এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • বঙ্কিমের বাঙ্গালা : দেড়শ বছর পর একটা শিক্ষাসফর

    Irfanur Rahman Rafin লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ০৭ জুন ২০২২ | ৪২১২ বার পঠিত
  • ১৮৭৪ সাল থেকে ১৮৮৪ সালের মধ্যে বঙ্গদর্শন ও প্রচার‘এ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলার ইতিহাস বিষয়ে চারটি প্রবন্ধ লেখেন। সম্প্রতি সেগুলো জড়ো করে প্রকাশ করেছে স্পার্ক। প্রবন্ধ চারটি, যথাক্রমে —
     
    ১ বাঙ্গালার ইতিহাস
    ২ বাঙ্গালার কলঙ্ক
    ৩ বাঙ্গালার ইতিহাস সম্বন্ধে কয়েকটি কথা
    ৪ বাঙ্গালার ইতিহাসের ভগ্নাংশ কামরূপ-রঙ্গপুর
     
    ততদিনে পলাশী কাণ্ডের শতবর্ষ পার হয়ে গেছে। সিপাহীদের পরাজয়ে অবসান ঘটেছে মুঘল আমলের, আর ভারতবর্ষে শুরু হয়েছে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার রাজত্ব। প্রবন্ধগুলো পড়ার সময় কনটেক্সটটা মাথায় রাখতে হবে।
     
    ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’ শুরু হয়েছে হাহাকারের মধ্য দিয়ে। সকলেরই ইতিহাস আছে, শুধু বাংলার ইতিহাস নাই। এর কারণ বঙ্কিম খুঁজে পেয়েছেন ‘দেব ভক্তিতে’, আর ‘গর্বের অভাবে’; বাঙালি তাঁর নজরে ‘হতভাগ্য জাতিদিগের মধ্যে অগ্রগণ্য’।
     
    উদ্যমী বঙ্কিম তাই ‘বাঙ্গালার ইতিহাসের উদ্ধার’-এ নেমেছেন। সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছেন ‘বাবু’ রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়। একটা ‘বাল্যপাঠ্য পুস্তক’ নিয়ে।
     
    মুখোপাধ্যায়ের সহযোগিতা নিয়ে চট্টোপাধ্যায় যে-ইতিহাস উদ্ধার করলেন, তার সারকথা হল এই, এককালে সিংহল-যবদ্বীপ-বালিদ্বীপ সব বাঙালির উপনিবেশ ছিল। এমনকি উত্তর ভারতেও ছিল এই জাতির উপনিবেশ। তাই তারা ‘ক্ষুদ্র জাতি’ হতে পারে না।
     
    কিন্তু কেনো বঙ্কিমের এত বড় হওয়ার সাধ? অনুমান করা যায়, ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনজাত হীনম্মন্যতা! বাঙালি যে ব্রিটিশের চেয়ে কম কিছু নয়, দখলদারিত্বে সমান সমান, তা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে গেছিলেন বঙ্কিম।
     
    পাঠানদের ব্যাপারে আপাতদৃষ্টিতে অপেক্ষাকৃত উদারতা দেখিয়েছেন তিনি। স্বাধীন পাঠানদের শাসনকে বাঙালির জন্য আশীর্বাদ ভেবেছেন। যথার্থই দাবি করেছেন, এটা বাংলার শিল্প সাহিত্যের উৎকর্ষের কাল ছিল, স্থাপত্যেও উৎকর্ষের সাক্ষ্য দেয় গৌড় বা পাণ্ডুয়া।
     
    কিন্তু এই উদারতার পেছনে আসলে কী আছে? সেটা বুঝতে হলে পরাধীনতা বলতে বঙ্কিম কী বুঝতেন সেটা আগে বুঝতে হবে আমাদের! তো, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরাধীনতা সম্পর্কে ঘোষণা করছেন —

    “রাজা ভিনজাতীয় হইলেই রাজ্যকে পরাধীন বলিতে পারা যায় না।”

    কেন যায় না?

    “সে সময়ের জমিদারদিগের যেরূপ বর্ণনা দেখিতে পাওয়া যায়, তাহাতে তাঁহাদিগকেই রাজা বলিয়া বোধ হয়; তাঁহারা করদ ছিলেন মাত্র।”

    বঙ্কিমের বিশ্বাসে বাংলায় পাঠান শাসনেও যেহেতু স্থানীয় জমিদাররাই (এদের ধর্মীয় পরিচয় একটু পরেই পাব) রাজা ছিলেন, তাই মুঘল সম্রাট জালালুদ্দিন আকবরের অধীনস্ত হওয়ার সময় থেকেই বাংলার প্রকৃত পরাধীনতার শুরু, এই রায় দিচ্ছেন তিনি। আবেগমথিত ভাষায় মুঘলদের অর্থনৈতিক শোষণের সমালোচনা করছেন, যদিও তারচে শতগুণ বেশি শোষণ করা ব্রিটিশদের ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকেছেন। বলছেন, “মোগলই আমাদের শত্রু, পাঠানই আমাদের মিত্র”

    এই ‘আমরা’ কারা?

    দ্বিতীয় প্রবন্ধ ‘বাঙ্গালার কলঙ্ক’-এ এর জবাব পাই।

    এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি এরকম দুটি লাইন,

    “… বাঙ্গালি মুসলমান কর্তৃক পরাজিত হইয়াছিল…”

    “… বাঙ্গালি পাঁচশত বৎসর মুসলমানের অধীন ছিল…”

    চতুর্থ প্রবন্ধ ‘বাঙ্গালার ইতিহাসের ভগ্নাংশ কামরূপ-রঙ্গপুর’-এ দেখছি,

    “বাঙ্গালির দেশ, মুসলমানেরা কখনোই একচ্ছত্রাধীন করিতে পারেন নাই।”

    পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, বঙ্কিমের বোধে এই ‘আমরা’ হচ্ছেন বর্ণ হিন্দুরা, ‘বাঙ্গালি’ বলে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আসলে এঁদেরকেই বুঝিয়েছেন।

    তবু কারো মনে যদি সন্দেহ রয়ে যায়, সেটি দূর করে দেবে তৃতীয় প্রবন্ধ।

    এখানে এসে বাঙালিকে নিম্নরূপে সংজ্ঞায়িত করছেন বঙ্কিম,

    “আত্মজাতিগৌরবান্ধ, মিথ্যাবাদী, হিন্দুদেষী মুসলমানের কথা যে বিচার না করিয়া ইতিহাস বলিয়া গণ্য করে, সে বাঙ্গালি নয়।”

    ঐতিহাসিক মিনহাজের সমালোচনা করছেন বঙ্কিম এই ভাষায়,

    “… সেই গোহত্যাকারী, ক্ষৌরিতচিকুর মুসলমানের স্বকপোলকল্পনের উপর তোমার বিশ্বাস।”

    বঙ্কিম যে বাঙালি বলতে বর্ণ হিন্দুদেরকে বুঝতেন, মুসলমানদেরকে ভাবতেন তাদের ওপর উৎপীড়ন চালান ভিনজাতি, তার পক্ষে আর কোনো প্রমাণ পেশ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। অবশ্য পাঠানরা ভিনজাতি হলেও বঙ্কিমের নজরে মিত্র, কারণ তাঁর বিশ্বাসে এঁরা হিন্দু জমিদারদের (বঙ্কিমের ভাষায় ‘রাজা’) কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন নি, এই ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন মুঘলরা। বঙ্কিমের বিশ্বাস ভুল, মুঘল শাসনেও প্রশাসনিক উচ্চপদগুলো যে বর্ণ হিন্দুদেরই দখলে ছিল, আজকে তা সর্বজনস্বীকৃত ঐতিহাসিক সত্য।

    শুধু জাতিধারণায় না, বঙ্কিমের ভাষাধারণায়ও ঝামেলা আছে।

    দেখতে পাই তৃতীয় প্রবন্ধের এক জায়গায় লিখেছেন,

    “বাঙ্গালা ভাষা আত্মপ্রসূতা নহে। সকলে শুনিয়াছি, তিনি সংস্কৃতের কন্যা; কুললক্ষণ কথায় কথায় পরিস্ফুট। কেহ কেহ বলেন, সংস্কৃতের দৌহিত্রীমাত্র। প্রাকৃতই এঁর মাতা। কথাটায় আমার বড়ো সন্দেহ আছে। হিন্দি, মারহাট্টা প্রভৃতি সংস্কৃতের দৌহিত্রী হইলে হইতে পারে, কিন্তু বাঙ্গালা যেন সংস্কৃতের কন্যা বলিয়া বোধ হয়।”

    কেন ‘বড়ো সন্দেহ’ আছে বাংলার প্রাকৃতকন্যা হওয়ায়? কেন ‘বোধ হয়’? ভাষাতাত্ত্বিক কারণ দর্শালেও সেটাই কি আসল কারণ?

    উনিশশতকে রেসিস্ট ইওরোপিয়ানরা নিজেদেরকে ‘আরইয়ান’ মনে করত। জার্মান ম্যাক্স মুলার সেসময় একটা প্যাঁচ লাগান। আদি হিন্দুশাস্ত্রে আর্য শব্দটি আবিষ্কার করেন তিনি, এবং সিদ্ধান্ত টানেন, এই আর্য হচ্ছে সংস্কৃতে ইওরোপের আরইয়ান‘র প্রতিশব্দ। সংস্কৃতকে একটি আর্য ভাষা মনে করা হয়। প্রাকৃত জনসাধারণের ভাষা। তাই বঙ্কিম বাংলাকে বানাতে চেয়েছেন সংস্কৃতের কন্যা। উদ্দেশ্যটা অত্যন্ত পরিষ্কার, জাতির মত ভাষা প্রশ্নেও ব্রিটিশকে ঠেস দেয়া, যেন সাহেবদের সমীহ আদায়ে সুবিধা হয় বাবুদের।

    তবে মুসলমানদের সবাই যে বহিরাগত নন, সেটা স্বীকার করে নিচ্ছেন বঙ্কিম, কৃষিজীবী মুসলমানকে ‘দেশীয় লোক’-এর মর্যাদা দিচ্ছেন।

    তৃতীয় প্রবন্ধের একেবারে শেষে এসে লিখছেন তিনি,

    “এখন তো দেখিতে পাই, বাঙ্গালার অর্ধেক লোক মুসলমান। ইহার অধিকাংশই যে ভিন্ন দেশ হইতে আগত মুসলমানদিগের সন্তান নয়, তাহা সহজেই বুঝা যায়। কেননা ইহারা অধিকাংশই নিম্নশ্রেণির লোক — কৃষিজীবী। […] দেশীয় লোকের অর্ধেক অংশ কবে মুসলমান হইল? কেন স্বধর্ম ত্যাগ করিল? কেন মুসলমান হইল? কোন জাতীয়েরা মুসলমান হইয়াছে?”

    বঙ্কিম এই প্রবন্ধ শেষ করেছেন এই বলে, “বাঙ্গালার ইতিহাসে ইহার অপেক্ষা গুরুতর তত্ত্ব আর নাই।” এই লাইনটা পড়ে রীতিমতো কৌতূহল জাগে! বাংলার ইতিহাসে অনুসন্ধান করার মত চিত্তাকর্ষক বিষয়ের অভাব নাই (একটা বিশাল তালিকা বঙ্কিম নিজেই দিয়েছেন এই প্রবন্ধটিতে), তার মধ্যে মুসলমানদের এই ‘স্বধর্ম ত্যাগ’-ই কেন সবচে ‘গুরুতর তত্ত্ব’ মনে হল এই সৃষ্টিশীল কথাসাহিত্যিকের কাছে?

    চতুর্থ প্রবন্ধ মূলত কামরূপ আর রঙ্গপুর নিয়ে। এই প্রবন্ধে বঙ্কিম একটা কৌতূহলউদ্দীপক দাবি তুলেছেন৷ সেটা হল ঐতিহাসিকভাবে বাঙ্গালা অখণ্ড ছিল না। ভিন্ন ভিন্ন ‘অনার্য জাতির’ দেশের সমষ্টি ছিল। এই দেশগুলোকে জোড়া লাগিয়ে বাঙ্গালা বানাল কারা? বঙ্কিমের বিশ্বাসে, ‘আর্য’-রা। তারা ‘এক ধর্ম, এক ভাষার’ জোরে সবাইকে এক করে ‘আধুনিক বাঙ্গালায়’ পরিণত করল।

    এই শেষ দাবিটা বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আজকের বাংলাদেশকে এক ধর্ম (ইসলাম) আর এক ভাষার (বাংলা) দেশ হিশাবে দেখার রাষ্ট্রপ্রকল্প খুব প্রবলভাবেই হাজির আছে। ইন্ডিয়াতেও ক্ষমতাসীন দলের শ্লোগান ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানে’ দেশটিকে এক ধর্ম (হিন্দুধর্ম) আর এক ভাষার (হিন্দি) হিশাবে দেখার রাষ্ট্রপ্রকল্প বর্তমান, যার আছর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ওপর পড়বে না, এমন আশা বাতুলতা। এই দুয়ের শেকড়ই আমরা পাচ্ছি বঙ্কিমের রাষ্ট্রচিন্তায়। তাঁর ইতিহাস ভাবনায়। যা আবার তৈরি হয়েছে কলোনিয়াল কলকাতায় বসে। দুর্ভাগ্যবশত আমরা এখনো ‘বঙ্কিমের বাঙ্গালা’-য় বাস করছি, ধর্ম আর জাতি নিয়ে আমাদের আধিপত্যশীল ভাবনা রেসিস্টই রয়ে গেছে।
     
    আজকে আমরা অনেকেই গণতন্ত্রের কথা বলে থাকি। ধর্ম আর ভাষা প্রশ্নে এর মানে কী? বহুত্বকে ধারণ করা। এক দেশে বহু জাতির সহাবস্থানের পক্ষ নেয়া। ‘বঙ্কিমের বাঙ্গালা’-য় এই গণতন্ত্র পাওয়া যাবে না। সীমান্তের দুইদিকেই রেসিস্ট রাষ্ট্রচিন্তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাহলেই গণতন্ত্রের দিকে এক কদম আগাব আমরা।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৭ জুন ২০২২ | ৪২১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ০৯ জুন ২০২২ ০৬:৩১508644
  • অমিত
        এর চেয়ে অনেক বেশি বিদ্বেষ রোজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে।   কোন দেশ প্রতিবাদ করেনি। 
    কিন্তু এখন বৃহত্তম গনতান্ত্রিক দেশের শাসকদের राष्ट्रीय মুখপাত্র চ্যানেলে বলেছেন,  তাই প্রতিবাদ।  এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্ত রা তাই চালিয়ে যাচ্ছেন। 
    এটা হঠাত একবার বলা নয়। 
        আর বঙ্কিম ইতিহাস রচনায় কিছু  ভুল বলেছেন এটা মানতে বাধা কোথায়?
    তাতে ওনার বাকি কাজের গুরুত্ব কমে না। 
  • Amit | 121.2.***.*** | ০৯ জুন ২০২২ ০৭:০৩508647
  • রঞ্জনদা। বিদ্বেষ টা এক তরফা নয়। আমি নিজে চারটে ইসলামিক দেশে ৬-৭ বছর কাজ করেছি এবং সেখানে অনেক কিছুই নিজের চোখে দেখা। সেখানকার রোজকার বিদ্ধেষ আর র্যামপ্যান্ট ডিসক্রিমিনেশন নিয়েও ভারত বা অন্য দেশ রোজ রোজ প্রতিবাদ করেনা বড়ো কিছু না ঘটে গেলে। আর ওখানকার মিডিয়া সব স্টেট্ কন্ট্রোল্ড। ছোটোখাটো কিছু ঘটলেও বাইরে লোকের নজরেই আসেনা এসব আমার নিজের ​​​​​​​দেখা। 
     
    হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা কে আটকাতে গিয়ে ইসলামিক সাম্প্রদায়িকতা কে প্রশ্রয় দেওয়া কোন সঠিক রাস্তা বলে মনে করি না।যেকোনো সাম্প্রদায়িকতা পোষা কেউটের মতো। আজকে বা কালকে ছোবল মারবেই। 
      
    আপত্তি টা এখানেই যে আজকের ২১স্ট সেঞ্চুরি র এঙ্গেল দিয়ে একশো দুশো বছর আগেকার লেখা গুলোকে কাঁটা ছেড়া করতে আমাদের আপত্তি নেই , কিন্তু সেই একই জিনিসটা ১৪০০ বছর আগের কাউকে নিয়ে করা হলেই এতো চাদ্দিকে  আপত্তি ওঠে কেন ? খুনোখুনি হয় কেন ? কিছু বলা হলেই সবকিছু  খতরেমে চলে যায় কেন ? 
     
    আজকে আমরা রামায়ণ মহাভারত কে নিয়ে খিল্লি করি। বেশ করি। আমার খুব ভালোই লাগে। ধর্মের আজকের দিনে  কোনো ইউসফুল রেলেভেন্স ই নেই। এসবকে সিরিয়াসলি নেওয়াটাই মূর্খামি। 
     
    সেভাবেই এতো কাঁটাছেড়া করতে চাইলে সবকিছুকেই করা হোক না মাইক্রোস্কোপের তলায় রেখে। নাহলে সবকিছু কেই ছেড়ে দেওয়া হোক ? 
     
    এই এখানেই কদিন আগে একজন রাকৃমি কে শুবা বলে দিব্যি কিন্তু ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার কোনো ক্ষতি কেও করেছে বা করার কথা বলেছে কি এখনো অবধি ? আমি নিজে রাকৃমি হোক বা যেকোনো রিলিজিওন-কিছুতেই বিশ্বাস করি না। কিন্তু তাদেরকে খিস্তি করার দরকার আছে বলেও মনে করি না। পাত্তা না দিলেই তো হলো ?  
     
    এই একই জিনিস কোনো ইসলামিক দেশে হলে কিন্তু ওনার অন্ডকোষ দুটো ওনাকে আজকে হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হতো। কোনো সন্দেহ আছে কারোর ? 
     
     
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৯ জুন ২০২২ ০৭:১২508648
  • সাম্প্রদায়িকতাকে তোল্লা দেওয়া যাবে না, সেটা হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাই হোক বা ইসলামিক সাম্প্রদায়িকতাই হোক। অথচ দিনের পর দিন এটা একদল সমাজ-সংস্কারক বিস্মৃত হচ্ছেন।
    প্রত্যেক বছর মূর্তি ভাঙার ঘটনার খবর আসে পুজোর সময়ে, অথচ কোনো জোরদার প্রতিকার হয় না। কারণ তাই যদি হত তাহলে পরের বছর আবারও মূর্তি ভাঙার ঘটনা ঘটত না।
  • Ranjan Roy | ০৯ জুন ২০২২ ০৯:০৪508651
  • অমিত
     আমার বাবা  এবং  আমার মেয়ে  ইসলামিক দেশে চাকরি করেছেন। আপনি  যা  বলেছেন তার সঙ্গে 100% সহমত।  কিন্তু আমরা কি ওই দেশের মত হতে চাই। 
    আমি মিশন থেকে টি সি পাওয়া ছেলে।  কিন্তু  শু বা  বলা  অনাবশ্যক বোধে ভাটপাতার মেজাজে প্রতিবাদ করেছি।  
       এখানে প্রবন্ধ লেখক বঙ্কিম এর ইতিহাস বোধ নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন।  তাঁর সাদা কালো বক্তব্য নিয়ে আপত্তি থাকলে তথ্য ও  যুক্তি দিয়ে খন্ডন করা হোক। 
    উনি বঙ্কিম কে  गाल মন্দ করেন নি  তো!
         কিন্তু এতে আপনারা  whataboutry শুরু করলেন কেন? এই  আলোচনায় अन्य মুসলিম দেশের অবস্থান, বিজেপির মুখপাত্র की বলেছেন taar তার দায় কি একে নিতে হবে? কেন? নামে মুসলিম বলে?
    বঙ্কিম এর আলোচনায় আসুন। 
  • এলেবেলে | ০৯ জুন ২০২২ ০৯:৩১508653
  • বঙ্কিম নিয়ে এত ঢাকঢাক গুড়গুড়ের কিছু কি সত্যিই আছে? আজ দেশ জুড়ে যে হিন্দুত্ববাদের রমরমা, তার হার্ডওয়্যার হচ্ছেন বঙ্কিম আর সফটওয়্যার হচ্ছেন রাজনারায়ণ বসু।
     
    যে আনন্দমঠ নিয়ে এত কথা সেখানে ভবানী পাঠকও ছিলেন, মজনু শাহও ছিলেন। কিন্তু মূল উপন্যাসে মজনু শাহ হারিয়ে যান কেন? হারিয়ে যান কারণ সেখানে বঙ্কিমের এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার তাগিদ ছিল যে “স্বাধীনতা দেশী কথা নহে, বিলাতী আমদানী, লিবার্টি শব্দের অনুবাদ... ইহার এমন তাৎপর্য্য নয় যে, রাজা স্বদেশীয় হইতেই হইবে।” কিন্তু বিদেশি রাজা নিয়ে তাঁর একদেশদর্শিতা বড্ড স্পষ্ট হয়ে যায় যখন তিনি লেখেন --- “মুসলমানের পর ইংরেজ রাজা হইল, হিন্দু প্রজা তাহাতে কথা কহিল না। বরং হিন্দুরাই রাজ্য জয় করিয়া ইংরাজকে দিল। কেননা হিন্দুর ইংরাজের উপর ভিন্ন জাতীয় বলিয়া কোন দ্বেষ নাই।” তাহলে 'ভিন্ন জাতীয় বলিয়া' হিন্দুর দ্বেষ কাদের ওপর সে ব্যাপারে কোনও আড়াল কি আর থাকে?
     
    তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, আনন্দমঠ ইতিহাস নয় - নিছকই উপন্যাস। কিন্তু বন্দে মাতরম তো ঘোর বাস্তব, ঘোর ইতিহাস। স্বদেশী বিপ্লবীরা যে বন্দে মাতরম 'মন্ত্র' আউড়ে দেশ স্বাধীন করতে প্রাণ দিচ্ছেন, সেখানে মুসলমানরা কীভাবে ওই 'মন্ত্র' উচ্চারণ করবেন? এমনকি রবীন্দ্রনাথও তো এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবিত ছিলেন। তিনি তো লিখতে বাধ্য হলেন যে --- “বন্দে মাতরম গানের কেন্দ্রস্থলে আছে দুর্গার স্তব এ কথা এতই সুস্পষ্ট যে এ নিয়ে তর্ক চলে না। অবশ্য বঙ্কিম এই গানে বাংলা দেশের সঙ্গে দুর্গাকে একাত্ম করে দেখিয়েছেন, কিন্তু স্বদেশের এই দশভূজামূর্তিরূপের যে পূজা সে কোনো মুসলমান স্বীকার করে নিতে পারে না। ... যে রাষ্ট্রসভা ভারতবর্ষের সকল সম্প্রদায়ের মিলনক্ষেত্র সেখানে এ গান সর্বজনীনভাবে সঙ্গত হতেই পারে না।” তাহলে রবীন্দ্রনাথও কি বন্দে মাতরমের মধ্যে সুপ্ত হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার চিহ্ন খুঁজে পেয়ে কিছু ভুল করেছিলেন?
     
    যদি তাঁর সাহিত্যকর্মের অর্থাৎ উপন্যাসের কথা বাদও দিই, তাহলেও তাঁর যে বিপুল প্রবন্ধরাজি রয়ে যায় সেখানে তো খাঁটি বঙ্কিমই থেকে যান। তো তেমনই এক প্রবন্ধে তিনি স্পষ্ট লেখেন --- “ঢাকাতে দুইচারিদিন বাস করিলেই তিনটি বস্তু দর্শকদের নয়নপথের পথিক হইবে--- কাক, কুকুর এবং মুসলমান। এই তিনটিই সমভাবে কলহপ্রিয়, অতি দুর্দ্দম, অজেয়। ক্রিয়া বাড়ীতে কাক আর কুকুর, আদালতে মুসলমান।” যদি এর পরেও সাফাই গাইতে চান, তাহলে তাঁর ভারতকলঙ্ক প্রবন্ধটা পড়ে নেবেন।
     
    আর এই টইতে আমি হোয়াটঅ্যাবাউটারি করব না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
  • Ranjan Roy | ০৯ জুন ২০২২ ০৯:৫২508654
  • একটা কথা বলে আজ পালাই। 
    বঙ্কিম বাংলা ভাষা ও  সাহিত্যের ভগীরথ। ও জায়গাটা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। 
    কিন্তু সমগ্র রচনায় মুসলমান বিদ্বেষ এত রয়েছে যে খুঁজতে  মাইক্রো লাগে না। 
  • অমিয়ভূষণ | 2405:8100:8000:5ca1::3c:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১০:০০508656
  • আমাদের এ রকম এক বিশ্বাস আছে মুসলিম শাসন অন্তত পপুলার শাসন ছিল না । সিরাজদ্দৌল্লা না হয় (নবীন সেন ও শচীন সেনগুপ্তর মনে) কুচক্রের গাড্ডায় পড়েছিল । মীর কাশেম ? তখন ইংরেজ সৈন্যের যে সংখ্যা তাতে বাঙালির প্রিয় নৃপতি মীর কাশেমের (যদি সত্যি প্রিয়ই হতেন) ডাকে বাঙালি লাঠিয়ালরাই পিটিয়ে ঠাণ্ডা করতে পারত ইংরেজদের । এদিকে কিন্তু কামান বন্দুক সত্ত্বেও, মীর কাশেম হেরেই যাচ্ছেন হেরেই যাচ্ছেন । ইংরেজদের রাজ্যলাভের আগে নবাব সরকারের বড় বড় চাকরে কিছু হিন্দু ছিল । তারা করত ষড়যন্ত্র, কারণ রাজনীতি করার মতো বড় ছিল তারা, যেহেতু তখন রাজনীতি বলতে ভোট বোঝাত না, ষড়যন্ত্র বোঝাত; সে ষড়যন্ত্রের শিকার যে কোনও অল্প বয়সের নবাব মাত্র, তা নয়;  নিজের বাপ-ভাই, অন্নদাতা, সম্রাট কে নয়; অন্তত দেশের অধিকাংশ মানুষ , যারা সাধারণ হিসেবে হিন্দু ছিল, মুসলিম শাসনের সঙ্গে দেশাত্মবোধের পর্যায়ে ইনভলব ছিল না । কোনও শাসন ব্যবস্থাকে নিজের বলে মনে না করা, আর তাকে উটকো বিপত্তি বলে মনে করার মধ্যে ফারাক কম । কিছুই আশ্চর্যের নেই, তাতে যদি বঙ্কিমচন্দ্র মুসলিম শাসনকে আপনার মনে না করে থাকেন ।
    ...
    বঙ্কিমচন্দ্রকে পুনর্বাসিত না করে, আপাতত যা চোখে পড়ছে, তা হচ্ছে এই মুসলিম শাসন ব্যবস্থা বা অব্যবস্থাকে উটকো আপদ মনে করতেন তিনি, কিন্তু মুসলিম ও হিন্দু রায়তে বোধ হয় ভেদ করতেন না । হাসিম সেখ, রামা কৈবর্ত, পরাণ মণ্ডল তাঁর দৃষ্টিতে এক ও অভিন্ন ছিল ।
  • এলেবেলে | ০৯ জুন ২০২২ ১০:১৪508657
  • বটেই তো! তাই হাসিম সেখ আর রামা কৈবর্তরা যখন ঔপনিবেশিক শোষণের চোটে দিশাহারা, যখন বাংলার বৃহত্তম মন্বন্তরে এক কোটি মানুষ স্রেফ নেই হয়ে গেছেন, তখন তাঁদের প্রতি তাঁর প্রবোধ বাক্যের নমুনা কিঞ্চিৎ এইরকম --- তাহার তাঁত বোনা ব্যবসায় লোপ পাইয়াছে বটে, কিন্তু সে অন্য ব্যবসা করুক না কেন? ...তাঁত বুনিয়া আর খাইতে পায় না, কিন্তু ধান বুনিয়া খাইবার কোন বাধা নাই।
     
    কিন্তু যেই বিচারপতিদের প্রসঙ্গ আসছে অমনি ডিগবাজি খেয়ে তিনি অবলীলায় লিখছেন --- বিচারকার্য শিক্ষিত জজের দ্বারা হওয়াই কর্তব্য--- যে অনেক দিন ধরিয়া কোন একটি কাজ অভ্যাস করিয়াছে, তাহাকেই শিক্ষিত বলিতেছি। যদি কাঁসারীকে ঘটি গড়িতে না দিয়া, তাঁতিকে কাপড় বুনিতে না দিয়া, পাঁচজন মাটি কাটা মজুরকে দিয়া ঘটি গড়ান, বা বস্ত্র বুনান ভাল না হয়, তবে যে বিচারচার্য শিল্পকর্মাপেক্ষা শতগুণে কঠিন, তাহাতেই কি কেবল শিক্ষিতাপেক্ষা অশিক্ষিতের কার্য ভাল?
  • r2h | 134.238.***.*** | ০৯ জুন ২০২২ ১০:২০508658
    • Amit | 121.200.237.26 | ০৯ জুন ২০২২ ০৭:০৩508647
    • এই এখানেই কদিন আগে একজন রাকৃমি কে শুবা বলে দিব্যি কিন্তু ঘুরে বেড়াচ্ছেন।  
       ...
      এই একই জিনিস কোনো ইসলামিক দেশে হলে কিন্তু ওনার অন্ডকোষ দুটো ওনাকে আজকে হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হতো। কোনো সন্দেহ আছে কারোর ? 
     
    অমিতবাবু, স্কেল, প্রেক্ষিত, ব্যাক্তি, অবস্থান, উদ্দেশ্য, বিধেয় সব বিচার করতে হবে তো।

    পুরীর আচার্য্য ও দেবদাসী প্রথার সম্পর্ক নিয়ে অনুরূপ কথা AIMIM বা ওরকম কোন দলের মুখপাত্র টিভি চ্যানেলে বসে বললে আপনার কাঙ্খিত প্রতিক্রিয়া হবে।
    গুরু অত বড় না আর রাকৃমির মত বাঙালীকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান সর্বভারতীয় হিন্দুবীরদের কাছে তত আপন না।
    কালবুর্গী, গৌরী লঙ্কেশ ইত্যাদিরা খুন হলেন তো।
    রক্তপিপাসা এত সহজে মেটে না জানি, তবু সহভাটুরের অন্ডকোষের দিকে নজর দেওয়াটা একটু লো হয়ে গেলঃ)
  • দীপ | 2402:3a80:196c:a71:183a:5e23:65cf:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১০:৩৭508660
  • বিজয়সিংহ রাঢ় অঞ্চলের রাজার ছেলে।
    যেকোনো সাম্প্রদায়িকতাই চূড়ান্ত ঘৃণ্য ও সমাজের পক্ষে‌ ক্ষতিকারক। বাবরি মসজিদ ধ্বংস, গুজরাট দাঙ্গা, গৌরী লঙ্কেশ কালবুর্গীদের খুন ভারতের কলঙ্ক। দ্ব্যর্থহীন ভাবে এর নিন্দা প্রয়োজন।
    এক‌ইভাবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চূড়ান্ত ঘৃণ্য, তার‌ও বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রয়োজন।  তখন কিন্তু কোনো প্রতিবাদ হয়না। আর কেউ প্রতিবাদ করলে সাম্প্রদায়িকতা, চর্মরোগ, অভিসন্ধি পাওয়া যায়! 
    ভণ্ডামিটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেনা?
  • দীপ | 2402:3a80:196c:a71:183a:5e23:65cf:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১০:৪৭508663
  • আর আনন্দমঠের প্রথম সংস্করণের ইংরেজ কেটে নেড়ে/ যবন বসানো হয়েছে। সেটাই তো বলা হল! 
    বঙ্কিম ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদের প্রতি চূড়ান্ত ক্রোধপ্রবণ, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই ক্রোধ বিন্দুমাত্র অসঙ্গত নয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রতি নয়। তাই হাসিম শেখ আর রামা কৈবর্ত - দুজনকে নিয়েই তিনি লিখেছেন।
    বঙ্কিমকে নিয়ে আলোচনায় এগুলো লেখা প্রয়োজন!
  • দীপ | 2402:3a80:196c:a71:183a:5e23:65cf:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১০:৫৮508665
  • আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি,
    তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী।
    ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে,
    তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে!
     
    ডানহাতে তোর খড়্গ জ্বলে, বাঁহাত করে শঙ্কাহরণ,
    দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরন!
     
    তোমার ঐ মুক্তকেশের পুঞ্জমেঘে লুকায় অশনি,
    তোমার আঁচল ঝলে আকাশতলে রৌদ্রবসনী!
    ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে,
    তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে!"
     
    "আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে"
     
    এবার তোর ভরা গাঙ্গে বান এসেছে, জয় মা বলে ভাসা তরী
     
    "মা'র অভিষেকে এসো এসো ত্বরা, মঙ্গলঘট হয়নি যে ভরা"
     
    হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রবীন্দ্রনাথ!
  • দীপ | 2402:3a80:196c:a71:183a:5e23:65cf:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১০:৫৯508666
  • Sorry , মরা গাঙে
  • দীপ | 2402:3a80:196c:a71:183a:5e23:65cf:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১১:০২508667
  • আনন্দময়ীর আগমনে
    - কাজী নজরুল ইসলাম
    আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল? 
    স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল। 
    দেব–শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি, 
    ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী? 
     
    মাদীগুলোর আদি দোষ ঐ অহিংসা বোল নাকি-নাকি 
    খাঁড়ায় কেটে কর মা বিনাশ নপুংসকের প্রেমের ফাঁকি। 
    ঢাল তরবার, আন মা সমর, অমর হবার মন্ত্র শেখা, 
    মাদীগুলোয় কর মা পুরুষ, রক্ত দে মা রক্ত দেখা। 
     
    তুই একা আয় পাগলী বেটী তাথৈ তাথৈ নৃত্য করে 
    রক্ত-তৃষার 'ময়-ভুখা-হু'র কাঁদন-কেতন কণ্বে ধরে।- 
    অনেক পাঁঠা-মোষ খেয়েছিস, রাক্ষসী তোর যায়নি ক্ষুধা, 
    আয় পাষাণী এবার নিবি আপন ছেলের রক্ত-সুধা। 
    দুর্বলেরে বলি দিয়ে ভীরুর এ হীন শক্তি-পূজা 
    দূর করে দে, বল মা, ছেলের রক্ত মাগে দশভুজা।.. 
     
    'ময় ভুখা হুঁ মায়ি' বলে আয় এবার আনন্দময়ী 
    কৈলাশ হতে গিরি-রাণীর মা দুলালী কন্যা অয়ি!
  • বঙ্কিম | 2405:8100:8000:5ca1::52:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১১:০৭508668
  • বঙ্কিম একবার শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে  বলেছিলেন, চাকরি আমার জীবনের অভিশাপ।
    আনন্দমঠ লেখার পর থেকেই বঙ্কিমকে বারবার শাস্তিমূলক বদলির শিকার হতে হয়। সার্ভিস বুকে তাঁর নামে নানা নেতিবাচক উক্তি লেখা হতে থাকে। কুড়ি বছর বয়স থেকে যিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, আজ সেই প্রৌঢ় বঙ্কিমের বিরুদ্ধে ছোকরা ইংরেজ অফিসাররা সার্ভিস বুকে মন্তব্য করতে থাকে, কাজ জানেন না, কাজে উৎসাহ নেই, গড়পড়তা, মামুলি কাজ করেন।  বঙ্কিম শেষ পর্যন্ত রেহাই পেয়েছিলেন আনন্দমঠের পরবর্তী সংস্করণে ইংরাজ ভাঙিতেছে'র জায়গায় নেড়ে ভাঙিতেছে লিখে, এ তথ্য সুবিখ্যাত। কিন্তু কথাটা ভুল। ভবি তাতেও ভোলেনি। বঙ্কিমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত ছিল।
    বস্তুত ১৮৮২ সালের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে আনন্দমঠের কিস্তি (দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথম ছয়টি পরিচ্ছেদ - ইংরেজদ্রোহের জ্বলন্ত নিদর্শন ছিল এই অংশটায়) বঙ্গদর্শনের সংখ্যায় প্রকাশিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে (২২শে জানুয়ারি) এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। বঙ্কিমের ডিমোশন হল। তাঁকে অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি নিযুক্ত করা হয়েছিল এর আগে। পদটিকে বিলুপ্ত করে তাঁকে পুনরায় ডেপুটিগিরিতে ফেরত পাঠানো হল।
    আনন্দমঠ কাণ্ডে তাঁকে সেযুগের ভারতীয়দের মধ্যে ইংরেজের সবথেকে বিশ্বাসভাজন কেশব সেনের (কেশব ছিলেন বঙ্কিমের সমবয়সী, ও আইন পাঠকালে বঙ্কিমের ক্লাসমেট) দ্বারস্থ হতে হয়। কেশবের ভাই কৃষ্ণবিহারী একটি দরাজ সার্টিফিকেট লিখে দেন, ইংরেজিতে আনন্দ মঠের একটি প্রশংসা, এবং সেটি যে রাজদ্রোহসূচক নয়, এই মর্মে ইংরেজকে আশ্বস্ত করেন কৃষ্ণবিহারী, দ্য লিবারেল অ্যাণ্ড নিউ ডিসপেনসেশন পত্রিকায়।
    এই প্রসঙ্গে কৃষ্ণবিহারীর পুত্র বলে গেছেন যে তাঁদের কলুটোলার বাড়িতে রাতের বেলায় বঙ্কিম এসে উপস্থিত হন। বঙ্কিম তখন ভবানী দত্ত লেনে থাকেন, অর্থাৎ কাছেই। জানা যায় সেদিন ছোটলাট থম্পসন বঙ্কিমকে তলব করেছেন, এবং আনন্দমঠ উপন্যাসটি তখন বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হচ্ছে, সেটি লেখা বন্ধ না করলে বঙ্কিমের চাকরি যাবে বলেছেন। বঙ্কিম যখন বলেন যে সেটি ইংরেজের বিরুদ্ধে নয়, তখন এই মর্মে কেশব সেনের শংসাপত্র দাখিল করতে বলা হয়।
    বাঙালির সাহিত্যসম্রাট ইংরেজের চাকরি করতেন। এ জাতির পক্ষে সেটা যে কত বিষম জ্বালা, কি বিষম অপমানের, সেটা একজন বঙ্কিম জীবনীকার চমৎকার একটা অ্যানেকডোটের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। অক্ষয় দত্তগুপ্ত। অক্ষয়বাবুর  লেখনীতেই উদ্ধৃত করি।
    "মুসলমান আমলের একজন অত্যুচ্চ হিন্দু রাজকর্ম্মচারীর (রূপ বা সনাতন) সম্পর্কে প্রবাদ এই যে তিনি একদিন রাত্রিকালে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে রাজকার্য্যে গৃহের বাহির হইয়া পথিপার্শ্ববর্ত্তী এক গৃহের বারান্দায় আশ্রয়গ্রহণ করিতে বাধ্য হন। সেই সময় তিনি শুনিয়াছিলেন, গৃহমধ্যে স্ত্রী জিজ্ঞাসা করিতেছেন, ' বাহিরে বারান্দায় এমন দুর্যোগে কে উঠিল? একটা কুক্কুর নাকি?'  স্বামী তদুত্তরে বলিলেন - 'এমন দুর্যোগে কুক্কুর বাহির হয় না, ও রাজবাড়ীর কোনও কর্ম্মচারী হইবে।' ঐ কথায়ই নাকি উক্ত রাজকর্ম্মচারীর মনে বৈরাগ্যের উদয় হয়।"
    মধুমেহ বা বহুমূত্র রোগ খানিকটা বংশগত বটে, কিন্তু বঙ্কিমের পিতার এই রোগ ছিল না। বঙ্কিমের এই রোগ হয়েছিল সম্ভবত তাঁর চাকুরিজীবনের ক্লেশের ফলে। স্ট্রেস একটা বড় কারণ ডায়াবেটিসের। বঙ্কিম ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র তিপ্পান্ন বছর বয়সে অবসর নিয়েছিলেন। এর কয়েক বছর আগে থেকেই তিনি প্রতাপ চাটুজ্যে লেনে বাড়ি করেছেন (কলেজ স্ট্রিটে, মেডিকেল কলেজের উল্টোদিকে)। বঙ্কিম ১৮৯৪ সালে মারা যান, তখন তাঁর বয়স ছাপ্পান্ন। মৃত্যুর কারণ মধুমেহ থেকে হওয়া মূত্রনালীর স্ফোটক।

     
  • এলেবেলে | 202.142.***.*** | ০৯ জুন ২০২২ ১১:১৫508669
  • প্রথম সংস্করণেই কি মজনু শাহ ছিলেন? সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট অথচ মজনু শাহ থাকেন না কেন? 
     
    হাসিম শেখ তাঁত না বুনলে চাষা হবে কারণ তাঁত বুনতে তো সামান্যতম কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন হয় না, যেমন প্রয়োজন হয় না চাষের কাজের ক্ষেত্রেও! এবং এই কথাটা বলে বাংলার বিখ্যাত বস্ত্রশিল্প ধ্বংসকারীদের দিব্যি আড়াল করে ফেলা যায় আর পরাণ মণ্ডলদের জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করে প্রশংসা আদায় করে নেওয়া যায়!
     
    রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের বা দ্বিজেন্দ্রলালের এই গান বা কবিতাগুলো কি স্বদেশীদের ব্যাটল ক্রাই ছিল? কিন্তু বন্দে মাতরম ছিল। তাঁর গ্যাঁড়াকল হাট করে দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ এবং সেটা ১৯৩৭ সালে। কাজেই শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না।
  • Amit | 121.2.***.*** | ০৯ জুন ২০২২ ১১:১৮508670
  • " অমিতবাবু, স্কেল, প্রেক্ষিত, ব্যাক্তি, অবস্থান, উদ্দেশ্য, বিধেয় সব বিচার করতে হবে তো।

    পুরীর আচার্য্য ও দেবদাসী প্রথার সম্পর্ক নিয়ে অনুরূপ কথা AIMIM বা ওরকম কোন দলের মুখপাত্র টিভি চ্যানেলে বসে বললে আপনার কাঙ্খিত প্রতিক্রিয়া হবে।
    গুরু অত বড় না আর রাকৃমির মত বাঙালীকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান সর্বভারতীয় হিন্দুবীরদের কাছে তত আপন না।
    কালবুর্গী, গৌরী লঙ্কেশ ইত্যাদিরা খুন হলেন তো।
    রক্তপিপাসা এত সহজে মেটে না জানি, তবু সহভাটুরের অন্ডকোষের দিকে নজর দেওয়াটা একটু লো হয়ে গেলঃ)"
     
    দ্যাখেন কারোর কোথাও নজর দেওয়ার দরকার বা ইচ্ছা কিসুই নাই। আর অত রক্তপিপাসা আমার আছে বলে নিজের মনে হয়না।  অবশ্য আপনার ভাবনা আপনার হাতে-আমার কিচু করার নাই। আমার কাছে যেটা ক্রুড রিয়ালিটি মনে হয়েছে সেটাই বলেছি। হাতের কাছে বাংলাদেশে ব্লগার খুন কি কম পড়িয়াছে ? 
     
    হ্যা- ইন্ডিয়া এতদিন এই  লেভেলে ছিলোনা। দুর্ভাগ্য যে সেখানেই এবার যাচ্ছে আস্তে আস্তে। তাতে আমার আপনার খারাপ লাগছে। কিন্তু  আমাদের দৌড় এই মায়াপাতায় পোস্ট অব্দিই। রিয়ালিটি তাতে পাল্টাচ্ছে না। 
     
     
  • r2h | 134.238.***.*** | ০৯ জুন ২০২২ ১১:৪৭508671
  • না না, আমারও ওরকম ধারনা না, স্মাইলি দিলাম যেঃ)

    আমার বক্তব্য হল ভাটে রাকৃমি নিয়ে পোস্ট আর টিভিতে শাসক দলের মুখপাত্রের বাইটের ধার ও ভার এক না, আর সেটা খুব দুর্বোধ্যও না।

    বাংলাদেশে অনেকে প্রতিবাদ করছেন, আন্দোলন করছে। শাহবাগ তো একটা ফেনোমেনান হয়ে গেল - মূলত যা একটি স্বাধীন ও মুক্ত চিন্তার আন্দোলন। আমাদের এদিকে নেট বিপ্লবী ফেবু বিপ্লবী এসি ঘরে বিপ্লব এইসব বলে অনেক বিদ্রূপ হয়, কিন্তু বাংলাদেশে ব্লগার-হত্যা একটা পৃথক হত্যা-জঁর হয়ে গেল।
    এইবার, আমি জানি না, বাংলাদেশে যাঁরা সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন, তাঁদের কতজনকে শুনতে হয়, ভারতের বিফ-লিঞ্চিং নিয়ে তোমরা প্রতিবাদ কর না কেন? এবং এরকম কথা যদি কেউ বলেন, তাদের যে সবাই সমস্বরে ধর্মান্ধ বাইগট বলবেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
  • শাকের তলায় মাছ | 2405:8100:8000:5ca1::33:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১১:৪৮508672
  • "বাংলা দেশের চিত্ত সর্বকালে সর্বদেশে প্রসারিত হোক্‌, বাংলা দেশের বাণী সর্বজাতি সর্বমানবের বাণী হোক্‌। আমাদের বন্দে মাতরং মন্ত্র বাংলাদেশের বন্দনার মন্ত্র নয় - এ হচ্ছে বিশ্বমাতার বন্দনা - সেই বন্দনার গান আজ যদি আমরা প্রথম উচ্চারণ করি তবে আগামী ভাবী যুগে একে একে সমস্ত দেশে এই মন্ত্র ধ্বনিত হয়ে উঠবে।"
     
    - রথীন্দ্রনাথকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠি
  • Ranjan Roy | ০৯ জুন ২০২২ ১১:৫০508673
  • লেখাটা বঙ্কিম এর বাংলার ইতিহাস বোধ নিয়ে।  সেখানে লেখকের তথ্য গত বা  যুক্তিতে ভুল নিয়ে কোনও কথা নেই? 
    পাতার পর পাতা  শুধু ___
  • :) | 2405:8100:8000:5ca1::33:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১১:৫৮508674
  • "কিন্তু কেনো বঙ্কিমের এত বড় হওয়ার সাধ? অনুমান করা যায়, ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনজাত হীনম্মন্যতা! বাঙালি যে ব্রিটিশের চেয়ে কম কিছু নয়, দখলদারিত্বে সমান সমান, তা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে গেছিলেন বঙ্কিম।"
     
    অনুমান নিয়ে তর্কের আছেই বা কি?
  • Ranjan Roy | ০৯ জুন ২০২২ ১৩:০২508675
  • আছে। ইতিহাস লেখায় অনুমান থাকে। অবশ্যই তথ্যের ভিত্তিতে।  এর জবাবে দেখা যেতেই পারে যে অনুমান টি  কতটুকু যুক্তিযুক্ত বা তথ্য যা পাওয়া গেছে সেটা কতখানি অনুমান এর পক্ষে নাকি বিপক্ষে  ।
  • r2h | 134.238.***.*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৩:১০508676
  • বঙ্কিমচন্দ্রের মৌলিক চিন্তা যে এখনো এত লোকের কাছে এত প্রাসঙ্গিক সেইটা জেনেই আমি অবাক।
    মানে, ঐতিহাসিক চরিত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, রেট্রোসপেকশনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ।

    কিন্তু - "আজকে আমরা অনেকেই গণতন্ত্রের কথা বলে থাকি। ধর্ম আর ভাষা প্রশ্নে এর মানে কী? বহুত্বকে ধারণ করা। এক দেশে বহু জাতির সহাবস্থানের পক্ষ নেয়া। ‘বঙ্কিমের বাঙ্গালা’-য় এই গণতন্ত্র পাওয়া যাবে না। সীমান্তের দুইদিকেই রেসিস্ট রাষ্ট্রচিন্তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাহলেই গণতন্ত্রের দিকে এক কদম আগাব আমরা।" - যে লেখার প্রেমাইস হল, এখনো বঙ্কিমের বাঙ্গালায় আধুনিক গণতন্ত্রকে পাওয়া গেলেও যেতে পারে, সেই লেখার উপপাদ্য প্রতিপাদ্য সবই তো ঘাঁটা।
  • r2h | 134.238.***.*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৩:১৯508678
  • ইনফ্যাক্ট, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের মৃদু সমান্তরাল টানা একরকম লেখার আজকাল চল হয়েছে (নাকি আগে থেকেই ছিল, আমি পড়িনি?)। পব ভারতের একটা রাজ্য। সেখানে বাংলা ছাড়াও তামিল তেলুগুর মত প্রাচীন ও মেজর ভাষা রয়েছে, সেসব ভাষাগোষ্ঠীর অন্দরে নানান ধর্ম রয়েছে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বৈচিত্র ও জটিলতার কোন তুলনাই চলে না। ভাষা নিয়ে ভাবতে গেলেও, আসাম ত্রিপুরা আন্দামানে বিপুলসংখ্যক বাংলাভাষী আছেন। বাংলাভাষা নিয়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন আদৌ পবতে হয়নি, হয়েছে বরাকে।
    বঙ্কিমের চিন্তাক্ষেত্র মূলত সুবে বাংলা। তখনো বঙ্গভঙ্গ দেশভাগ সুদূরের কল্পনা। আজকের হিসেবে গনতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদিও। জাতীয়তাবাদ সবে উনুনে চাপানো হয়েছে।
  • পাঠক | 2405:8100:8000:5ca1::63:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৬:২৩508686
  • বঙ্কিম লিখলেনঃ
    বাঙ্গালা ভাষা আত্মপ্রসূতা নহে। সকলে শুনিয়াছি, তিনি সংস্কৃতের কন্যা; কুললক্ষণ কথায় কথায় পরিস্ফুট। কেহ কেহ বলেন, সংস্কৃতের দৌহিত্রী মাত্র। প্রাকৃতই এঁর মাতা। কথাটায় আমার বড় সন্দেহ আছে। হিন্দী, মারহাট্টা প্রভৃতি সংস্কৃতের দৌহিত্রী হইলে হইতে পারে, কিন্তু বাঙ্গালা যেন সংস্কৃতের কন্যা বলিয়া বোধ হয়। প্রাকৃতে কার্য্যের স্থানে কজ্জ বলিত। আমাদের চাষার মেয়েরাও কার্য্যের স্থানে কায্যি বলে। বিদ্যুতের স্থলে বিজ্জুলও বলি না, বিজুলিও বলি না। চাষার মেয়েরাও বিদ্যুৎ বলে। অধিকাংশ শব্দই প্রাকৃতের অননুগামী। অতএব বিচার করা আবশ্যক-প্রথম, বাঙ্গালার অনার্য্য ভাষা কি ছিল? দ্বিতীয়, কি প্রকারে তাহা সংস্কৃতমূলক ভাষার দ্বারা কত দূর স্থানচ্যুত হইল? তৃতীয়, সংস্কৃতমূলক যে ভাষা, তাহা একেবারে সংস্কৃত হইতে প্রাপ্ত, না প্রাকৃত হইতে প্রাপ্ত? বোধ হয় খুঁজিয়া ইহাই পাইবে যে, কিয়দংশ সংস্কৃত হইতে প্রাপ্ত, কিয়দংশ প্রাকৃত হইতে প্রাপ্ত। চতুর্থ, সেই সংস্কৃতমূলক ভাষার সঙ্গে অনার্য্য ভাষা কত দূর মিশ্রিত হইয়াছে। ঢেঁকি, কুলো ইত্যাদি শব্দ কোথা হইতে আসিল? পঞ্চম, ফারসী, আরবী, ইংরেজি কোন্ সময়ে কত দূর মিশিয়াছে?
     
    বঙ্কিম কেন বাংলাকে সংস্কৃতের কন্যা বলেছেন তার কিছু ভাষাগত কারণ দিয়েছেন। এবং কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাননি, বলছেন 'বোধ হয়', তারপর অনেকগুলো প্রশ্ন রেখেছেন। কিন্তু এই প্রবন্ধের লেখক সেসবকে পাত্তা দেননি, নিজের মনগড়া থিওরিকে বঙ্কিমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেনঃ
    কেন ‘বড়ো সন্দেহ’ আছে বাংলার প্রাকৃতকন্যা হওয়ায়? কেন ‘বোধ হয়’? ভাষাতাত্ত্বিক কারণ দর্শালেও সেটাই কি আসল কারণ?
    উনিশশতকে রেসিস্ট ইওরোপিয়ানরা নিজেদেরকে ‘আরইয়ান’ মনে করত। জার্মান ম্যাক্স মুলার সেসময় একটা প্যাঁচ লাগান। আদি হিন্দুশাস্ত্রে আর্য শব্দটি আবিষ্কার করেন তিনি, এবং সিদ্ধান্ত টানেন, এই আর্য হচ্ছে সংস্কৃতে ইওরোপের আরইয়ান‘র প্রতিশব্দ। সংস্কৃতকে একটি আর্য ভাষা মনে করা হয়। প্রাকৃত জনসাধারণের ভাষা। তাই বঙ্কিম বাংলাকে বানাতে চেয়েছেন সংস্কৃতের কন্যা। উদ্দেশ্যটা অত্যন্ত পরিষ্কার, জাতির মত ভাষা প্রশ্নেও ব্রিটিশকে ঠেস দেয়া, যেন সাহেবদের সমীহ আদায়ে সুবিধা হয় বাবুদের।
     
    লেখকের বয়সে অবশ্য প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের একটা ঝোঁক থাকে, নিজের থিওরিকে আপ্তবাক্য মনে হয়, যাচাই করার উৎসাহ তেমন থাকে না। তাই সহজেই নিঃসংশয়ে সিদ্ধান্ত করে ফেলা যায়।
  • Ranjan Roy | ০৯ জুন ২০২২ ১৬:৫৫508689
  • "অনুমান " এবং "বোধহয় " দুটোই থিওরি নয়,  হাইপোথিসিস এর द्योतक। কাজেই দুটো ক্ষেত্রেই আলোচনা হতে পারে। চলুক। 
    আচ্ছা,  দীপ কয়েক বার ইসলামি সাম্রাজ্য বাদের বিরুদ্ধে বঙ্কিম এর প্রবল ঘৃণার উল্লেখ করেছেন।  আমার ব্যাক্তিগত বিরাগ  সমস্ত সাম্রাজ্যবাদে ।
    কিন্তু বঙ্কিম এর লেখায় ওই শব্দবন্ধ পেলাম না। 
    তাহলে দীপ ঠিক কি বলতে চাচ্ছেন?
  • @Ranjan Roy | 2405:8100:8000:5ca1::167:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৭:০২508690
  • বঙ্কিমের 'বোধ হয়' ছিল,লেখকের আছে সিদ্ধান্ত।"তাই বঙ্কিম বাংলাকে বানাতে চেয়েছেন সংস্কৃতের কন্যা। উদ্দেশ্যটা অত্যন্ত পরিষ্কার, জাতির মত ভাষা প্রশ্নেও ব্রিটিশকে ঠেস দেয়া, যেন সাহেবদের সমীহ আদায়ে সুবিধা হয় বাবুদের।" লেখক যতক্ষণ না নিজেকে প্রশ্ন করতে শেখেন ততক্ষণ অবধি সে লেখা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই।
  • দীপ | 2401:4900:3a0b:2d16:89e6:8f7a:44c3:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৭:৩৮508691
  • রঞ্জনদা, ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ বুঝতে চাইলে নেহেরু, রাহুল সাংকৃত্যায়ন পড়ুন। এঁরা বিজেপির লোক বলে‌ মনে হয়না! 
    যেকোনো সাম্রাজ্যবাদ অপরকে ধ্বংস করে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ মনে করে ইসলাম একমাত্র সত্যধর্ম, তাই বিধর্মীদের হত্যা করা বা তাদের বলপূর্বক ধর্মান্তর করা সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত, তাদের উপাসনাগৃহ ধ্বংস করা মৌলিক অধিকার। এটাই সাম্রাজ্যবাদ।
    ভারতে মোগল শাসনের দীর্ঘস্থায়ী হবার অন্যতম কারণ মোগল শাসকেরা ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ জোর করে চাপাতে চাননি, তাঁরা শাসক হিসেবে অনেক উদার চিন্তার পরিচয় দিয়েছেন। এক‌ইভাবে মহীশূরে হায়দার আলী, টিপু সুলতান উদার মানসিকতার প্রকাশ করেছেন। বাংলায় আলীবর্দী খাঁও উদারতা দেখিয়েছেন। জোর করে অন্য কিছু চাপিয়ে দেননি!
  • দীপ | 2401:4900:3a0b:2d16:89e6:8f7a:44c3:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৭:৪৯508692
  • আর ভারতীয় উপমহাদেশে দেশকে মাতৃভাবে বন্দনা অতি প্রাচীনকাল থেকেই দেখা যায়।‌ বঙ্গদেশের এর প্রভাব আরো গভীর। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে মধুসূদন, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত সবাই এই মাতৃমূর্তির বন্দনা করেছেন।
    তাহলে সবাইকে একধারে সাম্প্রদায়িক দাগিয়ে দিতে হয়! 
     
    বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত, 
    আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
    ওমা তোমার আকাশ, তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
    ----
    ওমা অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কি দেখেছি মধুর হাসি।
     
    স্পষ্টভাবে দেশ ও মাতৃকল্পনা একাকার হয়ে গেছে। বঙ্কিমের বন্দরে মাতরমের সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই।
  • দীপ | 2401:4900:3a0b:2d16:89e6:8f7a:44c3:***:*** | ০৯ জুন ২০২২ ১৭:৫০508693
  • Sorry বন্দে মাতরম
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন