এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  টুকরো খাবার

  • দুরিয়ান

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    টুকরো খাবার | ৩১ মার্চ ২০২০ | ৩০৭৪ বার পঠিত
  • মদ্যপান নিয়ে বিধিনিষেধের সাথে আলাপ আছে, আমিষ খাবার ইত্যাদি নিয়েও, কিন্তু গাছের ফল খাওয়া - এমনকি সেই ফল নিয়ে অফিস, হোটেলে ঢোকাতেও যে নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে তা আমি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আসার আগে জানতামই না! সেই আপাত ভয়ঙ্কর ফলটির নাম ‘দুরিয়ান’। না, এটা কোন বিষাক্ত বা অবলুপ্ত প্রজাতির গাছকে কষ্ট দিয়ে পেড়ে আনা কোন ফল বলে নয় – দুরিয়ানের ঘোরাফেরায় লিমিট আনার কারণ হচ্ছে তার গন্ধ। পাকা কাঁঠালের বা আমের ম-ম করা গন্ধ আমরা শুনেছি, এবার আপনি সেই ম-ম গন্ধকে মনে মনে (ম-ম) টু দি পাওয়ার এন করে দিন। তবে হয়ত দুরিয়ানের কাছাকাছি আসতে পারবেন আপনি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে দুরিয়ান প্রচন্ড জনপ্রিয়, সেখানে এটিকে ফলের রাজা হিসাবে অভিহিত করা হয়। ফলটির বৈশিষ্ট্য হলো বিশাল আকার, তীব্র গন্ধ, এবং কাঁটাযুক্ত খোসা। দুরিয়ান নামটি এসেছে মালয় ভাষার শব্দ "দুরি" (কাঁটা) থেকে।

    সে ঠিক কেমন গন্ধ বলে বোঝাতে পারব না, বা সেই গন্ধের প্রভাব-বিস্তারই বা কেমন সেই নিয়েও উপযুক্ত উদাহরণ মনে আসছে না। ধরে নিন কলকাতায় দুরিয়ান ফল কেটে বিক্রি করতে শুরু করল হাওড়া ব্রীজে ওঠার ঠিক আগেটাতে – যদি দক্ষিণে বাতাস বয় তাহলে এবার আপনি দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে গাড়ি করে যাবার সময় টের পাবেন যে দুরিয়ান বিক্রী হচ্ছে – আর উত্তরে বাতাস দিলে বালি ব্রীজ দিয়ে যেতে যেতে।

    দুরিয়ান কাঁঠাল প্রজাতির ফল, আর দেখতেও অনেকটা কাঁঠালের মতই। দুরিয়ান খাবার জন্য মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, থাইল্যান্ডের কিছুটা, কিছু ইন্দোনেশিয়া – এরা সব পাগল। সেই উন্মাদনার কাছাকাছি বাঙালীর কোন কিছু খাবার বিষয়ক উন্মাদনা আসতেই পারে না, বাজারে হিমসাগর উঠলে আমরা এই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ভাবতে পারি না। কথিত আছে যে প্রাক মোবাইল যুগে বাজারে দুরিয়ান ওঠার খবর রেগুলেট করা হত সরকারী অফিস বা হাসপাতালে, বা ব্যাঙ্কে বা স্কুল-কলেজে। ডাক্তার নাকি অপারেশন থামিয়ে দুরিয়ান কিনতে ছুটছে যেই শুনেছে বাজারে দুরিয়ান উঠেছে – স্কুল-কলেজে টিচার হাওয়া! এখন হোয়াটঅ্যাপ এসে যাওয়ায় আর রেগুলেট করা যাচ্ছে না খবর চাওড় হওয়া। তাই সরকার নাকি ভাবছে কেবলমাত্র ওয়ার্কিং-আওয়ারসের বাইরের দুরিয়ান বিক্রী করতে দেওয়া হবে ওপেন মার্কেটে!

    তখন প্রথম প্রথম ব্রুনাই গেছি – সেবার দুরিয়ান সিজিনে যেতে হয়েছিল মালয়েশিয়ার ‘ইপোহ্‌’ বলে একটা শহরে, কুয়ালালামপুর শহরের থেকে উত্তর দিকে কয়েক ঘন্টার ড্রাইভ। আমাদের পাইপলাইনের মাল আসত জাপান থেকে জাহাজে করে, আর এই ‘ইপোহ্‌’-তে এসে সেই পাইপলাইনে কোটিং-পেন্টিং হত। আমার সাথে যে ব্রুনাই-য়ের ছেলেটি ছিল সে খালি বলছে হাইওয়ে দিয়ে গেলে হবে না, একটু ডাইভার্ট করে গাড়ি ড্রাইভ করে সে যাবে। বার বার খালি জংগলের ভিতর দিতে যাবে বলছিল – কারণ বুঝতে পারছিলাম না। খানিক পরে কথাবর্তা বলে বুঝতে পারলাম যে সেই জংগলে নাকি কিং-দুরিয়ান উঠেছে এবং বিখ্যাত। তাই দুরিয়ান খেতেই হবে – আমি বললাম, তাহলে টেকনিক্যাল মিটিং-এর যে দেরী হয়ে যাবে। উত্তরে জানতে পারলাম, তার এই ট্রিপে আসার মূল কারণই হচ্ছে কিং-দুরিয়ান খাওয়া! টেকনিক্যাল জিনিস পত্রে তার কোনই মাথাব্যাথা বা আগ্রহ নেই। আমাকে বলল, ওই কোম্পানী যখন জানতে পারবে যে দুরিয়ান খাবার জন্য আমাদের দেরী হয়ে গ্যাছে তখন আর কিছু মনে করবে না!

    দুরিয়ান হলো Malvaceae গোত্রের দুরিয়ো (Durio) গণভুক্ত একটি গাছের ফল। গোত্রের দিক থেকে এটি জবা, ঢেড়শ, তুলা এসব গাছের সাথে সম্পর্কিত। ফলটি প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এবং ১৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের হয়ে থাকে, ওজন ১ থেকে ৩ কেজি। দুরিয়ানের আকার লম্বাটে থেকে গোলাকার, খোসার রঙ সবুজ বা বাদামী হয় সাধারণত। ভিতরের শাঁস প্রজাতি ভেদে হালকা হলুদ থেকে লাল হয়ে থাকে। বাইরের শক্ত খোসা তীক্ষ্ণ ও খোঁচা খোঁচা কাঁটা দিয়ে আবৃত। ভিতরের অংশ থেকে বিশেষ ধরনের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ বের হয় যে গন্ধ কারো কারো কাছে সুমিষ্ট, আবার কারো কারো কাছে দুর্গন্ধযুক্ত মনে হয়।

    পাশ্চাত্য জগতে এটি প্রায় ৬০০ বছর ধরে পরিচিত, ঊনবিংশ শতকে ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী আলফ্রেড রাসেল ওয়লেস এটির শাঁসকে অভিহিত করেন "a rich custard highly flavoured with almonds"। শাঁসের অংশটি কাচা ও পাকা দুই ভাবেই খাওয়া হয়। এছাড়া দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় খাবার দাবারে সুগন্ধ যোগ করার জন্য এটি যোগ করা হয়। ফলটির বিচিকেও রান্না করে খাওয়া হয়, আমাদের কাঁঠালের বীচির মতই।

    দুরিয়ানের ৩০টি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে ৯টির ফল খাওয়ার যোগ্য। Durio zibethinus হলো আন্তর্জাতিক বাজারে পাওয়া একমাত্র দুরিয়ান প্রজাতি। অন্য প্রজাতির ফলগুলো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়।

    কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে আপনি স্পেশাল কাউন্টার পাবেন দুরিয়ান দিয়ে তৈরী বিস্কুট, চকোলেট আরো হাবিজাবি জিনিসের। কিনতে হলে ট্রাই করে কিনবেন – এ জিনিস সবার জন্য নয়। ভারতে মনে হয় কিছু কিছু জায়গায় দুরিয়ান পাওয়া যাচ্ছে – বিশেষ করে তামিলনাডু-তে। ইন্ডিয়ামার্টে দেখলাম ১০০০ টাকা প্রতি কেজি করে বিক্রী হচ্ছে অনলাইনে।

    দুরিয়ান ফল দিয়ে নানা মিষ্টি তৈরী হয় মালয়েশিয়ায়, ওদের ঐতিহ্য মেনে - মালয় ক্যান্ডি, আইস ক্যাচং, লেম্পুক, রোজ বিস্কুট। এছাড়া আইসক্রিম, মিল্কশেকস, মুনকেকস, ইউলে লগস এবং ক্যাপুচিনোর তে ফ্লেভার আনতে দুরিয়ান ব্যবহৃত হয়। দুরিয়ান আইসক্রিম ইন্দোনেশিয়ার একটি জনপ্রিয় মিষ্টি যা ইন্দোনেশিয়ার শহরগুলিতে, বিশেষত জাভাতে রাস্তার পাশের স্টলে বিক্রি হয়।

    পুলট দুরিয়ান বা কেটান দুরিয়ান হ'ল নারিকেলের দুধ ফুটিয়ে রাঁধা আঠালো ভাত যা পাকা দুরিয়ান দিয়ে পরিবেশন করা হয়। মালয়েশিয়ার একটি প্রদেশ সাবাহ্‌-তে লাল দুরিয়ান পিঁয়াজ এবং মরিচ দিয়ে ভেজে সাইড ডিশ হিসাবে পরিবেশন করা হয়। ইন্দোনেশিয়ায় ‘সয়ুর’ বলে এক ধরণের স্যুপ বানানো হয় মিষ্টি-জলের মাছ এবং লাল-শাঁস যুক্ত দুরিয়ান দিয়ে। সুমাত্রা দ্বীপে ‘ইকান বারংকেস টেম্পোয়াক’ বলে এক ধরণের মাছের তরকারী পাওয়া যায় যা দুরিয়ান শস দিয়ে রান্না করা। এছাড়া শুকনো দুরিয়ান শাঁস দিয়ে দুরিয়ান চিপস বানানো তো আছেই।

    থাইল্যান্ডে মিষ্টি স্টিকি ভাত দিয়ে প্রায়শই দুরিয়ান খাওয়া হয়। আমাদের এঁচোড়ের মত কাঁচা দুরিয়ানও সব্জী হিসাবে ব্যবহার করা হয় মালয়েশিয়া এবং ব্রুনাই-য়ে। মালয়েশিয়ানরা আবার দুরিয়ানের আচার-টাচার ও বানায় – দুরিয়ান এরা সংরক্ষণ করে চিনি এবং নুন যুক্ত। এবং আবারো আমাদের কাঁঠালের বীচির মতই এরাও দুরিয়ানের বীচি সিদ্ধ, শেঁকা, বা ভাজা করে খায়।

    থাইল্যান্ড নিজেরা বেশী দুরিয়ান না খেলেও এক্সপোর্ট করে সবচেয়ে বেশী, বছরে এরা প্রায় ৭ লক্ষ টন দুরিয়ান উৎপাদন করে, যার মধ্যে প্রায় ৪ লক্ষ টন এরা রপ্তানী করে চীন এবং হংকং তে। মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া দুই দেশ প্রায় আড়াই লক্ষ টন করে দুরিয়ান উৎপাদন করে। মালয়েশিয়া রপ্তানী করে চল্লিশ হাজার টন।

    সবচেয়ে দামী দুরিয়ান প্রজাতি হচ্ছে ‘মুসাং কিং’ এবং তার পরে পরেই আছে ‘সুলতান’। গত বছর মুসাং কিং দুরিয়ান বিক্রী হয়েছে ১৫০০ টাকা কেজি প্রতি। অন্য প্রজাতির দুরিয়ান অবশ্য ৩০০-৪০০ টাকা/কেজি তেও পাওয়া যায়।

    তো এই হল ব্যাপার – ব্রুনাইয়ে আমার প্রাক্তন বস আর বাকি সবার মতই দুরিয়ান খেতে ভালোবসত। অফিস শেষে জাগুয়ার ড্রাইভ করে দুরিয়ান কিনতে যেত লোকাল মার্কেটে। বসের বউ আবার ফেসবুকে খুব অ্যাক্টিভ – কয়েক সপ্তাহ আগে দেখলাম দুরিয়ান খাচ্ছে খুব এবং এখান সেখান ঘুরে দুরিয়ান কিনে বেড়াচ্ছে। আমার নিজের তোলা দুরিয়ানের ছবি গুলো খুঁজে পাচ্ছি না। তাই বসের বউ-কে বলে তার তোলা ছবি গুলোই ব্যবহার করলাম এই বার।















    [ছবির কৃতজ্ঞতাঃ ব্রুনাই-য়ে আমার পুরানো বসের বউ তুলে পাঠিয়েছে ছবি গুলি সেই দেশের বাজার থেকে, আমার হাতের কাছে দুরিয়ানের ছবি খুঁজে পাচ্ছিলাম না বলে]
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • টুকরো খাবার | ৩১ মার্চ ২০২০ | ৩০৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ৩১ মার্চ ২০২০ ১৯:৩৫91918
  • ন্যাট জিওতে ‘প্রাইমাল সারভাইভার’ সিরিজে একাধিকবার বুনো ডুরিয়ান খাওয়া দেখেছি, খুব নাকি তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ, তবে সুস্বাদু, পুষ্টিকর। তীব্র গন্ধের কারণে এটি নাকি বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি নিষিদ্ধ, বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি তো বটেই।

    তবে এ নিয়ে যখন এশিয়ার কিছু দেশে মাতামাতি, তখন সত্যিই হয়তো এই কাঁঠালের আমসত্ত্ব আছে!

    খুব চিত্তকর্ষক লেখা।

    আর ইউটিউবে ন্যাট জিও’র ওই ভিডিও ক্লিপিং-ও খুঁজে পেলাম। গগণ শিরিষ গাছে উঠে কাঁঠাল পাড়া সহজ কথা নয়!  :)

  • শালিখ | 172.69.***.*** | ৩১ মার্চ ২০২০ ২১:১৫91921
  • ডুরিয়ানের গন্ধ অনেকটা পাকা কাঁঠালের সাথে পোড়া মোবিল মেশানো গন্ধ। যত পাকে তত মোবিলের গন্ধটা বাড়ে।

    প্রথমবার শুঁকে আমি ওয়াক তুলেছিলাম। সাহস করে খাওয়াটা অদ্যাবধি হয়ে ওঠেনি।
  • i | 108.162.***.*** | ০১ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৪৪91924
  • ছোটবেলায় প্রথম ডুরিয়ান ফলের কথা পড়েছিলাম বিভূতিভূষণের 'মরণের ডঙ্কা বাজে' তে - সেই বিমল আর সুরেশ্বর সিঙ্গাপুরে বটানিক্যাল গার্ডেনে ডুরিয়ান গাছের তলায় সুব্বা রাও য়ের জন্য অপেক্ষা করছে -ডুরিয়ান পেকে 'দুর্গন্ধ ' -এই সব।

    এ সব লেখা একটু অপ্রাসঙ্গিক হল। মনে পড়ে গেল আর কি-
  • সুকি | 162.158.***.*** | ০১ এপ্রিল ২০২০ ১৩:১১91938
  • বিপ্লব, শালিখ, ইন্দ্রাণী-দি - সকলকে ধন্যবাদ।

    ইন্দ্রাণী-দি অপ্রাসঙ্গিক কেন হবে ! আমার তো জানাই ছিল না যে ওই গল্পে দুরিয়ানের উল্লেখ আছে!

    শালিখ, দুরিয়ান খেতে হলে কলজের জোর লাগে :) যা গন্ধ, সেটা জয় করা খুব সহজ কাজ নয়!
  • বুড়া | 188.114.***.*** | ০১ এপ্রিল ২০২০ ১৭:২২91947
  • ডুরিয়ানের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ইংল্যাণ্ডে, স্বাদ নেওয়ার সাহস হয়নি, কারণ তার সম্বন্ধে একটি কাহিনি শোনা ছিল। সেটাই বলব।
    রবীন্দ্রনাথ দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ভ্রমণে গিয়েছিলেন, চারজন সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্মণ প্রভৃতি। শেষোক্তজন বিখ্যাত শিল্পী, তখন কলাভবনে। এই ভ্রমণের স্মৃতিকথা সুনীতিবাবু দ্বীপময় ভারত ও রবীন্দ্রসঙ্গমে বইতে লিখে গেছেন। তাঁর পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে অনেকেই বোধহয় জানেন না তিনি ছিলেন একজন ভোজনরসিক। একই দিনে দু’তিনটি বিয়ের ভোজ খেতেন, যুক্তি ছিল আহা, ছাত্রছাত্রী। না গেলে বড্ড নিরাশ হবে। তাঁর এই বিয়ের ভোজ খাওয়া নিয়ে নারায়ণ স্যান্যাল তাঁর নিজের মেয়ের বিয়ের গল্প লিখেছেন, উৎসাহীরা পড়ে নেবেন।
    রবীন্দ্রনাথ বলে কথা, সব জায়গায় রাজসম্বর্ধনা, সম্ভবত বালিদ্বীপের রাজা তাঁর সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেন। সঙ্গীদের, যাদের রাজভোজ খাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই, রবীন্দ্রনাথ শেখালেন সব পদই একটু একটু চেখে দেখার, যেটা ভালো লাগল শুধু সেটাই খেলাম, বাকি সব পড়ে রইল, এতে নিমন্ত্রণকর্তার অসম্মান হয়।
    ভোজ শুরু, রবীন্দ্রনাথ রাজার পাশে, একই টেবিলে সঙ্গীরা একটু দূরে। একের পর এক পদ আসছে, শেষে মিষ্টান্ন ও ফল, সবাইকে ডুরিয়ানের দুটি করে কোয়া দেওয়া হলো। ধীরেনবাবুর কথায় গন্ধে গা গুলিয়ে উঠল, এ বস্তু গলাধঃকরণ করতে গেলে যা খেয়েছি সব উঠে আসবে। কি করি। আড়চোখে নজর রাখছি গুরুদেব কি করেন। তিনি মুখে দিলেন, ভ্রু সামান্য কোঁচকাল, সৌম্যমূর্তিতে যথাপূর্বম রাজার সঙ্গে কথা বলতে বলতে খেতে লাগলেন। দ্বিতীয় কোয়াটি কিন্তু খেলেন না। মাথায় বুদ্ধি এল। একটি মুখে পুরে পকেট থেকে রুমাল বার করে মুখ মোছার ছলে তাতে মুড়ে পকেটে রেখে দিলাম। এ কারসাজি গুরুদেব কি আর অত দূর থেকে দেখতে পাবেন?
    কিন্তু সুনীতিবাবু ধীরেসুস্থে দুটিই খেলেন এবং…এবং হেল্পিং চাইলেন। এল, সে দুটিও খেলেন।
    সভা শেষ, ফিরতি পথে গুরুদেবের সহযাত্রী আমরাই। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর গুরুদেব বললেন, এতকাল মনে যদি সংশয়ের কণামাত্র থেকে থাকে আজ আর নেই, সুনীতি, তুই যথার্থ ব্রাহ্মণ। --কেন, গুরুদেব এ কথা বলছেন?—শাস্ত্র পড়িসনি, শাস্ত্রে আছে ব্রাহ্মণরা সর্বভুক।
    একটু বিরতি দিয়ে, আর ধীরেন, ওটা ফেললি কোথা বলতো, ওখানে ফেলে আসিসনি তো?
    গল্পটা আমাকে বলেছিলেন ধীরেনবাবু, স্বকর্ণে শ্রুত।
  • একলহমা | ০৫ এপ্রিল ২০২০ ০৯:১৪92024
  • কয়েকবার কাঁঠাল মনে করে ডুরিয়ান (এই গল্প পড়ে বুঝলাম) কিনতে গিয়ে পিছিয়ে এসেছি, কারণ কাঁঠাল আমার খুব একটা পছন্দ নয়। ভাগ্যিস! কাঁঠাল বেশী পেকে গেলেই নেওয়া কঠিন হয়, আর ডুরিয়ান খুলে ফেললে যে কি করতাম!
    তোমার লেখা বরাবরের মতই সুস্বাদু।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন