এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • বঙ্কিমের বাঙ্গালা : দেড়শ বছর পর একটা শিক্ষাসফর

    Irfanur Rahman Rafin লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ০৭ জুন ২০২২ | ৪২১৪ বার পঠিত
  • ১৮৭৪ সাল থেকে ১৮৮৪ সালের মধ্যে বঙ্গদর্শন ও প্রচার‘এ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলার ইতিহাস বিষয়ে চারটি প্রবন্ধ লেখেন। সম্প্রতি সেগুলো জড়ো করে প্রকাশ করেছে স্পার্ক। প্রবন্ধ চারটি, যথাক্রমে —
     
    ১ বাঙ্গালার ইতিহাস
    ২ বাঙ্গালার কলঙ্ক
    ৩ বাঙ্গালার ইতিহাস সম্বন্ধে কয়েকটি কথা
    ৪ বাঙ্গালার ইতিহাসের ভগ্নাংশ কামরূপ-রঙ্গপুর
     
    ততদিনে পলাশী কাণ্ডের শতবর্ষ পার হয়ে গেছে। সিপাহীদের পরাজয়ে অবসান ঘটেছে মুঘল আমলের, আর ভারতবর্ষে শুরু হয়েছে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার রাজত্ব। প্রবন্ধগুলো পড়ার সময় কনটেক্সটটা মাথায় রাখতে হবে।
     
    ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’ শুরু হয়েছে হাহাকারের মধ্য দিয়ে। সকলেরই ইতিহাস আছে, শুধু বাংলার ইতিহাস নাই। এর কারণ বঙ্কিম খুঁজে পেয়েছেন ‘দেব ভক্তিতে’, আর ‘গর্বের অভাবে’; বাঙালি তাঁর নজরে ‘হতভাগ্য জাতিদিগের মধ্যে অগ্রগণ্য’।
     
    উদ্যমী বঙ্কিম তাই ‘বাঙ্গালার ইতিহাসের উদ্ধার’-এ নেমেছেন। সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছেন ‘বাবু’ রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়। একটা ‘বাল্যপাঠ্য পুস্তক’ নিয়ে।
     
    মুখোপাধ্যায়ের সহযোগিতা নিয়ে চট্টোপাধ্যায় যে-ইতিহাস উদ্ধার করলেন, তার সারকথা হল এই, এককালে সিংহল-যবদ্বীপ-বালিদ্বীপ সব বাঙালির উপনিবেশ ছিল। এমনকি উত্তর ভারতেও ছিল এই জাতির উপনিবেশ। তাই তারা ‘ক্ষুদ্র জাতি’ হতে পারে না।
     
    কিন্তু কেনো বঙ্কিমের এত বড় হওয়ার সাধ? অনুমান করা যায়, ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনজাত হীনম্মন্যতা! বাঙালি যে ব্রিটিশের চেয়ে কম কিছু নয়, দখলদারিত্বে সমান সমান, তা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে গেছিলেন বঙ্কিম।
     
    পাঠানদের ব্যাপারে আপাতদৃষ্টিতে অপেক্ষাকৃত উদারতা দেখিয়েছেন তিনি। স্বাধীন পাঠানদের শাসনকে বাঙালির জন্য আশীর্বাদ ভেবেছেন। যথার্থই দাবি করেছেন, এটা বাংলার শিল্প সাহিত্যের উৎকর্ষের কাল ছিল, স্থাপত্যেও উৎকর্ষের সাক্ষ্য দেয় গৌড় বা পাণ্ডুয়া।
     
    কিন্তু এই উদারতার পেছনে আসলে কী আছে? সেটা বুঝতে হলে পরাধীনতা বলতে বঙ্কিম কী বুঝতেন সেটা আগে বুঝতে হবে আমাদের! তো, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরাধীনতা সম্পর্কে ঘোষণা করছেন —

    “রাজা ভিনজাতীয় হইলেই রাজ্যকে পরাধীন বলিতে পারা যায় না।”

    কেন যায় না?

    “সে সময়ের জমিদারদিগের যেরূপ বর্ণনা দেখিতে পাওয়া যায়, তাহাতে তাঁহাদিগকেই রাজা বলিয়া বোধ হয়; তাঁহারা করদ ছিলেন মাত্র।”

    বঙ্কিমের বিশ্বাসে বাংলায় পাঠান শাসনেও যেহেতু স্থানীয় জমিদাররাই (এদের ধর্মীয় পরিচয় একটু পরেই পাব) রাজা ছিলেন, তাই মুঘল সম্রাট জালালুদ্দিন আকবরের অধীনস্ত হওয়ার সময় থেকেই বাংলার প্রকৃত পরাধীনতার শুরু, এই রায় দিচ্ছেন তিনি। আবেগমথিত ভাষায় মুঘলদের অর্থনৈতিক শোষণের সমালোচনা করছেন, যদিও তারচে শতগুণ বেশি শোষণ করা ব্রিটিশদের ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকেছেন। বলছেন, “মোগলই আমাদের শত্রু, পাঠানই আমাদের মিত্র”

    এই ‘আমরা’ কারা?

    দ্বিতীয় প্রবন্ধ ‘বাঙ্গালার কলঙ্ক’-এ এর জবাব পাই।

    এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি এরকম দুটি লাইন,

    “… বাঙ্গালি মুসলমান কর্তৃক পরাজিত হইয়াছিল…”

    “… বাঙ্গালি পাঁচশত বৎসর মুসলমানের অধীন ছিল…”

    চতুর্থ প্রবন্ধ ‘বাঙ্গালার ইতিহাসের ভগ্নাংশ কামরূপ-রঙ্গপুর’-এ দেখছি,

    “বাঙ্গালির দেশ, মুসলমানেরা কখনোই একচ্ছত্রাধীন করিতে পারেন নাই।”

    পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, বঙ্কিমের বোধে এই ‘আমরা’ হচ্ছেন বর্ণ হিন্দুরা, ‘বাঙ্গালি’ বলে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আসলে এঁদেরকেই বুঝিয়েছেন।

    তবু কারো মনে যদি সন্দেহ রয়ে যায়, সেটি দূর করে দেবে তৃতীয় প্রবন্ধ।

    এখানে এসে বাঙালিকে নিম্নরূপে সংজ্ঞায়িত করছেন বঙ্কিম,

    “আত্মজাতিগৌরবান্ধ, মিথ্যাবাদী, হিন্দুদেষী মুসলমানের কথা যে বিচার না করিয়া ইতিহাস বলিয়া গণ্য করে, সে বাঙ্গালি নয়।”

    ঐতিহাসিক মিনহাজের সমালোচনা করছেন বঙ্কিম এই ভাষায়,

    “… সেই গোহত্যাকারী, ক্ষৌরিতচিকুর মুসলমানের স্বকপোলকল্পনের উপর তোমার বিশ্বাস।”

    বঙ্কিম যে বাঙালি বলতে বর্ণ হিন্দুদেরকে বুঝতেন, মুসলমানদেরকে ভাবতেন তাদের ওপর উৎপীড়ন চালান ভিনজাতি, তার পক্ষে আর কোনো প্রমাণ পেশ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। অবশ্য পাঠানরা ভিনজাতি হলেও বঙ্কিমের নজরে মিত্র, কারণ তাঁর বিশ্বাসে এঁরা হিন্দু জমিদারদের (বঙ্কিমের ভাষায় ‘রাজা’) কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন নি, এই ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন মুঘলরা। বঙ্কিমের বিশ্বাস ভুল, মুঘল শাসনেও প্রশাসনিক উচ্চপদগুলো যে বর্ণ হিন্দুদেরই দখলে ছিল, আজকে তা সর্বজনস্বীকৃত ঐতিহাসিক সত্য।

    শুধু জাতিধারণায় না, বঙ্কিমের ভাষাধারণায়ও ঝামেলা আছে।

    দেখতে পাই তৃতীয় প্রবন্ধের এক জায়গায় লিখেছেন,

    “বাঙ্গালা ভাষা আত্মপ্রসূতা নহে। সকলে শুনিয়াছি, তিনি সংস্কৃতের কন্যা; কুললক্ষণ কথায় কথায় পরিস্ফুট। কেহ কেহ বলেন, সংস্কৃতের দৌহিত্রীমাত্র। প্রাকৃতই এঁর মাতা। কথাটায় আমার বড়ো সন্দেহ আছে। হিন্দি, মারহাট্টা প্রভৃতি সংস্কৃতের দৌহিত্রী হইলে হইতে পারে, কিন্তু বাঙ্গালা যেন সংস্কৃতের কন্যা বলিয়া বোধ হয়।”

    কেন ‘বড়ো সন্দেহ’ আছে বাংলার প্রাকৃতকন্যা হওয়ায়? কেন ‘বোধ হয়’? ভাষাতাত্ত্বিক কারণ দর্শালেও সেটাই কি আসল কারণ?

    উনিশশতকে রেসিস্ট ইওরোপিয়ানরা নিজেদেরকে ‘আরইয়ান’ মনে করত। জার্মান ম্যাক্স মুলার সেসময় একটা প্যাঁচ লাগান। আদি হিন্দুশাস্ত্রে আর্য শব্দটি আবিষ্কার করেন তিনি, এবং সিদ্ধান্ত টানেন, এই আর্য হচ্ছে সংস্কৃতে ইওরোপের আরইয়ান‘র প্রতিশব্দ। সংস্কৃতকে একটি আর্য ভাষা মনে করা হয়। প্রাকৃত জনসাধারণের ভাষা। তাই বঙ্কিম বাংলাকে বানাতে চেয়েছেন সংস্কৃতের কন্যা। উদ্দেশ্যটা অত্যন্ত পরিষ্কার, জাতির মত ভাষা প্রশ্নেও ব্রিটিশকে ঠেস দেয়া, যেন সাহেবদের সমীহ আদায়ে সুবিধা হয় বাবুদের।

    তবে মুসলমানদের সবাই যে বহিরাগত নন, সেটা স্বীকার করে নিচ্ছেন বঙ্কিম, কৃষিজীবী মুসলমানকে ‘দেশীয় লোক’-এর মর্যাদা দিচ্ছেন।

    তৃতীয় প্রবন্ধের একেবারে শেষে এসে লিখছেন তিনি,

    “এখন তো দেখিতে পাই, বাঙ্গালার অর্ধেক লোক মুসলমান। ইহার অধিকাংশই যে ভিন্ন দেশ হইতে আগত মুসলমানদিগের সন্তান নয়, তাহা সহজেই বুঝা যায়। কেননা ইহারা অধিকাংশই নিম্নশ্রেণির লোক — কৃষিজীবী। […] দেশীয় লোকের অর্ধেক অংশ কবে মুসলমান হইল? কেন স্বধর্ম ত্যাগ করিল? কেন মুসলমান হইল? কোন জাতীয়েরা মুসলমান হইয়াছে?”

    বঙ্কিম এই প্রবন্ধ শেষ করেছেন এই বলে, “বাঙ্গালার ইতিহাসে ইহার অপেক্ষা গুরুতর তত্ত্ব আর নাই।” এই লাইনটা পড়ে রীতিমতো কৌতূহল জাগে! বাংলার ইতিহাসে অনুসন্ধান করার মত চিত্তাকর্ষক বিষয়ের অভাব নাই (একটা বিশাল তালিকা বঙ্কিম নিজেই দিয়েছেন এই প্রবন্ধটিতে), তার মধ্যে মুসলমানদের এই ‘স্বধর্ম ত্যাগ’-ই কেন সবচে ‘গুরুতর তত্ত্ব’ মনে হল এই সৃষ্টিশীল কথাসাহিত্যিকের কাছে?

    চতুর্থ প্রবন্ধ মূলত কামরূপ আর রঙ্গপুর নিয়ে। এই প্রবন্ধে বঙ্কিম একটা কৌতূহলউদ্দীপক দাবি তুলেছেন৷ সেটা হল ঐতিহাসিকভাবে বাঙ্গালা অখণ্ড ছিল না। ভিন্ন ভিন্ন ‘অনার্য জাতির’ দেশের সমষ্টি ছিল। এই দেশগুলোকে জোড়া লাগিয়ে বাঙ্গালা বানাল কারা? বঙ্কিমের বিশ্বাসে, ‘আর্য’-রা। তারা ‘এক ধর্ম, এক ভাষার’ জোরে সবাইকে এক করে ‘আধুনিক বাঙ্গালায়’ পরিণত করল।

    এই শেষ দাবিটা বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আজকের বাংলাদেশকে এক ধর্ম (ইসলাম) আর এক ভাষার (বাংলা) দেশ হিশাবে দেখার রাষ্ট্রপ্রকল্প খুব প্রবলভাবেই হাজির আছে। ইন্ডিয়াতেও ক্ষমতাসীন দলের শ্লোগান ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানে’ দেশটিকে এক ধর্ম (হিন্দুধর্ম) আর এক ভাষার (হিন্দি) হিশাবে দেখার রাষ্ট্রপ্রকল্প বর্তমান, যার আছর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ওপর পড়বে না, এমন আশা বাতুলতা। এই দুয়ের শেকড়ই আমরা পাচ্ছি বঙ্কিমের রাষ্ট্রচিন্তায়। তাঁর ইতিহাস ভাবনায়। যা আবার তৈরি হয়েছে কলোনিয়াল কলকাতায় বসে। দুর্ভাগ্যবশত আমরা এখনো ‘বঙ্কিমের বাঙ্গালা’-য় বাস করছি, ধর্ম আর জাতি নিয়ে আমাদের আধিপত্যশীল ভাবনা রেসিস্টই রয়ে গেছে।
     
    আজকে আমরা অনেকেই গণতন্ত্রের কথা বলে থাকি। ধর্ম আর ভাষা প্রশ্নে এর মানে কী? বহুত্বকে ধারণ করা। এক দেশে বহু জাতির সহাবস্থানের পক্ষ নেয়া। ‘বঙ্কিমের বাঙ্গালা’-য় এই গণতন্ত্র পাওয়া যাবে না। সীমান্তের দুইদিকেই রেসিস্ট রাষ্ট্রচিন্তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাহলেই গণতন্ত্রের দিকে এক কদম আগাব আমরা।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৭ জুন ২০২২ | ৪২১৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2401:4900:3a0b:2d16:89e6:8f7a:44c3:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৭:৫৮508695
  • বঙ্কিমের লেখাকে কখনোই নির্বিচারে মেনে নেবার কথা বলা হয়নি। উনিশ শতকের কোনো লেখকের লেখা বিনা প্রশ্নে মেনে নিলে তার আমাদের চিন্তার ব্যর্থতাকেই প্রতিপন্ন করবে। কিন্তু প্রসঙগবিচ্ছিন্ন উদ্ধৃতি দিয়ে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা চূড়ান্ত বিরক্তির উদ্রেক করে।
    বঙ্কিমের যুক্তিকে খণ্ডন করতে হবে, শুধু গালি দিয়ে কোনো লাভ হবেনা! 
    আর প্রসঙগবিচ্ছিন্ন উদ্ধৃতি দিয়ে বঙ্কিমের মতো অসামান্য প্রতিভাকে বোঝা সম্ভব নয়, তার জন্ম তথ্যনিষ্ঠ বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন।
  • দীপ | 2401:4900:3a0b:2d16:89e6:8f7a:44c3:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৮:০৩508696
  • আর মাতব্বর এলেবেলে মহোদয় বোধহয় ভুলে গেছেন, আনন্দমঠ উপন্যাসের ভিত্তিই ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, মে উপন্যাসের জন্য বঙ্কিমকে কর্মক্ষেত্রে চূড়ান্ত অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। 
    তথ্যনিষ্ঠ আলোচনা আর মিথ্যা প্রোপাগান্ডার মধ্যে পার্থক্য আছে।
  • দীপ | 2401:4900:3a0b:2d16:89e6:8f7a:44c3:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৮:০৬508698
  • আর বন্দে মাতরম বিপ্লবীদের শপথবাক্য হয়ে উঠল, তার জন্য‌ও বঙ্কিম দায়ী? এ তো আজব চিড়িয়া!
  • q | 2405:8100:8000:5ca1::91:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৮:৩৪508701
  • বঙ্কিম বন্দে মাতরম মন্ত্র দিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ দিলেন সত্যম শিবম সুন্দরম। একটা বিপ্লবীরা নিল,অন্যটা রাজ কাপুর।
  • Ranjan Roy | ১০ জুন ২০২২ ০০:১২508710
  • দীপ,
    ১  নেহেরু ও রাহুল সাংকৃত্যায়ন বঙ্কিমের পরের প্রজন্ম। তাঁদের লেখা পড়ে ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ আমি না হয় বুঝে যাব। কিন্তু বঙ্কিম? ওঁর লেখাতে তো কোন জায়গায় "ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ" শব্দবন্ধটি দেখছি না। অথচ আপনি বলছেন উনি "ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ"কে ঘৃণা করতেন। তাই  জিগাইলাম, কন্টেক্সট বুঝতে পারছি না।
    ২ রাহুল সাংকৃত্যায়নের কোন বইটা পড়তে বলছেন?
    আপনি বলেছেনঃ "
    • ভারতে মোগল শাসনের দীর্ঘস্থায়ী হবার অন্যতম কারণ মোগল শাসকেরা ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ জোর করে চাপাতে চাননি, তাঁরা শাসক হিসেবে অনেক উদার চিন্তার পরিচয় দিয়েছেন। এক‌ইভাবে মহীশূরে হায়দার আলী, টিপু সুলতান উদার মানসিকতার প্রকাশ করেছেন। বাংলায় আলীবর্দী খাঁও উদারতা দেখিয়েছেন। জোর করে অন্য কিছু চাপিয়ে দেননি!" । মানে আপনি বলছেন ভারতে মোগল সাম্রাজ্য ছিল, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ ছিলনা।
    • হক কথা। মোগলের পর বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ এল। আরও পাজি লুঠেরা। মোগলরা এদেশেই থেকে গেছল। এখানকার ধনসম্পদ লুঠে নিজের দেশে নিয়ে যায়নি। এখানকার হস্তশিল্পের মা -মাসি করে দেয় নি।
    • তাহলে বঙ্কিম বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ এর বিরুদ্ধে পবিত্র ক্রোধে জ্বলে না  উঠে ভারতে যে সাম্রাজ্যবাদ নেই তাকে আক্রমণ করে বসলেন কেন?
  • দীপ | 42.***.*** | ১০ জুন ২০২২ ০০:১৮508711
  • আর বঙ্কিম আনন্দমঠের পরবর্তী সংস্করণে ইংরেজ শাসনের সরাসরি বিরোধিতা করেন নি বটে, কিন্তু আনন্দমঠের মূল উদ্দেশ্য বুঝতে শিক্ষিত বাঙালি সমাজের ভুল হয়নি। সেজন্য‌ই ব্রিটিশ পুলিশের রিপোর্টেই বলা হয় বিপ্লবীরা আনন্দমঠের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত! এখানেই বঙ্কিমের সৃষ্টির সার্থকতা!
  • দীপ | 42.***.*** | ১০ জুন ২০২২ ০০:২৩508713
  • মোগলরা অবশ্য‌ই সাম্রাজ্য বিস্তার করেছেন, কিন্তু শাসনক্ষেত্রে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। ভারতকে জোর করে ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেননি। এখানেই তাঁদের বাস্তববুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন।
    আর আনন্দমঠে দ্বৈত শাসনকালের যে ভয়াবহ ছবি দেখানো হয়েছে, তার মধ্যে বিন্দুমাত্র ভুল‌ নেই। অপদার্থ নবাবী শাসনের প্রতি বঙ্কিমের ক্রোধ বিন্দুমাত্র অসঙ্গত নয়!
  • এলেবেলে | 2402:3a80:113a:8e51:bfa8:a71b:4eaf:***:*** | ১০ জুন ২০২২ ০০:২৭508714
  • আমি একটা বিশেষ কাজে আপাতত কলকাতায়। আগামী রবিবার পর্যন্ত থাকতে হবে। তাই টেকনিক্যাল অসুবিধা হেতু এখানে টাইপ করতে পারছি না। তবে এই আলোচনায় অংশ নিতে ইচ্ছুক। আশা করি আগামী সোমবার আলোচনায় অংশ নিতে পারব। 
     
    গাধা পাঁঠা ছাগল - এগুলো বাদ গিয়েছে। এবারে মাতব্বর নামক মুদ্রাদোষটি বাদ দিলে বড় ভালো হয়।
  • anupam | 160.238.***.*** | ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৩:০৪516933
  • আর মোগল সাম্রাজ্যের পতনের পর গোটা দেশ জুড়েই মাৎসন্যায় চলতে থাকে। নিজেদের স্বার্থে ই ইংরেজকে এই মাৎসন্যায়ের অবসান‌ ঘটিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হয়। শিক্ষিত ভারতীয়দের এক বিরাট অংশ তাই ইংরেজ শাসনকে আশীর্বাদ মনে করতেন। রামমোহন‌ও তাই করেছেন। ১৮৫৭এর মহাবিদ্রোহের সময় শিক্ষিত বাঙালি সমাজ মহাবিদ্রোহের চরিত্র নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তাঁরাও ইংরেজ শাসনকে আশীর্বাদ বলেই মনে করতেন, বঙ্কিম একা নন! 
  • দীপ | 42.***.*** | ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৪:০৮516938
  • উঁহু, মহাবিপ্লবী মাতব্বরদের মতে সবকিছুর জন্য দায়ী বঙ্কিম! বাংলায় আগে কোনো সমস্যা ছিলনা, বঙ্কিম এসে গোলমাল লাগিয়েছে। বঙ্কিমের জন্য‌ই নাকি দেশভাগ হয়েছে! 
    বঙ্কিম তো নোয়াখালীতে দাঙ্গা লাগাতে গিয়েছিল!
  • দীপ | 42.***.*** | ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৪:২৩516939
  • সাধারণ মানুষ চিরকাল অত্যাচারিত হয়েছে। কখনো তারা হিন্দু উচ্চবর্ণের দ্বারা হয়েছে, কখনো পাঠান-মোগলের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। তারপর ব্রিটিশ তাদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে, বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক দল ও তাদের সহযোগী কর্পোরেট গোষ্ঠী সাধারণ মানুষকে শোষণ করছে।
    কিন্তু পাঠান-মোগল আমলের অত্যাচারের কথা বললেই সে সাম্প্রদায়িক! 
    চমৎকার!
  • দীপ | 42.***.*** | ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৪:২৯516940
  • যে মাতব্বরেরা বঙ্কিমের বাংলায় গণতন্ত্র নেই বলে কান্নাকাটি করছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে রাখি; পাঠান-মোগল আমলের কোনো গণতন্ত্র ছিলনা। স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তখন প্রচলিত ছিল।
     
    সেজন্য‌ই বিশ্বম্ভর মিশ্রকে নবদ্বীপে কাজীর অন্যায় আদেশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়!
  • Sujit Roychoudhury | 2001:67c:6ec:203:192:42:116:***:*** | ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৪:৪০516941
  • আগের একটা পোস্টে দেখলাম আনন্দমঠের ডায়ালগ. ধর্ম বিদ্বেষের চাষ করছিলেন বঙ্কিম. একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষদের খতম করার জন্য খুল্লমখুল্লা ডাক দিয়েছিল. 
     
    বিদ্বেষ | 2405:8100:8000:5ca1::35:eae1 | ০৯ জুন ২০২২ ০৪:২৬508635
     
    আনন্দমঠ এ মুসলিমবিদ্বেষ ছড়ানো, তার মধ্যে থেকে কয়েকটি -
     
    *** ***
    "ভাই, এমন দিন কি হইবে, মসজিদ ভাঙ্গিয়া রাধামাধবের মন্দির গড়িব?" [ ৩য় খণ্ড, ৮ম পরিচ্ছেদ ]
    *** ***
    সত্যানন্দ বলিলেন, “এত দিন যে জন্য আমরা সর্ব্বধর্ম্ম সর্ব্বমুখ ত্যাগ করিয়াছিলাম, সেই ব্রত সফল হইয়াছে, এ প্রদেশে যবন সেনা আর নাই, যাহা অবশিষ্ট আছে, এক দণ্ড আমাদিগের নিকট টিকিবে না, তোমরা এখন কি পরামর্শ দাও ?” [ ৩য় খণ্ড, ১২তম পরিচ্ছেদ ]
    *** ***
    সেই এক রাত্রের মধ্যে গ্রামে গ্রামে নগরে নগরে মহাকোলাহল পড়িয়া গেল। সকলে বলিল, “মুসলমান পরাভূত হইয়াছে, দেশ আবার হিন্দুর হইয়াছে। সকলে একবার মুক্তকণ্ঠে হরি হরি বল।” [ ৪র্থ খণ্ড, ১ম পরিচ্ছেদ ]
    *** ***
    তখন ডাকিয়া সস্তানগণকে বলিলেন, “সন্তানগণ! ঐ দেখ, শিখরে প্রভু সত্যানন্দ গোস্বামীর ধ্বজ দেখা যাইতেছে। আজ স্বয়ং মুরারি মধুকৈটভনিসূদন কংশকেশি-বিনাশন রণে অবতীর্ণ, লক্ষ সস্তান স্তৃপপৃষ্ঠে। বল হরে মুরারে হরে মুরারে। উঠ ! মুসলমানের বুকে পিঠে চাপিয়া মার! লক্ষ সম্ভান টিলার পিঠে।” তখন হরে মুরারের ভীষণ ধ্বনিতে কানন প্রাস্তুর মথিত হইতে লাগিল। [ ৪র্থ খণ্ড, ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ ]
    *** ***
    তিনি বলিলেন, “তোমার কার্য্য সিদ্ধ হইয়াছে, মুসলমানরাজ্য ধ্বংস হইয়াছে। আর তোমার এখন কোন কার্য্য নাই। অনর্থক প্রাণিহত্যার প্রয়োজন নাই ।” [ ৪র্থ খণ্ড, ৮ম পরিচ্ছেদ ]
    *** ***
  • দীপ | 42.***.*** | ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৫:১১516943
  • বঙ্কিম এখানে অপদার্থ নবাবী শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্রোধ প্রকাশ করেছেন, অত্যাচারী অপদার্থ শাসকের নিপাত চেয়েছেন। 
    আজ থেকে পাঁচশো বছর আগে নবদ্বীপে বিশ্বম্ভর মিশ্র‌ও এই কাজ করেছিলেন। কাজীর অন্যায় আদেশের বিরুদ্ধে তিনি রুদ্রমূর্তিতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ক্রুদ্ধ বিশ্বম্ভর ও তাঁর সহযোগীদের দেখে কাজী বাড়িতে লুকিয়ে পড়েন। ক্রুদ্ধ বিশ্বম্ভর কাজীর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিতে বলেন। অন্যান্য সহযোগীরা তাঁকে নিরস্ত করেন। শেষপর্যন্ত কাজী ক্ষমা চেয়ে তাঁর আদেশ প্রত্যাহার করেন।
  • দীপ | 42.***.*** | ০৩ মার্চ ২০২৩ ১৫:১৬516944
  • আর উদ্ধৃত অংশেই তো মহাপুরুষ সত্যানন্দকে বলেছেন; অত্যাচারী  শাসকের পরাজয় হয়েছে, আর প্রাণহত্যার প্রয়োজন নেই! 
    কোথায় একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে হত্যার ডাক দেওয়া হচ্ছে?
  • সুদীপ কুমার বসু | 2001:67c:6ec:203:192:42:116:***:*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ০৯:২৯516962
  • এসব বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন !!!
    আমি আনন্দমঠ পড়িনি। ওনার অন্য লেখাও বেশি পড়িনি। মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ করতে হবে - এসব উনি লিখেছেন, উনার সম্বন্ধে ধারণা একটু বদলে গেল।  
  • দীপ | 2402:3a80:196b:a191:4bda:9a3f:2762:***:*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১০:০৭516963
  • একদম ঠিক বলেছেন। পাক্কা বিজেপির লোক ছিল।
    তবে উনি কমলাকান্তের দপ্তর, সাম্য এসব‌ও লিখেছেন। একটু কষ্ট করে পড়ে নিতে পারেন।
    বাংলা সাহিত্য নিয়ে বিশেষ‌ কিছু পড়েননি তা বুঝতেই পারছি। 
  • দীপ | 2402:3a80:196b:a191:4bda:9a3f:2762:***:*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১০:১০516964
  • আপনার ধারণা বদলে যাওয়ায় বঙ্কিম তো দুঃখে কেঁদে ভাসাচ্ছে!
  • দাঙ্গাবাজ পাবলিক | 2a03:e600:100::***:*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১০:৪৯516965
  • "... মুসলমানের বুকে পিঠে চাপিয়া মার!... "
    - ইকিরে! এক ধর্মীয় গোষ্ঠীর লোকেদের খুন করতে বলছে। আর সেটাকে আবার ডিফেন্ড করছে!! এর হাতে ত্রিশূল দিলে নেমে যাবে মাঠে, শালা দাঙ্গাবাজ পাবলিক সব !!
  • দীপ | 2402:3a80:196b:a191:20c2:1885:c732:***:*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১১:০৪516966
  • সত্যিই তো, পাক্কা ধান্দাবাজ দাঙ্গাবাজ ছিল! 
    জ্ঞানচক্ষু উন্মীলন‌‌ করার জন্য ধন্যবাদ!
     
  • হে হে | 2405:8100:8000:5ca1::c:***:*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১১:০৫516967
  • এ মালটা দাঙ্গা উসকানো পাবলিক।  ধম্মবাপকে ডিফেন্ড কত্তে বিরোধীদের বাপ মা তুলে খেস্তায়। মাঠে নামার মুরোদ নেই, উস্কানিদাতা।
  • মিসোজিনিস্ট | 2a0b:f4c2:1::***:*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:২৫516969
  • তাছাড়া মিসোজিনিস্ট তো বটেই। কমলাকান্তের দপ্তর থেকে ঃ
    -
    নারিকেলের মালা, ইহা স্ত্রীলোকের বিদ্যার ন্যায়, কখনও আধখানা বৈ পুরা দেখিতে পাইলাম না। নারিকেলের মালা বড় কাজে লাগে না; স্ত্রীলোকের বিদ্যাও বড় নয়। মেরি সমরবিল বিজ্ঞান লিখিয়াছেন, জেন অস্টেন উপন্যাস লিখিয়াছেন - মন্দ হয় নাই, কিন্তু দুই মালার মাপে।
    -
    ছত্রে ছত্রে মেয়েদের প্রতি অবজ্ঞা, অশ্রদ্ধা, মিসোজিনিতে ভর্তি।
  • দীপ | 42.***.*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪০516970
  • মনুষ্যে মনুষ্যে সমানাধিকারবিশিষ্ট। স্ত্রীগণও মনুষ্যজাতি, অতএব স্ত্রীগণও পুরুষের তুল্য অধিকারশালিনী। যে যে কার্য্যে পুরুষের অধিকার আছে, স্ত্রীগণেরও সেই সেই কার্য্যে অধিকার থাকা ন্যায়সঙ্গত। কেন থাকিবে না?
    ........................
    ….লোকে সুশিক্ষিত হইলে, বিশেষতঃ স্ত্রীগণ সুশিক্ষিতা হইলে, তাহারা অনায়াসেই গৃহমধ্যে গুপ্ত থাকার পদ্ধতি অতিক্রম করিতে পারিবে। শিক্ষা থাকিলেই, অর্থোপার্জ্জনে নারীগণের ক্ষমতা জন্মিবে। এবং এ দেশী স্ত্রীপুরুষ সকল প্রকার বিদ্যায় সুশিক্ষিত হইলে, বিদেশী ব্যবসায়ী, বিদেশী শিল্পী বা বিদেশী বণিক্‌, তাহাদিগের অন্ন কাড়িয়া লইতে পারিবে না। শিক্ষাই সকল প্রকার সামাজিক অমঙ্গল নিবারণের উপায়।’
    (সাম্য, পঞ্চম পরিচ্ছেদ)  
     
  • দীপ | 42.***.*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪৪516971
  • আবার বলিলেন “এদেশে স্ত্রীরাই মানুষ, সে কথা আমি একবার বুঝাইবার চেষ্টা পেয়েছি । ইউরোপের যত মনস্বিনী স্ত্রীর কথাই বল ঝান্সীর রাণীর চেয়ে কেহ উচ্চ নহে। রাজনীতি ক্ষেত্রে অমন নায়িকা আর নাই। ইংরাজ সেনাপতি রাণীকে যুদ্ধক্ষেত্রে দেখিয়া বলিয়াছিল “প্রাচ্যদিগের মধ্যে এই একমাত্র স্ত্রীলোকপুরুষ" । আমার ইচ্ছা হয়, একবার সে চরিত্র চিত্র করি, কিন্তু এক "আনন্দ মঠে"ই সাহেবের চটিয়াছে, তাহলে আর রক্ষা থাকবে না।” 
  • দীপ | 42.***.*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:৫১516972
  • বঙ্কিমকে নিয়ে শ্রীশচন্দ্র মজুমদারের স্মৃতিচারণা।
    আর বঙ্কিমের নারীচরিত্রের মতো উজ্জ্বল ও বলিষ্ঠ চরিত্র বাংলা সাহিত্যে খুব কম‌ই আছে।
    স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রবন্ধে এসম্পর্কে যথার্থভাবে আলোচনা করেছেন।
    স্বয়ং তরুণ রবীন্দ্রনাথ আনন্দমঠের শান্তি চরিত্রকে মেনে নিতে পারেননি; বলেছেন অত্যধিক বাড়াবাড়ি করা হয়েছে।
    আর শান্তি চরিত্র রাণী লক্ষ্মীবাইএর প্রভাবে নির্মিত।
     
  • দীপ | 42.***.*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৩:৫৮516973
  • তখন ডাকিয়া সস্তানগণকে বলিলেন, “সন্তানগণ! ঐ দেখ, শিখরে প্রভু সত্যানন্দ গোস্বামীর ধ্বজ দেখা যাইতেছে। আজ স্বয়ং মুরারি মধুকৈটভনিসূদন কংশকেশি-বিনাশন রণে অবতীর্ণ, লক্ষ সস্তান স্তৃপপৃষ্ঠে। বল হরে মুরারে হরে মুরারে। উঠ ! মুসলমানের বুকে পিঠে চাপিয়া মার! লক্ষ সম্ভান টিলার পিঠে।” তখন হরে মুরারের ভীষণ ধ্বনিতে কানন প্রাস্তুর মথিত হইতে লাগিল। [ ৪র্থ খণ্ড, ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ ]
     
    সন্তানদলের সঙ্গে যুদ্ধের বর্ণনা।
    যুদ্ধক্ষেত্রে তো খোলকর্তাল নিয়ে হরিকীর্তন গাওয়া হয়।
  • রেকারিং | 23.128.***.*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ১৪:০০516974
  • দীপদীপদীপ 
  • সাম্প্রদায়িক | 2405:8100:8000:5ca1::a9:***:*** | ০৫ মার্চ ২০২৩ ০০:১৩516986
  • আজকের বাংলা ভাষা যদি বাঙালী মুসলমানদের ভাব সুম্পষ্টরূপে ও সহজভাবে প্রকাশ করতে অক্ষম হয়, তবে তাঁরা বাংলা পরিত্যাগ করে উর্দ্দু গ্রহণ করতে পারেন। সেটা বাঙালী জাতির পক্ষে যতই দুঃখকর হোক না, বাংলা ভাষার মূল স্বরূপকে দুর্ব্যবহারের দ্বারা নিপীড়িত করলে সেটা আরো বেশি শোচনীয় হবে । ইংরেজীতে সহজেই বিস্তর ভারতীয় ভাষার শব্দ চলে গেছে । একটা দৃষ্টাস্ত jungle—সেই অজুহাতে বলা চলে না, তাই যদি হ’ল তবে কেন “অরণ্য” শব্দ চালাব না । ভাষা খামখেয়ালি। তার শব্দনিৰ্ব্বাচন নিয়ে কথা কাটাকাটি করা বৃথা । বাংলা ভাষায় সহজেই হাজার হাজার পার্সি আরবি শব্দ চলে গেছে । তার মধ্যে আড়াআড়ি বা কৃত্রিম জেদের কোন লক্ষণ নেই। কিন্তু যে-সব পার্সি আরবি শব্দ সাধারণ্যে অপ্রচলিত, অথবা হয়ত কোনো এক শ্রেণীর মধ্যে বন্ধ, তাকে বাংলা ভাষার মধ্যে প্রক্ষেপ করাকে জবরদস্তি বলতেই হবে।
  • দীপ | 2402:3a80:196c:1552:7773:6836:b36e:***:*** | ০৫ মার্চ ২০২৩ ১৫:২৪517007
  • আমাদের মতে ‘কৃষ্ণচরিত্র’ গ্রন্থের নায়ক কৃষ্ণ নহেন, তাহার প্রধান অধিনায়ক, স্বাধীন বুদ্ধি, সচেষ্ট চিত্তবৃত্তি। প্রথমত বঙ্কিম বুঝাইয়াছেন, জড়ভাবে শাস্ত্রের অথবা লোকাচারের অনুবর্তী হইয়া আমরা পূজা করিব না, সতর্কতার সহিত আমাদের মনের উচ্চতম আদর্শের অনুবর্তী হইয়া পূজা করিব। তাহার পরে দেখাইয়াছেন, যাহা শাস্ত্র তাহাই বিশ্বাস্য নহে, যাহা বিশ্বাস্য তাহাই শাস্ত্র। এই মূল ভাবটিই ‘কৃষ্ণচরিত্র’ গ্রন্থের ভিতরকার অধ্যাত্মশক্তি, ইহাই সমস্ত গ্রন্থটিকে মহিমান্বিত করিয়া রাখিয়াছে। "
     
    -রবীন্দ্রনাথ
  • দীপ | 2402:3a80:196c:1552:7773:6836:b36e:***:*** | ০৫ মার্চ ২০২৩ ১৫:২৬517008
  • বঙ্কিমের কৃষ্ণচরিত্র নিয়ে রবীন্দ্রনাথের বিশ্লেষণ। আগ্রহী পাঠক মূল প্রবন্ধ পড়ে নেবেন।
     
    এখন রবীন্দ্রনাথ না আবার বিজেপির লোক হয়ে যান!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন