লকডাউন শিথিল হচ্ছে ধীরে ধীরে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ চেষ্টা করছেন রাষ্ট্রের কিম্বা সমাজের কৃপার ওপর নির্ভর না করে আবার নিজের পায় দাঁড়াতে। রাষ্ট্র দু’বেলা ঘোষণা করছেন তাঁরা কি প্রবল দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করছেন এই অতিমারীর; আক্রান্তদের সুস্থ হয়ে ওঠার হার বেড়ে চলেছে রোজই, মৃত্যু হার অনেক দেশেরতুলনায় কম।
বিশ্বাস করতে ভাল লাগে। কিন্তু রামপ্রসাদ যেমন গেয়েছিলেন, "মন তোমার ওই ভ্রম গেল না".....কাছাকাছি বয়সের বেশ কয়েকজন কাছের মানুষকে হারিয়েছি এই ক'মাসে। তাঁরা কি আছেন এই হিসাবে? আর কি কাউকে হারাতে হবে না?
কোভিড-১৯ এ মৃত্যু, সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী, জানাতে হবে Medical Certification of Cause of Death (MCCD) ওয়েবপোর্টালে। সামগ্রিক কোভিড মৃত্যুর তথ্য, যা নিয়ে এখন আলোচনা করছি আমরা, সেটি রাজ্য থেকে এই পোর্টালে পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি ।
আর এইখানেই আমার ভ্রমের উৎপত্তি।
১৯৬৯ সালের রেজিস্ট্রেশন অফ বার্থ অ্যাণ্ড ডেথ অনুযায়ী জন্ম আর মৃত্যুর নিবদ্ধীকরণ বাধ্যতামূলক। সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের নিয়ম অনুযায়ী সাধারণত স্থানীয় সরকার (পঞ্চায়েত বা মিউনিসিপালিটি) মৃত্যু নথিভুক্ত করেন, ডেথ সার্টিফিকেটে একটা কারণও লেখা থাকে বটে, কিন্তু, এবং এটা বেশ বড় "কিন্তু", সেটা "মেডিকেলি সারেটিফায়েড কজ অফ ডেথ" হিসাবে গণ্য হয় না।
ভারতে MCCD পর্যায়ক্রমে রূপায়িত হচ্ছে। সব রাজ্যের সব হাসপাতাল এখনো এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কিছু শহুরে হাসপাতালই কেবলমাত্র এর অন্তর্গত হতে পেরেছে এতাবৎ; এবং সেই অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান গুলিতে মৃত্যু হলেই কেবল MCCD ওয়েব পোর্টালে নাম উঠবে। রাজ্যে রাজ্যে MCCD রূপায়নের অগ্রগতিতে বিস্তর তারতম্য আছে। সেন্সাসের ওয়েবসাইটে গিয়ে Civil Registration System শাখায় গেলেই এই তারতম্য কোথায় কত খুঁজে পাবেন।
আমি দুটো বার্ষিক রিপোর্ট দেখলাম এইখানে। প্রথমটি CRS এরভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স রিপোর্ট ২০১৮, আর দ্বিতীয়টি CRS এর এমসি সি ডি রিপোর্ট ২০১৮।
সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে মোট মৃত্যুর ৮৬ শতাংশ নথিভুক্ত হয়েছে, আর এম সি সি ডি ২০১৮ অনুযায়ী ২১.১ শতাংশ ক্ষেত্রে মেডিকেলি সার্টিফায়েড কজ অফ ডেথ জানা গেছে। তাহলে ২০১৮ য় যত মৃত্যু হয়েছে তার কেবল ১৮.১৫(০.৮৬ X ২১.১) শতাংশের মেডিকেল কজ অফ ডেথ আমরা নিশ্চিত রূপে জানি। বাকি প্রায় ৮২ শতাংশের মৃত্যুর চিকিৎসাশাস্ত্রগত কারণ আমরা জানি না।
উদাহরণ স্বরূপ দুটো নির্দিষ্ট সংখ্যা রাখি। ২০১৮ সালে ভারতে নিবন্ধিকৃত মৃতের সংখ্যা ৬৯,১১,১৯৭। আর ওই বছরের এম সি সিডি রিপোর্ট অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ১৪, ৫৬, ০২৩; শতাংশের হিসেবে২১.১। ওই বছরে পশ্চিম বাংলার সংখ্যা-গুলি হল যথাক্রমে, ৪,৯০,৫৩০ এবং ৬৩৩৩৮; শতাংশের হিসাবে ১২.৯।
২০১৮ MCCD রিপোর্টের রেজিস্টার্ড ডেথেএর কত শতাংশের মেডিকেল কজ জানা গেছে সেই অনুযায়ী যদি রাজ্যগুলিকে সাজাই তাহলে তাদের ক্রমবিন্যাস এরকম:-
১) গোয়া (১০০%),
২) লাক্ষাদ্বীপ (৯৪.৯%),
৩) দমন ও দিউ (৯০.৩%) ,
৪) পুদুচ্চেরি (৭৪.০%),
৫) চণ্ডীগড় (৭০.৮%),
৬) দিল্লি(৬২.৩%),
৭) আন্দামান ও নিকোবর (৫৯.৫%),
৮) মিজোরাম (৫৮.৯%),
৯) দাদরা ও নগর হাভেলী (৫৪%),
১০) মণিপুর (৫১.৪%),
১১) তামিল নাডু (৪৫%),
১২) মেঘালয় (৪৩.১%),
১৩) সিকিম (৪২.৫%),
১৪) তেলেঙ্গানা (৩৭.৪%),
১৫) মহারাষ্ট্র (৩৪.৮%),
১৬) অরুণাচল প্রদেশ (৩২.৯%),
১৭) কর্ণাটক (৩১.১%),
১৮) নাগাল্যাণ্ড (২৮.৭%),
১৯) গুজরাত (২৩.৪%),
২০) ত্রিপুরা (২২.৩%),
২১) হরিয়ানা (২০.৪%),
২২)ছত্তিশগড় (১৯.৮%),
২৩) পাঞ্জাব (১৭.১%),
২৪) হিমাচল প্রদেশ (১৫%),
২৫) অন্ধ্র প্রদেশ (১৪.৯%),
২৬) বিহার (১৩.৬%),
২৭) রাজস্থান (১৩.১%),
২৮) পশ্চিম বাংলা (১২.৯%),
২৯) অসম (১২.১%),
৩০) কেরল (১১.৯%),
৩১) উত্তরাখণ্ড (১১.১%),
৩২) ওডিশা (১১.১%),
৩৩) মধ্য প্রদেশ (১০.৫%),
৩৪) উত্তর প্রদেশ (৫.১%),
৩৫) ঝাড়খণ্ড (৪.৬%)
(বন্ধনীতে উল্লিখিত শতাংশটি মেডিকেল কারণ জানা মৃত্যুর অনুপাত)
সরকারি চাকরি করার সময়ে, এবং চাকরি শেষ করার পর মেঠো গবেষণায় অংশ নিতে গিয়ে বহুবার টের পেয়েছি সমাজবিজ্ঞানীরা কেন সরকারি হেলথ ইন্টেলিজেন্সকে গুরুত্ব না দিয়ে এন এস এস ও কিম্বা এন এফ এইচ এস জাতীয় ইন্ডিপেনডেন্ট সার্ভেকে গুরুত্ব দেন।ওপরের ক্রমবিন্যাসটাই তার আরেকটা উদাহরণ। এম সি সি ডি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এতোটাই ঘেঁটে আছে এখনো যে বিহার কেরলের ওপরে উঠে বসে আছে এই ক্রমে।
আগেই দেখেছি যে কোভিড-১৯ মৃত্যুর তথ্য উঠছে এম সি সি ডি ওয়েব পোর্টালে, সম্ভবত যে প্রতিষ্ঠানগুলি কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য চিহ্নিত, কেবল সেই প্রতিষ্ঠানে কোভিডে মৃত্যুর তথ্য সেটা। তাহলে কি কোভিড বলে সন্দেহ করা হচ্ছে যে সব অসুস্থ মানুষদের, অথবা যাঁরা হাসপাতালের পথে মারা যাচ্ছেন অথবা এম সি সি ডি-রূপে নিবন্ধীকৃত নয় এমন হাসপাতালে মারা যাচ্ছেন, তাঁদের কোভিড মৃতদের মধ্যে গণ্য করা হচ্ছে না? সম্ভবত না।
মফস্বল এলাকায় এখন ছড়াতে শুরু করেছে এই অতিমারী, সেখানের তথ্যও গোনা হচ্ছে না তা হলে?
এই সন্দেহের ভিত্তিতে একটা অঙ্ক কষার চেষ্টা করেছেন দুই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। দিল্লির AIIMS এর ডা: গিরিদর গোপাল পরমেশ্বরণ আরব্যাঙ্গালোরের একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী ড: হেমন্ত দীপকসেওয়াডে।
এম সি সি ডিতে রেজিস্ট্রিকৃত মৃত্যু আর সিভিল রেজিস্ট্রেশনে মৃত্যুর বর্তমান ফাঁক অ্যাডজাস্ট করতে তাঁরা একটা মাল্টিপ্লিকেশন ফ্যাক্টর ব্যবহার করেছেন। সেই সংখ্যাটা হলো ৫.২৯. (এটা ২০১৭ র এম সিসিডি রিপোর্টের ভিত্তিতে করা। ২০১৮-য় দেখছি এম সি সি ডির অনুপাত ২২ শতাংশ থেকে কমে ২১.১ শতাংশ হয়েছে, অতএব ফ্যাক্টরটি সামান্য বাড়বে) এই ফ্যাক্টর ধরে হিসেব করলে ভারতে প্রতি দশ লক্ষ মানুষ পিছু ১৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই অনুমান সঠিক হলে ভারতে কোভিড মৃত্যুর সংখ্যাটা সরকারি দাবির থেকে অনেকটাই বেড়ে যায়।
অন্য দেশগুলোর একটা হিসাবও দিয়েছেন তাঁরা। যেমন ধরুন রাশিয়া (প্রতি দশ লক্ষে ৯৬, এম সি সি ডি ১০০%), দক্ষিণ আফ্রিকা ( প্রতি দশ লক্ষে ১৩৭, এম সি সি ডি ৯২%), ইউ এস এ (প্রতি দশ লক্ষে ৪৭৭, এম সি সি ডি ১০০%), ব্রেজিল ( প্রতি দশলক্ষে ৪৪০, এম সি সি ডি ৯৯%), মেক্সিকো (প্রতি দশ লক্ষে ৩৬২, এম সি সি ডি ১০০%), পেরু ( (রাশিয়ায় প্রতি দশ লক্ষে ৫৮৮, এমসি সি ডি ৫৭%), চিলি (প্রতি দশ লক্ষে ৪৯৮, এম সি সি ডি ৯৫%), স্পেন (প্রতি দশ লক্ষে ৬০৮, এম সি সি ডি ৯৫%), ইরান (প্রতি দশ লক্ষে ২০২, এম সি সি ডি ৯০%)।
খুব আতঙ্কিত হবার কারণ নেই বলে মনে হলেও এই দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা একটা কারণেই করা মুশকিল, এদের এম সি সি ডিরেজিস্ট্রেশন ভারতের তুলনায় অনেক অনেক বেশি, ফলে মৃতের সংখ্যা কম দেখাবার সম্ভাবনা কম।
বিভিন্ন রাজ্যের এম সি সি ডি আর নিবন্ধিকৃত মৃত্যুর ফারাকের নির্দিষ্ট মাল্টিপ্লিকেশন ফ্যাক্টর দিয়ে একটা হিসেব করেছেন এই দুইগবেষক। সেই হিসেব অনুযায়ী প্রথম দশটি রাজ্যের কোভিড মৃত্যুহারের রেঞ্জ দশ লক্ষ পিছু ৩৪৭ থেকে ১১৪ অবধি।্তাঁদের তালিকার প্রথম আটটি রাজ্য হল ১) দিল্লী, ২) মহারাষ্ট্র, ৩) গুজরাট, ৪) অন্ধ্র প্রদেশ ৫) নাগাল্যাণ্ড ৬) মধ্যপ্রদেশ ৭) উত্তরাখণ্ড ৮) পশ্চিমবঙ্গ।
আমারই কোথাও একটা বুঝতে ভুল হচ্ছে ভেবে এই বিভ্রান্তি কেবল বন্ধুবান্ধবদের কাছেই তুলেছিলাম। খুব স্পষ্ট করে কেউ কিছু বোঝাতেপারলেন না।
ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রবল মান্য পত্রিকা ‘দ্য ল্যান্সেট’ এর ৫ইসেপ্টেম্বর ২০২০ সংখ্যায় দেখলাম প্রায় একই প্রশ্ন তোলা হয়েছে - পত্রলেখা চ্যাটার্জী “ইজ ইন্ডিয়া মিসিং কোভিড-১৯ ডেথস” শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রশ্ন তুলেছেন যাঁদের কোভিড-১৯ এ মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে অথবা সেই রোগটাই মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ বলে মনে করা হচ্ছে, মৃতের হিসেবে তাঁরা কি আদৌ আসছেন?
দ্য ল্যান্সেট এর মতো মান্য পত্রিকাও যখন এ বিষয়ে সন্দিহান তখন বিষয়টার বড় আকারে গণআলোচনায় আসা উচিত বলে মনে হল।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চের নির্দেশিকা অনুযায়ী কোভিড সন্দিগ্ধ এবং সম্ভাব্য কোভিড মৃত্যুগুলিও WHO ICD - 10 কোড অনুসরণ করে কোভিড মৃত্যু হিসেবেই গণ্য করতে হবে।
এই নির্দেশিকা নিতান্তই পরামর্শমূলক, মানার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। দ্য ল্যান্সেট ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, রাজ্যগুলি সম্ভাব্য এবং সন্দেহজনক কোভিড-১৯ মৃত্যুর তথ্য সর্বসমক্ষে আলাদা করে রাখছেন কি না? মন্ত্রক থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
পাবলিক হেলথ ফাউণ্ডেসন অফ ইণ্ডিয়ার সঙ্গে যুক্ত এপিডেমিওলজিস্ট ডাঃ গিরিধর আর বাবুও দ্য ল্যান্সেটের সঙ্গে কথোপকথনে এ দেশে মৃত্যু নিবন্ধিকরণের দুর্বলতার কথাই বলেছেন।তাঁর মতে গ্রামীণ এলাকায় অনেক মৃত্যুই হাসপাতালের বাইরেই হচ্ছে, আর মোট মৃত্যুর মাত্র ২২ শতাংশের মেডিক্যাল কারণ জানা যায় বর্তমানে। ডাঃ বাবু প্রশ্ন তুলেছেন ইন্টিগ্রেটেড ডিজিজ সার্ভেলেন্স প্রোগ্রাম (আই ডি এস পি) কোভিড-১৯ এর মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করছে কেবল হাসপাতাল আর ল্যাবরেটরি গুলি থেকে, কিন্ত যাঁদের টেস্টিং আদৌ হয় নি, এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে আপৎকালীন ক্রিটিকাল কেয়ারের অভাবে প্রাণ হারালেন, তাঁরা হিসেবে আসছেন না। তাঁর দাবি, মৃত্যুর তথ্য যাচাই করতে হবে সব হাসপাতাল থেকে, এবং হাসপাতালের বাইরে যাঁরা মারা যাচ্ছেন তাঁদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এই যাচাইতে।
কেরালার সেন্টার ফর পাবলিক পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রিও জনও দ্য ল্যান্সেট এর কাছে একই রকম সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কোভিড-১৯ এর টেস্টিং এর তথ্য নিয়ে। তাঁর মতে বিভিন্ন রাজ্য বিভিন্ন ধরনের টেস্ট ব্যবহার করছেন; ক্রমশঃ র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টিং করার ঝোঁক বাড়ছে। এই ধরনের টেস্টে ফলস নেগেটিভের অনুপাত বেশি। অনেক রাজ্য ঠিক কী কী ধরনের টেস্ট কতবার করেছেন সেই তথ্য স্পষ্ট করছেন না। ফলে বিভিন্ন রাজ্যের তুলনা করার কোনো মানে দাঁড়াচ্ছে না। সব ধরনের টেস্টিংকে একত্রিত করে যে সংখ্যাটি প্রকাশিত হচ্ছে রোজ তার থেকে আমরা কেমন আছি, সেটা স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না।
আরও অনেক বয়স্ক সহ ব্যাধিগ্রস্থ ভারতীয় নাগরিকের মতো আমিও এই সরকারি দাবিটিকে বিশ্বাস করতে চাই যে এ দেশে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুষ্ঠ প্রয়োগে যত মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছেন তার ৭৭ শতাংশ সুস্থ হয়ে উঠছেন এবং আক্রান্তদের মাত্র ১.৮ শতাংশ মারা যাচ্ছেন।
আমিও চাই সব মানুষের জীবন ও জীবিকা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরুক। লকডাউন অতিমারী মোকাবিলার অস্ত্র নয়, অনাহারে মরা কোভিএ-১৯ এ মরার বিকল্প হতে পারে না।
কিন্তু সেই স্বাভাবিকতায় প্রত্যাবর্তন ভুল তথ্য, মিথ্যা আশ্বাসের ভিত্তিতে হলে মানুষকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হবে। সঠিক তথ্য প্রকাশিত হোক, সঠিক সতর্কতা অবলম্বন করে মানুষ ফিরুন তাঁদের নিজেদের কাজে।
তথ্যগত বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে অতিমারীর মোকাবিলা করার এই অপচেষ্টা বন্ধ হোক। কী কী ঝুঁকি নিয়ে আমরা নিত্যকর্মে ফিরছি সেটা সঠিক ভাবে জেনেই আমরা কাজে ফিরি। সাংবিধানিক ভাবে স্বাস্থ্য রাজ্যের বিষয়, কিন্তু বিষয়টি যখন বিশ্বব্যাপী অতিমারীর তখন সারাদেশের জন্যই কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের একটা নির্দিষ্ট মান ঠিক করা হোক। তুলনীয় নয় এমন সব তথ্যের ভিত্তিতে এগিয়ে থাকা বা পিছিয়ে থাকার তুলনামূলক আলোচনা বন্ধ হোক। এজন্য সংবাদ মাধ্যমকে শরিক করেই এগোতে হবে রাষ্ট্রকে।
অতিমারী সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ব্যাখ্যা যাঁরা করতে পারেন, সেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের হাতেই রাখা হোক তথ্য বিশ্লেষণ করে আমাদের যাপনকৌশল নির্ধারণ করার ভার।
মনের ভ্রম দূর হোক!
আপনার লেখা ও প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে যে ভারতে কোভিড ১৯ যত মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে, আসল মৃ্ত্যুর সংখ্যা তার অনেকটাই বেশী | এখন এখানে কয়েকটি বিষয় বুঝতে পারলাম না:
প্রথমত, ভারতে MCCD অনুযায়ী কোভিড-১৯ মৃত্যু আর কোভিড-১৯ এর হেতু মারা গেছেন কিন্তু MCCD তে নথিভুক্ত হন নি, এমন মানুষের মৃত্যুর তুলনামূলক অনুপাত কি ৫:১ না অন্য কিছু? কারণ এইমস এর দুই গবেষক যে Weight ধরেছেন সেটি কি সমস্ত অসুখ মিলিয়ে (আমার পড়ে তাই মনে হল), না কোভিড-১৯ এর জন্য বিশেষ করে অমন Weight ধরা হয়েছে আমার কাছে স্পষ্ট নয়। কারণ যদি অন্যান্য অসুখ আর কোভিড-১৯ এর নথিবদ্ধ মৃত্যু হুবহু এক না হয়, বা অন্তত কাছাকাছিও না হয়, ওই ধরণের Weighted estimate ভারতে মৃত্যুসংখ্যার সঠিক অনুপাত দেবে না|
দ্বিতীয়ত, রাজ্যওয়াড়ি আপনি যে টেবল দেখিয়েছেন, সেটি এখানে সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য , কারণ এর হিসেবে ওজনের তারতম্য হবে | ধরুণ গোয়াতে ১০০% MCCD নথিভু্ক্ত মৃত্যু, কিন্তু গোয়াতে অপেক্ষাকৃত মৃত্যুহার কম, তখন কিন্তু গোয়ার মৃত্যুহার ৫ গুণ বাড়ালে চলবে না, বা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ওজন করতে গেলে গোয়ার অবদান ১ এরও নীচে । আবার ধরুণ উত্তর প্রদেশ, তাদের মৃত্যুহার বেশী, আর সেখানে MCCD Underreported, তাদের অনুপাত টেবিল অনুযায়ী ২০র' কাছাকাছি কিন্তু মৃত্যুহার বেশী হলে, উত্তর প্রদেশের contribution অনেকটাই বেশী হবে।
তৃতীয়ত, মৃত্যুর কারণের misclassification জনিত কারণেরও একটি ব্যাপার আছে, তবে আমরা যদি সেই ব্যাপারটিকে আপাতত ধর্তব্যের মধ্যে নাও আনি, তাহলেও একটা ব্যাপার বোঝা যাচ্ছে যে "যতজনের" মৃত্যুর হিসেব দেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশী জন কোভিড-১৯ এর কারণে মারা গেছেন।
এবার কেস রিপোর্টিং এর হার যদি অপেক্ষাকৃত কম হয়, তাহলে আসলে ভারতে মৃত্যুহার কি কম না বেশী? সেটি অবশ্য অন্য একটি জটিল প্রশ্ন ।
আপনার লেখা ও প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে যে ভারতে কোভিড ১৯ যত মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে, আসল মৃ্ত্যুর সংখ্যা তার অনেকটাই বেশী | এখন এখানে কয়েকটি বিষয় বুঝতে পারলাম না:
প্রথমত, ভারতে MCCD অনুযায়ী কোভিড-১৯ মৃত্যু আর কোভিড-১৯ এর হেতু মারা গেছেন কিন্তু MCCD তে নথিভুক্ত হন নি, এমন মানুষের মৃত্যুর তুলনামূলক অনুপাত কি ৫:১ না অন্য কিছু? কারণ এইমস এর দুই গবেষক যে Weight ধরেছেন সেটি কি সমস্ত অসুখ মিলিয়ে (আমার পড়ে তাই মনে হল), না কোভিড-১৯ এর জন্য বিশেষ করে অমন Weight ধরা হয়েছে আমার কাছে স্পষ্ট নয়। কারণ যদি অন্যান্য অসুখ আর কোভিড-১৯ এর নথিবদ্ধ মৃত্যু হুবহু এক না হয়, বা অন্তত কাছাকাছিও না হয়, ওই ধরণের Weighted estimate ভারতে মৃত্যুসংখ্যার সঠিক অনুপাত দেবে না|
দ্বিতীয়ত, রাজ্যওয়াড়ি আপনি যে টেবল দেখিয়েছেন, সেটি এখানে সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য , কারণ এর হিসেবে ওজনের তারতম্য হবে | ধরুণ গোয়াতে ১০০% MCCD নথিভু্ক্ত মৃত্যু, কিন্তু গোয়াতে অপেক্ষাকৃত মৃত্যুহার কম, তখন কিন্তু গোয়ার মৃত্যুহার ৫ গুণ বাড়ালে চলবে না, বা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ওজন করতে গেলে গোয়ার অবদান ১ এরও নীচে । আবার ধরুণ উত্তর প্রদেশ, তাদের মৃত্যুহার বেশী, আর সেখানে MCCD Underreported, তাদের অনুপাত টেবিল অনুযায়ী ২০র' কাছাকাছি কিন্তু মৃত্যুহার বেশী হলে, উত্তর প্রদেশের contribution অনেকটাই বেশী হবে।
তৃতীয়ত, মৃত্যুর কারণের misclassification জনিত কারণেরও একটি ব্যাপার আছে, তবে আমরা যদি সেই ব্যাপারটিকে আপাতত ধর্তব্যের মধ্যে নাও আনি, তাহলেও একটা ব্যাপার বোঝা যাচ্ছে যে "যতজনের" মৃত্যুর হিসেব দেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশী জন কোভিড-১৯ এর কারণে মারা গেছেন।
এবার কেস রিপোর্টিং এর হার যদি অপেক্ষাকৃত কম হয়, তাহলে আসলে ভারতে মৃত্যুহার কি কম না বেশী? সেটি অবশ্য অন্য একটি জটিল প্রশ্ন ।
@অরিন যে প্রশ্নগুলো তুলেছেন সেগুলো একদম সঠিক প্রশ্ন। আমার বিভ্রান্তিও সেইখানে। রাজ্যে রাজ্যে এম সি সি ডি নিবন্ধীকরনের অবস্থানে এত তফাৎ, টেস্টিং এর মানে এত তফাৎ, যে সর্বভারতীয় এবং আন্তর্রাজ্য যে সংখ্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করছি আমরা, তার ভিত্তি কী সেটাই পরিষ্কার হচ্ছে না। এ লেখাটায় আমি সেই প্রশ্ন গুলোই সবার সামনে রাখতে চেয়েছি, যেগুলোর উত্তর আমি জানি না, বা বুঝতে পারছি না।
স্যার, অনুমতি নিয়ে পয়েন্ট আকারে বলি ?
(১) মেডিক্যাল সার্টিফিকেট অফ কজ অফ ডেথ এর যে ডাটা দিয়েছেন সেটা নিয়ে এটাই বলার যে ওই ২০ ২২ % হওয়ার মানে কিন্তু এই নয় যে প্রাতিষ্ঠানিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে কেবল ২০% কেসে মৃত্যুর কারণ লেখা হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মৃত্যু হলে ফর্ম চার এ মৃত্যুর কারণ লেখা বাধ্যতামূলক এবং সেটা ১০০% কেসেই হচ্ছে (কোয়ালিটি যাই হোক না কেন)। ওটা ওই ২০% দেখানোর কারণ হল যে সেই তথ্য ভারত সরকারের সফটওয়ারে আপলোড বাকি থাচএ।
@সমুদ্র, আমি কোনো সিদ্ধান্তেই আসি নি। আমি শুধু জানতে চাইছি, ভারতে এই রোগে মৃত্যু হার কি সত্যিই খুব কম? এই মৃত্যু হার যদি টিবি ম্যালেরিয়া বা রোড অ্যাকসিডেন্টের সঙ্গে তুলনীয় বা কম ।
যদিই সত্যিই এতো কম হয়, তাহলে অসুখটি শুরু হওয়ার এতো মাস পরেও আমরা এতো মানুষকে এতো কষ্টে রাখছি কেন?
আমি নিজে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর জায়হায় নেই। কিছু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ যে সব প্রশ্ন তুলেছেন, সেগুলোকে একত্রিত করেছি মাত্র।
আপনার কি মনে হয় স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করে দেওয়ার জায়গায় আছে এই দেশ? তাহলে শুরু করা হচ্ছে না কেন? মানুষের কষ্ট তো বেড়েই চলেছে প্রতিদিন।
I entirely agree with the analysis and the conclusion drawn, but the basic question is whether the ruling establishment, both at the Centre and the states, will make course corrections or not. If they continue to act in an unscientific way, it will only bring disaster to the nation. I fear, given the track record of the ruling dispensation, any course correction measure to right the wrong is unthinkable.
চমৎকার। ধাঁধাটা আছেই। সরকারী তথ্যে কোভিডে মৃত্যুসংখ্যা যদি x হয় তাহলে আসল সংখ্যাটা x এর বেশী হবে। তবে আমার ধারণা পার্থক্য খুব বেশী হবে না কারণ মানুষ অনেক সতর্ক হয়েছে আতংক থেকে।
শ্রী ঘোষ অত্যন্ত সময়োপযোগী প্রশ্ন তুলে ধরেছেন আমাদের সামনে। দেশের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করছেন(কেন্দ্রে ও রাজ্যগুলিতে),বিশেষ করে সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ অতিমারীকে বাগে এনে দেশের বেহাল অর্থনীতিকে চাগিয়ে তোলার পন্থা-পদ্ধতি নিয়ে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের পরিশ্রম ব্যর্থ হয়ে যাবে, সত্য-বিস্মৃতির বালির ঢিপিতে মুখ গুঁজে থাকলে।
এটা তো সত্যি,এই অতিমারী কিছুটা কিছুটা অতর্কিতে হানা দিয়েছে। এমনিতেই আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেশ নড়বড়ে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা, তা পলিসি প্রণয়নে যথাযথ ব্যবহার করার বিষয়ে। বিশেষ করে তৃণমূল স্তরে পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনার দিকটা আরো বেশি কার্যকর করার জন্য যা যা করার প্রয়োজন সেটা করা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারি প্রাথমিক কর্তব্য বলে মনে করি।
এটা অস্বীকার করা যায় না স্বাধীনতার 75 বছর পরেও আমরা এ বিষয়ে নিজেদের শৈশব্যাবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমরা নিজের দেশকে ডিজিটাইজ করার স্বপ্ন দেখা খুব বেশি দিন আগেই শুরু করিনি। এটা দুর্ভাগ্যজনক,কিন্তু নির্মম সত্য। এই সত্যটা কে আমরা যত তাড়াতাড়ি মেনে নিয়ে সঠিক পথেেে অগ্রসর হবো ততোই মঙ্গল।
এটা ভাবার কোন কারণ নেই আমাদের এই পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে না।এ বিষয়ে আমাদের দুর্বলতা মেনে নিয়ে তা সংশোধন করার আন্তরিক প্রচেষ্টা আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের আর দেরি না করে এক্ষুনি তৎপর হতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশের ফেডারেল স্ট্রাকচারের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে covid-19 সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সংক্রান্ত পদ্ধতিগত তফাৎ বিষয়টি অনেক জটিল করে দিয়েছে ।এর মধ্যে হয়তো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অবাঞ্ছিত ভাবে প্রভাব ফেলেছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়, সমস্ত দেশের স্বার্থে।
যেমন, WHO যেখানে কোভিড-19 হওয়ার সন্দেহ থাকলে মৃত ব্যক্তি কে কোভিড-19 এর শিকাার বলে গণ্য করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেখানে আমাদের রাজ্যে মৃত্যুতে কোভিড-19 এর সংক্রমণ পাওয়া গেলেও অন্য্য কোন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা থাকলে সেই co-morbidity- ওর জোর জোর দেওয়া হচ্ছিল।
লেখক এই প্রবন্ধে কিছু প্রশ্নের অবতারণা করেছেন ও তার উত্তর যথাযোগ্য সংস্থার কাছ থেকে পাওয়ার আশা রেখেছেন ।আমার মোদ্দা কথা, আমাদের মরণ-বাঁচন সমস্যাটাকে রাজনৈতিক সংক্রমণ থেকে দূরে রেখে এক বিশ্বজনীন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা হিসাবে যদি দেখার, বোঝার এবং সমাধানেের চেষ্টা করি তবেই সঠিক পথে আমাদের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে ।
লেখককে ধন্যবাদ।