এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কাব্য

  • শ্রোতা

    জগন্নাথদেব মণ্ডল
    কাব্য | ০৫ জুলাই ২০২৪ | ২২৫০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৪ জন)


  • আষাঢ় মাসের বিকেলে ছোট হল্ট স্টেশনে বসে আছি।আকাশ মেঘলা, লোকজন তেমন নেই।চোখে না পড়ার মতো চা দোকান। পাশে কদমগাছে অজস্র ফুল ফুটে আছে।

    হঠাৎ দেখি কিছু লোকজন দল বেঁধে প্ল্যাটফর্মে উঠে এল।গ্রাম্যদেশের মানুষ সব।কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। বেশ ঝলমলে জামাকাপড়।বুঝলাম, হাট থেকে ফিরছে।

    সামনের লোকটির কাঁধে একটা কাপড় জড়ানো খাঁড়া।অল্প কিছু অংশ বেরিয়ে আছে, আলো লেগে অল্প চমকাচ্ছে। কদিন পরে নিশ্চয়ই কোনো জাগ্রত থানে বলির ব্যাপার আছে।

    দলের ছোট সদস্যের হাতে একটা দড়ি, দড়ির শেষ প্রান্তে একটা কালো পাঁঠা আপনমনে নিশ্চুপে হেলতে দুলতে চলছে। পাঁঠার কানে ও মুখের কাছে অদ্ভূত কায়দায় ছোট মেয়েদের চুল বাঁধার লাল রঙের ফিতে জড়ানো,জড়ানোর ভঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছে সযত্নে রচিত।প্ল্যাটফর্মের দক্ষিণ বরাবর ওরা সিধে হেঁটে মাঠে নেমে মিলিয়ে গেল।

    দেড় বা দুদিনের মাথায় যে পশু বলি হবে তার মাথায় বালিকার টকটকে লাল ফিতে, মৃত্যুকে নিয়ে যে লোকটি এমন চিন্তা করেছে সে ভাবুক লোক, রস আছে, সামান্য গম্ভীর, সূর্য পাটে বসলে একটা বিড়ি খায় নিয়ম করে।

    লোকটির কথা ভেবে কদম গাছের নীচে বসে এক কাপ চা কিনি। বোঝার চেষ্টা করি, দোকানি শিল্পী না কারিগর। কতোটা যত্নে লিকার ছেঁকছে, আদারস বা লেবু শেষে বিটলবণ বা গোলমরিচ দিচ্ছে কি না।

    বেলা কিছুটা আছে। চা খেয়ে মিনিট কুড়ি ঘুরে বেড়াই আরেক ইষ্টিশনে। পেচ্ছাপখানার দেওয়ালে সাঁটা বিজ্ঞাপন পড়ছি। লিঙ্গবর্ধক যন্ত্র, মা মনসা মোবাইল সেন্টার, তিন মাসে ফ্রিজ সারানো শিক্ষা।

    হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই বাস রাস্তার পাশ দিয়ে বিরাট এক বটগাছের পাশে। পাশে পুকুর। পুকুরে গভীর কলমিলতার ঢেউ। আকাশে বিরাট চাঁদ উঠব উঠব করছে।

    সিমেন্ট বাঁধানো চাতাল পার করলে আশ্রম। আগে শুনেছি এই আশ্রমের কথা। তমাল গাছের শিকড় বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে বসার জন্য। মাধবীলতা বুকে হেঁটে গাছের মাথায়। চারিদিকে ধূপধুনোজলের ভেজা ভেজা শান্তির গন্ধ।

    শ্রীখোল সামনে রেখে এক ভাঙাচোরা বুড়ো মানুষ বসে আছে। সাদা ধুতি পরনে, খালি গা, গলায় কন্ঠী,একটা পা নেই। দেওয়ালে ক্রাচ ঠেসিয়ে রাখা। বগলে ক্রাচ রেখে লাফাতে লাফাতে চাতাল, তারপর উঠে এল। ক্রাচ আর সিমেন্টের মেঝের ঘর্ষণের আওয়াজে কারুণ্য আছে।

    গিয়ে বসলাম। বাড়ি খবর সব শুধাল সেই মানুষ, কাজকর্মের খবর। বললাম - আমি অনেকদূর পড়াশোনা করেছি কিন্তু আমি বেকার, উপার্জনের চেষ্টা করছি।

    আমিও বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞাসা করছি সেই মানুষকে। ফ্যাকাশে মানুষ একটানা কথা বলতে পারছে না, কাশির বেগ আসছে, কপালের শিরা ফুলে উঠছে।

    গানের কথা বলছে। কীর্তন গায়। গৌর অন্তপ্রাণ সে, শ্রোতাদের দেখলে বুঝতে পারে কে কেমন শ্রোতা।

    ধরা যাক, ভেকশ্রোতা অর্থাৎ ব্যাঙ সারাক্ষণ গলা ফুলিয়ে ডেকে চলছে, ও কেবল ডাক নয়, কীর্তন করে চলেছে আপমনে জগৎ সংসার ভুলে।

    সর্পশ্রোতা, গান শুনতে শুনতে ঘোর ও ভাবে আবেশ হল, তখন মানুষ দুলতে শুরু করে বসে বসেই, সাপ যেমন ফণা দোলায়।
    শ্রীখোল খানিক সরিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে থেকেই দুলে দুলে এই ভঙ্গি করে দেখাল আমায়।

    রাজহাঁস-শ্রোতারা গানে ভেজাল থাকলেও মূল সুরটুকু নেয়, বাকি গ্রহণ করে না, ফেলে দেয়, দুধ রেখে জল ফেলে দেওয়ার মতো।

    বকশ্রোতা ভালো না।ভাণ করে।গানের রস না গ্রহণ করেও এমন ভাব করে যেন সে খুব রসিকজন, সে গান শোনে না কাউকে শুনতেও দেয় না।

    আসলে একজন মানুষ সাপব্যাঙহাঁসবক বয়ে নিয়ে চলে, আজীবন।

    খুব চমক লাগল আমার এইভাবে গানের শ্রোতাদের দেখার দৃষ্টিকে। ইতিমধ্যে ঘোমটা-টানা বউ সন্দেশ প্রসাদ দিয়ে গেছে। নিমকাঠের রাধাকৃষ্ণ, ষড়ভুজ চৈতন্যের কাছে প্রদীপ জ্বলছে, শীতলভোগ দেওয়া হয়ে গেছে।

    আমি শুধালাম - সংসার করেছেন?
    সেই মানুষ বলল - ঘোমটা মাথায় এল উনি তো গিন্নি আমার।

    একবার গান সেরে ফিরছিলাম, মোটরসাইকেল ধাক্কা মারে, তাতেই তো একটা পা যায়, উনি সেবা করে খুব।

    ছেলেমেয়ে কটি আপনার?

    উত্তর দিতে একটু সময় নেয়। কাশির দমক সামলায়। তারপর মিষ্টি হেসে বলে - এক ছেলে এক মেয়ে, কিন্তু আমার সন্ন্যাস, ওই দ্যাখো ছ' হাতের চৈতন্য, উপর হাত রামের, মধ্য কৃষ্ণের, নীচের হাত গোরার এক যষ্টি ও এক হাতে কমণ্ডলু, সন্ন্যাস নিলে হাতে তো যষ্টি দেয়, গোরা আমায় চিরদিনের সন্ন্যাসী করেছে হাতে যষ্টি দিয়েছে ওই দ্যাখো তাকিয়ে,দেওয়ালে ঠেসানো ক্রাচ দেখায়।

    বুঝলাম নিজের দুঃখ কষ্টের মুখের দিকে তাকিয়ে অল্প হেসে এও এক রসিকতা। অপরূপ ঠাট্টা।

    আমি হাওয়াবাতাস দুহাতে ধরে বিদায় জানিয়ে বাড়ির পথ ধরি, শেষ লোকালটা ধরতে হবে, আকাশের তলায় আলো অন্ধকারে ভেজা সব গাছপালা হাসছে, আতপচালের গন্ধ বেরিয়েছে সামনের মাঠ থেকে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কাব্য | ০৫ জুলাই ২০২৪ | ২২৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • সুধাংশু শেখর | ০৭ জুলাই ২০২৪ ১৮:৩৪534340
  • @পাপাঙ্গুল, আহা, গুরুর একটা দর্শন তো এইই যে "কে বলেছে সেটা তো অত দরকারি নয়, কী বলেছে সেটাই দরকারি"? না হলে আবার অ্যাড হোমিনেম শুরু হবে। 

    ইন্দ্রাণীদিকে অজস্র ধন্যবাদ সম্পূর্ণ কবিতাটি পড়ানোর জন্য। 
  • r2h | 174.163.***.*** | ০৮ জুলাই ২০২৪ ২০:০৮534393
  • হ্যাঁ, ইন্দ্রাণীদিকে অনেক ধন্যবাদ কবিতাটির জন্য।

    আমি শুনতে আগ্রহী সমালোচকের ঠিক কেন মনে হচ্ছে জগন্নাথদেবের লেখাতে সমসাময়িক বিরোধ বা চিৎকার নেই। প্রশ্নটা পুরোপুরি ঠিক হলো না - অমুকটা আছে সেটা দেখান, এমন প্রশ্নের মানে হয়, উল্টোটা নাও হতে পারে। তবু যদি এই নিয়ে বক্তব্য থাকে তা শুনতে আগ্রহী।

    আগে যেটা বলেছিলাম, আমার কবিতা ভাবনা ফিকল ও অনিশ্চিত। গুরুতে বিভিন্ন লেখা থেকে নতুন ও বিভিন্ন দিকে ভাবার উপাদান পেয়েছি। তো, এই পারস্পেকটিভগুলি আমার কাছে খুবই দামী, সেই জায়গা থেকে বলা।

    কিশোরদার মন্তব্যটা মিস করেছিলাম, এইটা সত্যি জটিল, ভৌগলিক অবস্থানের কারনেই সারাদিন এসিতেই থাকি, আপিসের কাজের বাইরে সোফাতে বসেই যাবতীয় পড়াশুনো - আমার কী হবা?
    (স্যরি, একটু লঘু চপলতা করলাম, বক্তব্যটা আক্ষরিক অর্থে নেওয়া উচিত না স্বীকার করি!)
  • b | 2402:3a80:1c71:a38d:478:5634:1232:***:*** | ০৮ জুলাই ২০২৪ ২১:৫৬534398
  • গুরু চপলতা ডিফাইন করুন। 
  • সিএস | 2405:201:802c:7069:2973:51d:2b73:***:*** | ১০ জুলাই ২০২৪ ০০:২১534447
  • জগন্নাথদেবের কবিতা আমার একঘেয়ে লাগে, না এইজন্য না, সমালোচক যেমন বলেছেন যে কবিতায় বাংলার আজকের গ্রাম নেই, স্পষ্ট করে না থাকুক, ইঙ্গিতে আছে বোথ অরি, নানারকমের ভায়োলেন্স আর ব্যাথা - বেদন ইত্যাদি নিয়ে, সেসব ইঙ্গিতকে হয়ত আরো ছড়িয়ে পড়া যায়, কিন্তু তার পরেও যে একঘেয়ে লাগে সে হয়ত ক্রাফটের জন্য। হয়ত গদ্যকবিতার ধরণের জন্য, হয়ত কিছু চরিত্রকে ফোকাসে রাখার জন্য, হয়ত ইমেজগুলোর জানা চমৎকারিত্বর জন্য। সন্দেহ আছে, তুলনা করলে, জয় গোস্বামীর প্রথমদিকের কবিতা, ১৯৮৪-৮৫ সাল অবধি যা লেখা, কলকাতায় আসার আগে, গ্রাম না হোক,
    মফস্বল যেখানে ছড়িয়ে আছে, সেসময়ের ঐসব জায়গার ভায়োলেন্স যা লেখাগুলোতে আছে বা ভুতুম ভগবানের মত কবিতা, এক্ফ্হেয়ে লাগবে না, দপদপ করছে কবিতাগুলো। এখনও। জগন্নাথদেবের মাটির সেতার বইখানি এককালে পড়ার ইচ্ছে ছিল, হাতে তুলে নিয়েওছিলাম কিন্তু পড়িনি, পাতা উল্টে খুব একটা টানেনি, তারপরে যা পড়া এই সাইটেই বা ইন্টারনেটে, কিন্তু এখনো বিশেষ টানে না। ক্রাফটের জন্যই, কিন্তু সে বস্তু যেহেতু বিষয়ের ওপরই নির্ভর করে, হয়ত এও বলা যায় যে উনি, ওনার কবিতায় বিষয়ের একরকমের স্থিতির মধ্যে আঁটকে গেছেন।
  • সিএস | 2405:201:802c:7069:2973:51d:2b73:***:*** | ১০ জুলাই ২০২৪ ০০:৪৯534452
  • কিন্তু ওনার লেখা নিয়ে আপত্তির থেকে বেশী আপত্তি আছে ঐসকল লেখা সংক্রান্ত অন্যদের বক্তব্য নিয়ে। সমালোচক একটি লিংক দিয়েছিলেন, নওলকিশোর, মাটির সুর ইত্যাদি, তো এই ধরণের লেখা মনে হয় একটি হায়ারার্কি তৈরী করে, যা বলে যে গ্রাম ভাল, শহর খারাপ, মাটি ভাল, পেঅচ রাস্তা খারাপ, একজন কবিকে তার গ্রাম্যসুরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, শহর তাকে ইলে ফেলবে ইত্যাদি। তো, আমার কাছে , ইদানীংকালের একজন কবির কাছে সরলতা বাঁচিয়ে রাখার এই দাবী ভিত্তিহীন লাগে, অবির কাজ যদি অনেকদূর অবধি দেখা হয় বা অনেকটা ভেতর অবধি খুঁড়ে দেখা হয়, তাহলে আশা করা যায় সে গ্রাম বা শহর, দু জায়গাতেই সেই কাজঈ করবে, সেরকম করে উঠতে পারলে মাটির সুবাস না পাওয়াও যেতে পারে, কবির কাছে আমার চাহিদা সেরকমই, আর সেরকম হলে কবিতা সংক্রান্ত মন্তব্যগুলো তাদের যুক্তি হারাবে। জে ডশের কথা এসেছে, আসবেই, কারণ এই একজন কবি যে একইভাবে গ্রাম ও শহর দুইদিকেরই কবি, শহরে রাত্রিতে অতিবৈতনিক জন্তুদের যেমন দেখেছেন, বাংলার নিস্তব্ধ - নিস্তেল গ্রামও দেখেছেন, তারও আগে গ্রামের ত্রস্ত নীলিমা দেখেছেন, গ্রাম - শহরের গল্প নামে যে গল্পটি লিখেছিলেন, সেখানে উরুশোত্তম চরিত্রটি তো নারী চরিত্রটিকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে গ্রামে আর ফিরে যাওয়া যাবে না, নিজেও মনে হয় প্রায় একই সময় বরিশাল ও কলকাতায় কাটিয়েছেন, '৪৭ এর পরে কলকাতায় চলে এলে গ্রামের বাড়ির দলিলও নিয়ে আসেননি কিন্তু নিজের লেখাভর্তি ট্রাঙ্কটি নিয়ে এসেছিলেন, গ্রামের প্রতি কোন নস্টালজিয়া ছিল সে প্রমাণ নেই, আধুনিক এক লেখকের সেরকম থাকতে পারে কিনা সন্দেহ আছে। ফলে উনি একঈ সাথে বরিশালের কবি ও কলকাতার কবি, কবি অর্থে গদ্যকারও। আরেক মহারথী, কমলকুমারও, দক্ষিণবঙ্গের গ্রাম উনি যেমন চিনেছিলেন, এখনও অবধি আর কোন লেখক - কবি মনে হয় না চিনেছিলেন, কিন্তু চিরকালের কলকাতা শহরে বাসিন্দা, ক্রমাগত বাড়ি বদলে বদলে থেক যাওয়া বাসিন্দা, গ্রামের প্রতি নস্টালজিয়া ব্যক্তিগত জীবনে বা লেখাতে ছিল না, কিন্তু লেখাগুলো গ্রামের মানুষ নিয়ে অথচ নিছক তাদের সেই পরিচিত ছাপিয়ে যায়।

    ফলে বাংলা লেখালেখির যে আধুনিকতা, তার মধ্যে আলাদা করে গ্রামের প্রতি নস্টালজিয়া বা কবিকে মাটির সুর বাঁচিয়ে রাখার কথা বলার দরকার হয়নি, ফলে নওলকিশোর টাইপের লেখাগুলো আমার কাছে অপ্রয়োজনীয়। যেহেতু সন্দীপনও টানা হয়েছে, অতএব ওনার কথা ব্যবহার করে বলতেই পারি, আদৌ একজন বর্তমানের লেখক নস্টালজিয়া আক্রান্ত হতে পারে কী ? মাণিক - জীবনানন্দ - কমলকুমার, এই তিন স্তম্ভে তার বিন্দুমাত্র নেই।
  • সিএস | 2405:201:802c:7069:2973:51d:2b73:***:*** | ১০ জুলাই ২০২৪ ০০:৫৩534455
  • নানারকমের টাইপো হয়েছে -

    - পীচ রাস্তা খারাপ
    - শহর তাকে নষ্ট করে ফেলবে
    - সেখানে পুরুষ চরিত্রটি তো
  • ইন্দ্রাণী | ১০ জুলাই ২০২৪ ১২:১৩534467
  • আমার গত রবিবারের পোস্টের শেষ লাইনে তিক্ততা ছিল, খানিক অসহিষ্ণুতাও। সেজন্য আমি লজ্জিত। ক্ষমাপ্রার্থী।
    পাঠক ভিন্ন, পাঠ ভিন্ন, অনুভব, অনুভূতি ভিন্ন- এই স্বাভাবিক। কিন্তু কবিতার সমালোচনা করতে গিয়ে পাঠকদের খোঁচা দেওয়া খারাপ লেগেছে; সেই তেতো স্বাদটুকু মুখে নিয়ে ঐ পোস্ট না করলেই ভালো হত। এতে তেতো ভাব বাড়ে বই কমে না। সরি এগেন।
    রবিবার 'মাটির সেতার' থেকে কয়েকটি লাইন এবং একটি সম্পূর্ণ কবিতা উদ্ধৃত করেছিলাম। জগন্নাথদেবের এই একটি কাব্যগ্রন্থই পড়েছি, সেখান থেকেই তাই লাইন তুলে এনেছিলাম নিকোনো উঠোন কেন মনে হয় নি বোঝাতে। উদ্ধৃতই করেছিলাম, বিশ্লেষণ করি নি। সে যোগ্যতা , ট্রেনিং আমার নেই বলেই মনে করি। আমার মত বোঝাতে উদ্ধৃতিই যথেষ্ট মনে করেছিলাম।
    আজ মার্জনা চাইতে এসে এই শ্রোতা নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। অদীক্ষিত পাঠকের লেখা। ঐ নিকোনো উঠান আর চিৎকারহীনতা কেই কাউন্টার করছি আসলে।
    আসলে চিৎকার যখন গভীর থেকে উঠে আসে, উপরিতলে তা ধরা পড়ে না, অনুপস্থিত মনে হয়। জগন্নাথের আপাতসরল এই নির্মাণের মজা এইখানেই। এই কবিতাটিতে  গভীরতা আমার কাছে ধরা দিয়েছে বেশ কটি ইন্টারফেস পেরিয়ে। বুড়ো মানুষ আর কীর্তন শ্রোতার ইন্টারফেস, বুড়ো মানুষ আর এই কবিতার কথকের ইন্টারফেস, কবিতা আর পাঠকের (আমার) ইন্টারফেস। এখানে শ্রোতার / দ্রষ্টার ভূমিকা বদলে বদলে যাচ্ছে। এবং প্রতিটি ভূমিকাতেই ব্যাং সাপ থেকে রাজহাঁসে উত্তরণের একটা ব্যাপার রয়েছে, আমার মনে হয়েছে। কথক এই লেখা শুরু করছে সম্ভবত ব্যাং ও সাপশ্রোতা হয়ে- আবিষ্ট হয়ে যিনি  দেখে চলেছেন  বলির পশুর মাথায় বালিকার লাল ফিতে বা খাঁড়ার ওপর আলোর চমকানি, কলমিলতা, চাঁদ। বুড়ো মানুষের কথা শুনতে শুনতে তিনি হাঁস হয়েযাচ্ছেন বুঝতে পারি তখনই যখন লেখা হচ্ছে ক্রাচ আর সিমেন্টের ঘর্ষণের আওয়াজে কারুণ্য আছে। বস্তুত এখানে দুটি বিপরীত তলের ঘর্ষণ- কাটা পা , অভাব ইত্যাদির বাস্তব তল আর মায়ার তল যেখানে ক্রাচকে সন্ন্যাসীর যষ্টি বলা হয়। বুড়ো মানুষ নিজেও এখানে হাঁস। 
    কবি/ কথকের হাঁসশ্রোতা সত্ত্বা শেষ অবধি থেকে যাচ্ছে-খিদের গন্ধ, অভাবের গন্ধ আতপচালের বাসে বদলে যাচ্ছে ফলত।
    এই নির্মাণে আর্তনাদের তীব্রতা পাঠকের ইন্টারফেসে সোজাসাপ্টা ধরা না পড়ারই কথা।
  • সমালোচক | 66.203.***.*** | ১০ জুলাই ২০২৪ ১৩:৫৫534469
  • আর্গুমেন্ট না এলে আর কি-ই বা লেখা যায়? শুরুর দিকে যারা বালখিল্যপনা করেছেন, তাঁদের জবাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আর তিক্ততা কিসের? 
     
    ইন্দ্রাণী কিছু লাইন তুলে দিয়েছিলেন, যদিও মাহাত্ম্য বুঝিনি। স্টাইলে বা বক্তব্যে এই কবিতার চেয়ে অন্যরকম কিছু মনে হয়নি যাহোক। তবে একটা কথা পরিষ্কার করে বলা ভাল। ইন্দ্রানী সমালোচনার একটা প্রি-কন্ডিশন খাড়া করেছেন পাঠকের সেনসিটিভিটি বা ঐরকমের কিছু। যার ফলে কবিতার গভীরতা কারোর কারোর ইন্টারফেসে ধরা পড়ছে না! 
     
    কবিতার গভীরতা নিয়ে আমার বিশেষ মাথাব্যথা নেই। ইন্দ্রাণীর ব্যাখ্যা পড়েও ইন্টারফেসে তেমন কিছু ধরা পড়ল না। তবে লিটারারি ক্রিটিসিজমের দাবিটা অন্য। একটি টেক্সট কিভাবে সাহিত্যধারার অন্যান্য টেক্সটের সঙ্গে এনগেজ করছে, সমসাময়িক রাজনীতি বা সমাজনীতির সঙ্গে এনগেজ করছে এগুলো নিয়ে চাট্টি তর্ক। সেখানে আর্গুমেন্টের উত্তরে আর্গুমেন্ট আসাটাই কাম্য। যেহেতু বাংলাবাজারে সাহিত্য সমালোচনার ধারাটি মৃত এবং সাহিত্যে লেখক-পাঠক দুদিকেই প্রচুর অশিক্ষিতপটুত্ব, এইসব বেসিক জিনিস যেকোনো আলোচনায় ঘুরেফিরে আসে।
     
    ওই যে সিএস যেমন বললেন, গ্রাম ভাল শহর খারাপ, এটা কবেকার ডিসকোর্স জানেন? মৃচ্ছকটিকায় আপনি এ জিনিস পাবেন। গ্রাম ও শহরের এই সম্পর্ক  এখন আর জাস্ট নেই। এখন মানে ২০২৪ নয়, ১৯৩০-এও ছিল না বলেই মনে করি। এক ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড ভদ্রলোক লিখেছিলেন -
    "একটা গাছের জীবন অব্দি আজ আর স্বাধীন নয়-নিজের ইচ্ছায় সে বাড়তে পারে না, জন্মাতেও পারে না-মানুষ এসে তার মাপ নেয়-কেটে ফেলে-টিম্বার তৈরী করে-তার অপ্রীতিকর জায়গায় চালান দিয়ে তার চাষ করে। গোরু-ঘোড়া-হাঁস-মুর্গি নিয়েও এই; একটা মাছ অব্দি নিজের খুশিতে কোনও বিশেষ জায়গায় চরতে পারেনা আজকাল আর,-মানুষ নিজের মনের সুবিধা-মত তাকে চরায়, তার ডিমের খবরও তার চেয়ে ঢের বেশী রাখে, তার মামাবাড়ির ডিমের খবরও; এই নিয়ে মানুষের ব্যবসা-বাজার, জীবন,তার মানবীয় অস্তিত্ব,সুখ,লালসা, সাধ, সম্পদ-সমস্তই। এছাড়া অন্য কোনও একাগ্রতার জিনিষ আজকের মানুষের আর নেই।"
     
    এটা তেতাল্লিশের মন্বন্তরের আগে লেখা। ভুলবেন না।
     
    ফলে গ্রাম একটি আলাদা বাস্তুতন্ত্র এরকম বস্তাপচা ধারণা নিয়ে আজ আর 'সাহিত্য করা' সম্ভব নয়। প্রডাকশন লাইনগুলি গ্রাম থেকে শহর থেকে আরও বড় নগরে ছড়িয়ে আছে। সেই জালের মধ্যে বসে জাল সম্পর্কে সচেতন থেকে লেখককে যা করার করতে হবে। নইলে ওই ফোক সংয়ের মত এক্সোটিক জিনিস বেরোবে। সত্যি বলতে, আমার ধারণা এদেশে নগর ও গ্রামের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা যথেষ্ট, অর্থনৈতিক অসাম্য প্রবল, ফলে এক্সোটিক সাহিত্য বা কিৎশের নতুন বাজার তৈরী হচ্ছে, রুরাল পোয়েট্রি তো আর সম্ভব না, ওই স্থানটা এক্সোটিক সাহিত্য বা কিৎশ দখল করবে। 
     
    আবার অন্যদিকে স্বদেশ সেনের মতো কবিরা গ্রাম নিয়েই লিখবেন এবং গ্রামের পাশের হাইওয়ে থাকবে। আর থাকবে শীত করার মত হাড়হিম শূন্যতা। লিখে যাবেন 'রাস্তায় যদুনাথ।'
     
    দু’ একটা অদ্ভুত রাস্তা থাকে
    দু’ একটা ফাঁকা বহির্ভূত রাস্তা
    দু’ একজন ধু ধু করা লোক থাকে সেই রাস্তায়
    যারা ফেরে না, ফোকরে তাকায় না
    যে পায়ে কাদা সেই পায়ে কাঁকর
    এমন মরিয়া ম্লান, মায়াতুর, চালতার পচা …
    জমা পড়ার একটা পাহাড় আছে দূরে
    মরা ঘুঘুর একটা দরজা আছে …
    একটা কার কুকুর যায় – পেছনে পেছনে লোক
    মাঝ বালতিতে যা নেই সেই মৃদু জলের শূন্য
    ফাঁদে পড়া ষাট বছরের এখন কেবল মধ্যে মধ্যে ফাঁপ
    কেবল ধুলো কেবল লালচে ধুলো
    ওই অনিলের জং এবং ওই অনিলার জং
    দু’ একজন হাটুরে লোক ওই রাস্তায়
    দু’ একটা গরদ আর গামছার ছায়া
    যদুনাথের ওই মৃত্যু যদুনাথের ওই সুশীলা মা।
  • ইন্দ্রাণী | ১০ জুলাই ২০২৪ ১৬:১৪534470
  • আমার মনে হয় না , সমালোচনার কোনো প্রি কনডিশন খাড়া করেছি। বস্তুত আমি যেটুকু লিখেছি তা নিছক পাঠপ্রতিক্রিয়া-এই টেক্স্টটি আমি কীভাবে পড়েছি এই মাত্র। আপনি যা আশা করছেন বা লিখতে চাইছেন সেটি সাহিত্য সমালোচনার স্বীকৃত একটি ধারা। এ দুয়ের মধ্যে আর্গুমেন্ট তো হয় না।
    আমার মনে হয় না এই লেখাটি নিয়ে আমার আর কিছু বলার রয়েছে। তার উপরে অশিক্ষিত পটুত্ব , বালখিল্যপনা ইত্যাদি শব্দ ঘুরে ফিরেই আসছে। ফলে ঘাড় উঁচু করে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া কিঞ্চিৎ কষ্টকর।
    একটা কথা মনে হয়। একজন তরুণ কবি সবে লেখা শুরু করেছেন; তাঁর কবিতা কীভাবে "সাহিত্যধারার অন্যান্য টেক্সটের সঙ্গে এনগেজ করছে, সমসাময়িক রাজনীতি বা সমাজনীতির সঙ্গে এনগেজ করছে "- এ কি এত দ্রুত বলা যায়, বিশেষত একই সময়ে দাঁড়িয়ে? যেহেতু "কালপ্রবাহ এক অদ্ভুত জোড়া শব্দ... কাল বলে কিছু নেই, আছে শুধু প্রবাহ। ... সবাই সবাইকে পালটে দিচ্ছে-মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবার মতো, সবাই মিলে উৎসবে মাতবার মতো।"

    নমস্কার জানবেন।
    লিখবেন।
  • কৌতূহলী | 103.249.***.*** | ১০ জুলাই ২০২৪ ১৬:৫০534472
  • @সমালোচক
    আপনার থেকে অনেক কিছু ভাবনার খোরাক পাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা নেবেন
  • সিএস  | 103.99.***.*** | ১০ জুলাই ২০২৪ ১৭:১৫534474
  • আরো খানিক লিখে ফেলা যায়, পার্টিকুলারলি এই লেখাটি নিয়েই।

    slice of life মার্কা যে সব গল্প লেখা হয়ে চলেছে, অনেকানেক, পত্রিকা বা রবিবাসরীয় পাতায়, ৩০০ শব্দের মধ্যে চরিত্রদের ক্রাইসিস তৈরী করে শেষে গিয়ে সেসবের নিরসন, সেইরকম লেখার এক সংস্করণ যেন এই লেখাটি, গল্পের ডিটেল বাদ দিয়ে, ইঙ্গিতে বক্তব্য রেখে। তো slice of life মার্কা লেখা আমার পছন্দের নয়, ওসবে আর কিছু নেই, পাঠকদের টাইম পাস ছাড়া, এরকমই মনে করি, কিছুক্ষণের জন্য হয়ত মন উদাস করে দেয় ইত্যাদি প্রভৃতি আর এই লেখাটিকে ফিরে পড়ে কবিতা বলতে আমার আপত্তি আছে,গল্পও নয়, টুকরো গদ্য, কিছুটা দার্শনিকতা, কিছুটা সহজ নিরসন।

    লেখাটির দুটি ভাগ আছে, মাঝ্খানের ঐ তথ্যটি যেখানে 'আমি' তার পরিচয় দিয়েছে যে সে পড়াশোনা করেছে কিন্তু উপার্জন নেই, সেই বাক্যের আগে ও পরে। আগের যে অংশ, সেখানে 'আমি' তার চারপাশ, সমাজ - সংসার দেখছে, কে ভাবুক, কে শিল্পী বুঝছে, কাজকর্ম কীরকম চলছে সেসবও চোখে পড়ছে। কিন্তু এসব থেকে কিছু দূরে সে, সেসবের থেকে যুক্ত হতে পারে নি। এই অংশটির পরে ঐ উপার্জন সংক্রান্ত বাক্যটি, হালকা করে চরিত্রটির ক্রাইসিস এনে ফেলা হল, কিন্তু তরপরেই 'আশ্রম', 'শান্তি' এইসব শব্দগুলো আসছে। ক্রমশঃ বুড়ো মানুষের কথা, তার কাছ থেকে জীবনের শিক্ষা, সন্ন্যাস ও সহজ জীবনের সুরের সাথে পরিচিত হওয়া এবং লেখাটি শেষ হচ্ছে দুঃখ - কষ্টকে রসিকতা দিয়ে মোলায়েম করে তোলার শিক্ষা দিয়ে, প্রকৃতি অনাবিল ও হাস্যময় এই দৃশ্য দিয়ে। চরিত্রটি তার ক্রাইসিস থেকে মুক্তি পেয়েছে, সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে, প্রকৃতি আছে, শান্তি আছে, চাঁদের আলো আছে ! তো এই পুরো ব্যাপারটিই, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, প্রথমে যা লিখেছিলাম, জীবনের খণ্ডচিত্রময় গল্প, তার থেকে বেশী কিছু খুঁজে পাইনি। তো জটিলতাহীন এই গদ্য লেখাটি, জীবনের সহজ সুরকে খুঁজে পাওয়া, পাঠকের প্রাপ্তি, অপূর্ব স্বাদ, আমার প্রাপ্তি বিশেষ কিছু হয়নি, প্রথম পোস্টে যা লিখেছিলাম যে ক্রাফট আসে বিষয় থেকে, আর লেখককে যদি বলে যাওয়া হয় যে তুমি এরকমই থেকো, এরকমই লিখো, 'আমরা' সেসব পড়ে গ্রাম আর প্রকৃতি আর মাটির আবেশ খুঁজে পাই, আমাদের জটিলতাময় জীবনে তোমার লেখাই শিকড় আর সুরের সন্ধান দেয়, আর লেখক যদি সেসব কথা মেনে নেয়, তাহলে বিষয়ের স্থিতি তৈরী হতে থাকে, লেখা সারফেসময় হয়ে থাকে।
  • সমালোচক | 66.203.***.*** | ১০ জুলাই ২০২৪ ১৭:৪২534475
  • "A book must be an ice axe to break the sea frozen inside us." - আরেক ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড ভদ্রলোক।
    সারফেসময় শব্দটা কী ভাল!
  • পাপাঙ্গুল | ১০ জুলাই ২০২৪ ১৯:৪৯534480
  • সমস্ত মন্তব্য সম্পর্কে জগন্নাথদেবের মত জানতে পারলে ভাল লাগত। 
  • র২হ | 2601:c6:d200:2600:d509:bae8:901f:***:*** | ১০ জুলাই ২০২৪ ২০:৪৪534482
  • আলোচনাটা ভালো লাগছে।
    সিএস | ১০ জুলাই ২০২৪ ০০:৪৯ এর সঙ্গে একমত।
     
    পাপাঙ্গুলের মন্তব্য প্রসঙ্গে, এইটা আমার একটা কৌতূহলের জায়গা - স্রস্টার পক্ষে এইসব আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ কি ডিসট্র্যাকটিং হতে পারে? দূর থেকে পাঠক সমালোচকের মন্তব্য লক্ষ্য করা কি লেখার জন্য বেশি উপকারী? 
    তবে একেকজনের লেখা ও লেখা সংক্রান্ত ভাবনা বা এক্সারসাইজের পদ্ধতি আলাদা; এর কোন নির্দিষ্ট নিয়ম থাকা সম্ভব না। 
    লেখক পাঠকের ইন্টারঅ্যাকশন গুরুর বড় সম্পদ। এই প্রসঙ্গে মনে হলো, ইন্দ্রাণীদির লেখাতে অনেক সময় পাঠক লেখকের চমৎকার কথপোকথন পাওয়া যায় লেখা শৈলী থেকে ভাবনা ইত্যাদি নিয়ে। সেসব একদিকে নতুন চিন্তা ভাবনার খোরাক জোগায়, অন্যদিকে শিক্ষানবীশের কাছে অতি মূল্যবান। 
     
    এই টইয়ে একককে মিস করছি।
  • পাপাঙ্গুল | ১২ জুলাই ২০২৪ ১৫:১৬534541
  • সক্রিয় আলোচনায় অংশ না নিলেও , একজন কবি/লেখকের সৃষ্টি একাডেমিক সাহিত্য সমালোচনার আতশ কাঁচের তলায় পড়বে কি না পাঠকদের প্রতিক্রিয়াকেই তিনি অগ্রাধিকার দেবেন এই ব্যাপারটা বোঝা জরুরি। স্রষ্টার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা তো আছেই এটা বলার যে লেখা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য হবে কিনা তা ভেবে আমি লিখি না। 
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন