১০-ই অক্টোবর ২০১৯ ২য় কিস্তি
=====================
সকাল সাড়ে দশটা, বেরোলাম আমরা দুধসাগরের দিকে। হোটেল থেকে গাড়িতে মিনিট দশেক যেতেই কুলেম ভগবান মহাবীর অভয়ারণ্য এলাকা শুরু হয়ে গেল। মোটামুটি গঞ্জ এলাকা পাঁচমিশেলি দোকান, অভয়ারণ্যে ঢোকার আগে গাড়ি পার্কিঙের জায়গা, একটি অল্পবয়সী ছেলে পার্কিঙের মুখটায় দাঁড়িয়েই আছে আর গাড়ি দেখলেই চেঁচাচ্ছে ‘দুধসাগর দুধসাগর ইধার ছোড়কে যাও, শ’ রুপেয়া শ’রুপেয়া।‘ সারথীমশাই জানালেন তিনি এইসব হুজ্জতির মধ্যে যাবেন না, গাড়িতেই থাকবেন। একশো টাকায় সারাদিন রাখা যাবে, তবে অন্ধকার হবার আগে গাড়ি নিয়ে যেতে হবে। তো নেমে মিনিট তিন চার হাঁটতেই দেখি একটা সরু বারান্দা কুলেম বনবিভাগের লোকজন বসে যাত্রীদের জন্য জিপ ঠিক করে দিচ্ছেন। জিপ নয় আসলে বোলেরো, শেয়ারে গেলে সাত কি আটজন একটা বোলেরোতে আর রিজার্ভ করে গেলে ৩৫০০/- পড়বে গাড়িপ্রতি। লাইন করে দাঁড়িয়ে এক এক করে দলপিছু গিয়ে কতজন লোক জানাতে হচ্ছে, পাশেই গাড়ির ড্রাইভাররাও দাঁড়িয়ে সেইমত গাড়ি ঠিক করে দিয়ে কত টাকা দিতে হবে জানাচ্ছেন বন দপ্তরের কর্মী। টাকার লেনদেন ওঁদের সামনেই করতে হচ্ছে, আমাদের পড়ল ৫৮৫/- মাথাপিছু।
টাকা দিয়ে ডীল ফাইনাল হলে কোনো একটা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে, পরিচয়পত্রের নম্বর, গাড়ির নম্বর আর ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বর এই তিনটি জাবদা খাতায় লিখে নিয়ে যাত্রীদের পাঠাচ্ছেন লাইফ জ্যাকেট নিতে, জ্যাকেটের ভাড়া ৪০/-। জলে ভেজা আমি তেমন পছন্দ করি না, তাই জানালাম আমরা তো নদীতে নামব না। ভারপ্রাপ্ত মহিলা বললেন লাইফ জ্যাকেট না নিলে কোর এরিয়ায় ঢুকতেই দেবে না, । আমি সবে বলেছি যে সে ভাড়া নাহয় নাও কিন্তু খামোখা ঐ জ্যাকেট বয়ে নিয়ে কী করব? মহিলা এবারে অধৈর্য্য হয়ে জোরে বকেই দিলেন। অগত্যা জ্যাকেট নিয়ে গাড়িতে চড়লাম। একটি উত্তরভারতীয় দম্পতি ও তাদের তিন বছর বয়সী শিশুকন্যা, একটি দক্ষিণ ভারতীয় দম্পতি ও তাদের আড়াই বছর বয়সী শিশুকন্যা আর আমরা দুজন। অভয়ারণ্যের কোর এরিয়ায় ঢোকার মুখে একটা গেট, বাইরে টিকিট ঘর, এন্ট্রি ফী মাথাপিছু ৫০/- আর ক্যামেরা থাকলে ৩০/-। সেখানে রীতিমত লাইন পড়ে গেছে, সামনে রাস্তা নাকি সরু তাই ধীরে ধীরে ছাড়ছে। বোলেরোর সারথী নয়ডাবাসী রাকেশকে বললেন গিয়ে সবার টিকিট কেটে আনতে, ইতিমধ্যে গাড়ি এগিয়ে গেলে তিনি যেন হেঁটে চলে আসেন। পরে অবশ্য দেখেছিলাম পয়েন্ট এন্ড শ্যুট এর ৩০/-, ডিএসএলয়ারের ফি নাকি ৩০০/-। তা সেটা কেউ চেকও করে নি আর প্রায় প্রত্যেক গাড়িতেই একাধিক ডিএসএলার।
গাড়ি এগোচ্ছে এক পা দু’পা করে, টিকিট নিয়ে এসেও গেলেন রাকেশ। এইবারে প্রেম, বোলেরোর সারথী, বললেন যার কাছে যত প্ল্যাস্টিকের বোতল বা টিফিন বক্স আছে কিম্বা ক্যারিব্যাগ যদি থাকে, বের করে রাখতে¸ চেকিং হবে। বনদপ্তর থেকে সমস্ত প্ল্যাস্টিকের জিনিষের উপর স্টিকার মেরে দেবে, ফেরার সময় আবার চেক হবে। যাত্রীরা চাইলে এখানে জমা করেও রেখে যেতে পারেন, একটা কাগজ দেবে, ফেরার সময় দেখিয়ে নিয়ে গেলেই চলবে। আমাদের গাড়িতে দু দুটো বাচ্চা, কাজেই জল, জ্যুসের বোতল ইত্যাদি আছেই। বনদপ্তর থেকে স্টিকার লাগিয়ে তাতে পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে গাড়ির নাম্বারটা লিখে দিল। প্রেম জানালেন ফেরার সময় অনেকসময় খুব বৃষ্টি থাকে চেকিং সম্ভব হয় না, কেউ উপরে প্ল্যাস্টিকের কিছু ফেলে এলে ঐ গাড়ির ড্রাইভারের মোটা ফাইন হয়, তাই ওঁরাই নজর রাখেন যাত্রীদের উপর। সব মিটিয়ে ঢুকলাম বনের ভেতর আর শুরু হল অফ রোডিং। ৪৫ মিনিট মত লাগবে পাহাড়ের উপরে পৌঁছাতে, এটা দুধসাগরের উল্টোদিকে একটা পাহাড়, যেখানে ভিস্তা টাওয়ার করা আছে। এছাড়া গাড়ি যেখানে গিয়ে থামবে সেখান থেকে প্রায় সত্তর ধাপ সিঁড়ি ভেঙে মান্ডভী নদী পেরিয়ে ওপারে গিয়ে পাহাড় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেক করে জলপ্রপাতের নীচে অবধি পৌঁছানো যায়।
চারস্তরবিশিষ্ট দুধসাগর প্রপাত ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম প্রপাত। উচ্চতা ১০১৭ ফিট ( ৩১০ মিটার), চওড়ায় ১০০ ফিট (৩০ মিটার) দুধসাগর পশ্চিমঘাট পর্বতে কর্ণাটক আর গোয়ার সীমান্ত বরাবর অবস্থিত। দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে কর্ণাটকের ভীমগড় অরণ্যের গভীরে ত্রিশটা ঝর্ণা থেকে সৃষ্ট মান্ডভী (স্থানীয় উচ্চারণে মান্ডাওয়ি) নদী চলতে চলতে আপনখেয়ালে চড়ে বসে পশ্চিমঘাটের মাথায় আর তারপরেই ঝাঁপ দেয় সোজা, অতটা উঁচু থেকে তিনভাগ হয়ে ১০০ ফুট চওড়া খাত বেয়ে তীব্রগতিতে নেমে আসায় জলের ধারাগুলিকে দেখায় ধবধবে সাদা দুধের ধারার মত। বর্ষাকালে বৃষ্টির জলে পুষ্ট ধারা তিনটি ভয়ংকর, সুন্দর। বছর খানেক আগেও দুধসাগর যাওয়ার আরেকটি রুট ছিল রেল ট্র্যাকের উপর দিয়ে। ক্যাসেল রক স্টেশান থেকে ট্রেন ধরে দুধসাগর হল্টে নেমে রেললাইনের উপর দিয়ে ১২ কি ১৪ কিলোমিটার হাঁটা, মাঝে একটা ২০০ মিটার লম্বা অন্ধকার সুড়ঙ্গ। ট্যুরিস্টরা হাঁটাকালীন কোন ট্রেন এলে হয় অন্য লাইনে নয়ত ধার ঘেঁষে সরে দাঁড়ানো – খুবই বিপজ্জনক যাত্রা। নেট ঘাঁটলেই নানা ভয়ধরানো গল্প মেলে। আর ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ সিনেমায় দেখানোর পর থেকে দুধসাগরে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। সবমিলিয়ে গোয়া পর্যটন দপ্তর রেললাইনের উপর দিয়ে ট্রেক করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে ২০১৮ সালে।
আমাদের বোলেরো এতক্ষণে বাকী গাড়ীগুলোর পিছনে লাইন দিয়ে গুটগুট করে ঢুকে পড়েছে অভয়ারণ্যের একেবারে কোর অঞ্চলে। ঢুকতেই একটা মস্ত বোর্ডে এখানকার জীববৈচিত্র্যের বিবরণ, অভয়ারণ্যের উপর নানা তথ্য দেওয়া আছে। তার থেকে জানতে পারলাম এখানে প্রায় একশোরকম প্রজাপতি, ১২০ রকম পাখি আর ১০ না ১২ রকম সাপ আছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশী দেখা যায় গোখরো। ইতিমধ্যে গাড়ি এসে পৌঁছেছে এক নদীর সামনে, বেশ চওড়া আর ভালই স্রোত। ওব্বাবা কিছু বোঝার আগেই গাড়ি দেখি হড়বড়িয়ে নদীর মধ্যে নেমে গেল। ব্যপারটা কি হল বুঝে সবাই হইহই করে উঠতে উঠতেই নদীগর্ভের পাথরের উপর দিয়ে গাড়ি হেলেদুলে নেচে নেচে এগিয়ে গেছে বেশ খানিকটা আর … আর গাড়ির ভেতরে কুলকুলিয়ে ঢুকে আসছে মান্ডভী। পায়ের পাতা ভিজিয়ে গোড়ালি ডুবিয়ে ক্রমশ উপরে উঠছে জল।পাশের পরিবারটির যে সব ব্যাগপত্তর সিটের নীচে ছিল তাঁরা হাঁইমাই করে সেসব কোলে নেবার চেষ্টা করতে লাগলেন। এদিকে গাড়ি থেকে নেমে খানিক হাঁটতে হবে, জুতো ভিজলে সমূহ সর্বনাশ। অতএব নিজ নিজ পদদ্বয়ও কোলে নিতে পারলেই ভাল হত। কিন্তু বোলেরোর মধ্যে চালকসহ সাতজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ এবং দুটি শিশু। কাজেই সিটে হেলান দিয়ে কেৎরে পড়ে পা যতটা সম্ভব উপরে তুলে ঝুলিয়ে রাখা গেল।
আমাদের সাথে একটা কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ আর একটা ক্যামেরার ব্যাগ ছাড়া কিছু ছিল না, দুজনে দুটো নিয়ে নিয়েছিলাম কাজেই অসুবিধে খুব একটা হল না। এর মধ্যে গাড়ি পৌঁছেছে নদীর মাঝামাঝি। দেখি সেখানে দুপাশ থেকে দুই দুই চারজন বেশ লম্বা চওড়া বাউন্সার টাইপ চেহারার জঙ্গলরক্ষীরা গাড়িটাকে ধরে হেঁইয়ো হেঁইয়ো করে ফুর্তিভরে ঠেলে দিচ্ছেন, এরই মাঝে চালকের সাথে তাঁদের টুকটাক কুশল বিনিময়ও হয়ে গেল। ওদিকে বেলা বারোটার রোদ্দুরে মান্ডভীর জলও ছিকমিক, ঝকঝক, যেন শহুরে আনাড়িদের হইহই দেখে ভারী মজা পেয়েছে। বাচ্চাদুটো ফুর্তিতে না ভয়ে কে জানে, গলা ছেড়ে চীৎকার করে যাচ্ছিল। এবারে বোঝা গেল লাইফ জ্যাকেট কেন বাধ্যতামূলক। মাঝনদী পেরিয়ে যেতে গাড়ির ভেতরের জলও নামতে লাগল। ওরাও একটু শান্ত হল। ওপারে পৌঁছে এবার লালমাটিগোলা কাদা থকথকে চড়াই রাস্তা। তেমন খাড়া না, ফার্স্ট গিয়ারে রেখে ঢকঢক ঘটাং ঘুটুশ আওয়াজ করে গাড়ি চলতে লাগল এবং মিনিট দুয়েকের মধ্যেই দিব্বি গতিবেগ বাড়ল। ভেতরে আমরা পুরো ঝালমুড়ি ঝাঁকানোর মত ঝাঁকানি খেতে খেতে একবার এ ওর গায়ে গোঁত্তা খেয়ে আর একবার গাড়ির দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে কখনো সিট থেকে হাত কয়েক লাফিয়ে উঠে গাড়ির ছাদে মাথা ঠুকে বা বা কোনোমতে বাঁচিয়ে চলতে লাগলাম।
এখানে বলে রাখি জিপ সাফারি বা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেকিং করে গেলে দুধসাগর প্রপাতের একদম নীচের স্তরে পৌঁছানো যায়। অমরাবতী এক্সপ্রেস বা গোয়া কুলেম প্যাসেঞ্জারে গেলে প্রপাতের মাঝের স্তর দিয়ে যায় ট্রেন। এটা ব্রাগাঞ্জাঘাটের মধ্যে দিয়ে যায়, একটা অতিরিক্ত লোকোমোটিভ লাগে ট্রেনকে টেনে তুলতে। ঠিক প্রপাতের মুখোমুখী এসে ট্রেনের গতি অতি অতি ধীর করে দেন ট্রেনচালক, যাতে প্রতিটি যাত্রী আশ মিটিয়ে দেখে নিতে পারেন ওই অপার্থিব সৌন্দর্য্য। কুলেম হল ব্রাগাঞ্জাঘাটের একদম গোড়ায়। কাজেই জিপ সাফারিও পুরোটাই কমবেশী চড়াই চড়া। এগারো কিলোমিটার রাস্তা, মোটামুটি আধঘন্টা থেকে চল্লিশ মিনিট লাগে। এক একসময় সামনের গাড়ি কোন কারণে আটকে গেলে লাইন দিয়ে সব গাড়ি থেমে ঝুলে থাকে। এরপরে আরো দুইবার নদীর উপর দিয়ে গাড়ি পেরোল, তবে সেসব নিতান্ত ক্ষীণকায়া জলধারা। অক্টোবরে আস্তে আস্তে মান্ডভী শীর্ণা হতে শুরু করেছে। ঘোর বর্ষায় এরাই আরো মোটাসোটা হয়ে সবেগে বয়ে চলে। মাঝামাঝি গিয়ে দেখা গেল বনপথ থেকে ডানদিকে আরেকটু উঠে খানিকটা সমতল জায়গায় একটা রঙচঙে মন্দির, একটা ছোট প্রাথমিক বিদ্যালয়, অল্পকটা বাড়ি নিয়ে ছোট্ট একটা গ্রাম। গোয়া/ কর্ণাটকের প্রচলিত ধরণে দোচালা বা চারচালা একতলা বাড়ি। একটিমাত্র দোতলাবাড়ি চোখে পড়ল একটু উঁচুতে। প্রেম জানালেন এই গ্রামে মোবাইলের সিগন্যাল পাওয়া যায়, বিএসএনএল আর অনিয়মিত এয়ারটেল।
বাঁ দিকে কখনো মান্ডভী সঙ্গ নেয়, কখনো বা ক্রমশ গভীর হয়ে চলা খাদ। মাঝে মাঝে একঝলক দুধসাগর দেখা দেয় আর আমরা আদেখলার মত বাঁদিকের জানলার দিকে যতটা পারি সরে যাবার চেষ্টা করি। এইভাবে মিনিট পঁচিশ চলার পরে গাড়ি একদম থেমে গেল, সামনে যতদূর দেখা যায় পরপর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাঙালোর নয়ডা পুণেতে ফ্ল্যাটের দর, গোয়ার মশলা বাগানের ঝিমঝিমে সুগন্ধ, কুলেমের গভীর সবুজ বনানী ও জীববৈচিত্র্য এইসব সাতপাঁচ গল্পস্বল্প গাড়িতে বসেই চলল মিনিট দশেক। তারপর আগে পরের গাড়িগুলো থেকে লোকজন নেমে এগোতে লাগল টুকটাক। শোনা গেল আগের ব্যাচের গাড়িগুলো এখনো ফেরে নি, পার্কিঙ খালি হয় নি, তাই সারে সারে দাঁড়িয়ে পড়েছে। অন্যান্য গাড়ির চালকরা নেমে হাঁটা লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন, এই লাইন কখন ছাড়বে কিছুই ঠিক নেই, ওদিকে দুপুর দুটোর পরে আর উপরে থাকতে দেবে না সে কিছু দেখা হোক আর না হোক। এখনো প্রায়ই দুপুরের পরে বৃষ্টি নামে বর্ষা পুরোপুরি যায় নি, কাজেই দুটোয় নেমে আসতেই হবে নিরাপদে ফেরার জন্য। আমি স্বভাবত অলস প্রকৃতির, যতটুকু বসে বসে যাওয়া যায় সেটুকু আরাম ছাড়তে চাই না সহজে। ওদিকে সঙ্গিনী অতীব অধৈর্য্য। ‘চল হাঁটি চল হাঁটি’ করে আমাকে নামিয়েই ছাড়লেন। আর মাটিতে পা রাখামাত্র প্যাঁচাৎ করে পা বসে গেল গাঢ় কমলা কাদায়। এহেহেহে এ রাস্তায় রীতিমত স্পাইকওয়ালা জুতো দরকার, বেচারা সস্তার স্নিকার! প্রেম অবশ্য ভারী ভরসা দিয়ে বললেন এই লাইন ছাড়লেই উনি মাঝপথে আমাদের তুলে নেবেনখনে, আর নিতান্তই না হলে পরে ধীরেসুস্থে গিয়ে ভাল জায়গা দেখে গাড়ি লাগিয়ে দেবেন, আমাদের নামার সময় খুঁজেপেতে অসুবিধে হবে না।
অগত্যা লাইফ জ্যাকেট গায়ে চাপিয়ে রওনা হলাম। একে ত বেজায় পিছলে কাদা তায় আবার জায়গায় জায়গায় রাস্তা বেশ খাড়া। তা যাইহোক মিনিট দশ কি পনেরো হেঁটে একটা বেশ চওড়া চাতালে পৌঁছানো গেল। পার্কিঙ লট, গাদা গাদা বোলেরো আর কোয়ালিস পার্ক করে রাখা। চত্বরের শেষপ্রান্তে দোতলা ভিস্তা টাওয়ার। টাওয়ারের পাশ দিয়েই ঘুরে নেমে গেছে খাড়া সিঁড়ি, পাহাড়ের গা কেটে বানানো অসমান ধাপ। প্রায় সত্তর পঁচাত্তরটা সিঁড়ি নামলে আবার নদীর ধার। এখানে নদী আরো খরস্রোতা। এই হল প্রপাতের চতুর্থ অর্থাৎ সর্বনিম্ন স্তর। এপাশ থেকে ওপাশের পাহাড় অবধি মোটা লোহার কাছি বাঁধা আছে। ওই কাছি ধরে ধরে জলের নীচের পাথরে পা দিয়ে দিয়ে নদী পেরিয়ে ওপারে গিয়ে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আরো খানিক চড়াই উঠলে আবার এরকমই নদী পাওয়া যাবে, প্রপাতের তৃতীয় স্তর। কাছি ধরে প্রায় কোমর অবধি জলের মধ্যে দিয়ে পিছল পাথরে পা রেখে নদীর স্রোতের নব্বই ডিগ্রি কোণে হেঁটে পেরোন এক অভিজ্ঞতা বটে। মান্ডভী চলেছে কলকলিয়ে যেন কেবলই বলে ‘কি ছাই ধরে ধরে গুড়গুড়িয়ে চলেছ ওদিকে, চল চল আমার সাথে চল, সোওজা নিয়ে যাব আগুয়াড়া দুর্গের পাশ দিয়ে আরব সাগরে। সেথায় ফিরোজা নীল জল ঢেউ ভাঙছে। এসো এসো’ আর টেনে নিয়ে যেতে চায় নিজের সাথে। ভিস্তা টাওয়ারের দোতলার চাতাল আর দুধসাগর মুখোমুখী। দুধসাদা জলের স্রোত এত তীব্র যে প্রপাতের মাথার দিকটা ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশায় ঘেরা। আকাশ ছেয়ে দ্রুত এগিয়ে আসছে কিউমুলোনিম্বাস মেঘেরা, কমে আসছে রোদ্দুর। দুধসাগরের মাথা ঘিরে এপার ওপার জোড়া রামধনু ঝলমলিয়ে ওঠে।
হুড়মুড়িয়ে অন্য এক জলপ্রপাতের ছবি ঝাঁপিয়ে আসে মনে। প্রপাতের খাতের গা বরাবর কাঠের সিঁড়ি বেয়ে জলের স্রোতের বিপরীত দিকে ওঠা ... মোটা মোটা দুধসাদা জলের ধারা তীব্রগতিতে নেমে আসায় অনেকটা জায়গা জুড়ে জলকণায় ধোঁয়াটে ওড়না আর জায়গায় জায়গায় রামধনুর সাতটা রঙের চিকিমিকি। ‘কেভ অব দ্য উইন্ড’, নায়াগ্রা ফলসের এই রাইডটার সম্মোহনী স্মৃতি পনেরো বছর পরেও একইরকম স্পষ্ট। এখানেও পরিবেশ, প্রকৃতি অক্ষুন্ন রেখে ওইরকম ব্যবস্থা করা গেলে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম খাতে সরকারের প্রচুর আয়ও হত আর অনেকে নিরাপদে জলপ্রপাতের একদম কাছে যেতেও পারতেন। দুধসাগর নাম সম্পর্কে একটা প্রচলিত রূপকথাও আছে। এক রাজকুমারি রোজ ওই পাহাড়ের উপরের হ্রদে স্নান করতে আসত আর হ্রদের জলে গা এলিয়ে বসে স্নান করার সময় এক ঘটি মিষ্টি দুধ পান করত। অনেকটা বাথটবে এলিয়ে পছন্দের পানীয়ে চুমুক দেবার মত আর কি। তা একদিন স্নানের সময় রাজকন্যা দেখে এক রাজকুমার এগিয়ে আসছে হ্রদ বরাবর। তাড়াতাড়ি কি করবে ভেবে না পেয়ে মেয়ে গড়িয়ে দেয় হাতের পাত্রের সমস্ত দুধটুকু। আর তাতেই তৈরী হয় অমন দুধসাদা ধারা, লুকিয়ে রাখে রাজকন্যাকে তার পিছনে। ইতিমধ্যে মেঘ আরো ঘনকালো হয়ে মুষলধারায় বৃষ্টি নেমেছে। সঙ্গিনী মনে করান দেড়টার মধ্যে গাড়িতে গিয়ে বসতে বলে দিয়েছেন প্রেম।
গাড়ি খুঁজেপেতে উঠে তো বসা গেল, মিনিট পাঁচেকের মধ্যে উত্তরভারতীয় পরিবারটিও হাজির। কিন্তু দক্ষিণভারতীয় পরিবারের পাত্তা নেই। একটা চল্লিশ অবধি দেখে প্রেম নামলেন খুঁজে আনতে। এদিকে অন্য গাড়িগুলোও একে একে ফিরে যাচ্ছে। ওইটুকু জায়গা কতক্ষণ আর লাগে খুঁজতে। প্রেম এসে জানালেন ভিস্তা টাওয়ার, নদীতে নামার সিঁড়ি কোথাও নেই তাঁরা। চুপচাপ অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। প্রেমকেও এবার একটু চিন্তিত দেখায়। এদিকে গাড়ির বনেটে উঠে খান তিনেক বানর মহা উৎসাহে নাচানাচি করছে, কাচে মুখ দেখে দাঁত খিঁচোচ্ছে। ওঁরা এলেন একটা পঞ্চান্ন। ভিজে চুপচুপে তিনজনেই। ওঁরা এই পাথর বেয়ে নদী পেরিয়ে খানিক চড়াই উঠে পরের নদীখাতটাও পেরিয়েছিলেন। আরো যাবার ইচ্ছে ছিল কিন্তু বৃষ্টি নামায় হঠাৎ করেই নদীর জল বাড়তে শুরু করে। সেখানকার জঙ্গলরক্ষীরা তাঁদের অবিলম্বে ফেরত যেতে বলেন। তাতেও ফিরতি দুবারই নদী পেরোতে সমস্যা হয়েছে, শিশুটিকে তার বাবা কাঁধে বসিয়ে নিজের দেহের সাথে বেঁধে নিয়ে পেরিয়েছেন। নাহলে স্রোতের টানে কোল থেকে ভেসে যাওয়া অসম্ভব ছিল না। ওঁদের সাহস দেখে আমরা মুগ্ধ। কি আনন্দ তিনজনেরই চোখেমুখে। আমার আরেকবার একটু দুঃখ হয় কেভ অব দ্য উইন্ডের মত সুরক্ষিত রাইডের অভাবে। বৃষ্টির তেজ মনে হল অল্প একটু কমেছে আমাদের গাড়ি নীচের দিকে রওনা হল তখন ওই পার্কিঙ লটে আর মাত্র একটাই গাড়ি। ফেরার রাস্তা উতরাই হওয়ায় গাড়ি নামতে লাগল হু হু করে, এদিকে বৃষ্টির বেগ আবার বেড়ে গেল। একটা গ্রে হর্নবিল তীক্ষ্ণস্বরে ডেকে উঠল পাশের জঙ্গল থেকে।
ছোট সেই গ্রামটি এখন একেবারে শুনশান, মন্দিরসহ দৃশ্যমান সবকটা বাড়ি, ইস্কুলের দরজা জানালা বন্ধ। যাবার সময় পাহাড় ঘুরে ওঠার পথে যে দুই তিনটি শীর্ণ নদীর ধারা পেরিয়েছিলাম এখন সেগুলো আর তত শীর্ণ নয়, চাকায় জল কাটার আওয়াজের সাথে ছলকে ওঠা জল জানালার কাচ ভেজায়। বৃষ্টির তুমূল বেগে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে, আঠালো কাদায় গাড়ি অল্প অল্প পিছলায়, বাধ্য হয়েই অনেকটা কমে আসে গাড়ির গতি। অপেক্ষাকৃত চওড়া এক বাঁকে দেখি এক গাড়ি কাচটাচ বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে, গতিমুখ আমাদের বিপরীত। সামান্য কাচ নামিয়ে প্রেম হাত নেড়ে কিছু জিগ্যেস করেন, অন্য গাড়িটির চালকও হাতমুখ নেড়ে কিছু বোঝায়। প্রেম চীৎকার করে বারণ করেন উপরে যেতে, ফিরে যেতে বলেন। অন্য চালকও কিসব বলেন। আমরা আবার নামতে শুরু করি, গাড়িটি ধীরে, যেন পা টিপে টিপে উপরের দিকে এগোয়। প্রেমের কাছে শুনি নীচ থেকে শেষ গাড়ি ছাড়ার সময় বেলা দেড়টা, তাও বিশেষ অনুমতি থাকলে তবেই। কারণ অক্টোবর অবধি বিকেলের দিকে ঝড়বৃষ্টি প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক। ওই যাত্রীরা একেবারে শেষমুহূর্তে এসে গাড়ি নিয়েছেন, শুরুতে দুই কি তিন কিলোমিটার নির্বিঘ্নেই এসেছে, তারপরই শুরু হয় বৃষ্টি আর একইসাথে উপর থেকে নামতে থাকে গাড়ির স্রোত। সকলেরই আগে নামার তাড়া। অগত্যা থামতে থামতে এতটুকু এসে আর এগোতেই পারছেন না। বৃষ্টির বেগ যত বাড়ে রাস্তা তত দুর্গম হয়ে ওঠে। এদিকে যাত্রীরা ফিরে যেতে নারাজ, কাল সকালেই তাঁদের অন্যত্র চলে যাবার সব ব্যবস্থা হয়ে আছে।
গাড়ি যখন সেই প্রথম পেরোন চওড়া নদীখাতের কাছে এসে একটু আগে দাঁড়িয়ে গেল তখন আমরা ভেতরে গল্পগুজব করছিলাম, দক্ষিণ ভারতীয় দম্পতি আগস্টে যোগ প্রপাত ঘুরে এসেছেন, দুধসাগরের সাথে তারই তুলনামূলক বর্ণনা শুনছিলাম আমরা, বাইরের দিকে তেমন মন দিই নি। রাকেশ শুধু একবার বললেন আরে বৃষ্টি বেশ কমে গেছে। গাড়ি খলবলিয়ে জলে নামতেই কাচ সামান্য নামিয়ে ক্যামেরা মোবাইল ইত্যাদি নিয়ে তৈরী সবাই, যাবার সময় জানা ছিল না ভিডিও করা হয় নি। দুই কি তিন মিটার সামনে এগোতেই হুড়মুড়িয়ে জল ঢুকে এলো সিটের তলায় আর গাড়ি যত এগোয় জল তত হু হু করে বাড়ে। প্রায় মাঝামাঝি আসতে আসতে জল প্রায় সীট ছুঁইছুঁই। হাঁটু ছাড়িয়ে জল উঠে এসেছে কোল বরাবর, পা তুলবার জায়গাই নেই। আর ... আর অল্প এগিয়েই গাড়ি ঘটাং করে আওয়াজ করে থেমে গিয়ে গোঁ গোঁ করতে লাগল। এতক্ষণে জঙ্গলরক্ষীদের ডিউটি বদল হয়ে নতুন একদল দাঁড়ানো মাঝনদীতে। তাঁরা হইহই করে ঠেলতে লাগলেন, প্রেম সেকেন্ড গিয়ারে দিয়ে প্রাণপণে অ্যাক্সিলারেটর দিলেন। গাড়ি একচুলও নড়ল তো না-ই উলটে পিছনদিকে কেৎরে কাত হয়ে গেল। মান্ডভী মহা উল্লাসে আমাদের পেট অবধি ডুবিয়ে সীটের হাতখানেক উপর দিয়ে কলকলিয়ে বইতে লাগল। বাচ্চাদুটো কেঁদে উঠল, আমরা পিছনদিকে হেলে গিয়ে সোজা হবার চেষ্টা করতে লাগলাম। আমার আবার অ্যামিগডালা তেমন কাজ করে না, ফলে আমি তখনো জানলার ঠিক নীচের ভরভরন্ত নদীর ছবি নেবার চেষ্টা করে যাচ্ছি কাচের মধ্যে দিয়ে। চমক ভাঙল এক জঙ্গলরক্ষীর তীব্র চীৎকার আর পাশের কাচে দুমদাম পেটানোর আওয়াজে।
জানলার কাচ পুরোটা না নামালে ওঁরা গাড়িকে ঠিক করে পাকড়ে ধরতে পারছেন না। গাড়িটি নদীর নীচের একটি পাথরের খাঁজে আটকে গেছে, জোরে চালিয়ে বের করতে গিয়ে আরো বিশ্রিভাবে ফেঁসেছে। এদিকে নদীর জল বাড়ছে দ্রুতগতিতে। রক্ষীদের চোখেমুখে রীতিমত ভয়, প্রেম বসে আছেন কেমন হাল ছেড়ে দেওয়া ভঙ্গীতে, এই জঙ্গলরক্ষীরা একজনও ৬ ফুটের কম নয়, তাঁদেরও বুক অবধি জল। জল বাড়ছে ... জল বাড়ছে। আমরা ফটাফট সব কাচ নামিয়ে দিতেই প্রেমকে নিউট্রালে ইঞ্জিন চালু রাখতে বলে ওঁরা চারিদিক থেকে ঠেলে টেনে সেই পাথরের আলিঙ্গনমুক্ত করে গড়িয়ে দিলেন খানিক। ততক্ষণে গাড়ির ভেতরে জল আমাদের বুক ছুঁইছুঁই। তারপর তো জোরে চালিয়ে মাটি ছুঁয়ে শান্তি। এদিকে পারে উঠতে না উঠতেই আবার মুষলধারে বৃষ্টি। শুনলাম নদীগর্ভে প্রচুর এরকম পাথর আছে যার মধ্যে গাড়ি ফেঁসে যাবার সম্ভাবনা। ওইজন্যই আরো জঙ্গলরক্ষীরা দুইপাশে দাঁড়িয়ে মাঝের নিরাপদ অংশ দিয়ে গাড়িগুলোকে যেতে সাহায্য করেন। আগের গাড়িকটি অতি ধীরে নিরাপদেই গেছে। ইতিমধ্যে নদীর জল বাড়তে থাকায় সামান্য হিসাবের গন্ডগোল হয়ে যায় আর দ্রুত পেরোবার চেষ্টায় আরো আটকে যায়। গাড়ি নামাবার জায়গায় পৌঁছানোর আগেই সবাই যে যার নিজস্ব গাড়ির চালকদের ফোন করে আসতে বলেছেন, যাতে সরাসরি গাড়িতে উঠে পড়া যায়। এত বৃষ্টিতে হেঁটে যাওয়া অসম্ভব প্রায়। আমিও সমানে কল করে যাচ্ছি চালকমশাইকে, তাঁর ফোন হয় নেটওয়ার্কের বাইরে, নয়ত তিনি ফোন তুলছেনই না। অগত্যা আমরা নেমে কোনমতে একটা দোকানের বারান্দায় দাঁড়ালাম।
প্রায় মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে। এর মধ্যে না কমেছে বৃষ্টির বেগ, না পাওয়া গেছে চালকমশাইকে ফোনে। প্রেম বনদপ্তরে গিয়ে সমস্ত লাইফ জ্যাকেট জমা করে ফিরতিপথে আমাদের দেখতে পেয়ে আবার দাঁড়িয়ে গেলেন। গাড়ি সামনে নিয়ে এসে বললেন চড়ে বসতে, ছেড়ে দিয়ে আসবেন পার্কিঙে। পার্কিঙে প্রেমের গাড়ি ঢুকতে দেবে না, দেখি আমাদের গাড়ির মধ্যে চালকমশাই মহাসুখে নিদ্রা যাচ্ছেন। প্রচুর হর্ন টর্ন বাজিয়ে তাঁকে যদিবা জাগানো গেল, গাড়িটা এনে বোলেরোর গায়ে লাগানোর কথা কিছুতেই বোঝানো গেল না। ৫ মিটার দূরে খাড়াখাড়ি দাঁড় করালেন। অগত্যা নেমেই দৌড়ে গিয়ে ঝপাঝপ উঠে বসা। এই চক্করে ভাল করে ধন্যবাদটুকুও জানানো গেল না। গাড়িতে উঠে দেখি চালকমশাই পেছনের একদিকের কাচ সামান্য নামিয়ে রেখেছিলেন, বৃষ্টির ধারা এসে ভেতরে রেখে যাওয়া ব্যাগ ও তার মধ্যের টুকিটাকি সব ভিজিয়ে আমসত্ত্ব বানিয়ে দিয়েছে। সঙ্গিনী চটে কাঁই, চালকমশাই নির্বিকার। এইবার টের পেলাম বেজায় খিদে পেয়েছে। রাস্তার ধারের এক খাবারের দোকান খুঁজে বসা গেল, তখন বাজে বেলা সাড়ে তিনটে। গোয়ান পিজ পুলাউ, চিকেন ঝাকুতি, বিম্বলা সাসাও (একরকম রায়তা ধরণের ডিস) আর একবাটি করে সলকাঢ়ি খেয়ে পাখার হাওয়ায় জামাকাপড় খানিক শুকিয়ে যতক্ষণে বাইরে এলাম ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে মেঘ কেটে এক চিলতে রোদ্দুর দেখা দিয়েছে। পাঁচটা প্রায় বাজে। এবার ফেরা যাক নেচারস নেস্টে।
কাল আবার তারকরলি। চাঁদের আলোয় নির্জন, প্রায় জনশুন্য তারকরলি সৈকত, ফেনাভাঙা ঢেউ আর আকাশের মিলমিশ ...
#
অনেকদিন পরে এল এই পর্ব। শব্দের ব্যবহারে , বাক্যবিন্যাসে জ্যান্ত লেখা। কখনও কেতরে গিয়ে, কখনো ঝাঁকুনি খেতে খেতে, ভিজে ঝুপ্সি হয়ে পড়ে ফেললাম গোগ্রাসে।
অপেক্ষা সার্থক।
আমি অনেকদিন পরে গুরুতে আসছি। আগের পর্বগুলো আগে পড়িনি। আজ একসাথে চারটেই পড়লাম। খুব ভালো লাগলো। তরতর করে লেখা এগিয়েছে। যে জায়গার ধারেপাশে কখনো যাইনি সেই জায়গা স্পষ্ট ছবির মত চোখের সামনে ফুটে উঠছে। ছবির সাথে লেখকের মনের ছোটখাটো বড়্সড় অনুভূতিগুলোও ছুঁতে পারা যাচ্ছে। বাহুল্যবর্জিত, কেতবিহীণ লেখাটা মনের মধ্যে বেশ একটা নরম গরম জায়গা করে নিলো।
এই লেখাটি ভালো লাচলু। চলুক
যা কি টাইপ করতে কি হয়ে গেল! লেখাটি ভালো লাগছে লিখতে চেয়েছিলাম
প্রথম থেকেই পড়ছি। ভালো খ্যয়াল গানের মতো লয় বাড়ছিলো। দ্রুত-অতি দ্রুত খুব ভালো উতরে গেলো। বাহ ....
সুকি, ;-)))
থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কুউ
শিবাংশু, ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা।।
ছোটাই কেকে,
আসলে ছবি না দিয়ে স্রেফ লিখে কিছু বোঝানো যায় কিনা চেষ্টা করছিলাম। ছবি দিয়ে দিয়ে মনে হচ্ছে কল্পনার ডানা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।
তো কিছু ছবি যদি ধরা পড়ে থাকে তোমাদের চোখে সেটাই অনেক।
সুকি :-))
পড়লাম
খুপই উপাদেয় হয়েচে ঃঃ)) এই রুটে একবার যেতে হপে। তবে বাবা,মা কে নেওয়া যাবে না যা বুঝলুম।
খুব ভালো হচ্ছে। থামবেন না
টিমি, বেশ :-)
একক, হ্যাঁ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেকিং করে যাওয়াটা আরো ভাল হবে, ঠিক ট্রেকিং নয় হাইকিং বলা যায়।
ম, অ্যাঁ!
দ !!তাও তো লিখি নি যে মনটা আলো আলো, সাহসবাসা দেখে কিলিবিলি করতে ইচ্ছে করছে, জুতাটা স্বপ্নে কি আজই পাবো? পরের বার ডানা মেলে সঙ্গে যেতে চাই:-p
হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা তাই বলো!
উফ ঘাবড়ে গিসলাম।
এই লেখাটা কি করে যেন মিস করেছিলাম . খুব ভাল লাগল . মনে হচ্ছে গাড়ীর উপর মাছি হয়ে বসে বসে দেখলাম নদীতে ফেঁসে যাওয়া . জ্যান্ত লেখা .
আরেব্বাপ, এ তো প্রায় গাড়িশুদ্ধু সলিল সমাধি হতে যাচ্ছিল!
স্বাতী,
:-) থিঙ্কুসস
ন্যাড়াদা,
হ্যাঁ সেরকমই মনে হচ্ছিল।
বেশ বেশ। দমুদি একটু সাদা লাইন স্পেস দিয়ে লিখবে? তাহলে আমার পড়তে একটু সুবিধে হয়। গাড়ির মধ্যে নদী বেশ লাগল :)
এই তরকারলির প্ল্যান কতবার হয়ে কেঁচে গেল!
এখনো mtdc র অফিসে তরকারলির ছবি ভাসে। মহারাষ্ট্র ট্যুরিজম প্রচারের একটা কায়দা করেছিল, মহাবালেশ্বর দেশের গ্রান্ড ক্যানিয়ন, আরো কী কী ছিল। তরকারলি বোধহয় ছিল ক্যারিবিয়ান!
আর কি যাওয়া হবে। জমিয়ে রাখি। পুরো লেখাটা এলে দমদির সংগেই ঘুরে নেবখন!
দুর্দান্ত !!মনে হলো যেন ঘুরে এলাম !!
থ্যাঙ্কু সুমেধা।
আরে অভ্যু এক লাইন করে ব্রেক দেওয়া তো। তোমার সিস্টেমে দেখাচ্ছে না?
পাই তো পড়েই নি, কাজেই কি আর বলব।
(শেষ পর্বটা লিখতে ভুলেই গেছি দেখছি। )
আমিও ব্রেক দেখতে পাচ্ছি। এই বেড়ানোটা আমারও খুব ভালো লাগছিল।