
এই লেখাটি যখন লিখছি, ২০২১ সালের এপ্রিলের শেষে, মে মাসের গোড়ায়, তখন ভারতে করোনাভাইরাস দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে | ও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা এবং অক্সিজেন ও ওষুধের চাহিদা। নানাপ্রকার ওষুধের মধ্যে, যাদের চাহিদা তুঙ্গে, তাদের অন্যতম রেমডেসিভির নামে একটি ভাইরাস-ঘাতক ওষুধ | ওষুধটি দামী এবং মহার্ঘ | এই ওষুধটিকে নিয়ে এই লেখাটির আলোচনা।
ভারতের হিন্দুস্তান টাইমসের সাংবাদিক জানাচ্ছেন যে রেমডেসিভির ওষুধটির এমন চাহিদা হয়েছে যে মানুষ যথেচ্ছ ভাবে এটির ব্যবহার করছেন, এবং ওষুধটিকে নিয়ে কালোবাজারী চলছে | করোনার মতন একটি মহামারীর সময়ে এই যে একটি ওষুধকে কেন্দ্র করে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, এই ওষুধটি কতটা কার্যকরী? ওষুধটি কি সত্যি সত্যি করোনার জন্য জীবনদায়ী? বিশেষ করে ওষুধটি নিয়ে দুটি সংস্থা দু'রকমের মতামত দিয়েছেন। আমেরিকার এন আই এইচ (সেদেশের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা) এবং আমেরিকার FDA ওষুধটিকে আপৎকালীন ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন; আবার বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থা তাঁদের প্রাথমিক গবেষণার ভিত্তিতে সতর্ক করেছেন ওষুধটি না ব্যবহার করতে। আবার ম্যাথিউ বাকল্যাণ্ড এবং তাঁর সঙ্গীসাথীরা জনৈক রোগীর ক্ষেত্রে এই ওষুধের প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছেন বলে নেচার পত্রিকায় লিখেছেন | আবার চারটি প্রাথমিক গবেষণার ভিত্তিতে একটি সিসটেমেটিক রিভিউতে আলেহান্দ্রো পিসকোয়া এবং তাঁর সঙ্গীসাথীরা PLOS ONE এ প্রকাশ করেছেন, এ ওষুধে কাজ হয় না | ভারতের এইমস ওষুধটিকে আবশ্যক ওষুধের তালিকায় রাখেন নি, অবশ্য ব্যবহার করতে নিষেধও করেন নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওষুধটিকে করোনা রোগে ব্যবহারের ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। এখন কোন একটি দেশের সংস্থা একটি ওষুধকে সে দেশে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন মানেই যে সেটি বিশ্ব জুড়ে ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ করে যেখানে বিশ্ব সংস্থা সতর্ক করছেন, তার কোন সঙ্গত কারণ নেই | তবুও নানারকম তর্ক-বিতর্কের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ FDA'র সিদ্ধান্ত সমর্থন করছেন, কেউ কেউ বিশ্ব স্বাস্থয় সংস্থার স্বপক্ষে বক্তব্য রাখছেন |
বিষয়টি কে ঠিক কে ভুলের, তা নয়, তবে যেহেতু ভারতে অন্তত এই ওষুধটি মহার্ঘ, এবং এর যথেচ্ছ প্রয়োগ হচ্ছে, এই ওষুধটির সঙ্গে বহু মানুষের জীবনের মরণ-বাঁচনের পরিস্থিতি জুড়ে আছে | তাই এই পরিপ্রেক্ষিতে আসুন এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক FDA এবং WHO কে কোন ধরণের গবেষণার ভিত্তিতে পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এর পর নিজে বিবেচনা করে দেখুন এই ওষুধটি নিয়ে যে ধরণের উন্মাদনার মত পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে, সেটি কতটা যৌক্তিক। আরেকটি বিষয়ের অবতারণা করা যেতে পারে, মহামারী পরিস্থিতিতে যেখানে একটি দেশে প্রায় নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে একটি ওষুধ সত্যিই সেভাবে কাজ না করে বলে প্রমাণসাপেক্ষ চিকিৎসার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিচার করে দেখি, সেখানে সামগ্রিকভাবে আমাদের কি করা উচিৎ?
NIH/FDA' কোন গবেষণার ভিত্তিতে এই ওষুধটিকে অনুমোদন দিলেন? এনারা চারটে স্টাডি বিবেচনা করেছেন,
১) Adaptive COVID-19 Treatment Trial - ACTT-1 দেখুন, https://www.nejm.org/doi/full/10.1056/NEJMoa2007764, ট্রায়ালটিতে পৃথিবীর নানা দেশে ৫৪১ জন কোভিড পেশেন্ট রেমডেসিভির পেয়েছিলেন, আর ৫২১ জনকে অন্য একটি কাজ করবে না এমন একটি ওষুধ দেওয়া হয়েছিল (প্লেসিবো) | দশ দিনের জন্য ওষুধ দিয়ে দেখা গিয়েছিল যে যাঁরা রেমডেসিভির পেয়েছিলেন তাঁরা মোটামুটি ১০ দিনে সেরে উঠেছিলেন, আর যাঁরা প্লেসিবো পেয়েছিলেন তাঁরা মোটামুটি ১৫ দিনে সেরে উঠেছিলেন। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন বিশেষ উপকার রেমডেসিভিরে দেখা যায়নি।
২) Remdesivir Versus Placebo for Severe COVID-19 in China (দেখুন, https://www.thelancet.com/journals/lancet/article/PIIS0140-6736(20)31022-9/fulltext) - চিনের হুবেই প্রদেশে ফেেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে ২৩৭ জনের ওপর এই ট্রায়ালটি করা হয়েছিল। এনাদের মধ্যে ১৫৮ জনকে রেমডেসিভির আর ৭৯ জনকে আর কিছু (কাজ করে না, প্লেসিবো) দেওয়া হয়েছিল। এরাও লিখেছিলেন, "In this study of adult patients admitted to hospital for severe COVID-19, remdesivir was not associated with statistically significant clinical benefits. However, the numerical reduction in time to clinical improvement in those treated earlier requires confirmation in larger studies", অর্থাৎ চিকিৎসায় সার্বিক সাড়া না পাওয়া গেলেও যাঁরা বেঁচে উঠেছিলেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা ওষুধ পেয়েছিলেন কয়েকদিন কম হাসপাতালে ছিলেন (হয়ত দ্রুত সেরে উঠেছিলেন) |
৩) Solidarity Therapeutics Trial (পুরো রিপোর্ট: https://www.nejm.org/doi/10.1056/NEJMoa2023184) - ৩০ টি দেশের ৪০০'র ওপর হাসপাতাল জুড়ে ১১, ৩৩০ জন কোভিড রোগীকে নিয়ে ট্রায়াল করা হয়েছিল। এতে ২৭৫০ জন রেমডেসিভির পেয়েছিলেন, আর ৪০৮৮ জন প্লেসিবো পেয়েছিলেন, এ ছাড়াও অন্যান্য ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। এখানেও গবেষকরা লিখেছিলেন, "These remdesivir, hydroxychloroquine, lopinavir, and interferon regimens had little or no effect on hospitalized patients with Covid-19, as indicated by overall mortality, initiation of ventilation, and duration of hospital stay.", অর্থাৎ রেমডেসিভির, হাইড্রকসিক্লোরোকুইন, লোপিনাভির, ইনটারফেরোন, কোন কিছুতেই হাসপাতালে ভর্তি কোভিড রোগীদের মৃত্যুহার, ভেনটিলেশন, এমনকি কে কতদিন থাকবেন তাতে কোথাও কোন সেভাবে প্রভাব পড়েনি। এবং এই ট্রায়ালটির ভিত্তিতে ২০শে নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কবার্তা দেন এই মর্মে যে,
"WHO has issued a conditional recommendation against the use of remdesivir in hospitalized patients, regardless of disease severity, as there is currently no evidence that remdesivir improves survival and other outcomes in these patients."
৪) Remdesivir Versus Standard of Care in Hospitalized Patients with Moderate COVID-19 (দেখুন, https://jamanetwork.com/journals/jama/fullarticle/2769871 ) | এঁরা ৫৯৬ জন কোভিড রোগীকে নিয়ে স্টাডি করেছিলেন, তবে সে স্টাডি ওপেন লেবেল, মানে কে কি ওষুধ পেয়েছেন যাঁরা স্টাডি করেছেন তাঁরা জানতেন, অতএব এনাদের রিপোর্ট যে একেবারে কোনভাবে একপেশে নয়, তা বলা যাবে না, বা অন্তত সে সম্ভাবনা যে নেই তা নয়। এই ৫৯৬ জনের মধ্যে ১৯৭ জন পাঁচ দিনের রেমডেসিভির পেয়েছেন, ১৯৯ জন ১০ দিনের রেমডেসিভির পেয়েছেন, এবং ২০০ জন সাধারণ যা চিকিৎসা করা হয় তাই পেয়েছেন, এবং যে ধরণের কোভিড রোগীর ওপর গবেষণা করা হয়েছিল তাঁরা খুব মারাত্মক কোভিডে ভোগেন নি। তা এঁরাও যে রিপোর্ট করেছিলেন, তাতে দেখা যাচ্ছে:
"Among patients with moderate COVID-19, those randomized to a 10-day course of remdesivir did not have a statistically significant difference in clinical status compared with standard care at 11 days after initiation of treatment. Patients randomized to a 5-day course of remdesivir had a statistically significant difference in clinical status compared with standard care, but the difference was of uncertain clinical importance."
কাজেই এই সংক্ষিপ্তসার থেকে একটা ব্যাপার বোঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই যে রেমডেসিভির যে বড় একটা কার্যকারী দাওয়াই তা নয়, বরং সবচেয়ে বৃহৎ ট্রায়ালে কোন উপকারই পাওয়া যায় নি | যতটুকু উপকার পাওয়া গেছে তাতে শুধু কদিনের হাসপাতালে থাকা বাঁচানো বাদে রেমডেসিভির দিলে যে করোনা রোগীর সাংঘাতিক রকম কোন উপকার হতে পারে, এই সব গবেষণা থেকে তার কোন প্রমাণ অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি, তবে আরো গবেষণা নিশ্চয় বাকী আছে |
কাজেই রেমডেসিভির নামে ওষুধটিকে নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি রকমের চাহিদার কারণ কি ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসায় যে ধরণের প্রমাণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, সেটি Double Blind Randomised Controlled Trial, এতে করে রোগী বা চিকিৎসক উভয় তরফের কেউ জানলেন না, কে কি ধরণের ওষুধ পেয়েছেন, ওষুধ দেওয়া হল, তারপর ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা হল। এই ধরণের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে রেমডেসিভিরের সেরকম বড় কোন প্রাণ বাঁচানোর ক্ষমতা নেই, অবশ্য সে যে মারাত্মক ক্ষতিকর, তাও নয়। প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে সবচেয়ে নিম্নমানের প্রমাণ হিসেবে যাকে মনে করা হয়, ব্যক্তিগত চিকিৎসকের একান্ত নিজস্ব মতামত এবং একটি কেস ভিত্তিক গবেষণা, যাতে কোন রকম তুলনামূলক আলোচনা সম্ভব নয়, শুধু সেই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রেমডেসিভির কাজের। অতএব সব মিলিয়ে রেমডেসিভিরের সাফল্যের কোন সেরকম প্রমাণ দেওয়া এখনি যাচ্ছে না।
রেমডেসিভিরকে কেন্দ্র করে ভারতে এত বিপুল পরিমাণ অসুখের এবং করোনা রোগীর হয়রানির ব্যাপারটি এখানে বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে, যে আদৌ এই ওষুধটি আমাদের দেশের মানুষের জন্য এত খরচা করে প্রয়োজনীয় কিনা, অন্তত এই মুহূর্তে |
হুমমম , খুব গুরুত্বপূর্ণ লেখা। সবার কাছে এটা পৌঁছনো দরকার। ভীষন ভীষন কালোবাজারি হচ্ছে রেমডিসিভির নিয়ে। ভারতে তো নকল ও এসে গেছে মার্কেটে।
প্রতিভা | 42.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০২১ ১৮:০৮105295চিকিৎসকেরা এইসব জানেন নিশ্চয়ই। তাঁরা যে কেন রোগীর বাড়ির লোককে ওষুধটি আনতে বলছেন ! বড় প্রাইভেট হাস্পাতাল আনতে বলবে অথচ প্রেশক্রিপশন দেবে না। সরকারেরও অনুমোদন রয়েছে। নাহলে বিনে পয়সায় দিতে বাধ্য এ-ই হুলিয়া জারি হবে কেন !
সব মিলিয়ে এতো পরস্পর বিরোধিতা যে পাগল হবার উপক্রম।
জয়ন্ত ভট্টাচার্য | 117.2.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০২১ ১৮:১৮105297আহা! জোর দিয়ে এ কথাগুলো বলা যে এখন কত জরুরি।
কোভিডের চিকিৎসা প্রশিক্ষিত জগতেও অনেকসময়ই জড়িবুটির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। অপ্রমাণিত, ট্রায়ালে পরিত্যক্ত, আন্তর্জাতিক সংস্থার দ্বারা নিষিদ্ধ ওষুধ রুটিন প্রেস্ক্রিপশনের মধ্যে পড়ছে। একজন যুক্তিশীল বৈজ্ঞানিকের যে কাজ করার কথা ছিল সে কাজটি এই প্রবন্ধে করা হয়েছে।
আমার একটি পুরনো লেখার লিংক দিচ্ছি
শেখর সেনগুপ্ত | 45.25.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০২১ ১৮:১৯105298গুরুত্বপূর্ণ লেখাটা এই মুহূর্তে যেসব চিকিৎসকেরা বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিং হোমে কোভিড চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাদের কাছে সবার আগে পৌঁছানো জরুরি। কেননা রেমডিসিভির তো তাদের করা প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমেই রোগীদের ওপর প্রয়োগ হচ্ছে।
লেখক নিজেই একজন চিকিৎসক বলে ওনার কাছে জানতে চাইছি যে হোয়াটসঅ্যাপে, পরিচিত মহলে মুড়িমুড়কির মতো কোভিডের প্রতিষেধক হিসাবে আইভারম্যাকটিন ১২এমজি বলে একটা ওষুধের নাম ঘুরে বেড়াচ্ছে। লেখক যদি এ বিষয়ে কিছু আলোকপাত করপন তবে আমার মতো আমজনতা উপকৃত হবো।
@শেখর সেনগুপ্ত
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আমার এক আত্মীয়ের কিছুদিন আগেই কোভিড হয় তখন সরকারি টেলিমেডিসিন নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাই। ওরাও কিন্তু বিভিন্ন সাধারণ ওষুধের পাশাপাশি আইভার মেকটিন ওষুধ টা বার বার করে সাজেস্ট করেন।
আপনারা সঠিক একটা গাইডলাইন বানান না, যে কোভিড হলে একচুয়ালি কি মেডিকেশন নেওয়া উচিৎ। সবাই উপকৃত হবে।
এটা পুুুণ্যদাা
শেয়ার করেছেন
dc | 122.174.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০২১ ২০:২৩105303এটা খুব জরুরি লেখা। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, ভারতের সর্বত্র (আমি যদ্দুর জানি) কোভিড নিয়ে হাসপাতালে গেলেই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে রেমডেসিভির প্রেসক্রাইব করছে। ফলে আমরা সাদারন লোকেরা পুরো কনফিউসড হয়ে আছি।
শেখর সেনগুপ্ত | 45.25.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০২১ ২১:৩৯105304@ রমিত চ্যাটার্জি
কোভিড আক্রান্তদের ক্ষেত্রে আইভারমেকটিন প্রেসক্রাইব দেশের অনেক জায়গার চিকিৎসকরাই করছেন। দিল্লিতে আমার ছেলে ও বৌমা দু'জনকেই ওখানকার চিকিৎসক আইভারমেকটিন খেতে বলেছেন। আমার প্রশ্ন সেটা নয়।
কলকাতায় চেনাপরিচিতদের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাচ্ছি যে কেউ যদি কোভিড রোগীর সংস্পর্শ আসেন, তার কোভিড সিম্পটম দেখা না দিলেও সে যদি দিনে একটা করে আইভারমেকটিন ১২.৫ মিগ্রাম পাঁচ দিন ধরে খায় তবে তার কোভিড সংক্রমণের সম্ভাবনা কমবে। এরকম ধ্যানধারণার সত্যতা সম্পর্কে আমি ডাঃ অরিন বসু, ডাঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যদের মতামত জানতে চাইছিলাম।
শেখর সেনগুপ্ত | 45.25.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০২১ ২১:৪৮105306@ পাই
ডাঃ পুণ্যব্রত গুন যেটা শেয়ার করেছে তাতে দেখছি যে কোভিড রোগীদের আইভারমেকটিন খেতে বারণ করা হয়েছে।
বাড়িতে থেকে এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কেন্দ্র/ রাজ্য সরকারের নির্দিষ্ট কোনও প্রটোকল আছে কি? জানতে পারলে সাধারণ মানুষের অনেক সুবিধা হয়।
অরিন | 161.65.***.*** | ০১ মে ২০২১ ০১:১৫105315Who ও FDA একসঙ্গে নিষেধ করছেন আইভারমেকটিন ব্যবহার করতে,
https://app.magicapp.org/#/guideline/5058/section/67421https://app.magicapp.org/#/guideline/5058/section/67421
অরিন | 161.65.***.*** | ০১ মে ২০২১ ০২:১৫105316https://app.magicapp.org/#/guideline/5058/section/67421
হু এর গাইডলাইনটাই মনে হয় অনুসরণ করলে ভাল হয়।
তাছাড়া ভারতে এইমস ও জনসাধারণের জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন করেছেন।
aranya | 2601:84:4600:5410:f9c3:3b1a:8735:***:*** | ০১ মে ২০২১ ০৩:৩৬105317দামী লেখা। বেস্ট কেস সিনারিও-তে সুস্থ হওয়ার সময়টা একটু কম হতে পারে, এটুকুই ।
এই ওষুধের কালোবাজারী, নকল ওষুধ - এর কোন মানে নেই । ওষুধ-টা যে তেমন উপকারী কিছু নয়, এ নিয়ে প্রচার দরকার , ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে
s | 100.36.***.*** | ০১ মে ২০২১ ০৫:৩২105318একটা ভুল তথ্য চোখে পড়ল এই লেখাটিতে। FDA চারটি ট্রায়ালের ভিত্তিতে রেমডেসিভির অ্যাপ্রুভ করেনি। FDA যে যে ট্রায়াল কনসিডার করেছে তা হল -
১) ACCT1 - এটা হল পিভটাল ট্রায়াল। মানে প্রধাণত এই ট্রায়ালের রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে রেমডেসিভিরের এফিকেসি দেখা হয়েছে। এছাড়া জিলিয়াড স্পনসরড আরো দুটো ট্রায়ালকে সাপোর্টিং এভিডেন্স হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে। GS-US-540-5773 আর GS-US-540-5774। এই দুটো ট্রায়ালে যেটা মূলত দেখা হয়েছে তা হল ট্রিটমেন্ট কতদিন চালানো হবে।
এবার দেখা যাক FDA সামারি রিভিউ কি বলছে ACCT1 নিয়ে -
RDV demonstrated efficacy in the NIAID-sponsored, pivotal Phase 3 trial designated ACTT-1. This double-blind, randomized, placebo controlled trial, compared 10 days of treatment with RDV to 10 days of treatment with placebo in patients hospitalized with mild, moderate or severe disease. ACTT-1 demonstrated a significantly faster time to recovery in the RDV group compared to the placebo group; the median days to recovery was 10 days in the RDV group versus 15 days in the placebo group. The key secondary endpoint of odds of improvement at Day 15also significantly favored RDV over placebo. There was a numeric difference in all-cause mortality favoring RDV, but this difference was not statistically significant. Clinical virology data was not submitted for the ACTT-1 trial.
এখানে যে ব্যাপারটা সবথেকে ইম্পর্ট্যান্ট, তা হল রেমডেসিভির গ্রুপের সিগনিফিকান্টলি ফাস্টার টাইম টু রিকভারি। কোভিড পেশেন্টরা যত তাড়াতাড়ি হসপিটাল থেকে ছাড়া পাবেন বেঁচে যাবার চান্স তত বেশি। আর হসপিটাল বেড খালি হলে সেই জায়গায় অন্য পেশেন্ট ভর্তি হয়ে বেঁচে যেতে পারেন। না হলে হসপিটালের দরজা বন্ধ করে দিতে হবে এবং হেল্থ কেয়ার সিস্টেম পুরো ভেঙে পড়বে। দিল্লীতে এখন যেটা হয়েছে। গত বছর এই সময় নিউ ইয়র্কেও খুব খারাপ অবস্থা হয়েছিল। তো এই মহামারীর সময় রেমডেসিভির হচ্ছে খানিকটা ভরসা, হেল্থ কেয়ার সিস্টেমকে চালু রাখার। নো ওয়ান্ডার, ইন্ডিয়ায় হসপিটালে রেমডেসিভির প্রেসক্রাইব করা হচ্ছে। এখন ইন্ডিয়ায় হয়ত এই ওষুধ অনেকের সামর্থের বাইরে। সেখানে সরকারের উচিৎ এই ওষুধের সাপ্লাই করা। এর পরেও ভারতে এই ওষুধ কার্যকরী না হতে পারে। কারণ বিভিন্ন দেশে হেল্থ কেয়ার সেটিং আলাদা। হয়ত সময়্মত সাপ্লিমেন্টাল অক্সিজেন না থাকায় রোগী মারা গেল। এইসব ইস্যুও কনসিডার করা উচিৎ। মোদ্দা কথা, এই মূহুর্তে রেমডিসিভির আর অ্যাকিউট কেসে ডেক্সামেথাসোন ছাড়া আর্সেনালে বিশেষ কিছু নেই। লিলির অ্যান্টিবডি ককটেল EUA পেয়েছে কিন্তু তা সিভিয়ার ডিজিজে কাজ করে না।
আইডিয়ালি, অ্যান্টাইভাইরালের কাজ হচ্ছে দেহে ভাইরাল লোড কমানো। HIV বা হেপ সির জন্যে যে সব ড্রাগ অ্যাপ্রুভ হয়েছে সব অ্যাপ্রুভালেই ট্রায়াল এন্ডপয়েন্ট হচ্ছে ভাইরাল লোড কমে যাওয়া। ভাইরাস কমে এমন একটা লেভেলে নেমে আসে যখন ভাইরাস আর প্রায় ডিটেক্ট করা যায় না। কিন্তু এই সব ট্রায়াল চলে এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে। মহামারীর সময় সেই বিলাসিতা সম্ভব নয়।
"এখানে যে ব্যাপারটা সবথেকে ইম্পর্ট্যান্ট, তা হল রেমডেসিভির গ্রুপের সিগনিফিকান্টলি ফাস্টার টাইম টু রিকভারি। কোভিড পেশেন্টরা যত তাড়াতাড়ি হসপিটাল থেকে ছাড়া পাবেন বেঁচে যাবার চান্স তত বেশি। আর হসপিটাল বেড খালি হলে সেই জায়গায় অন্য পেশেন্ট ভর্তি হয়ে বেঁচে যেতে পারেন।"
দ্রুত রিকভারি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ "রিকভারি" |
আপাতত যে চারটি ট্রায়ালের ভিত্তিতে FDA সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার কোনটাতেই দেখা যাচ্ছে না যে "রিকভারি" বা অন্ততপক্ষে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বা ক্লিনিকালি অর্থবহ প্যারামিটারে রেমডেসিভির অন্যান্য কিছুর থেকে বিশেষ করে ভালরকম কাজ করে। হয়ত রেমডেসিভির আর স্টেরোয়েডের যুগ্ম ব্যবহারে ফল পাওয়া যেতে পারে, তাহলেও নিশ্চিতভাবে রেমডেসিভির "বনাম" স্টেরোয়েডএর কার্যকারিতা সম্বন্ধে এখনো অবধি ধারণা স্পষ্ট নয়।
এবং যেটা বিশেষ করে বলার, ক্ষেত্রবিশেষে বা কেস বিশেষে রেমডেসিভিরের ব্যবহারের সিদ্ধান্ত যার যাই হোক, এই ওষুধটিকে নিয়ে কালোবাজারি বা উন্মাদনার জায়গাটি একেবারেই নেই |
এটা দেখুন। কেউ পেয়েছেন। আবার কেউ পাননি।
π এর পাঠানো লিংকটা পড়লাম। আইভারমেকটিন নিয়ে তো দেখছি দু-পক্ষই যুযুধান! আর 'বল মা তারা দাঁড়াই কোথায়' অবস্থা আমজনতার।
অরিন | 161.65.***.*** | ০১ মে ২০২১ ২৩:১৯105340শেখরবাডবু, যদি কাজে লাগে,
WHO আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন,
https://www.google.com/amp/s/mobile.reuters.com/article/amp/idUSKBN2BN2HH
কাজেই, এই ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক থাকাই উচিৎ।
অরিন | 161.65.***.*** | ০১ মে ২০২১ ২৩:২০105341শেখরবাবু হবে। টাইপোর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
আচ্ছা অরিনদা, ভারতে তো Ivermectin সেই কোন কাল থেকে Lymphatic Filariasis এর জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে, মাস ড্রাগ আডমিনিস্ট্রেশন হয়, পুরো ভালনারেবল পপুলেশনে। মশায় প্যারাসাইটের ট্রান্সমিশন আটকাতে। এটা খালি আনিমাল ড্রাগ, এমন তো নয়। ইন ফ্যাক্ট ম্যালেরিয়ার ট্রান্সমিশন আটকাতে এই ওষুধ গণহারে ব্যবহারের দাবি প্রবল, প্রচুর পেপার আছে ম্যালেরিয়া আটকাতে Ivermectin নিয়ে। ফাইলারয়াসিসে 6 mg / kg দেওয়া হয়, ৫ বা ৭ ডোজ। কোভিডে আডাল্টদের ১২ এম জি ট্যাবলেট ৫ দিন নিতে বলেছে।
তা, এই ফাইলারিয়াসিস নির্মূল করার জন্য যেখানে অসুখ থাক না থাক, সবাইকে এই ওষুধ খাওয়ানো হয়, সেই ওষুধ কোভিডে ব্যবহারে সেফটি ইস্যু আসে কীকরে? সেখানে তো সেফই বলে। ম্যালেরিয়াতে ও সেফ বলেই পেপারগুলো উল্লেখ করে।
এটা সেফ আর প্রচণড শস্তা, এই কথাটাই বারবার আসে। এই তর্কও ছিল, রেমডেসিভির খুব দামি ওষুধ তাই ফার্মা লবি পুশ করছে, আইভেরমেক্টিন খুব শস্তা বলে করছেনা ইত্যাদি।
FDA ওই আনিমালের ড্রাগ, হাই ডোজ নিয়ে সেফটির যা যা বলেছে, সেতো বোধহয় দুজন আমেরিকান ঘোড়ার জন্য নির্দিষ্ট Ivermectin খেয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন। ঘোড়ার ডোজ তো বেশি হবেই!!
এ গেল সেফটি সম্ৃকিত ইস্যু। এবার এফিকেসি নিয়ে ছোট ছোট কিছু ট্রায়ালে ফল পেয়েছে, ইউকে র বড় ট্রায়ালটাতে পায়নি। বলছে আরো নানা ট্রায়াল চলছে। তাদের রেজাল্ট এলে নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে কাজ করে কি করেনা।
এফিকেসি আছে কিনা তা নিয়ে বিপরীত ফলাফল পাওয়া গেছে বলে ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থাকতেই পারে ( যদিও এখনো লেটেস্ট রাজ্য আর ন্যাশানাল প্রোটোকলে এটা আছে, বেশ কিছু দেশে আছে, পরে বদলাতেও পারে), কিন্তু সেফটি নিয়ে কেন? নিয়ে ক্ষতি হয়েছে এমন কি কোন ট্রায়ালে পেয়েছে?
অরিন | 161.65.***.*** | ০২ মে ২০২১ ০১:৩১105343পাই, ঠিক কথা।
তবে dosis sola facit venenum কথাটা মানলে ডোজই বিষ, এবং ফাইলেরিয়ায় কাজ করছে মানেই যে সে কোভিডে কাজ করবে তার তাত্ত্বিক ভিত্তি যাই হোক, যতক্ষণ না নিশ্চিত evidence পাওয়া যাচ্ছে, মনে হয় না আজকালকার দিনে কেউ রেকমেণ্ড করবে। fda, eu, who র কেসে সেটাই হয়েছে। তারপর evidence এর interpretation ও একেক এজেনসি একেক রকম করেন, যদিও এক্ষেত্রে বিশেষ মতপার্থক্য দেখা যায়নি।
ফাইলেরিয়ায় কাজ করছে বলেই কোভিডে করবে এরকম তো কোথাও কেউ বলেনি! ফাইলেরিয়া এফিকেসি প্রসঙ্গে না, সেফটি প্রসঙ্গে এসেছে
অরিন | 161.65.***.*** | ০২ মে ২০২১ ০২:৪১105345লিখলাম তো, তুমি ঠিক লিখেছ :-)
Bodhisattva Dasgupta_Gurulogin | ০২ মে ২০২১ ০৪:৩০105346আলোচনাটা দারুন লাগল। রিজয়েন্ডার গুলি সহ। প্আরশ্মান ছিল যে আমাদের এখানে ডাক্তারবাবুরা কি পছন্দ মত প্রোটোকল অনুযায়ী কাজ করেন নাকি দেশের প্রধান এজেন্সি গুলির কথা শোনেন নাকি সবটাই নিজস্ব জাজমেন্ট? ভারতে কোভিড পেশেন্টের উপরে এগুলোর ট্রায়াল হয়েছিল?
Bodhisattva Dasgupta_Gurulogin | ০২ মে ২০২১ ০৪:৩১105347**প্রশ্ন(টাইপো)
আইভেরমেক্টিন নিয়ে।
প্রোফাইলেক্টিক হিসেবে এর ব্যবহারটা ইন্টারেস্টিং।আফ্রিকায় এত কম হবার কারণ এটা হতেই পারে, অন্যনান্য অসুখের জন্য এটা আগেই মাস ড্রাগ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকা।
https://www.pharmaceutical-technology.com/news/aiims-study-covid-19/
অরিন | 161.65.***.*** | ১০ মে ২০২১ ১৫:০৯105828আসলে এত দ্রুত সব কিছু বদল হচ্ছে, কোনটা কাজে লাগতে পারে, কেন, এই নিয়ে প্রচুর চিন্তাভাবনা, গবেষণার অবকাশ রয়েছে। এমনিতেও প্যারাসাইটিক অসুখ থাকলে (ক্রিমি প্রভৃতি), সেই সব মানুষের কোভিড হবার প্রবণতা কম দেখা গেছে। কাজেই আইভারমেকটিন হতেেই পারে। আবার প্যারাসাইট কনফাউনডিং এও হতে পারে, এখনই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।