গত ১২ই জুলাই, শুক্রবার, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পনেরোতম আন্তর্জাতিক গণিত-শিক্ষণ কংগ্রেস (International Congress of Mathematics Education; ICME)-এর সম্মেলন থেকে অধ্যাপক জয়শ্রী সুব্রহ্মনিয়নকে (SRM University, Andhrapradesh) নিরাপত্তা-আধিকারিকরা প্রহরা দিয়ে বের করে দেন। তাঁর ব্যাজ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং রেজিস্ট্রেশন প্রত্যাহার করা হয়। কারণ হিসেবে তাঁকে বলা হয়, যে, সেদিন সকাল ন-টায় অধ্যাপক আশিস অরোরা-র ‘Reviving Ancient Wisdom: Vedic Mathematics for Modern Learning’ শীর্ষক অধিবেশনে তাঁর করা কিছু মন্তব্যকে কিছু অন্য অংশগ্রহণকারীর শাসানিমূলক ও ভীতিপ্রদ মনে হয়েছে। যদিও পরেরদিনের একটি প্যানেলে অংশগ্রহণ করার জন্যে তাঁকে একটি সাময়িক ব্যাজ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু অধিবেশন-অন্তে আবার তাঁকে প্রহরা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।
কতটা আতঙ্কের উদ্রেককারিণী এই ভারতীয় গণিত-অধ্যাপক? কতটা ভয়ঙ্কর তাঁর উপস্থিতি, যার ফলে তাঁকে শিক্ষকদের সম্মেলন থেকে বের করে দিতে হয়? ‘বৈদিক গণিত’ ঠিক কীরকম বিপন্ন হয়েছিল তাঁর উপস্থিতিতে? এসব কথা জানতে, সেই অধিবেশনেরই আরেক শ্রোতা এবং ওই সম্মেলনের আরেক নিমন্ত্রিত বক্তা, ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক থিওডর চাও (Theodore Chao)-এর বয়ান পড়ে ফেলুন। মূল লেখাটি ইংরেজিতে, পাবেন এখানে। লেখাটি অধ্যাপকের অনুমতিক্রমে বাংলায় অনুবাদ করে দেওয়া হল —
“আমার নাম ‘থিওডর চাও’; ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির অঙ্কের অধ্যাপক। ২০২৪-এ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে হওয়া ICME সম্মেলন আমায় এ বছরে একজন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ করে সম্মানিত করেছে। এ আমার দ্বিতীয় ICME সম্মেলনে আসা, দুনিয়া জুড়ে অঙ্ক শেখানোর নানা দিক নিয়ে শুনতে, আলোচনা করতে ভালোবাসি বলে আর অতীতের অবিচার কীভাবে নির্মূল করা যায় শিখতে চাই বলেই অংশগ্রহণ করেছি। গতকাল—১২ই জুলাই, সকাল ন-টায় ‘Reviving Ancient Wisdom: Vedic Mathematics for Modern Learning’ (প্রাচীন জ্ঞানের পুনরুজ্জীবন: আধুনিক শিক্ষায় বৈদিক গণিত) নামের একটি অধিবেশন ছিল, আই কে গুজরাল পাঞ্জাব প্রায়োগিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশিস অরোরা যার বক্তা ছিলেন।
অঙ্ক আর অঙ্ক কষতে শেখানো পদ্ধতিগুলোর সঙ্গে সংস্কৃতির যোগাযোগ—বিশেষ করে ইউরোপের বাইরে যা হয়—তা নিয়ে আমার উৎসাহ আছে বলেই এই অধিবেশনে অংশগ্রহণ করা। ভারতের অঙ্কের ইতিহাস নিয়ে আমার বোধ সীমিত হওয়ায় এই অধিবেশন নিয়ে আমার বেশ কৌতূহল ছিল আর আমি খোলা মনেই এতে অংশগ্রহণ করি, বৈদিক গণিত বলে যা দেখানো হবে, তার সঙ্গে অবিচার আর নিপীড়নের সমস্যা জড়িয়ে থাকবে – এমন কোনো অনুমান ছাড়াই।
ব্যক্তিগতভাবে, অধিবেশনটি আমায় হতাশ করেছে—যদিও জঘন্য মনে হয়নি। বৈদিক গণিতের উৎপত্তি আর ভারতে যাঁদের বৈদিক গণিতজ্ঞ বলে ভাবা হয়, তাঁদের নিয়ে অধ্যাপক অরোরা খুব সামান্যই বললেন। যেহেতু এই অধিবেশনটি আসলে এক কর্মশালা (workshop) হওয়ার কথা, তাই অঙ্কের সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে উনি আরো কিছু বললে, বা আমাদের সেই আলোচনায় জড়ালে আমার মনে হয় ভালো হত। তার বদলে এই ইতিহাস অংশটুকু উনি দ্রুত, পনেরো-কুড়ি মিনিটে বুড়ি ছুঁয়ে গেলেন।
এরপর অধ্যাপক অরোরা নানা গাণিতিক পদ্ধতি উপস্থাপন করে তাদের বৈদিক গণিতের বিশেষ রূপ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করলেন। এই পদ্ধতিগুলিকে নিয়ে কাটাছেঁড়া, খেলাধুলো করার বা তাদের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা সুযোগ পেলে তা আমার খুবই চিত্তাকর্ষক মনে হত—সন্দেহ নেই। বদলে, অধ্যাপক অরোরা সোজা উদাহরণে চলে গেলেন, আর আলাদা আলাদাভাবে, অঙ্কের জাগতিক দুনিয়ার বাইরে কী করে এদের নির্দিষ্ট ব্যবহার করা যায়, তার বিস্তারিত বর্ণনা শুরু করলেন। নানা অ্যালগরিদমের মধ্যে বিভিন্ন নির্দিষ্ট মান ব্যবহার করলে তার থেকে ‘গুণ’ (multiplication) পাওয়া যেতে পারে – তার নানারকম পদ্ধতি অবধি আমি তাঁর বক্তব্য অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিলাম। এইসব উদাহরণ আমার নিজের বেশ ক্লান্তিকর লাগছিল, কারণ উনি আসলে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন আর শ্রোতাদের সঙ্গে আলোচনায় না গিয়ে উদাহরণ থেকে উদাহরণে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন। মাঝে একবার তো আমি বক্তৃতার মধ্যে মাথা গলিয়ে, যে সাদা বোর্ডটা উনি ব্যবহার করছিলেন, সেটাকে আরেকটু আলোকোজ্জ্বল জায়গায় আনার ব্যবস্থা করলাম, যাতে তা ঘরের অন্যান্য অংশ থেকে আরেকটু ভালো করে দেখা যায়, দর্শকমণ্ডলীকে আরেকটু উৎসাহিত করা যায়। আমি বেশ হতাশ হয়েছিলাম, কারণ এই বক্তৃতাটি কোনো কলেজের অঙ্কের সনাতনী ক্লাসের মতো (ভালো অর্থে নয়) শোনাচ্ছিল, যেখানে বক্তা, শ্রোতাদের সঙ্গে সংযোগস্থাপনের, বা নিদেন তাদের কী মনে হচ্ছে – তা শোনার ন্যূনতম চেষ্টাটুকুও করেন না।
এই কর্মশালার এই ব্যাপারটি আমায় হতাশ করেছিল। আমার মতে, ICME-র সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হল – সকলে মিলে গণিত-শিক্ষণ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা-অন্বেষণ করা। অতএব, এই সম্মেলনে প্রদর্শিত যেকোনো বিষয়ের এক আবশ্যিক অংশ হওয়া উচিত – অঙ্ক শেখানোর কলাকৌশল আর মানবজীবনের সঙ্গে অঙ্কের যোগ নিয়ে আলোচনার সুযোগ।
বক্তৃতা চলাকালীন যে অঙ্ক দেখানো হচ্ছিল, তা অনুসরণ করতে আমাদের—আমি ও আমার পাশে বসে থাকা একজন মহিলার—বেশ অসুবিধে হচ্ছিল। উপস্থাপনাটি যে গতিতে এগোচ্ছিল, তা আমাদের বেশ হতাশ করে। যা দেখানো হচ্ছিল, তা আমাদের কষা উত্তরের সঙ্গে মিলছিল না বলে আমরা আলোচনা করছিলাম—স্লাইডে মুদ্রণপ্রমাদ নেই তো? অধ্যাপক অরোরা এসব মানতে বা আমাদের ধারণা নিয়ে দর্শকমণ্ডলীর সঙ্গে আলোচনা করতে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন না। এই অবস্থায়, বোঝার, শিক্ষার সুবিধের জন্যেই একটু থামা দরকার ছিল বলে আমার মনে হয়েছে।
অধিবেশনের প্রায় ৪৫ মিনিট অতিক্রান্ত হওয়ার পর শুনতে পেলাম, ঘরের একজন শ্রোতা প্রশ্ন করেছেন, যে আলোচনার কোনো সুযোগ আছে কিনা। বক্তা বললেন, সুযোগ পাওয়া যাবে, বলে বক্তৃতা চালিয়ে গেলেন। খেয়াল করলাম, আমি আর আমার চারপাশের শ্রোতৃমণ্ডলী সামান্য আশাহত হয়েছি, ওইসময় আলোচনা শুরু না হওয়ায়।
সোয়া দশটা নাগাদ, যখন এই দেড় ঘণ্টার অধিবেশনের আর পনেরো মিনিট বাকি, অধ্যাপক অরোরা আলোচনার সুযোগ দিলেন। ততক্ষণে, বোর্ডে যা আঁক কষা চলছিল তা বোঝার আশা আমি জলাঞ্জলি দিয়েছি। অধ্যাপক জয়শ্রী সুব্রহ্মনিয়ন, যিনি আমার এক সারি পিছনে বসেছিলেন, হাত তুললেন।
অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়ন দাঁড়ালেন, আর কয়েকটি গোছানো পয়েন্ট তুলে ধরলেন।
প্রথমত, অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়ন বললেন, যে, বক্তা দেখানোর চেষ্টা করছেন দুটিমাত্র গণিতের ঘরানা বিদ্যমান, যার একটি ভারতীয়, অন্যটি ইউরোপীয়। তিনি প্রশ্ন করলেন – অধ্যাপক অরোরা অন্যান্য ঘরানা, যেমন চৈনিক, মিশরীয় বা ইনকা গণিত-এর অস্তিত্ব কেন অস্বীকার করছেন, আর এও উল্লেখ করলেন যে এই দৃষ্টিকোণ সমস্যাজনক।
দ্বিতীয়ত, অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়ন প্রশ্ন করলেন – বৈদিক গণিতের ধারণাটি যে আসলে ভারতে এখনো বহুল প্রচলিত অন্যায় বর্ণাশ্রমকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, এই কথাটি অধ্যাপক অরোরা কেন এড়িয়ে গেলেন? ব্যক্তিগতভাবে আমার এই পশ্চাৎপট সম্পর্কে বিশেষ জানা ছিল না, তাই আমি বিষয়টি তুলে ধরার জন্যে অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের তারিফ করলাম। আমার মনে হয়, ICME-র মতো সম্মেলনে আমাদের আরো বেশি করে মানবজীবন আর অবিচার—বিশেষ করে অঙ্কের শিক্ষণে অবিচার—নিয়ে আলোচনা করা উচিত। এই তথ্যটির ফলে তাই, যাকে বৈদিক গণিত বলে দাগানো হয় – তার সাংস্কৃতিক ভূমিকা আর পরিবেশ বুঝতে আমার সুবিধে হল।
তৃতীয়ত, অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়ন উল্লেখ করলেন, অধিবেশনের গৌরচন্দ্রিকায় বৈদিক গণিতের সূত্র হিসেবে যে সব বই ও প্রবন্ধের উল্লেখ করা হয়েছে, তার কয়েকটি ইতোমধ্যেই তার গৌরব হারিয়েছে। তিনি এমনকি এও উল্লেখ করলেন, যে, সূত্রে উল্লিখিত একজন লেখক তো ‘বৈদিক গণিত’ বলে কিছুর অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন। এই খবরটি আমার পছন্দ হল, কারণ এর থেকে আমার কাছে পরিষ্কার হল, যে, প্রোপাগান্ডা আর সংশোধনবাদী ইতিহাসের অস্তিত্ব শুধু আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের গণিতের প্রেক্ষিতেই গুরুত্বপূর্ণ – তা নয়, এর অস্তিত্ব সর্বব্যাপী। ভারতে গণিতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় যে বিতর্কের অস্তিত্ব আছে, তা জানতে পেরেও আমার ভালো লাগলো। সবচেয়ে বেশি তারিফ করলাম অন্যায্য বর্ণাশ্রমের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারটা – ব্রাহ্মণ্যবাদী আদর্শ যে নিজেকে এক এবং অদ্বিতীয় বর্ণ বলে উপস্থাপিত করে, আর ফলত নিজেকে গাণিতিক জ্ঞানের একমাত্র ধারক ও বাহক বলে মনে করে – এ সম্পর্কে আমার অজ্ঞানতার পরিধি নিয়ে আমার ধারণা আরো বলবৎ হল।
আমার মতে, এই মন্তব্যগুলি আলোচনা শুরু করার পক্ষে দারুণ ভালো জায়গা। অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়ন যথেষ্ট উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন, যাতে ঘরের সকলে তাঁর কথা শুনতে পান, তাঁর কথা আবেগজড়িতও ছিল। তাঁর মন্তব্যগুলি শ্রদ্ধাশীল আর বৌদ্ধিক আলাপচারিতা শুরু করার পক্ষে আদর্শ ছিল।
এরপর আরেকজন শ্রোতা উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, যে, বৈদিক গণিতের সমালোচনার জায়গা অবশ্যই আছে, তবে এই অধিবেশনের পক্ষে তা হয়তো যথাযথ নয়। এরপর, সাড়ে দশটা বেজে গেছিল বলেই, অধিবেশন সমাপ্ত হল আর আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম।
অধিবেশন শেষ হওয়ার পর আমি অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের সঙ্গে দেখা করে তাঁর মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁর মন্তব্যগুলি ছাড়া আমি হয়তো খুবই হতাশ হতাম এই অধিবেশন নিয়ে, কারণ গণিত-শিক্ষণ কর্মশালার বদলে এটি যেন বড় বেশি গণিতের ক্লাস বলে মনে হয়েছিল। বৈদিক গণিতজ্ঞ, বৈদিক গণিতের সঙ্গে বাস্তব জীবনের অঙ্কের সম্পর্ক অথবা অঙ্ক শেখানো বা শিক্ষক-শিক্ষণের সঙ্গে তার সম্পর্ক – এই সমস্ত বিষয়গুলি অধিবেশনে বড় তাড়াহুড়ো করে বুড়িছোঁয়া করা হয়েছিল বলে আমার ধারণা।
তাঁর মন্তব্যগুলি না করা হলে আমার মনে হত দেড়ঘণ্টার এক আপাত-কর্মশালা থেকে আমি কিছু না শিখেই বেরিয়ে এসেছি। গণিত-শিক্ষণের সঙ্গে আলোচিত বিষয়গুলির যোগ তৈরি করতে আর বৈদিক গণিতের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বুঝতে অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের মন্তব্যগুলি আমায় সাহায্য করেছিল।
এই মন্তব্যগুলি থেকে আমি বুঝেছিলাম, যে ‘বৈদিক’ শব্দটি সমস্যাজনক, আর এইভাবে গণিত নিয়ে ভাবার সঙ্গে ক্ষমতা, বর্ণাশ্রম আর সামাজিক অনুক্রম জড়িয়ে রয়েছে। এই লেন্স দিয়ে দেখার ফলে বিশ্বজুড়ে গণিত শিক্ষণের প্রেক্ষাপটে আমি অধিবেশনটিকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।
অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের মন্তব্যগুলিকে আমার কোনোভাবেই দ্বন্দ্বমূলক বা বৈরীভাবাপন্ন মনে হয়নি। এর ফলে ঘরে কোনোভাবে হিংসা বা হুমকির আবহ তৈরি হয়েছিল বলেও আমার মনে হয়নি। বরং, তাঁর মন্তব্যের ফলেই আলোচনাটি আরো বিষয়ানুগ হয়েছিল।
এর পরে আমি জানতে পারি, যে এই অধিবেশনে করা মন্তব্যের ফলে অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নকে ICME সম্মেলন থেকে বহিষ্কৃত করা হয়। এই সিদ্ধান্ত আমার মতে অন্যায় এবং অন্যায্যরকম কঠোর। ICME-র যা লক্ষ্য, অধ্যাপকের মন্তব্যগুলি অধিবেশনটিকে সেইদিকেই নিয়ে যায়। তাঁর মন্তব্য ছাড়া এটি নিতান্তই ICME-র অনুপযুক্ত, অসংযুক্ত একটি অঙ্কের ক্লাস মাত্র।
যদিও আমি ICME গোষ্ঠীর একজন সদস্য এবং একজন নিমন্ত্রিত বক্তা, শনিবারের পরবর্তী যে অধিবেশনগুলিতে আমার অংশগ্রহণ করা ইচ্ছে ছিল, সেগুলিতে আমি আর যেতে পারিনি – অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের সঙ্গে ঘটা এই অবিচারের খবর জানতে পেরে।
আমার মনে হয়, এই অধিবেশনে আলোচিত বক্তব্যের সঙ্গে ভারতের বর্ণাশ্রমের সম্পর্ক আর অবিচারের ইতিহাস নিয়ে গলা তুলেছেন বলেই অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নকে অন্যায়ভাবে নিশানা করা হচ্ছে। এও বলে রাখি, উনি একজন ভারতীয় নারী, যাঁর স্বর দৃঢ় আর পাণ্ডিত্যপূর্ণ। তাঁকে আতঙ্কের আসনে বসানোটা বিশ্বজুড়ে চলা নারীবিদ্বেষ আর রেসিজ়মের নকশায় ঠিকঠাক খাপ খায়।
অধ্যাপক সুব্রহ্মনিয়নের প্রতি এই আচরণ অনৈতিক, নিরর্থক। এই অভিজ্ঞতার ফলে ICME সম্মেলনের আয়োজকদের বিচারবোধের প্রতি আমার মনে সন্দেহ জন্মেছে, এমনকি অন্য গাত্রবর্ণের নারীদের পক্ষে এই সম্মেলন নিরাপদ কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে। ভবিষ্যতের ICME কি তবে গনিতশিক্ষায় শ্বেত-প্রভুত্ব, নারীবিদ্বেষ আর বনেদিপনার এক আখড়া হয়ে উঠবে? আমি কোনোভাবে সেই ICME-র অংশ হতে চাই না।”
অধ্যাপক জয়শ্রী সুব্রহ্মনিয়নের সঙ্গে হওয়া এই অন্যায়ের প্রতিবাদে একটি স্বাক্ষর-সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে। প্রয়োজন মনে করলে তাতে নাম দিয়ে সই করে আসুন। আশা করি, এই নিয়ে আরো লেখালেখি হবে। তবে সম্ভাবনা খুব কম, কারণ বৈদিক গণিত নিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ লেখা ঝটিতি পাওয়া সম্ভব হলেও, মিনিট দশেকের গুগল সার্চে এই ঘটনার কোনো উল্লেখ মিডিয়ার কোত্থাও চোখে পড়লো না।
“And I tell you, call me daft, but the words of the prophecies are changing. The alterations are slight. Clever, even. A word here, a slight twist there. But the words on the pages are different from the ones in my memory… I sense a craftiness behind these changes, a manipulation subtle and brilliant… I have come to only one conclusion. Something has taken control of our religion, something nefarious, something that cannot be trusted. It misleads, and it shadows.”
— The Well of Ascension (Mistborn 2), Brandon Sanderson