এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • ময়ূরঝর্ণা - ২ য় পর্ব 

    বিতনু চট্টোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১২৫১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ‘বৃষ্টি কমেছে?’ সুভাষের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওসমানকে প্রশ্নটা করল অনিরুদ্ধ।
    ‘হ্যাঁ স্যর, অনেকটাই কমেছে, এই বৃষ্টি বেশিক্ষণ হবে না।’ সুভাষকে নিয়ে ঘর থেকে বেরোল ওসমান।
    ‘প্রভাত বৃষ্টি কমলে জানলাটা খুলে দিতে পার, ঠান্ডা হাওয়া আসবে।’
    ‘আসলে স্যর সন্ধে হয়ে গেলে জানলা বন্ধ করে রাখি। পোকা ঢুকে পড়ে ঘরে, মশাও আছে খুব।’
    ‘ঠিক আছে’, আমি তবে আজ উঠি। কাল আমি পাঁচটার আগেই চলে আসব।
    ঠিক হল পরদিনই জুজারধরা গ্রামে সকাল সকাল যাবে পুলিশ। ঝাড়গ্রাম থেকে ভোর চারটে নাগাদ বেরিয়ে অনিরুদ্ধ চলে আসবে বেলপাহাড়ি থানায়। তারপর তিন-চারটে গাড়ি নিয়ে দশ-বারোজন অফিসার, কনস্টেবল শুরু করবে গ্রাম ভিজিট। গাড়িতে ওঠার সময় প্রভাত বলল, ‘স্যর জঙ্গলের সব জায়গায় কিন্তু গাড়ি ঢুকবে না। কোনও কোনও গ্রামে ঢুকতে হাঁটতে হবে অনেকটা।’ এই কথার কোনও গুরুত্বই দিল না অনিরুদ্ধ। ‘ধুর, এটা কোনও ইস্যু নাকি?’ ঝাড়গ্রামে ফেরার জন্য গাড়িতে উঠে পড়ল অনিরুদ্ধ। আর গাড়ি একটু এগোতেই আগের দিনের মতো অনিরুদ্ধ টের পেল অন্ধকারটা। কোত্থাও কিছু দেখা যাচ্ছে না, অন্ধকারের কালো চাদরটা যেন চেপে বসছে গাড়ির ওপর। যত দূর চোখ যায় আলোর কোনও চিহ্নমাত্র নেই, ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে অনিরুদ্ধ জিজ্ঞেস করল, ‘সঞ্জয়, এখানে কি লোক রাতে হ্যারিকেন, কুপিও জ্বালে না?’
    আসলে বেলপাহাড়িতে অনিরুদ্ধর আজ মাত্র দ্বিতীয় দিন, তাই ওর জানা নেই, স্থানীয় মানুষ জানে, গ্রাম ভিজিট শুরু করার ক’দিনের মধ্যে অনিরুদ্ধও জেনে যাবে, হ্যারিকেন, কুপি জ্বালানোর মতো তেল থাকে না এখানকার অধিকাংশ ঘরে!

    ১৯-০১-২০১৭, কলকাতা

    সিংরাই মান্ডি কি কোনও লেখার প্রধান চরিত্রের নাম হতে পারে? কারণ হিসেবে যথেষ্ট জোরালো নয়, কিন্তু এই গোলমেলে প্রশ্নের জন্য লেখাটা শুরু করতে কিছু দেরি হচ্ছে অরিন্দমের। অরিন্দমের মনে হয়েছিল কলকাতার বা শহরের মানুষের যে স্বাভাবিক মানসিক গঠন তার সঙ্গে সিংরাই নামটা যায় কি? ইদানীং বাংলা সিনেমা, সাহিত্য, সিরিয়ালে যে নামগুলো অরিন্দম দেখে বা শোনে তা ওর দারুণ সাজানো-গোছানো মনে হয়, ঠিক পাঁচতারা হোটেলের লবির মতো। মনে হয় কেউ অনেক সময় নিয়ে যত্ন করে নামগুলো রেখেছে। কিন্তু সিংরাইয়ের জীবন তো শহুরে পাঁচতারা হোটেলের মতো পরিপাটি নয়।
    শেষ পর্যন্ত অরিন্দম ঠিক করল, সিংরাইকে নিয়ে যতটুকু জেনেছে তা অন্তত লিখে রাখবে। এই লেখা কোথাও প্রকাশিত হবে না কোনও দিন, কিন্তু ঘটনাগুলো যেন ভুলে না যায় সেই কারণেই তা লিখে রাখতে চায় ও। বয়স হচ্ছে, আজকাল অনেক পুরনো জিনিসই অরিন্দম মনে রাখতে পারে না। কিন্তু আজ নিয়ে পরপর বেশ কয়েকদিন ল্যাপটপ খুলে বসে অরিন্দম বুঝতে পারল ব্যাপারটা তত সোজাও নয়। শুধু ঘটনাগুলো জানলেই তো হবে না, তা গুছিয়ে লিখতে হলে যে স্কিল দরকার তা ওর নেই। অরিন্দম পেশায় সাংবাদিক, অনেক দিন ধরে ভাবছে একটা অন্যরকম কিছু লিখবে, সাধারণ খবরের বাইরে। অনেক সাংবাদিকই তো লেখে। কিন্তু কী লিখবে বুঝতে পারে না। হঠাৎই একদিন কাকতালীয়ভাবে অরিন্দম জানতে পারে সিংরাইয়ের কথা। ভাবে সিংরাইয়ের কথা লিখলে কেমন হয়!
    আজ লিখতে বসে এক অদ্ভুত কথা মাথায় এল অরিন্দমের। এত বছর ধরে লেখার একটা কিছু বিষয় খুঁজছিল। এখন সিংরাইকে নিয়ে লেখাটা বারবার চেষ্টা করেও শুরু করতে না পেরে মাঝে ভাবছিল ঘটনাগুলো যাতে ভুলে না যায় তার জন্য অন্তত লিখে রাখবে। আজ হঠাৎ অরিন্দমের মনে হল, ঘটনাগুলো যা জেনেছে তা ওর ব্যক্তিগত আমানত হিসেবে থাকলেই বা ক্ষতি কী? সিংরাই মান্ডির কথা যে লোককে জানাতে হবে তারই বা কী মানে? এমন তো নয় যে, লেখাটা সত্যিই শেষ হলে এবং কয়েকজন তা পড়লে সিংরাইয়ের জীবনে পালটাবে কিছু! কী যে হচ্ছে আজকাল! এক জিনিস নিয়ে এত বিভ্রান্তি, এও কি বয়সের লক্ষণ? প্রায় আধ ঘণ্টা নানান সাতপাঁচ ভেবে আজও ল্যাপটপ বন্ধ করল অরিন্দম। লেখাটা যে কীভাবে, কোন জায়গা থেকে শুরু করবে তাই বুঝে উঠতে পারছে না ও।    
     
    ল্যাপটপ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিল অরিন্দম। সিংরাইয়ের আগে অরিন্দম শুনেছিল তার ভাই ধর্মা মান্ডির কথা। পরে ধর্মার কাছে শোনে সিংরাইয়ের নাম। সিংরাই যে কারও নাম হয় তাই জানতো না ও। অথচ এমন নয়, যে জায়গায় বাবা-মা ছেলের নাম সিংরাই রাখে সেই জায়গাটা অরিন্দমের অচেনা। কাজের সূত্রে গত আঠারো-উনিশ বছরে ও অন্তত একশোবার ঝাড়গ্রাম গিয়েছে। অথচ অদ্ভুত কাণ্ড, এতবার জঙ্গলমহলে গিয়েও সিংরাই নামটা অরিন্দম কোনও দিন কারও মুখে শোনেনি। কীভাবে লেখাটা শুরু করা যায় ভাবতে ভাবতে হঠাৎই অরিন্দমের মনে পড়ে যায় ধর্মা মান্ডির সঙ্গে দেখা করতে শেষবার ঝাড়গ্রামে যাওয়ার কথা। ঝাড়গ্রাম স্টেশনের কাছাকাছি একটা হোটেলে উঠেছিল অরিন্দম। প্রায় এক বছর হয়ে গেল, এখনও হোটেলের দুটো জিনিস ওর স্পষ্ট মনে আছে। হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথমেই বাথরুমের দরজা ঠেলেছিল, আর বাথরুমে পা দিয়েই অরিন্দমের চোখে পড়ে বেসিনের ওপর আয়নায় লাগানো একটা বড় লাল টিপ। কে এই মহিলা যিনি আগের রাতে এঘরে ছিলেন? কার সঙ্গে এসেছিলেন? তিনি কি টিপটা ভুলে রেখে গিয়েছেন, নাকি ইচ্ছে করেই? মহিলাকে কেমন দেখতে হতে পারে মনে মনে ভাবার চেষ্টা করে অরিন্দম। ভাবে এই মহিলার সঙ্গে যদি কখনও দেখা হত, তাকে কি জিজ্ঞেস করতে পারত প্রশ্নগুলো? ঘরে ঢুকে অরিন্দমের চোখে পড়ে গোলাপি রঙের দেওয়াল আর লাল ফুল, সবুজ পাতা আঁকা সাদা বিছানার চাদর। ঘরের দেওয়ালে এমন রংও করে লোক? সেদিন সন্ধেবেলা হোটেলের খাটে বসে রাম খাওয়ার সময় অরিন্দম দেখে বিছানার চাদরের এক কোণায় আবছা একটা দাগ। কীসের দাগ কে জানে? চাদরের তো জন্মদাগ হয় না নিশ্চয়! তিন দিন হোটেলে থাকার সময় ঘরের ওই গোলাপি রং আর বাথরুমে ঢুকলেই আয়নায় লাগানো লাল টিপ যেন অরিন্দমের মাথার মধ্যে চেপে বসেছিল। ফেরার দিন ওর মনে হচ্ছিল, সারা জীবন ধরেই তার ঘরের দেওয়ালের রং গোলাপি।
     
    নাঃ এভাবে হবে না, ঝাড়গ্রামের হোটেলে ঘরের রং, বাথরুমের আয়না থেকে সিংরাই মান্ডির ওপর মনোনিবেশ করতে হবে, নিজেই নিজেকে বলল অরিন্দম। তারপর ভাবল, অন্য একদিন বসা যাবে। আজ আর সময় নেই। তাছাড়া লেখাটা যে কোনও একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে এমন কোনও কথা নেই। লেখার জন্য কেউ ওর মাথায় বন্দুক ধরেনি! বন্দুকের কথা মাথায় আসতেই অরিন্দমের মনে পড়ে যেদিন সিংরাই প্রথম বন্দুক ধরেছিল, সেদিনের কথা। চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে ঠিক করে, সিংরাইয়ের বন্দুক ধরার দিন থেকে লেখাটা শুরু করলে কেমন হয়! 

    ২৩-০৬-১৯৯৯, চাকাডোবা বেলপাহাড়ি

    পরদিন সকালে গ্রাম ভিজিটের প্ল্যানিং ফাইনাল করে অনিরুদ্ধ যখন বেলপাহাড়ি থেকে ঝাড়গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিল, প্রায় ঠিক সেই সময়ই থানা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চাকাডোবার মাঠে জড়ো হতে শুরু করেছে কিছু মানুষ। বেলপাহাড়ি থানা থেকে একটা রাস্তা শিলদা মোড় হয়ে বিনপুর, দহিজুড়ি ধরে সোজা চলে যাচ্ছে ঝাড়গ্রাম শহর, যে রাস্তা ধরল অনিরুদ্ধর গাড়ি। আর বেলপাহাড়ি থানা থেকে অন্য রাস্তাটা সোজা ভূলাভেদা, চাকাডোবা, বাঁশপাহাড়ি হয়ে চলে যাচ্ছে ঝিলিমিলি। সেখান থেকে একদিকে পুরুলিয়া, অন্যদিকে বাঁকুড়া।
    তো এই চাকাডোবার মোড় থেকে যে রাস্তাটা ঘুরেছে কাঁকড়াঝোড়ের দিকে, সেখানে রাস্তার ধারেই বড় মাঠ। সেই মাঠে আজ মিটিং ডেকেছে কিছু লোক। আসলে মিটিংটা ঠিক কে ডেকেছে তা জানে না চাকাডোবা এবং আশপাশের বাসিন্দারা। তবে অনেকেই আঁচ করতে পারে আজকের মিটিংয়ে বনপার্টির লোকজন আসবে। আশপাশের গ্রামের সব পরিবার থেকে অন্তত একজন করে লোককে সন্ধে সাতটায় চাকাডোবা মাঠে আসতে বলা হয়েছে। সেই কারণেই ফুটবল মাঠে জড়ো হচ্ছে মানুষগুলো। বিকেল আর সন্ধের মুখে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়েছে, এখনও বেলপাহাড়ির পুরো আকাশ মেঘে ঢাকা। খানিকটা গুমোট হয়ে আছে চাকাডোবা ফুটবল মাঠ। ঘন অন্ধকারের চাদরে ঢেকে আছে পুরো এলাকা, তার মধ্যে আলো বলতে মাঠে জড়ো হতে থাকা লোকগুলোর কারও কারও হাতে বিড়ির আগুন। মাঠের মাঝখানে কয়েকটা পলিথিন শিট পাতা। তাতে আস্তে আস্তে গিয়ে বসছে কয়েকজন। বৃষ্টিতে মাঠ ভেজা থাকায় কয়েকজন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা মানুষগুলো ঘন অন্ধকারে দেখতে পেল না, মাঠের একদিকে বাঁশ দিয়ে তৈরি গোল পোস্টের পিছনে কখন এসে জড়ো হয়েছে সাত-আটজন। ওই গোল পোস্টের পিছন দিয়ে চলে গিয়েছে একটা সরু রাস্তা, সেই রাস্তা দিয়ে কিছুটা এগিয়ে ঝোপঝাড়, তারপর কিছুটা জঙ্গল, কিছু বাড়ি। আবার জঙ্গল। সেই জঙ্গল, ঝোপঝাড় পেরিয়ে আসা লোকগুলোর মধ্যে একজন ঘড়ি দেখল, সওয়া সাতটা বাজে। মিটিং শুরু করতে আরও আধ ঘণ্টা লাগবে।      
     
    কিছুক্ষণ বাদে চাকাডোবা ফুটবল মাঠে জড়ো হওয়া লোকগুলো দেখল, গোল পোস্টের পিছনে একজন উবু হয়ে মাটিতে বসে একটা হ্যারিকেন জ্বালাচ্ছে। হালকা হাওয়ায় হ্যারিকেনের আগুনটা তিরতির করে কেঁপে স্থির হল, তারপর একজন হ্যারিকেনটা হাতে করে এগিয়ে আসছে মাঠের মাঝখানে। এত অন্ধকারে মানুষটাকে দেখা যাচ্ছে না, শুধু চেহারার আদলটা বোঝা যাচ্ছে, এগিয়ে আসছে হ্যারিকেনটা। ছায়ামূর্তিটা একদম কাছাকাছি এলে মাঠের মাঝে বসে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে কেউ কেউ বুঝতে পারল, এ কোনও লোক নয়, জোয়ান মেয়ে একটা। যদিও মেয়েটা জামা-প্যান্ট পরা, তাই এই অন্ধকারে বোঝার কোনও উপায় নেই। কিন্তু সে একটু নীচু হয়ে হ্যারিকেনটা মাটিতে নামিয়ে রাখার সময় মাথার চুল, চেহারার আদল নজর এড়াল না কয়েকজনের।
     
    ‘আর একটু অপেক্ষা করতে হবে, কমরেডরা এখনই এসে পড়বে। তারপর মিটিং শুরু হবে।’ কথাগুলো বলে পিছন ফিরে যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে হাঁটা লাগাল মেয়েটা। প্রায় দেড়শো মানুষের মধ্যে কেউ চিনতে পারল না, শুধু মেয়েটার গলা শুনে চমকে উঠল ধনঞ্জয়। ধনঞ্জয় মাহাতোর বাড়ি বাঁশপাহাড়িতে। বাঁশপাহাড়ির রেশন দোকান মাহাতো ফেয়ার প্রাইজ শপটা ওদের। মেয়েটার গলা যেন চেনা চেনা লাগল তার। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুধীরের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে ধনঞ্জয় বলল, ‘আমাদের শ্রীমন্ত সর্দারের মেয়েটা না?’
    ‘জবা? ও তো কয়েক মাস বাড়িছাড়া, আমার তখনই সন্দেহ হয়েছিল মেয়েটা ওদের সঙ্গে ভিড়েছে,’ নীচু স্বরে জবাব দিল বাঁশপাহাড়ির মিষ্টির দোকানের মালিক সুধীর পাল। সুধীর আর ধনঞ্জয় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল। এই পুরো জমায়েতের মধ্যে ধনঞ্জয় আর সুধীরই সবচেয়ে পয়সাওয়ালা। দু’জনেরই বয়স চল্লিশের আশপাশে, পায়ে চামড়ার চটি, হাতে ছাতা। দু’জনেরই পারিবারিক জমিজায়গা আছে। ধনঞ্জয় তো সারা দিনে সিগারেটই খায় চার-পাঁচ টাকার। যত লোক আজ মিটিংয়ে এসেছে তাদের কারোরই দিনে রোজগার নেই এত। তাছাড়া শুধু বেলপাহাড়ি, বাঁশপাহাড়ি, চাকাডোবার সাধারণ মানুষ কেন, এই এলাকায় সরকারি অফিসে কাজ করা লোকও এত দামি সিগারেট খায় না। আজ বিকেলেই তো যে সিগারেট ধরাতে গিয়ে বেলপাহাড়ি থানার ওসির ঘর থেকে অনিরুদ্ধ দেখেছে রামধনুর আগের ও পরের আশ্চর্য এক আকাশ, সেটারও দাম পঞ্চাশ পয়সা। অনিরুদ্ধ যে সিগারেট খায়, তাই খায় ধনঞ্জয়ও, যা ধরাতে গিয়ে হ্যারিকেন হাতে আসা মেয়েটাকে চেনা লাগল তার।
     
    দু’চার মিনিটের মধ্যেই চাকাডোবার মাঠে জমা হওয়া লোকগুলো দেখল, গোল পোস্টের পিছন থেকে দু’জন এগিয়ে আসছে, একজনের হাতে একটা হ্যারিকেন। যে মেঘটা জমাট হয়ে ছিল চাকাডোবার আকাশে, তা যে হালকা হাওয়ায় আস্তে আস্তে কখন কেটে যাচ্ছিল তা টের পায়নি কেউ, হঠাৎই মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল চাঁদ। আর সঙ্গে সঙ্গে ঘন অন্ধকার কেটে একটা নীলচে আলোয় ছেয়ে গেল মাঠটা। যাদের দেখা পর্যন্ত যাচ্ছিল না, তাদেরই যেন প্রাণপ্রতিষ্ঠা হল আচমকা। বিভিন্ন গ্রাম থেকে জড়ো হওয়া মানুষগুলো দেখল, যে ছেলেটা হাতে হ্যারেকেন নিয়ে এসে মাঠের মাঝে রাখল তার বয়স হবে বড়জোর কুড়ি-বাইশ। মেয়েটার বয়স একটু কম হতে পারে, কিন্তু সে যে কয়েক মাস আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া জবা সর্দার তা চিনতে পারল বাঁশপাহাড়ির অনেকেই।
    ‘কমরেডরা এসে গিয়েছে, এখনই মিটিং শুরু হবে,’ সরু গলায় বলল ছেলেটা।

    ক্রমশ......
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ | ১২৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Eman Bhasha | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৫526450
  • ভালো 
  • | ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫০526459
  • ভালো লাগছে।
  • সুকান্ত | 2409:4060:2e85:bac9::bb0b:***:*** | ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:২০526475
  • বিতনু দার কিষেনজীকে নিয়ে লেখা বই পড়ে সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখা। ক্লাস টেন, ইলেভেন  থেকে জঙ্গলমহল নিয়ে আশ্চর্শ  এক কৌতূহল আছে। সময় পেলেই চলে যাই। সম্প্রতি কাঁকড়াঝড় ঘুরেও এলাম। ময়ূরঝর্ণা দুটি পর্ব দারুন লেগেছে। পরের পর্বের জন্য মুখিয়ে আছি। 
  • pinky | 2409:4060:219f:d0e6::287e:***:*** | ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:০৭526489
  • উপন্যাস, তবে কাল্পনিক নয়। মিটিং-এ কি হয়? জবার কমরেড কারা ? পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। 
  • তরুন দাস , বাঁকুড়া | 2409:4061:2db8:bf8::ba88:***:*** | ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০৫526599
  • বিতনু স্যার এর প্রতিটি লেখাই 2 বার 3 বার করে পড়ি । দারুন লাগে । তথ্যসমৃদ্ধ ও ঘটনাবহুল ।   ময়ূরঝর্ণা অসাধারণ । পরের পর্বের জন্য wait করছি 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন