কয়েকটা ছবি দেখি, মেয়েদের, সলভিন্সের আঁকা।
ছবি-১ঃ
১৮১০ এর ছবি, মহিলাটি ঠিক খেটে খাওয়া মহিলা নয়, হয়ত আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, বাড়িতেই মূলতঃ থাকে, যেখানে বসে আছে সেটা মাটির কাছাকাছি নয়, মাটি থেকে উঁচুতে গদিওয়ালা খাট বিশেষ। ছবিটা মূলতঃ সাদা বা ধূসরে, কিন্তু কিছু জায়গা সোনালী, হাত, কান, কপাল ইত্যাদির গয়নাতে, খাটের পাশে যে তোরঙ্গটি, সেটির হ্যাণ্ডেলেও। এগুলো মনে হয় সোনার , কিন্তু পোশাক বলতে শাড়িই। হ্যাঁ, সেই শাড়ির গুণ কিরকম, বিশেষত্ব কীরকম স্পষ্ট নয়, হয়ত অনুমান করা যায় যে সেটি একেবারে সাধারণ হবে না। এই ছবি নিয়ে সলভিন্সের যে মন্তব্য আছে সে পড়ে মনে হয়, ছবিটি কোন 'সাধারণ ' ঘরের মহিলার ছবি নয়, রক্ষিতা বিশেষের ছবি যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে এবং শুয়ে-বসে দিন কাটানোর সময়ও আছে।
ছবি-২ঃ
বাজরের ছবি, মেয়েদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়, খাটিয়ে মেয়ে ও পুরুষরাই যেন এই ছবির থীম। মেয়েরা শুধু শাড়িতেই কিন্তু এই শাড়ির সাদা আর আগের ছবির সাদা যেন আলাদা, আগের ছবিতে ঠিক সাদা ছিল না, অনেকটা ঘিয়ে রঙের। অনুমান করি, দুই ছবির মেয়েরা আলাদা রকমের শাড়ি পরছে। ছবিটার ডানদিকে ঝুড়ি মাথায় এক মহিলার ছবি আছে, হাঁটু অবধি আঢাকা পা, পাশ থেকে স্তনের অংশ দেখা জাচ্ছে, বাঁ হাত্টিও অনাবৃত। এইরকম পোশাক ও দেহভঙ্গীতে বাজারে কাজ করতে অসুবিধে নেই বলে মনে হয়, এসবই তাদের কাজ ও দৈনন্দিনের অংশ, পুরুষরা যেমন শুধু ধুতিতে। আবার অন্য ছবিতে, পুরুষদের দেখা যাবে পাগড়ি - জামা - ধুতি ইত্যাদিতে, তারা মনে হয় বেনিয়া গোছের চরিত্র, কোম্পানীর কাজের সাথে যুক্ত, এই ছবিতে যারা তাদের কাজের জগত আলাদা, ফলে পোশাকের বিবিধ ব্যবহার, মেয়েদের ক্ষেত্রেও যেমন। এখন এই খেটে খাওয়া মহিলার পোশাক , ছবিটি যখন ১৮১০ নাগাদ আঁকা হচ্ছে তার আগের বিশ তিরিশ বছরের তুলনায় বদলায়নি মনে হয়, একেবারেই সাধারণ। কিন্তু এই সাধারণ ভাব ভারতচন্দ্রের লেখায় মেয়েদের পোশাকের সাথে তুলনা করা যায় কিনা সন্দেহ আছে, সেগুলো আলাদা।
ছবি-৩ঃ
এরা নচ-গার্ল, পোশাক আলাদা, শাড়ি নয়, মাথা থেকে পা অবধি ঢাকা, ঢিলেঢালা। বাঈজীদের পোশাক যেমন হয়, মনে হয় না, এই পোশাকও নবাবী আমল থেকে বিশেষ বদলেছে। (কিন্তু এই পোশাক কীভাবেই ব উত্তেজনা তৈরী করতে পারে ? নিকি বাঈজী সেইজন্যই সাটিনের পোশাক ব্যবহার করত ? ) এই ছবিতে আবার দুইধরণের পুরুষেরা আছে, তাদের পোশাকও আলাদা, যারা বাজনা বাজাচ্ছে তাদের গায়ে কোন পোশাক নেই, এই কাজ করতে ঘাম ঝরে,সেই জন্যই ?
তিনটি ছবি দেখে মনে হয়, মেয়েদের পোশাক, বিভিন্ন রকমের মেয়েদের পোশাক তাদের কাজ বা দৈনন্দিনের মধ্যে তফাত থাকার জন্য আলাদা হলেও (নচ-্গার্ল, বাজারে কাজ করা মেয়ে, ঘরে থাকা মেয়ে )ঐ প্রতিটি ভাগে পোশাকের বদল অনেকদিন ধরেই হয়নি । পোশাকের বদল হল ভদ্রলোক শ্রেণীর মেয়েদের ক্ষেত্রে, খালি গা ঢেকে দিয়ে জ্যাকেট - ব্লাউজ গায়ে ঊঠল কিন্তু এ তো স্বাভাবিকই , ভদ্রলোক শ্রেণীটিই তো নতুন তৈরী হল, নতুন ক্যাটাগরি, আগের থেকে নানারকমের বদল ঘটিয়ে , অর্থনীতি আর কাজের বদলসুদ্ধ,নানারকমের কন্ফ্লিক্টসুদ্ধ। কনফ্লিক্টের মধ্যে ভিক্টোরিয় নীতিবোধ মনে হয় একটি দিক, মেয়েদের পোশাকের বদল হয়ত এর সাথে যুক্ত (ভদ্রলোক পরিবারের মেয়েদেরকায়িক শ্রম থেকে দূরে সরে যাওয়ার সাথেও হয়ত যূক্ত ) , মেমদের পোশাকও ভিক্টোরিয়ভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত , সাহিত্য সংক্রান্ত রুচিও তো এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, বিদ্যাসুন্দর নিয়ে তর্ক তো ১৮৫০-৬০ দশক নাগাদই ঘটল।