নিউ ইয়র্ক শহরে তুলকালাম কাণ্ড । প্রাক্তন স্টেট গভর্নর অ্যানড্রু কুয়োমোকে (Cuomo ) হারিয়ে আগামী নভেম্বর মাসে নিউ ইয়র্ক মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন পেয়েছেন চৌতিরিশ বছর বয়েসের গুজরাতি মুসলিম যুবক জোহরান মামদানি । তাঁর পিতা হার্ভার্ডের পি এইচ ডি , কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর মাহমুদ মামদানি, মাতা কুড়ি বছর বয়েসে রাউরকেলা থেকে হার্ভার্ডে স্কলারশিপ বিজেতা ,স্বনামধন্যা চিত্র নির্মাতা মীরা নাইয়ার ( মিসিসিপি মাসালা , দি নেমসেক, মনসুন ওয়েডিং এবং অন্যান্য ) আমার কৌতূহল জাগলো অন্য কারণে। সম্পূর্ণ অনাবশ্যক তথ্য সংগ্রহ, তার তত্ত্বাবধান, ফ্যাক্ট চেকিং এবং সম্প্রচারে আমার নিষ্ঠা প্রগাঢ়। সিধু জ্যাঠাকে গুরু মেনে এসেছি; জানি মাঝে সাঝে আপাত অনাবশ্যক তথ্যও কাজে লেগে যায়। শিকা অকারণে ছেঁড়ে না। এবার আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হল এই যুবকের নামটির ওপরে - জোহরান কোয়ামে মামদানি। ফারসি জোহর শব্দের অর্থ আলো, জোহরান মানে উজ্জ্বল । কিন্তু কোয়ামে শব্দটি ইউরোপীয় বা ভারতীয় নয় , এটির মূল আকান , ঘানাইয়ান । জানা গেলো জোহরানের পিতা স্বাধীন ঘানার ( এবং আফ্রিকার) প্রথম প্রেসিডেন্ট কোয়ামে এনক্রুমার নামের স্মরণে পুত্রের মাঝের নামটি দিয়েছিলেন । ... ...
ওই সীমান্তে সন্ত্রাসী এসে ঢুকে মানুষ মেরে যায় আর আমাদের এই সীমান্তে ১৪ বছরের স্বর্ণা দাস গুলি খেয়ে মারা যায়। ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের যোগ্যতা নিয়েও তো সন্দেহ করতে পারে কেউ। কেউ তো প্রশ্ন করতে পারে যে অমিয় ঘোষদের সব বীরত্ব শুধু ফেলানি আর স্বর্ণা দাসের মত কিশোরীদের সাথেই, অন্য দিকে মানুষ মরে ২৬ জন! ... ...
সেকালে ইন্টারনেট নেই, বাংলা কাগজে বিদেশ বলতে বিলেত আমেরিকার খবর ছাপা হয়, সি এন এন অনেক দূরে , ক্রিকেটের হাল হকিকত জানতে বি বি সি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে স্পোর্টস রাউনড আপ শুনি । তবু এরই মধ্যে দিন দুয়েক আগে আনন্দবাজার পত্রিকার পেছনের পাতায় সোমালিয়ার মোগাদিশুতে ছিনতাইকারিদের কবল থেকে লুফতহানসার একটি বিমান উদ্ধার করা গেছে বলে পড়েছি। আমার জানার কোন কথাই নয় যে ঠিক সেই দিনই প্রায় এক মাস আগে অপহৃত জার্মান এমপ্লয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের মাথা (বুন্দেসফেরবান্দ ডের ডয়েচেন ইন্দুস্ত্রি ) হানস মারটিন শ্লায়ারের মৃতদেহ একটি আউডি গাড়ির ভেতরে পাওয়া গেছে , মুলহাউসের পথে , ফ্রান্স/জার্মান সীমান্তে । তার মাত্র কয়েকমাস আগে, জুলাই মাসে, ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে ওবারউরসেলে ড্রেসনার ব্যাঙ্কের সি ই ও ইউরগেন পনটো নিহত হয়েছেন তাঁর বসার ঘরে। স্টামহাইম জেলখানায় আত্মহত্যা করেছেন তিনজন সন্ত্রাসবাদী বন্দি । এই সময়টাকে বলা হবে জার্মানির হেমন্ত । ভিসা পাওয়া গেল । ২০শে অক্টোবর , ১৯৭৭। পু: আমার কথা সেই হেমন্তের দিনগুলিতে যা দেখেছি , শুনেছি এ শুধু তারই বয়ান। আমি এক নিরীহ পথচারী , সামান্য নিরপেক্ষ দর্শক মাত্র । দূত এবং কথক অবধ্য। ... ...
তিনি ব্রিটিশ রাজের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা পুরস্কার পেয়েছেন, সেই পুরস্কার নিতে তিনি যাবেন ইংল্যান্ড। এই ছোট্ট সুন্দর একটা কাজকে তিনি ঘাপলা লাগায় দিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কিছু না বলা হলেও ডক্টর সাহেবের প্রেস সচিব এবং পরে তিনি নিজেও জানালেন এইটা রাষ্ট্রীয় সফর! এখন রাষ্ট্রীয় সফর বলতে আমরা কী বুঝি? যাই বুঝি তার কিছু দেখা গেল না এই সফরে। কেউ বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে আসল না, কোন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হল না, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী দেখাও দিল না! দেখা না পাওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া হল তিনি সম্ভবত দেশে নাই, কানাডায় গেছেন! না, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দেশেই ছিলেন, তিনি দেখা দেন নাই। এইটা যে অসম্মানের, এইটাও এই দলের কারো মাথায় ঢুকে নাই, স্বয়ং ডক্টর সাহেবেরও না। তারা নানা জায়গায় সাক্ষাৎকার দিয়েছে এবং নানা আবোলতাবোল বলে বেড়িয়েছেন। ... ...
ক্রিমিনাল গণহত্যার দায়ে যাদের বিচার হওয়া উচিৎ, জেল হওয়া উচিৎ, সেই টাটাদের প্রশংসায় একদল ভারতীয় ও বাঙালি পঞ্চমুখ। কেন? ... ...
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে গুলি খেয়ে মরে ফেলানি খাতুন। ফেলানির বয়স ছিল ১৫ বছর! ফেলানি খাতুন কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বাবার সাথে ভারত থেকে ফিরছিল সেই সময় গুলি খেয়ে প্রাণ হারায়। দীর্ঘ সময় ফেলানির লাশ কাঁটাতারে ঝুলে থাকে! সেই সময় কাঁটাতারে ফেলানির লাশ খুব আলোড়ন তৈরি করে। দেশ বিদেশের গণমাধ্যমেও বেশ জায়গা পায় এই ছবি। তখন যে তীব্র ঘৃণার জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশীদের মনে তা ভারতবাসী কতখানি বুঝে ছিল জানি না। আমরা আশা করেছিলাম অন্তত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা প্রতিবাদ করবে এমন একটা ন্যকারজনক হত্যাকাণ্ডের জন্য। কিন্তু তা আর হয়নি। এরপরে কোথাও যে খুব বেশি কিছু হয়নি তা বুঝতে পারা গেছে সহজেই। কারণ অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সব আগের মতোই। এবং ১৩ বছর পরে গত বছর ১ সেপ্টেম্বর রাতে ১৪ বছর বয়সই স্বর্ণা দাস মারা গেল গুলি খেয়ে! স্বর্ণা দাস মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে তার মায়ের সাথে ত্রিপুরায় থাকা ওর ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিল। বেচারি মা নিজে বাঁচতে পারলে বাঁচাতে পারেনি ছোট্ট কিশোরী স্বর্ণা দাসকে! আত্মরক্ষায় গুলি কোন ক্ষেত্রেই খাটে না। স্বর্ণা দাস, ফেলানি খাতুন কেউই অস্ত্র তাক করেনি বিএসএফের দিকে যে তাকে গুলি করে মেরে ফেলতে হবে। ... ...
এমনেও বয়স একটা বড় ফ্যাক্ট। তবে আমার জন্য তারচেয়েও বড় ফ্যাক্ট আম্মা আব্বার না থাকা। শৈশবের সমস্ত কিছুই তো আম্মাকে ঘিরে। ইদ মানে তখন আম্মার হাতের নানান পদ। তখন এখনকার মত এত বৈচিত্র্য ছিল না আয়োজনে। ওই সেমাই, পায়েস, নুডলস, পাস্তা, পোলাও মাংস দইয়েই সব শেষ। এক লিটারের কাচের বোতলে পেপসি বা কোকাকোলা। খেয়ে ফিরত দিতে হবে বোতল! খুব বেশি হলে পোলারের কাপ আইসক্রিম। এই তো! আর কী চাওয়া? একটু বড় হওয়ার পরে ঘণ্টা চুক্তিতে রিকশায় ঘুরা। তারপরে কারো বাসায় ঢুকে পড়ে ইচ্ছামত খাওয়া। খাওয়া আর ইদ আনন্দ এইটা একে ওপরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এই করতে করতে কবে জানি দেখি আমি নতুন জামার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি, সারাদিন ঘর থেকে বের না হয়ে, কয়েকজন বন্ধু মিলে সিনেমা দেখে, ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি ইদের গোটা দিনটাই। ... ...
ইতিহাস আমরা বইয়ে পড়ি । কে যেন বলেছিলেন স্বর্ণযুগ বলতে আমরা সব সময়ে অতীতের গল্প বুঝি ( দি গোল্ডেন এজ অলওয়েজ ,’ওয়াজ ‘) । অনেক বছর কেটে গেলে মনে হয়েছে নিতান্ত ভাগ্যবলে আমরা একটা আশ্চর্য সময়ে কোন রঙ্গমঞ্চের উইংসের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম – সেখানে কোন নাটিকা অভিনীত হচ্ছিল তার খোঁজ রেখেছি কি ? আমরা সামান্য মানুষ , বোনাস ও বেতনেবাধিকারস্তু ; মা ফলেসু নয়, কেন না ফলটাই আমাদের একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের অবসানে এসেছে গণতন্ত্র । , নতুন রাজনীতিটা কি ? এখন কোন পার্টির শাসন? জানি না , জানবার প্রয়োজনটাই বা কি ? আমাদের সে সব দেশে আসা যাওয়ার কোন বাধা নেই, কমপিটিশন নেই, ব্যবসা চলে ভালো, কেউ কোথাও আটকায় না , ভিসা লাগে না ( রাশিয়া বাদে ) , পশ্চিমি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের স্টাইলের পান্থশালায় রাত্রি যাপন করি, ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কম তাই গুচ্ছের ক্যাশ নিয়ে ঘুরতে হয় , এই যা । সিটি ব্যাঙ্কের শাখা অফিস চলে লন্ডন ফ্রাঙ্কফুর্টের অভ্যস্ত কায়দায়। ওয়ারশ, প্রাগ, বুদাপেস্ট, ব্রাতিস্লাভার সহকর্মীরা দ্রুত পশ্চিমি স্টাইল শেখার চেষ্টা করছেন।মনে আছে ওয়ারশ অফিসে আমার অধস্তন সহযোগী ডানিয়েল আমাকে হীরেন বলে ডাকছে শুনে কয়েকজন রীতিমত অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। চোখে কি ঠুলি পরানো ছিল ? সিটি ব্যাঙ্ক যখন পূর্ব ইউরোপের আন্তর্জাতিক ঋণের বাজারে মত্ত সিংহের ধারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সে সময়ে ড্রেসনার ব্যাঙ্ক এমন ম্যানডেট পেলো কি করে ? তিরিশ বছর আগে ভাবি নি , তখন ফিয়ের পরিমাণ হিসেব করেছি । এবার সেই রহস্যের উদ্ধার হলো। গাজপ্রম ডিলের পিছনে ড্রেসনার ব্যাঙ্কের কোনো তুখোড় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কারের মার্কেটিং এলেম ছিল না , ছিল স্তাসির এক ক্যাপ্টেনের হাত । তাঁর নাম মাথিয়াস ভারনিগ। ... ...
"হে পাক পারওয়ার দিগার, হে বিশ্বপালক, আপনি আমাকে লহমায় একজন তুখোড় রাজাকার ক’রে দিন। তা’হলেই আমি দ্বীনের নামে দিনের পর দিন তেলা মাথায় তেল ঢালতে পারবো অবিরল, গরিবের গরিবী কায়েম রাখবো চিরদিন আর মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানিয়ে নেচে বেড়াবো দিগ্ধিদিক আর সবার নাকের তলায় একনিষ্ঠ ঘুণপোকার মতো অহর্নিশ কুরে কুরে খাবো রাষ্ট্রের কাঠামো, অবকাঠামো।" (একটি মোনাজাতের খসড়া / শামসুর রাহমান) ... ...
ছত্রিশ বছর বয়েসে আঙ্গেলা মেরকেল দ্বিতীয় বার পশ্চিম বার্লিনে গেলেন ৯ নভেম্বর ১৯৮৯ । এবার পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়াই । আজ আমরা বার্লিন দেওয়ালের পতনকে যুগান্তকারী ঘটনা বলে মনে করি কিন্তু সেই দিন, ৯ই নভেম্বরের সন্ধ্যেয় আঙ্গেলা মেরকেল অভিভূত হন নি; বৃহস্পতিবারে সনায় সময় কাটানোর রুটিন ভাঙ্গাটা তিনি প্রয়োজনীয় মনে করেন নি । বরং সেদিনের ব্রানডেনবুরগ থেকে ঊনটার ডেন লিনডেনে ধেয়ে যাওয়া বাঁধভাঙ্গা জনতার স্রোতের মাঝে নিজেকে নিরাপদ বোধ করেন নি। যে সমাজ ব্যবস্থায় তিনি বড়ো হয়েছেন সেখানে সবার কাজ ছিল, পেনশন ছিল এবং নিরাপত্তা ছিল , সে কি শুধুই সুশাসনের, রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশি উপস্থিতি ও তৎপরতার কারণে ? না। সব নাগরিক যে রাষ্ট্রের নজরে বন্দি! এই দফতরের নাম মিনিসটিরিউম ফুয়ের স্টাটসজিখারহাইট, লোকমুখে স্তাসি। শুধু পাড়ার পুলিশ নয় , কালো কোট , কালো চশমা পরে চুরুট মুখে কিরীটী দত্ত স্টাইলের কোন নির্দিষ্ট গোয়েন্দা নয় ; এখানে সবাই লক্ষ রাখে সবার ওপরে । বিগ ব্রাদার ইজ নট ওয়াচিং ইউ , এভরি ওয়ান ইজ ওয়াচিং এভরি ওয়ান! যখন সব্বাই সবার ওপরে নজর রাখে সেখানে অপরাধ করার দুঃসাহস কার হতে পারে ? কার ঘাড়ে কটা মাথা ? এতদ্বারা দেশের ও দশের সুরক্ষা এবং মঙ্গল সুনিশ্চিত। ... ...
এ এক আশ্চর্য উড়ান কথা। এই লেখাটা কলেজ জীবনের স্মৃতি মিলেমিশে একাকার হয়েছে এক অবিস্মরণীয় ছন্দোময় উড়ান ভঙ্গিমার - murmuration. ... ...
তার মানে কি অতীতের ওপরে ইরেজার চালিয়ে নতুন ছবি আঁকা ? আমি যুদ্ধ শেষের তিন দশক বাদে পশ্চিম জার্মানি আসি, আমি জার্মান রেডিও এবং টেলিভিশনকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ বিভীষিকা বর্ণনায় সঙ্কুচিত হতে দেখি নি । ১৯৭৭ সালে দশ পর্বের একটি ডকুমেনটারি দেখি , তার নাম ফোর ফিয়েরতসিগইয়ারেন , চল্লিশ বছর আগে । জার্মান নিউজরিল , ব্রিটিশ ফরাসি রাশিয়ান টি ভি থেকে সংগৃহীত বিশাল ফুটেজ , জার্মান বর্বরতার নির্মম ছবি । ১৯৭৮ সালে জার্মান স্টেট টেলিভিশন হলোকষ্ট নামের পাঁচ পর্বের একটি একান্ত সত্যনিষ্ঠ আমেরিকান সিরিয়াল ( জারমানে ডাব করা ) দেখায় । নাৎসিদের হাতে , গ্যাস চেম্বারে ইহুদি ভাইস পরিবারের মৃত্যু যাত্রা । তখন মনে হয়েছে অতীতের মোকাবিলা করতে হলে অতীতকে যে জানা দরকার সেটা পশ্চিম জার্মানি হয়তো অস্বীকার করে নি । অথচ দেশ এবং মানুষের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পরে জেনেছি পশ্চিম জার্মান স্কুলের ইতিহাস ক্লাসে নাৎসি পিরিয়ড শুধু ছুঁয়ে যাওয়া হতো , গভীরে কখনোই নয়- শিশুদের মাথার ভেতরে অপরাধবোধের গজাল ঠুকে দেবার কি প্রয়োজন ? ( এখন অবশ্য সেটা খানিক বদলেছে, যদিও ক্লাসরুমে ১৯৩২-১৯৪৫কে গুরুত্ব দেওয়া হয় না )। পূর্ব জার্মানির স্কুলের শিক্ষা অন্য রকমের । সেখানকার পাঠক্রম অনুযায়ী নাৎসি দর্শন কার্যকলাপ অত্যন্ত নিন্দনীয় , অমানবিক । মাননীয় নেতা এরিখ হোনেকার সহ বহু কমিউনিস্ট নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন ; প্রতিরোধ ব্যর্থ হয়েছে, নাৎসিরা ক্ষমতা দখল করে তাদের ওপরে অত্যাচার চালায় বারো বছর যাবত । ইহুদি হত্যা, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প , পোল্যান্ড ইউক্রেন রাশিয়ায় তাণ্ডবের জন্য নাৎসিরা দায়ী , পূর্ব জার্মানি নয় । নিতান্ত ভাগ্যের বশে রাশিয়ান ভাইয়েরা এসে নাৎসি দুঃস্বপ্ন থেকে দেশকে বাঁচিয়েছে । ... ...
আমেরিকায় মে দিবস পালিত হয়না আর। শ্রমিক ইউনিয়ন আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে। অথচ, সে ইতিহাস এই দেশেরই ইতিহাস। ... ...
বিএনপি একটা দল যারা এমনই দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে এই চরম দুর্নীতিবাজ ছাত্রদের সাথেও পেরে উঠছে না। সকাল বিকাল ধমক দেয় ছাত্ররা। ৫ আগস্ট পরবর্তী চাঁদাবাজি এমন পর্যায়ে করেছে যে এখন মানুষ তাদেরকে সহ্য করতে পারে না। আমি আমার এলাকায় যা দেখছি তার কথা বলতে পারি। দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাহিরে থাকায় পাতি নেতারা ঝরে পড়ে গেছিল। আমি এক সময় রাজপথ কাঁপানো ছাত্র নেতাকে দেখছি আমাদের নিউ মার্কেট মোড়ে অটো লাইন ধরানোর কাজ করত। জ্যাম বেঁধে গেলে লাঠি দিয়া অটো, রিকশাকে সামনে আগানোর কাজ করত। ওই করে কয় টাকা কামাই করত জানি না। কিন্তু দিনের পর দিন এই করতে দেখছি। যার কথা বলছি সে আমাদের স্কুলেই পড়ত। পড়াশোনা কেন বাদ দিল, কেন রাজনীতির নেশায় পেয়েছিল ওকে কে জানে। কিংবা সবাই জানে মনে হয়। প্রবল প্রতাপ দেখানোর লোভ, সেই ২০০২/০৩- ২০০৫/০৬ সালে বিশ একুশ বছরের একটা ছেলের যদি শহর কাঁপানোর ক্ষমতা থাকে, টাকা থাকে তাহলে পড়াশোনাকে বাহুল্য মনে হবে না? ওর তাই হয়েছিল। ওকে সহ আরও কয়েকজনকে দেখতাম এই অটো সামলানোর কাজ করত। এবার আসুন ৫ আগস্টের পরের পর্বে। আবার ওদের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেছে। কাপড় চোপর চিকচিক করছে! দুইজন দোকান দিয়ে বসেছে, আরেকজন আল্লাই জানে কী করছে এই মুহূর্তে। যা বুঝলাম কামাই করে নিয়েছে এরা প্রত্যেকেই। ... ...
সাতসকালে মুঠোফোনে আত্মীয় পরিজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে নানান ধরনের শুভেচ্ছাবার্তা ভেসে আসে। সেইসব শুভেচ্ছা বার্তার মধ্যে কিছু বার্তা বা দৃশ্যপট এমন থাকে যা কখনও কখনও নতুন ভাবনার পথে মনকে ছুটিয়ে দেয়। এমনই দুই প্রভাতী শুভেচ্ছাবার্তা নিয়েই এই মনকথা। ... ...
অতীতের দুর্বল পঙ্গু পূর্ব জার্মান মার্ককে ( মার্ক ডের ডে ডে এর) আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে অর্থ ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করেছিল যে মহার্ঘ্য ডয়েচ মার্ক , তার স্থান নিয়েছে আরও এক শক্তিশালী মুদ্রা, ইউরো: ১.৯৯ পুরনো ডয়েচ মার্কের বিনিময়ে পাওয়া গেছে এক ইউরো । বদলেছে তো আরও অনেক কিছু - পুবের রাস্তাঘাট , টালির চাল , বাড়ির দরোজা দেওয়াল মেরামত হচ্ছে , মেটে হলদে রঙের দেওয়ালে পড়ছে রঙ্গিন পোঁচ। লিডল , আলদি সুপার মার্কেট সর্বত্র , ক্বচিৎ কোথাও গ্রামের চাষিরা সবজিটা মুরগিটা নিয়ে মার্কট প্লাতসে বসে, ট্রাবান্ত ওয়ারটবুরগ গাড়ি রাস্তায় দেখা যায় না, পয়সা খরচা করে মিউজিয়ামে তাদের দেখতে যেতে হয় , টেলিফোন ঘরে ঘরে । এগারো বছর আগে স্টাডরোডায় এসে মনে হয়েছিল জার্মানি কোথাও ছেড়ে এসেছি , এ এক অন্য দেশ। আজ হাইকের বাড়ি থেকে ফেরার সময়ে মনে হল আমার চেনা জার্মানির কোন একটা ছোট শহর থেকে বেরুচ্ছি । বদলালো তো আরও কিছু ; যেমন , একশোর বেশি দেশে ছিল জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ( ডয়েচে ডেমোক্রাটিশে রেপুবলিক, ডে ডে এর ) দূতাবাস । ১৯৭০ সালে দিল্লিতে পাপুর ছবির প্রদর্শনী করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল ডে ডে এর দূতাবাসের কালচারাল আটাশের সঙ্গে , খুব কৌতূহলের সঙ্গে দেখলেন, নানান প্রশ্ন করলেন পরিষ্কার ইংরেজিতে । আজ তাঁর মতন কালচারাল আতাশে কেন,কাজ হারিয়েছেন তদানীন্তন পূর্ব জার্মানির একশোর বেশি রাজদূত, ফার্স্ট সেকেন্ড অফিসার। দেশ যখন একটা, দূতাবাস হবে একটাই। রাজা অপ্রসন্ন হলে রাজদূতের গর্দান এবং চাকরি দুটোই যেতে পারে। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষ উৎপন্ন হলে রাজ দূতাবাসের দরোজায় তালা পড়ে। যেমন ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে বার্লিনের ৭৩ নম্বর ভিলহেলমস্ত্রাসের রাইখ চ্যান্সেলরিতে গিয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রিটেনের যুদ্ধ ঘোষণাপত্রটি বিদেশ মন্ত্রী ইওয়াকিম ফন রিব্বেনত্রপের সহকারীর ( রিব্বেনত্রপ দেখা করেন নি ) হাতে দিয়ে রাজদূত সার নেভিল হেনডারসন দু কদম দূরের ৭০ নম্বর ভিলহেলমস্ত্রাসের ব্রিটিশ দূতাবাসে ফিরে বলেছিলেন , পাততাড়ি গুটোও ,আমরা চললাম ( প্যাক ইয়োর ব্যাগস, অফ উই গো ) । যুদ্ধ শেষে সেই বাড়িতেই ফেরেন নতুন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত । জার্মানির পুনর্মিলনের সঙ্গে সঙ্গে এক ধাক্কায় একশো রাষ্ট্রদূতের ছুটি হলো। ... ...
সেই সময় এই প্রসঙ্গ ধামাচাপা পড়লেও যতই সময় ঘনিয়ে আসল ততই এই প্রসঙ্গ প্রাসঙ্গিক হতে থাকল। এবং শেষ মুহূর্তে হেফাজতে ইসলাম থেকে বলা হল মঙ্গল শোভাযাত্রা করা যাবে না, এই নাম চইলত ন! ফলাফল হাতেনাতে, চারুকলার ডিন জানিয়ে দিলেন তারা নাম পরিবর্তন করছে, এবারের শোভাযাত্রার নাম হবে আনন্দ শোভাযাত্রা! ব্যাস, হয়ে গেল সব! ফারুকির নাক গলানোর পরেই যে ব্যাচ এবার দায়িত্বে থাকার কথা তারা একটা বিবৃতি দেয়, দিয়ে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয় যে তারা এবার এই দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু এবার যে শোভাযাত্রা হচ্ছে তার সাথে তারা জড়িত না! সরকার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এবারের শোভাযাত্রার আয়োজন করছে, তাদেরকে এর সাথে রাখা হয়নি, তারা সাথে নাইও। উপদেষ্টার জন্য এরচেয়ে লজ্জার কী হতে পারে? কিন্তু না, ফারুকি এই সামান্য বিষয়ে থেমে যাওয়ার লোক না। ... ...