এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  অর্থনীতি

  • আপনি চাকুরীতে টিকে থাকুন – বিপ্লবের ভার অন্যের 

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | অর্থনীতি | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪০২১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (৬ জন)
  • অযথা বিল্পবী হবার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন আপনি বিপদে পড়লে কেউই আসবে না উদ্ধার করতে – হাউসিং লোন আপনাকেই দিতে হবে, ছেলে মেয়ের পড়াশুনার খরচ, বাবা-মায়ের মেডিক্যাল - সবটাই। এগুলো নতুন কিছু নয় – কিন্তু আজকে এই স্যোশাল মিডিয়া এসে গাছে তুলে মই কেড়ে নেবার ব্যাপারটা অত্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘বার খেয়ে ক্ষুদিরাম’ কথাটা নিয়ে আপনি শ্লীল-অশ্লীল এসবের বিচার করতেই পারেন, কিন্তু এই প্রবচন যেন আজকের যুগকেই টার্গেট করে বানানো হত। আপনি এটা সেটা উদাহরণ দেবেন, কিন্তু ওই যে বলে না, ‘কমন সেন্স ইজ নট কমন’ – সেটাই আপনি বারে বারে নিজে প্রমাণ করবেন। নাহলে একটু তলিয়ে দেখলে বুঝতে পারতেন যাদের উদাহরণ দিচ্ছেন তাদের ওটাই ব্যবসা, ওটাই ভোট টানার কৌশল, ওটাই সারভাইভেলের পদ্ধতি। আপনার পদ্ধতি হওয়া উচিত যে করেই হোক চাকুরীতে টিকে থাকা। এখানে কেবলমাত্র বেসরকারী চাকুরীর কথাই বলছি।  

     নিজে যতটা পারা যায় সৎ থাকার চেষ্টা করে চাকুরী বজায় রাখুন। অনেকে আবার অন্যের পিছনে বাঁশ দিয়ে বা অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে বেশী করে টিকতে এবং এগুতে চায়। তবে সেটা করতে চাইবেন কিনা তা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ফিজিক্যাল আঘাত এবং দেশের আইন বিরোধী কিছু না করলে এতেও আমার বিশেষ কিছু আপত্তি নেই। অনেকে আবার আপনাকে কনফিউজ করার চেষ্টা করবে – বলার চেষ্টা করবে ফেসবুক বা ডিজিটাল প্রতিবাদ না করা মানে নিজে বিকিয়ে যাওয়া এবং অসৎ। কিন্তু মনে রাখবেন এগুলো অত্যন্ত ভাঁটের কথা – যারা আপনাকে উসকাচ্ছে, তারা নিজেরা আগুনের আঁচের থেকে অনেক দূরে বসে হয়ত নেটফ্লিক্স দেখছে। নিজেদের সেট করে তারা আপনাকে সেটিং ভাঙার পরমর্শ দেবে। আর কিছু লোক হইচই করে কারণ তারা নিজেরা অলরেডি ঠেক পেয়েছে তাই আপনাকে ফুসলিয়ে দল ভারি করার চেষ্টা করছে। এদের দলেও ঢুকে পরার কোন মানে হয় না।    

     বেশী ইকনমিক তত্ত্বের শব্দ ব্যবহারে ঢুকবেন না – যে কোন বেসরকারী কোম্পানীর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে লাভ করা। লাভ না করলেই ঘ্যাঁচ। আমেরিকার সাথে সব তুলনা করব, কিন্তু চাকুরী যাওয়ার তুলনা করব না, এট তো আর হয় না! অফিসের পাশের ওই বাক্স জাতীয় জিনিস রাখা থাকবে – নোটিস আসবে আর নিজের ডেক্স থেকে পুরষ্কার, বেষ্ট এমপ্লয়ী সার্টিফিকেট, পরিবারের ছবি ইত্যাদি গুটিয়ে নিয়ে দরজা দিয়ে চলে যেতে হবে ধীর পায়ে। দুঃখজনক? নিশ্চয়ই! কিন্তু কিছু করার আছে? না – নেই, এটাই বাস্তব।

     কেউ কেউ দেখছি এই নিয়ে গোঁসা করে যুক্তি দেয় যে কোম্পানী লাভ করছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও লোক ছাঁটাই করছে! এতেও কেন আশ্চর্য্য হয় মানুষ জানি না! কোম্পানী চায় আরো বেশী লাভ করতে। ১ টাকা লাভ করা আর ১০০ টাকা লাভ করা এক জিনিস নয়। সব কোম্পানী এমন অবস্থায় নিজেদের নিয়ে যেতে চায় যে সে তাদের শেয়ার হোল্ডারদের ভালো রিটার্ন দিতে পারবে যাতে করে তারা সেই কোম্পানীতে ইনভেষ্ট করতে রাজী হবে। এখন যদি রিটার্ণ হয় পোষ্ট অফিসের ফিক্সড ডিপোজিটের রিটার্ণের সমান, তাহলে পাবলিক কেন ঝুঁকি নিয়ে সেই কোম্পানীর শেয়ার কিনবে! সুতরাং লাভ করলেই লোক ছাঁটা যাবে না, এই সব প্রিমিটিভ ধারণার বাইরে থেকে বেরিয়ে আসুন।

     আচ্ছা এবার একটা কথা বলি, দেশের আইনে যদি কোন প্রোটেকশন না দেওয়া হয় বেসরকারী চাকুরীজীবিদের – এবং এমন কোন আইন না থাকে যে কোম্পানী আপনাকে চাইলেই ভাগিয়ে দিতে পারবে না – তাহলে এটা ধরে নিয়ে চলুন যে, যে কোন দিন আপনার চাকুরী যেতে পারে। কিস্যু করতে পারবেন না। আপনি ইল্যুউশনে ভুগবেন যে একটা ক্লজে ফাঁক বের করেছি – তা আপনি কি ভাবেন? যেটা আপনি একা ভেবে আর দুচার জন আপনার বিপ্লবী বন্ধু ভেবে বের করে ফেলেল সেটা একটা মালটি-বিলিয়ন ডলার কোম্পানী জানে না! বালখিল্যতার একটা সীমা থাকা উচিত!   

     একটা দেশে কর্মী ছাঁটাই একদম অসম্ভব ছিল – স্টাফ কাউন্সিল ইত্যাদি করে একসা। একটা মালটিনেশ্যানাল কোম্পানীর অফিসে সেই দেশে বহুদিন ধরে আছে, কিন্তু দেখা গেল এই সময়ে লোকজন ছাঁটাই না করে, কিছু জিনিস কম খরচার দেশে না সিফট করলে ঠিক জমছে না কেস। লাভ ঠিক ঠাক আসছে না। ফলে সেই কোম্পানী করল কি, সেই দেশের অথরিটি এবং স্টাফ কাউন্সিল-কে গিয়ে বলল, আমাদের কোম্পানী স্লিম করতে হবে – বেশী ব্যাগরা দিলে সব অফিস এই দেশ থেকে সিফট করে অন্য দেশে নিয়ে চলে যাওয়া হবে! এবার তোমাদের চয়েস – কি করতে চাও। তারাও মচকাবে না – বলে কি আমাদের নিয়ম অনুযায়ী যদি অফিসে পোষ্টটা একজিষ্ট করে, তাহলে তুমি তাকে ছাঁটাই করতে পারো না! কোম্পানী বলল, “আচ্ছা, যদি পোষ্টটাই না থাকে”? ওরা বলল – হুহুম। ফলে রিওরগানাইজ হল কোম্পানী, আগের থেকে ১৫% কম পোষ্ট  – ১০০ জন এবার সবাই অ্যাপ্লাই কর সেই ৮৫টা পোষ্টে!

     মরাল হল – সব সম্ভব। যখন আলোচনা চলছিল, তখন যারা বিপ্লব না করে কি করে টিকে থাকা যায় ভেবেছিল, তারাই টিকে গেল! সেই একই সময় চলে এসেছে আজকে – সমাজ বলুন আর দেশ বলুন, সবই ব্যক্তি ব্যক্তি যোগ করে হয়। তাই ব্যক্তি টিকে না থাকলে সমাজ ঠিকে থাকবে না, আর থাকবে না দেশ। তাই প্রাধান্য দিন নিজের টিকে থাকা-কে। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত পাবলিক চিরকালই থাকবে – যাদের কিছুই হারানোর নেই, বা অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছে। বিপ্লব তাদের করতে দিন। আপনি নিজের আখেরটি গুছিয়ে তারপরেই বাহোবামূলক সম্ভাষণ দিন তাদের।      

    নীচের ছবিটা দেখুন – কোভিডের পর থেকে শুধু আমেরিকায় ‘ওয়েল ফিল্ড সার্ভিস’ এর সাথে যুক্ত চাকুরী হারা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ লোক। শুনেছি আমেরিকায় আগে মেটাল-মাইনিং ইন্ডাষ্ট্রিতে ইউনিয়ান ইত্যাদি কিছু ছিল, হালকা টাকা কড়ি দিয়েছে। কিন্তু ওয়েল ফিল্ড সার্ভিসের লোকগুলোর কি হয়েছে? সব পিচবোর্ডের বক্সে করে সার্টিফিকেট আর ছবি প্যাক করে বাড়ি গেছে। দুঃখজনক? নিশ্চয়ই! কিন্তু কিছু করার আছে? না – নেই, এটাই বাস্তব। 



    তবে এই নিয়ে তেল ব্যবসার সাথে যুক্ত যাদের চাকুরী গেছে তারা বিশাল আন্দোলন ইত্যাদি কিছু করার কথা ভাবে নি। কারণ তারা চাকুরী করতেই ঢুকেছিল এই অনিশ্চয়তা জেনে। যেকোন দিন চাকুরী চলে যেতে পারে – ৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রোজেক্ট রাতারাতি বন্ধ হয়েগেছে ৩৫০০ কনট্রাক্টর রাতারাতি নোটিশ পেতে পারে বিল্ডিং, এবং এক্সপ্যাত হলে শহর ছাড়ার জন্য। অনেকে রোটেশন বেসিস এ কাজ করে – মানে ২৮ দিন টানা কাজ, ২৮ দিন বাড়িতে ছুটি। কোভিডের সময় অনেকে ওই ২৮ দিনের ছুটিতে বাড়িতে এসে মেল/কল পেয়েছে যে আর আসতে হবে না!



    আপনি টিকে থাকুন – আর প্রচুর পয়সা ইনকাম করায় এবং পারলে জমানোতে মন দিন। যাতে করে রাতারাতি নোটিশ এলে আপনাকে পরের মাস থেকে প্রবল আসুবিধায় না পড়তে হয়। কি ভাবে টিকে থাকবেন অফিসে? আপনারা যদিও খুব সম্ভবত আমার থেকে বেশী জানেন এই সব ব্যাপারে – তবুও দুই-এক্টা টিপস দেবার লোভ সামলাতে পারলাম না নিজের অভিজ্ঞতা থেকে।

     আমি তখন রিসার্চ অর্গানাইজেশন থেকে চুলবুল করতে করতে, মাথায় ভিতর আইডিয়া কিল বিল করাতে করাতে আমষ্টারডাম থেকে ব্রুনাইয়ে ট্রান্সফার হয়েছি। সে এক বিবিধ স্বপ্ন নিজের মধ্যে – আগে যে সব জিনিস চেষ্টা করার জন্য যেখানে তেল তোলা হয় সেখানকার লোকেদের খোসামোদ করতে হত – এবার তাহলে নিজেই সেই সব ট্রাই করতে পারব। কাউকে তেল মারতে হবে না। এই সব আন্ডু গান্ডু ভেবে এক মিটিং-এ দিয়েছি এক জবরদস্ত প্রস্তাব। ওই পাইপে ওয়েল্ডিং করার জন্য সেই আদ্দি কালের পুরানো ইলেকট্রোড কেন ব্যবহার করা হবে? নতুন গবেষণা করে কত ভালো ভালো ইলেকট্রোড বেরিয়েছে! আমাদের ওয়েল্ডিং ইঞ্জিনিয়ার নারায়ণ-জী আমাকে বলল – “উঁহু, পুরানো জিনিস পালটানো যাবে না!” আমি বললাম, কেন? নারায়ণ-জী জানালো সরকার-দার গাইডেন্সে আছে –

    “নাথিং সাকসিডস্‌ লাইক সাকসেস। ফেলিওর ইজ অরফ্যান”।

    আমি ঘবড়ে গেলাম – নারায়ণজী ব্যখ্যা করল, সরকার-দা শিখিয়েছে যে জিনিস পরীক্ষিত বহু বছর ধরে, সেখানে দুম করে রিসার্চের নামে ট্রাই করার কোন মানে হয় না। ফেটে গেলে কে দেখবে?

     আমি ভেবে দেখলাম সত্যি কথা! এই ভাবেই সরকার-দার সাথে আমার আলাপ হয়ে যায়। সরকার-দাকে আমি ডাইরেক্ট চিনতাম না, আর এখনো চিনি না। যেমনটা ডাইরেক্ট চিনি না ডেল কার্ণেগী-কেও। মানে লেজেন্ডদের আদপেই ডাইরেক্ট চেনার দরকার হয় না। যা বোঝা গেল সরকার-দার আন্ডারেই নারায়ন-জী মিডিল ইষ্টের এক বিশাল তেল কোম্পানীতে কাজ করতে ঢোকে। সরকারদার অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার খুবই প্রকট – বার্কলে থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসেছে। কিন্তু তেল কোম্পানীতে কিভাবে সারভাইভ করতে হয়, তার বাইবেল লিখে ফেলেছে সরকার-দা।

     কিছুদিন পর থেকেই সমস্যায় পড়লেই, আমি ঘাড় ঘুরিয়ে নারায়ন-জী কে জিঞ্জেস করতাম, আচ্ছা সরকার-দার প্রবচন এই বিষয়ে কি আছে – এবং বেশীর ভাগ সময়ে উত্তর-ও পেতাম। সেদিন একটা ই-মেল এল জরুরী পরামর্শ চেয়ে – আমি নারায়ণ-জীকে কনসাল্ট করলাম, সরকারদার উত্তর এই প্রসঙ্গে হল –

    “ইয়ে সব অফ স্টাম্প-কা বাহার কা বল হ্যায়। স্রেফ বল্লা উঠাকে ছোড়-দো”।

    অর্থাৎ, এই এ-মেল এর উত্তর দেবার দরকার নেই। ভালো কথা, পরের আরেক দিন, উত্তর দিতেই হবে এমন একটা মেল এল – আমি বললাম, নারায়ণজী, তাহলে একটু ভেবে চিনতে জবাব দেওয়া যাক? নারায়ণ-জী বলল, “বিলকুল নেহী”। সরকার-দা বলে গ্যাছে

    “বল আপনা কোর্ট-মে কভি র‍্যাহেনা নাহি চাহিয়ে”।

    অর্থাৎ, আমি উত্তর দিলাম, “আমার উত্তর নিয়ে তোমরা কি করবে”? উত্তর এল, “একটা পাইপ রিপ্লেস করব”। সরকারদার নিয়ম মেনে পালটা প্রশ্ন, “পাইপ না পাল্টালে কি হবে”? সে এক দেখার মত জিনিস – এক সময় দেখলাম আর মেল আসা বন্ধ হয়ে গেল এই প্রসঙ্গে, এবং আমি সাথে সাথে সরকার-দার মাহাত্ম বুঝে গেলাম আরো ডিপলী। স্রেফ বল অপর কোর্টে ফেরত পাঠিয়ে পাঠিয়ে আমি ঘায়েল করে দিলাম ওদের – আসল কাজ কিছু করতে হল না!

    একদিন অফিসে একটু ফিলোসফিক্যাল হয়ে পড়লাম – তখনো গা থেকে রিসার্চের গন্ধ যায় নি। নারায়নজীকে বললাম, “এই ধরণের কাজ করানোর জন্য আমাদের মত রিসার্চের এক্সপ্যাত এবং এক্সপার্ট লোক এনে কি হবে?” নারায়ন-জী বলল এই বিষয়েও সরকার-দা কিছু বলে গ্যাছে। সরকারদার ভাষায়ঃ

    “হাস্‌তে হাস্‌তে, ব্যাঙ্ক-কে রাস্তে”।

    অর্থাৎ, বেশী ভাবতে মানা আছে সেই হ্যান্ডবুকে – মাসের শেষে আমাদের কাজ হল হাসতে হাসতে ব্যাঙ্কে-এ গিয়ে মাইনে তোলা – মাইনে যত দিন আসতে থাকবে, ততদিন বেশী ভাবার কিছু নেই।

    একদিন মিটিং-এ গেছি আমরা দুজনে – একটা লোক এত ফালতু কিছু না জেনে বক বক করছিল যে আমি নারায়ণজীকে ফেরার সময় বললাম, “লোকটা একদম মূর্খ”। নারায়ণজী বলল, “ নাহি, ও সের্ফ মুর্খ নেহী – সরকার-দা কা হিসাব অনুসার, অ্যায়সা আদমী-কো বোলতা হ্যায় ‘বুরবক’”। আমি জানতে চাইলাম, মূর্খ এবং বুরবক এর মধ্যে পার্থক্য কি? যা বুঝতে পারলাম তা হল, সরকার-দার হিসাব অনুযায়ী

    “একটা গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বোকা লোককে বলা হয় মূর্খ। এমন দশটা গ্রাম মিলিয়ে তার মধ্যে দশটা মূর্খর সবচেয়ে খারাপটাকে বলা হয় মহা-মূর্খ। একশোটা মহা-মূর্খ মিলিয়ে সবচেয়ে রদ্দিটাকে বলা হয় অতি-মূর্খ। এবং হাজারটা মহা-মুর্খ মিলিয়ে সবচেয়ে র‍্যাজাটেকে বলা হয় ‘বুরবক’।

    একদিন আমাদের প্ল্যান্টে ডুপ্লেক্স স্টেনলেস স্টীল পাইপে ফেলিওর হল। এবার ডুপ্লেক্স হল দুই জিনিস মিলিয়ে – ফেরাইট এবং অষ্টেনাইট। একটা শক্তি দেয় (ফেরাইট) এবং একটা দেয় ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা (অষ্টেনাইট)। সেই মাল ফেলিওর হলে একটু খারাপ লাগে – নারায়ণ-জী বলল, ঠিক এই জন্যই সরকার-দা ওদের প্ল্যান্টে ডুপ্লেক্স স্টীল অ্যালাও করে না। যুক্তি হল,

    “কোম্পানী নে সোচা, ফেরাইট অউর অষ্টেনাইট দোনোকা আচ্চাই কাম পে লাগায়গা। ইস লিয়ে দোনোকা শাদি করায়া। লেকিন আখের মে হুয়া ক্যেয়া? যো পয়দা হুয়া উসনে ফেরাইট অউর অষ্টেনাইট দোনোকা বুরাই লেকেই পয়দা হুয়া”।

    ফলতঃ ওদের প্ল্যাণ্টে ডুপ্লেক্স বন্ধ।

    নারায়ণজী গল্প করছে – মিডিল ইষ্টে সেই তেলের কোম্পানীতে এক দেশী-ভাইদের গুলতানি চলছে। কি কথা প্রসঙে পয়সা ইনকাম করতেই মিডিল ইষ্টে আসা, এমনটা বক্তব্য পেশ করেছে কেউ। সরকার দা বলল,

    “হাম সব ইধার সির্ফ পয়সা কামানে নেহী আয়া”।

    সবাই তথমত – সরকারদা এ কি বলে! মাসের শেষে “হাস্‌তে হাস্‌তে, ব্যাঙ্ক-কে রাস্তে” যার ফিলসফি, তার মুখে এ কি কথা। হালকা পজ নিয়ে, সরকার-দা বাক্যটি পূর্ণ করল,

    “হাম সব ইধার পয়সা কামানে নেহী আয়া। হাম সব ইধার বহুত বহুত পয়সা কামানে আয়া”।

    সরকারদার বেশীর ভাগ ডায়লগই আমার অভ্রান্ত মনে হয়। আরো কিছু প্রোপাইটারী প্রবচন আছে। আমি এখন আর ব্রুনাই-এ নেই – নারায়ণজীও নেই। তবুও আজকাল প্রফেশন্যাল ঠ্যাকায় পড়লে নারায়ণজীকে হোয়াটস অ্যাপ পাঠাই সেই প্রসঙ্গে সরকারদা কি বলত জানতে চেয়ে। সরকার-দার গাইডেন্স এই ভাবেই এখনো আমায় চালিত করছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৪০২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মেঘ | 103.77.***.*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৩০97262
  • রঞ্জন | 122.16.***.*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০৮97268
  • আমিও সরকারদার পাখা হয়ে গেলাম। দরকার মত হোয়াটস অ্যাপ করব।

  • Amit | 203.***.*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৭:৪৭97278
  • এইটা মাস্টারপিস নেমেছে এক্কেবারে. সেই সরকার দার পায়ের ধুলো যদি একটু পাওয়া যায় কোনমতে  , বড়ো উপকার হয়. ওনার শতায়ু এবং শতপুত্র হোক কামনা করি. 


    আচ্ছা ব্রুনেই তে নারায়ণ জি কে ঠিক প্লেস করতে পাচ্ছিনা. এটা কি একজন এক্স -ওএনজীসি, গুঁফো ভদ্দরলোক ক্রিকেট খেলতেন মাঝে সাঝে   , তিনি ই  ? 

  • সুকান্ত ঘোষ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১০:৫৪97280
  • রঞ্জনদা - :)


    অমিতাভদা - তুমি মনে হয় চিনবে না নারায়ণজীকে - আগে নানা দেশে কাজ করেছে, কাতার পেট্রোলিয়াম সহ।  

  • শিবাংশু | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:৫৪97282
  • এই লেখাটা গীতার উনবিংশ অধ্যায় করে জুড়ে দিলে হয়। 

     

    আমি যে জায়গায় কাজ করেছি, সেটা 'সরকারদা'দেরই মৌরসিপট্টা। জনে জনে তাই । পুরো বৈকুণ্ঠলোক .... 

  • | 2601:247:4280:d10:6d96:8700:c5b0:***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:২৫97296
  • লেখাটা ভালো লাগল। এমনকি মার্কিন দেশেও যে সেক্টরগুলোতে ইউনিয়ান আছে তারা দাবি আদায়ের প্রশ্নে মাঝেমাঝেই খবরে উঠে আসেন। অসুবিধে দেখা দিলে কতৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে একটা সমাধান বের করে আনা, সদস্যের পাশে থেকে লড়াই ইত্যাদি তাদের কাজ:-)এজন্য প্রতিমাসে অবশ্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিতে হয়- যা নিয়ে সদস্যদের মধ্যে অবশ্যই ক্ষোভ ইত্যাদিও আছে। ইউনিয়ানের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক না। তবে লড়াইয়ের সুফল যেহেতু সকলেই পাবে বলে ধরে নেওয়া হয় তাই মেম্বারশিপ জমা দেওয়াটা বাধ্যতার পর্যায়েই  পড়ে। এটা আমি স্কুল ইউনিয়ানের কথা লিখলাম। 

  • রঞ্জন | 122.176.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:২৮97328
  • ম ,


    একটু বুঝতে চাইছি। "প্রতিমাসে অবশ্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিতে হয়- যা নিয়ে সদস্যদের মধ্যে অবশ্যই ক্ষোভ ইত্যাদিও আছে"।


    চাঁদার পরিমাণ কি বেশ মোটারকম? নইলে ক্ষোভ ক্যান? চাঁদা তো এদেশেও দিতে হয়।

  • | 2601:247:4280:d10:c42:6fba:420e:***:*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৭:২৩97330
  • চাঁদা দিয়ে আমার কোন কাঁচকলা লাভ হবে এভাবনা অনেকের মনেই আছে।নিজেদের দাবি আদায়ের জন্যে স্কুলে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন অনেকের মতেই খারাপ কাজ। তাছাড়া একটা রাজ্যের ইউনিয়ানে সবাই চাঁদা দিচ্ছে বটে কিন্তু কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্ভাবনা যেহেতু খুবই কম, তাই ঐ টাকা জলে যাচ্ছে বলেও অনেকেই বিরক্ত।


    চাঁদার পরিমাণ খুব কম বলা যাবে না।কেউ যদি ওটা ২০ /৩০/৪০ বছর ধরে দিয়ে চলে- তাহলে পরিমাণ টা কম দাঁড়াবে না।

  • রঞ্জন | 122.162.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৩০97344
  • বুঝলাম। এটা একটা  ওয়েলফেয়ার বা থ্রিফট ফান্ড করে পরে কেউ ছেড়ে দিলে রিফান্ডেবল করা যেতে পারে । মানে এরম হতে পারে। তবে থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির ইউনিয়ন আর ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের হয়ত তুলনীয় নয় । জানিনা, আন্দাজে পাকামো করলাম আরকি!

  • | 2601:247:4280:d10:c42:6fba:420e:***:*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:২৫97352
  • ইউনিয়ানের আরেকটা বড় কাজ হলো কম পয়সা দিয়ে কাউকে যাতে কতৃপক্ষ নিয়োগ করে ফেলতে না পারে সেটা দেখা। যদি কোনও পদের পাঁচটাকা মজুরি হয় তাহলে সেটাই দিতে হবে। চারটাকা দিয়ে কেউ কাজ করতে রাজি থাকলেও তাকে নেওয়া যাবে না। 

  • Ranjan Roy | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:০০97355
  • এটা ঠিক। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন