এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • অনুপ্রবেশের মিথ এবং সাম্প্রতিক ভারতীয় সমাজ

    Anirban M লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ২২ জুলাই ২০২৫ | ২৬৮১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • পাঁচ বছর আগে, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরির আবহে অনুপ্রবেশের ধূয়ো তুলে বাঙালিদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পোরার  চেষ্টা হচ্ছিল যখন, তখন দুটি লেখা লিখেছিলাম বাংলা দৈনিক, এই সময়ে। সেখানে তথ্য দিয়ে দেখিয়েছিলাম এই অনুপ্রবেশের গল্পটা পুরোটাই  তথ্যপ্রমাণহীন একটা ন্যারাটিভ তৈরির চেষ্টা। সেই পরিস্থিতি যখন আবার ফিরে এসেছে মনে হল সেই পুরোন লেখাটা আবার মনে করা দরকার। আমার তথ্যভিত্তি জাতীয় জনগ্ণনার ডেটা। যেহেতু ২০১১ এর পরে আর জনগণনা হয় নি, তাই লেখাটি আপডেট করার দরকার পড়ল না। খবরের কাগজের লেখা দুটির লিঙ্ক নিচে দিয়ে রাখলাম।  



    কথা হচ্ছিল সুজয়ের সাথে। সুজয় মধ্য তিরিশ, উচ্চবর্ণ হিন্দু, আই টি সেক্টরে চাকুরীরত – সুতরাং উচ্চশিক্ষিত। সুজয় জাতীয় নাগরিকপঞ্জি আইন (এন আর সি) সমর্থন করে কারণ ও মনে করে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি না থাকলে দেশ অনুপ্রবেশকারীতে ভরে যাবে, তাতে দেশের অর্থনীতিরই ক্ষতি। সুজয়ের বাড়ি সীমান্তের কাছে, এবং ওর অভিজ্ঞতায় ওর পাড়া ভরে যাচ্ছে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীতে। সুজয় কোন ব্যতিক্রম নয়, বিজেপি যে সমর্থন পাচ্ছে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি আইনের স্বপক্ষে, অন্তত পশ্চিমবঙ্গে, তার মূলে কোথায় অনুপ্রবেশ নিয়ে একটা ফিসফিসে প্রচার। সুজয় নাহয় নিজের অভিজ্ঞতার কথাই বলছে, কিন্তু তার বাইরে অনেক লোক আছে যাদের অনুপ্রবেশের জুজুর ভয় দেখানো চলছে অহোরাত্র – অন্তত এই একটা ব্যপারে আমরা ট্রাম্পের আমেরিকা বা জনসনের বৃটেনের সমকক্ষ।

    সুজয় যাদের দেখছে তারা অনুপ্রবেশকারীই কিনা এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। কিন্তু ধরে নেওয়া যাক সুজয়ের ভাবনা সত্যি, ধরে নেওয়া যাক সত্যি সুজয়ের পাড়া ভরে যাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীতে যারা বেশী দামে মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে সুজয়ের নাকের ডগা দিয়ে (সুজয় খুবই ক্ষুব্ধ এই ব্যাপারে যা আমাকে মনোজদের অদ্ভুত বাড়ির ভজ বাজারুর কথা মনে করিয়ে দিল। যদিও ভজবাবু বাজারে তাঁর মূল প্রতিপক্ষ শার্দূল চৌধুরিকে অনুপ্রবেশকারী মনে করতেন না!), কিন্তু যেটা সুজয়ের জন্য সত্যি সেটা কি রাজ্যের জন্য সত্যি? এদুটো কীভাবে আলাদা সেটা একটা উদাহরণ দিলে স্পষ্ট হবে। ধরুন আপনার পাড়ায় কিছু আফ্রিকান মানুষ ভাড়া থাকেন যারা কলকাতায় পড়াশোনা করেন বা ময়দানের ছোটখাটো ক্লাবে ফুটবল খেলেন।এখন আপনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ভাবলে মনে হবে দেশ আফ্রিকান মানুষে ভরে যাচ্ছে, কিন্তু আপনার দেখার পরিধি প্রসারিত করলে বুঝবেন সেটা সত্যি নয়। কিন্তু এই পরিধি প্রসারিত করার উপায় কি? আফ্রিকান মানুষের ক্ষেত্রে হয়ত পাশের পাড়ায় উঁকি দিলে, অফিস যাওয়ার পথে রাস্তায় চোখ রাখলেই বোঝা যাবে যে তত আফ্রিকান মানুষ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তো দেখে বোঝার উপায় নেই আর তারা হয়ত যে বৃত্তে সুজয়ের চলাফেরা তাতে সত্যি ছড়িয়ে আছে। কিন্তু সেই বৃত্ত হয়ত ৫০০ কি ১০০০ মানুষের। তাই রাজ্যের জন্য অনুপ্রবেশের সমস্যা সত্যি কতটা উদ্বেগের সেটা বোঝা প্রয়োজন।

    সেটা বোঝার একমাত্র উপায় জনগণনার দিকে তাকানো। অনুপ্রবেশের হার যদি খুব বেশি হয় তাহলে জনগণনায় সেটা ধরা পড়বে। কিন্তু কিভাবে? জনসংখ্যা তো জন্মহার মৃত্যুহারের থেকে বেশী হলেই বাড়ে। তার মধ্যে কোনটা অনুপ্রবেশের জন্য আর কোনটা নয় সেটা বোঝা যাবে কি করে? আমাদের (অর্থাৎ সুজয়ের) প্রাথমিক অনুমান হল পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ ঘটছে। সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের থেকে অনেক বেশী হবে। সেটা বোঝার জন্য আমরা রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার থেকে ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বাদ দিয়ে একটি নতুন চলক তৈরি করলাম। এর মান যদি শূন্যর থেকে বেশী হয় তাহলে অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা বেশী, শূন্যর থেকে যদি কম হয় অর্থাৎ রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার জাতীয় হারের থেকে কম হয়, তাহলে অনুপ্রবেশ ঘটছে না, বা ঘটলে তা খুব উল্লেখযোগ্য নয়। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি আমরা আসাম আর গুজরাটের জন্যও একই ভাবে চলকটি নির্মাণ করলাম। আসাম, কারণ জাতীয় নাগরিক পঞ্জির দাবি উঠেছিল আসাম থেকেই এবং তার পেছনেও ছিল অনুপ্রবেশের ভয়। আর গুজরাট কারণ গুজরাটে অনুপ্রবেশ হচ্ছে এরকম দাবী কেউ কখনো করে নি।


    এই রেখাচিত্রের সব তথ্যই এসেছে ভারতীয় জনগণনার ওয়েবসাইট থেকে। এখানে তিনটি রাজ্যের জন্য আপেক্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দেখানো হয়েছে। যদি আপেক্ষিক বৃদ্ধির হার শূন্যের ওপরে থাকে তাহলে রাজ্যগুলির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার জাতীয় হারের থেকে বেশি আর যদি তা শূন্যের কম হয় তাহলে রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার জাতীয় হারের থেকে কম। যদি খুব আশঙ্কাজনক হারে অনুপ্রবেশ হয় তাহলে সেই রাজ্যের জনসংখ্যা জাতীয় হারের থেকে অনেক বেশি বাড়ার কথা। যদিও উল্টোটা সত্যি নাও হতে পারে, জনসংখ্যা বাড়লেই তা যে অনুপ্রবেশের জন্যই তা বলা যায় না। উপরের ছবি থেকে বোঝা যাচ্ছে ১৯৪১ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তিনটি রাজ্যের জনসংখ্যা বেড়েছে জাতীয় হারের থেকে বেশী হারে। গুজরাটের জনসংখ্যাও বেড়েছে, কিন্তু আসাম আর পশ্চিমবঙ্গের থেকে কম হারে। কিন্তু এই যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি তা কী সত্যি অনুপ্রবেশের পরিসংখ্যানকে ধারণ করে? কারণ গুজরাটের জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে যদি আমরা স্বাভাবিক বলে ধরে নি তাহলে নানান স্বাভাবিক কারণেও রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার জাতীয় হারের থেকে বেশী হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী আগমনের দুটি বড় পর্যায় ছিলভারতের স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরে পরেই হয় ১৯৫১’র জনগণনা। সেখানে আসামে জাতীয় হারের চেয়ে বেশী হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটলেও (১৯.৯%), পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বৃদ্ধি কিন্তু জাতীয় বৃদ্ধির (১৩.৩%) সঙ্গে প্রায় সমানই ছিল। এই বছর গুজরাটের জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারও (১৮.৬৯%) অনেকটাই বেশী ছিল জাতীয় বৃদ্ধি হারের তুলনায়। এক্ষেত্রে কিন্তু গণনা প্রক্রিয়ার সমস্যার সম্ভাবনা পুরোটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না যেহেতু নব্য স্বাধীন একটি দেশে জনগণনার মত একটি বিশাল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা খুব সহজ নয়। এই সম্ভাবনার স্বপক্ষে একটি অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ হল ১৯৬১ সালের জনগণনায় পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার বৃদ্ধি হার (৩২.৮%) জাতীয় হারের (২১.৫%) থেকে অনেকটাই বেশী। ১৯৬১ র জনগণনায় আসামের বৃদ্ধি হারও ছিল অনেকটা বেশী (৩৫%)। এমনকি গুজরাটের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আসাম বা বাংলার মত না হলে জাতীয় হারের থেকে বেশী ছিল (২৭%)। একই ভাবে আমরা যদি ১৯৭১ এর জনগণনা দেখি তাহলেও দেখব আসামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (৩৫%) জাতীয় হারের (২৫%) থেকে বেশী। পশ্চিমবঙ্গও বেশী (২৭%), কিন্তু আসামের মত অত বেশী নয়। সুতরাং, শরণার্থী (নাকি অনুপ্রবেশকারী?) আগমনের এই দ্বিতীয় পর্যায়েও জনসংখ্যাতে তার একটা ছাপ পাওয়া যাছে। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত তা কেউই বলবে না, কিন্তু অনুপ্রবেশ পরিমাপের এর থেকে তথ্যভিত্তিক, বস্তুনিষ্ঠ উপায় আর নেই। যাঁরা অনুপ্রবেশের জুজু দেখাচ্ছেন তাঁদের কাছে কিন্তু আদৌ কোন তথ্য নেই, পুরোটাই কিছু ধারণা। এখন আমরা যদি সময় সারণীতে আরও এগিয়ে আসি তাহলে দেখব ১৯৮১ থেকেই আসাম আর পশ্চিমবাংলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার জাতীয় হারের থেকে কম এবং শেষ দুটি জনগণনাতে গুজরাটের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার জাতীয় হারের থেকে বেশী। তাহলে অনুপ্রবেশ যদি কোথাও হয়ে থাকে গুজরাটে হচ্ছে!

    কিন্তু মজা হল কোন তথ্য, যুক্তির পরোয়া না করেই এরকম একটা কথা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যে দলে দলে লোক বাংলাদেশ থেকে (এবং মায়ানমার থেকেও) ভারতে ঢুকে পড়ে আমাদের অর্থনীতির দফা রফা করছে, তাই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি চাই (এবং তার অবিচ্ছেদ্য দোসর পরিবর্তিত নাগরিকত্ব আইনও চাই)। অনুপ্রবেশ যে হচ্ছে না, তা নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু তার মাত্রা এমন নয় যে তার জন্য নতুন আইন করে একটা বিপর্যস্ত অর্থনীতির বিপর্যয় আরও বাড়াতে হবে! কিন্তু এই যে ফিসফিস করে ছড়িয়ে দেওয়া বিশ্বাস, তার বিপদ খুব ভয়ঙ্কর, বিশেষ করে বাঙ্গালিদের জন্য। অনুপ্রবেশকারীরা বাঙ্গালি এই বিশ্বাস থেকে বাঙ্গালি মাত্রেই অনুপ্রবেশকারী এই বিশ্বাসে পৌঁছনোর পথ কিন্তু খুব লম্বা নয়। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি ভাষা বা খাদ্যাভ্যাস দেখে তাদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করার নিদান আসতে শুরু করেছে দেশের ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের নেতা বা কোন কোন রাজ্যের প্রশাসনের দিক থেকে। যে কোন জনবিরোধী আইনেরই প্রথম বলি হয় গরিবরা। বিমুদ্রাকরণ থেকে নাগরিক পঞ্জি – সব ক্ষেত্রেই এমনটাই দেখা গেছে। কিন্তু অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণের সহজ উপায় বাংলা ভাষা হয়ে দাঁড়ালে উচ্চ-মধ্যবিত্ত বাঙ্গালিরাও কিন্তু সে আগুণ থেকে রক্ষা পাবেন না।



    এবার অনামিকা। অনামিকা উচ্চ বর্ণ হিন্দু, মধ্য চল্লিশ, উচ্চ শিক্ষিত, উচ্চপদে কর্মরতা। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি সুজয়ের সাথে কথোপকথনের সূত্রে আমার লেখা, এই সময়ে প্রকাশিত “কোন প্রমাণ আছে যে রাজ্যে অনুপ্রবেশ বাড়ছে?” পড়ে অনামিকা আমাকে বলল, “আসলে পশ্চিমবঙ্গের জনগণনায় অনুপ্রবেশের ব্যাপারটা ধরা পড়ছে না কারণ অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে ঢুকে অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে। এই তো, আমার মামাতো ভাই, সুরজিত, গুরগাঁওতে থাকে। ওদের বাড়ির যে রান্নার মাসি – সেই তো বাংলাদেশি”। একই রকম কথা শুনলাম পলাশদার কাছে। অবসর নেওয়ার আগে পলাশদা কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি সূত্রে ঘুরে বেড়িয়েছেন সারা ভারত। উনিও বললেন বরেলীর বাজারে, না ঝুমকা নয়, বাংলাদেশী মিষ্টির দোকানে মিষ্টি খাওয়ার কথা। এরকম কাহিনী শুনলাম আরও – মুম্বই এর বাংলাদেশী মজুর আর বেঙ্গালুরুর বাংলাদেশী কাগজ কুড়ুনির কথা। যাঁরা বললেন তাঁরা কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রচারক নন। তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতাই ভাগ করে নিয়েছিলেন আমার সাথে, তাই মনে হল তাঁদের যুক্তিটা তথ্যের আলোয় বিচার করে দেখা দরকার। আমার আগের লেখাতেও আমার মূল বক্তব্য ছিল যে ব্যক্তির জন্য যা খুব বড়, সেটা সমাজের কাছে অত গুরত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। ভাবলাম সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেই অনামিকা বা পলাশদার কথা যাচাই করে দেখি।

    আগের নিবন্ধেই দেখিয়েছিলাম সাম্প্রতিক অতীতে গুজরাটের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের থেকে বেশী। এমন কী  হতে পারে যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমবঙ্গকে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে গুজরাট বা গুজরাটের মত অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে? যার ফলে গুজরাটের (বা তার মত অন্য রাজ্যের) জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা পরিসংখ্যানে অনুপ্রবেশ ধরা পড়ছে না? এই করিডোর তত্ত্বের স্বপক্ষে বা বিপক্ষে কি কোন প্রমাণ আছে? আমি শুরু করলাম ২০১১ তে গুজরাটের পরিযান পরিসংখ্যান দিয়ে। গুজরাটে, ২০০১ আর ২০১১ এর মধ্যে, কাজের সন্ধানে এসেছেন প্রায় সাড়ে ছ লাখ মানুষ (৫,৩৪,৫৪৫ অন্য রাজ্যের গ্রাম থেকে আর ১,২২,২৪১ অন্য রাজ্যের শহরাঞ্চল থেকে)। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা যদি পশ্চিমবঙ্গ হয়ে গুজরাটে গিয়ে থাকে তাহলেও তাদের ধরা আছে এই সাড়ে ছ-লাখের মধ্যেই। অন্যদিকে এই সময়ের মধ্যে গুজরাটের জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় এক কোটি (সঠিক সংখ্যা ৯৮,৬৭,৬৭৫)। আমরা যদি কাজের প্রয়োজনে গুজরাটে আসা মানুষদের (যার একটা অংশ বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলে লোকের বিশ্বাস) বাদ দিয়েও ২০০১ থেকে ২০১১ এঁর মধ্যে গুজরাটের জনসংখ্যাবৃদ্ধি হিসেব করি তাহলে তা দাঁড়ায় ১৮.১৯% যা গুজরাটের প্রকৃত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের (১৯.২৮%) এর থেকে কম হলেও ২০১১-২০১১ সাময়কালে ভারত (১৭.৭%), পশ্চিমবঙ্গ (১৩.০৮%) এবং আসাম (১৭.০৭%) -- এর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের থেকে বেশী। অর্থাৎ, করিডোর তত্ত্ব দিয়ে গুজরাটের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। তার থেকেও বড় কথা, পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে ঢুকে বাংলাদেশীরা অন্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে অন্য রাজ্যের জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে – এই করিডোর তত্ত্বের স্বপক্ষেও কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।

    কিন্তু এই হিসেবে দুটো সমস্যা আছে। একদিকে যারা কাজের প্রয়োজনে বাইরের রাজ্য থেকে আসছেন তাঁরা সবাই যে অনুপ্রবেশকারী এমন তো নয়। পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীদের যদি বাদও দেন, তাহলেও বিহার, উত্তরপ্রদেশ, বা কেরালা থেকেও তো বহু মানুষ যেতে পারেন গুজরাটে কাজের সন্ধানে। তাহলে রাজ্যে বাইরে থেকে আসা কতজন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী তা বোঝা যাবে কী করে? যিনি বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশ করেছেন তিনি তো আর ঘোষণা করবেন যে আমি বাংলাদেশী! অন্যদিকে, করিডর তত্ত্ব সত্যি হয়, তাহলে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা ছড়িয়ে যাচ্ছে নানা রাজ্যে। তাহলে শুধু গুজরাটের জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেখে লাভ নেই – এরকম একটা আপত্তি উঠতে পারে। এই দুই সমস্যার সমাধানের জন্য কোন রাজ্যে যাঁরা আসছেন তাদের কতজন বাংলাদেশি তার একটা হিসেব পাওয়া দরকার আর তারপর এই হিসেবটা বিভিন্ন রাজ্যের জন্য করে দেখা দরকার।

    প্রথম সমস্যার কোন পূর্ণাঙ্গ সমাধান নেই। ঠিক কতজন বাংলাদেশি রাজ্যে ঢুকছেন এটা বোঝার সরাসরি কোন উপায় নেই। তার বদলে, আমি ভারতীয় জনগণনা পরিসংখ্যান ব্যবহার করে দেখার চেষ্টা করেছি কোন রাজ্যে কতজন মানুষ আছেন যাদের মাতৃভাষা বাংলা। যেমন গুজরাটে ২০০১ সালে বাংলাভাষী লোক ছিলেন ৪০,৭৮০ আর ২০১১ তে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৭৯,৬৪৮। অর্থাৎ, ২০০১ থেকে ২০১১ এঁর মধ্যে গুজরাটের জনসংখ্যায় বাংলাভাষীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪০,০০০। মনে রাখতে হবে, এই ৪০,০০০ এর মধ্যে তিন ধরণের লোক আছেন – পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা বাঙালি, বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালি আর গুজরাতে বংশানুক্রমে বাস করা প্রবাসী বাঙ্গালি। এখন ৪০,০০০ এর  মধ্যে কতজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এটা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা কোনভাবেই ৪০,০০০ এর বেশী হতে পারে না। অর্থাৎ, ৪০,০০০ হল ২০০১-২০১১ এঁর মধ্যে বাঙ্গালি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যার ঊর্ধসীমা। আসলে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা এর থেকে কমই হবে। ২০০১ থেকে ২০১১, এই ১০ বছরে গুজরাটের জনসংখ্যা বেড়েছে ৯৮,৬৭,৬৭৫। অর্থাৎ ২০০১-২০১১ এই সময়কালে, গুজরাটের জনসংখ্যাবৃদ্ধিতে বাংলাভাষীদের অবদান মাত্র .০৬%। ২০০১-২০১১ মধ্যে গুজরাটের  বাংলাভাষীদের সংখ্যাবৃদ্ধি যদি অনুপ্রবেশের জন্য হয় তাহলেও মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিরিখে তার অনুপাত খুবই সামান্য।

    গুজরাটের জন্য করা এই হিসেবটা (অর্থাৎ কোন রাজ্যে বাংলাভাষীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও সেই রাজ্যের মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাত) আমি অন্য রাজ্যের জন্যও করে দেখেছি। এটা সব রাজ্যের জন্যই করা যায়, কিন্তু আমি আপাতত সেই রাজ্য গুলিই নিলাম যার জন্য অনুপ্রবেশকারীদের বিভিন্ন গল্প আমি শুনেছি – উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, দিল্লি রাজধানী অঞ্চল, আর মহারাষ্ট্র। সঙ্গের রেখাচিত্রে, এই অনুপাতটি দেখানো হল। অনুপাতগুলি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে যে রাজ্যগুলিকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের গন্তব্য বলে আমরা শুনতে পাই সেগুলির সবকটিতেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির অতি সামান্য অংশই বাংলা ভাষী জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে হয়েছে। যেমন ধরা যাক কর্ণাটক। ২০০১ সালে কর্ণাটকে বাংলাভাষী ছিল ৪১২৫৬ যা ২০১১ তে বেড়ে হল ৮৭৯৬৩। সুতরাং এই ১০ বছরের মধ্যে কর্ণাটকের বাংলা ভাষীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৬,৭০৭ (যার মধ্যে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালি ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাঙ্কার, ম্যানেজমেন্ট কর্মীরাও আছেন)। ওই একই সময়ের মধ্যে কর্নাটকের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৮২ লাখ (৮২,৪৪,৭৩৫)। অর্থাৎ ২০০১ থেকে ২০১১ এঁর মধ্যে কর্নাটকের জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাত্র ০.৫৬% বেড়েছে বাংলাভাষীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে।
     



    বিভিন্ন রাজ্যের বাংলাভাষী জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও রাজ্যের মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাত (২০০১-২০১১)

    এবার দেখা যাক সমগ্র দেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বাংলাভাষীদের অবস্থান। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ৯ কোটির কাছাকাছি। পশ্চিমবঙ্গে থাকা বাংলাভাষীর সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে প্রায় এক কোটি মানুষ থাকেন যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়। মনে রাখতে হবে এই এক কোটির মধ্যে অনেক ভাষার মানুষ আছেন পশ্চিমবঙ্গে যাদের বসবাস প্রায় তিন চারশো বছর ধরে (যেমন মাড়ওয়ারি সম্প্রদায়ের মানুষেরা যাঁদের পূর্বপুরুষেরা বহু বছর আগেই বাংলাতে চলে এসেছিলেন।) অন্যদিকে ভারতের মোট বাংলা ভাষীর সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি যার মধ্যে ৮ কোটিই পশ্চিমবঙ্গে। তার মানে প্রায় দুকোটি বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকেন। মনে রাখতে হবে এঁর মধ্যে বহু বছরের প্রবাসী বাঙ্গালিরাও আছেন (অর্থাৎ কিশোরকুমারের মতো কেউ)। আন্তঃরাজ্য পরিযান একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এবং যেখানে উপার্জনের সুযোগ বেশী মানুষ সেখানেই যেতে চাইবেন। বহুবছর ধরেই এমনটাই ঘটছে। সেদিক থেকে দেখলে ১২১ কোটির একটি দেশে (২০১১ র গণনা অনুসারে) যদি ২ কোটি বাংলা ভাষী পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকেন, তা কোনভাবেই অস্বাভাবিক নয়, বেআইনি অনুপ্রবেশের পরিচায়ক তো নয় নি। বিশেষত যেখানে কাজের সু্যোগহীন বলে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গে ১ কোটি অ-বাংলাভাষী থাকছেন।

    তাহলে কি দাঁড়ালো? কে ঠিক? সুজয়, অনামিকা, পলাশদার ব্যক্তিগত  অভিজ্ঞতা? না ভারতীয় জনগণনার নৈর্ব্যক্তিক তথ্য? আগের বার যা বলেছিলাম সেটাই একটু অন্যভাবে বলি। আসলে কেউই ভুল নয়। আমরা আমাদের সারাদিনে খুব বেশী হলে ৫০ জন লোকের সাথে কথা বলি। সেখানে একজন বা দুজন বাংলাদেশির সাথে আমাদের কথা হলে আমরা ভাবি দেশ বোধ হয় অনুপ্রবেশকারীতে ভরে গেল। ঠিক যেভাবে কোন জাতিবিদ্বেষী সাহেব কফিশপে, পাশে বসে কোন ভারতীয়কে কফি খেতে দেখলে ভাবেন দেশটা “বাদামী” অনুপ্রবেশকারীতে ভরে যাচ্ছে। কিন্তু বেআইনি অনুপ্রবেশকারী ধরার জন্য দেশে আইন বরাবরই ছিল। নতুন কোন আইন, তাকে যুক্তিগ্রাহ্য হতে গেলে তার স্বপক্ষের যুক্তি আসতে হবে নৈর্ব্যক্তিক তথ্য থেকে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রসূত কিছু গল্পের ভিত্তিতে একটা ১২১ কোটি মানুষের (এটা ২০১১ র জনসংখ্যা, এখন আরও বেশী) দেশে এরকম আইন করা যায় না যা কিছু অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠাবার পাশাপাশি বহু ভারতীয়কে অশেষ দুর্দশায় ফেলবে। কিন্তু তথ্য কি মানুষের বিশ্বাস পাল্টাতে পারে? আমার আগের নিবন্ধটি পড়ার পরে আমার পরিচিত একজন আমাকে জানালেন যে তিনি এসব তথ্য বিশ্বাস করেন না। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৮০ র পরে আসা অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ৫ কোটি (অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার অর্ধেক)! এটা তিনি জানেন। যদিও কিভাবে জানেন, অর্থাৎ তথ্যসূত্র কী তা আমাকে জানাতে পারেন নি। তার মানে আসলে তিনি জানেন না, বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস নিয়ে আসলে আমার সত্যি কিছু বলার নেই। বিশ্বাস মানুষ অনেক কিছুতে করে – ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী, চাঁদের চরকা কাটা বুড়ি। এসবের স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই, এটুকুই বলা যায়। আর যা বিশ্বাস তা ব্যক্তিগত থাকাই বাঞ্ছনীয়, তা রাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হয়ে ওঠা কখনোই কাম্য নয়।

    ১ https://eisamay.com/editorial/post-editorial/post-editorial-on-citizenship-amendment-act/73981400.cms
    ২ https://eisamay.com/editorial/post-editorial/post-editorial-on-infiltration/74590772.cms

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • প্রবন্ধ | ২২ জুলাই ২০২৫ | ২৬৮১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যদুবাবু | ২৩ জুলাই ২০২৫ ০৩:২৪732618
  • অনির্বাণদা, এই লেখাটা গুরুতে পোস্ট করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। 
     
    "তথ্য কি মানুষের বিশ্বাস পাল্টাতে পারে?" - এর উত্তর আমাদের জানা। তাও, আমাদের বারবার নৈর্ব্যক্তিক তথ্য দিয়েই মিসইনফরমেশনের বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হবে। 
  • বিশ্বাস | 60.105.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ০৮:৩২732620
  • যিনি বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশ করেছেন তিনি তো আর ঘোষণা করবেন যে আমি বাংলাদেশী! - এইজন্যই পুরো অনুপ্রবেশ সমস্যাটা ২০১১ সালের সেনসাসের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে না। ১০০ জন অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে ১০ জন হয়তো ভুয়ো রেশন কার্ড যোগাড় করে সরকারী নথির আওতায় এসেছেন, সেনসাসে তাঁদের হিসাব ধরা হয়েছে (২০১১ সালে আধার ছিল না)। বাকি ৯০ জন সেনসাসের তালিকাতেই আসেন নি। এনারা তালিকার বাইরে, সেনসাসের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের বাইরে। 
  • lcm | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১০:৪৫732621
  • না, ইন্ডিয়াতে সেনসাসে রেশন কার্ড লাগে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনগণনা করা হয়। 
    In India, the census process relies on self-declaration by individuals during the house-listing and population enumeration phases.  The census asks questions of people in homes and group living situations, including how many people live or stay in each home, and the sex, age and race of each person. The goal is to count everyone once, only once, and in the right place. 
  • প্রশ্ন | 219.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১১:৩০732622
  • সেনসাস কর্মীরা "বাড়ি"তে বা "গ্রুপ লিভিং সিনে" এলে অনুপ্রবেশকারী কি নিজের তথ্য দেন? কর্মীরা পাড়া থেকে চলে গেলে ফিরে আসেন? অনুপ্রবেশকারীর কি বাড়ি বা গ্রুপ লিভিং থাকে?   
  • অরিন | 2404:4404:4405:700:1b6:f9c7:dfea:***:*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১১:৩২732623
  • যদুবাবু ," তথ্য কি মানুষের বিশ্বাস পাল্টাতে পারে ?"
    প্রসঙ্গে একটা কথা মনে হল 
    আমরা যদি অবৈধ অনুপ্রবেশের নিরিখে মানুষের বিশ্বাস কে p(belief about illegal immigration | illegal immigration) দিয়ে চিহ্নিত করি  আর সত্যিকারের অবৈধ অনুপ্রবেশ মানুষের বিশ্বাসের নিরিখে p(illegal immigration | belief about illegal immigration) দিয়ে চিহ্নিত করি , তার একটা অঙ্ক লেখা যায়: 
     
    P(belief | illegal immigration) = p(illegal immigration | belief) * p(belief) / p(illegal immigrration) 
     
    এখন কেউ ভাবছেন বলেই  যে অবৈধ অনুপ্রবেশ হচ্ছে তার সম্ভাবনা বাস্তবিক অর্থে প্রায় নগন্য, ফলত, আমরা মনে করতে পারি যে p(illegal immigration | belief) প্রায় শুন্যের কাছাকাছি কোন একটা সংখ্যা , অনির্বানের দেওয়া তথ্য ও যুক্তি অনুযায়ী p(illegal immigration) এর বাস্তবিক সম্ভাবনাও খুবই কম |
    সেক্ষেত্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ যাই হোক না কেন তার নিরিখে এই  যে "বিশ্বাস " ( যাকে  p(belief about illegal immigration | illegal immigration) বলে বলা যেতে পারে) ও তার যে সামগ্রিক বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে  তার নির্ধারক হয়ে ওঠে p(belief about illegal immigration ) , বা সাধারণ ভাবে অবৈধ অনুপ্রবেশ ব্যাপারটা সম্বন্ধে মানুষের ভাবধারা ও বিশ্বাস | এখন  এই সংখ্যাটা যত বাড়বে তত মানুষের মধ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশ , আসলে হোক না হোক , হচ্ছে মনে করার প্রবণতাও বাড়বে | এবং এই বিশ্বাস হয়তো মানসিকতার প্রতিফলন যার জন্য শুধু  তথ্য পেশ করে  পাল্টানো যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে  (যে কথাটা যদুবাবু লিখেছেন )| 
     
     
  • lcm | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৬732624
  • সেনসাসের সময় নাম, বয়স, ঠিকানা ছাড়া অন্য তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। অনেকের তথ্য নেই ও। বিশেষত বৃদ্ধ মানুষদের, এবং অনেক ক্ষেত্রে ​​​​​​​শিশুদের। 
    During the National Population Register (NPR) exercise, which is part of the census process in India, proof of residence documents are not required to be submitted. 
     
    কোনো বাড়িতে বিগত ছয় মাস থাকলে বা পরবর্তী ছয় মাস থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তার ডেটা এন্ট্রি করা হয় 
    The NPR exercise primarily focuses on collecting demographic details based on self-declaration from usual residents, meaning individuals living in a specific locality for at least six months and intending to stay there for another six months or more.
  • প্রশ্ন | 219.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১২:৫০732626
  • অনুপ্রবেশকারী কি সেসসাস কর্মীকে নাম, বয়স, ঠিকানা বলেন? অনুপ্রবেশকারী কি সেসসাস কর্মীর সাথে কথা বলেন? 
  • Anirban M | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১২:৫১732627
  • আমি যা লিখতাম সেটা লসাগু বাবু (বা দিদি) বলে দিয়েছেন। আমার নিজের কাছে ২০১১ সেন্সাস-এর গণক এসেছিলেন। কোন নথি লাগে না। এই নিয়ে নবনীতা দেবসেন এর একটা মজার গল্প ছিল। সেখানে গণক বাড়ি বাড়ি ঘোরার কষ্ট না করে পাড়ার ধোপার থেকে খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।  
    যাঁরা নিজেদের "ব্যাপক অনুপ্রবেশ হচ্ছে" এরকম বিশ্বাস থেকে সরতে চাইছেন না কিন্তু খোলা মনে ব্যাপারটা বুঝতে চাইছেন,তাঁরা অন্য ভাবে ভেবে দেখতে পারেন। ধরা যাক আপনার মনে হয় সেনসাসের ভিত্তিতে অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা কে অ-প্রমাণ করা যায় না। একবার ভেবে দেখুন,এই যে অনুপ্রবেশ নিয়ে এত হল্লা তার তথ্য ভিত্তিটা ঠিক কী? যদি বলেন আমি চারজন অনুপ্রবেশকারী চিনি বা সরকারি গোপন রিপোর্ট তাহলে তো আর আলোচনা এগনো যায় না। তবে যদি কোন পাবলিক ডেটা থাকে জানান,আমি সেটা বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করব। 
  • Anirban M | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৩:০০732628
  • অরিন, আপনি যে পদ্ধতিটা বলছেন সেটা বেসিয়ান আপডেটিং এর নিয়ম মেনে চলবে। এই নিয়মে যত তথ্য আসবে সবাই আসল সত্য জানতে পারবে। অর্থনীতির মডেলে সাধারণত এই নিয়ম সবাই ব্যবহার করে। কিন্তু আচেমোগ্লু একটা তাত্ত্বিক মডেল লিখে দেখিয়েছিলেন এই বিলিফ কনভারজেন্স নাও হতে পারে। আমি আচেমোগলুর এই সেমিনারটাতে উপস্থিত ছিলাম। উনি চমৎকার একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন,ইরাকে গণহত্যার অস্ত্র পাওয়া গেল না। এতে বুশ বিরোধীরা বলবে দেখো এ আমরা আগেই জানতাম। কিন্তু বুশ পন্থীরা বলবে ব্যাটা সাদ্দাম ভালো লুকিয়েছে অস্ত্রগুলো,তাই পাওয়া গেল না। অর্থাৎ নতুন তথ্য এল কিন্তু বিশ্বাস কনভার্জ করল না। আর জি করের ঘটনাতেও কিন্তু তাই হল। সিবিআই চার্জশিট দেওয়ার পরে কেউ বলল,আগেই বলেছিইলাম আবার কেউ বলল এমন ভাবে প্রমাণ লোপাট করেছে যে কিছু করা গেল না। পৃথিবী আরো বেশি বেশি পোলারাইসড হচ্ছে। তথ্যের আলোতে বিশ্বাসের মিলন ক্রমশই অলীক হয়ে উঠছে। 
  • ব্যাপক অনুপ্রবেশ | 219.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৩:১৬732629
  • হচ্ছে কি না সেটা শুধু সেনসাস তথ্য বিশ্লেষণ করে হয়তো বুঝতে পারা যায়না। অনুপ্রবেশকারীরা সাধারণত সরকারি কর্মীদের এড়িয়ে চলেন। বহু দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ হয়। তারা  কি সেসসাস তথ্য বিশ্লেষণ করে?
  • অরিন | 2404:4404:4405:700:9e4:23db:e0c6:***:*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৩:৩২732630
  •  "তথ্যের আলোতে বিশ্বাসের মিলন ক্রমশই অলীক হয়ে উঠছে। "
     
    এই ব‍্যাপারটা অনস্বীকার্য। 
    দেখা যাচ্ছে এই এক রকমের প‍্যাটারণ কোভিডের সময় কাজ করেছে। 
    একেক সময় মনে হয় যে অস্ত্রে বিশ্বাসের মিলন অলীক হচ্ছে সেই অস্ত্রেই একে বধ করতে হবে। 
  • Anirban M | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৩:৩৬732631
  • করে। অনেক পেপার আছে। এই পেপারটা পড়ে দেখতে পারেন। পুরোটা পড়তে হবে না। ডেটা সেকশন দেখুন (Pg 305)। Warren, R., & Warren, J. R. (2013). Unauthorized immigration to the United States: Annual estimates and components of change, by state, 1990 to 2010. International Migration Review47(2), 296-329.
    সুবিধের জন্য কোট করে দিলাম।
    "Estimates of the total foreign-born population – separately by state and byyear of entry into the country – were obtained from the 2000 decennialcensus (for those moving to the U.S. between 1990 and 1999) and fromthe 2010 ACS (for those moving to the U.S. between 2000 and 2009)"
  • lcm | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৪:২৬732633
  • প্রশ্নটা অনুপ্রবেশ হচ্ছে কিনা তা নিয়ে নয়, অনুপ্রবেশ যে হয় তা নিয়ে তেমন সংশয় নেই, প্রশ্নটা "কাতারে কাতারে" "কোটি কোটি" লোকের অনুপ্রবেশ হচ্ছে কিনা তাই নিয়ে। এবং, এই চিন্তাধারায় কগনিটিভ বায়াস (মানসিক পক্ষপাতিত্ব) কতটা আছে তাই নিয়ে। এখানে অনির্বান কিছু উদাহরণ দিয়েছেন। 
     
    যেমন একটি প্রচলিত ধারণা হল - ভারতের জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে, এবং এর জন্য মুসলিমরা দায়ী। অথচ তথ্য দেখলে - 
    ২০০১ সেনসাস - হিন্দু ৮২.৭ কোটি, মুসলিম ১৩.৮ কোটি 
    ২০১১ সেনসাস - হিন্দু ৯৭ কোটি, মুসলিম ১৭ কোটি 
    দেখা যাচ্ছে যে এই দশ বছরে  জনসংখ্যা বেড়েছে ১৭ কোটির মতন , তার মধ্যে হিন্দু বেড়েছে প্রায় ১৪ কোটি, মুসলিম ৩ কোটি ... কাতারে কাতারে মানুষের সংখ্যা বাড়ার কারণ খানিকটা আন্দাজ করা যাচ্ছে ... এক্ষেত্রে কিছু মানুষ % গ্রোথ দিয়ে এটার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন, কারণ তারা চাইছেন এর পুরো দায়টা মুসলিমদের ওপর চাপিয়ে দিতে ... এটা এক ধরনের বায়াস - কনফার্মেশন বায়াস  ...
     
    তো ... এইসব  ... আর কি ...  
  • কাতারে কাতারে | 219.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৪:৪৩732635
  • কোটি কোটি লোকের অনুপ্রবেশ হচ্ছে কিনা 2011 সালের সেনসাস ডেটা বিশ্লেষণ করে জানা যাবে কি? জানি না। 
     
    আম্রিকার উদাহরণ দেখলাম। সেখানে বাইডেন সীমান্ত খুলে দিলেন। বছর তিনেক "কাতারে কাতারে" "কোটি কোটি" লোকের অনুপ্রবেশ ঘটলো। আম্রিকি পাবলিক ক্ষেপে গিয়ে রিপাবলিকানদের ভোট দিল। রিপাবলিকানরা এখনো সেই ইস্যুতে করে খাচ্ছে। 
  • যদুবাবু | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৮:২৫732640
  • লসাগুদা যথার্থই বলেছো, কনফার্মেশন বায়াস। এ এক অদ্ভুত জিনিষ। আমার যেমন মনে হয়েছে একটা থ্রেশহোল্ডের উপর চলে গেলে, মানে খুব দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেলে, তাকে অন্য কিছু বোঝাতে গেলে সে নানানানা বলে আরও আঁকড়ে ধরে।  
    অরিনদা, আমি যাকে বলে এক্কেবারে কার্ড-ক্যারিয়িং কড়া বেইজ়িয়ান। বেইজ থিওরেম দেখলেই পুলক জাগে। কিন্তু এখানে বোধহয় একটু খটকা থাকছে, মানে এতোই কী সরল ফর্মুলেশন? হয়তো সেটাই অনির্বাণদা যাকে নন-কনভারজেন্স বলছে, আচেমোগ্লুর সেই টকের বা পেপারের কোনো লিঙ্ক আছে কি না খুঁজে দেখতে হবে। ইরাকের উদাহরণটা খুব মনে ধরেছে। 
  • r2h | 134.238.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৯:০৫732641
  • সেনসাসে অনুপ্রবেশকারীদের তথ্য আসে না - খুবই যৌক্তিক কথা। কিন্তু সরকারের তো কিছু একটা মেকানিজম আছে নিশ্চয়, ব্যাপারটা জানার ব্যাপারে। তো, কী করে জানা যাচ্ছে? নাকি ঐ দ্যাখো রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ে বাংলায় কথা বলে, নিশ্চয় অনুপ্রবেশকারী- এরকম?
    এ আর এমন কী, কলকাতায় পথে ঘাটে নিজেদের মধ্যে পূর্ববঙ্গীয় ভাষায় কথা বলাতে কতবার কতলোক বাংলাদেশে কোথায় বাড়ি জিজ্ঞেস করেছে। অনুমান করি ঐসব লোকেদের কেউ কেউ পরদিন চায়ের ঠেকে গিয়ে দু'জন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী দেখলাম বলে গল্প করেছে। তো, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, দেখলাম শুনলাম অমুকে বলেছে - ঐসব এই কারনে গোলমেলে। কী ভাবে জানা যাচ্ছে, সেটা জানা দরকার। না হলে ব্যাপারটা ভূতের গল্প হয়ে দাঁড়ায়।
    এবার লোকজন কি আর আসেন না? আমাদের ওদিকেই তো, এখন কী হয় জানি না, চতুর্দিকে তারকাঁটা, তিরিশ বছর আগে প্রায় অবাধ গতায়াত ছিল। না থেকে উপায়ই বা কী, যাঁরা আসা যাওয়া করতেন, তাঁদের মতামত তো কেউ নেয়নি দেশ ভাগ করার আগে। খেয়ে পারে বাঁচতে তো হবে, রুজি রোজগারের ব্যাপার আছে। তবে তখন ব্যাপার স্যাপার ঢিলেঢালা ছিল। এসব নিয়ে মোটের ওপর মানুষের মনে সহানুভূতিও ছিল, সাধারন মানুষ অন্য মানুষকে রাষ্ট্রের ওপর স্থান দিতেন হয়তো।

    তো সে যাই হোক, এও আমার ব্যক্তিগত দেখা-ই। সরকার কী করে অনুপ্রবেশের ব্যাপারটায় নিশ্চিত হচ্ছে সেটা খোলসা করে বলা উচিত।

    ওদিকে সর্বত্র সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী, এত লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশ হচ্ছে কী করে তাই বা কে জানে।
     
  • কনফার্মেশন বায়াস | 72.208.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ১৯:৫৮732642
  • সেনসাসে অনুপ্রবেশকারীদের তথ্য সেভাবে আসে না হয়তো। আর ২০১১ সেনসাসের তথ্য দিয়ে এখনকার অনুপ্রবেশ কি জানা যাবে? তবে সরকারের কাছে তথ্য থাকে বোধহয়। আমাদের আইবি আছে। আম্রিকায় আছে এফবিআই। 
  • &/ | 107.77.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ২০:১৩732644
  • খুবই  দরকারি  আলোচনা ,  সমাজমাধ্যমে  লোকজন  তো এই ব্যাপার নিয়ে  ক্ষেপে  বোম , প্রচণ্ড  ঝগড়া  চলে,  দুপক্ষই  তেড়ে তেড়ে  ওঠে 
  • স্বাতী রায় | 2001:4490:4051:e6f5:e4d7:1648:9498:***:*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ২০:১৪732645
  • এই লেখাটার জন্য একটা বড় ধন্যবাদ। 
     
    সেই যে ২০২১ সাল নাগাদ একটা অর্ধেক জন গণনা হল কি হল না বোঝা গেল না, যেটা আবার উইথড্র ও করা হল, তখন একটা কাগজ রিপোর্টের কিছু কিছু অংশ তুলে দিয়েছিল। তার মধ্যে একটা রাজ্য ধরে ধরে ইন মাইগ্রেশন আর আউট মাইগ্রেশন এর বিশদ ডেটা ছিল। এই রকম কাজ করার আগে যে কোন লজিক্যাল মানুষ তো আগে সেই সব রিপোর্ট প্রকাশ করবে। তাহলেই তো অনেক দুধ কা দুধ, পানি কা পানি আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু এই দেশে সে সব হবে না। সবটাই অন্ধ বিশ্বাসের উপর দিয়ে চলবে।  
    আর কোন মানুষের সেনসাসের ডেটা বিশ্বাস নাই হতে পারে, কিন্তু দেশ তো আর একটা মানুষ না যে অন্ধ বিশ্বাসে ভর করে চলবে, তার তো একটা লজিক্যাল স্ট্যান্ড পয়েন্ট থাকার কথা। এই সব ঔচিত্য বোধ ই লোপ পেয়ে যাচ্ছে। 
     
    আমাকে সেদিন একজন বললেন চারপাশে কত বাঙাল কথা বলা লোক বেড়েছে! এবার নিউটাউনের শেষ প্রান্তে ফ্ল্যাট কিনে থাকতে গেলে তাঁর অভিজ্ঞতার সঙ্গে কি আলিপুর এর পশ এলাকার বাসিন্দার অভিজ্ঞতা মিলবে? 
     
    আবারও বলি লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। 
  • প্রতিভা | 152.58.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ২০:৩২732646
  • পশ্চিমবঙ্গকে করিডর করে গুজরাতে বা বরেলিতে মিষ্টির দোকান খুলে বসা বাঙালিকে বাহবা দেওয়া জাতীয় কর্তব্য!  বাপ্রে কী তেজ, কী কর্মক্ষমতা!  কিন্তু মাঝে শুনেছিলাম বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ভারতের থেকে এগিয়ে গেছে, কিন্তু তখনও বলা হচ্ছিল অনুপ্রবেশ ঘটছে। সেটা যেন কেমন একটা কথা। জল ঢাললে নীচে না পড়ে ওপরে ওঠার মতো। তখন বলা হল সং্খ্যালঘুর দুর্দশার কথা। কিন্তু তাও তো নাকি মাত্র ২% রয়ে গেছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত, তার ২%, আর ভারতে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা, খুব ভজকট অঙ্ক একখান! 
    তবে বাংলাদেশী মুসলমান বন্ধুরা অনেকে ওদেশের সংখ্যালঘুদের সম্বন্ধে বলেন, ওদের প্রত্যেকের ইন্ডিয়ায় একটা কইরা বাড়ি আছে। কারও থাকতে পারে, সকলের কী করে থাকবে! 
     
    তাহলে পরিযানের সঙ্গে অনুপ্রবেশকে গুলিয়ে দিলে সবচেয়ে লাভ কার সেই অঙ্কটা বেশ সহজ মনে হয়।  এ ব্যাপারে সীমান্তের দুপারের বাসিন্দাদের কথা শোনা দরকার । সত্য জানলে তারাই জানেন। আমি তো আন্তর্জাতিক সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেবার পক্ষে।
     
    যাকগে, ব্যাপারটা ছিল এক, হয়ে দাঁড়াল আর এক!  কী করব, অঙ্কে আমি চিরকাল কাঁচা। যদুবাবু ধইন্যবাদ, ভালো একখান লেখা পড়ানোর জন্য।
  • lcm | ২৩ জুলাই ২০২৫ ২২:২৬732647
  • ২০১১ সালের ডেটা দিয়ে ২০২৫ সালে কি হচ্ছে সেটা বলা সম্ভব নয়, সেটা ঠিক, মাঝে প্রায় ১৫ বছর রয়েছে, সেরকম চেষ্টা কেউ করছেও না, পয়েন্টটা হচ্ছে মানুষের বায়াস আর মিসইনফরমেশন নিয়ে.... 

    এসবের মধ্যেও কিছু সংখ্যা কিন্তু লোকে বিশ্বাস করে... যেমন ২০২৫ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যা মোটামুটি ১৪০ কোটির ওপর - এটা লোকে বিশ্বাস করে.. কিন্তু যখন এই একই সঙ্গে রিলিজিয়ন এস্টিমেটের যেসব সংখ্যা আসে - হিন্দু ৭৭%, মুসলিম ১৫% - সেগুলো লোকে পুরো বিশ্বাস করতে চায় না ...

    আর, বায়াস আর মিসইনফরমেশনের এর ব্যাপারে ইন্ডিয়ার থেকে অনেক অনেক এগিয়ে ইউএস...  আমেরিকা গুল সাম্রাজ্য... গুল এর হোলসেল চাষ... এই ধরুন - বাইডেন বর্ডার খুলে দিয়েছে - বর্ডার যেন একটি গেট, একজন চাবি দিয়ে খুলে দিলেন, আর একজন এসে তালা লাগিয়ে দিলেন... ওবামার প্রথম তিন বছরে (২০০৮-২০১১) ইউএসএ তে রেকর্ড পরিমান ৩.১ মিলিয়ন মানুষকে অন্য দেশে ডিপোর্ট করা হয়েছিল, আম্রিকার ইতিহাসে যে কোনো প্রেসিডেন্টের সময়ের রেকর্ড সংখ্যক... কিন্তু মানুষের পারসেপশন তথ্যভিত্তিক নয় ... 
  • &/ | 107.77.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ২৩:০৬732648
  • গুল ই  স্তান ,  গুলিস্তান , গুল  বাহার  , গুল বদন --- এইসবও  বলা  যায়  :))
  • r2h | 134.238.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৫ ২৩:১৪732649
    • স্বাতী রায় | ২৩ জুলাই ২০২৫ ২০:১৪
    • ...আমাকে সেদিন একজন বললেন চারপাশে কত বাঙাল কথা বলা লোক বেড়েছে! এবার নিউটাউনের শেষ প্রান্তে ফ্ল্যাট কিনে থাকতে গেলে তাঁর অভিজ্ঞতার সঙ্গে কি আলিপুর এর পশ এলাকার বাসিন্দার অভিজ্ঞতা মিলবে? ...
       
     
    এইটা নিয়ে একটা বক্তব্য আছে। ত্রিপুরা ও আসামের স্বচ্ছল বাঙালীদের কলকাতায় একটা অন্তত আস্থায়ী আস্তানা বানিয়ে রাখার চল বহু কালের। বড়লোকেদের তো আবশ্যক, আর ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাপারটা দরকারীও বটে।
    কলকাতা কেন্দ্রিক ব্যবসা ক্ষেত্রে আগরতলার কিছু ভারী নামও আজকাল শুনতে পাই, যেমন শ্যামসুন্দর জুয়েলার্স, বা সিনেমা প্রযোজক কী যেন ভদ্রলোকের নাম, আগরতলার রুপসী সিনেমা হলের মালিকপক্ষ। আগরতলার ব্যবসায়ীদের (সংখ্যাটা একেবারে কম না) কলকাতায় যাঁর যত বিলাসবহুল আবাসনে আস্তানা তাঁর তত রবরবা।
    এবার কয়েক দশক আগে পর্যন্ত পূর্ববঙ্গীয় ভাষাভাষী লোক কলকাতায় এসে এই রে কেউ না বাঙাল বলে এই ভেবে সিঁটিয়ে থাকতো, এয়ারপোর্টমুখী অটোরিক্সায় চাপার সময় থেকেই কলকাতার ভাষায় কথা বলার অভ্যাস চালু হয়ে যেত। এখন সেটা কমে গেছে। আমরা পথে ঘাটে নিজেদের মধ্যে নিজেদের বুলিতেই কথা বলতাম, অনেকে তো সর্বত্রই বলেন। এবার কলকাতার লোকেদের তাদের একধারসে বাংলাদেশের লোক ভেবে ফেলার একটা প্রবণতা ছিল, এখন কী অবস্থা জানি না।
    তো, 'বাঙাল' বলা লোক বেড়ে যাওয়া বাস্তবিক সম্ভব, তবে তার মানেই তাঁরা বাংলাদেশী কিনা, সেটা কূট প্রশ্ন।
    আর রিসিভিং এন্ডে থাকলে বোঝা যায়, ব্যাপারটা মোঙ্গলয়েড গড়ন দেখে চাইনিজ, চিংকি ইত্যাদি বলে মার্কা মেরে দেওয়ার থেকে খুব বেশি আলাদাও না!
    এইসব যখন মনে হয় তখন ভাবি ঐসব বাঙালী ঐক্য টৈক্য কবির সুন্দর কল্পনা বই কিছু না। উত্তর ভারতে বাঙালী ধরে পোঁটলা পেটা এইসবেরই একরকম একস্টেনশন!
  • অরিন | 2404:4404:4405:700:9e4:23db:e0c6:***:*** | ২৪ জুলাই ২০২৫ ০০:৫৪732651
  • "কিন্তু এখানে বোধহয় একটু খটকা থাকছে, মানে এতোই কী সরল ফর্মুলেশন?"
     
    যদুবাবু, বেইসিয়ান ইকুয়েশন আমি ফরমুলেশনের সারল‍্যের কথা ভেবে লিখিনি, কিন্তু একটা ভাবনা মাথায় এল অনির্বাণ বাবুর লেখাটা পড়ে, তাই লিখলাম। আমার মনে হয় যে কোন বিশ্বাস conditional on facts হয়ত এক ধরণের I examined বিশ্বাসের function । আজকাল চারপাশের লোকজনদের দেখি, তাতে এইটাই মনে হয় যে বহু লোক হুজুগের পাল্লায় পড়ে কিছু একটাকে "বিশ্বাস" করে, তার conditioning fact যাই হোক না কেন। তাই লিখলাম। 
    অনির্বাণ ড‍্যারন আচেমোগ্লুর ergodic belief network এর পেপারটার কথা হয়ত বলছিলেন, এইখানে দেখুন
     
     
    সেটা একটা দিক। 
    আমি হয়ত অতি সরলীকরণ করেছি, বেইসিয়ান ইকুয়েশন এক্ষেত্রে একচি metaphor মাত্র। 
  • যদুবাবু | ২৪ জুলাই ২০২৫ ০১:০০732652
  • "বহু লোক হুজুগের পাল্লায় পড়ে কিছু একটাকে "বিশ্বাস" করে, তার conditioning fact যাই হোক না কেন" - এগ্রিড। 

    "এইসব যখন মনে হয় তখন ভাবি ঐসব বাঙালী ঐক্য টৈক্য কবির সুন্দর কল্পনা বই কিছু না" - এটাও (আনফরচুনেটলি) এগ্রিড। তবে কি, কখনো সখনো অল্পস্বল্প ডিলিউশন আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। 
  • অরিন | 2404:4404:4405:700:9e4:23db:e0c6:***:*** | ২৪ জুলাই ২০২৫ ০১:২৯732653
  • "বহু লোক হুজুগের পাল্লায় পড়ে কিছু একটাকে "বিশ্বাস" করে, তার conditioning fact যাই হোক না কেন" - এগ্রিড। "
    এই এগ্রিডের বিষযে মনে হল যে এই ক্ষেত্রে হয়ত আদৌ conjugacy র কথা ওঠেই না, কেননা যারা (অন্তত আমি ভাবছি) তথ‍্য বিশ্লেশন দেখে  তাদের ধারণা পরিবর্তন করবে, তাদের prior বা তারা আদৌ আমার অন্তত মনে করা মত পরিবর্তন করা জনতার মধ‍্যে পড়েন না। 
    Updating হয়ত আদৌ হয়ই না, :-)
  • স্বাতী রায় | 2001:4490:4051:43ed:862:e752:a249:***:*** | ২৬ জুলাই ২০২৫ ২১:৫৪732731
  • @r2h অবশ্যই বক্তব্য টা একদমই সত্য। আমার প্রতিবেশী ছিলেন আগরতলার এক জজ বাবু , তিনি দিব্য বাঙাল বলতেন .
     
    আরো একটা ব্যাপার আছে নিউ টাউন বাড়তে বাড়তে এখন যেসব গ্রাম গঞ্জকে ছুঁয়ে দিয়েছে তার কিছু কিছু অংশে এমনিতেই ১৯৭১ এর আশে পাশে বাঙাল রা এসে বসবাস করেছে। আমি এমন এক দু জনকে চিনিও। এবার এঁরা খেটে খাওয়া মানুষ। নিউ টাউনে কাজের ধান্দায় আসা বারণ তো কেউ বলেও নি। আর শহুরে  শিক্ষিত মানুষ যত টা সহজে বিভিন্ন ডায়ালেক্টের মধ্যে সুইচ করেন এদের কথায় কিন্তু টান টা পরিষ্কার। সেসব শুনলে আর এমন ভাবলে তো খুব সমস্যা .আমি তো অনেক ভেবে দেখেছি এক ডি এন এ টেস্ট করে আমরা যে বাঁদর থেকে উদ্ভুত সেটা প্রমাণ করা বরং সহজ কাজ মনে হয় .
  • অরিন | 2404:4404:4405:700:1de3:9506:21e2:***:*** | ২৭ জুলাই ২০২৫ ০৩:৫৬732745
  • "তাহলে পরিযানের সঙ্গে অনুপ্রবেশকে গুলিয়ে দিলে সবচেয়ে লাভ কার সেই অঙ্কটা বেশ সহজ মনে হয়।  এ ব্যাপারে সীমান্তের দুপারের বাসিন্দাদের কথা শোনা দরকার । সত্য জানলে তারাই জানেন। আমি তো আন্তর্জাতিক সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেবার পক্ষে।"
     
    এই কথাটা লেখার জন‍্য প্রতিভাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ থেকে লোকে জীবিকার জন‍্য কাজ করতে এলে এবং যদি করিডরই হয়, কেউ যদি তাকে কাজের উপযুক্ত মনে করে কাজ দেয় তাহলে কার কোথায় অসুবিধে? যারা কাজ দিচ্ছে তারা নিশ্চয়ই জেনে শুনেই কাজ দিচ্ছে। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন