পৃথিবীর সব মানুষের মত লেখকেরও জন্মও হয়েছে একটা পরিবারে, একটা ধর্মে, একটা ভাষায়, একটা সমাজে, একটা রাষ্ট্রে, একটা অঞ্চলে, একটা গ্রহে, একটা ছায়াপথে, ও সর্বোপরি একটা মহাবিশ্বে।
এখন মহাবিশ্ব, ছায়াপথ, আর গ্রহ নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করলেও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এসব সামান্যই আলোচিত হয়।
মানুষের দৈনন্দিন জীবন আবর্তিত হয় যেসবকে ঘিরে –
পরিবার
ধর্ম
ভাষা
সমাজ
রাষ্ট্র
অঞ্চল
এখন খুব অল্পবয়সেই মানুষকে পর্যবেক্ষণ করার অভ্যাস গড়ে ওঠায় একসময় সময়রেখা বইয়ের লেখক একটা বিষয় আবিষ্কার করেন।
চারপাশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ যা কিছু বিশ্বাস করে ও প্রচার করে তা কোন না কোন পরিবার, ধর্ম, ভাষা, সমাজ, রাষ্ট্র, বা অঞ্চলের রীতিনীতি ছাড়া আর কিছুই না।
এর পেছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ থাকতে পারে। ইতিহাসের বিশেষ কালপর্বে এটা উপকারী হতে পারে, সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কল্যাণকর হতে পারে। কিন্তু অনেক সময়, দীর্ঘমেয়াদে এটা এমন একটা প্রবণতা তৈরি করে; যা অযৌক্তিক, ও ক্ষেত্রবিশেষে মারাত্মক, হয়ে ওঠে।
সেটা হল নিজের পরিবার, ধর্ম, ভাষা, সমাজ, রাষ্ট্র, বা অঞ্চল থেকে পাওয়া রীতিনীতিকে স্থান ও কালের সব সীমার উর্দ্ধে উঠে যাওয়া ‘শ্বাশ্বত’, ‘চিরকালীন’, ‘অপরিবর্তনীয়’, ‘পরম’, ‘শ্রেষ্ঠ’, ‘অবিকল্প’, ‘একমাত্র’ কিছু একটা বলে বিশ্বাস ও প্রচার করতে শুরু করা।
এখন এই প্রবণতা শুধুই বিশ্বাস ও প্রচার করায় সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা ছিল না। সমস্যা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই তা হয় না। কখনো কখনো গড়িয়ে খুনখারাবির পর্যায়ে চলে যায়।
এই সমস্যার একটা সমাধান অনেকে বের করেছেন। সেটা হচ্ছে মানবতাবাদ বিশ্বাস ও প্রচার করা। ইতিহাসের দিক থেকে এটা ‘আধুনিক’ কিছু না, প্রাচীন কাল থেকেই বহু মানুষ এই ধরণের প্রয়াস চালিয়ে আসছেন।
ঝামেলা হল, মানবতাবাদ এখনো অনেক বেশি বিমূর্ত। আমিও মানুষ, ভানুয়াতুতে যারা থাকে তারাও মানুষ। শুধু এইটুকু জেনে, আর কিছু না জেনে; খুব বেশি সুবিধা করার উপায় নাই।
রোমক সাম্রাজ্যের আফ্রিকা প্রদেশে বাস করতেন তেরেন্স নামের এক দাস-নাট্যকার, যিনি লিখেছিলেন,
“মানবিক কোনকিছুই আমার অনাত্মীয় নয়।”সময়রেখার লেখকের বিশ্বাসও তাই, এবং তাঁর লক্ষ্য
মানবতাবাদকে বিমূর্ত থেকে মূর্ত করে তোলা।
বইটির লেখকের উদ্দেশ্য
‘আমাদের’ পরিবার, ধর্ম, ভাষা, সমাজ, রাষ্ট্র, অঞ্চলের বাইরেও যে বিশাল একটা পৃথিবী আছে, আছে ‘ওদের’ পরিবার, ধর্ম, ভাষা, সমাজ, রাষ্ট্র, অঞ্চল; তা নিতান্তই বিমূর্ত জ্ঞান থেকে মূর্ত উপলব্ধিতে রূপান্তরিত করা। কারণ ‘ওরা’ আসলে ‘আমাদের’ চেয়ে অতটাও আলাদা নয়; যতটা আলাদা বলে বিশ্বাস ও প্রচার করা হয়। অমিল অবশ্যই আছে, কিন্তু মিলের জায়গাও আছে; অপরিচয়ের আতঙ্ক থেকে তোলা দেয়ালগুলো ভেঙে ফেললে একসময় পরিষ্কার হবে।অনেকে বলতে পারেন,
“আমরা এটা আগেই জানতাম।”তা তো বটেই। কিন্তু শুধু জানাটাই যথেষ্ট না আসলে, জানার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উপলব্ধি করা। সেই উপলব্ধি অর্জনে কাজে আসতে পারে, এই কারণে কিনবেন ইরফানুর রহমান রাফিনের সময়রেখা।
সময়রেখা বইয়ের প্রাপ্তিস্থল অমর একুশে বইমেলা ২০২৩: দিব্যপ্রকাশের স্টল (১০৯-১১২)
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট: বাতিঘর
দিব্যপ্রকাশরকমারিবাতিঘরওয়াফিলাইফবইবাজারবইফেরীবইয়ের দুনিয়া