নেই। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন-রেমডিসিভির-আইভারমেকটিন সবই বকোয়াস। ডাক্তাররা দিচ্ছেন কোথাও কোথাও, যদিও।
     
     
    হ্যাঁ, কোভিডে অসাধু চিকিৎসা-ব্যবসায়ীদের পোয়া বারো হয়েছে বইকি। তবে, ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকরা খালি বিল গেটস আর অ্যান্টনি ফচি সায়েবদের গালি দিচ্চেন। কে জানে, নার্সিং হোম মালিকদের জাতীয় বুর্জোয়া-টুর্জোয়া ঠাউরেছেন বোধহয়। 
     
     
    হিহি, ভারতের ধনীদের সম্পত্তি বাড়াবার জন্যে চিন ছমাস আগে থাকতে ভাইরাস ছেড়েচে বোলচেন? হবেও বা! হিহিহিহিহি! 
     
     
    ভাস্কর চক্রবর্তী
    ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যে প্রত্যাশারও বেশি, এটা ইতিমধ্যে মেটা-অ্যানালিসিসে বেরিয়ে গেছে, রেফারেন্স সহ বলেছি, আরেকবার পড়ুন। কাজেই, ট্রায়াল পুরো হল কিনা বা জার্নালের রিভিউয়ার কে ছিল এইসব প্রাগৈহাসিক কাসুন্দি ঘেঁটে আর বিশেষ লাভ হবেনা। ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব নিয়ে একটা ভাল লেখার লিঙ্ক নিচে দিলাম, পড়ে নিন বরং, অনেক কিছু জানতে পারবেন। তথ্য-যুক্তি বাদ দিয়ে লিঙ্ক সরবরাহ করাটা গ্রহণযোগ্য তর্ক-পদ্ধতি বলে যখন মনে করেন, তখন আশা করি এতে কিছু মনে করবেন না। না, নিজের লেখার লিঙ্ক দিচ্ছি না। 
    (১) প্রথম পর্ব --- https://www.4numberplatform.com/?p=27414
    (২) দ্বিতীয় পর্ব --- https://www.4numberplatform.com/?p=27768
  • Debasis Bhattacharya | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:৫০502872
  • অরূপশঙ্কর মৈত্র যা বলেছেন তার জবাব আলাদাভাবে দেব, ওপরে বলেছি। 
  • dc | 171.49.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:১৫502876
  • ওপরের টেবিলে দেখা যাচ্ছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার এফিকেসি অরিজিনাল কোভিড স্ট্রেনের ইনফেকশানের বিরুদ্ধে ৬৩% আর সিভিয়ার ডিসিসের বিরুদ্ধে ৯৪%। আর ওমিক্রনের ইনফেকশানের বিরুদ্ধে ৩৬%, সিভিয়ার ডিসিসের বিরুদ্ধে ৭১%। অর্থাত আমি ভ্যাক্সিন নিয়েছি বলেই যে কোভিড আর হবে না, এমন না। কোন ভ্যাক্সিন ১০০% কার্যকরী না। কিন্তু হ্যাঁ, ভ্যাক্সিন নিলে ভ্যাক্সিনেটেড পপুলেশানের কোভিড হওয়ার প্রোবাবিলিটি কমে, অসুখ হয়ে হাসপাতালে যেতে হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। 
     
    আর খেয়াল করবেন, ৬৩% এফিকেসি মানে কন্ট্রোল গ্রুপ আর ট্রিটমেন্ট গ্রুপের মধ্যে যাদের কোভিড হয়েছে তাদের ফারাক। 
  • Amitava Sen | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৩৫502877
  • দেবাশীষ ভট্টাচার্য
     
    ধন্যবাদ অনেক অনেক ধন্যবাদ। প্রচুর খেটে লিখেছেন আর লিখেছেন সেই সময়ে দাঁড়িয়ে যখন অধিকাংশ মানুষই মূলত পল্লবগ্রাহী এবং তাঁদের একমাত্র কাজ হচ্ছে পূর্ব নির্ধারিত অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্তগুলোর সপক্ষে এঁড়ে যুক্তি দিয়ে যাওয়া, তা যতই হাস্যকর হোক না কেন। ঠিক সেই সময়ে আপনার লেখা এক ঝলক তাজা বাতাস। 
     
    কমেন্ট সেকশন পরে তো অনাবিল আনন্দ পেলাম, সেটাও কম পাওয়া নয়। একটা জিনিষ মনে হয়, অন্ধ ভক্ত শুধু মাত্র এক বিশেষ মতাদর্শের লোকেদের মধ্যেই বোধহয় সীমাবদ্ধ নয়। এই যুক্তিহীন অন্ধ ভক্ত হওয়াটা একটা সংস্কৃতি যা অতিমারীর চেয়ে কম ভয়ঙ্কর নয় আর মোটামুটি সর্বব্যাপী। 
     
    একটা ছোট্ট জিনিষ বলে শেষ করি। আপনি নিশ্চয়ই জানেন তবুও। The Hindu বেশ কয়েকটি রাজ্যের কোভিড মৃত্যুর under counting factor বার করেছিল। কিছু জায়গায় যেমন মধ্য প্রদেশ এ এটা ছিল ৪০ এর ও বেশি, মানে কোভিড মৃত্যু আসলে ৪০ গুন বেশি। কাজেই হয়তো আসল মৃত্যু সংখ্যা ৫ বা ৬ গুন নয়, তার চেয়েও অনেক বেশি।
     
    আবার ও ধন্যবাদ এবং আরো লেখা পড়ার আশায় রইলাম।
  • দেবাশিস্ ভট্টাচার্য | 223.19.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ২২:১১502878
  • অমিতাভ সেন, 
    সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। আরও কিছু লেখার আছে এখানে।
  • দেবাশিস্ ভট্টাচার্য | 223.19.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ২২:১৮502879
  • প্রিয় পাঠক ও অ্যাডমিন-বর্গ, আমার একটি ভ্রান্তি কবুল করার আছে, যা আমার বন্ধুদের চোখে পড়েছে। বারো-তম অনুচ্ছেদে অরুণাচল দত্ত চৌধুরীর ঘটনাটিতে 'কোভিড' লেখা হয়েছে, ওটা আসলে 'ডেঙ্গু' হবে। এ প্রমাদের জন্য আমি দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। এখানে তো আর সংশোধনের উপায় নেই আমার। পরিচালকরা ব্যবস্থা নিলে কৃতজ্ঞ থাকব।
  • π | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:২০502881
  • কোভিড তো সাধারণ ফ্লু বাদীদের জন্য,
     
    https://www.nature.com/articles/d41586-022-00104-8?utm_term=Autofeed&utm_campaign=nature&utm_medium=Social&utm_source=Facebook#Echobox=1642507632
     
    Countries have reported some five million COVID-19 deaths in two years, but global excess deaths are estimated at double or even quadruple that ফিগুরে
     
    Some official data in this regard are flawed, scientists have found. And more than 100 countries do not collect reliable statistics on expected or actual deaths at all, or do not release them in a timely manner.
     
     এখানে Comparing Pandemics এর একটা টেবিলও আছে, দেখবেন।
     
    এর সঙ্গে এটাও বলা আছে, উল্লেখ করলাম, কারণ এই প্রশ্নটাও আসে।
    Excess deaths include mortality that is not related to COVID-19, such as other infectious diseases, as well as indirectly related deaths, such as a person with cancer who died because their screening was cancelled owing to the pandemic’s impact on health-care systems. Some countries, such as New Zealand, even had negative excess mortality, because they experienced few losses to COVID-19 and saw a drop in deaths from influenza. But Karlinsky argues that, overall, data show that estimating excess deaths is a reliable way to measure COVID-19 casualties.
     
    এই অংশগুলিও রইল।
    Another method is to survey a representative sample of households to ask them about deaths. “This is essentially how annual number of deaths are estimated in countries without good vital registration, like Bangladesh,” Karlinsky says. Such surveys are under way in many countries and, in some cases, have already shown that excess mortality is several times higher than official COVID-19 দেয়াথস
     

    a team led by epidemiologist Prabhat Jha at the University of Toronto in Canada reported the results of a telephone survey of adults in India conducted by a private polling agency tracking the pandemic. The team found that there were more than 3 million COVID-19 deaths in India up to July 2021, an estimate backed up by examining mortality data in health facilities and civil-registration deaths in ten states. The researchers — who note that other scientists have come to similar conclusions — estimate that, as of September 2021, India’s COVID-19 deaths were 6–7 times higher than official statistics5.

    Mervat Alhaffar, a public-health researcher at the London School of Hygiene and Tropical Medicine (LSHTM), worked on a study that used an even more direct method to estimate deaths: counting graves. Using satellite images of 11 cemeteries in Aden province in Yemen, the study suggested that weekly burials increased by up to 230% between April and September 2020. It estimated that, as a result of the COVID-19 pandemic, excess deaths for the region were 2,120 during the same period8. Another LSHTM team has applied the same technique to count fresh graves in Mogadishu, Somalia, estimating9 that the city’s excess death toll between January and September 2020 was 3,200 to 11,800.

  • আফ্রিকা | 2a00:1dc0:caff:9e::***:*** | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:২৮502882
  • প্রচুর ডাটা আসছে। ইউরোপ- আমেরিকার ভ্যাকসিনেটেড কত আর কোভিড ডেথ কত, আর আফ্রিকার কেসে সেগুলো কত সেই ডাটা কি আসবে?
  • π | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:৩১502883
  • এখানে সে নিয়েও কথা,  পড়লেন?  
  • দেবাশিস্ ভট্টাচার্য | 223.19.***.*** | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:৩৬502884
  • এখনও পড়িনি, অবশ্যই পড়ব। তবে, যতদূর শুনেছি, আফ্রিকায় নাকি দশ শতাংশের বেশি পরীক্ষাই হয়নি!
  • π | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:২২502887
  • প্রচণ্ড পুঁজিবাদ বিরোধী যাঁরা জোকারের প্রচণ্ড ভক্ত হয়ে উঠেছিলেন তাঁর আন্টিভ্যাক্সিন স্ট্যান্ডের জন্য, এনিয়ে কী বক্তব্য রাখেন, নাকি হিরণ্ময় নীরবতা পালন করেন, দেখতে চাই।
     

    Novak Djokovic is the controlling shareholder in a Danish biotech firm aiming to develop a treatment for Covid-19 that does not involve vaccination, it has emerged.

    The world No 1, who was deported from Australia this week after the government cancelled his visa in a dispute over a medical exemption relating to his unvaccinated status, bought an 80% stake in QuantBioRes in 2020.

     
  • dc | 122.174.***.*** | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:৪০502888
  • হায় হায় শেষে জোকোভিচও ডিপ স্টেট? :d
  • Amit | 60.24.***.*** | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:২৩502889
  • অবশ্য টেকনিক্যালি মেডিসিন কে ভ্যাকসিন বলা যাবেনা। :)  
  • Debasis Bhattacharya | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৪৬502890
  • এবারে অরুপশঙ্কর মৈত্র মহাশয় ওপরে যা সব বলেছেন সে নিয়ে দু-চার কথা বলা যাক। এ ব্যাপারে যেটা ভয়ঙ্কর সমস্যা সেটা হচ্ছে এই যে, জবাব দেবার জন্যে প্রথমে তো অবান্তর আগড়ম বাগড়ম কথাবার্তার পাহাড়ের মধ্যে থেকে প্রথমে তাঁর বক্তব্যের সারকথাগুলোকে টেনে বার করতে হবে, এবং সেটাই এক মহা পরিশ্রমসাধ্য কর্ম। এমনিতে তিনি কিন্তু বেশ বিনয়ী ব্যক্তি। স্বীকার করেছেন, "অর্থনীতি আমি খুব বুঝি না, যেমন ডাক্তারিটাও বুঝি না।" এই বিনয়টা যদি বাংলা ভাষা সম্পর্কেও দেখাতেন, বেশ হত। এবড়োখেবড়ো বাক্যগঠন ছাড়াও, 'আগমন'-কে লিখেছেন 'আগমণ', 'অদ্ভুতুড়ে'-কে লিখেছেন 'অদ্ভুতুরে', আর 'ফুলঝুরি'-কে লিখেছেন 'ফুলঝুড়ি'। এমন কি, শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণয়ের চেষ্টাটুকুতেও খামতি হতে দেননি। রাজনৈতিক 'বাম' শব্দের উৎস খুঁজে বার করেছেন 'ব্রাহ্ম'-র মধ্যে, আর 'ব্রাহ্ম'-র উৎস খুঁজে বার করেছেন 'ব্রাহ্মণ'-এর মধ্যে। 
     
    তা সে যাই হোক, আজকের আলোচনা অবশ্য বাংলা ভাষা নিয়ে নয়। 
     
    অতিমারি, ভাইরাস ও ভ্যাকসিন নিয়ে তাঁর যে বিচিত্র জ্ঞানভাণ্ডার তিনি উন্মুক্ত করেছেন, সে নিয়ে আলোচনাটা এ থ্রেডের ওয়াকিবহাল পাঠকেরা আমার জন্য ফেলে রাখেননি, যা করার করে দিয়েছেন। কাজেই, আমি বরং এট্টু অর্থনীতি নিয়ে কথা বলি। এখন সমস্যা হচ্ছে, অর্থনীতি নিয়ে অরূপবাবু যা বলেছেন তাকে 'ভুল' বলা মুশকিল, কারণ, ঠিক-ভুলের বিচারে যেতে গেলে বাক্যগুলোকে অর্থপূর্ণ হতে হয়, কিন্তু অরূপবাবু অর্থহীন বাক্য লিখেছেন। ভুল বাক্যের সঙ্গে অর্থহীন বাক্যের পার্থক্যটা মনে আছে তো? 'রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কুহু ডাকে' --- এইটা হল ভুল বাক্য। এর মানেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, সেইজন্যে রয়্যাল বেঙ্গলের সামনে নিয়ে গিয়ে তার হাঁক শুনিয়ে এ ভুল ভাঙানো যায়। কিন্তু, 'পরমব্রহ্ম একটি তন্দ্রালু মুলিবাঁশ' --- এ বাক্যের ঠিক-ভুল নির্ণয়ের প্রশ্ন ওঠেনা, কারণ বাক্যটির অর্থ নেই। অরূপবাবুর লেখা বাক্যের ঠিক সেই দশা। যেমন ধরুন, এইটা --- "একবছরে এই দুশ’টাকার মোট জিডিপি কত হতে পারে? বছর শেষেও মুদ্রা হিসেবে ওই দুশ’টাকা দুশ’টাকাই থাকবে। কিন্তু জিডিপি? কয়েক কোটি টাকাও হতে পারে।" বুঝুন, বছর ঘুরলে তিনি মাত্র দুশো টাকা থেকে কোটি টাকার জিডিপি বার করতে পারেন! অরূপবাবুকে বললে সম্ভবত বিশ্বাসই করবেন না যে, 'দুশো টাকার জিডিপি' বলে কিছু হয়না। জিডিপি হচ্ছে এক বছরে কোনও একটি অঞ্চলের মোট উৎপাদনের (জিনিসপত্তর + পরিসেবা) মাপ, ওই অঞ্চলের অর্থনীতির মোদ্দা আয়তনের সূচক। টাকার আবার জিডিপি কী! 
     
    তা, খামোখা জিডিপি-র কথা পাড়লেন কেন? উদ্দেশ্যটা হচ্ছে, আমি যে বলেছি, ভ্যাকসিনের মুনাফা মোট অর্থনীতির নগণ্য অংশ অতএব তার জন্য লকডাউন করে গোটা অর্থনীতিকে ধসানোর পরিকল্পনা অবাস্তব, তিনি এই কথাটা নস্যাৎ করতে চান। তাঁর বক্তব্য, আমি নাকি মুনাফার সঙ্গে জিডিপি গুলিয়ে ফেলেছি। মুনাফা এবং জিডিপি যেহ্বেতু এক না, অতএব মোট জিডিপি-র সাথে ভ্যাকসিনের মুনাফার অনুপাত কষা চলবে না। তাঁকে বলি, না, আমি কিছুই গুলিয়ে ফেলিনি। দুটো সংখ্যার অনুপাত কষতে গেলে দুটোকে এক বলে মনে করার দরকার হয়না। ধরুন, অর্থনীতিবিদ যখন মাথাপিছু আয় নির্ণয় করার জন্য জিডিপি-কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করেন, তখন কি তিনি জিডিপি-র সাথে জনসংখ্যাকে গুলিয়ে ফেলেন? বর্তমান অর্থনীতিতে ভ্যাকসিন-ব্যবসার ভাগ কত, সেটা জানার ও ছাড়া আর কী উপায় আছে? যদি জিডিপি-তে ওষুধ-ব্যবসার মোট ভাগ ধরেন, তাতেও ব্যাপারটা আধ শতাংশের বেশি উঠবে না, এবং ভ্যাকসিন তারও এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ। জিডিপি কী বস্তু না জেনেই যিনি বিগ ফার্মার ষড়যন্ত্রের গল্প ফাঁদতে চান, তাঁর আর দুশো টাকা থেকে কোটি টাকার জিডিপি নিষ্কাশন না করে উপায় কী বলুন? মুনাফাই যে শেষ পর্যন্ত গিয়ে জিডিপি-তে যোগ হয়, সে ধারণা তাঁর নেই। 
     
    লকডাউনে গোটা পৃথিবীর জিডিপি পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার নেমেছে এটা লেখায় বলেছি, কিন্তু অরূপবাবু তার তাৎপর্য বোঝেন নি, অর্থনীতির বিন্দুবিসর্গ না জানলে সেটাই স্বাভাবিক। তিনি টেনে এনেছেন অক্সফ্যামের রিপোর্ট, যাতে বলা হয়েছে, এই লকডাউনে কিছু বিলিয়নেয়ারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বেড়েছে। কতিপয় অতি-ধনীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বৃদ্ধি আর পুঁজিবাদী অর্থনীতির মোদ্দা বিকাশের পার্থক্য তিনি জানেন না, সেও না হয় ঠিক আছে, কিন্তু ওই রিপোর্টের খবরটাই আরেকটু ভাল করে পড়লে দেখতে পেতেন, গুগল-আমাজন-টেসলার মালিক ও ওই জাতীয় দশ ধনীতমের সম্পত্তি মোট বেড়েছে আটশো বিলিয়ন ডলার, যেটা অর্থনীতির পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার সংকোচনের তুলনায় কিছুই না। কেউ জিজ্ঞেস করতে পারেন, অর্থনীতি এত নেমে গেলে ওঁদের ওইটুকুই বা বাড়ে কীভাবে? এর সম্পূর্ণ উত্তর হয়ত বা মিলবে কয়েক বছর পরে, সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্যের আহরণ ও বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ হলে। কিন্তু, যুক্তিসঙ্গত কিছু অনুমান এখনই করা যায়। কলকারখানা ও গণপরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে ম্যানুফ্যাকচারিং পুরো বিপর্যস্ত হয়, এবং পরিসেবাও অনেকটাই। কিন্তু শেয়ার বাজার, আইটি, ই-কমার্স এইসবের ব্যবসা লকডাউনে কমবার কথা ছিল না, বরং তা বেড়েছে। এই সময়কালের মধ্যে যাঁরা তাতে বেশি করে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা সুফল পেয়েছেন, এর মধ্যে বিরাট ধাঁধা তেমন কিছু না-ও থাকতে পারে। 
     
    লকডাউন-ও হয়েছে, এবং কিছু ধনীর রেস্তোও বেড়েছে, অতএব প্রথমটাই দ্বিতীয়টার কারণ --- এটা হচ্ছে লজিকের এক বিখ্যাত ফ্যালাসি। তাকে লাতিন ভাষায় বলে, 'পোস্ট হক, এর্গো প্রপ্টার হক', ছোট করে 'পোস্ট হক ফ্যালাসি'। আমার পেটব্যথা হচ্ছিল, এবং মা শীতলার চন্নমেত্তর খাবার কিছুক্ষণ পরে সেটা চলে গেল --- এ থেকে প্রমাণ হয়না যে চন্নমেত্তর খাওয়াটাই পেট ব্যথা চলে যাবার কারণ। ঠিক সেই রকম, বাড়ির উঠোনে যেদিন বকুল ফুল ফুটল ঠিক সেই দিনই যদি এ বাড়ির টেঁপিরানি ও বাড়ির ও বাড়ির পটলার সঙ্গে সটকায়, তার মানে এই না যে টেঁপি বকুল ফুলের গন্ধে অতিষ্ঠ হয়েই সটকেছে। দুটো ঘটনা 'ক' এবং 'খ' পরপর ঘটলেই প্রমাণ হয়না যে, 'ক'-ই হল গিয়ে 'খ'-এর কারণ।কাজেই, কতিপয় ধনীর ধনবৃদ্ধি লকডাউনের পরে ঘটলেই দুটোর কার্যকারণ প্রমাণিত হয়না, সেটা প্রমাণ করতে গেলে আরেকটু খাটতে হয়। অরূপবাবুকে অনুরোধ করব, দুশো টাকার জিডিপি নিয়ে গভীর ভাবনাচিন্তার পাশাপাশি লজিকের বইগুলোও একটু খুলে দেখুন, লজিকের ম্যাস্টরেরা যে কত আগে থেকে ভ্যাকসিন-কোম্পানিদের সঙ্গে সাঁট করে বসে আছে, সে ষড়যন্ত্র স্বচক্ষে দেখতে পাবেন! 
     
    অরূপবাবু বলেছেন, "ট্রায়াল মানে যে যাচাই সেকথা দেবাশিসবাবু ভুলেই মেরে দিয়েছেন? যাচাই মানে তো সুফল, কুফল দুইই ঘটতে পারে; তা বোঝার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। তার হিসেব করার ধৈর্য থাকছে না কেন?"
     
    এখানে মুশকিলটা হচ্ছে, ইতিমধ্যে মেটা-অ্যানালিসিসে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা খুব ভালভাবেই প্রমাণ হয়ে গেছে, এবং আমি তা লেখায় পরিষ্কার করে বলেছি, প্রামাণ্য গবেষণাপত্রের রেফারেন্স-ও দিয়েছি। অরূপবাবুর এ মন্তব্য থেকে বোঝার উপায় নেই, তিনি আদৌ তা পড়েছেন কিনা, বা পড়ে থাকলেও বুঝেছেন কিনা। গবেষণাপত্র পড়ে বুঝব না, অতএব তা নিয়ে উচ্চবাচ্য না করাই ভাল --- এ মনোভাবটা বোঝা কঠিন না, কিন্তু এই অজ্ঞতাটাকেই বেশ একটা তেরিয়া মেজাজের প্রতিবাদ হিসেবে হাজির করার মধ্যে সততার বহরখানি দেখে চমৎকৃত হতে হয়! 
     
    ভেবে অবাক হই, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় লাভ করতে গেলে কলকারখানা দোকান-পাট স্কুল-কলেজ খুলে কর্মীদেরকে কাজ করতে দিতে হয়, এবং সে সব বন্ধ হয়ে গেলে অর্থাগমের সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায় --- এই ধরনের একটা অতি সাধারণ কথাকে অস্বীকার করতে গেলে কী ধরনের উন্মত্ত বোকামি লাগে! তিনি বলেছেন, "এককালে রাস্তায় মজদুরদের মিছিল দেখতাম, তারা ছাঁটাইের বিরোধিতায় পথে নেমেছে। দেবাশিসবাবুর এই তত্ত্ব যদি তখন জানা থাকত, তাহলে মিছিলের সামনে গিয়ে নেতার হাত থেকে লালপতাকা ছিনিয়ে নিয়ে বলতাম, আপনারা ছাঁটাইয়ের বিরোধিতা করছেন? আপনি জানেন, ছাঁটাই হলে মালিকের মুনাফা কমে যায়? কেননা, শ্রমিকের শ্রম শোষণ করেই তো মালিকের মুনাফা হয়। আপনারা দাবি তুলুন মাত্র দু'শ শ্রমিক ছাঁটাই করা চলবে না, কম করেও হাজার ছাঁটাই চাই। মালিকের মুনাফার থলি তাহলে খালি হয়ে যাবে।" আজ্ঞে না মহাশয়, আপনি তা বললেও শ্রমিকেরা তা শুনত না, কারণ তারা আপনার মতন শেয়াল-পণ্ডিত নয়। সবাইকে ছাঁটাই করে কারখানা লাটে তুলে দিলে সত্যিই মালিকের মুনাফার থলি খালি হয়ে যাবে, কিন্তু তারা তো তা চায় না, তারা ওই মুনাফা থেকে সম্মানজনক ও ন্যায়সঙ্গত ভাগটুকু চায়।
     
    পরিশেষে বলি, তিনি যে শুধু আমার নিন্দা করেছেন তা নয়, অন্তত একটি প্রশংসাও করেছেন। বলেছেন, "দেবাশিসবাবু বোকা নন"। 
     
    বসে বসে ভাবি, তিনি না হয় আমাকে সার্টিফিকেট দিলেন, কিন্তু তাঁর বুদ্ধিশুদ্ধির সার্টিফিকেট-টা কে দেবেন তবে? 
  • dc | 122.174.***.*** | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:১৬502898
  • ওটা জিডিপি না, জিলিপি হবে। দুশো টাকার জিলিপি বছর শেষে কিভাবে কোটি টাকার জিলিপি হয়ে কোটি কোটি লোকের পেটে চালান হয়, সেটা পাকা কারিগর মাত্রেই জানেন। 
  • Ranjan Roy | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ২২:৪৮502903
  • সবাইকে ধন্যযোগ। 
      একটা কথা বলি। এই গুরুর পাতায় যদুবাবু, অরিন এবং ডিসি কন্ডিশনাল প্রোব্যাবিলিটি বোঝাতে গিয়ে সুন্দর ডায়গ্রাম এঁকে ভ্যাকসিনের এফিশিয়েন্সির ব্যাপারটা বুঝিয়েছিলেন। এই  আলোচনায় ডিসিকে হাজির দেখছি। ওনাকে অনুরোধ, ওই ডায়াগ্রামটা এখানে আর একেবার এঁকে দিন না!
    ধরুন,  মোট ১০০ জন নাগরিকের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছে, ৭০ জন। নেয়নি ৩০ জন। 
    এখন ভ্যাকসিন নিয়েছে কোভিড হয়নি =  ৬৫ জন।  ভ্যাকসিন নিয়েছে তবু কোভিড হয়েছে= জন।
    ভ্যাকসিন নেয়নি তবু কোভিড হয়নি= জন।    ভ্যাকসিন নেয়নি কোভিড হয়েছে= ২৩ জন।
     এবার এর থেকে ভ্যাকসিনের এফিকেসি ক্যালকুলেট করার ডায়াগ্রাম? বেইস' থিওরেম মেনে?
     
    মনে তাহলে ভ্যাকসিন নেওয়ার যুক্তিটা অনেকে বুঝতে পারবেন। নিদেনপক্ষে কো-ইন্সিডেন্স আর কোরিলেশনের ফারাকটা।
  • :-) | 43.25.***.*** | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:১৪502904
  • এটাও বলবেন - 
    ধরুন,  মোট ১০০ জন নাগরিকের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছে, ৭০ জন। নেয়নি ৩০ জন। 
    এখন ভ্যাকসিন নিয়েছে কোভিড হয়নি =   জন।  ভ্যাকসিন নিয়েছে তবু কোভিড হয়েছে=  জন।
    ভ্যাকসিন নেয়নি তবু কোভিড হয়নি= ২৩ জন। ভ্যাকসিন নেয়নি কোভিড হয়েছে= ৭ জন।
     এবার এর থেকে ভ্যাকসিনের এফিকেসি ক্যালকুলেট করার ডায়াগ্রাম? বেইস' থিওরেম মেনে? 
    মনে তাহলে ভ্যাকসিন না নেওয়ার যুক্তিটা অনেকে বুঝতে পারবেন। নিদেনপক্ষে কো-ইন্সিডেন্স আর কোরিলেশনের ফারাকটা।
  • দেবাশিস্ ভট্টাচার্য | 223.19.***.*** | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৪৩502906
  • "ব্যায়েস' থিওরেম" টিওরেম জাতীয় ভারি ভারি কথা বলে আমার মতন ম্যাঙ্গো পিপল-কে ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন কেন? যদ্দুর জানি, এটা একটা সহজ পাটিগাণিতিক হিসেব। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে খুব সম্ভবত এফিকেসি ঋণাত্মক আসবে, যা আদৌ ঘটেনি, বা তার ধারেকাছেও কিছু ঘটেনি। মেটা-অ্যানালিসিস বলছে, সব ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই এফিকেসি ৮০-৯০ সীমার ধারেকাছে ঘোরাফেরা করছে।
  • ভুতুম | 216.105.***.*** | ২০ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৫৬502907
  • ওটা ব্যাসের ফর্মুলা। সায়েবরা চুরি করে নিয়েছিল আর এখন দেবাশীষ ভটচাজের মত ঔপনিবেশিক চামচে দুপাতা ইংরিজি পড়ে নাপায়।
  • দেবাশিস্ ভট্টাচার্য | 223.19.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২২ ০০:০৪502908
  • বোলচি বোলচি, ইয়ার্কি মার্বেন্নাকো। 
  • &/ | 151.14.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২২ ০০:১০502909
  • সায়েবরা তো ভিয়াস বলেন। মানে ব্যাসকে। ঃ-)
  • দেবাশিস্ ভট্টাচার্য | 223.19.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২২ ০০:২৯502910
  • ভ্যাকসিনের এফিকেসি হিসেবের ফর্মুলাটা এই রকম। প্রথমে দেখতে হবে, ভ্যাকসিন না দেওয়া কন্ট্রোল গ্রুপে কত শতাংশ সংক্রামিত হচ্ছে। তারপর দেখতে হবে, ভ্যাকসিন দেওয়া দলে কত শতাংশ সংক্রামিত হচ্ছে। এবারে দ্বিতীয়টাকে প্রথমটা দিয়ে ভাগ করলে যেটা পাওয়া যাবে যে সংখ্যাটা, তাকে বলে 'রিলেটিভ রিস্ক' (RR)। এই 'রিলেটিভ রিস্ক' সংখ্যাটাকে এক থেকে বাদ দিলেই এফিকেসি পাওয়া যাবে, কিন্তু সেটা  ভগ্নাংশে। কাজেই, একে একশো দিয়ে গুণ করে শতকরা বানিয়ে নিলেই মিলবে হাতে গরম 'ভ্যাকসিন এফিকেসি'। কেন এ রকম হিসেব, বোঝা খুব কঠিন না। দুই ক্ষেত্রে সংক্রমণের অনুপাত (রিলেটিভ রিস্ক) থেকে বোঝা যায়, ভ্যাকসিন না নিলে সংক্রমণের সম্ভাবনা, তা না নিলে যে  সম্ভাবনা, তার তুলনায় কত অংশ। এক থেকে সেটা বাদ দিলে পাই, ভ্যাকসিন নিলে সংক্রমিত না হবার সম্ভাবনা কত শতাংশ বাড়তে পারে। হিসেবটা দেখাচ্ছি।
  • হ্যাঁ হ্যাঁ | 104.225.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২২ ০০:৩৬502911
  • টুক করে উইকিপিডিয়া দেখে হিসেব নামিয়ে দিন। হাতে-গরম কোভিড বিশেষজ্ঞ।
  • কইরে ভাই? | 198.7.***.*** | ২১ জানুয়ারি ২০২২ ০০:৫২502912
  • কইগো দেবাশিসবাবু? ভাগ করতে ভুলে গেলেন নাকি? এত দেরী করলে চলবা? করোনা যে ফুইরে গেল!
     
    পাটীগণিতের বই খুলে শতকরার অঙ্কটা ঝালিয়ে নিন মশাই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন