এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • প্রসঙ্গ কোভিড ও ভ্যাকসিন : মাননীয় ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক, আপনাকে বলছি স্যার

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ জানুয়ারি ২০২২ | ১৪৩৭২ বার পঠিত | রেটিং ৪.৬ (৭ জন)
  • আন্তর্জালে ভুয়ো খবর আর ভুলভাল হাস্যকর অবান্তর কথাবার্তার প্রবাহ নিরন্তরই চলে, চলতেই থাকে। তার বেশিরভাগই চোখে পড়েনা, এবং যা চোখে পড়ে তারও প্রায় সবটাই নীরবে উপেক্ষা করা ছাড়া গত্যন্তর থাকেনা। কারণ, প্রথমত, যেসব বিচিত্র ব্যাপার নিয়ে কথা হয় তার সব কিছু বিস্তারিত ভাবে জানা থাকেনা, আর জানা থাকলেও তার পেছনে পড়ে থাকতে গেলে নাওয়া খাওয়া ভুলতে হয়। কিন্তু, মাঝে মাঝে সত্যিই কিছু না বলে আর পারা যায়না, এবং এখন বোধহয় সেই মুহূর্ত আবার এসেছে। গত বছরখানেক যাবৎ কোভিড আর তার ভ্যাকসিন নিয়ে ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের নির্বোধ ও কুৎসিত শোরগোলে কান পাতাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    সত্যি, এ আর বাস্তবিকই নেওয়া যাচ্ছে না!

    ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব অবশ্য, বলা বাহুল্য, একটা নয়, অনেক। এবং, শুধু অনেক নয়, অনেক ধরনের। যেমন ধরুন, (১) চিন পরিকল্পনা করে সারা পৃথিবীতে মহামারি ছড়াচ্ছে (আর আমেরিকা ইউরোপ বসে বসে চুপচাপ বুড়ো আঙুল চুষছে --- চমৎকার, তাই না?)। (২) চিন আর আমেরিকা দু পক্ষ মিলে ইচ্ছে করে মহামারি ছড়াচ্ছে (এবং ইউরোপ আর রাশিয়াকে খেলায় না নিয়ে দুধুভাতু করে রেখেছে, আর তেনারাও সাইডলাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে চুপচাপ খেলা দেকচেন, অভিমানে কতাবাত্রা বোলচেন্নাকো)। (৩) করোনা ভাইরাস হচ্ছে উহানের ল্যাবরেটরিতে তৈরি জৈব অস্ত্র, গণহত্যার উদ্দেশ্যে বানানো (এ বাবা, ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় তবে এ ভাইরাসের ‘আরএনএ’–তে কাটাছেঁড়ার দাগ পাওয়া গেল না কেন?)। (৪) এ সবই হচ্ছে বিল গেটস সায়েবের কুকীর্তি, তিনি তিন বছর আগেই এক সেমিনারে মহামারির ঘোষণা করে রেখেছিলেন (পৃথিবীব্যাপী ষড়যন্ত্রের প্ল্যান আগেভাগেই সেমিনারে ঘোষণা করে দিচ্ছেন --- বেচারা --- ঘটে ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের মতন তীক্ষ্ণবুদ্ধির সাপ্লাই না থাকলে কেমন দুর্দশা হতে পারে, দেকেচেন্তো?)।

    তবে, ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের যে সংস্করণগুলো সোশাল মিডিয়ায় বাঙালি পোগোতিসিলদের মার্কেটে সবচেয়ে বেশি চলছে সেগুলো এইরকম। (১) এ হল এক ‘পুঁজিবাদী চক্রান্ত’, অর্থাৎ, বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো নাকি বড়বড় পুঁজিপতি, উচ্চপদাসীন বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে অতিমারির ভয় দেখিয়ে লকডাউন করে গরিবের রুটিরুজি কেড়ে নিচ্ছে, যাতে করে ধনীদেরকে আরও ধনী করে তোলা যায় (কিন্তু, গরিবরা কাজকর্ম না করলে ধনীর মুনাফা হবেটা কীভাবে?)। (২) এ হল ‘বিগফার্মা’-র তরফে মহামারির ভুয়ো আতঙ্ক ছড়িয়ে ভ্যাকসিন বেচার ষড়যন্ত্র (কিন্তু, যাদের সে স্বার্থ নেই, তারা লকডাউনের বেয়াদবি সহ্য করবে কেন?)। (৩) প্রাণঘাতী ভ্যাকসিন দিয়ে দিয়ে বদমাইস কোম্পানিগুলো মানুষকে মেরে ফেলতে চাইছে (তা, পিত্থিমি শ্মশান হয়ে গেলে খাবে কী বাওয়া?)। (৪) এ রোগটি যে খালি সম্পন্ন শহুরেদের হচ্ছে, এবং শহুরে শ্রমজীবী বস্তিবাসী আর গ্রামের কৃষকদের হচ্ছেনা, তাতেই প্রমাণ, এ আসলে পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো এক ভুয়ো আতঙ্ক মাত্র (তা, শহুরে রোগাক্রান্তরা তবে সাধ করে হাসপাতাল-ভ্রমণে যাচ্ছেন বুঝি?)। (৫) কোভিডের যেসব ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে সেগুলো কোনও কাজের নয়, কারণ, ইজরায়েলে টীকাকরণ অতিদ্রুত সম্পূর্ণ করার পরেও কোনও কাজ হয়নি (তথ্যটি সঠিক, নিশ্চিত তো?)। (৬) লকডাউন অর্থহীন, কারণ, সুইডেন তা না করেই বিন্দাস আছে (আবারও প্রশ্ন, তথ্যটি সঠিক, নিশ্চিত তো?)।

    এমন আরও আছে, যেমন আইটি আর ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি-র ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব। তবে, ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের সম্ভাব্য সমস্ত দিক নিয়ে সবিস্তার গবেষণামূলক লেখা ও সবকটি ভুয়ো-তত্ত্বের নিষ্পত্তিমূলক খণ্ডন পেশ করাটা এখানে আমার উদ্দেশ্য নয়। বরং, ওপরের দ্বিতীয়োক্ত ষড়যন্ত্র-তত্ত্বগুচ্ছ (১-৬) নিয়ে দু-এক কথা বললেই গুজবের বহরটা খানিক অন্তত বোঝা যাবে, তাই আপাতত সেটুকুই একে একে হোক।

    (১) লকডাউন করে কর্মস্থল আর গণপরিবহন বন্ধ করে দিলে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের যে অসীম দুর্দশা হয়, সে তো আর ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু, জোরজার করে এইটা চাপিয়ে দিলেই যে ধনীরা আরও ধনী হবে, এ দাবির অর্থ কী? দরিদ্র লোককে স্রেফ না খেয়ে বসিয়ে রেখে রেখে তো আর ধনীরা ধনী হয়না, ধনীরা ধনী হয় তাদেরকে খাটিয়ে, তাদের শ্রমজাত মুনাফা সংগ্রহ করে। কাজেই, গায়ের জোরে আইন জারি করে তাদেরকে ঘরে বসিয়ে রেখে পুঁজিবাদের কোনও লাভ নেই, ওভাবে লাভ হলে তো ধনী ও ক্ষমতাবানেরা সব সময়েই সে চেষ্টা করত, তার জন্য অতিমারির দরকার হত না। এত দিন যে কলকারখানা স্কুল কলেজ গণপরিবহন খোলা ছিল, সে তো আর সমাজতন্ত্রের জন্য নয়, পুঁজিবাদের স্বার্থেই। সরকারি ভরতুকি দেওয়া সস্তার লোকাল ট্রেনে চড়ে মফস্বলের শ্রমিকটি যে সাতসকালে কলকাতা এসে পৌঁছতেন হন্তদন্ত হয়ে, সেটা নিশ্চয়ই ‘ক্ষমতা অনুযায়ী সমাজকে দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী নেবার’ জন্য নয়, বরং এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যেই সারাদিন নিজেকে নিংড়ে দিয়ে পরিবার পালনের জন্য দিনান্তে (বা মাসান্তে) যৎসামান্য রসদ সংগ্রহের জন্য। সেটা বন্ধ হলে শ্রমিকের বিপদ তো বটেই, কিন্তু মালিকের লাভটা কী? অবশ্য, যদি বলেন, সঙ্কটের মুহূর্তে দরিদ্র শ্রমজীবীর প্রতি এই নিষ্ঠুর অবহেলাটাও পুঁজিবাদেরই অঙ্গ, তাতে আমার খুব বেশি আপত্তি নেই। কিন্তু, ওইভাবে এবং ওই অর্থে যদি পুঁজিবাদকে দায়ী করতে চান, তো অভিযোগের বর্শামুখটা ষড়যন্ত্রের দিক থেকে সরকারি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অসংবেদনশীলতার দিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে, আর তার জন্য প্রথমেই বিসর্জন দিতে হবে জলজ্যান্ত অতিমারিকে অস্বীকার করবার নির্বোধ সুখটিকে।

    এবং, লকডাউনের উল্টোপিঠটাও এখানে দেখতে হয়। এতে যে শুধু প্রচুর মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তাইই নয়, বেশ কিছু মানুষ আবার বাড়ি বসে বসে দিনের পর দিন বেতনও পেয়েছেন, সংখ্যায় অনেক অল্প হলেও। এই ঘটনাটিকে আবার বৃহৎ পুঁজির সঙ্গে মধ্যবিত্তের একাত্মতার প্রমাণ হিসেবে কেউ কেউ পেশ করতে চান, কিন্তু আসলে তারও কোনও মানে হয়না। পুঁজিবাদ খামোখা কারুকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে চাইবে কেন? লকডাউনের ফলে সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেলে, প্রচুর লোককে বসিয়ে মাইনে দিতে হলে, প্রচুর লোক মারা গেলে বা হাসপাতালে গেলে বা অসুস্থ অক্ষম হয়ে বাড়ি বসে রইলে পুঁজিবাদের মোটেই কোনও লাভ নেই, বরং চূড়ান্ত ক্ষতি। এসব করে পুঁজিবাদ নিজেই নিজের সর্বনাশ করবে কেন? যাঁরা এসব বলছেন তাঁরা কোভিড অতিমারি কতটা বোঝেন তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, পুঁজিবাদ কী বস্তু সেটা যে মোটেই বোঝেন না, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

    (২) এবার আসুন বিগফার্মার ষড়যন্ত্রের গল্পে। ভ্যাকসিন বানাবার কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র ভ্যাকসিন বেচার স্বার্থে অতিমারির ভুয়ো আতঙ্ক ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীকুল এবং প্রত্যেকটি দেশের সরকারকে হাত করে, গোটা পৃথিবী জুড়ে লকডাউন ঘটিয়ে দিচ্ছে --- এ অভিযোগ যে কতটা উদ্ভট অবাস্তব হাস্যকর হতে পারে, সে ব্যাপারে আপনার কোনও ধারণা আছে কি? না, পৃথিবী জুড়ে এতগুলো লোককে এইভাবে একসাথে সম্পূর্ণ বশংবদ বানিয়ে এতবড় চক্রান্ত আদৌ কার্যকর করা যায় কিনা সে প্রশ্নে আমি যাচ্ছিই না (সেটা অতি সঙ্গত প্রশ্ন ছিল যদিও), আমি শুধু এর অর্থনৈতিক অবাস্তবতার কথাটা বলতে চাইছি। ভাল করে ভেবে দেখুন।

    প্যান্ডেমিক-এ গোটা পৃথিবীর জিডিপি কমেছে মহাজাগতিক অঙ্কে --- ৫ ট্রিলিয়ন ডলার! সেখানে, ভ্যাকসিন-নির্মাতা ফার্মা কোম্পানিগুলোর মুনাফা সব মিলিয়ে বেড়েছে পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, দাবিটা এই রকম দাঁড়াচ্ছে যে, কেউ বা কাহারা ষড়যন্ত্র করে গোটা অর্থনীতিকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার হারাতে বাধ্য করেছিল, শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ব্যবসায়িক উদ্যোগের মুনাফা মাত্র পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার বাড়তে দেবে বলে! পুঁজিবাদের হত্তাকত্তাদের মাথা খারাপ হয়েছে বলে মনে হয় বুঝি আপনার?

    এখন গোটা পৃথিবীর জিডিপি ধরুন ৮৫ ট্রিলিয়ন ডলার মত, আর তার মধ্যে ফার্মা-দের ভাগ হল ৫০০ বিলিয়ন, মানে আধ শতাংশের একটু বেশি। আর, এদের মধ্যে যারা কোভিড ভ্যাকসিন বানিয়ে সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে তাদের মোট মুনাফা ৫০ বিলিয়ন, মানে তারও দশ শতাংশ। অর্থাৎ, ভ্যাকসিন ব্যবসার মুনাফা হচ্ছে গোটা পৃথিবীর অর্থনীতির .০৫ শতাংশ। তো এই ক্ষমতা নিয়ে ভ্যাকসিন নির্মাতা কোম্পানিগুলো নাকি গোটা পৃথিবীর অর্থনীতিকে স্তব্ধ করে দেবে, আর অর্থনীতির বাকি ৯৯.৯৫ শতাংশের দাবিদাররা তাতে বাধা না দিয়ে তা বসে বসে দেখবে আর বুড়ো আঙুল চুষবে --- ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের আবদারটা এইরকম! এই সঙ্কটের মুহূর্তে এইসব অবান্তর উদ্ভট কথাবার্তা নিয়ে চ্যাঁচামেচি করাটা যে একটা ভয়ঙ্কর দায়িত্বজ্ঞানহীন বোকামো হচ্ছে, তাতে কোনও সংশয় থাকতে পারে কি?

    (৩) এও শোনা যাচ্ছে, প্রাণঘাতী ভ্যাকসিন দিয়ে দিয়ে বদমাইস কোম্পানিগুলো নাকি মানুষকে মেরে ফেলতে চাইছে। মানে, শিব্রামের সন্দেশের ব্যবসার প্ল্যান আর কি! তাঁর এক অসামান্য গল্পে শিব্রাম চেয়েছিলেন, তিনি রোজ প্রচুর সন্দেশ বানিয়ে নিজেই কিনে খেয়ে নেবেন, এবং বিক্রির মুনাফা দিয়ে রোজই আরও আরও সন্দেশ বানিয়েই চলবেন। তাতে করে নিয়মিত সন্দেশও খাওয়া হবে, আর ব্যবসারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের বক্তব্য মোতাবেক, এখানে ফার্মা-দের পরিকল্পনাও সম্ভবত সেটাই --- করোনা আর ভ্যাকসিন দিয়ে সব লোকজনকে মেরে দিয়ে পৃথিবীটাকে এট্টু ঠাণ্ডা করে নিয়ে তারপর শান্তিতে মনে সুখে ওষুধপত্তর বানাবেন, আর নিজেদের বানানো ওষুধ নিজেরাই কিনে খেয়ে খেয়ে মুনাফার পাহাড় গড়বেন! ওষুধ খেয়ে শরীলটাও ঠাণ্ডা থাকবে, আর ব্যবসাটাও জমবে!

    (৪) কেউ কেউ এ যুক্তিও দিচ্ছেন যে, এই যে এ দেশে শুধু শহুরে সম্পন্নরা কোভিডের কবলে পড়ছেন, এবং দরিদ্র শহুরে শ্রমজীবী ও গ্রামীণ কৃষকেরা অনাক্রান্ত থাকছেন, এইটাই নাকি অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, কোভিড অতিমারি এক বানানো গল্প (আর, বানানো অতিমারির ভ্যাকসিনও যে বানানো গল্প হবে, তাতে আর আশ্চর্য কী!)। কিন্তু, যাঁরা এসব বলছেন তাঁরা আরেকটু ভাল করে খোঁজ নিলে জানতে পারতেন, সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে অতিমারি শহরাঞ্চলে আবদ্ধ থাকলেও, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ঢেউয়ে তা আর শহরে আবদ্ধ থাকেনি আদৌ। গ্রামে তা ঠিক কতটা ছড়িয়েছে, সেটা পুরোপুরি বোঝা যায়নি যদিও, নির্ভরযোগ্য সরকারি তথ্যের অভাবে। বস্তুত, অতিমারির দুই বছরে (২০২০ ও ২০২১) দেশে মোট মৃত্যু কত হয়েছে, আর কোভিডে মৃত্যুই বা ঠিক কত, সে ব্যাপারে সরকারি তথ্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। কোভিডে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে তথ্য রোজই গণমাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো সবই প্রতিষ্ঠিত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরি থেকে পাওয়া। কিন্তু গ্রামে প্রচুর রোগি এসব ব্যবস্থার আওতার বাইরে, এবং তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন ও মারা যাচ্ছেন অপরীক্ষিত ও অচিকিৎসিত অবস্থায়, যা সরকারি ব্যবস্থায় আদৌ নথিভুক্ত হচ্ছে না, এবং তা সরকারি তথ্যেও প্রতিফলিত হচ্ছেনা। এখন পাঠক অবশ্যই জানতে চাইবেন, জানা যদি না-ই যায়, তো আমরাই বা তবে জানলাম কীভাবে? হ্যাঁ, এ নিয়ে নির্ভরযোগ্য গবেষণা ও বিশ্লেষণ হয়েছে। অতি সম্প্রতি এক প্রামাণ্য গবেষণাপত্রে তিনটি স্বতন্ত্র উৎস থেকে পাওয়া পরোক্ষ তথ্যগুচ্ছ ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে, আসলে এই দুই অতিমারিময় বছরে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি তথ্যে প্রকাশিত সংখ্যার ছয় থেকে সাত গুণ পর্যন্ত হতে পারে! অবিশ্বাস্য লাগছে, তাই না? কিন্তু, মৃত্যুর কারণ হিসেবে 'ডেঙ্গু' লেখার জন্য সরকারি চিকিৎসক অরুণাচল দত্ত চৌধুরিকে কীভাবে বরখাস্ত হতে হয়েছিল সে সংবাদ যদি আপনার স্মরণে থাকে, এবং অতিমারিতে মৃত ও গণ-চিতায় অর্ধদগ্ধ রোগিদের লাশ কীভাবে দলে দলে গঙ্গায় ভেসে এসেছিল সে স্মৃতি যদি আপনাকে কিছুমাত্রও বিচলিত করে থাকে, তবে এ গবেষণাপত্রের সিদ্ধান্ত আপনার তত অসম্ভব বলে মনে না-ও হতে পারে।

    আচ্ছা, বাদ দিন। গ্রামের গরিবেরা কোভিডে মরেছে কি মরেনি, সে তর্ক ছেড়েই দিন না হয়। মনে করুন না কেন, এ অতিমারিতে সত্যিই তারা সম্পূর্ণ অনাক্রান্ত আছে। যদি তা হয়, সে তো পরম সুখের কথা। কিন্তু, যদি তাইই হত, তাতেও কি এ কথা প্রমাণ হত যে, কোভিড অতিমারি একটি ভুয়ো গুজব মাত্র? ভাল করে ভেবে দেখুন একটু। শহরের সম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ আক্রান্ত হননি, অতএব কোভিড আসলে তৈরি করা আতঙ্ক --- এ অভিযোগের প্রকৃত অর্থ কী? শহুরে রোগিরা বিল গেটসের ষড়যন্ত্রে এমনই সাথ দিচ্ছেন যে, তার চাপে শরীরে জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট এসে যাচ্ছে, এবং তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে লাখ টাকা খুইয়ে আসছেন? মানে কী, এ সব কথার? আপনারা নিজেরা পাগল হয়েছেন, না কি আমাদেরকে পাগল ভাবছেন, সেটা ভেঙে বলবেন একটু?

    (৫) অভিযোগ উঠেছে, করোনা-ভ্যাকসিন একটি অপরীক্ষিত ভুয়ো ওষুধ, মানুষকে ভয় দেখিয়ে এ ভ্যাকসিন নিতে বাধ্য করা হচ্ছে, যাতে বড় বড় ওষুধ কোম্পানিরা মুনাফা লুটতে পারে। বলা হচ্ছে, ভ্যাকসিন নিয়ে আদৌ যে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমে, এর নাকি কোনও প্রমাণ নেই। এর প্রমাণ হিসেবে আসছে ইজরায়েলের নাম, যেখানে নাকি সবার আগে ভ্যাকসিনেশন করেও ফল হয়নি। কথাটা কি সত্যি? দেখা যাক। গোটা পৃথিবীতে ইজরায়েলই সর্বপ্রথম গণটিকাকরণ শুরু করে, এবং সবচেয়ে দ্রুত তা রূপায়িত করে। ২০২০-র মে মাসেই ইজরায়েল সরকার ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি করে ফেলে, এবং ওই বছর ডিসেম্বরে ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়ে যায়। টিকার প্রথম প্রাপক ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহু, যাঁর টিকা নেওয়ার ঘটনাটি লাইভ সম্প্রচারিত হয়। পরের বছর মার্চের মধ্যেই গোটা জনসংখ্যার পঞ্চাশ শতাংশ ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই পেয়ে যায়, এবং পঞ্চাশোর্ধ্বদের মধ্যে মাত্র লাখ খানেক মানুষ বাকি থাকেন। এর পর থেকে হুহু করে কমতে থাকে সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয়েরই হার, তবে এত আগে থেকে নিয়ে নেওয়ার ফলে অনেকের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে আসে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে যথারীতি সংক্রমণ ও মৃত্যু আবারও কিছু বেড়েছিল, যদিও প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে অনেক কম, এবং সেটাও নেমে যায় অতি দ্রুত। অনেককে তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়, এবং বয়স্ক ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে চতুর্থ ডোজও। তৃতীয় ঢেউতেও সংক্রমণ বেড়েছে, কিন্তু অন্য দেশের চেয়ে অনেক কম, এবং মৃত্যু প্রায় নেই। কাজেই, ইজরায়েলে টিকা ব্যর্থ হবার গল্পটি এক অত্যন্ত বাজে মিথ্যে গল্প।

    এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার প্রশ্নে বাকি পৃথিবীর সঙ্গে ইজরায়েলের অভিজ্ঞতা মেলে কি? ভ্যাকসিন-নির্মাতারা টিকার যে কার্যকারিতা দাবি করেছেন, আদৌ গণ-টিকাকরণের পরে বাস্তব ফলাফল কি তাই পাওয়া যাচ্ছে? এর উত্তর পেতে গেলে সমস্ত পৃথিবীর অভিজ্ঞতা এক জায়গায় করে ঠিকঠাক তুলনা করতে হবে। বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতির প্রকট বিভিন্নতার কারণে সেটা বেশ কঠিন কাজ, যার জন্য এতদিন উপযুক্ত প্রামাণ্য গবেষণা পাওয়া কঠিন হচ্ছিল, প্রতিটি দেশের তথ্য আলাদা করে হাতড়াতে হচ্ছিল। সুখের বিষয়, সে পরিস্থিতি কেটে যাচ্ছে, এবং সুবিধাজনক ও প্রামাণ্য গবেষণার ফলাফল একটু একটু করে সামনে আসছে। এ রকম একটি সাম্প্রতিকতম গবেষণার কথা বলি। ‘ইন্টান্যাশনাল জার্নাল অফ ইনফেকশাস ডিজিসেস’ পত্রিকার জানুয়ারি ২০২২ সংখ্যায় কতিপয় চৈনিক গবেষক টিকাকরণ সংক্রান্ত বহু সংখ্যক তথ্যগুচ্ছকে এক জায়গায় করে একটি মোদ্দা বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন, যাকে পরিভাষায় বলে ‘মেটা-অ্যানালিসিস’। কী বোঝা গেছে তাতে? বোঝা গেছে এই যে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মোট সংক্রমণের ক্ষেত্রে ৮৯.১%, হাসপাতালে ভর্তি হবার ব্যাপারে ৯৭.২%, আইসিইউ-তে ঢোকার প্রশ্নে ৯৭.৪%, এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৯৯%। কী অর্থ এ সব সংখ্যার? হ্যাঁ, গোল পাকানো হচ্ছে তা নিয়েও। ‘অমুক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা অমুক শতাংশ’ বললেই ভ্যাকসিন-বিরোধী ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক হাঁহাঁ করে তেড়ে এসে বলছেন, আরে, তার মানে তো সংক্রমণ এগারো শতাংশ, হাসপাতালে ভর্তি তিন শতাংশ আর মৃত্যুহার এক শতাংশ। তা, সে তো ভ্যাকসিন-ট্যাকসিন না নিয়েই সংক্রমণ, হাসপাতাল-গমন, মৃত্যু ইত্যাদির হার এমনিতেই ওর চেয়ে কম, তাহলে ভ্যাকসিন নিয়ে কি ছাই লাভটা হচ্ছে? এখানে সমস্যাটা হচ্ছে, মাননীয় ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক মহাশয় বিল গেটস সায়েবের গোপন মনোবাসনাটি জেনে ফেললেও, ‘ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা’ বস্তুটি কী সেটাই এখনও জেনে উঠতে পারেন নি, মোট সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারের সঙ্গে তাকে গুলিয়ে বসে আছেন। অনেকেই ভাবছেন, একটা ভ্যাকসিনের ‘এফিকেসি’ বা ‘কার্যকারিতা’ ৮০ শতাংশ মানে হচ্ছে, একশো জনকে ওই ভ্যাকসিন দিলে আশি জনের সংক্রমণ হবে না, বাকি কুড়ি জনের হবে। সেটা হলে খুব খারাপ ব্যাপার, সন্দেহ নেই, কিন্তু ব্যাপারটা আসলে আদৌ তা নয় তো! ‘কার্যকারিতা’ ৮০ শতাংশ হবার মানে হচ্ছে, ভ্যাকসিন আদৌ না নিলে কোনও একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যায় যতটা সংক্রমণ হত, ওই ভ্যাকসিন-টা নিলে তার চেয়ে আশি শতাংশ কম হবে। সংক্রমণ বা মৃত্যুর মোট হারের সঙ্গে তার ধারণা ও পরিমাণ --- এ দুয়েরই আকাশ-পাতাল ফারাক।

    ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে যাঁরা সোশাল মিডিয়াতে এইসব ভুলভাল বলছেন, তাঁদের মধ্যে সবাই কিন্তু অজ্ঞ আনপড় নন। অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জার বিষয়, এবং আতঙ্কেরও, যে কিছু অভিজ্ঞ চিকিৎসকও এ ব্যাপারে মানুষকে ভুল বোঝানোর কাজে লিপ্ত হয়েছেন।

    একটা তথ্য দিয়ে এ প্রসঙ্গ শেষ করি। যখন ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়, তখন বিজ্ঞানীরা স্বয়ং এর কার্যকারিতা কতদূর হবে সে নিয়ে সংশয়ী ছিলেন, এবং খুবই বিনয়ী অবস্থানে ছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যদি অন্তত ৫০% হয় সেটাও চলতে পারে, এবং ৭০% হলে সেটা খুবই ভাল। অথচ, সব প্রত্যাশা ও সংশয় ছাপিয়ে প্রায় সমস্ত ভ্যাকসিনেরই কার্যকারিতা এখন ঘোরাফেরা করছে ৮০% থেকে ৯০% সীমার মধ্যে। একে নিছক সাফল্য বললে হবে না, অভাবনীয় সাফল্যই বলতে হবে। কাজেই, আপনি যদি একে ‘ষড়যন্ত্র’ বলেন, এবং আপনি যদি অজ্ঞ না হন, তো আপনি অকৃতজ্ঞ আচরণ করছেন কিনা, একটু ভেবে দেখবেন।

    (৬) সুইডেনের লকডাউন না করার সিদ্ধান্তও এক উত্তপ্ত চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে, যদিও, আসলে তত উত্তাপের বিশেষ কিছুই নেই। বলা হচ্ছে, সুইডেন অতিমারির প্রেক্ষিতে আদৌ লকডাউন করেনি, এবং সুইডিশরা তাতে নাকি চমৎকার আছে, কোনও অসুবিধে হয়নি, বা অন্তত লকডাউন করা দেশগুলোর থেকে বেশি অসুবিধে হয়নি। এখানে যা বলা হচ্ছে না, সেটা তবে এবার বলি একটু।

    সুইডেনে প্রথম কোভিড কেস ধরা পড়ে ২০২০-র জানুয়ারিতে, এবং অন্য দেশ থেকে সংক্রমণের খবরও আসতে থাকে ক্রমশ বেশি বেশি করে। সুইডেনের সরকার কঠোরভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, লকডাউন করা হবেনা, এবং সমস্ত কাজকর্ম চালু রাখা হবে, এবং এমন কি মাস্ক-ও পরার দরকার নেই। তাদের ধারণা ছিল, ব্যাপারটা অল্প কিছু জ্বরজারির ওপর দিয়ে যাবে, এর জন্য সব কিছু বন্ধ করে দেবার দরকার নেই। কিন্তু, স্পষ্টতই এ ভাবনা ছিল ভুল। সংক্রমণ ও মৃত্যু হুহু করে বাড়তে থাকে, এবং বছরখানেক পরে সংক্রমণ হার গিয়ে দাঁড়ায় সমতুল্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রদের দশ গুণ। হাসপাতালে ভর্তি হবার হিড়িকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-গুলোর সমস্ত বিছানা ভর্তি হয়ে যায়। এমন কি, এতে করে অর্থনীতি বাঁচবে বলে যে ধারণা করা হয়েছিল তা-ও ভুল বলে প্রমাণিত হয়, এবং জাতীয় আয় প্রায় নয় শতাংশ নেমে যায় ও বেকারি প্রায় দশ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটি যদি সুইডেনের মত একটি অত্যন্ত কম জনসংখ্যা ও উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থার দেশ না হত, তো এ হেন সিদ্ধান্ত গণহত্যার সামিল হয়ে দাঁড়াতে পারত। ফলত, শেষে ২০২০-র ডিসেম্বরে সরকার লকডাউন নামাতে বাধ্য হয়। অবশ্য, ২০২১-এর মে মাস থেকে গণটিকাকরণ সুষ্ঠুভাবে চালু হলে আবার লকডাউন তুলে নেওয়া হয়। কী বোঝা গেল এ সব তথ্য থেকে? না, সুইডেন লকডাউনের অকার্যকারিতার দৃষ্টান্ত নয়, বরং ঠিক উল্টো। সুইডেনের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, পোক্ত ও সুশৃঙ্খল স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং মানবোন্নয়নের সুদীর্ঘ উজ্জ্বল ইতিহাস-ওয়ালা একটি অত্যন্ত উন্নত দেশেও কোভিড বিধি অমান্য করলে কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে।

    এর অর্থ কি এই যে, আমাদের দেশে যেভাবে লকডাউন করা হয়েছে তার মধ্যে কোনও গণ্ডগোল নেই, বা তার সমালোচনা হতে পারেনা? না, তা অবশ্যই হতে পারে এবং হওয়া উচিত। কিন্তু, লকডাউন ব্যাপারটাই একটা লোক ঠকানো ষড়যন্ত্র --- এভাবে ভাবাটা বোধহয় নিছকই পাগলামি। লকডাউন করাটা যদি ‘পুঁজিবাদী চক্রান্ত’ হয়, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর জাইর বোলসোনারো যেভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যুর তোয়াক্কা না করে লকডাউনের বিরোধিতা করেছেন তাকে কী বলব --- পুঁজিবাদ বিরোধী সংগ্রাম? অনুগ্রহ করে একটু ভেবে দেখবেন।

    যাই হোক, খেপে গিয়ে অনেক কথাই বলে ফেললাম, এবার তাহলে গুটিয়ে আনা যাক।

    একট অভূতপূর্ব অতিমারির সম্মুখীন হয়েছি আমরা। তাতে মৃত্যু তো হচ্ছেই, এবং তার চেয়েও অনেক বেশি হচ্ছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, সঙ্কটকালীন চিকিৎসার সম্মুখীন হয়ে প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে যাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে তার জের হিসেবে শরীর দুর্বল অশক্ত হয়ে থাকা, নানা বিচিত্র উপসর্গ, কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর সমাধান ছিল অজানা। বিজ্ঞানীরা খুঁজছেন সমাধান, কিন্তু কোনও সমাধানই হাতের মোয়া নয় --- প্রয়োজন স্থৈর্য, প্রয়োজন ধৈর্য, প্রয়োজন কঠোর যুক্তিসম্মত অনুসন্ধান, প্রয়োজন সৃজনশীলতা, প্রয়োজন সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অবাধ সহযোগিতা ও আদানপ্রদান। সরকারগুলোর তরফে প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে যথেষ্ট অর্থ সংস্থান করে যুক্তিসম্মত ও সংবেদনশীল পদক্ষেপ, এবং অতিমারি সংক্রান্ত তথ্যাবলী বিষয়ে যথোপযুক্ত সংরক্ষণ, সহজপ্রাপ্যতা ও স্বচ্ছতার সুব্যবস্থা। এবং, আমাদের মত আমজনতার তরফে প্রয়োজন এ বিষয়ে সচেতনতা, এবং অন্যকে সচেতন থাকতে সাহায্য করা। কিন্তু, অবান্তর আজগুবি সব অভিযোগ তুলে ভুয়ো খবর ও গুজব ছড়াতে থাকলে তাতে কার লাভ?

    হ্যাঁ, অজানা বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে বিভ্রান্তি ও ভুলভ্রান্তি স্বাভাবিক বইকি, যেমনটি স্বাভাবিক নিরন্তর সমালোচনাও --- সেটা কাঙ্ক্ষিতও বটে। কিন্তু সে সমালোচনা যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক হওয়া চাই। বিজ্ঞানীরা যা এখনও জানতে পারেননি তা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকবেই, কিন্তু যা ইতিমধ্যে জানা গেছে সেটা একটু কষ্ট করে জেনে নিলেই হয়, মনে মনে কালনেমির লঙ্কাভাগ করা অর্থহীন। এবং, আজকাল নেটে যা পাওয়া যায়, তাতে বিভ্রান্তি খুব বেশি থাকার কথা না, যদি কী খুঁজতে হবে এবং কোথায় খুঁজতে হবে সেটা জানা থাকে। সেটা জেনে নেওয়াটাও কঠিন না, যদি জানার ইচ্ছেটা থাকে, এবং, 'জানা' কাকে বলে সে বিষয়ে একটা ধারণা থাকে। কিন্তু, দুঃখের বিষয়, সে ধারণাটুকু অনেকেই রাখেন না। ফলত, সকলেই নেটে ঠিক সেটাই খুঁজে পাচ্ছেন, যা পেলে তাঁরা খুশি হন। আর, সেটাই সোশাল মিডিয়াতে ক্রমাগত শেয়ার করে যাচ্ছেন, গণপরিসর বানভাসি হয়ে যাচ্ছে বর্জ্যপদার্থে। সবিস্ময়ে দেখছি, বাম র‍্যাডিক্যালদের একাংশ সোৎসাহে ও নির্বিচারে গিলছেন আমেরিকার কট্টর দক্ষিণপন্থী অ্যান্টি-ভ্যাকসারদের বানানো সব ভুয়ো খবর, আর প্রবল কর্তব্যবোধ সহকারে তা বমি করে দিচ্ছেন সোশাল মিডিয়ায়, অবশ্যই তার সঙ্গে ‘সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন’, ‘পুঁজিবাদী চক্রান্ত’, ‘মুনাফালোভী বহুজাতিক’ জাতীয় কিছু পরিচিত বাম-বুলি এবড়োখেবড়োভাবে মিশিয়ে। কেন যে এমন করছেন সে ব্যাখ্যা তাঁরা নিজেরাই সবচেয়ে ভাল দিতে পারবেন, তবে তাঁদের কীর্তিকলাপ দেখে মনে হচ্ছে, সঙ্কটের মুহূর্তে স্বাভাবিক যুক্তি-বুদ্ধি সবই বুঝি জলাঞ্জলি দিয়ে বসে আছেন।

    তাঁদের কাছে আমার সবিনয় নিবেদন, লকডাউনে মানুষের বিপন্নতা নিয়ে অবশ্যই সোচ্চার হোন, কিন্তু অনুগ্রহ করে অযৌক্তিক সন্দেহ আর ভুয়ো খবর ছড়াবেন না, আর কোভিড বিধি অমান্য করতে অন্যকে প্ররোচনাও দেবেন না। একটু মনে রাখবেন, দুর্ঘটনায় আপনার হাত-পা ভাঙলে তা সারাবেন কি সারাবেন না সেটা আপনার ব্যক্তিগত অধিকার হতে পারে, কারণ সেটা ছোঁয়াচে নয়, কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়া আর মাস্ক পরার ব্যাপারটা মোটেই ও রকম না। ভ্যাকসিন দেবার লক্ষ্য ব্যক্তিকে বাঁচানো নয়, একটি গোটা জনগোষ্ঠীকে বাঁচানো। ভ্যাকসিন দেবার পরেও নানা কারণে ব্যক্তিবিশেষের সংক্রমণ ও মৃত্যু হতে পারে --- বিরল হলেও --- যে কোনও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই, শুধু কোভিডের ক্ষেত্রে নয়। কিন্তু, ভ্যাকসিন দেবার পরে একটি বিশেষ জনসংখ্যায় সংক্রমণ ও মৃত্যু অনেকখানি কমে যায়, সেটুকুই লাভ। তাতে ব্যক্তিবিশেষ হিসেবে আপনি বাঁচবেন কিনা সে প্রশ্ন বাতুলতা, বরং আপনার দেশ ও সমাজের আরও কিছু বেশি মানুষ যে বাঁচবে, এটুকু আশ্বাসই যথেষ্ট। কাজেই, ভ্যাকসিন নেওয়া ও মাস্ক পরাটা যতটা না ব্যক্তির লাভ-ক্ষতির প্রশ্ন, তার চেয়েও বেশি যৌথ দায়িত্বের প্রশ্ন। আপনি যদি ভ্যাকসিন না নেন এবং মাস্ক না পরেন, তাহলে আপনার কোনও ক্ষতি নাও হতে পারে, কিন্তু সংক্রমণটা যাকে দিলেন তার অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। আর, খুব বেশি লোক যদি এইটা করেন, তাতে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে গোটা জাতি, যেমনটি ঘটেছে আমেরিকা ব্রাজিল সুইডেনে।

    মুখ ঢাকতে আর ছুঁচ ফোটাতে ভাল লাগেনা বলে অবাধে চলাফেরা করতে দিয়ে সংক্রমণ ছড়াতে দেওয়া হোক, এইটা যদি ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক ভ্যাকসিন-বিরোধীদের দাবি হতে পারে, তাহলে ওই একই কারণে ভ্যাকসিন-পন্থীরাও পাল্টা দাবি করতে পারেন, যিনি মাস্ক পরবেন না এবং ভ্যাকসিন নেবেন না, তাঁকে অবরুদ্ধ করা হোক। দুটোর কোনওটিই কাম্য নয়, কিন্তু একটির অস্তিত্ব অন্যটিকে ন্যায়সঙ্গত করে তুলতে পারে। ‘মাই বডি মাই রাইট’ শ্লোগান যদি ভ্যাকসিন-বিরোধীদের আশ্রয় হতে পারে, তো ওই একই কারণে তো তা ভ্যাকসিন-পন্থীরও আশ্রয় হয়ে উঠতে পারে।

    পারে না? বলুন!

    সাহায্যকারী তথ্যসূত্র

    1) https://www.gavi.org/vaccineswork/how-effective-are-covid-19-vaccines-real-world
    2) https://www.science.org/doi/10.1126/science.abm5154
    3) https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1201971221008572
    4) https://www.who.int/news-room/feature-stories/detail/vaccine-efficacy-effectiveness-and-protection
    5) https://www.healthdata.org/covid/covid-19-vaccine-efficacy-summary
    6) https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_pandemic_in_Sweden
    7) https://www.businessinsider.in/science/news/a-year-and-a-half-after-sweden-decided-not-to-lock-down-its-covid-19-death-rate-is-up-to-10-times-higher-than-its-neighbors/articleshow/85514410.cms
    8) https://www.worldometers.info/coronavirus/country/sweden/
    9) https://en.wikipedia.org/wiki/COVID-19_vaccination_in_Israel
    10) https://www.worldometers.info/coronavirus/country/israel
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ জানুয়ারি ২০২২ | ১৪৩৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অরূপ শঙ্কর মৈত্র। | 103.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:৩৪502767
  • সম্প্রতি “গুরুচণ্ডালী” নামে একটি ওয়েব-ম্যাগে জনৈক দেবাশিস ভট্টাচার্য একটি লেখা লিখেছেন যার শিরোনাম “প্রসঙ্গ কোভিড ও ভ্যাকসিন : মাননীয় ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক, আপনাকে বলছি স্যার”।
    প্রথমেই খটকা লাগে, ‘আপনাকে’ বলতে ঠিক কাকে বোঝানো হচ্ছে তা লেখক বলেননি। বললে খুঁজে পেতে দেখে বুঝতে সুবিধে হত, অনুল্লেখিত সেই ‘তিনি’ কখন, কোথায় ‘ষড়যন্ত্র’-এর তত্ত্ব এনেছেন। যাহোক...
    লেখাটার মোদ্দা কথা হল, সারা পৃথিবীজুড়ে যে ভয়ঙ্কর অতিমারি শুরু হয়েছে, একদল অপবিজ্ঞানী সেই অতিমারির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এবং তার মোকাবিলায় জন্য রাষ্ট্রসহ নানা “বিজ্ঞানী ও যুক্তিবাদীরা” যে সমস্ত জরুরি ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার বিরোধিতায় আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। তারা বলছে এইসবই আসলে আন্তর্জাতিক পুঁজির ষড়যন্ত্র। সবকিছুর পেছনেই চিরকাল একদল খুঁত-সন্ধানী থাকে। তাদের সন্দেহ বাতিক প্রায় অবসেসিভ কমপালসিভ ডিস-অর্ডারে পৌঁছায়। এরাই ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক।
    যেহেতু শিরোনামে “ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক” শব্দবন্ধ দিয়ে আলোচনা শুরু, কাজেই এই শব্দ-বন্ধের অর্থ খুঁজে পাওয়াটা জরুরি। এই “ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক”রা কিন্তু ষড়যন্ত্র করে না। তারা সমস্ত কিছুর পিছনেই ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়। তাই তারা তাত্ত্বিক। আঁতেলও বলা যায়।  
    “গুরুচণ্ডালী” মূলতঃ বাম ঘেঁষা তাত্ত্বিক বা আঁতেলদের সংগঠন। যদিও “বাম” শব্দটা ফাজি। বামেদের আবার নানা জাতগোত্র আছে। উনিশশতকের ব্রাহ্ম শব্দটাই সম্ভবতঃ অপভ্রংশ হয়ে বামে পরিণত হয়ে! আবার ব্রাহ্মও এসেছে ব্রাহ্মণ থেকে। এই তিন প্রজাতির লক্ষণ হল, যখন যে শক্তি ক্ষমতায় থাকে তার সিংহাসনের পিছনে দাঁড়িয়ে ক্ষমতার তাত্ত্বিক ছত্রধর হওয়া। ক্ষমতার কানে কানে অবিরাম বলে যাওয়া, কারা কীভাবে আপনার মহান কর্মকাণ্ডগুলোকে প্রজাবিরোধী ষড়যন্ত্র বলে অবিরাম প্রচার করে চলেছে। আপনার সৎ উদ্দেশ্যের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করছে। সেই ক্ষমতা রাজা উজির সুলতান, বড়লাট কিম্বা মহাকরণ, নবান্ন, টিউটোপিয়া যাই হোক না কেন। এঁরা চরিত্রে বৌদ্ধিক বা আঁতেল। সেই মনুসংহহিতা থেকে শুরু হয়ে গুরুচণ্ডালী। মোডাস অপারেণ্ডি হল, শুরুতেই সেই সমালোচকদের  দাগিয়ে দেওয়া। এইখানে যেমন “ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক”। কয়েকপাতা জুড়ে শুধু দাগ, দাগ, দাগিয়ে যাওয়া। পরে যাহোক কিছু সমালোচনার উত্তর দিলেই হল। শ্রোতাতো বুঝেই গেছে এঁরা ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক। এদের কথা ধরতে নেই। 
    একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। যারা বলে ১৯৪৯-এ বাবরি মসজিদে হঠাৎ রামলালার আবির্ভাব, ১৯৯২-তে বাবরি মসজিদের ধ্বংসলীলা, ২০০২সালে রামমন্দির প্রত্যাগত সন্নাসীদের পুড়িয়ে মারা যার ফলশ্রুতিতে কুখ্যাত গুজরাট-গণহত্যা, সবই নাকি “হিন্দুরাষ্ট্র” প্রতিষ্ঠার জন্য পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র! এই ষড়যন্ত্র সার্থক হয়েছে রাম মন্দির নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের রায়ের পরে। এসব কথা যারা বলে তারা যে ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
    সব তাত্ত্বিকদেরই একটা ইতিহাস থাকে। কবে কীভাবে এই ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের আবির্ভাব? জানা নেই। কিন্তু প্রথম ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের চিনতে পেরে চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছিল আমেরিকার একটি সংস্থা। সেখানেও প্রচুর বুদ্ধিজীবীর সমাবেশ। ধীরে ধীরে আজ এই শব্দ-বন্ধটি “প্রতিক্রিয়াশীল”, “ধান্দাবাজ” জাতীয় গালাগালে পরিণত হয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডি হত্যার পর একদল মানুষ, সরকারি ভাষ্য মতে অসওয়াল্ড একাই খুন করেছে তা সন্দেহ করতে শুরু করে। তাদেরকেই “ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক” বলে চিহ্নিত করেছিল ‘সিআইএ’। হ্যাঁ, ঠিক পড়েছেন। ‘সিআইএ’, এককালে যাদের বিরুদ্ধে নানা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কথা বলা হত। তারা সফল। “ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক” আজ প্রতিষ্ঠিত গালাগাল। আজ বাম আঁতেল গুরুরা ঠিক বুঝে ফেলেছে যে কোভিডের বিরুদ্ধে এই বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম সৈনিক বাইডন, সিডিসি, হু থেকে মোদি, মমতা, নোভাক-বহিষ্কার থেকে মাস্ক, ভ্যাক্সিন ম্যাণ্ডেট, এই সবটাই যারা পুঁজির চক্রান্ত বলে মনে করে আদতে তারা ওই সিআইএ বর্ণিত ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক। এতটা যারা অবলীলায় বুঝে ফেলেন তারা গুরু বৈকী।
    এইখানে আমার মুশকিল হল, এখন তো আর সিধু জ্যাটা নেই; তার জায়গায় এখন গুগল-জ্যাঠা। আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আমি প্রায়শঃই গুগল জ্যাঠার শরণাপন্ন হই। (সেটা যে কত বিপজ্জনক, তার বাজার চলতি ব্যাখ্যা জেনেই বলছি)। এক মজার খেলা, প্যালিনড্রোম। একটা সেন্টেন্স বাঁদিক থেকে পড়লেও যা, ডানদিক থেকে পড়লেও তাই। “বিরহে রাধা নয়ন ধারা হে রবি”। বামপন্থী হয়ে বাঁদিক থেকে পড়ুন। এবার দক্ষিণপন্থী হয়ে দক্ষিণ দিক থেকে পড়ুন। একই কথা। করোনা নিয়ে, ভ্যাক্সিন নিয়ে, মাস্ক নিয়ে সারা পৃথিবীর বহু বিশেষজ্ঞ নানা ভিন্ন মতামত দিচ্ছেন। অনেকেই কিন্তু ফাউচির মত শুধু ন্যারেটিভ নয়, রীতিমত ডেটাও দিচ্ছেন। আবার যারা বলছেন, এ এক অভূতপুর্ব অতিমারি। তিনকোটি লোক মারা যাবে ছিল ভবিষ্যতবানী। তারাও যে সবটাই ন্যারেটিভ দিয়েছেন তা নয়, কিন্তু তারা ডেটা খুব কম দিয়েছেন, তারা শুধু ভবিষ্যত-বক্তা। তাই যারা এই সরকারি বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ করছেন, এবং তাদের যারা ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন, তাদেরকেও ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক বলা যায় তো! প্যালিনড্রোম। হেহে।
    আসা যাক যেখান থেকে দেবাশিসবাবুর আলোচনায়। 
    “(১) লকডাউন করে কর্মস্থল আর গণপরিবহন বন্ধ করে দিলে দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষের যে অসীম দুর্দশা হয়, সে তো আর ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।... দরিদ্রলোককে স্রেফ না খেয়ে বসিয়ে রেখে তো আর ধনীরা ধনী হয় না, ওরা ধনী হয় তাদেরকে খাটিয়ে, তাদের শ্রমজাত মুনাফা সংগ্রহ করে। কাজেই, গায়ের জোরে আইন জারি করে তাদেরকে ঘরে বসিয়ে রেখে পুঁজিবাদের কোনও লাভ নেই, ওভাবে লাভ হলে তো ধনী ও ক্ষমতাবানেরা সব সময়ে সেই চেষ্টাই করত, তার জন্য অতিমারির দরকার হত না।“
    অনবদ্য যুক্তি। এককালে রাস্তায় মজদুরদের মিছিল দেখতাম, তারা ছাঁটাইের বিরোধিতায় পথে নেমেছে। দেবাশিসবাবুর এই তত্ত্ব যদি তখন জানা থাকত, তাহলে মিছিলের সামনে গিয়ে নেতার হাত থেকে লালপতাকা ছিনিয়ে নিয়ে বলতাম, আপনারা ছাঁটাইয়ের বিরোধিতা করছেন? আপনি জানেন, ছাঁটাই হলে মালিকের মুনাফা কমে যায়? কেননা, শ্রমিকের শ্রম শোষণ করেই তো মালিকের মুনাফা হয়। আপনারা দাবি তুলুন মাত্র দু'শ শ্রমিক ছাঁটাই করা চলবে না, কম করেও হাজার ছাঁটাই চাই। মালিকের মুনাফার থলি তাহলে খালি হয়ে যাবে। 
    এটাকে কী বলব? কাণ্ডজ্ঞানের অভাব?
    এবার ন্যারেটিভ ছেড়ে ডেটায় আসা যাক।
    অতিমারিতে এদেশে কি সত্যিই বেকারি বেড়েছে? মহেশ ব্যাস, সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) বলছেন, গতবছরের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর এককোটি মানুষের জীবিকা শেষ হয়ে গেছে। তার বক্তব্য ৯৭% মানুষের রোজগার কমেছে এই অতিমারি কালে। কীভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে অতিমারি থাবা বসিয়েছে তার বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কে যান। দেখুন। https://timesofindia.indiatimes.com/readersblog/small-thoughts/impact-of-covid-19-on-employment-in-india-33336/
    বেকারি যখন এইভাবে বেড়েছে, তখন দেবাশিসের তত্ত্ব অনুযায়ী পুঁজির হালও খারাপ হবার কথা, কেননা শ্রমিকের রক্ত শোষণ করার সুযোগ থেকে পুঁজি তথা কর্পোরেট সেক্টর বঞ্চিত হচ্ছে। তা কি হয়েছে? আমরা আমাদের দেশের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করি। 
    অক্সফ্যামের রিপোর্ট বলছে ২০২১ সালে ভারতে ৮৪% ভারতবাসীর রোজগার কমে গিয়েছে। পাশাপাশি এই অতিমারি কালে এদেশে বিলিয়নেরারে সংখ্যা ১০২ থেকে লাফিয়ে ১৪২ হয়ে গিয়েছে। সময়টা মার্চ, ২০২০~ নভেম্বর, ২০২১। বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পত্তি ২৩.১৪ লক্ষকোটি থেকে লাফিয়ে হয়েছে, ৫৩.১৬লক্ষকোটি। ৪,৬ কোটি ভারতীয় চূড়ান্ত দারিদ্রের সমুদ্রে তলিয়ে গেছে। ভারত বিলিয়নেয়ারের সংখ্যায় বিশ্বে তৃতীয় স্থানে। এইসময়েই ভারতের প্রথম স্তরের একশজনের মোট সম্পত্তি ৫৭.৩ লক্ষকোটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। (https://indianexpress.com/article/india/oxfam-report-2021-income-households-fell-7726844/lite/)
    তাহলে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব? কারা ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক? “দরিদ্রলোককে স্রেফ না খেয়ে বসিয়ে রেখে” “ধনীরা ধনী” হচ্ছে কীভাবে? তবে কি অক্সফ্যাম, সিএমআইইএর অর্থনীতিবিদ, সংখ্যাতত্ত্ববিদেরাও ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক? যদি হয়, তাহলে অতিদ্রুত এদের সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। দেবাশিসবাবুরা সেই কাজে হাত দিন!
    দেবাশিসবাবু বোকা নন। অতিমারিতে যে প্রচুর মানুষ বেকার হয়েছে তাও তিনি মানছেন। কিন্তু পুঁজির রকেট-গতিও মানতে পারছেন না। তাহলে অতিমারিসৃষ্ট দারিদ্রের গর্ত কী দিয়ে ভরাট করা যাবে?
    “এবং, লকডাউনের উল্টোপিঠটাও এখানে দেখতে হয়। এতে যে শুধু প্রচুর মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তাইই নয়, বেশ কিছু মানুষ আবার বাড়ি বসে বসে দিনের পর দিন বেতনও পেয়েছেন, সংখ্যায় অনেক অল্প হলেও।“
    অর্থাৎ যারা বাড়ি বসে দিনের পর দিন বেতন পেয়েছেন, বেকারির গর্তের মাটি দিয়ে তাদের অবস্থানটাই উচু হয়েছে। হাসব, না কাঁদব?
    আরও অদ্ভুতুরে তথ্য আর তত্ত্বের ফুলঝুড়ি আছে। (চলবে?;নাকি এখানেই ইতি!)

  • উত্তান বন্দ্যোপাধ্যায় | 223.223.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:২৪502768
  • চলুক অরূপ বাবু। 
  • Partha Banerjee | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:২৮502769
  • খুব ভালো লেখা। লেখাটির জন্যে অনেক ধন্যবাদ। আরো লিখুন। 
  • I laugh at mainstream idiots | 80.189.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:১৩502770
  • দাদা, আপনার মগজটা যে সাবান দিয়ে ধোলাই করা হয়েছে তার নামটা একটু বলবেন?
  • দ্বিজেন ব্যানার্জি | 27.13.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:১০502771
  • কোভিড ষড়যন্ত্র নাকি? 
  • নাম | 80.189.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৪৫502772
  • It's great fun to watch mainstream idiots trying to explain covid as they tie themselves into logical knots. I hope the boosters will eventually get rid of most of these useless intellectuals.
  • মলয় বন্দোপাধ্যায় | 202.142.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ২০:২৮502774
  • প্রথমেই বলি দেবাশীষ বাবু আপনি কি পেশায় সাংবাদিক? যদি সাংবাদিক হন তাহলে আপনার লেখার কোন মন্তব্য করা সময় নষ্ট। কারন এই মূহুর্তে পশ্চিমবঙ্গে সাংবাদিক বলে কোনো পেশা নেই। যেটা আছে সেটা হয় দালাল না হলে মুখপাত্র। 
    আর যদি সাংবাদিক না হন তাহলে আপনার মালিক শ্রমিক সম্পর্কে বক্তব্য এক নতুন Social science এর জন্ম দেবে। যেটা বড় বড় তাত্বিকদের রাতের ঘুম কেড়ে নেবে। এবং সমাজ বিদ্যার এই বিশাল তত্বের জন্য আপনার নোবেল প্রাপ্য। অবশ্য ষড়যন্ত্রের তাত্বিকরা এটাতেও চিৎকার করবে। তাই এদের পাত্তা না দিয়ে আপনার শানিত টাইপিং চালিয়ে যান। জনগন আপনার সাথে আছে। এই দুঃসময়ে এরকম serious বিষয়ে ভাঁড়ামোর জন্য ধন্যবাদ।।
  • I hate commies | 84.17.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ২২:১২502776
  • আগেকার দিনে কমিউনিস্টরা পুঁজিপতির কালো হাত ভেঙে দেওয়ার জন্য লাফালাফি করত। এখনকার কমিউনিস্টরা পুঁজিপতির পেছন পেছন সরা হাতে নিয়ে "স্যার, আমার এই সরার উপর একটু হাগুন স্যার" বলতে বলতে যায়।
  • Joydeep | 2401:4900:3a2a:5435:8d9d:6961:ce0b:***:*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ২২:১৫502777
  • Setting up vaccine mandates was always the original intention. The virus is just an excuse. It is not only about profits but mostly about control. Just wait and see. 
  • অরূপ শঙ্কর মৈত্র | 103.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ২২:১৭502778
  • দেবাশিসবাবুর দ্বিতীয় যুক্তিবিজ্ঞান আমার কাছে কিছুটা হিব্রু। অর্থনীতি আমি খুব বুঝি না, যেমন ডাক্তারিটাও বুঝি না। (এসব তিনি কতটা বোঝেন তাও জানি না) তবে অর্থনীতিবিদদের নিয়ে একটা মজার জোকস প্রচলিত। বর্তমান নানা ডেটা থেকে গণনা করে অর্থনীতিবিদ আগাম বলে দিতে পারেন ভবিষ্যতে অর্থনীতির কী দশা হতে চলেছে। অবধারিতভাবে, কালের নিয়মে ভবিষ্যত যখন বর্তমানে এসে হাজির হয়, সেই প্রেডিকশন মেলে না। তখন সেই অর্থনীতিবিদ, সেইসময়ের ডেটা দিয়ে ঘাড় ধরে বুঝিয়ে দিতে পারেন, মিলত, কিন্তু কেন মিলল না! ইদানিং অবশ্য এই গণৎকারের ভূমিকায় বিভিন্ন ডাক্তারবাবুদের যোগ্যতা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। কবে তৃতীয় ঢেউ, চতুর্থ ঢেউ আসতে চলেছে, কত মৃত্যু হবে, সব চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারছেন এবং কেন সেই ঢেউ তেমন মারাত্মক হল না তার কারণও বিশ্লেষণ করে দিচ্ছেন। ভাইরাসের পাখনার কত % প্রোটিন ভ্যাক্সড হয়ে ভাইরাসকে কাত করে ফেলেছে সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। সত্যি কথা বলতে কী, তান্ত্রিকাচার্য বশীকরণ বাবারাও হতবাক হয়ে দেখছে।
    দেবাশিসবাবু বললেন “এখন গোটা পৃথিবীর জিডিপি ধরুন ৮৫ ট্রিলিয়ন ডলার মত, আর তার মধ্যে ফার্মা-দের ভাগ হল ৫০০ বিলিয়ন, মানে আধ শতাংশের একটু বেশি। আর, এদের মধ্যে যারা কোভিড ভ্যাকসিন বানিয়ে সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে তাদের মোট মুনাফা ৫০ বিলিয়ন, মানে তারও দশ শতাংশ। অর্থাৎ, ভ্যাকসিন ব্যবসার মুনাফা হচ্ছে গোটা পৃথিবীর অর্থনীতির ০.০৫ শতাংশ। তো এই ক্ষমতা নিয়ে ভ্যাকসিন নির্মাতা কোম্পানিগুলো নাকি গোটা পৃথিবীর অর্থনীতিকে স্তব্ধ করে দেবে, আর অর্থনীতির বাকি ৯৯.৯৫ শতাংশের দাবিদাররা তাতে বাধা না দিয়ে তা বসে বসে দেখবে আর বুড়ো আঙুল চুষবে --- ষড়যন্ত্র  তাত্ত্বিকদের আবদারটা এইরকম! এই সঙ্কটের মুহূর্তে এইসব অবান্তর উদ্ভট কথাবার্তা নিয়ে চ্যাঁচামেচি করাটা যে একটা ভয়ঙ্কর দায়িত্বজ্ঞানহীন বোকামো হচ্ছে, তাতে কোনও সংশয় থাকতে পারে কি?”
    আপনি সকালে দুশ’টাকার মাছ কিনলেন মাছওয়ালার কাছে। মাছওয়ালা পঞ্চাশ টাকা দিয়ে হোটেলে ভাত খেয়ে বাকি দেড়শ টাকা নিয়ে আবার আড়তদারের কাছে মাছ কিনতে ছুটল। আড়তদার সেই দেড়শ টাকা থেকে একটা বোতল কিনল। আর হোটেলওয়ালা পঞ্চাশটাকার পাঁচ টাকা দিয়ে আনন্দবাজার কিনে পড়তে বসে মাথায় হাত দিল। এবার আর করোনার ঢেউ নয়, এবার করোনা সুনামি আসছে। ওমিক্রনের পর পপকর্ন। বিখ্যাত বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সে বেচারা ভয়ে ছুটল তান্ত্রিকবাবার কাছে। আরও দশ টাকায় করোনার মাদুলি কিনল। তান্ত্রিকবাবা সেই দশটাকা থেকে পাঁচ টাকা দিয়ে চা খেল। বাকি পাঁচটাকা দিয়ে মাদুলির সুতলি কিনল।
    ঘুরছে দুশ’ টাকা। কিন্তু জিডিপি? একবছরে এই দুশ’টাকার মোট জিডিপি কত হতে পারে? বছর শেষেও মুদ্রা হিসেবে ওই দুশ’টাকা দুশ’টাকাই থাকবে। কিন্তু জিডিপি? কয়েক কোটি টাকাও হতে পারে। জিডিপি আর মুনাফা যে একই ভেরিয়েবল নয় এটা বুঝতে কিন্তু সত্যিই অর্থনীতির ছাত্র হতে হয় না। উনি যেসমস্ত ডেটা দিয়েছেন, তার সত্যতা আমার পক্ষে যাচাই করা সম্ভব নয়। কিন্তু যিনি মুনাফা আর জিডিপি গুলিয়ে ফেলেন, তার বক্তব্যের কী উত্তর হয়? নিজেই অর্থনীতির এক মজার জোকস শিব্রামের লেখা থেকে বের করেছেন। আবার সেই অক্সফামের পাল্লায় পড়তে হবে। ফাইজার, বায়োএনটেক আর মডার্না প্রতি মিনিটে ৬৫হাজার ডলার মুনাফা করেছে কোভিডের ভ্যাক্সিন ফেরি করে। (https://reliefweb.int) একবছরে কত বিলিয়ন হল? ৫০ বিলিয়নেরও কম। ৩৪ বিলিয়ন। সারা পৃথিবীতে মাত্র তিনটে ফার্মা কোম্পানি? আর নেই। তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে এমনটাই ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা বলছে। ফার্মা ইন্ডাস্ট্রি মানে শুধুই ওই তিনটে কোম্পানি নয়। কয়েক হাজার কোম্পানি। তারসঙ্গে যুক্ত বিশাল হেলথ ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা কি কোথাও বলেছেন, মুনাফার স্বার্থে ফার্মা কোম্পানিগুলোই এই ভাইরাসের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে? “এই ভাইরাস আসলে ফার্মা কোম্পানির সৃষ্টি”। “কোভিড আদৌ তেমন মারাত্মক ভাইরাস নয়”। “ভ্যাক্সিন নিপাত যাক”। এইকথাগুলো কে বা কারা কোথায় বলেছে? কবে? কেন এই স্বতঃসিদ্ধগুলো দরকার হয়? কোভিড অবশ্যই একটা মারত্মক রোগ। ফ্লুও সময়বিশেষে মারাত্মক। কোভিডের ভাইরাস ঠিক কী জাতের আজও কিন্তু কোভিড-ওয়ালারা সম্পূর্ণ ঠিকঠাক বলতে পারেনি, কেননা ভাইরাসটাকে পৃথক করা যায়নি বলে জানা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন এটি একটি বাজে ধরনের ফ্লু। আর ভ্যাক্সিন এখনও ট্রায়ালে আছে। একটি ট্রায়াল ভ্যাক্সিন বাধ্যতামূলক করা যায় না। যায় কী? কী বলেন? দুনিয়ার কোথায়, কবে, কোন নিয়মে ট্রায়াল ভ্যাক্সিন এইভাবে বাধ্যতামূলক হয়েছে? ট্রায়াল মানে যে যাচাই সেকথা দেবাশিসবাবু ভুলেই মেরে দিয়েছেন? যাচাই মানে তো সুফল, কুফল দুইই ঘটতে পারে; তা বোঝার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। তার হিসেব করার ধৈর্য থাকছে না কেন?
    এইবার সত্যিসত্যিই এক মারাত্মক ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদলের হদিস দেওয়া যাক। এককালে বামপন্থীরা ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন, গ্যাট চুক্তি, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের নাম শুনলেই ক্ষেপে যেত। সবই সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত। সঙ্গে দোসর ছিল, এখানকার প্ল্যানিং কমিশন, ফিনান্স কমিশন ইত্যাদি। অথচ ইদানিং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, সিডিসি, আইসিএমআরের কথা শুনলেই গদগদ হয়ে যাচ্ছি। কোনও চক্রান্ত নয়। কোনও চক্রান্ত নয়। হোকনা ওয়ার্ল্ড। থাকনা গেটস ফাউণ্ডেশনের টাকা।  
    তো আসা যাক, হেলথের বাইরে ওই ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক মার্কা আর একটি বিশ্ব-সংস্থার কথায়। ১৯৭১ সাল নাগাদ তৈরি হয়েছিল ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম। কোনও লোকের শরীর আর স্বাস্থ্যের গপ্পো নয়। এরা অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রোটোকল তৈরি করে। অর্থনীতিতেও মাঝে মাঝে মারাত্মক ভাইরাসের জন্ম হয়। তার বিরুদ্ধেও লড়তে হয়। সেই ভাইরাসও ইনিভিজিবিল। কতটা শক্তিশালী এই প্রোটোকলওয়ালারা? কারা এর মাথা? গতকাল শুরু হয়েছে এই সংস্থার বার্ষিক সভা। নরেন্দ্র মোদীসহ সারা বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রপ্রধান বা তাদের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসেছেন। এই সংস্থার সিইও ক্লাউস সোয়াব। এই অশীতিপর মহান ব্যক্তিত্ব ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার অনিবার্য। বহু মানুষের ক্ষতি হয়ে যাবে। একদিকে বিশাল মুনাফা অন্যদিকে হাড়-হাভাতের দল। না, এইভাবে বলেন নি। মোদ্দা কথাটা এই। এই নিউ নর্মাল মানিয়ে নিতেই হবে। কোভিড এই নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার-এর আগমণকে সহজ করে দিয়েছে। এটাই উনার মোদ্দা কথা। (Covid19- The Great ReseT) উনি কিন্তু বলেন নি, এগুলো আন্তর্জাতিক ডিজিট্যাল ক্যাপিট্যাল বা ফার্মা লবির ষড়যন্ত্র। কিন্তু ষড়যন্ত্র না বলে যদি ভবিতব্য বলি তাহলে সেই ভবিতব্যের তাত্ত্বিক কিন্তু ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম। মিটিং চলছে। প্রোটোকল রচনা হচ্ছে। মোদিজিও গুছিয়ে বক্তৃতা দিলেন।
    এককালে জঙ্গি বলে কিছুই ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভিয়েতনাম, কিউবা, কোরিয়ার পর হঠাৎ মধ্যপ্রাচ্যে হুহু করে জঙ্গি বেড়ে গেল। ওইসময়েও একদল ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক বলত, ওগুলো নাকি তেলের জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র। তো সেটা আর ডিভিডেন্ড দিচ্ছিল না। তাই তালিবানের হাতেই আফগানিস্তান সঁপে দিয়ে বাইডেন বিদায় নিলেন। এখন দুশ্চিন্তা এই কোভিড ভাইরাস। তার বিরুদ্ধে এমন জোটবদ্ধ যুদ্ধ, হিটলার-মুসোলিনির সময়েও দেখা যায় নি। চার্চিল জোট না করার জন্য স্টালিনকে টানা একবছর লেজে খেলিয়েছিল।
    একটা যুক্তি অবশ্য থেকে যাচ্ছে। এই হঠাৎ ভাইরাসের সুনামি কারও ষড়যন্ত্র নয়, তবে অ্যাক্সিডেন্টালি এসে যাওয়ায় পুঁজি তো তার ব্যবসার সুযোগ নেবেই। নেবে না? “বুড়ো আঙুল চুষবে”?(আর ভাল্লাগছে না)।
     
  • Debasis Bhattacharya | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ২২:৫৪502781
  • মাননীয় অরূপবাবু, চমৎকার লাগছে। আপনার শেষ হলে কাইণ্ডলি একটা ঘোষণা দেবেন, ক্যামোন? 
  • বিল গেটস | 129.227.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:০২502782
  • আহা, দেবাশিসবাবু কাঁদবেন না। না হয় অরূপবাবু সবার সামনে আপনার মূর্খামি প্রকাশই করে দিয়েছেন। তাতে কি আছে? এখনও অনেক লোকই জানে না যে আপনি মূর্খ।
  • এলন মাস্ক | 122.174.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:২৪502783
  • অ্যাই বিল বেশী ফটর ফটর করিস না। আমার কাছে মঙ্গল গ্রহের ভাইরাস আছে, এখনো বাজারে ছারিনি।  
  • আরে | 74.2.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:২৪502784
  • আমাদের এলেবেলেবাউ কবেই বলেচেন ভক্তিবাদী সমিতির দেবাশিস্‌ ভটচাজ (হসন্ত খ্যাল কর্বেন)। গরীবের কতা বাসি হলে সত্যি হয়।
  • সৌরভ দে | 2a0b:f4c0:16c:16::***:*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:২৬502785
  • প্রবন্ধলেখক কোন বিষয়ের ছাত্র ছিলেন জানাবেন?আশা করি খুব অন্যায় কৌতুহল হল না।
  • খুচুং | 38.75.***.*** | ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৩৪502786
  • উনি ঘোলটপকা। সর্ববিষয়ে পন্ডিত।
  • Ekak | 2409:4060:90:5ede:6563:a0e2:faee:***:*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৩:৪৮502789
  • আগেও  নানাজায়গায় লিখেচি। আবার একই কথা লিখচি। একই উদাহরণ সহ। 
     
    ধরে নিন আমি একটা বিট হারামি লোক। আমার ওষুধের দোকান আচে আর সেখানে কুত্তায় কামড়ানোর ইঞ্জেকশন প্রচুর স্টক হয়ে পড়ে আচে। আমি পাড়ার একটা পাগলা কুকুরকে আপনার পেচনে লেলিয়ে দিলুম আর সে আপনার পায়ের এক খাবলা মাংস তুলে নিলো। 
     
    অপ্নি জানেনে সব আমার ষড়যন্ত্র। কুত্তাটাকে আমিই লেলিয়েচি। এখন আপনি ইনজেকশন নেবেন নাকি আমার ষড়যন্ত্র ধরতে পেরে বগল বাজাবেন ??? আর , কদিন বাদে জ্বলাতঙ্কে ফুটে যাবেন ?!
     
    আপনাদের সমস্ত কন্সপিরেসি থিওরি যদি সত্যিও হয় তারপরেও অবজেকটিভ ট্রুথ হলো এই যে করোনা একটি মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ এবং ভ্যাক্সিনে - মাস্ক এগুলো অস্বীকার করলে করোনা আপনার বা আপনার আশেপাশের মানুষের বিপদ ডেকে আনতে পারে। করোনাকে সামনে রেখে কোটি কোটি বিলিয়নের ব্যবসা চলচে এটা, যারা মাস্ক পরচে  ভ্যাকসিন নিচ্চে  তারা জানেনা শুধু আপনি বোঝেন এরকম নয়। পার্থক্য এই যে তারা আশু বিপদটা বোঝে আর আপনি -আপনাদের  মত  গোলাপগান্ডুর দল ,বিপদটাকে না দেখে বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নাম করে রোগটাকে আরো ছড়ানোর মহান দায়িত্ব নিয়েচেন। 
  • গোলাপগান্ডু | 216.245.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৪:০৩502790
  • ভাই আগে করোনা জ্বলাতঙ্কের মত ভয়ংকর ইহার প্রামান ডাও। প্রতি বছর সিম্পিল হার্ট এটাকে এর চেয়ে বেশি লোক ফুটে যায়।
  • সুবল গোস্বামী | 162.218.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৪:৪০502791
  • গত সেপ্টেম্বর মাসে সিডিসি কেন ভ্যাকসিনের সংজ্ঞা বদলে দিল? কী লুকোতে চায়? দেবাশীষ বাবুর কাছে উত্তর আছে?
  • জয় | 82.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৪:৪৯502792
  • @অরূপবাবু
    আপনি নিজেই লিখেছেন কোভিড মারাত্মক রোগ। অনেকেতো কোভিডের অস্তিত্বই স্বীকার করেনা, স্বীকার করলেও মারাত্মক ভাবেনা। সেজন্য সাধুবাদ।
     
    আপনার মূল যুক্তি যা বুঝেছি, ভ্যাকসিনেসন ঘিরে সন্দেহ, বিরাট ষড়যন্ত্র, মুনাফা লোটার কায়দা, নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার শুরু।
     
    একক যেভাবে খুব স্পষ্ট করে লিখেছেন, আমি পারতাম না- ষডযন্ত্র/মুনাফা/  নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার যাই হোক না কেন সারা পৃথিবী জুড়ে, আপনার কাছে মারাত্মক, তার থেকেও বেশী যা তা রকমের ছোঁয়াচে (ইনফেকসাস) রোগের থেকে নিজেকে, পরিবার এবং কাছের লোকেদের বাঁচাবার জন্য আপনি কি করবেন?
     
    এসব লিখে টিখে কোন লাভ হয় না। আমিও মত বদলাবো না, আপনিও বদলাবেন না। ভেবেছিলাম ইগনোর করব। কিন্তু আপনার দুটো ইনফো ফ্যাকচুয়ালি ঠিক নয় খুব জোর দিয়ে বলতে পারি, যদিও ক্যানসার সার্জেন, আমি ২০টি বেশী ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্প চালিয়েছি, সেই সূত্রে কিছু ট্রেনিং আর অল্প পড়াশোনা করতে হয়েছিল।
    ১) "কোভিডের ভাইরাস ঠিক কী জাতের আজও কিন্তু কোভিড-ওয়ালারা সম্পূর্ণ ঠিকঠাক বলতে পারেনি, কেননা ভাইরাসটাকে পৃথক করা যায়নি বলে জানা যাচ্ছে।"- এটি একটি করোনা ভাইরাস, অনেকটা কমন কোল্ডের মত (কমন কোল্ড অন্যান্য দুটি ভাইরাস ছাড়াও চারটি বিভিন্ন করোনা ভাইরাস থেকে হয়)। এটি একটি RNA ভাইরাস। খুব ছোট জিনোম (সম্পূর্ণ  জিন)- ৩০ হাজার বেস পেয়ার (30 kbp; সেখানে মানুষের জিনোম  5 -26 × 104 kbp) . এখন জিন অ্যানালিসিস (হাই থ্রুপুট সিকোয়েন্সিং) করা খুবই সহজ (আমি ক্যানসার জিন নিয়ে তিন বছর ল্যাবে কাজ করেছি; আমার ক্রেডেনশিয়াল আমি এতবছর গুরুচণ্ডালীতে আসছি, কখনো বলিনি- আজ লিখলাম, যাতে বিশ্বাসযাগ্য হয়)। কোভিড-১৯এর জিনোম ২০২০ জানুয়ারীতেই অ্যানালাইজ (হোল জিন সিকোয়েন্সিং- WGS) হয়ে গেছে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে পাবলিশ হয়েছিল (Zhu N, Zhang D, Wang W, Li X, Yang B, Song J, et al. A novel coronavirus from patients with pneumonia in China, 2019. N Engl J Med. 2020 02 20;382(8):727-33.) এখন আমরা খুব সহজে সিকোয়েন্সিং করে মিউটেশনগুলো (ভ্যারিয়েন্ট) ধরতে পারি। আপনি কি এটাই প্রশ্ন করছেন?
     
     
  • মানস বসাক | 167.88.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:০২502793
  • লেখক গন্ডমূর্খ ছাড়া কিস্যু না। পোলিও ভ্যাকসিনের কেলেঙ্কারি জানেন? ফোঁটার সংখ্যা বাড়িয়ে বিল গেটস পাঁচ লক্ষ শিশুকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। এইবার উহানের বাদুড়খেকো মহিলা, পিটার দাসজাক আর নাটের গুরু বিল গেটস মিলে হাওয়ায় ভাইরাস পাম্প করছে।
  • s | 100.36.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:০৭502794
  • সবুজ,
    আপনি সব ঘেঁটে ঘ করেছেন। সিডিসির বাপের সাধ্যি নেই ভ্যাকসিনের সংজ্ঞা বদল করে। সিডিসি কোনো রেগুলেটরি এজেন্সি
    ই নয়। সিডিসির কাজ পাবলিক হেলথ পলিসি রেকমেন্ড করা।
  • s | 100.36.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:০৮502795
  • সরি, আমার পোস্ট সুবলকে। সবুজ নয়।
  • জয় | 82.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:১৬502796
  • @ অরূপবাবু
    ২) আর ভ্যাক্সিন এখনও ট্রায়ালে আছে। একটি ট্রায়াল ভ্যাক্সিন বাধ্যতামূলক করা যায় না। যায় কী? - অরূপবাবু এটাও আপনার ঠিক জানা নেই।
    অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনিকা, বায়োএনটেক-ফাইজার, মডার্না , জনসন এন্ড জনসন প্রতিটি ভ্যাকসিনই ফেজ-3 ট্রায়াল (লার্জ স্কেলে সেফটি এবং এফেক্টিভিটি প্রমান করার জন্য) কমপ্লিট। আরো অনেকগুলো ভ্যাকসিনও ফেজ3 ট্রায়াল কমপ্লিট করেছে। শুধু তাই নয়, কোন দেশে ভ্যাকসিনগুলো ব্যবহারের আগে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে ঐ দেশের মেডিসিন কন্ট্রোল বোর্ডের কাছে অ্যাপ্লাই করতে হয়। এটা খুব রিগরাস প্রসেস। যেমনঃ আমেরিকায় FDA, ইউকেতে MHRA, ইউরোপে EMA. এই সরকারী কিন্তু স্বাধীন সংস্থাগুলোর দায়িত্ব আমার আপনার হয়ে ওষুধ কোম্পানীর দাবীগুলোকে খুঁটিয়ে দেখা এবং খুশী হলে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া ভ্যাকসিন জনগনের মধ্যে রোল আউটের উপযুক্ত কিনা। ভ্যাকসিনগুলোর ট্রায়ালই হয়নি, রেগুলেটরি বোর্ডগুলি অনুমতি দিয়েছে। আপনার বক্তব্য কি আমি ঠিক বুঝেছি?
    এগুলো সবই বেসিক ইনফো। এতে কোন কনফিউসন থাকার কথা নয়। লেখার বোধহয় দরকার ছিল না। 
    অরূপবাবু ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
     
  • kk | 2600:6c40:7b00:256:5028:f4a6:3dd1:***:*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:০৫502797
  • বাঃ, হার্ট অ্যাটাকও ছোঁয়াচে অসুখ? এখানে না এলে তো জানতেই পারতামনা!
  • &/ | 151.14.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:০৯502798
  • আরে হার্টে অ্যাটাক হয় কেন? হার্টে হার্টে অর্থাৎ কিনা হৃদয়ে হৃদয়ে প্রেম থাকলে। প্রেমে পড়তে গেলে রেঞ্জের মধ্যে আসতে হবেই। তাই ছোঁয়াচে তো বটেই। ঃ-)
  • π | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:১৩502800
  • জেগে ঘুমালে জাগানো যায়না।
     
    তবে তথ্য বিকৃত করে, গোপন করে অন্যদের বিভ্রান্ত করলে অনেক লোককে তার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয়। আগে হয়েছে। এখনো হচ্ছে।
     
    তাই কিছু 'ফ্যাক্টস' থাক। তর্কে ঢোকার মত শারীরিক সুস্থতা নেই।
     
    কোভিডকে যাঁ্রা সাধারণ ফ্লু বলছেন, এটি বিপজ্জনক সেটিই স্বীকার করেন না,  তাঁদের জন্য এইটি।
     
     
    “The analyses find that India’s cumulative Covid deaths by September 2021 were 6-7 times higher than reported officially,” the researchers noted in the paper, published in the Science magazine on January 6.
  • π | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:২২502801
  • জয়দা বাকি অনেক কিছু গুছিয়ে লিখছেন, আরো লিখবেন আশা করি।  ডাক্তার হিসেবে অতিমারী অনেক কাছ থেকে ডিল করেছেন, নিজের শরীরে এতবড় রিস্ক নিয়েও। জয়দা একটা বড় আলাদা লেখা লিখলে খুব ভাল হত।
     
    যাহোক, আন্টি ভাক্সারদের জন্য এমনকি এবারের 'মাইল্ড' ভ্যারিয়ান্ট কালের তথ্য।
     
  • π | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৫502802
  • Data in Tamil Nadu showed that risk of death from Covid was 3.5 times higher for those unvaccinated, compared with those vaccinated.
     
    In Chennai, 87% of those who died of Covid-19 in August and September 2021, and 69% of those who died of Covid-19 in December 2021 were unvaccinated, city officials said.
     
     
    Data for Mumbai for the last one year show that 94% of Covid-19 deaths since February 2021 were of those who had not received a single dose of the vaccine.
     
     
    In Karnataka, data show that between December 1, 2021 and January 7, 2022, the unvaccinated were ten times more likely to have a symptomatic Covid-19 infection and were 30 times more likely to be in the ICU or the High Dependency Unit than the vaccinated.
     
    UK.: 

    1.Main points

    • The monthly age-standardised mortality rates (ASMRs) for deaths involving COVID-19 have been consistently lower for people who had received a second dose at least 21 days ago, compared with unvaccinated people. This is the case for all age groups.
    • The age-adjusted risk of deaths involving COVID-19 for people who had received a second dose at least 21 days ago compared with unvaccinated individuals varied from 99% lower (in February) to 78% lower (in October)
    আমেরিকা ঃ

    The CDC found that an unvaccinated American is 14 times more likely to die from Covid-related complications than a fully vaccinated person.

    This goes up to 20 times more likely, when compared with someone who has received a booster vaccination.

     

    আর কত দেব? হাত ব্যথা করছে।

     
     
    •  
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন