এদেশে পরিসংখ্যান অনুযায়ী টিনএজারদেরই সব থেকে বেশি নিপীড়িত হবার সম্ভাবনা তাও আবার তাদের অন্তরঙ্গ সঙ্গীর দ্বারা। মূলতঃ ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী মেয়েরাই তাদের সঙ্গীর দ্বারা অত্যাচারিত। হাইস্কুলে গড়ে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে এক জন মেয়ে শারীরিক অথবা যৌন নিগ্রহের রিপোর্ট করে।
"হ্যাঁ মানে হ্যাঁ" (YES means YES)!
পরবর্তী ক্লাসে ছাত্র ছাত্রীদের খুব ভালো ভাবে বোঝানো হল যে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আগে সঙ্গীর পূর্ণ সম্মতির প্রয়োজন। সে যদি "না" কথাটা উচ্চারণ না করে তাহলে সেটাকে "মৌনং সম্মতিং লক্ষ্মণম" বলে যেন কিছুতেই ধরে না নেওয়া হয়। যদি কেউ মত্ত অবস্থায় অথবা ড্রাগ নিয়ে যৌন মিলনের সম্মতি জানায়, তবে তা ও গ্রাহ্য করা উচিৎ নয়, কারণ এর ফল পরে খারাপ হতে পারে, সে অস্বীকার করতে পারে।
এই ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীরা তো আর সাধারণ নয়, তাই এই বিষয়টিও তাদের রূপক গল্পের ছলেই বোঝানো হল।
মনে করো চা এবং সেক্স সমার্থক। তুমি কাউকে চা খাওয়ানোর আগে জিজ্ঞেস করো তো? এটাও অনেকটা সেই রকম। চলো শুনে নিই চা খাওয়ার ব্যাপারে কতরকমের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে:
১. "এই তুমি চা খাবে?"
"হ্যাঁ, I would love to, খাবো"!
তখন তুমি জেনে গেলে যে এ ব্যাপারে তার সম্পূর্ণ মত আছে। তখন তাকে চা খাওয়াতে পারো।
২. কিন্তু কেউ হয়তো বলল,
"উম্, আমি ঠিক নিশ্চিত নই।"
তখন তুমি চা বানালে, কিন্তু জেনে গেলে হয়তো সে খাবে না, যদি সে চা না খেতে চায়, তাহলে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা মনে রাখবে, খবরদার তাদের জোর করে চা খাওয়াবেনা। তুমি চা বানিয়েছ বলেই যে জবরদস্তি তাদের খাওয়াতেই হবে তা কিন্তু একেবারেই নয়।
৩. এবার সে যদি স্পষ্ট বলে,
"না, আমি চা খাবো না।"
তাহলে চা বানাবেই না, জাস্ট বানাবে না। জোরাজুরিও করবে না অথবা চা খেলনা বলে তাদের ওপর রেগেও যাবেনা।
৪. এবারে কেউ বলল,
"হ্যাঁ আমি চা খাবো, থ্যাংক ইউ!"
তুমি তখন তাড়াতাড়ি চা বানাতে গেলে, কষ্ট করে জল ফুটিয়ে, দুধ ,চা পাতা দিয়ে দারুণ করে বানিয়ে চা নিয়ে এলে, কিন্তু ততক্ষণে সে তার মত পাল্টে ফেলেছে,বলল,
"না , আমার আর চা খেতে ইচ্ছে করছে না"।
স্বাভাবিক ভাবেই তুমি এই মত পরিবর্তনে মনঃক্ষুণ্ণ হবে, কিন্তু কোনো ভাবেই তাকে জোর করে তার মুখে গরম চা ঢেলে দেবে না। তার ইচ্ছে হচ্ছে না, সে চা খাবেনা, ব্যাস।
৫. কেউ যদি অজ্ঞান অবস্থায় থাকে, চা খাওয়াবে না, কারণ অচৈতন্য অবস্থায় সে মতামত প্রকাশ করতে পারেনা।
৬. কেউ হয়তো বলল চা খাবে, কিন্তু যখন তুমি চা বানিয়ে নিয়ে এলে তখন সে অজ্ঞান হয়ে গেছে, অথবা চা খেতে খেতে হঠাৎ সে আর খেতে চাইলো না, তখনও কোনো ভাবেই তাকে জোর করবে না।
৭. এবারে ধরো কেউ হয়তো গত সপ্তাহে খুশী মনে তোমার সঙ্গে চা খেয়েছে, তার মানে কিন্তু এই নয় যে তুমি যখন তখন তার বাড়ী চলে যাবে আর বার বার তাকে চা খাওয়াতে চাইবে। অথবা সে রাজী না হলে বলবে, "কেন গত সপ্তাহে তো দিব্যি আমার সঙ্গে চা খেলে!" এক্কেবারে না, কখনই জোর করবেনা।
এবারে বুঝে দেখো, কেউ যদি তোমাকে জোর করে তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চা খাওয়ায়, তাহলে তুমি কীরকম রেগে যাও বা বিরক্ত হও.... এবার চা না হয়ে যদি সেটা সেক্স (যৌনতা) হয় তবে তা কতখানি কঠিন এবং অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে বলতো!
অতএব মনে রেখো, চাই হোক অথবা যৌনতা, পারস্পরিক সম্মতিই শেষ কথা।
"Whether it is tea or sex, CONSENT is everything"!
যৌন সম্পর্ক বোঝাতে গিয়ে ছাত্রছাত্রী দের ধর্ষণ এর ব্যাপারেও সাবধান করে দেওয়া হল, ওই জোর করে চা খাওয়ানোর মতই, কিন্তু আরো মারাত্মক অঘটন এটি, বলপ্রয়োগ করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের নামই ধর্ষণ।
এদেশে দুই তৃতীয়াংশ টিনেজ মাতৃত্বের জন্য ১৯ বছর ও তার ঊর্ধ্বের পুরুষ রাই দায়ী। অপরাধ প্রমাণিত হলে ৪ বছর অবধি কারাবাস হতে পারে, জরিমানা প্রায় ২৫০০০ ডলার।
ধর্ষিতা ছাত্রী (সে যেখানেই ধর্ষণ ঘটে থাকুক) এ ব্যাপারে নির্দ্বিধায় স্কুলের নার্স, কাউন্সিলর অথবা সোশাল ওয়ার্কারের এর কাছে রিপোর্ট করতে পারে। নিজের শহরের পুলিশকেও জানাতে পারে।
পইপই করে ছাত্রছাত্রী দের ইন্টারনেট সেফটির ব্যাপারে অবহিত করা হল।
• কোনো পর্ণ সাইটে ঢুকবে না
• এমন কোনো চ্যাট রুমে যাবে না যেখানে যৌনতা ও যৌন অঙ্গ বিষয়ক আলোচনা চলছে।
• যে কোনো অচেনা অজানা লোকের সঙ্গে অনলাইন চ্যাট একেবারেই করবে না।
• সেক্সটিং নৈব নৈব চ। কোনো নগ্ন ছবি কাউকে পাঠাবে না বা কেউ পাঠালে সেটা গ্রহণ করবে না।
এরপর ওদের একটি প্রশ্নোত্তরের লিস্ট ধরিয়ে দেওয়া হল, এটা ভর্তি করতে করতেই ওরা নিজেকে কোন কোন পরিবেশ থেকে কিভাবে রক্ষা করবে সে সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা পেয়ে যাবে সেই সঙ্গে আমরাও জেনে যাবো ওরা কতটা সুরক্ষিত। উত্তরের অপশন গুলো এই রকম:
• কিছুই করবোনা (মানে মেনে নেবো)
• ঐরকম ব্যবহার প্রশ্রয় দেবোনা
• কারোর কাছ থেকে সাহায্য চাইবো
• ওই ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করবো
এবার দেখা যাক প্রশ্নগুলো, যে গুলোর মধ্যে অনেক গুলোই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে না দিলে ঠিক বোঝা যায়না কতটা ক্ষতিকারক।ওদের বলা হল, তুমি কল্পনা করো তোমার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী অথবা পরিবারের কেউ তোমার সঙ্গে নিম্নলিখিত আচরণ গুলো করছে, তখন তুমি কোন উত্তর গুলো বেছে নেবে?
প্রশ্ন গুলো এই ধরণের:
১. সব সময় তোমার চেহারা,সাজপোশাক,চুল ইত্যাদি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে।
২. সব সময় নির্ধারণ করে দেয় তোমরা একসঙ্গে কোথায় যাবে অথবা তুমি কী করবে।
৩. সকলের সামনে সবসময় তোমাকে হেয় প্রতিপন্ন করে।
৪. তোমার নগ্ন ছবি চেয়ে পাঠায়।
৫. তুমি যে কাজ ই করো সেটা পাত্তাই দেয় না বা সম্মান করেনা।
৬. তুমি অন্যদের সঙ্গে সময় কাটালে রেগে যায়।
৭. তোমাকে সব সময় সব কিছু গোপন রাখতে বলে।
৮. তোমাকে মারধোর করে, আবার পরে ক্ষমা চায়।
৯. তোমার অনুমতির অপেক্ষা না নিয়েই সবসময় তোমার সঙ্গে যৌন সম্ভোগ করে।
১০. তোমাকে বাধ্য করে টাকার জন্য অন্যের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে। (Sex trafficking)
যখন ওরা এই উত্তর গুলো নিজের মত করে লেখে তখন তা থেকে আমাদের মোটামুটি একটা ধারণা তৈরি হয় যে তারা কতটা নিরাপদ অথবা আদৌ কেউ এরকম সম্পর্কের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে কিনা, এবং সেরকম আন্দাজ পাওয়া গেলে স্কুল কাউন্সিলর অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করেন।
এবার ছাত্র ছাত্রী দের তাদের ডেটিং রাইটস্ সম্পর্কে অবগত করানো হয়। এটা হল -The Teen's Dating Bill of Rights। এটা পড়তে পড়তে আমার মনে হচ্ছিলো শুধু টিন কেনো, যে কোনো বয়সে যে কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রেই এগুলো প্রযোজ্য। এদেশে নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই অধিকার গুলো প্রযোজ্য, পুরুষও সমানভাবেই যৌন নিগ্রহের শিকার, পুরুষ বা নারী সঙ্গীর দ্বারা।
ওদের বলি, মনে রেখো এই নিম্নলিখিত বিষয়গুলো তোমার অধিকার এবং তোমার প্রাপ্য। নিজের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে এবং কোনো অবস্থাতেই এ বিষয়ে সন্ধি করবেনা।
• আমার অধিকার আছে অন্য সকলের থেকে নিজেকে বেশি বিশ্বাস করার
• যার সঙ্গে আমি ডেট এ যাবো সে আমাকে সম্মান করবে
• আমি ডেট এ যাবার প্রস্তাব নাকচ করতে পারি
• নিজের নিরাপত্তার অধিকার
• আমি আমার নিজের অংশের ব্যয়ভার গ্রহণ করতে পারি।
( এটা খুব জরুরী, কোনো দায়বদ্ধতা থাকেনা)
• ডেট এ গিয়ে আমি যৌন সংসর্গ বা ঘনিষ্ঠতার প্রস্তাবে না বলতে পারি।
• "না" বলার পূর্ণ অধিকার আমার আছে।
• আমার জীবনে কোনো সঙ্গীর সঙ্গে অথবা সঙ্গী ছাড়াই নিজেকে সুখী রাখার অধিকার।
• কার সঙ্গে ডেট এ যাবো তার সম্পূর্ণ পরিচয় জানার অধিকার।
• আমার নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করার অধিকার
( এটাও খুব জরুরী, হয়তো বাড়ীর কেউ ছেড়ে দিয়ে এলো এবং নিয়ে এলো,যেটা এদেশে অনেক মা বাবাই করে থাকেন, বা নিজেই গাড়ী নিয়ে গেলো, সেক্ষেত্রে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যায়, এবং অনেক সময় পৌঁছে দেবার নামে অন্য কোথাও নিয়ে যাবার দুরভিসন্ধি কার্যকরী হয়না।)
• ডেটিং চলা কালীন যে কোনো সময় আমার সহজাত প্রবৃত্তি (instincts) যদি বলে সে জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে তাহলে বেরিয়ে আসার অধিকার।
• আমার একটা স্বাস্থ্যকর ডেটিং সম্পর্কের অধিকার আছে।
• আমার ভালোবাসা পাবার অধিকার আছে।
(যেটা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই)
• আমারও যত্ন পাওয়ার অধিকার আছে
(এটাও মনে থাকে না)
• আমারও উচ্চ আত্মসম্মানের অধিকার আছে।(high self esteem)
• সর্বোপরি যদি মনে হয় উপরোক্ত অধিকার গুলি লঙ্ঘিত হচ্ছে তাহলে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অধিকার আছে।
এই গুলি একটা একটা করে ওদের বুঝিয়ে দেবার পর বলা হল, তোমাদের যদি আরো কিছু যোগ করার প্রয়োজন থাকে যেটা তোমাদের ডেটিং এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে সেটাও এখানে লিখে রাখতে পারো এবং এগুলো নিয়ে তোমার ডেটিং পার্টনারের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করে রেখো। আশাকরি তোমাদের ভবিষ্যৎ ডেটিং গুলো সুখের এবং নিরাপদ হবে।
কি লাজুক আর মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে ওদের মুখে!