ওই যে ভুল বাংলায় টিভির বিজ্ঞাপনে বলে -- এসে গেলো আবার এই "শ্রেষ্ঠ দেশের" স্বাধীনতা দিবস -- ফোর্থ অফ জুলাই। আহা, কী দেশপ্রেম! ছাতি ফেটে যাবে উল্লাসে চীৎকারে। সেন্ট্রাল পার্কে হাডসন ওহায়ো মিসিসিপি নদীর ধারে মায়ামি বীচে ক্লাবে পাবে বারে বারে তাকে পাবে।
বুক বাজানো অতি দেশভক্তি, টি শার্টের সামনে ফ্রীডম পিছনে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি। আতসবাজির ঝলসানো রাত। ট্যাঙ্ক পুলিশ কার সাইরেন কানফাটানো হেলিকপ্টার।
উল্লসিত জনগণ যারা নব্বই শতাংশ নিম্নবিত্ত অথবা মধ্যবিত্ত। কৃষ্ণাঙ্গ শ্বেতাঙ্গ আর আমাদের মতো যা হোক কিছু রঙের একটা। যাদের সেই বহুকথিত গ্লোরিফায়েড আমেরিকান ড্রীম পূর্ণ হয়নি এবং কোনোদিন হবেনা তাদেরই উল্লাস সবচেয়ে বেশি। আহা, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কী অসীম করুণা!
আমেরিকার এই পৃথিবীব্যাপী ঢাক পেটানো স্বাধীনতার অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষ অভুক্ত, অসুস্থ, অশিক্ষিত -- এই দেশের মধ্যেই -- সেই ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নিউ ইয়র্ক আর ডাকোটা থেকে ডালাস। আমেরিকার কারাগারে পৃথিবীর সর্বমোট কয়েদীর এক চতুর্থাংশ বন্দী। না ভুল বললাম তার চেয়েও বেশি ২৬ পার্সেন্ট। বর্বর পুলিশি অত্যাচার ও কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা, গরীব ইমিগ্রেন্টদের ওপর নির্যাতন, বন্দুকবাজির মলে সিনেমা হলে বারে পারকিং লটে বীভৎসতা। বিশ্বজোড়া ছড়িয়ে দেওয়া যুদ্ধ ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকারদের সমর্থন। ল্যাটিন আমেরিকায় অত্যাচার করা শেখানোর স্কুল অফ দ্য আমেরিকাস।
কর্পোরেট বাণিজ্যের প্রয়োজনে মানুষের জল, জমি, অরণ্য কেড়ে নেওয়া, বিষাক্ত পরিবেশের ধোঁয়া। ইলন মাস্ক জেফ বেজোস বিল গেটস আই-টি আর এ-আই দিয়ে সাধারণ মানুষের শ্রমের অধিকার ধ্বংস করে দিচ্ছে ।মোদী এসে বুকে জড়িয়ে ধরেছে ইলনকে ।ঠিক যেমন জড়িয়েছিল ট্রাম্পকে। মিডিয়া সেই নিয়ে আরো উল্লসিত। এদেশে, ওদেশে।
ভয়াবহ ড্রাগ কালচার। সেক্স ড্রাগ অ্যান্ড ওয়ার -- আমেরিকার সর্বগ্রাসী তিন ঘোড়সওয়ার।
কোভিডে দশ লক্ষ মানুষের অসহায় মৃত্যু এই "শ্রেষ্ঠ, স্বাধীন" দেশে। সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এই স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা না।
প্রায় চল্লিশ বছর আমেরিকায় আছি। ভাবলে লজ্জা করে কী ভয়ঙ্কর এক মিথ্যাচার! সাধারণ মানুষকে ঠকানো। তাদের জীবনকে শুষে নেওয়া।
আর সব দেশকে, ভাষাকে, সভ্যতা, ইতিহাসকে মানুষের মন থেকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে দেওয়া।
আমরা ওই বুক বাজানো প্যারেডে আর পোড়ানো বাজিতে রাজি না।
____
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।