আমরা যা করেছি: নির্ভয়া কেসের পর ডিপি কালো করেছি। মোমবাতি মিছিল করেছি। তাত্ত্বিক প্রবন্ধ লিখেছি এবং বক্তৃতা দিয়েছি। অনিতা দেওয়ানের সময় মার্ক জুকারবার্গ শিশু, জ্যাক ডোরসি ও সেভাবে বিখ্যাত নন, ফলে সেইসব করে উঠতে পারিনি, কি আর করা যাবে।
যে বাসস্ট্যান্ড থেকে জ্যোতি সিং বাসে ওঠেন, সেই বাস স্ট্যান্ডে এখনো আলো লাগানো হয়নি, এখনো অন্ধকার এবং নিরাপত্তাহীন সেই জায়গা। সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ।
নির্ভয়ার পর কামদুনি।
আমরা যা করেছি: কামদুনির পর ডিপি কালো করেছি। মোমবাতি মিছিল করেছি। তাত্ত্বিক প্রবন্ধ লিখেছি এবং বক্তৃতা দিয়েছি। টুম্পা কয়াল না মৌসুমী কয়াল, কে বেশি সফিস্টিকেটেড লুকিং ফলে আন্দোলনের মুখ কাকে করা উচিৎ, সেই নিয়ে আলোচনা করেছি।
যে রাস্তা দিয়ে শিপ্রা ঘোষ হেঁটে আসছিলেন সেদিন, কামদুনির সেই রাস্তায় এখনো আলো বসেনি সব জায়গায়, সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ।
কামদুনির পর উন্নাও হয়েছে।
আমরা যা করেছি: উন্নাও এর পর ডিপি কালো করেছি। মোমবাতি মিছিল করেছি। তাত্ত্বিক প্রবন্ধ লিখেছি এবং বক্তৃতা দিয়েছি। ২০১৭ নাগাদ মাল্টিমিডিয়া বেশ উন্নত হয়েছে, মিম জিনিসটার সাথে অনেকের পরিচয় হয়েছে। ফলে কিছু মিম ও বানিয়ে ফেলেছি।
উন্নাওয়ের পর কাঠুয়া।
আমরা যা করেছি: কাঠুয়ার পর ডিপি কালো করেছি। মোমবাতি মিছিল করেছি। মিম বানিয়েছি, তাত্ত্বিক প্রবন্ধ লিখেছি এবং বক্তৃতা দিয়েছি। কবিতা লিখেছি।
রাসনা গ্রামে আসিফা বানোর পরিবার এখন কেমন আছেন, সে ব্যাপারে বিশেষ মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই, কারণ কাঠুয়ার পরে এরকম অজস্র ঘটনা ঘটেছে, এবং সেগুলোর সূত্রে আমরা নতুন নতুন আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছি। এই যেমন প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির সম্ভাব্য ধর্ষকদের এনকাউন্টারে মারার পর উল্লাস দেখিয়েছি সাবাস রাষ্ট্র বলে।
অবশ্য সবজায়গায় আন্দোলন করে উঠতে পারি নি। বরানগরে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের সামনের ফুটপাথ থেকে এক ভিক্ষাজীবী মহিলা কে তুলে নিয়ে গিয়ে সারারাত গাড়িতেই ধর্ষণ করে, যোনিদেশে স্ক্রুড্রাইভার ঢুকিয়ে দেহ ফেলে রেখে যাওয়া হয় বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে। সে নিয়ে বিশেষ কথা হয়নি। একজন ভিখারির জন্য আন্দোলন করার মতো অতটা সময় সম্ভবত আমরা বার করে উঠতে পারি নি।
আমরা যা করেছি : মনীষা বাল্মীকির ঘটনার পর, আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় গর্জে উঠেছি। কারণ আমরা জানি যে যোগী আদিত্যনাথ খুব ভালো বাংলা পড়তে জানেন, নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ার বাংলা পোস্টগুলি দেখেন, ফলে আমাদের এই কড়া নিন্দায় তিনি অনুতপ্ত হবেন এবং হাথরাসের মতো আর কোনো ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটতে দেবেন না।
আমরা যা করিনি: যতটা গুরুত্ত্বের সাথে আমরা নিজেদের সন্তানদের ফার্স্ট হতে শেখাই, শেখাই প্রতি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট বা চাকরিতে উন্নতি করার জন্য যে কোনো রাস্তা নিতে, সেই গুরুত্ত্বের দশভাগের একভাগ দিয়েও শেখাইনা, যে, সমস্ত রকমের বৈষম্য - ধন, শ্রেণী, ধর্ম, লিঙ্গ, জাত, গাত্রবর্ণ - অমানবিক। এবং সেরকম কোনো বৈষম্য দেখলে, দরকারে পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার প্রিপারেশন মুলতুবী রেখে সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়।
শেখাইনি। শেখাইনা। শেখাবোনা।
আমরা যা করিনি : আমাদের সন্তানদের শেখাইনি যে এমপ্যাথি এক মহামূল্যবান সম্পদ। এবং সিলেকটিভ এমপ্যাথি বলে কিছু হয়না। লিঙ্গবৈষম্যে কেউ এমপ্যাথি দেখিয়ে শ্রেণিবৈষম্যে না দেখালে, বা ধর্ম বৈষম্যে দেখিয়ে গাত্রবর্ণ -বৈষম্যের ভিকটিমের প্রতি না দেখালে, হয় সেই এমপ্যাথি ফেক, অথবা এমপ্যাথি প্রদর্শনকারীর মানবিক শিক্ষা অসম্পূর্ণ।
আমরা যা করিনি: রাষ্ট্রযন্ত্র যে জ্যোতি সিং থেকে শুরু করে মনীষা - সবার পরিণতির মূল দায়ভার নিতে বাধ্য, রাষ্ট্রকে তা ভাবতে বাধ্য করিনি। আমার ট্যাক্সের টাকায় আমার কন্যা সন্তান কেন নিরাপত্তা পাবে না, কেন বিমানবন্দরে সেই টাকায় এক মহিলা চিত্রতারকাকে ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হবে আমাদেরই ট্যাক্সের টাকায় আমাদের অনুমতি না নিয়ে - রাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখে এ প্রশ্ন করি নি। উত্তাল সমুদ্রের মতো জনকলরোলে রাস্তা ভাসিয়ে দিয়ে পথে নেমে রাষ্ট্র কে প্রশ্ন করিনি জ্যোতি থেকে মনীষা এবং স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের সামনের সেই ভিক্ষুনীর ও পরিণতির দায় রাষ্ট্র কেন নেবে না, কেন আমার কন্যার নিরাপত্তা জোগানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের নয়, কেন সে নিরাপত্তাহীন - রক্তচক্ষে হুঙ্কার দিয়ে রাষ্ট্রের কলার পাকড়ে, প্রবল ঝাঁকিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্র কে এই প্রশ্ন করিনি।
এই প্রশ্ন করতে আমাদের আটকেছে। কারো পদোন্নতি, কারো বিদেশে যাওয়া, কারো সরকারি পুরস্কার পাওয়া, কারো গ্র্যান্ট পাওয়া, কারো কোনো কমিটির প্রধান হওয়া, একটি মালা, একটি উত্তরীয় - এসবে আটকেছে। গুহ্যদ্বারে রুল ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে তাছাড়া।
আমরা যা করছি: মনীষা বাল্মীকির ধর্ষকরা মঙ্গলগ্রহ থেকে নেমে আসা রাক্ষস ভেবে নিজেদের প্রবোধ দিচ্ছি। সেই রাক্ষসরা যে প্রকৃত প্রস্তাবে আমাদের সামাজিক উদাসীনতার ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন, মনীষার মৃত্যুর পেছনে যে আমাদের দায় ও আছে, তা সযত্নে নিজেদের বিবেকের কাছে এড়িয়ে যাচ্ছি।
হাথরাস হবে। নির্ভয়া, কামদুনি, উন্নাও, কাঠুয়া - হবে। আবার হবে। হতেই থাকবে।
ও হ্যাঁ, রাষ্ট্র কিছক্ষন আগে জানিয়েছেন, মহামান্য আদালতের মাধ্যমে, বাবরি মসজিদ আপনাআপনি ভেঙে পড়েছে। কেউ পরিকল্পিত ভাবে ভাঙেনি। ঠিক যেমন মনীষা বাল্মীকিকে হয়তো কেউ ধর্ষণ করেনি।
বা ধর্ষণ করেছে। মনীষা এবং বিচারব্যবস্থাকে।
একেবারে, নির্জলা, মোক্ষম, সত্যি কথা!
তাপস এই নিজেদের লিবারেলিজম নিয়ে আত্মগ্লানি টা , এবার একটু কম করো মাইরি। রক্ষনশীল শত্রূ পক্ষ র হাতে রেটোরিকাল অস্ত্রতুলে দিয়ো না জ্যোতিবাবু হুইস্কি খেতেন বলে চারু মজুমদারের মেয়ে ডাক্তার বলে দেশে মসজিদ থাকবে না? মমতা ব্যানার্জি ই`মরেজি বলতে পারে না বলে, স্বপন দাশগুপ্ত মুখ্য মন্ত্রী হবে? কোন কথা হল ?
দ্যাখো আমাদের হাতে ব্রিক বাই ব্রিক লড়াই এর অস্ত্র নেই , এক ই`ঞ্চি সিমেন্ট না থাকলেও , কিছু শব্দ আছে , পাঠক আছে আড়াই খান , তোমার ব্যবহৃত একটা শব্দ ও রাজনৈতিক রক্ষনশীলের কাজে না লাগে সেটা কি দেখবা না? এই নিয়ে দমুর সংগে ঝগড়া করে এলাম এখন কিন্তু ম্যাচ রেডি :-)))
তাপস এই নিজেদের লিবারেলিজম নিয়ে আত্মগ্লানি টা , এবার একটু কম করো মাইরি। রক্ষনশীল শত্রূ পক্ষ র হাতে রেটোরিকাল অস্ত্রতুলে দিয়ো না জ্যোতিবাবু হুইস্কি খেতেন বলে চারু মজুমদারের মেয়ে ডাক্তার বলে দেশে মসজিদ থাকবে না? মমতা ব্যানার্জি ই`মরেজি বলতে পারে না বলে, স্বপন দাশগুপ্ত মুখ্য মন্ত্রী হবে? কোন কথা হল ?
দ্যাখো আমাদের হাতে ব্রিক বাই ব্রিক লড়াই এর অস্ত্র নেই , এক ই`ঞ্চি সিমেন্ট না থাকলেও , কিছু শব্দ আছে , পাঠক আছে আড়াই খান , তোমার ব্যবহৃত একটা শব্দ ও রাজনৈতিক রক্ষনশীলের কাজে না লাগে সেটা কি দেখবা না? এই নিয়ে দমুর সংগে ঝগড়া করে এলাম এখন কিন্তু ম্যাচ রেডি :-)))
বোধিকে: ইনি কিন্তু অন্য তাপস। ছবি দ্রষ্টব্য। :-)
এ বাবা সরি, আমি প্রখ্যাত সাংবাদিক ট্যাপোষ ডাষ এর সংগে গুলিয়ে ফেলেছি। ইয়ার্কি আর অতি ফ্যামিলিয়ারিটির সুর টির জন্য ক্ষমা প্রার্থনীয়, মোদ্দা বক্তব্য টা থাক, তবে নট হিয়ার টু উইন আর্গুমেন্ট্স :-)))
তাপস কুমার দাস , নিজ গুণে মার্জ্জনা করবেন ।
সৈকত, তুমি সালা মজা পাচ্ছো, ছবি টা বড় করে দিবি তো, এ বয়সে ফস করে সব কিছু দেখা যায়?
দুলালবাবুই সত্যদ্রষ্টা, শুধু সইয়ে কী হবে, ছবিও (+বড় করে) চাইঃ)
তবে বোধির মূল বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। যে কান্ডটা ঘটেছে, তা নারকীয়। উন্নাওয়ে এর আগে যা ঘটেছে, তাও নারকীয়। কিন্তু তার দায় আমি কেন বইব? বিজেপির ঘটানো কান্ডের দায় বিজেপি বইবে। খুব পরিষ্কার।
তার চেয়েও বড় কথা হল, আরবের চপ-চপ স্কোয়্যারের দায় আমি নিইনা, তালিবানদের সুকীর্তির দায় আমি নিইনা। খামোখা হিন্দি বলয়ের অপকীর্তির দায় আমি বইব কেন? ও এলাকা মূলত জঙ্গলের রাজত্ব, যেখানে একদিকে যোগি মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে ব্যাপম কেলেঙ্কারি। বিহারে তো মুখ্যমন্ত্রীর বেটিকে পরীক্ষায় প্রথম করে দেওয়া হয়। আমাদের ছোটোবেলায় ট্রেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিহারে ঢুকলেই, রিজার্ভড কম্পার্টমেন্টেও কাঁটা হয়ে বসে থাকতে হত। পালে-পালে লোক এসে এখনই গায়ের জোরে জায়গা দখল করবে। এর কোনোটাই পশ্চিমবঙ্গে হয়না।
হ্যাঁ, পশ্চিমবঙ্গে জাতপাত নেই? আছে। কিন্তু নিচুজাতের লোক কেন চোখ তুলে তাকাল, আয় ধরে ন্যাংটো করে পিটিয়ে দিই, এ জিনিস অকল্পনীয়। পরীক্ষায় গোলমাল, দুর্নীতি? তাও আছে, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বেটিকে ফার্সট করে দেওয়া অসম্ভব। ধর্ষণ? তাও হয়, কিন্তু এইগুলো যা ঘটছে, যেকোনো জমানাতেই পশ্চিমবঙ্গে অকল্পনীয়।
তা, কথা হল, হিন্দুস্তানিদের দায়, তারাই একটু বয়ে দেখুকনা, ফর আ চেঞ্জ। রবিশ কুমার, কি যোগেন্দ্র যাদব, কি কানহাইয়া কুমার, এমনকি রাহুল গান্ধি, কাউকেই তো এসবের দায় নিতে দেখিনা। আমরা কেন নেব? কোথাও কিছু একটা নারকীয় কান্ড হল, আর আমরা লিবারাল বাঙালিরা হইহই করে সবার আগে দায় নিতে দৌড়লাম, এসব জিনিস বন্ধ হোক। বিজেপির জানোয়ারগুলিকে দায় নিতে দেওয়া হোক। আর তাদের যারা নির্বাচন করেছে, সেই নির্বাচনমন্ডলীকেও দায়ী করা হোক।
কামদুনি টা বাংলায় .
কামদুনি অবশ্যই বাংলায়। বানতলা বিরাটিও। হালের পার্ক স্ট্রিটও। সে খুবই খারাপ ব্যাপার। কিন্তু তুলনা? জাস্ট হয়না। বাংলায় কখনও দেখেছেন, স্রেফ নিচু জাতের লোক বলে গ্রামকে গ্রাম শুইয়ে দিয়ে যাচ্ছে রণবীর সেনা? বিহারে হয়েছে। কখনও দেখেছেন, ধর্ষণ বা দুর্নীতির সাক্ষীরা একে একে পটল তুলছে, একের পর এক অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে মরে চলেছে? কখনও দেখেছেন ধর্ষণের সপক্ষে মিছিল বেরোচ্ছে? সব চেয়ে বড় কথা, যোগির মতো কাউকে মুখ্যমন্ত্রী দেখেছেন?
আত্মসমালোচনা নিশ্চয়ই করুন, কিন্তু বর্বরদের বর্বরটা আগে বলুন। আমরা সবাই দোষী -- এই বলে অন্যের দায় লঘু করবেন না।
এটা আপনার রাজনীতি। বিজেপি শাসিত রাজ্য কংগ্রেস, সিপিএম এমনকি তৃণমুল শাসিত রাজ্যের চেয়ে ঢের খারাপ এটা প্রমাণ করতে চাওয়ার মধ্যে একটা আর্জেন্সি আছে, একটা স্টেক আছে যাতে পরবর্তী নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি না চলে আসতে পারে। বাংলা ও বাঙালী, ভাষা ও জাতি হিসেবে হিন্দি ও জাঠ/খোট্টাদের কাছে কতখানি অসহায়, নানা লেখায় সে বিষয়ে নজরটান দেওয়াতেও সেই রাজনীতি স্পষ্ট। ব্যক্তিগতভাবে আমিও একই সংকটের আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত বলে উপরের উদাহরণগুলির কাউন্টার করার চেষ্টা করলাম না খোলা পাতায়। তবে আপনিও জানেন, যে কটা উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা করলেন সবগুলোরই কাছাকাছি উদাহরণ বঙ্গেই রয়েছে। *গী বর্বর, *ণবীর সেনা বর্বর, এবং দেখবেন তৃণমুল সিপিএম তরজায় যে যে ঘটনার কথা ঘুরে ফিরে উঠে আসে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাসীন সময়ে, বা হার্মাদ, কংশাল, রুনুর পুলিশ সেগুলি কিছুই কম বর্বর নয়। ক্ষমতা নিজেই এই বর্বরতার চালিকাশক্তি। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আরও নগ্নভাবে। লেসার ইভিল কে চুজ করার রাজনীতি সমর্থন করতে বাধ্য হচ্ছি যে অসহায়তা থেকে সেখানে ইভিলের প্রতি সামগ্রিক ঘৃণা কিছু কম নেই।
স্রেফ রাজনৈতিক বিপক্ষতার কারণে গোটা চাষজমি ধানগোলা জ্বালিয়ে দেওয়া, পুকুর ভর্তি মাছ মেরে ফেলা, বাড়িতে বস্তিতে আগুন দেওয়া, ধর্ষন করে জ্বালিয়ে দেওয়া, ভোটে দাঁড়ানোর সাহস দেখানোয় খুন করে ফেলা, পিছনে ইডি লাগিয়ে, মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে, মিথ্যে কেস দিয়ে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে উত্যক্ত করে জীবন পরিবার তছনছ করে দেওয়া, রুলিং পার্টির ছেলে রেপ করেছে বললে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে জেলে পুরে দেওয়া আর পরিবারের লোকেদের নামে একের পর এক কেস দিয়ে যাওয়া - তুলনা বলে কিছু হয়না আসলে আমের সাথে আপেলের, হাতির সাথে টিউবলাইটের। বর্বরতা সবস্তরেই দেখা হয়েছে। উনুনের চেয়ে গরম চাটু, চালুনির চেয়ে ছুঁচ, কামানের চেয়ে বন্দুক এই বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছি। নিজেকেও একই সাথে ঘৃণা করতে বাধ্যই হচ্ছি। কারণ নিজেকে বা আত্মজাকে ধর্ষন করতে দিতে একজন খুনি আর একজন ডাকাতের মধ্যে থেকে কাউকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছি।
আমাদের প্রজন্ম কোনো নতুন/পাল্টা সিস্টেম প্রস্তাব করার মত থিয়োরেটিশিয়ান দেখল না। সে তত্ত্ব বাস্তবে রূপান্তর করার মত টাস্কফোর্স বা ওয়ার্কফ্লো ডিজাইন তো দূরের কথা।
বোধিসত্ত্ব বাবু আমি কিছু মাইন্ড করিনি
বোধিসত্ত্ব বাবু আমি কিছু মাইন্ড করিনি l ইয়ার্কি নিয়ে আমার কোনো এলার্জি নেই আমি নিজেও চ্যাংড়া ধরণের l আর এটা তো মুক্ত মত প্রকাশের জায়গা l যে যার মতো বলবে সেটাই তো স্বাভাবিক এবং কাম্য l
মূল লেখাটা আর ০২ অক্টোবর ২০২০ ০০:৪৫ র পোস্ট ভালো লাগলো পড়ে.
থ্যাংক ইউ, তাপস কুমার দাস বাবু। আসলে তাপস বলে আমাদের একজন প্রিয় বন্ধু আছেন, কঠিন রোগা, কঠিন পড়ুয়া ও জেনেরালি মোটাদের পৃথিবী ও ওয়ার্ল্ড ভিউ সম্পর্কে সন্দেহবাতিক গ্রস্ত। তো সে কারণে আমি প্রতিহিংসা বশত তাঁকে নিয়মিত ইনছাল্ট কইরা থাকি :-)))))
সৈকত বন্ধ্যোপাধ্যায়ের যুক্তিটা বেশ খাজা।
"অসহায় মানুষ" এর সাথে একমত। ইউপিতে খুব খারাপ সব ব্যপার হয় আর পশ্চিম বঙ্গে সেরকম হয়না, এরকম অদ্ভুত যুক্তি এই প্রথম দেখলাম। পশ্চিম বঙ্গর পলিটিকাল ভায়োলেন্স ইন ফ্যাক্ট যথেষ্ট ফেমাস, অন্য অনেক রাজ্যের থেকে পশ্চিম বঙ্গে রাজনৈতিক কারনে খুনজখম বেশী হয়। আর ইউপিতে যা হচ্ছে সেরকম ঘটনা অন্য রাজ্যেও হয়েছে বা হচ্ছে। হঠাত পশ্চিম বঙ্গ মঙ্গল গ্রহ থেকে আসা আলাদা রাজ্য কেন হতে যাবে বুঝলাম না।
উফ্ফ বাবা সৈকত (pratham) সমর্থন একটু করলো তো তাও আবার বাঙালি ন্যাশনালিস্ট শর্তে। এন আর সি না থাকলে ঝগড়া করতাম ঃ-))কিন্তু এখন যেহেতু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না, তাই মরাল পজিশন নেবা সম্ভব না। দার্শনিক চির সত্যের প্রতি আমার পিস টাইমে ফ্যাসিনেশন আছে, কোয়েশ্চেন ইজ, এখন তো পিস টাইম না।
কেন, ১৯৮৪ তে শুওরের বাচ্চা কংগ্রেস শিখ দাংগা করেছে বলে, আমি মোটামুটি বাংলা বলা বাংআলি মোটামুটি আর্ম চেয়ার না কচু, ভাঙআ চেয়ারের বা রট আয়রনের চেয়ারে বসে পোঁদে ব্যাথা করা মোটামুটি বামপন্থী মোটামুটি মোটামুটি লিবেরেল মোটামুটি সেকুলার, সাতে পাঁচে থাকি না, মা কালি কে নমস্কার করে ফেল করতে করতে পাশ করি, হঠাৎ কাশ্মীর প্রসংগে ডিফেন্সিভ হব কেন?
খুব স্বাভাবিক ভাবে লোকে প্রশ্ন করবে, তাইলে কি এটা স্তালিনিজম এর নতুন সময়, আমাদের ই কিছু বন্ধু খচে গিয়ে স্টেটাস দিয়ে বেরাচ্ছে, গুলাগ ওহি বনায়েংগে। ক্রোধ বিশুদ্ধ, কিন্তু আমি সত্য কথা বলতে কি, আর্বান অবিশুদ্ধ জীবন ই কামনা kari। বম্বে তে বন্ধু দের নিয়ে বিহারি ই হৈ বাঙালি ই হই রাতের রাতের পর রাত হৈ হৈ করব, কিন্তু একটু হর্মলেস গাঞ্জা খেলে বা অল্প শুকনো করলে জেলে অথবা পাকিস্তানে যাব কেন।
দ্বিতীয় ব ক্তব্য হল আমরা তো রাষ্ট্র প্রধান না, স্তালিনের ১৯৩৭ এর পাপের দায় কেন নেব? কেনই বা তার মুর্খামি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব না।
যেটা বোঝা দরকার , আমাদের প্রজন্মের অ্যাভারেজ বাঙালি বামপন্থী সেকুলার লোকের, সময়ের কারণে, নতুন , এমনকি ক্যাজুয়াল স্পেসেও নতুন, লিংগো চাই। এবং সে লিংগো ইমরাল ই হবে। চল্লিশের দশকের বামপন্থী দের কাছে ষাটের দশকের বামপন্থী দের কাছে, ৭০ -৮০ এর বড় হওয়া র পরে :-))) ফ্লাওয়ার জেনারেশনের টেকো বুড়ো আর কল্লোল দার প্রজন্মের কাছে, ৮০ র দশকের ওয়েলফেয়ার স্টেটে r ক্রিটিক দের কাছে যা শেখার শিখবো, কিন্তু নিজেদের সময়ের ভাষা , এমনকি ক্যাজুয়াল ভাষা নিজেরাই তৈরী করব। ওয়েলফেয়ার স্টেট কে শুধুই প্রোভাইডার না, গ্যারান্টর অফ রাইট্স আমাদের কেই করে তুলতে হবে। বানচোত গুলো কোন স্কিমে ডোরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফারে মানুষ কে দু পয়সা দিয়েছে বলে কি যখন তখন জেলে পুরবে রেপ করবে ডি-ভোটার বলবে , মাম্দোবাজি নাকি?
গায়ে জোর নেই বলে ইঁট ছাড়তে পারি , শব্দ ছাড়বো না। বিজেপির উপকারে লাগে এরকম একটা শব্দ ও আনবো না। অতএব ঐতিহাসিক আত্মগ্লানির প্রশ্ন ই উঠছে না। কতগুলো চমকানো পাঁঠা কে ভয় পাবার প্রশ্ন নেই।
আমাদের সময়ের বাম সেকুলার লিংগো , আমাদের ই তৈরী করতে হবে। এবং সেটা বিশুদ্ধ ও মরাল নাই হতে পারে।
আমি জানি না আপনারা মনে করেন কি না, আমি মনে করি অভিজ্ঞতার দিক থেকে টোটালাটারিয়ানিজম কে হ্যান্ডল করতে আমরা জানি ই না, শিখতে হবে। এবং ফলস ইকুইভ্যালেন্সে পড়লে হবে না। ১৯৭৭০-১৯৭৭, ইন্দিরার সঞ্জয়ের নর্তন কুর্দনের সময়ে আমাদের পিতা পিতৃব্য ও টেকো বুড়ো রঞ্জন দা , ডার্লিং কল্লোল দা দের একটা শিক্ষা নেব, কিন্তু তার তুলনায় এ যা এসেছে, অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক। আর আন্তর্জাতিক সরকারি সলিডারিটি o কিসু নেই। এবং এটা বুঝতে হবে শুধু সোভিয়েত স্টেট নেই তা না, আমনেস্টি ও নেই, লিটেরালি নেই। সুতরাং ১৯৪৫ পরবর্তী ওয়েলফেয়ার স্টেট এর সময়ে তার নেসেসারি ক্রিটিসিজম হিসেবে যা গড়ে উঠেছে, হিউম্যান রাইট্স এর ধারণা, নারীবাদ , যৌনতার স্বীকৃতি, পরিবেশ সচেতনতা ইত্যাদি, তার প্রত্যেকটার ই উত্তরণ ঘটাতে হবে। আমি বলছি না শেখার কিছু নেই, পশ্চিমে একটা ইনার সিটি কো হ্যাবিটেশন er মডেলে গড়ে ওঠা যেটা লিংগো যেটা কে আমরা আজ লিবেরাল লিংগো বলে জানি, শুধু সেটা দিয়ে ট্রাম্প , মোদী পুতিন দের সময় কে হ্যান্ডল করা যাবে বলে মনে হয় না। একেবারে নতুন ভাষা লাগবে। এবং ইতিহাস চর্চাতে ও টাইমিং ইত্যাদি প্রশ্নে, আমি বিজেপি র রেটোরিকে ন্যুনতম সুবিধা দিতে রাজি নৈ।
হোয়েন দ্য অ্যাটাক ইজ টোটাল অন ফ্রন্ট্স, আমরা ভাষা কর্মী , স্মল টাইম রাইটার্স, আমাদের ফ্রন্ট টা আমাদের ই দেখতে হবে। এমন ভাবে দেখতে হবে, যাতে অন্য ফ্রন্ট গুলোর কাজে লাগে।
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
আমার মনে হয় পরে ন্যাশনাল ভোটে বিজেপির পার্লামেন্টের সিট খানিকটা কমবে, অন্য দলগুলোর কিছু বাড়বে। ইন্ডিয়ান ভোটের এই একটা ভালো ট্রেন্ড, কয়েকটা টার্ম পর পর সরকার পাল্টে দেয়। ইউপিতে পরের ভোটে অখিলেশের জেতার চান্স আছে। এতো উত্তেজিত হয়ে লাভ কি? :-)
উত্তেজনা কমলে ভোট বাড়বে না। কারণ তোমাদের জেনারেশন তোমরা পারোস্নালাইজ্ড ক্যাম্পেন টুল সব ই পয়সার বিনিময়ে ওদের হাতে তুলে দিয়েছ। সবজি মন্ডি ও উঠে গেছে। অতএব ফাকা বাজারে ই আমাদের চিতকার করতে হবে :-)))
ভোটের আশা করে বসে থাগলে হবে না।
পয়সার বিনিময়ে আর কোথায় হলো? :-( আমি তো ভোট ফোট সবই ওদের হাতে তুলে দিতে পারি, সামান্য কয়েক লাখ টাকা পেলে। সে আর ওরা দিচ্ছে কই? :-(
টিভি ক্লিপিংস দেখলাম প্রতিমা মণ্ডলকে পুরুষ পুলিশ অফিসার হাত দিয়ে ঠেলে সরাচ্ছে। এই ক্লিপিং অনুসারে ভদ্রলোকের চাকরি চলে যেতে পারে কিন্তু। উত্তর প্রদেশের এ ডি জি দেখলাম রাজনীতিবিদদের ভাষায় বললেন, ধর্ষণের প্রমাণ নেই , কিছু লোক আন্তঃসম্প্রদায় ঝামেলা লাগাতে চাইছে। উনি প্রথম বাক্যাংশ বলেই থেমে গেলে নিজের এক্তিয়ারে থাকতেন। এবিপি আনন্দের সাংবাদিককে কীভাবে পুলিশ আটকালো দেখলাম। স্বয়ং রাহুল গান্ধী আর ডেরেককে পুলিশ ঠেলে ফেলে দিল।
এই এক্সেস কেন?
দুটো জিনিস লক্ষ্যণীয়। ১) যোগীর আমকে উত্তরপ্রদেশে পুলিশের ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। সি এ এ বিরোধী আন্দোলন রুখতে পুলিশকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে জানি। পুলিশ সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাবসিডিয়ারির ভূমিকা পেয়ে গ্যাছে। চাকর মালিক হয়ে উঠলে যা হয়।
২) দলিত ও মুস্লিমবিরোধী রেটরিক নিশ্চয়ই ইউপিতে অনেকটা স্পেস পাচ্ছে। হাথরাস কাণ্ডে অবশ্যই কাস্ট অ্যাংগেল আছে, আর সেই কাস্ট অ্যাঙ্গেল বিজেপির ভোটবেস মাসবেস ধরে রাখার জন্য দরকারিও। কাস্ট হেট্রেড কে সরকার প্রোটেক্ট করছে, এই ইম্প্রেশনটা তৈরি করা উত্তরপ্রদেশের বিজেপির দরকার।
আমি এই প্রবন্ধের মূল সুর এবং 'অসহায় মানুষের' সংগে পুরোপুরি একমত। আবার এই প্রথম সৈকতের পোস্ট পড়ে অবাক হলাম। হয়ত ওর বক্তব্য বুঝতে আমার ভুল হচ্ছে।
১ বিজেপির ঘটানো কান্ডের দায় বিজেপি বইবে। খুব পরিষ্কার।
-- মানে সিপিএমের ঘটানো কান্ডের দায় সিপিএমের, কংগ্রেসের কাজের দায় ওদের সমর্থক কর্মীদের, তিনোদের দায় শুধু ওদের?
খেয়াল করুন, তাপস শুধু আত্মগ্লানির কথা বলছেন না । বরং চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন সামাজিক রুট কজ দেখে দাওয়াই না খুঁজে শুধু ল এন্ড অর্ডার সমস্যা ধরে নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের নিন্দা করে দায় সারলে এইজাতীয় ঘটনা বারবার ঘটবে--দিল্লি বা কোলকাতায় সরকার বারবার বদলে দিলেও।
হাতে গরম উদাহরণ, গত তিনদিনে ইউপিতে আরও দুটো মেয়ে খুন (সম্ভবতঃ ধর্ষণজনিত) হয়েছে। দুজনেই মাইনর। প্রথমটিতে ষোলবছরের দলিত মেয়েটির ধর্ষক দুজন মুসলিম। কালকের ভদৌহির ঘটনায় চোদ্দ বছরের দলিত ্মেয়েটিকে ঝুপড়ি থেকে তুলে নিয়ে শেষমেষ পাথরে মাথা থেঁতলে দেয়া হয়েছে। হত্যাকারীরা সবাই দলিত!
অর্থাৎ মেয়েদের প্রতি এই সব নৃশংস অত্যাচারের পেছনে রয়েছে পিতৃতন্ত্রের সংস্কৃতি যাতে মেয়েদের হীন এবং কমোডিটি হিসেবে দেখা হয়। ধর্ষণ বা জোর করে ভোগ আসলে পুরুষের নারীর উপর অধিকার স্থাপিত করার প্রয়াস। ফলে ভারতবর্ষে দ্রৌপদী থেকে চলে আসছে যে পিতৃতন্ত্র তার প্রতিকার (অন্যতম) হিসেবে তাপস আঙুল তুলেছেন বাড়িতে ছেলের সঙ্গে যে প্রিভিলেজড ট্রিটমেন্ট দেয়া হয় তার দিকে।
২ "তার চেয়েও বড় কথা হল, আরবের চপ-চপ স্কোয়্যারের দায় আমি নিইনা, তালিবানদের সুকীর্তির দায় আমি নিইনা। খামোখা হিন্দি বলয়ের অপকীর্তির দায় আমি বইব কেন? ও এলাকা মূলত জঙ্গলের রাজত্ব, যেখানে একদিকে যোগি মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে ব্যাপম কেলেঙ্কারি"।
-- হিন্দি বলয়ের সঙ্গে আরব স্কোয়ার বা তালিবান রাজের তুলনা? ইউপি -বিহার কি ভারতের বাইরে নাকি বঙ্গ ভারতের বাইরে ? সন্দেহ নেই যে বঙ্গে জাতিঘৃণা ঐতিহাসিক কারণেই ইউপি-বিহার ইত্যাদির চেয়ে অনেক কম। কিন্তু তাতে কি, পার্টির ভিত্তিতে খুনোখুনি যা চলে তা বাকি ভারতে অকল্পনীয়। গত কয়েকবছরে নির্বাচনের সময় বঙ্গে ক'জন খুন হয়েছেন দেখুন এবং হিন্দিবলয়ে ডেটা দেখুন। অনেক পূর্বাগ্রহ মুক্ত হবেন।
( আজকেই সোমনাথ রায়ের পাঠানো ইপিডব্লু'র প্রবন্ধ পড়লাম। ওদেরও চোখে পড়েছে জাতপাতের জায়গায় পার্টিবাজি)।
৩ হানুর 'হাউ টু ফাইট ফ্যাসিজম ইন কন্টেম্পোরারি ইন্ডিয়া' স্বতন্ত্র আলোচনার দাবি রাখে।
সারাবছর বিরোধীদলের কর্মী বোলে খুন বঙ্গে এবং হিন্দি বলয়ে? জঙ্গল সব জায়গায় আছে , কোথাও শাল-সেগুন, কোথাও ওক-পাইন, আবার কোথাও সুন্দরী-গরাণ।
ডাউরি কিলিং বঙ্গে? গত কয়েকবছরে? ব্যাপম কেলেংকারি এমপিতে, বঙ্গে সারদা/নারদা?
সমস্যা হল, আপনাদের মাথায় 'সর্বভারতীয়' একটা সংস্কৃতির কথা মাথায় ঢুকে আছে। সেটা একদম নেই তাও নয়। আছে। উচ্চাঙ্গসঙ্গীত থেকে শুরু করে অধুনা ক্রিকেট-ভালোবাসা পর্যন্ত বহু জায়গায়ই নানা মিল। কিন্তু কথা হল, ইউরোপেও তো তাই। বরং বেশি মিল। তারা প্রায় সবাই, অন্তত পশ্চিমের সবাই, লাতিন অক্ষরমালা ব্যবহার করে। ভারতে তা নয়। তাদেরও সঙ্গীত এবং সাহিত্যে প্রচুর সাধারণ জিনিসের উত্তরাধিকার। কিন্তু তার পরেও জাতিগত বা ভাষাগত ভাবে সংস্কৃতির প্রচুর তফাত। যেমন ফরাসিরা, সাধারণভাবে বলা হয়, কুঁড়ে এবং সংস্কৃতিভাবাবন্ন। জার্মানরা যান্ত্রিক। এসব স্টিরিওটাইপ যদি বাদও দিই, জার্মানদের ঐতিহ্যে হলোকাস্ট আছে, কিন্তু ঔপনিবেশিকতা নেই। আবার ফরাসি ঐতিহ্যে ঔপনিবেশিকতা আছে, হলোকাস্ট নেই। ইউরোপীয় ঐক্যের কারণে অ্যালজিরিয়ার অত্যাচারের দায় জার্মানরা কাঁধে তুলে নিল, আর হলোকাস্টের দায় সমানভাবে বইল ফরাসিরা, এ জিনিস হয়না। হলে খুব হাস্যকর হবে।
ভারতবর্ষের ক্ষেত্রেও, ভারতবর্ষ মানে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। মিলের জায়গা অনেক কিছুই আছে, কিন্তু সংস্কৃতিগত ভিন্নতাও প্রবল। আমরা সবাই অমিতাভ বচ্চনকে সুপারস্টার ভাবি, ক্রিকেট পছন্দ করি, আর (ভারত রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে) সবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী -- এ তো কোনো সাংস্কৃতিক বা সামাজিক মিল নয়। ওটা একটা রাষ্ট্রীয় বন্ধনের জায়গা বড়জোর। তার বাইরে অমিল গুচ্ছের। ভালো-খারাপ পরের কথা, কিন্তু তফাতটাই তো প্রচুর। বাংলায় গণপিটুনির সংস্কৃতি আছে, দক্ষিণভারতে নেই। বাংলায় রাজনৈতিক সন্ত্রাসের যে ধরণ, সেটা ভারতের আর কোথাও নেই। আবার গোবলয়ে যে পরিমান জাতপাত, সেটা বাংলায় নেই। বাংলায় বাম ঘরানার সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ, জমিদারি কার্যত পঞ্চাশ বছর আগেই উৎখাত করা হয়ে গেছে, গোবলয়ে হয়নি। বাংলা দেশভাগের ক্ষত সামলেছে, বা সামলায়নি এখনও বয়ে চলেছে, গোবলয় তার অংশীদার নয়। এরকম গাদা-গাদা তফাত অস্বীকার করা, চোখ বুঝে একটা বলিউডি গ্র্যান্ড-ইন্ডিয়ান-ন্যারেটিভকে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
বস্তুত, বলিউডি গ্র্যান্ড-ইন্ডিয়ান-ন্যারেটিভের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করা হয় বলেই এর যে বিরাট রাজনীতি, সেটা চোখ এড়িয়ে যায়। ধরুন, তালিবানদের তালিবানির দায় আমরা নিইনা, কারণ রাষ্ট্র আলাদা। তাছাড়া ও অনেক দূরের ব্যাপার। অথচ দিল্লির কি ইউপির কোনো জাত-পাতের বৈষম্যের ঘটনা, কিংবা ধর্ষণের ঘটনার দায় কাঁধ বাড়িয়ে নিয়ে নিই। সে কি শুধু কাছের ব্যাপার বলে? মনে হয়না। বাংলাদেশ তো আরও কাছে, ব্লগার হত্যার দায় কি আমরা নিই? নিইনা। ওটা তো অন্য রাষ্ট্র। আসাম তো কাছে, রাষ্ট্রও একই, নেলি হত্যার দায় ঘাড়ে নিই? আলফার কীর্তির? দায় বা দায়িত্ব? মেঘালয়? মনিপুর? নিইনা।
এরকম কোটি কোটি উদাহরণ দেওয়া যায়। দিয়ে লাভ নেই। ভারতবর্ষের যা আলোকজ্জ্বল অংশ, অর্থাৎ কিনা হিন্দিবলয়, তার সমস্ত কিছুর দায়ভার আমরা ঘাড়ে করে চলি। যেন পাশের বাড়িতেই আগুন লেগেছে। কারণ বলিউড বা টিভি চ্যানেল ওভাবেই দেখায়। সত্তরের স্লোগান যেমন ছিল 'চিনের চেয়ারম্যানই আমাদের চেয়্যারম্যান' , সেরকমই 'মুম্বইয়ের সিনেমাই আমাদের সিনেমা', বা 'হিন্দুস্তানের সমস্যাই আমাদের সমস্যা'।
এর বাইরে বেরোতে গেলে রাষ্ট্র, নেশন-স্টেট, যুক্তরাষ্ট্র, ইউনিয়ন -- এই বেসিক জিনিসগুলো গোড়া থেকে আরেকবার ভাবা দরকার। ভারতীয়ত্ব কি আদৌ কোনো জাতিগত পরিচয়, নাকি রাষ্ট্রীয় পরিচয়? নাকি একটি উপমহাদেশগত অস্তিত্ব? এই জিনিসগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া হওয়া দরকার। বলিউড বলে দিয়েছে ভারত সমসত্ব, যার সীমান্তে বহিঃশত্রু ঠেকাতে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে সেনাবাহিনী -- এই ন্যারেটিভকে প্রশ্ন করার সময় এসেছে। অনেকদিন আগেই করা উচিত ছিল, হয়নি যখন, এবার অন্তত করা হোক।
ব্যাস. বলিউড আর ক্রিকেট এসে পড়েছে যথারীতি প্রে-ডেটারমিন্ড ন্যারেটিভ অনুযায়ী.
দেখুন, যদি তথ্য দেখে অন্ধবিশ্বাস কাটে।
আমার বিশ্বাস, তফাতটা আরও অনেক বেশি। এমনিতেই এনসিআরবির ডেটা খুবই আনডাররিপোর্টেড । আন্ডাররিপোর্টিং এর পরিমান প্রত্যন্ত উত্তরপ্রদেশ বা রাজস্থানে যে বেশি হবে, বলার জন্য বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন পড়েনা। ওদিকে আবার অন্য গোলযোগও আছে। যা হোক, যে তথ্য নেই, তা নিয়ে তো বলে লাভ নেই। যেটুকু আছে, দেখলেই বোঝা যাবে, "সর্বভারতীয়" চিত্র বলে কিছু হয়না। ওভাবে প্রোজেক্ট করাটা কগনিটিভ বায়াস, যার পিছনে অবশ্যই রাজনীতি আছে।
হ্যাঁ, জাত-পাতের প্রাবল্য, জন্মহার, সব নিয়েই অনুরূপ তথ্য আছে। একটু খুঁজতে হবে বলে এখনই দিতে পারলামনা । লাগলে বলবেন, দেব।
"সর্বভারতীয়ত্ব" যে একটি কগনিটিভ বায়াস সে নিয়ে তো কোন সন্দেহই নেই। সে তো যেকোন নেশন স্টেটই কগনিটিভ বায়াস, য়ুনাইটেড য়ুরোপ ও তাই, ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা ও তাই। মোটামুটিভাবে মানুষ নিজের গ্রামের বাইরে কোন কিছু ভাবতে পারেনা, বাকিটা কনস্ট্রাকটেড। হাথরাস প্রসঙ্গে এটা কেন এলো বুঝলাম না। "ইউপিতে যতো খারাপ খারাপ ঘটনা ঘটে আর পশ্চিম বঙ্গে অতো খারাপ কিছু হয় না", এই কগনিটিভ বায়াসটা ডিফেন্ড করার জন্য কি নেশন স্টেট নামের কগনিটিভ বায়াস দরকার হলো? বা "ইউপি তো ক্যাটল ক্লাস, আমরা হলাম গিয়ে ইন্টেলেকচুয়াল বাঙালি", এই কগনিটিভ বায়াসটা ডিফেন্ড করার জন্য?
পেয়েছি। মূল পেপারটা অমিত থোরাট আর ওঙ্কার যোশির। সেটা এখন আর খুঁজে পেলামনা। কিন্তু কৌশিক বসুর টুইট থেকে ছবিটা উদ্ধার করলাম।
জাতপাতের চরিত্রটা কী সে তো খুবই পরিষ্কার। মানে ছবি না দেখে আমরা জানতামনা এমন না। কিন্তু ছবিতে আরও পরিষ্কার। একটা অঞ্চল জাতপাতের সমস্যায় জরাজীর্ণ। গুচ্ছের পকেটে তো ৫০% র বেশি বাড়িই অস্পৃশ্যতা অভ্যাস করে। সেই জনসমষ্টিকে নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত না করে, তাদের সরকারকে দায়ী না করে, "আমাদেরও দায় আছে" ঘোষণা করে কোন উদ্দেশ্যটা সাধিত হচ্ছে বুঝিনা। এতে করে সমস্যাটার দিক থেকে নজর ঘোরানো তো হচ্ছেই, এবং সমস্ত গোবলয়কে তোল্লাইও দেওয়া হচ্ছে, যে, ব্যাপারটা ভাই ঠিকই আছে। আমরাও দোষী তোমরাও দোষী। ও কোনো ব্যাপার না।
"ইউরোপীয় ঐক্যের কারণে অ্যালজিরিয়ার অত্যাচারের দায় জার্মানরা কাঁধে তুলে নিল, আর হলোকাস্টের দায় সমানভাবে বইল ফরাসিরা, এ জিনিস হয়না। হলে খুব হাস্যকর হবে"
এটা বিচিত্র লিখেছে কিন্তু ঃ-))))))হাহাহাহাহাহা :-))))))))))
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
"ইউপিতে যতো খারাপ খারাপ ঘটনা ঘটে আর পশ্চিম বঙ্গে অতো খারাপ কিছু হয় না"
না, এটা একেবারেই বলা হচ্ছেনা। বলা হচ্ছে, আরব, আফগানিস্থান, হিন্দুস্থান এসব জায়গায় যা ঘটে তার দায় সেখানকার। তার জন্য বিশ্বমানবতার খাতিরে দায়ভারগ্রস্ত হয়ে থাকাটা খুবই বদভ্যাস। রিয়েলিটি বিমুখতা। বালিতে মুখ গুঁজে থাকা, ইত্যাদি।
পশ্চিমবঙ্গে নিশ্চয়ই খারাপ খারাপ ঘটনা ঘটে। রাজনৈতিক হত্যা প্রচুর ঘটেছে। তার দায় অবশ্যই বঙ্গবাসীর। ইউপির লোকের না। হাথরাসের ঘটনার দায়ও ইউপির। উন্নাওয়েরও। জাত-পাত-ধর্ষণ-সরকারি কার্যকলাপ সব মিলিয়ে যা ঘটছে, তার জন্য বঙ্গবাসীর বা বাঙালি জাতির তার জন্য লজ্জিত হবার কোনো কারণ দেখিনা। শিহরিত হবার অবশ্যই কারণ দেখি।
প্র্যাকটিকালি বাঙালির আইএলপি দাবী করা উচিত। দায় স্বীকার না।