এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • তব শুভ আশিস - ধারাবাহিক উপন্যাস - জয়িতা ভট্টাচার্য

    Jayeeta Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪০১ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 4 | 9 | 10
    তব শুভ আশিস : জয়িতা ভট্টাচার্য
    দ্বিতীয় পর্ব

    মহেন্দ্রনগর জায়গাটা তেমন ঘিঞ্জি নয়। সুন্দর ছিমছাম। পাকা পথ। অনেকটা সাপের মতো পিচ্ছিল। এঁকেবেঁকে একটা নির্জন সমুদ্রের কাছে শেষ। এখানে অনেক পাখি। সাজানো পুতুলের ঘরের মতো নিরিবিলি বসতি। মোহনের ভালো লেগেছে। কিন্তু চলে যেতে হবে।

    চারমাস আগে আসা। তার আগে ভূপতি নগরে তিনমাস। এটা ভারতের দক্ষিণে। মোহনের প্রতিটা জায়গা অবশ্য এত ভালো লাগে না। রাস্তা তৈরী হচ্ছে দেশ জুড়ে। মোহন শুধু রাস্তাই দেখে। এ রাস্তা ও রাস্তা। পিচ, ঘাম, খোয়া, রোলার।

    এখানের কাজ শেষ। বালির চড়ায় বসে মোহন তাকিয়ে দেখে আকাশ। কী নীল। কোনো মলিনতা নেই। মলিন ভাবতেই ফিরে এলো। এঁটোর মতো লেগে থাকা সংসার, টাকার তাগিদ, যুবতী বউয়ের যৌন প্রচেষ্টার রাত। চিতার আগুন। উদ্দীপন নেই। শুধু বাসনা। মোহন সকলের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে রেল স্টেশনের দিকে। এভাবেই টানাপোড়েন। কচুরিপানার মতো ভেসে ভেসে এখান সেখান। কাব্য করে বলে লোকে ভাতের জন্য ছুট। আসলে শুধু ভাতে জীবন গেলে এমন ছিড়কুটে যেতো না জীবন। কাউন্টারে লম্বা লাইন। খুব ভিড়। বড়ো শহরে যাবার ভিড়। স্টেশনটা মাঝারি মাপের। গোটা দশেক চায়ের দোকান। প্লাস্টিকের জিনিস। ইডলি আর বড়া র দোকান। কারিপাতার গন্ধ। স্টেশনটা খোলামেলা। কলকাতার শিয়ালদহ বা হাওড়ার মতো বদ্ধ নয়। অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। মোহন একটা ডাব কেনে। ছোট্ট আনস্মার্ট মোবাইলটা বাজছে। বউ। মুহুর্তে মনে হয় কেটে দেয়। অপরাধ বোধ। আসলে শৈলবালার দোষ নয়। দোষ তার। আগাছার মতো বেড়ে উঠল। শৈল নিপাট বাগান চায়। ঠিকই চায়। চেক শার্ট পরা একটা লোক। দুটো বড়ো বাক্স। পেছনে একটা গোলপানা বউ। কোলে বাচ্চা। সে অলস চোখে দেখে বউটাকে। তেমন চটক নেই। অল্পবয়স। জড়ির শাড়ির তলায় তেমন বিপুল নয় বুক।

    কালো। দুজনেই । এখানে সবার ই চাপা রং। শৈলর মতো চাঁপা নয়।

    তবু। কয়েকটা কথা হয়। সাবি মরে গেছে। কবে যেন। তবে তাকে বলে মরেছে। একটাই তো বোন ছিল। তবু তেমন কোনো তীব্র শোক হচ্ছে না মোহনের। হওয়া উচিত ছিল। বেড়া বিনুনী করা সাবি। পোষা কাঠবেড়াল। মেলায় দুজনে হাত ধরে ফুচকা, গরম জিলিপি। ব্যস। আর তেমন কিছু নেই। হারাধন,নিতাই ,আখতার,মানিক,ফিরোজ আর আজগর ওদের দুটো গ্রামের। বাকি সাতজন অন্য জেলা। পাঁচজন উড়িষ্যার গ্রামের। তিন জন ঝাড়খণ্ডের। মোহনের ওদের দলটাকে মিনি ভারতবর্ষ মনে হয়। স্বাধীনতার লড়াই। নিজের মতো খেয়ে পরে বাঁচার। হাল্কা ঝাঁকুনি দিয়ে একবার থামল। তারপর স্টেশন ছাড়ল ট্রেনটা। অকারণ আনন্দে কয়েকটা কুকুর পাশে পাশে। ঠিকাদারের লোক রাতের খাবার দিয়ে যাবো। মলিন সুর্য জানলায়। একই রকম সুর্য ডোবা। গ্রামে আর এখানে। ছোটোবেলার মতোই। কোনো নতুনত্ব নেই। ছেলেরা যারযার মোবাইলে ব্যস্ত।

    এবার তাস খেলা হবে।

    সে তেমন মনে করতে পারল না শেষ কবে দেখেছিল সাবিকে। একবার ভাবার চেষ্টা করল গলায় শাড়ি বাঁধা সাবি। এরকম কোনো শরীর দেখেনি। কাজেই নিজের মতো হালকা কল্পনা করতে গিয়ে টের পেল সকাল থেকে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। খিদে মালুম হচ্ছে এখন। সুর্য ডুবল।

    মোহন বাদুড় হয়ে জানলা পার হয়ে যাচ্ছে।

    তৃতীয় পর্ব

    এখান থেকে তাকালে মাঠ। আর মাঠ থেকে তাকালে জলা। তারপর আকাশ। তারপর আবার আকাশ। যা কিছু মানুষচরিত সব এদিকে। মাটির পথ যা ছিল পাকা। বাঁশবন যা ছিল সব ফাঁকা। একা একটা বট। ওখানে সিঁদুর মাখা পাথর। মানুষ বলে থান। লম্বা লম্বা ঝুরি নেমেছে। যারা এইসব বাঁশবন, মাটির পথে আর পুকুরের ধারে থাকতো সেই সব সাপ আর বেজি, কীট আর পতঙ্গের দল উদ্বাস্তু হয়ে আপাতত এখানেই। দুপুরের রোদ ঠিকরে এলে এখানে ছায়া খোঁজে কাক, কোকিল, দোয়েল, ফিঙে, শ্যামা আর মাছরাঙা, মেছো বক। ভিড়ে ঠাসা রেলের বগি যেন।
    এখন শৈলবালা এখানে। সঙ্গে চরণ। ল্যাজ কাটা কালো কুকুর। যেন আর জন্মের নাগর। সর্বদা সঙ্গে সঙ্গে লেগে থাকে শৈলর। এখানে একা নির্জনে শৈল কুকুরী এখন। মনের কথা খুলে বলে চরণ কে। মোটামুটি রায় দেয় পাখ পাখালি রাও। কষির কাপড় আলগা। ভারি বুকের কাপড় সরিয়ে দম নেয় শৈল।

    দুই মাস হয়ে গেল। মাসিক হয়নি। আজব লাগছে। হয়ত ভাদ্র মাস বলে। শরীর কষে গেছে।

    লাইন করে পিঁপড়ে। আলগোছে তাকায় শৈল। আকাশ সাদা হিম। কিন্তু বৃষ্টি হবে। পেটে সব ডিম নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে এরা।

    যেদিকে ঝোপটা গাঢ়। ওদিকে বসে তারক। পদবী পাগলা। এই গ্রামে তাই জানে। এখানকার একমাত্র ভবঘুরে পাগলা তারক যত্নে একটা একটা পিঁপড়ে তুলে চিবোচ্ছে। সঙ্গে ঘাস। একটা ছেঁড়া পোঁটলা। ততোধিক ছেঁড়া তাতে কিছু ময়লা কাপড়। রং কী ছিল তা আর আজ জানা যায় না। সেই একবার ওপার থেকে কয়েকদল লোক এসেছিল। তার মা আর সে। আর আব্বা। তারপর কে যে কোথায় ছিটকে। শ্মশানে শ্মশানে ঘুরে। অখাদ্য কুখাদ্য খেতে খেতে। গনপিটুনি। আরো কত সময়ের পর সে হয়েছে তারক। হিন্দু পাড়ার লোক হিন্দুনামে ডাকে। দুটো বিস্কুট  পচা পান্তা এগিয়ে দেয়। নামে কী আসে যায়। সময় হারিয়ে গেছে তারকের। বেভুল হয়। এইখানে একটা নদী। কিছুদুর গেলে। ওখানে ভাঙা মন্দিরে তার বাস। জলের ভেতর ডুব দিলে এখনও ভেসে ওঠে পরিস্কার এক নারী মুখ। আম্মি জান।

    ( চলবে )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 4 | 9 | 10
  • ধারাবাহিক | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪০১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    মোসাহেব - Rajat Das
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:৪০523853
  • পড়ছি, চলুক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন