এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  উচ্চশিক্ষার আনাচকানাচ

  • বৈদিক গণিত বিপন্ন?

    সুনন্দ পাত্র
    আলোচনা | উচ্চশিক্ষার আনাচকানাচ | ২৩ জুলাই ২০২৪ | ৩২২৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • ছবি : রমিত



    গত ১২ই জুলাই, শুক্রবার, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পনেরোতম আন্তর্জাতিক গণিত-শিক্ষণ কংগ্রেস (International Congress of Mathematics Education; ICME)-এর সম্মেলন থেকে অধ্যাপক জয়শ্রী সুব্রহ্মনিয়নকে (SRM University, Andhrapradesh) নিরাপত্তা-আধিকারিকরা প্রহরা দিয়ে বের করে দেন। তাঁর ব্যাজ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং রেজিস্ট্রেশন প্রত্যাহার করা হয়। কারণ হিসেবে তাঁকে বলা  হয়, যে, সেদিন সকাল ন-টায় অধ্যাপক আশিস অরোরা-র ‘Reviving Ancient Wisdom: Vedic Mathematics for Modern Learning’ শীর্ষক অধিবেশনে তাঁর করা কিছু মন্তব্যকে কিছু অন্য অংশগ্রহণকারীর শাসানিমূলক ও ভীতিপ্রদ মনে হয়েছে। যদিও পরেরদিনের একটি প্যানেলে অংশগ্রহণ করার জন্যে তাঁকে একটি সাময়িক ব্যাজ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু অধিবেশন-অন্তে আবার তাঁকে প্রহরা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।  

    কতটা আতঙ্কের উদ্রেককারিণী এই ভারতীয় গণিত-অধ্যাপক? কতটা ভয়ঙ্কর তাঁর উপস্থিতি, যার ফলে তাঁকে শিক্ষকদের সম্মেলন থেকে বের করে দিতে হয়? ‘বৈদিক গণিত’ ঠিক কীরকম বিপন্ন হয়েছিল তাঁর উপস্থিতিতে? এসব কথা জানতে, সেই অধিবেশনেরই আরেক শ্রোতা এবং ওই সম্মেলনের আরেক নিমন্ত্রিত বক্তা, ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক থিওডর চাও (Theodore Chao)-এর বয়ান পড়ে ফেলুন। মূল লেখাটি ইংরেজিতে, পাবেন এখানে। লেখাটি অধ্যাপকের অনুমতিক্রমে বাংলায় অনুবাদ করে দেওয়া হল —



    “আমার নাম ‘থিওডর চাও’; ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির অঙ্কের অধ্যাপক। ২০২৪-এ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে হওয়া ICME সম্মেলন আমায় এ বছরে একজন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ করে সম্মানিত করেছে। এ আমার দ্বিতীয় ICME সম্মেলনে আসা, দুনিয়া জুড়ে অঙ্ক শেখানোর নানা দিক নিয়ে শুনতে, আলোচনা করতে ভালোবাসি বলে আর অতীতের অবিচার কীভাবে নির্মূল করা যায় শিখতে চাই বলেই অংশগ্রহণ করেছি। গতকাল—১২ই জুলাই, সকাল ন-টায় ‘Reviving Ancient Wisdom: Vedic Mathematics for Modern Learning’ (প্রাচীন জ্ঞানের পুনরুজ্জীবন: আধুনিক শিক্ষায় বৈদিক গণিত) নামের একটি অধিবেশন ছিল, আই কে গুজরাল পাঞ্জাব প্রায়োগিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশিস অরোরা যার বক্তা ছিলেন।

    অঙ্ক আর অঙ্ক কষতে শেখানো পদ্ধতিগুলোর সঙ্গে সংস্কৃতির যোগাযোগ—বিশেষ করে ইউরোপের বাইরে যা হয়—তা নিয়ে আমার উৎসাহ আছে বলেই এই অধিবেশনে অংশগ্রহণ করা। ভারতের অঙ্কের ইতিহাস নিয়ে আমার বোধ সীমিত হওয়ায় এই অধিবেশন নিয়ে আমার বেশ কৌতূহল ছিল আর আমি খোলা মনেই এতে অংশগ্রহণ করি, বৈদিক গণিত বলে যা দেখানো হবে, তার সঙ্গে অবিচার আর নিপীড়নের সমস্যা জড়িয়ে থাকবে – এমন কোনো অনুমান ছাড়াই।

    ব্যক্তিগতভাবে, অধিবেশনটি আমায় হতাশ করেছে—যদিও জঘন্য মনে হয়নি। বৈদিক গণিতের উৎপত্তি আর ভারতে যাঁদের বৈদিক গণিতজ্ঞ বলে ভাবা হয়, তাঁদের নিয়ে অধ্যাপক অরোরা খুব সামান্যই বললেন। যেহেতু এই অধিবেশনটি আসলে এক কর্মশালা (workshop) হওয়ার কথা, তাই অঙ্কের সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে উনি আরো কিছু বললে, বা আমাদের সেই আলোচনায় জড়ালে আমার মনে হয় ভালো হত। তার বদলে এই ইতিহাস অংশটুকু উনি দ্রুত, পনেরো-কুড়ি মিনিটে বুড়ি ছুঁয়ে গেলেন।

    এরপর অধ্যাপক অরোরা নানা গাণিতিক পদ্ধতি উপস্থাপন করে তাদের বৈদিক গণিতের বিশেষ রূপ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেন। এই পদ্ধতিগুলিকে নিয়ে কাটাছেঁড়া, খেলাধুলো করার বা তাদের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা সুযোগ পেলে তা আমার খুবই চিত্তাকর্ষক মনে হত—সন্দেহ নেই। বদলে, অধ্যাপক অরোরা সোজা উদাহরণে চলে গেলেন, আর আলাদা আলাদাভাবে, অঙ্কের জাগতিক দুনিয়ার বাইরে কী করে এদের নির্দিষ্ট ব্যবহার করা যায়, তার বিস্তারিত বর্ণনা শুরু করলেন। নানা অ্যালগরিদমের মধ্যে বিভিন্ন নির্দিষ্ট মান ব্যবহার করলে তার থেকে ‘গুণ’ (multiplication) পাওয়া যেতে পারে – তার নানারকম পদ্ধতি অবধি আমি তাঁর বক্তব্য অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিলাম। এইসব উদাহরণ আমার নিজের বেশ ক্লান্তিকর লাগছিল, কারণ উনি আসলে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন আর শ্রোতাদের সঙ্গে আলোচনায় না গিয়ে উদাহরণ থেকে উদাহরণে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন। মাঝে একবার তো আমি বক্তৃতার মধ্যে মাথা গলিয়ে, যে সাদা বোর্ডটা উনি ব্যবহার করছিলেন, সেটাকে আরেকটু আলোকোজ্জ্বল জায়গায় আনার ব্যবস্থা করলাম, যাতে তা ঘরের অন্যান্য অংশ থেকে আরেকটু ভালো করে দেখা যায়, দর্শকমণ্ডলীকে আরেকটু উৎসাহিত করা যায়। আমি বেশ হতাশ হয়েছিলাম, কারণ এই বক্তৃতাটি কোনো কলেজের অঙ্কের সনাতনী ক্লাসের মতো (ভালো অর্থে নয়) শোনাচ্ছিল, যেখানে বক্তা, শ্রোতাদের সঙ্গে সংযোগস্থাপনের, বা নিদেন তাদের কী মনে হচ্ছে – তা শোনার ন্যূনতম চেষ্টাটুকুও করেন না।

    এই কর্মশালার এই ব্যাপারটি আমায় হতাশ করেছিল। আমার মতে, ICME-র সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হল – সকলে মিলে গণিত-শিক্ষণ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা-অন্বেষণ করা। অতএব, এই সম্মেলনে প্রদর্শিত যেকোনো বিষয়ের এক আবশ্যিক অংশ হওয়া উচিত – অঙ্ক শেখানোর কলাকৌশল আর মানবজীবনের সঙ্গে অঙ্কের যোগ নিয়ে আলোচনার সুযোগ।

    বক্তৃতা চলাকালীন যে অঙ্ক দেখানো হচ্ছিল, তা অনুসরণ করতে আমাদের—আমি ও আমার পাশে বসে থাকা একজন মহিলার—বেশ অসুবিধে হচ্ছিল। উপস্থাপনাটি যে গতিতে এগোচ্ছিল, তা আমাদের বেশ হতাশ করে। যা দেখানো হচ্ছিল, তা আমাদের কষা উত্তরের সঙ্গে মিলছিল না বলে আমরা আলোচনা করছিলাম—স্লাইডে মুদ্রণপ্রমাদ নেই তো? অধ্যাপক অরোরা এসব মানতে বা আমাদের ধারণা নিয়ে দর্শকমণ্ডলীর সঙ্গে আলোচনা করতে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন না। এই অবস্থায়, বোঝার, শিক্ষার সুবিধের জন্যেই একটু থামা দরকার ছিল বলে আমার মনে হয়েছে।

    অধিবেশনের প্রায় ৪৫ মিনিট অতিক্রান্ত হওয়ার পর শুনতে পেলাম, ঘরের একজন শ্রোতা প্রশ্ন করেছেন, যে আলোচনার কোনো সুযোগ আছে কিনা। বক্তা বললেন, সুযোগ পাওয়া যাবে, বলে বক্তৃতা চালিয়ে গেলেন। খেয়াল করলাম, আমি আর আমার চারপাশের শ্রোতৃমণ্ডলী সামান্য আশাহত হয়েছি, ওইসময় আলোচনা শুরু না হওয়ায়।

    সোয়া দশটা নাগাদ, যখন এই দেড় ঘণ্টার অধিবেশনের আর পনেরো মিনিট বাকি, অধ্যাপক অরোরা আলোচনার সুযোগ দিলেন। ততক্ষণে, বোর্ডে যা আঁক কষা চলছিল তা বোঝার আশা আমি জলাঞ্জলি দিয়েছি। অধ্যাপক জয়শ্রী সুব্রহ্মনিয়ন, যিনি আমার এক সারি পিছনে বসেছিলেন, হাত তুললেন।
    অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়ন দাঁড়ালেন, আর কয়েকটি গোছানো পয়েন্ট তুলে ধরলেন।

    প্রথমত, অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়ন বললেন, যে, বক্তা দেখানোর চেষ্টা করছেন দুটিমাত্র গণিতের ঘরানা বিদ্যমান, যার একটি ভারতীয়, অন্যটি ইউরোপীয়। তিনি প্রশ্ন করলেন – অধ্যাপক অরোরা অন্যান্য ঘরানা, যেমন চৈনিক, মিশরীয় বা ইনকা গণিত-এর অস্তিত্ব কেন অস্বীকার করছেন, আর এও উল্লেখ করলেন যে এই দৃষ্টিকোণ সমস্যাজনক।

    দ্বিতীয়ত, অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়ন প্রশ্ন করলেন – বৈদিক গণিতের ধারণাটি যে আসলে ভারতে এখনো বহুল প্রচলিত অন্যায় বর্ণাশ্রমকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, এই কথাটি অধ্যাপক অরোরা কেন এড়িয়ে গেলেন? ব্যক্তিগতভাবে আমার এই পশ্চাৎপট সম্পর্কে বিশেষ জানা ছিল না, তাই আমি বিষয়টি তুলে ধরার জন্যে অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের তারিফ করলাম। আমার মনে হয়, ICME-র মতো সম্মেলনে আমাদের আরো বেশি করে মানবজীবন আর অবিচার—বিশেষ করে অঙ্কের শিক্ষণে অবিচার—নিয়ে আলোচনা করা উচিত। এই তথ্যটির ফলে তাই, যাকে বৈদিক গণিত বলে দাগানো হয় – তার সাংস্কৃতিক ভূমিকা আর পরিবেশ বুঝতে আমার সুবিধে হল।

    তৃতীয়ত, অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়ন উল্লেখ করলেন, অধিবেশনের গৌরচন্দ্রিকায় বৈদিক গণিতের সূত্র হিসেবে যে সব বই ও প্রবন্ধের উল্লেখ করা হয়েছে, তার কয়েকটি ইতোমধ্যেই তার গৌরব হারিয়েছে। তিনি এমনকি এও উল্লেখ করলেন, যে, সূত্রে উল্লিখিত একজন লেখক তো ‘বৈদিক গণিত’ বলে কিছুর অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন। এই খবরটি আমার পছন্দ হল, কারণ এর থেকে আমার কাছে পরিষ্কার হল, যে, প্রোপাগান্ডা আর সংশোধনবাদী ইতিহাসের অস্তিত্ব শুধু আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের গণিতের প্রেক্ষিতেই গুরুত্বপূর্ণ – তা নয়, এর অস্তিত্ব সর্বব্যাপী। ভারতে গণিতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় যে বিতর্কের অস্তিত্ব আছে, তা জানতে পেরেও আমার ভালো লাগলো। সবচেয়ে বেশি তারিফ করলাম অন্যায্য বর্ণাশ্রমের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারটা – ব্রাহ্মণ্যবাদী আদর্শ যে নিজেকে এক এবং অদ্বিতীয় বর্ণ বলে উপস্থাপিত করে, আর ফলত নিজেকে গাণিতিক জ্ঞানের একমাত্র ধারক ও বাহক বলে মনে করে – এ সম্পর্কে আমার অজ্ঞানতার পরিধি নিয়ে আমার ধারণা আরো বলবৎ হল।

    আমার মতে, এই মন্তব্যগুলি আলোচনা শুরু করার পক্ষে দারুণ ভালো জায়গা। অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়ন যথেষ্ট উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন, যাতে ঘরের সকলে তাঁর কথা শুনতে পান, তাঁর কথা আবেগজড়িতও ছিল। তাঁর মন্তব্যগুলি শ্রদ্ধাশীল আর বৌদ্ধিক আলাপচারিতা শুরু করার পক্ষে আদর্শ ছিল।

    এরপর আরেকজন শ্রোতা উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, যে, বৈদিক গণিতের সমালোচনার জায়গা অবশ্যই আছে, তবে এই অধিবেশনের পক্ষে তা হয়তো যথাযথ নয়। এরপর, সাড়ে দশটা বেজে গেছিল বলেই, অধিবেশন সমাপ্ত হল আর আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম।

    অধিবেশন শেষ হওয়ার পর আমি অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের সঙ্গে দেখা করে তাঁর মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁর মন্তব্যগুলি ছাড়া আমি হয়তো খুবই হতাশ হতাম এই অধিবেশন নিয়ে, কারণ গণিত-শিক্ষণ কর্মশালার বদলে এটি যেন বড় বেশি গণিতের ক্লাস বলে মনে হয়েছিল। বৈদিক গণিতজ্ঞ, বৈদিক গণিতের সঙ্গে বাস্তব জীবনের অঙ্কের সম্পর্ক অথবা অঙ্ক শেখানো বা শিক্ষক-শিক্ষণের সঙ্গে তার সম্পর্ক – এই সমস্ত বিষয়গুলি অধিবেশনে বড় তাড়াহুড়ো করে বুড়িছোঁয়া করা হয়েছিল বলে আমার ধারণা।

    তাঁর মন্তব্যগুলি না করা হলে আমার মনে হত দেড়ঘণ্টার এক আপাত-কর্মশালা থেকে আমি কিছু না শিখেই বেরিয়ে এসেছি। গণিত-শিক্ষণের সঙ্গে আলোচিত বিষয়গুলির যোগ তৈরি করতে আর বৈদিক গণিতের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বুঝতে অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের মন্তব্যগুলি আমায় সাহায্য করেছিল।
    এই মন্তব্যগুলি থেকে আমি বুঝেছিলাম, যে ‘বৈদিক’ শব্দটি সমস্যাজনক, আর এইভাবে গণিত নিয়ে ভাবার সঙ্গে ক্ষমতা, বর্ণাশ্রম আর সামাজিক অনুক্রম জড়িয়ে রয়েছে। এই লেন্স দিয়ে দেখার ফলে বিশ্বজুড়ে গণিত শিক্ষণের প্রেক্ষাপটে আমি অধিবেশনটিকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।

    অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের মন্তব্যগুলিকে আমার কোনোভাবেই দ্বন্দ্বমূলক বা বৈরীভাবাপন্ন মনে হয়নি। এর ফলে ঘরে কোনোভাবে হিংসা বা হুমকির আবহ তৈরি হয়েছিল বলেও আমার মনে হয়নি। বরং, তাঁর মন্তব্যের ফলেই আলোচনাটি আরো বিষয়ানুগ হয়েছিল।

    এর পরে আমি জানতে পারি, যে এই অধিবেশনে করা মন্তব্যের ফলে অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নকে ICME সম্মেলন থেকে বহিষ্কৃত করা হয়। এই সিদ্ধান্ত আমার মতে অন্যায় এবং অন্যায্যরকম কঠোর। ICME-র যা লক্ষ্য, অধ্যাপকের মন্তব্যগুলি অধিবেশনটিকে সেইদিকেই নিয়ে যায়। তাঁর মন্তব্য ছাড়া এটি নিতান্তই ICME-র অনুপযুক্ত, অসংযুক্ত একটি অঙ্কের ক্লাস মাত্র।

    যদিও আমি ICME গোষ্ঠীর একজন সদস্য এবং একজন নিমন্ত্রিত বক্তা, শনিবারের পরবর্তী যে অধিবেশনগুলিতে আমার অংশগ্রহণ করা ইচ্ছে ছিল, সেগুলিতে আমি আর যেতে পারিনি – অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের সঙ্গে ঘটা এই অবিচারের খবর জানতে পেরে।

    আমার মনে হয়, এই অধিবেশনে আলোচিত বক্তব্যের সঙ্গে ভারতের বর্ণাশ্রমের সম্পর্ক আর অবিচারের ইতিহাস নিয়ে গলা তুলেছেন বলেই অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নকে অন্যায়ভাবে নিশানা করা হচ্ছে। এও বলে রাখি, উনি একজন ভারতীয় নারী, যাঁর স্বর দৃঢ় আর পাণ্ডিত্যপূর্ণ। তাঁকে আতঙ্কের আসনে বসানোটা বিশ্বজুড়ে চলা নারীবিদ্বেষ আর রেসিজ়মের নকশায় ঠিকঠাক খাপ খায়।

    অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের প্রতি এই আচরণ অনৈতিক, নিরর্থক। এই অভিজ্ঞতার ফলে ICME সম্মেলনের আয়োজকদের বিচারবোধের প্রতি আমার মনে সন্দেহ জন্মেছে, এমনকি অন্য গাত্রবর্ণের নারীদের পক্ষে এই সম্মেলন নিরাপদ কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে। ভবিষ্যতের ICME কি তবে গনিতশিক্ষায় শ্বেত-প্রভুত্ব, নারীবিদ্বেষ আর বনেদিপনার এক আখড়া হয়ে উঠবে? আমি কোনোভাবে সেই ICME-র অংশ হতে চাই না।”



    অধ্যাপক জয়শ্রী সুব্রহ্মনিয়নের সঙ্গে হওয়া এই অন্যায়ের প্রতিবাদে একটি স্বাক্ষর-সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে। প্রয়োজন মনে করলে তাতে নাম দিয়ে সই করে আসুন। আশা করি, এই নিয়ে আরো লেখালেখি হবে। তবে সম্ভাবনা খুব কম, কারণ বৈদিক গণিত নিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ লেখা ঝটিতি পাওয়া সম্ভব হলেও, মিনিট দশেকের গুগল সার্চে এই ঘটনার কোনো উল্লেখ মিডিয়ার কোত্থাও চোখে পড়লো না।



    And I tell you, call me daft, but the words of the prophecies are changing. The alterations are slight. Clever, even. A word here, a slight twist there. But the words on the pages are different from the ones in my memory… I sense a craftiness behind these changes, a manipulation subtle and brilliant… I have come to only one conclusion. Something has taken control of our religion, something nefarious, something that cannot be trusted. It misleads, and it shadows.
    — The Well of Ascension (Mistborn 2), Brandon Sanderson



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৩ জুলাই ২০২৪ | ৩২২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • | ২৩ জুলাই ২০২৪ ১৪:২৪535188
  • সই করে দিলাম। 
  • . | ২৩ জুলাই ২০২৪ ১৪:৩৫535189
  • ডান
  • পার্থ ঘোষ | 2401:4900:3140:77b4:0:3a:d6b7:***:*** | ২৩ জুলাই ২০২৪ ১৮:১৬535190
  • আজই ক্লাসে পড়ানোর সময় উল্লেখ করেছি। গণিতের বা বৃহত্তর বিজ্ঞানের যে সুরমূর্চ্ছনা, তাকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য ধর্মের বাঁধনে বেঁধে ফেলা হয়েছিলো। তা সেটা এদেশেই হোক বা ইউরোপে। 
    ধারক ও বাহকগণ যত তাড়াতাড়ি এটা স্বীকার করে নেবেন, ততই মঙ্গল।
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:2138:71ee:404c:***:*** | ২৩ জুলাই ২০২৪ ১৯:০১535192
  • কতোরকম ঢপবাজিই যে চলে! 
  • Debasis Bhattacharya | ২৩ জুলাই ২০২৪ ১৯:৫৩535195
  • যা দরকার ছিল, তার তুলনায় খুবই ভদ্র ও নরম সমালোচনা বলতে হবে। কবে যে এই সরকারপোষিত জোচ্চরগুলোর হাত থেকে মুক্তি মিলবে! 
  • অশোক মুখোপাধ্যায় | 202.168.***.*** | ২৩ জুলাই ২০২৪ ২০:৪৩535196
  • এরা আলোচনায় আসে না কেন না,এলেই বিপদ। উপনিষদে সেই যাজ্ঞবল্ক্য যেমন গার্গীকে ভয় দেখিয়েছিল অতিপ্রশ্ন করলে (অর্থাৎ,যে প্রশ্নের উত্তর যাজ্ঞ-দাদুর জানা নেই) গার্গীর মাথা খসে পড়বে ওরফে খসিয়ে দেওয়া হবে এও সেই রকম হল। উত্তর জানা নেই (কারণ উত্তর আসলে নেই)। অতএব সুব্রহ্মণিয়নকে তাড়িয়ে দাও। অস্ট্রেলিয়ায় তো মারাদাঙ্গা করা যায় না। বৈদিক গণিক পুরোটাই জালিয়াতি -- না সে বৈদিক না আছে তাতে গণিত।  
  • রঞ্জন | 2001:999:58c:43ab:ac00:237e:6abe:***:*** | ২৩ জুলাই ২০২৪ ২১:১২535197
  • সই করে দিলাম। 
  • একক | ২৩ জুলাই ২০২৪ ২১:২৯535199
  • সই দিয়েছি।
     
     
    ফাস্ট ক্যাল্কুলেশন মেথড নিয়ে ঘাঁটতে ঘাঁটতে সো কল্ড বৈদিক গণিত এর বই পড়ে দেখেছিলুম। প্রথমত এর সংগে বেদের চোদ্দগুষ্টির কোনো সম্পক্ক নেই। দ্বিতীয়ত, এরকম জিনিস নানান দেশেই আছে, আদৌ লাফালাফি করার মতো কিছু নয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এটা নিয়ে জালিবাজি চলচে। 
  • Kishore Ghosal | ২৩ জুলাই ২০২৪ ২১:৫৮535204
  • আমি ভারতের ইতিহাস নিয়ে যতটুকু পড়েছি - বৈদিক গণিত নিয়ে কোথাও কাউকে কিছু বলতে শুনিনি। মোটামুটি চতুর্থ শতাব্দী বিসিই থেকে আমাদের দর্শন আর গণিত চর্চার স্বীকৃতি পাওয়া যায় গ্রীসের পণ্ডিতদের থেকে - কিন্তু তার অনেক  আগেই  তো ভগবান  (ঋগ্বেদ) বেদ বলে দিয়েছেন - কেউ বলে ১১০০ বিসিই (নাস্তিক ঐতিহাসিকরা )  আবার কেউ (ধার্মিক ঐতিহাসিকরা) বলে ১২০০০ বিসিইতে!  আর কে না জানে বেদের  amendment করা না মুমকিন হ্যায়। তাহলে বেদে গণিত ঢোকাচ্ছে কারা? তাদের পাপ হবেনি?    
     
    সই করে দিলাম।  
  • Debasis Bhattacharya | ২৪ জুলাই ২০২৪ ০১:০৭535216
  • বৈদিক গণিতে ব্রাহ্মণ্যবাদ আছে কিনা বা নারীর প্রতি অবমাননা আছে কিনা, সে সব তো অনেক পরের প্রশ্ন। সবার আগে বলা দরকার, 'বেদ' জিনিসটার সঙ্গে এর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই, এ হল বিশ শতকে নির্মিত এক ধূর্ত জোচ্চুরি। 
     
    আমার সই খুব একটা মহার্ঘ্য বস্তু নয়, তা দিয়ে যে এ সমস্যা সমাধানের খুব কিছু সুবিধে হবে --- এ আশাও করি না। তবু, সইটা করেই দিলাম। 
  • upal mukhopadhyay | ২৪ জুলাই ২০২৪ ০১:২৬535217
  • আজই ক্লাসে পড়ানোর সময় উল্লেখ করেছি। গণিতের বা বৃহত্তর বিজ্ঞানের যে সুরমূর্চ্ছনা, তাকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য ধর্মের বাঁধনে বেঁধে ফেলা হয়েছিলো। তা সেটা এদেশেই হোক বা ইউরোপে। 
    এ বিষয়ে  লিখল  খুব  হয় ।
  • upal mukhopadhyay | ২৪ জুলাই ২০২৪ ০২:০৬535222
  • লিখলে  ভাল  হয় 
  • NRO | 165.124.***.*** | ২৪ জুলাই ২০২৪ ০৩:২৫535224
  • Looks like the term 'Vedic Math' is a misnomer. Never heard of 'Vedic Math' in my life. As far as I know, none of the four Vedas has any slokas regarding math. Probably some fringe people are trying to market some pseudoscience by slapping 'Vedic' to it. Who cares? There would never be a 'Fields' medal winner among practitioners of this field.
  • শিবাংশু | ২৪ জুলাই ২০২৪ ১১:৩৪535245
  • বৈদিক সাহিত্য নিয়ে সামান্য ঘাঁটাঘাঁটি করি কাজের সূত্রে। অঙ্কের পণ্ডিত নই। যজ্ঞকুণ্ডের জ্যামিতি ইত্যাদি নিয়ে কিছু আলোচনা রয়েছে। কিন্তু 'বৈদিক-গণিত'  পদার্থটি খায়, না মাথায় দেয়, কখনও তার কোনও উল্লেখ দেখিনি। হ্যাঁ, শুধু ঋগ্বেদ নয়, কৃষ্ণযজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ  সহ। 
     
    সই করে দিলুম, 
  • কৌতূহলী | 115.187.***.*** | ২৪ জুলাই ২০২৪ ১৬:০৫535250
  • বৈদিক গণিত নামটা শুনে যা মনে হয় , আদৌ তা নয়।এখন বিভিন্নবই বা সেমিনারে বৈদিক গণিত বলে যা আলোচনা হয় , তার সাথে প্রাচীন ভারতে বৈদিক যুগে গণিত চর্চার কোন সম্পর্ক নেই।

    ১৯৬৫ সালে দিল্লীর মতিলাল বানারসিদাস প্রকাশনা থেকে স্বামী কৃষ্ণা তীরথজি বলে এক মহারাজের ‘’vedic mathematics’’ বইটা বেরোনোর পর থেকেই ‘’বৈদিক গণিত’’ বলে এখন যা প্রচার করা হয় , সেটার শুরু। যদিও বইটা বই আকারে মহারাজের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় , কিন্তু জীবিত থাকা অবস্থাতেও ওই মহারাজ আর তাঁর অনুগামীরা ওই তথাকথিত বৈদিক গণিত এর ওপর বিভিন্ন বক্তৃতা , ক্লাস , সেমিনার ইত্যাদি নিতেন।
    এবার খানকতক কথা আছে।
    ১) মহারাজের দাবি ছিল , আট বছর ধরে নির্জন অরণ্যে সাধনা করে তিনি বৈদিক গণিতের হারিয়ে যাওয়া সূত্রগুলি আবিষ্কার করেছেন।
    ২) মহারাজের লেখা বইটার শুরুতেই লেখা ছিল ষোলোটা সংস্কৃত সূত্র। সূত্রগুলি দুটো বা তিনটে শব্দের।মহারাজের দাবি , ওগুলো অথর্ব বেদে আছে। কিন্তু বেদ বিশেষজ্ঞরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও অথর্ববেদে মহারাজের দাবি করা সূত্রগুলো খুঁজে পাননি। কে এল শুক্ল নামে এক গণিতজ্ঞ একটা অথর্ব বেদের প্রামাণ্য সংস্করণ দিয়ে মহারাজকে সূত্রগুলি খুঁজে দিতে বললে মহারাজ বলেন , শুধু তাঁর নিজের পরিশিষ্টেই সূত্রগুলো আছে , অন্য কোথাও সুত্রগুলি নেই। অর্থাৎ , স্বামীজীর দাবি ছিল , আধ্যাত্মিক ক্ষমতাবলেই তিনি সূত্রগুলো জানতে পেরেছেন ( বিশ্বাস যোগ্যতা সহজেই অনুমেয়)।
    অর্থাৎ , বেদের যুগে চর্চা হওয়া গণিতের সাথে এখনকার বৈদিক গণিত বলে দাবি করা গণিতের কোন সম্পর্কই নেই। এমনকি বেদের সাথেও তার সম্পর্কের কোন ভিত্তি আমরা পেলাম না।
    ৩) ওই দুই তিন শব্দের সূত্র থেকে মহারাজ কীভাবে গাণিতিক পদ্ধতি বের করেছিলেন , তারও কোন মাথামুণ্ডু নেই। তাঁর বইয়ে লেখা ছিল ‘’ একাধিকেন পূর্বেণ ‘’ অর্থাৎ , আগের থেকে এক বেশি। এই সূত্রটার ব্যাখা আবার মহারাজ একেক অধ্যায়ে একেক রকম দিয়েছেন। শুধু তাইই না , মহারাজের পদ্ধতি মানতে গেলে যে কেউই ‘’আতা গাছে তোতা পাখি’’ থেকেও মহাবিশ্বের উৎপত্তির তত্ত্ব ব্যাখা করে দেবেন।
    ৪) স্বামীজীর দাবি অনুযায়ী ,তাঁর দাবীকৃত বৈদিক গণিতের বাইরে নাকি আর কোন গণিতের বিষয়ই নেই। এই দাবি অঙ্কের প্রাথমিক জ্ঞানটুকু থাকলেও তাঁর হাস্যকর ঠেকবে। ওঁর বইটা মূলত শর্টকাট ট্রিক এর ওপর ছিল। আর আধুনিক গণিতের বিষয়বস্তু মোটেই কেবল গননা নয়। বরং বিভিন্ন বিমূর্ত ধারণাকে আধুনিক গণিত ডিল করে।
    ৫) এমনকি শর্টকার্ট গননার পদ্ধতি হিসাবেও এই বই ইউনিক কিছু না। জার্মানি বা আমেরিকায় শর্টকাট টেকনিক এর ওপর একাধিক বই লেখা হয়েছে ওঁর আগেই।
    অর্থাৎ আমরা দেখলাম , বৈদিক গণিত ‘’বৈদিক ‘’ নয় , ‘’ আধুনিক গণিত’’ ও নয় ,এমনকি শর্টকাট টেকনিকেও কোন মৌলিকত্বের দাবি রাখে না।

     
  • ar | 71.174.***.*** | ২৪ জুলাই ২০২৪ ১৬:৩৭535251
  • প্রোফঃ এস জি দানির একটা লেখা। পড়ে দেখতে পারেন।
    https://lakshminarayanlenasia.com/articles/MythsandRealityVedicMathematics.pdf

    তবে "হিন্দু রসায়নের ইতিহাস" এর মতন "হিন্দু গণিতের ইতিহাস" শিরোনামে বই আছে।
  • দামোদরদাস | 103.217.***.*** | ২৪ জুলাই ২০২৪ ১৯:৪৩535256
  • যদিও ঘটনার বেশিরভাগটাই বিবৃত হয়েছে, তবে কিছু সূক্ষ্ম তথ্য ব্যতিরেকে। জয়শ্রীর (আমার সহকর্মী) সাথে গতকাল এ বিষয় কথাবার্তা চলাকালীন আরও কয়েকটা ব্যপার জানতে পারলাম:

    ১) "এরপর আরেকজন শ্রোতা উঠে দাঁড়ালেন।" এখানে একটা তথ্য বাদ গেছে। এই যে শ্রোতা যিনি, তিনি কেবল উঠেই দাঁড়াননি, দাঁড়িয়ে কপালে হাত দিয়ে দীর্ঘ একটা প্রণাম করে জানান যে উনি অরোরার এই আলোচনা শুনে মুগ্ধ এবং এইসব আলোচনা বিনা বাধায় চলা উচিত, জয়শ্রীর কি বিষয় আপত্তি উনি সেটা বুঝতেই পারছেন না। শুধু তাই না, উনি মনে করেন যে জয়শ্রীর এই মানসিকতা প্রকৃতপক্ষে কলোনিয়াল হ্যাংওভার মাত্র, যা দেশীয় যা কিছু সে সবকিছুকেই আপত্তিকর হিসেবে ভাবতে শেখায়। এভাবেই ব্রিটিশ প্রভুরা আমাদের মাথাটি খেয়ে দিয়ে গেছে, কিন্তু অমনটা আর হবে না, ভারতীয়রা এখন জেগেছে। এই 'শ্রোতা' ভারতীয় বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়া-নিবাসী একজন মহিলা।  

    ২) এই দীর্ঘ বাগবিতণ্ডার পর সবাই লাঞ্চব্রেকে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে ঘটে দ্বিতীয় ঘটনা। জয়শ্রী কনফারেন্স ভেন্যুতে ঢুকতে গেলে তাকে বাধা দিতে এগিয়ে আসে একজন কর্মকর্তা, সাথে দু'তিনজন ষণ্ডা গোছের লোক! এই কর্মকর্তাটি জানায় যে জয়শ্রীকে আর ঢুকতে দেয়া যাবেনা কারণ সে, এক, কনফারেন্সের কোড অফ কনডাক্ট লঙ্ঘণ করেছে এবং দুই, তার উপস্থিতিতে অনেকে 'থ্রেটেন্ড ফিল' করেছে। জয়শ্রী কিছুক্ষণ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। সেদিন সন্ধ্যায় জয়শ্রীর কাছে একটি ইমেল আসে যার বক্তব্য 'কাল তোমাকে আমরা কনফারেন্স আসতে দেব, কিন্তু তোমাকে গেট থেকে এসকর্ট  করে নিয়ে আসা হবে কারণ তোমার উপস্থিতিতে আজ অনেকেই বিপণ্ণ বোধ করেছে, তাই তোমাকে একলা যেতে দেওয়া যাবেনা। '  

    আমি জয়শ্রীকে বলব এই ইমেলটি পারলে শেয়ার করতে। গতকাল কথাবার্তা চলার সময় জয়শ্রী আমাকে বলছিল যে প্রশ্নোত্তর চলাকালীন হয়ত সে একটু উত্তেজিত হয়ে গেছিল, যার ফলে গলার স্বর একপর্দা চড়ে যায়, কিন্তু সে কখনই কাউকে ভার্বালি বা ফিজিক্যালি থ্রেট করেনি। তা সত্ত্বেও কেন তার সাথে এহেন ব্যবহার করা হল সে বিষয় তার কোন ধারণা নেই। 
  • Argha Bagchi | ২৪ জুলাই ২০২৪ ১৯:৪৭535257
  • খুব মারাত্মক আগ্রাসী সময়ে আমরা বেঁচে আছি, এই ক্রমবর্ধমান হিন্দুবাজির রাজত্বে আমাদের চিন্তা-চেতনা-শিক্ষা ক্রমাগত সরকারী মদতে আক্রান্ত হচ্ছে, অভূতপূর্ব সূক্ষ্মতায়। জয়শ্রী সুব্রহ্মণ্যম বহুদিন ধরে অঙ্কের জগতে সমাজবিভাজনের রাজনীতির মুখোশ খুলে দিচ্ছেন, অথচ কোথাও সে বিষয়ে কোন লেখা পাওয়াই দুষ্কর। বর্তমান লেখককে ধন্যবাদ, বিষয়টা আলোচনা করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
     
    বেদিক ম্যাথেমেটিক্স নামক কমিক স্ট্রিপের মুখোশ খুলতে জয়শ্রী সুব্রহ্মণ্যম একাধিক লেখাপত্র প্রকাশ করেছেন। তারই একটা, অত্যন্ত সুলিখিত প্রবন্ধের লিঙ্ক নীচে দিচ্ছি, যাঁরা জানতে চান যে কেন এই গণিত বৈদিক নয়, পিছনে কোন কোন দুরভিসন্ধি কাজ করছে একে NEP তে যোগ করার জন্য, তাঁদের অবশ্যই পড়া উচিত।
     
    Subramanian, J. (2021). School mathematics as a tool for spreading religious fundamentalism: The case of ‘Vedic mathematics’ in India. In D. Kollosche (Ed.), Exploring new ways to connect: Proceedings of the Eleventh International Mathematics Education and Society Conference (Vol. 3, pp. 995– 1004). Tredition. https://doi.org/10.5281/zenodo.5416776
     
    অথবা
     
  • যদুবাবু | ২৪ জুলাই ২০২৪ ২০:০৭535258
  • দামোদরদাস, অর্ঘ্য দুজনকেই থ্যাংক ইউ, সূক্ষ্ম তথ্য আর রেফারেন্সের জন্য। 
     
    জয়শ্রীর আর্টিকলটা ওঁর অনুমতি নিয়ে বাংলায় অনুবাদ করলে খুব ভালো হয়। ওঁকে কি একবার জিজ্ঞেস করা যায়? এইটা বা অন্য কোনো লেখা। 
     
    আর সুনন্দ আমাকে আরেকটা ভালো নিবন্ধের সন্ধান দিয়েছিল, জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকারের। সেটাও রেখে যাই।
     
  • কালনিমে | 103.244.***.*** | ২৪ জুলাই ২০২৪ ২২:৫১535266
  • যদুবাবু - epw link টা খুলছে না
  • Debasis Bhattacharya | ২৪ জুলাই ২০২৪ ২৩:০৪535267
  • বাঃ, ভাল ভাল মেটিরিয়াল। কিন্তু, হ্যাঁ, ইপিডব্লু নট খুলিং! 
  • NRO | 165.124.***.*** | ২৪ জুলাই ২০২৪ ২৩:৩২535270
  • বোধহয় Chinese epw link.  কবেই বা ঠিক কাজ করে?  
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | 103.177.***.*** | ২৫ জুলাই ২০২৪ ০০:৩৬535272
  • সই করার জন্য ঢুকলাম। কিন্তু নেট স্লো।
    সংংশোধনমূলক ইতিহাস সর্বব্যাপী। আর এইজন্য প্রাচীণ ক্লাস রুম অলিম্পিয়াড পর্যন্ত।
    বৈদিক গণিতের বৈষম্যমূলক ইতিহাসটা জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। 
  • Debasis Bhattacharya | ২৫ জুলাই ২০২৪ ১০:৫৩535295
  • এবারে লিঙ্ক এসেছে, কিন্তু পে-ওয়ালের পেছনে। দ্বিতীয়টা ঠিকঠাক।
  • অনিকেত পথিক | 203.17.***.*** | ২৫ জুলাই ২০২৪ ১১:২৫535296
  • আমি ভাবছি এই সেমিনার এর হোতা কারা? কার নির্দেশে নিরাপত্তাকর্মীরা এত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠলেন? অনুষ্ঠানটা তো ভারতে হচ্ছিল না যে সহজে বোঝা যাবে কাদের আঁতে ঘা লাগছিল... এইটা জানা খুব দরকার।
  • lcm | ২৫ জুলাই ২০২৪ ১৪:১৪535303
  • ওহ, ভেদিক ম্যাথস। একবার কোনো এক এনআরাই মেলা, পুজো বা সমাবেশ টাইপের কোথাও এইরকম ক্লাসের বিজ্ঞাপনের স্টল দেখছিলাম, এনআরআই বাচ্চারা অনেকে সেই ক্লাসে ভর্তি হয় বলছে, ভাবলাম দেখি কি ব্যাপার।

    তো ব্যাপারটা কি জিগ্গেস করাতে, কর্মকর্তা গোছের একজন প্রথমে আমি কি করি, কটি বাচ্চা, আমার টেকনিক্যাল/শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে খোঁজ খবর নেবার চেষ্টা করলেন। বললাম, আমি শুধু আপনাদের ব্যাপারটা জানতে আগ্রহী, তখন বোঝাতে আরম্ভ করলেন -- আমেরিকাতে স্কুলে বাচ্চাদের ঠিক করে অংক শেখানো হয় না, যার জন্য আমেরিকানরা অংকে খুব কাঁচা হয়, যে পদ্ধতিতে প্রাইমারি/এলিমেন্টারি স্কুলে অংক শেখানো হয় তা বিজ্ঞানসম্মত নয়, ঐ জন্য এখানে বেশির ভাগ বাচ্চাদের অংকে বেসিকটা ঠিক তৈরি হয় না, ভেদিক ম্যাথ পদ্ধতিতে অংক শিখলে বাচ্চারা খুব স্মার্টলি ক্যালকুলেশন করতে পারবে, চিন্তাশক্তি বাড়বে, বড় বড় সংখ্যার গুণ/ভাগ ইত্যাদি খুব দ্রুত মনে মনে করে ফেলতে পারবে।
    আমি বললাম - যেমন শকুন্তলা দেবী পারতেন।
    ভদ্রলোক তাতে প্রবল উৎসাহিত হয়ে বললেন - হ্যাঁ হ্যাঁ এগজ্যাক্টলি! এই তো আপনি জানেন দেখছি, উনিই তো ভেদিক ম্যাথস কে পপুলার করেছেন, উনি অনেক সূত্র জানেন, কত বড় বিজ্ঞানী... এসেট্রা... এসেট্রা.. 
    আমি জিগ্গেস করলাম - উনি কি নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন।
    বললেন - না, ভারতীয় বলে পান নি হয়ত। কিন্তু আপনি সে জেনে কি করবেন, আপনি তো আপনার বাচ্চাকে নোবেল প্রাইজ পাওয়ানোর জন্য ভেদিক ম্যাথস শেখাবেন না ... এসেট্রা এসেট্রা ... তারপর এই ক্লাসের ফি কত জানালেন।
    শুনে আমি একটা থ্যাংকস জানিয়ে চলে আসছিলাম।
    ভদ্রলোক ছাড়বেন না, মেয়েকে তখনই এনরোল করালে কিসব ডিসকাউন্ট দেবেন।
    বললাম, যে না আমি ইন্টারেস্টেড নই।
    তখন উনি আবার আর একটা লম্বা ব্যাখা দিতে শুরু করলেন। শেষে জানতে চাইলেন যে কেন আমি ইন্টারেস্টেড নই।
    তখন তাকে নিরস্ত করার জন্য বললাম যে খরচ বেশি, তাই আমি ইন্টারেস্টেড নই।
    তাতে উনি বেশ রেগে গেলেন - আচ্ছা আপনার মতে এতে কত খরচ হওয়া উচিত শুনি।
    বললাম - কত হবে, ওয়ান টাইম খরচ তিন-চার ডলার।
    বেশ রেগে গিয়ে ভদ্রলোক বললেন - রিয়েলি! আর ইউ আ জোক! দেন হোয়াই থ্রি ডলার, হোয়াই নট লেস।
    তখন বলেই ফেললাম - এর চেয়ে কমে তো ক্যালকুলেটরের ডিল দেখি নি।
    এটা বলতে বলতে স্টল থেকে বেরিয়ে এলাম, নইলে যা রেগে গেছিলেন, ধাক্কাটাক্কা দিয়ে...
  • শিবদাস ঘোষ ও শর্টকাট ট্রিকস | 2409:4060:2e96:d379::ad8a:***:*** | ২৫ জুলাই ২০২৪ ১৪:৩৩535304
  • এস ইউ সি আই এর শিবদাস ঘোষ ওঁর পার্টি অফিসে পার্টি কমরেডদের বিভিন্ন সরকারি চাকরির(মূলতঃ ব্যাঙ্কের)  পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়াতেন।তখন উনি পার্টি ক্লাসেই ক্যালকুলেশন এর শর্টকাট ট্রিকসগুলো শেখাতেন। তখন বৈদিক ম্যাথ প্যাকেজিং টার এত রমরমা ছিল না।পোস্ট আর বিতর্কগুলো পড়তে গিয়ে নস্টালজিয়া উসকে উঠল।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন