সে অনেক বছর আগের কথা - তখনো গ্রীসে ঘরের সাথে ‘অ্যাটাচ টয়লেট’ কনসেপ্টটা চালু হয় নি। বাড়ির প্রাঙ্গণের এক প্রান্তে গিয়ে পায়খানা সারতে হত। আর বলাই বাহুল্য পাকা পায়খানার ব্যাপার ছিল না একদম – চট দিয়ে ঘেরা খাটা পায়খানা মাত্র।
ভোর হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। সক্রেটিস ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে এসে জোব্বার ফাঁক দিয়ে হাতদুটো বের করে একটু গা-টা ছাড়িয়ে নিতে লাগলেন। সকালের দিকে এমন জোব্বা গায়ে চাপাতে ভালো লাগে না, কিন্তু একেবারে উদোম গায়ে যাওয়া ঠিক নয়। বউ অনেক করে শিখিয়েছে শুধু জ্ঞান ছড়ালেই হয় না, ইমেজ গড়ে তুলতে হবে একটা। সকালে দিকে গোটা পাঁচেক শিষ্য আসে, তারা অলরেডি চলে এসেছে দেখলেন। সকালে দিকে উঠোন ইত্যাদি ঝাঁট-টাঁট এরাই দেয় – হালকা প্রাতরাশ এরাই নিয়ে আসে। ছাগলের দুধ মিশিয়ে ‘চায়ে’ নাকি কি নামের একটা গরম পানীয় পরিবেশন করে, খারাপ লাগে না। এক শিষ্য আছে ‘এখনোআবুলিস’, তার বাবা বেশ কিছু আগে বিজনেস ট্রিপে আউট অফ স্টেশন গিয়ে এই চায়ে-র জিনিসটা সাথে নিয়ে এসেছে। সক্রেটিসের বউ-এর অনেক বেলায় ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস, সেই নিয়ে মাঝে মাঝে তর্ক এবং যুক্তির লড়াই চলতে থাকে। কিন্তু প্রতি বারেই সক্রেটিস হেরে যান যুক্তিতে, ভ্যাগিস ছাত্ররা ব্যাপারটা জানে না!
হাত-পা ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁতন নিয়ে উঠোনে নামলেন – এগিয়ে এল ‘গোলগাপ্পাস্’, ওই মাসে তার পালা পড়েছে সক্রেটিসের মুখ নিসৃত বাণী খাতায় লিখে রাখা। তবে একজন ব্যাক-আপ থাকে সাধারণত, যদি কেউ কামাই করে! সেই মাসের ব্যাক-আপ ছিল ‘হোগাসপোগাস’।
সক্রেটিস বললেন, “আজ আর এই চট ঘেরা আবদ্ধ জায়গায় প্রাতকৃত্য সারব না – খোলে মাঠে যেতে মন চাইছে”। সবাই প্রায় একসাথে জিজ্ঞেস করে উঠল, “কেন বস্? কেন বস্ - এর গভীরতম কারণটি কি”? এমনিতে ছাত্ররা জানত সে সক্রেটিসের বেশ কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাত আছে, মাঝে মাঝেই সকালের দিকে মুড খারাপ থাকে। যদিও সরাসরি প্রমাণ তারা পায় নি, কিন্তু সক্রেটিসেরই শেখানো সেমি-ডিডাকশন মেথড প্রয়োগ করে তারা বুঝতে পেরেছিল মুডের সাথে পায়খানা ক্লিয়ারের প্রবল সম্পর্ক আছে। ছাত্ররা ভাবল খোলা মাঠে হাওয়া লাগিয়ে একটা ট্রাই নিতে যাচ্ছেন আজকে। সক্রেটিস বলেলেন,
- তোমরা একটু অপেক্ষা কর, আমি আসছি চট করে
- বস্, আমরাও সাথে যাই। ঠিক কোথায় বসবেন আমরা খুঁজে দেখিয়ে দেব জায়গাটা। একেবারে ওপেন জায়গায় বসলে লোকে দেখতে পেলে কি বলবে! সেবারে আর্কিমিডিস স্যারের কেসটা মনে নেই আপনার? ন্যাংটো হয়ে ছোটার জন্য উনার টোলে কত ছাত্র কমে গিয়েছিল!
সক্রেটিস দেখলেন ছাত্ররা ঠিক বলছে – দার্শনিক চিন্তায় মাথা এত কিলবিল করে যে জাগতিক জীবনে কি হচ্ছে মনে থাকে না। মাঠে গিয়ে ছাত্ররা একটা ক্যাকটাসের ঝোপ দেখিয়ে দিলে সক্রেটিস সেখানে বসলেন। ছাত্ররা ঝোপের অন্যদিকে অপেক্ষা করতে লাগল – গোলগাপ্পাস খাতা নিয়ে রেডি, পায়খানা করতে বেশ সময় লাগতে পারে। নিজেকে প্লেস করে সক্রেটিস বললেন যে,
“মনে রাখবে বেঁচে থাকার জন্যই পায়খানা করা, পায়খানা করার জন্য আমাদের এই বেঁচে থাকা নয়”।
গোলগাপ্পাস খাতায় লিখে নিল। পাশ থেকে হোগাসপোগাস ‘দেখি কি লিখলি’ বলে উঁকি মারল। দেখে বুদ্ধি দিল, দ্যাখ এই পায়খানা ইত্যাদি লেখা মানায় না, ওটার বদলে অন্য কিছু করে দে। কি লেখা যায়, কি লেখা যায় ভাবতে লাগলো ওরা। ওদিকে বেশ খিদে পেয়ে গেছে – তাই খাদ্যর কথাই মাথায় ঘুরছে। গোলগাপ্পাস ফাইন্যালি খাতায় লিখে নিল,
“মনে রাখবে বেঁচে থাকার জন্যই আমরা খাই, খাবার জন্য আমাদের এই বেঁচে থাকা নয়”।
এই লেখা কমপ্লিট না হতে হতেই, সক্রেটিস আবার ঝোপের ওদিক থেকে বলতে শুরু করেছেন,
“সকালে যে একগাদা পায়খানা করতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই – বেশী হাগা মানেই বেশী সুখ এমনটা কদাপিই নয়। কম হেগেও কিভাবে সারাদিন আনন্দে কাটানো যায় তোমাদের সেই অভ্যাস করতে হবে”।
আবার হোগাসপোগাসের হস্তক্ষেপ, শেষে গোলগাপ্পাস হাগা শব্দটি চেঞ্জ করে খাতায় এন্ট্রি করল ----
একসময় ঝোপের পাশ থেকে সক্রেটিস বললেন, “হয়ে গেছে”। ছাত্রদের একজন জানালো, “স্যার, তাড়াহুড়োতে জলের বোতল সাথে নিয়ে আসা হয় নি – এই পোড়া রূক্ষ প্রান্তরে এখন কি উপায়”? উনার গলা শোনা গেল ওপাশ হতে –
- দেখো, ব্যাপারটা জলের নয়। প্রবলেম হচ্ছে আমার হাতের কাছে ক্যাকটাস গাছের পাতাগুলো কাঁটা ভর্তি – তবুও আমি চেষ্টা করছি কচি গাছের পাতা দেখে ম্যানেজ করতে। রক্তাক্ত পিছন বিষয়ে তোমাদের আর নতুন করে কি শেখাবো – গ্রীসের প্রাচীন ইতিহাস থেকে বর্তমান জেলখানাগুলি এমন উদাহরণে ভর্তি।
- বটেই তো, বটেই তো।
- আর তা ছাড়া জল থাকলেও আমি ব্যবহার করতাম না। এই তোমাদের আজ বলে রাখছি, গোলগোপ্পাস – ইউ ক্যান কোট মি অন দিস। এই জলের জন্যই একদিন পৃথিবী যুদ্ধে মেতে উঠবে।
হোগাসপোগাস অনেকক্ষণ ধরে কিছু বলার জন্য উসখুস করছিল – এবার সুযোগ পেয়েই মুখ খুলল -
- লাখ কথার এক কথা বলেছেন স্যার। তবে ভবিষ্যতে কেন? এখনো সরাইখানায় গেলে দেখা যায় একটু জল পেটে পড়েছে কি - সব মারমার কাটকাট লেগে গেল!
যাই হোক হোগাসপোগাসের কথায় তেমন কেউ কান দিল না। ভালো করে মাল নেমে যাবার জন্য প্রফুল্লচিত্ত সক্রেটিসের সাথে সব ছাত্ররা ঘরমুখো হল। বেশ বেশ খিদে পেয়ে গেছে সবার – বাড়ি ফিরতে কতক্ষণ লাগবে কে জানে! বাজারের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় আবার স্যারের উদ্ভট সব প্রশ্ন করার স্বভাব আছে যাকে সামনে পাবে তাকে। ফাষ্টোকেলাস আর খিদের চোটে থাকতে পারল না, বলল
- স্যার, রোজই তো বাড়ির প্রাতরাশ খাই, আজ বাজারে অন্য কিছু ট্রাই করবেন?
সক্রেটিস খুব প্রীত হলেন ছাত্রের এই গতানুগতিকতার বাইরে বেরোবার আকাঙ্খা দেখলেন। তবুও মুখে খুশী না দেখিয়ে বলে উঠলেন –
- অবশ্যই ট্রাই করা যেতে পারে। মনে রাখবে “আমি শুধু এথেন্স বাসী নয়, আমি শুধু গ্রীসের নয় – আমি সারা পৃথিবীর নাগরিক”
এটা শুনেই হোগাসপোগাস একটু ঠেলল গোলগাপ্পাসকে - এটা ভালো করে লিখে নে, স্যার সলিড দিয়েছে এটা। পরে কত লোক ঝাড়বে দেখবি এই ডায়লগটা।
সক্রেটিস ওদিকে জানতে চাইলেন, কি খেতে ইচ্ছে হয় তোমাদের?
ফাষ্টোকেলাস খুব দ্রুত বলে উঠল – স্যার, উত্থাপম খাবেন, উত্থাপম?
স্যার কনফিউজ, এমন খাবার কোন দিন খাননি – তাই জানতে চাইলেন
- এ কেমন খাবার, আগে তো কোনদিন নাম শুনি নি
- স্যার, আগে ছিল না, ইদানিং চালু হয়েছে। সাউথের খাবার বলছে সবাই
- আচ্ছা সাউথ থেকে, মানে ক্রীট দ্বীপ থেকে এসেছে?
- মনে হয় না স্যার, আরো সাউথ হবে। ওদের গাত্র বর্ণ আমাদের মতন গৌর নয়। তবে আমাদের মতনই ফেত্তা মারা কোমরের নীচে কাপড় পরে।
সবাই মিলে ধোসার দোকানে ঢুকলেন – ছাত্ররা পুরো দোকানের কাউন্টারে যা ছিল সব সাবার করে দিল। কিন্তু সক্রেটিসের কোন কারণে ধোসা ঠিক জুতের লাগলো না – খাবার পর হাত ধুতে গিয়ে বললেন,
“কোন মানুষকে অসুখী বলো না যতক্ষণ সে উত্থাপম না খাচ্ছে”।
এবার বাড়ি ফেরার পালা – ছাত্রদের পেট বেশ ভরে গেছে বলে আর বাড়ি ঢোকার তাড়া নেই। বাজার দিয়ে যেতে যেতে সক্রেটিস দেখলেন খুব ভালো পটল উঠেছে। সবুজ নধর পটল সব্জী বাজার আলো করে আছে। বাজারের সবাই সক্রেটিসকে চিনত এবং স্যার বলেই সম্মান করত। একটা দোকানের সামনে গিয়ে ঝুড়ি থেকে একটা পটল নিয়ে সক্রেটিস দোকানিকে জিজ্ঞেস করলেন –
- পটল তোলা নিয়ে তোমার ভাবনা চিন্তা কি?
- স্যার, লেবারের খুব আজকাল প্রবলেম – পটল তোলার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। ইতালীর লোকগুলো কাজ করত মাঠে, এখন তো আবার সম্রাট নির্দেশ দিয়েছে সিলমোহর দেখাতে না পারলে চালান করে দেবে। তাই দিনের বেলায় ভয়ে কেউ আর বেরোতে চাইছে না।
- আহা, আমি লিটারেলী পটলের কথা বলি নি। আমি বলতে চাইছি আধ্যাত্মিক পটল তোলা – মানে মৃত্যুর কথা।
একটু ফ্রাষ্টেটেড দেখালো সক্রেটিসকে। নিজের ছাত্র ‘হলুদঅমলতাস’-এর দিকে ফিরে বললেন,
- কি রে তুই যে আগের দিন আমাকে জ্ঞান দিলি মাটির কাছাকাছি ভাষা ব্যবহার করার জন্য?
হলুদঅমলতাস উত্তরে বলল –
[ক্রমশঃ]
হা হা প গে :)) [ হাসতে হাসতে পড়ে গেছি ]
হি হি
চলুক
দারুণ... চলতে থাকুক।