মজাটা হল নিজেরা মনুসঙ্ঘিতা পড়েন নি, কিন্তু মনুসঙ্ঘিতাকে শ্রদ্ধা করতে হবে!কেউ যদি পড়ে সমালোচনা করেন তো তাকে 'কমি' বলে গাল পাড়তে হবে, সে কমি হোক বা নাও হোক।
প্রশ্নটা হল মনুসঙ্ঘিতায় দলিতদের কতটুকু অধিকার বা সম্মান দেওয়া হয়েছে?
খেয়াল করেন না যে ইসানীং আর এস এস এর প্রমুখ মোহন ভাগবত জী সুর বদলে বলছেন-- দু'হাজার বছর ধরে দলিতেরা নির্যাতিত হয়েছে। যতদিন এই অসাম্য থাকবে ততদিন রিজার্ভেশন থাকবে।
আমাদের সমাজের একাংশ যদি ২০০০ বছর ধরে এত অন্যায় সহ্য করে থাকে তাহলে আমরা রিজার্ভেশন আরও ২০০ বছর ক্যান সহ্য করতে পারব না?
(সূত্রঃ অমর উজালা, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩)
সবিনয়ে বলি, আমার ঘরে তিন মনুসং হিতা আছে। দুটো বাংলায়, একটা হিন্দিতে।
বাংলায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুরেশ্চন্দ্রের সটীক অনুবাদ, আনন্দ পাবলিশার্স। নিজেরাই কিনে পড়ে দেখুন।
আর রয়েছে দুশো বছরের পুরনো ভরত চন্দ্র শিরোমণির বই। দুটোতেই মেধাতিথির ভাষ্য এবং বাঙালী কুল্লুক ভট্টের ভাষ্য সম্মিলিত। এছাড়া রয়েছে হিন্দিতে আরেকটি বই। তিনটেতেই মনুস্মৃতির বারোটি অধ্যায়ের সব শ্লোক অবিকৃত রয়েছে।
যদি চান, একেবারে শ্লোক এবং তার সংখ্যা উদ্ধৃত করতে পারি।
সেটার জবাব দিতে হলে গাল মন্দ না করে পালটা শ্লোক উদ্ধৃত করে দেখান যে আমি ভুল বলছি।
ওতে অমন কিছু নেই।
রবীন্দ্রনাথ রথের রশি আর অচলায়তনের দর্ভক এবং শোনপাংশুদের এমনি এমনি সৃষ্টি করেন নি।
শূদ্রদের জন্য কিছু বিধান দেখুনঃ
শূদ্র ব্রাহ্মণের দাসত্বের জন্যেই ব্রহ্মা কর্তৃক সৃষ্ট হয়েছে। প্রভু কর্তৃক অন্য দাসেরা মুক্ত হলেও শূদ্র দাসত্ব থেকে মুক্ত হয় না। দাসত্ব তার স্বভাবে রয়েছে (৮/৪১৩, ৪১৪)।
উচ্চ তিন বর্ণের উপনয়ন হয়ে দ্বিজ বা দ্বিতীয় জন্ম হয় ।শূদ্রের উপনয়নে অধিকার নেই, সে বেদপাঠের অধিকারী নয় । দ্বিজের মতো উপবীত বা অন্যান্য চিহ্ন ধারণ করলে শূদ্রের মৃত্যুদন্ড বিধেয়(৯/২২৪)।
ব্রাহ্মণের তপস্যা হল জ্ঞান ,ক্ষত্রিয়ের তপস্যা রক্ষা করা, বৈশ্যের তপস্যা কৃষি এবংগো-পালন, শূদ্রের তপস্যা দ্বিজগণের সেবা করা(১১/২৩৫)।
কোন প্রকার সংস্কারে শূদ্রকে অধিকার দেওয়া হয়নি(১০/১২৬)।বর্ণত্রয়ের, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের সেবাই শূদ্রের একমাত্র বৃত্তি।
প্রভুর ফেলে দেয়া ছেঁড়া কাপড়,ছাতা, খড়ম ও তোষক প্রভৃতি শূদ্র ব্যবহার করবে।প্রভুর খাওয়া হয়ে গেলে পড়ে থাকা এঁটো খাবার তার ভক্ষ্য বা খাদ্য। (১০/১২৩,১২৫)
যজ্ঞে পাওয়া জিনিষপত্র ব্রাহ্মণ কখনও শূদ্রকে দেবেন না (৪/৮০)।
শূদ্রের নিষিদ্ধদ্রব্য খাওয়ায় পাপ নেই, সে উপনয়নাদি সংস্কারের যোগ্য নয়, ধর্মে তার অধিকার নেই ।(১০/১২৬)।
দাসবৃত্তি থেকে শূদ্রের কোনও প্রকার মুক্তি নেই। “ন স্বামিনা নিসৃষ্টোঅপি শূদ্রোদাসাদ বিমুচ্যতে”( মেধাতিথির ভাষ্য )।
মনু বলছেন যে শূদ্র সক্ষম হলেও ধনসঞ্চয় করবে না । কারণ শূদ্র ধনলাভ করলে গর্ববশে ব্রাহ্মণকে পীড়া দিতে পারে (১০/১২৯)। ব্রাহ্মণ কখনও শূদ্ররাজার রাজ্যে বাস করবেন না (৪/৬১)।
যে পথ দিয়ে উচ্চবর্ণের লোকেরা যাতায়াত করেন, সেই পথে শূদ্রের মৃতদেহ বহন করা চলবে না (৫/৯২)।
বিবাহ সম্বন্ধে মনুর বক্তব্য নিজের নিজের জাতে বিয়ে করাই ভাল, নইলে সন্তান বর্ণসংকর (বাস্টার্ড) হয় । তবে অনুলোম বিবাহ, অর্থাৎ যদি পিতা উচ্চবর্ণের মাতা নিম্নবর্ণের হয় তাহলে সিদ্ধ । তাতে সন্তানের জাত মায়ের থেকে উচ্চ কিন্তু পিতার থেকে নিম্ন হবে। সে পিতার ভাল গুণ পাবে।কিন্তু প্রতিলোম বিবাহ – মাতা উচ্চবর্ণের, পিতা নিম্নবর্ণের—অসিদ্ধ। এদের সন্তানের স্থান পিতার থেকে নিচে, এরা পিতার নীচ গুণ পাবে। যেমন শূদ্র ব্রাহ্মণীকে বিয়ে করলে সন্তান ‘নরাধম চন্ডাল’ হবে (১০/১৬)।
চন্ডালদের আশ্রয় গ্রামের বাইরে।এদের ধন বলতে কুকুর ও গাধা। এদের জলপাত্র দিতে নেই।এদের খাবার দিতে হবে চাকরের হাত দিয়ে ভাঙা বাসনে। এরা পরবে শ্মধানের মড়ার কাপড়, লোহার গয়না, বইবে অনাথ শব, কিন্তু রাত্তিরে গ্রামনগরে ঘুরে বেড়ানো মানা। রাজাদেশে দন্ডিত ব্যক্তিদের বধ করা এদের কাজ—মানে আজকালকার জেলের ফাঁসুড়ে।(১০/৫১ –৫৬)।