
পশ্চিমবঙ্গের করোনা মোকাবিলার হালহকিকৎ নিয়ে অনেক কিছু ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছু হোয়াটস্যাপে, কিছু সংবাদপত্রে। তার সত্যতা যাচাই করার জন্য এই লেখা নয়। এই লেখার উদ্দেশ্য নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া।
আমার এক অতি নিকটাত্মীয়ের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে জ্বর শুরু হয়। অন্য কোনও উপসর্গ ছিল না। তিনি কলকাতার একটি প্রাইভেট হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকে দেখান। ডাক্তার বাবু কিছু টেস্ট লিখে দেন। তার সাথে বাঙ্গুরে গিয়ে কোভিডের টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন। ইতিমধ্যে হোয়াটস্যাপে ছড়িয়ে পড়েছিল বাঙ্গুর হাসপাতালের ভিডিও, যা হয়ত আপনারাও দেখেছেন। সেই ভিডিও দেখে আমার সেই আত্মীয় ও তার পরিবার আতংকিত হয়ে পড়েন ও বাঙ্গুরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা খোঁজ করতে থাকেন কোনও প্রাইভেট হাসপাতালের যেখানে কোভিডের টেস্ট হয়। কিন্তু জানা যায় যে ভর্তি না হলে কেউ টেস্ট করাবে না এবং যে কটি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিডের চিকিৎসা হচ্ছিল তার কোথাও জায়গা নেই। আমরা আমাদের পরিচিত যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে ওনাকে এদিক ওদিক ভরতি করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কোনও ফল হল না। এর মধ্যে ওনার শারীরিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে থাকে, কাশি শুরু হয় ও কাশির সাথে রক্ত উঠতে থাকে। শেষমেশ এক স্কুলের বন্ধু, যে নিজেও ডাক্তার, তার কল্যাণে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারলাম এবং কোভিডের টেস্ট হল। জানা গেল যে তিনি কোভিড পসিটিভ। সেই প্রাইভেট হাসপাতাল থেকেই রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হল বেলেঘাটা আই ডি-তে। পরিবারের লোকজনকে বলা হল আইসোলেশনে থাকতে, বাড়ি থেকে বের হতে না, এবং কোনও প্রয়োজন হলে থানায় যোগাযোগ করতে।
এর পর ঘটনাক্রম যে দিকে গড়াল তার ভালো ও খারাপ দুটো দিক আছে। আগে খারাপ দিকটা বলে নি।
এক, পরিবারের লোকজনের আজ অবধি টেস্ট হয় নি। আর হবে বলে মনে হচ্ছে না।
দুই, রোগীকে বেলেঘাটা আই ডি থেকে বাঙ্গুরে পাঠানো হলেও বাড়ির লোকজনকে জানানো হয় নি।
তিন, রোগীকে যখন বাঙ্গুরে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তার জিনিষপত্র পড়ে থাকে আই ডি-তেই। ফলে, বাঙ্গুরে ভর্তি হওয়ার পর রোগীকে প্রায় তিনদিন কাটাতে হয় টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, তোয়ালে, জামাকাপড়, মায় চপ্পল ছাড়া। খালি পায়ে বাথরুমে গিয়ে অন্য কোনও ইনফেকশন ঘটে যাওয়া অসম্ভব ছিল না। বাড়ি থেকে পুলিশে বারংবার ফোন করেও এইসব দরকারি জিনিষপত্র পৌঁছনোর বন্দোবস্ত করা সম্ভব হয় নি। শেষ পর্যন্ত তিনদিন পর আবার নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে এইসব জিনিষ পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়।
চার, রোগীর কাছে মোবাইল না থাকায় (সরকারি নিয়মে), যোগাযোগ করা ও নিয়মিত খবর পাওয়া রীতিমত চ্যালেঞ্জিং হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে ফোন করলে শুধু এইটুকুই জানা যেত যে রোগী “ভালো আছেন”।
এইবার আসি ভালো দিকের কথায়।
এক, বাঙ্গুর হাসপাতাল নিয়ে যে সব আতংকের কথা প্রচার করা হচ্ছে, তা সর্বৈব ভুয়ো। রোগী, যিনি উচ্চবিত্ত এবং রীতিমত পাঁচতারা জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত, তাঁর নিজের কথায়, “সরকারি হাসপাতাল যে এত ভালো ও পরিচ্ছন্ন হতে পারে, তা নিজে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। যারা বলেছিল বাঙ্গুরে গেলে আর বেঁচে ফিরতে পারবি না , টু হেল উইথ দেম”। মনে রাখতে হবে, রোগী জেনেরাল ওয়ার্ডে ছিলেন, কোনও স্পেশাল ব্যবস্থা করা হয় নি।
দুই, আবারও রোগীর নিজের কথায়, “ডাক্তার, নার্স, এমনকি সাফাই কর্মীদেরও ব্যবহার এত ভালো ও তাঁরা এত কোওপারেটিভ যে ভাবা যায় না”।
তিন, চিকিৎসা ব্যবস্থার যেটুকু খবর আমরা পেয়েছি, তাতে কোথাও কোনও ত্রুটি হয় নি। ব্লাড টেস্ট, চেস্ট এক্স রে, সোয়াব টেস্ট সব নিয়ম মেনে হয়েছে। রোগীর যখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তখন তাঁকে যথানিয়মে অক্সিজেন দেওয়া হয়।
চার, শুধু বাঙ্গুরের ডাক্তাররাই নয়, ওখানে এস এস কে এম, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও অন্যান্য জায়গার ডাক্তারদের টীম আসছেন। এপিডেমিওলজির স্বনামধন্য স্পেশালিস্ট ডাক্তারদের টীম কাজ করছেন।
পাঁচ, রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
ছয়, আমাদের পকেট থেকে এক পয়সাও খরচ করতে হয় নি (অন্যান্য রাজ্যের অবস্থার খবর কিন্তু অন্যরকম।) এমনকি হাসপাতালের আম্বুলেন্স রোগীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে।
এতটা লেখার একটাই কারন। অকারণে ভয় পাবেন না। তাতে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। আমরা যদি হোয়াটস্যাপ ভিডিও দেখে ভয় না পেয়ে, চিকিৎসকের পরামর্শমত রোগীকে প্রথমেই বাঙ্গুরে নিয়ে যেতাম, তাহলে তাঁর ভোগান্তি কম হত।
পিনাকী | 172.69.***.*** | ১৫ মে ২০২০ ০১:০৭93327প্রয়োজনীয় লেখা
রঞ্জন | 162.158.***.*** | ১৫ মে ২০২০ ০৭:৩৬93335চমৎকার। আমি এই পরামর্শ আমার বাড়ির লোকজনকে দেব।
খুবই আশা জাগানিয়া। গর্ব করার মতো পরিষেবা। এপারে আমরাও যদি এরকম কেস স্টাডি পেতাম!
dc | 162.158.***.*** | ১৫ মে ২০২০ ০৮:১৯93339
অমর মিত্র | 162.158.***.*** | ১৫ মে ২০২০ ০৮:৩৮93341হাসপাতাল নিয়ে ভুল ধারণা ভেঙে গেল। এইটি প্রচার হওয়া দরকার।
মানস ঘোষ | 162.158.***.*** | ১৫ মে ২০২০ ০৯:৪৪93342ধন্যবাদ আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য !
রাজন্যা | 172.69.***.*** | ১৫ মে ২০২০ ১২:১৯93346সত্যিই এটাই ভয় পাচ্ছিলাম, অনেক ধন্যবাদ
বিদিশা সরকার | 172.69.***.*** | ১৫ মে ২০২০ ১৩:৫৬93350নিশ্চিন্ত হলাম
Anirban Ganguly | 162.158.***.*** | ১৫ মে ২০২০ ১৭:২১93353Bhalo laglo jene.
Anirban Ganguly | 162.158.***.*** | ১৫ মে ২০২০ ১৭:২১93354Bhalo laglo jene.
SB | 162.158.***.*** | ১৫ মে ২০২০ ১৭:৪৯93359এবং যা বুঝলাম, যথারীতি খুব ভালো লেখা
Sekhar Sengupta | ১৫ মে ২০২০ ১৯:৪০93360শেখর
চারদিকে এত ভুয়ো খবরে ভয়ে ভয়ে আছি। নিকট আত্মীয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে অনেকটা আশ্বস্ত করলে।
Sekhar Sengupta | ১৫ মে ২০২০ ১৯:৪০93361শেখর
চারদিকে এত ভুয়ো খবরে ভয়ে ভয়ে আছি। নিকট আত্মীয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে অনেকটা আশ্বস্ত করলে।
বিপ্লবদার সাথে সহমত। খুবই আশা জাগানিয়া। গর্ব করার মতো পরিষেবা।
অশোক সরকার | 162.158.***.*** | ১৬ মে ২০২০ ০০:০৪93369এগিয়ে বাংলা।তবুও কিছু লোক বাংলার বদনাম করার জন্য দিনরাত এক করে দিচ্ছে।
Du | 108.162.***.*** | ১৬ মে ২০২০ ০০:১২93370
o | ১৬ মে ২০২০ ১১:৩০93389ইম্পর্টেন্ট লেখা। ধন্যবাদ।
Debajit Dasgupta | 103.77.***.*** | ১৬ মে ২০২০ ১৭:৫৭93400Got a great comfort. Hats off to you for sharing this information.
সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য | 2409:4060:109:5c78:7806:6c73:66c8:***:*** | ১৬ মে ২০২০ ১৯:৫৯93401ওনার ভাগ্য ভালো। বাকী ঈশ্বর জানেন কারন আমার বাড়ী বাঙ্গুর হসপিটালের কাছে। চিত্র সম্পুর্ন উল্টো।।
স্বাতী গাঙ্গুলী | 183.82.***.*** | ১৭ মে ২০২০ ০০:৫৭93411যদিও আমি পশ্চিমবঙ্গেথাকিনা তবুও খুব ভালোলাগলো খবর টি। অশেষধন্যবাদ
স্বাতী গাঙ্গুলী | 183.82.***.*** | ১৭ মে ২০২০ ০০:৫৭93412যদিও আমি পশ্চিমবঙ্গেথাকিনা তবুও খুব ভালোলাগলো খবর টি। অশেষধন্যবাদ
Srabani Mukherjee | 150.107.***.*** | ১৭ মে ২০২০ ০১:২২93413এই রকম অভিজ্ঞতার কথা লিখে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, অশেষ ধন্যবাদ জানাই
Srabani Mukherjee | 150.107.***.*** | ১৭ মে ২০২০ ০১:২২93414এই রকম অভিজ্ঞতার কথা লিখে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, অশেষ ধন্যবাদ জানাই
শম্পা বন্দ্যোপাধ্যায় | 42.***.*** | ১৭ মে ২০২০ ০৬:৫৬93415আশ্বস্ত হলাম।। ধন্যবাদ আপনাকে।।
সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য, আপনি বিদ্যাসাগর কলেজে পড়তেন?
সঞ্জীব ভট্টাচার্য্য,
এমন বলার কারণ? বিস্তারিত বলবেন? বিনীত অনুরোধ রইল
dc | 103.195.***.*** | ১৭ মে ২০২০ ১০:৫৬93419
Hari Pal | 117.203.***.*** | ১৮ মে ২০২০ ০৭:৫০93427What are u saying about this Mr. Chamcha?
dc | 103.195.***.*** | ১৮ মে ২০২০ ০৮:০০93428