হেডলাইনের দখল নেওয়া এইসব খবরের মাঝে টুকরো জায়গা নিয়ে জ্বলজ্বল করছে ‘অনলাইন ক্লাস না করতে পেরে আত্মঘাতী স্কুলপড়ুয়া’। হতাশার রোজনামচা এখন ভারতবর্ষের ‘নিউ নর্মাল’। সেই যন্ত্রনার খতিয়ানে শিক্ষা মোটেও প্রায়রিটি লিস্টের প্রথম সারিতে আসছেনা। অথচ অতিমারীর নিদারুণ প্রকোপ আরও অনেক অসাম্যের মত শিক্ষাব্যবস্থায় গ্রহীতার বিভাজনকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে চলেছে। দীর্ঘ লকডাউন পিরিয়ড কাটিয়ে আনলকের নতুন ফেজেও স্বাভাবিক ভাবেই স্কুল কলেজ খোলার কথা ভাবতে সাহস করছেন না কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার। কিন্তু খাতায় কলমে শিশুশিক্ষা বাধ্যতামূলক। শিক্ষাব্যবস্থার দায়ভার এখনও সরকারের হাতে। তবে কিনা প্রাইভেটাইজেশন ঘটেছে। পরিষেবা ক্রয়ের ক্ষমতা অনুযায়ী গজিয়ে উঠেছে বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অংশত সরকারী বিদ্যালয় এবং প্রধানতঃ বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে রমরমিয়ে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাসের পরিষেবা। আর এখানেই বেধেছে গোলযোগ। সরকারী বিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার প্রথমেই ক্ষমতা অনুযায়ী অনলাইন ক্লাসের পরিষেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতেও শুরু হয় অনলাইন ক্লাস। কার্যক্ষেত্রে বিষম গোলযোগ। কেননা ডিজিটাল ইন্ডিয়া খচিত ভারতে এখনও প্রতি শিক্ষার্থীর ঘরে স্মার্ট ফোন ও হাই স্পিড ইন্টারনেট সুদূরকল্পনা। অথচ খানিক আধখ্যাঁচড়াভাবেই শুরু হয়ে গেছে অনলাইন ক্লাস। সেখানে শুধু পড়াশুনা নয় রীতিমতো মূল্যায়নও চলছে। ফলে চিরাচরিত ইঁদুর দৌড়ের খেলা এখন আন্তর্জালিক রূপ পেয়েছে। সেই খেলায় ভারতের বেশিরভাগ ছাত্র পিছিয়ে যাচ্ছে এই নতুন বৈষম্যের মাপকাঠিতে। দৃশ্যত এই সমস্যার সমাধান করার থেকে মহামারীর প্রকোপ কমার জন্য অপেক্ষা করাই বোধহয় সুখকর ছিলো। কিন্তু নিত্যনতুন রেকর্ড সে আশায় প্রতিদিনই জল ঢেলে চলেছে। সুতরাং ভিন্নপথ খোঁজা দরকারি।
স্পষ্টত দুটো মত উঠে এসেছে।
• ২০২০কে জিরো অ্যাকাডেমিক ইয়ার ঘোষণা করা ও গোটা শিক্ষাবর্ষকেই এক বছর পিছিয়ে দেওয়া।
• এসেনশিয়াল নিডসের আওতাভুক্ত হিসাবে সকল শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
প্রথম পন্থাকে নিয়ে আলোচনা করতে বসলে আপাতভাবে ছাত্রদরদী মনে হওয়া স্বাভাবিক। কেননা এই বিকট অসাম্য চলার থেকে না চলা ভালো। কিন্তু শিক্ষার সাথে জড়িত আনুষঙ্গিক বিষয়াবলী এর ভবিষ্যত বিষময় করে তুলতে পারে। প্রথমত লকডাউন পিরিয়ড কর্মহীনতাকে মাত্রাছাড়া করে তুলেছে। ধুঁকতে থাকা অর্থনীতির ফাঁদে পড়ে বহু ছাত্রকেই আয়ের পথ খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে। যে ছাত্রকে আজ সুদিনের আশায় অব্যহতি দেওয়া হল সে ফিরতি বছরে আদৌ স্কুলমুখী হবে কিনা তা বলা মুশকিল। গোটা বিশ্বেই এই আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে যে অতিমারীর প্রকোপ কাটলে ভয়াবহ ড্রপ আউট হতে চলেছে স্কুল কলেজে। ভারতে এর মাত্রা যে ঠিক কত ভয়াবহ হতে পারে তা আন্দাজ করাও মুশকিল। জিরো অ্যাকাডেমিক ইয়ারের প্রাথমিক অব্যহতি নড়িয়ে দিতে পারে ফিরতি বছরের শিক্ষার্থীর হারকেই। তাছাড়া শিক্ষাব্যবস্থা নিজেই অর্থনীতির একটা বড় অংশ। এই গোটা ব্যবস্থার সাথে যুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ভিতর বিভাজন কম নয়। পারমানেন্ট সরকারি, পারমানেন্ট বেসরকারি, পারমানেন্ট কন্ট্র্যাক্টচুয়াল, গেস্ট লেকচারার, প্যারাটিচার, কন্ট্র্যাক্টচুয়াল বেসরকারি, পারমানেন্ট স্টাফ, ক্যাজুয়াল স্টাফ এবং প্রাইভেট টিউটরদের বহুধাবিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় একমাত্র সরকারি পারমানেন্টরা ছাড়া কারুর আয়ই এই নতুন সময়ে সুরক্ষিত নয়। অধিকাংশ বেসরকারি স্কুল কলেজে মাইনে কমানো হয়েছে। বেশকিছু স্কুল কলেজে এখনই ছাঁটাই শুরু হয়ে গেছে। জিরো অ্যাকাডেমিক ইয়ার ঘোষণা করার সাথে সাথে সেই বিপুল অংশের পেটে সরাসরি লাথি পড়তে পারে। বেসরকারি স্কুলগুলোতে ইতিমধ্যে গার্জিয়ানরা ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্কুল ফি নিয়ে। ক্লাস সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে মাইনেও বন্ধ হয়ে যাবে এই কথা বলাই বাহুল্য। ফলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এক ধাক্কায় ছাঁটাই করে দেবে বড় অংশের কর্মীদের। সমস্যার তৃতীয় ক্ষেত্রটা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে। বিভিন্ন অনগোয়িং কোর্সের পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় বা বন্ধ হওয়ায় বৃহৎ অংশের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অন্ধকারের মুখে। এসময় শিক্ষাবর্ষ পিছোলে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে ব্যহত হতে পারে।
অন্যদিকে সার্বিক অনলাইন কোর্সের ব্যবস্থা করার সবথেকে বড় অন্তরায় বোধহয় তার বাস্তবতার দিকটা। দিন আনি দিন খাইয়ের ভারতে নিছকই পড়াশুনা করাবার জন্য প্রতি শিক্ষার্থীর কাছে সরকারি অনুদানে স্মার্ট ফোন উঠে আসবে এ চিন্তা হয়তো চায়ের ঠেকেও হাস্যরসের পরিবেশনই করবে। আসলে না পাওয়ার পৃথিবীতে আমরা এতটাই অভ্যস্ত যে প্রাথমিক চাহিদাগুলোকে মুখ ফুটে বলার ভাষা হারিয়েছি। এভাবে বৈষম্যের ব্যবস্থাকেই স্বাভাবিক ধরে নেওয়ার প্রবণতা জন্মায়। অথচ মজার ব্যাপার এই যে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মণিরত্নখচিত প্ল্যানিং-এর অন্যতম বিষয় ছিলো গ্রামীণ ভারতকে টেক স্যাভি করে তোলা। সেই মর্মে অতি স্বল্প মূল্যের স্মার্টফোন বিলোনো হয়েছে তখন। অথচ দরকারের সময় রাষ্ট্রের স্বার্থ ছাড়া এতবড় দাবী করা যে যায় এই ধারণাই হয়তো বেশ খানিক অলীক। অনলাইন ক্লাসের প্রিভিলেজ যে অল্পসংখ্যক ছাত্রছাত্রীই পাবে তা সরকারের অজানা নয়। তবু এই ব্যবস্থাকে তারা শিলমোহর দিয়েছেন কেননা এই দুঃসময়ে এটাই একমাত্র পথ। শিফটিং ক্লাসের কথাও উঠেছে। কিন্তু তাতে দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান হচ্ছেনা। যখন এই পন্থায় প্রাথমিক শিলমোহর লাগানোই হয়েছে তখন কেন তার বিকাশ সার্বিক হবেনা? প্রাইমারি স্কুলগুলোতে মিড ডে মিলের সাথে সাথে কিছু পঠনপাঠনের মেটেরিয়াল পাঠানো হচ্ছে ঘরে। কিন্তু হিউম্যান ইন্ট্যার্যাকশন যা স্কুলশিক্ষার মূল তার থেকে বঞ্চিত থাকছে লাখো লাখো ছাত্র। পয়সার বিনিময়ে পরিষেবা ক্রয় একমাত্র পন্থা হয়ে গেলে মৌলিক অধিকারের ধারণাই ধাক্কা খায়। কোভিড পরবর্তী ভারতবর্ষে এলিমেন্টারি এডুকেশনের ধারণাটাই বদলে ফেলো কড়ি মাখো তেল চালু হয়ে যেতে পারে। যে হারে ড্রপ আউটের আশঙ্কা করা হচ্ছে তাকে ঠেকাতে গেলে সরকারকে এই ব্যবস্থা সার্বিক করে তুলতেই হবে। সকল বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের কাছে নেট কানেক্টিভিটি সহ স্মার্ট ফোন পৌঁছানো অর্থনীতিকে কতদূর বিপদগ্রস্থ করবে সত্যিই বোধগম্য নয় কিন্তু এর অন্যথা যে দেশের ভবিষ্যতকে ঝরঝরে ও পক্ষপাতদুষ্ট করে তুলবে তা বুঝতে বিশারদ হতে হয়না। যতদিন এই সমস্যার সমাধান না হবে এই উৎকট বৈষম্যের দায়ভার বহন করতে হচ্ছে বৃহৎ অংশের শিক্ষার্থীকে। ততদিন অনলাইন ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া নয়, বরঞ্চ অতি দ্রুত এর সার্বিক বিকাশ ঘটিয়ে তোলাই হতে পারে একমাত্র সমাধান।
সবিনয়ে বলি, অনলাইন ক্লাসের সার্বিক উন্নতি সহজ কাজ নয়। সরাসরি যোগাযোগ যা পারে, তা অনলাইন পারে না। বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও সহপাঠীরা শিশুকে পড়াশুনার বাইরেও অনেক কিছু শেখায়। শিক্ষক কেবল চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারেন ছাত্র বুঝতে পারছে কিনা।
অনলাইন সেশানে অনেক বেশী পরিমাণ তথ্য দেওয়া যায়। কিন্তু বলা যায় না সেই বই-এর বাইরের বিষয়গুলি, যা ছাত্রের সর্বাঙ্গীন জ্ঞানলাভে সাহায্য করে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই আলোচনা বিশেষভাবে জরুরী । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এর নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলেন।
পরিশেষে বলি, ভারতবর্ষে অনলাইন পড়াশুনা চালু করার প্রয়াস কোভিডের অনেক আগেই শুরু হয়েছে।আজকের নিউ এডুকেশন পলিসী তারই দলিল।
Pi di r discussion er shonge etao thaak https://www.sfgate.com/local/editorspicks/article/Learning-pods-Oakland-Bay-Area-schools-privilege-15427335.php
S bodhoi dhorei nicchen school maane dule dule namta porano - setao change hocche. baire to botei. play based preschool gulo literal porashonar dike arts crafts play and social interaction er dike onek beshi nojor dei