দেশভাগের দিনলিপি : সমাজকর্মী আনিস কিদওয়াইয়ের সংক্ষিপ্ত জীবন ও লিখনকথা
Suchetana Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোনস্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ০৬ মে ২০২৩ | ৯১০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
অনেকদিন আগে গুরুতে আনিস কিদওয়াইয়ের বই সম্পর্কে একটি অসাধারণ নিবন্ধ বেরিয়েছিল। তবুও আনিসের জীবনের কথা পাঠকের সামনে সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরার জন্য এই লেখাটি পোস্ট করলাম। .......
"সে ছিল এক একদম অন্যরকম হিন্দোস্তান। যেখানে বাস করতেন বলিষ্ঠ পাঠান, নির্ভীক রাজপুত, জ্ঞানী ব্রাহ্মণরা…সম্মানের সঙ্গে সেখানে একসঙ্গে বাঁচতেন হিন্দু আর মুসলিম জনগণ.."। আনিস কিদওয়াই লিখেছিলেন তাঁর 'আজাদী কি ছাঁও মে' নামক বইয়ের মুখবন্ধে। কে ছিলেন এই আনিস কিদওয়াই? কি এমন কাজই বা করেছিলেন তিনি এই দেশের জন্য? নিশ্চিত আমাদের অনেকের কাছেই আনিস এক অশ্রুতপূর্ব নাম। এই লেখায় আমরা বরং সংক্ষেপে ফিরে দেখি এই ব্যতিক্রমী অথচ বিস্মৃত সমাজকর্মীর জীবন ও মহতী সক্রিয়তাগুলিকে…।
১৯০৬ সালে আনিস কিদওয়াই সাবেক যুক্তপ্রদেশের বরাবাঁকি'র এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জমিদার বাড়ির আর্থিক অবস্থা পড়তির দিকে হলেও বাড়িতে পর্দাপ্রথা সহ অন্যান্য ইসলামী রীত-রিওয়াজ কঠোরভাবে পালিত হতো। আনিসের ওয়ালিদসাহাব বিলায়েৎ আলী নিজে খ্যাতনামা আইনজীবী এবং খবরের কাগজে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কলাম লিখিয়ে হলেও পর্দানশীন কন্যাকে বাইরের স্কুলে পড়তে পাঠান নি। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি ছোটকাল থেকেই আনিসের ছিল গভীর আগ্রহ। তাই বাড়িতেই দাদাদের পড়াশুনোর সময় তাঁদের পাশে বসে থাকতে থাকতে নিজের চেষ্টায় সে আয়ত্ত করে ফেলে উর্দু, ইংরেজি আর গণিতের প্রাথমিক থেকে উচ্চতর সমস্ত পাঠই।
১৯২০ সালে মাত্র ১৪বছর বয়সে আনিসের বিয়ে হয়ে যায় সেকালের ব্রিটিশ সরকারের তরুণ আমলা শফি আহমেদ কিদওয়াইয়ের সঙ্গে। উচ্চপদস্থ আমলা স্বামীর কর্মসূত্রে দেশের নানাপ্রান্তে সংসার পাতা, একের পর এক সন্তান পালন বা অবসরে বইপত্র পড়াশুনোর মধ্যেই সীমিত ছিল পর্দানশীন আনিসের যৌবনকাল। তবে শফি আহমেদের ছোটভাই, খ্যাতনামা স্বাধীনতা সংগ্রামী রফি আহমেদ কিদওয়াইয়ের সংস্পর্শে আনিসের মনে দেশের স্বাধীনতার দিশায় অহিংস গান্ধীবাদী আন্দোলনের আদর্শ ও পথ সুগভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল।
১৯৪৭ সাল। দেশভাগের মাধ্যমে স্বাধীন।ভারত আর পাকিস্তানের জন্মও যেমন হয়, তেমন সেই কর্তিত স্বাধীনতা দেশের আমজনতার জীবনে বয়ে এনেছিল ভয়ঙ্করতম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অন্ধকার এবং পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ উদবাস্তু সমস্যাকে। আনিসের স্বামী শফি আহমেদ মুসৌরি শহরের মিউনিসিপ্যাল বোর্ডের প্রধান হিসেবে সে সময় শহরে শান্তিশৃঙ্খলা স্থাপনের কাজটি নির্ভীকভাবে একলাই সামলে চলেছিলেন নিরন্তর। কিন্তু নিরপেক্ষভাবে নিজের কাজ করে চলার প্রাপ্তি হিসেবে দাঙ্গাবাজদের হাতে ১৯৪৭এর অক্টোবরে নৃশংসভাবে খুন হন তিনি।
জনগণের কাজে উৎসর্গীকৃত স্বামীর শাহাদত শোকের অকুল পাথারের ভিতরেও আনিসের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছিল তাঁর আগামীদিনের চলার পথটিকে। ইসলামী রীতি অনুযায়ী সে সময় তাঁর স্বামীর শোকযাপনে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার নিয়ম, ঠিক সে সময়তেই আনিস তাঁর এত বছরের পালিত পর্দার অভ্যেস ত্যাগ করে দিল্লির বিড়লা হাউসে সরাসরি মহাত্মা গান্ধীর কাছে উপস্থিত হন। কান্নায় ভেঙে পড়া আনিস মহাত্মাকে বলেন, তিনি তাঁর পুরো জীবনকেই তাঁর মরহুম স্বামীর মতো দেশ-দশের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চান।
দিল্লি শহর ও তার আশপাশের অঞ্চলগুলো সেসময় আক্ষরিক অর্থেই দোজখের আগুনে জ্বলছে। প্রবল ধর্মীয় দাঙ্গায় অগণিত মানুষের জীবন ও সম্পত্তিহানি, শিশু থেকে বৃদ্ধা; অযুত নারীর ধর্ষণ ও অপহরণ, নবগঠিত পশ্চিম পাকিস্তানে সর্বস্ব ফেলে চলে আসা সর্বহারা রিফিউজির ঢল, উত্তর-মধ্য ভারতের ভিটেমাটি ছেড়ে অজানা আশঙ্কায় 'ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে' পাড়ি দেওয়ার জন্য দিল্লিতে ভিড় করা উদগ্রীব গরিব মুসলিম জনতা, শিবিরে শিবিরে মৃত্যুর অপেক্ষায় শুয়ে থাকা দাঙ্গায় আহত শিশুকিশোর, চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কলেরার মতো আগ্রাসী মহামারী, নিঃস্ব জনতার প্রাণঘাতী অনাহার, উচ্চবর্ণ রিফিউজির 'বসানোর' সরকারি উদ্যোগে জন্য উৎখাত হতে থাকা একের পর এক 'হরিজন'গ্রাম…. সব মিলিয়ে তখন দিল্লির পরিস্থিতি চরম সঙ্কটময়। শহরে আগত রিফিউজিদের জন্য গড়ে সরকার যেমন গড়ে তুলেছিল একের পর এক উদবাস্তু শিবির, তেমনই পাকিস্তানে যেতে আগ্রহী মুসলমান ভারতীয়দের জন্যও দিল্লির পুরানা কেল্লা বা হুমায়ূনের সমাধির কাছে তৈরি হয়েছিল বিশাল সমস্ত কলোনিও।
এইসব শিবিরে দিন গুজরান করা শরণার্থীদের নিত্যদিনের সমস্যা দেখভাল বা যতখানি সম্ভব সমাধা করার জন্য এসময় অনলসভাবে কাজ করে চলেছিলেন জাত-ধর্ম-রাজনৈতিক বিশ্বাস নির্বিশেষে বহু স্বেচ্ছাসেবী। ডাক্তার সুশীলা নায়ার ছিলেন তাঁদেরই একজন। অল্প কিছু ওষুধপত্র, ক'জন গ্রামীন ধাত্রী আর স্বেচ্ছাসেবী নার্সদের একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে পুরানা কেল্লার রিফিউজি ক্যাম্পে আহত আর অসুস্থদের চিকিৎসার লক্ষ্যে প্রায় অসাধ্যসাধন করে চলেছিলেন তিনি। মহাত্মা শোকবিহ্বল আনিসকে ডাক্তার সুশীলার টিমে নিজেকে যুক্ত করে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
আনিস কিদওয়াইয়ের সামাজিক সক্রিয়তার অবিস্মরণীয় পর্ব শুরু হয়েছিল ঠিক সেদিনই। সেদিনই তিনি পুরানা কেল্লায় সুশীলার চিকিৎসা শিবিরে যোগ দেন। সকালে বাড়ির কাজ সেরেই আনিস চলে যেতেন কোন না কোন একটি শিবিরে। ভারতে আগত রিফিউজিদের নিখোঁজ আত্মীয় পরিজনদের নামনথিবদ্ধকরণ, শারীরিক ও মানসিকভাবে আহত মানুষগুলির দৈনন্দিন নানা সমস্যার সমাধান, দরকারি খাদ্য ওষুধ বা কম্বল ইত্যাদি যোগান, বিক্ষুব্ধ রিফিউজিদের কাউন্সেলিং ইত্যাদি হাজারো জরুরি ব্যস্ততায় সন্ধ্যে পর্যন্ত প্রতিটা দিন আনিসের যেন কেটে যেত চোখের নিমেষে। একটানা কয়েকমাস রিফিউজি সমস্যা নিয়ে কাজ করতে করতে ক্রমে আনিস উপলব্ধি করেন তাঁর সঙ্গে সেই প্রথম ক'দিনের সাক্ষাতে মহাত্মার বলা কথাগুলির প্রকৃত অর্থ। আনিস চিরজীবনের মতো বুঝে যান, মানবসেবার কাজে নিজের অস্তিত্বকে পুরোপুরি একবার ডুবিয়ে করে দিতে পারলে জীবনের দেওয়া যে কোন শোকতাপকেই পেরিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হয়!
আনিস এরপর ক্রমেই আরো বেশি করে সুশীলা নায়ার, মৃদুলা সারাভাই, সুভদ্রা জোশীদের নেতৃত্বে গঠিত 'শান্তি দল' নামক স্বেচ্ছাসেবী দলের সঙ্গে আরো প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হতে থাকেন। সুশীলা যেমন চিকিৎসাদানকে বা লড়াকু সুভদ্রা জোশী যেমন দিল্লির পড়শী এলাকায় আগত রিফিউজিদের পুনঃস্থাপন বা উৎখাত হওয়া হরিজনদের ভিটেমাটির অধিকার নিয়ে কাজ করতেন; আনিস তেমন করেই নিজের কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং দেশবদলের সময় ধর্ষিত, আহত, অপহৃত, স্বজন বিচ্ছিন্ন মহিলা,শিশু, কিশোর কিশোরীদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, অপেক্ষাকৃত সুস্থদের নিরাপদ পুনর্বাসন করে মানসিক কাউন্সেলিং, শিক্ষাদান বা আত্মীয়দের খুঁজে পাওয়া গেলে স্বস্থানে/স্বদেশে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ার মতো দুরূহ কাজগুলিকে। আনিস নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছেন, এক্ষেত্রে প্রায় প্রতিপদে স্বাধীন দেশের সরকারি কর্মচারীদের অসহযোগিতা যেমন তাঁদের সঙ্গী ছিল, তেমনই সমস্যার খবর পেলেই জীবদ্দশায় মহাত্মা গান্ধী তো বটেই, জরুরি ভিত্তিতে সেসব সমাধান করে দিতেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী দুজনেই।
উদবাস্তু শিবিরে রোজপ্রতিদিন অনাহারে, ধর্ষণে, বিচ্ছেদে, শোকে, দাঙ্গার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে ধুঁকতে থাকা - মরতে থাকা অজস্র নিষ্পাপ নারী আর শিশুকে দেখে আনিস মনে মনে প্রবলভাবে বিচলিত হয়ে উঠেছিলেন। বৃহত্তর এই সমষ্টিগত যাতনার সামনে কবেই কোথায় যেন হারিয়ে গেছিল তাঁর ব্যক্তিগত শোকবোধ। এই "নতুন পাশবিক ভারত" সম্পর্কে তাঁর প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আনিস দিনলিপি লিখতে শুরু করেন ১৯৪৯ নাগাদ। সেই দিনলিপিতে যেমন রয়েছে পরিবারের ১৯জনকে দাঙ্গায় হারানো এক প্রতিশোধকামী শিখ তরুণের কথা, তেমনই পাই হাসপাতালে আহত আর স্বজন বিচ্ছিন্ন শিশুদের জন্য মিষ্টি আর লজেন্স নিয়ে আসা এক নামহীন ব্যক্তিকে, যাঁকে শিশুরা 'বাবা' বলে জড়িয়ে ধরত। তাঁর আত্মকথায় দেখি এমন এক ধনী মুসলমানকে, যিনি তাঁর বাড়ির চারটি অংশে নিঃশর্তে উদ্বাস্তু হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টানদের থাকতে দিয়েছিলেন, দেখি জাতধর্মনির্বিশেষে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হিন্দু এলাকায় গণহত্যা প্রতিরোধে জীবনপণ করে দেওয়া প্রয়াস। আমরা আনিস কিদওয়াইয়ের আত্মজীবনীগুলিতে এমন অসংখ্য ঘটনার সন্ধান পাই…যা ভারত নামক এক নবগঠিত অস্তিত্বের গভীরতম বিপর্যয়ের দিনেও সামান্য আলোক রেখা হয়ে দেখা দিয়ে যায়!
দিল্লির শরণার্থী শিবিরে ওই ক'বছর কাজ করার সময় আনিস হাজারো উদ্বাস্তু মানুষকে সফলভাবে পুনর্বাসিত হতে সাহায্য করেছিলেন। লখনৌতে স্বজনহীন উদ্বাস্তু হিন্দু ও মুসলমান শিশু কিশোর ও মহিলাদের জন্য গড়ে তুলেছিলেন এক স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে পড়াশুনো, হাতের কাজ ইত্যাদি শিখিয়ে আর্থসামাজিকভাবে তাঁদের স্বনির্ভর করে তোলা হতো। ১৯৫৬-১৯৬৮ পর্যন্ত রাজ্যসভার অন্যতম প্রথম মহিলা সদস্য হিসেবেও আনিস কিদওয়াই রিফিউজি মেয়েদের পুনর্বাসন, মেয়েদের শ্লীলতাহানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় আনা বিষয়ক নারী অধিকার সংক্রান্ত বেশ কিছু বিল তৈরির ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন।
সেই ছোটবেলা থেকে বাড়ির সবার চোখ এড়িয়ে লুকিয়ে গল্প কবিতা লেখা আনিস স্বাধীনতা পরবর্তী দু'বছরে প্রতিটি দিনের বেশিরভাগ সময় একদম সামনে থেকে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেছিলেন দেশভাগ তথা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার হিংস্রতম পরিণতি। ১৯৪৯ নাগাদ তিনি তাঁর দৈনন্দিন বিবিধ অভিজ্ঞতাগুলিকে উর্দুতে দিনলিপির আকারে লিখতে শুরু করেন। মর্মস্পর্শী অথচ সাবলীল ভাষায় এই দিনলিপি লেখার অভ্যেসই এর পরের দশকগুলোতে তাঁকে এক সংবেদনশীল লেখিকায় রূপান্তর করেছিল। ১৯৭৪-এ তাঁর এই আত্মজৈবনিক উর্দু দিনলিপিটি 'আজাদী কি ছাঁও মে' ( ইংরেজি অনুবাদে 'ইন ফ্রিডম'স শেড') শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও ' নজরে খুশ গুজরে', 'অব জিনকে দেখনে কো', 'জুল্ম', 'চার রুখ' প্রভৃতি বইতে কখনো নিবন্ধ, কখনো বা গল্প, কবিতা, আত্মকথনের রূপে তিনি ধরে ধরেছিলেন দেশের ইতিহাসের এক কঠিনতম সময়ের প্রেক্ষিতে তাঁর দীর্ঘ সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিগত উপলব্ধিগুলিকে। ব্যতিক্রমী এই বইগুলির জন্য তিনি নানা পুরস্কারে সম্মানিতও হন শেষজীবনে। ১৯৪৭ এ উদ্বাস্তু ও অপহৃত নারী কিশোরী ও শিশুদের উদ্ধারকাজকে কেন্দ্র করে আনিস কিদওয়াই যে সুদীর্ঘ সাড়ে তিন দশক ব্যাপী সামাজিক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন , ১৯৮২ সালে তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেই চিরসক্রিয়তার সমাপন ঘটেছিল।
দেশভাগের ইতিহাস বলতে বহুকাল আমরা কেবলই কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, বা জনসঙ্ঘের মতো দলগুলোর স্বার্থন্বেষী নেতাদের রাজনৈতিক দরকষাকষির বিবরণ জেনে এসেছি। নতুবা আমরা পড়েছি সাদাত হাসান মান্টো, অমৃতা প্রীতম, খুশবন্ত সিংহদের বাস্তবমুখী উপাখ্যান। কিন্তু আনিস কিদওয়াইয়ের দিনলিপিতে সেই সমস্ত দুঃস্বপ্নের দিনগুলির সমস্ত বিভীষিকা নিয়ে উঠে আসেন বিভাজিত মাটির অগণিত ভয়ার্ত উদ্বাস্তু নামহীন জনতা। উঠে আসেন অজস্র ধর্ষিতা ও অপহৃতা মহিলা, মৃতপ্রায় আহত অনাথ শিশুদের দল, হাজির হন ১৮ বছরের এক অনাথ সুভদ্রা তরুণ যিনি তাঁর দুই বোনকে দু'কাঁধে উঠিয়ে নদী পার করে ইন্ডিয়ায় এসেছিলেন আর দিল্লির শরণার্থী শিবিরের মুসলিমদের সেবা করেছিলেন দিনরাত এক করে, হাজির হন অপর সম্প্রদায়ের পরিবারকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করা ছাপোষা হিন্দু বা মুসলমান দেহাতি পরিবার। আনিসের কলমে উপস্থিত হন দাঙ্গাবিধ্বস্ত শহরে গাঁয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা আর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাওয়া শান্তিদলের অনাম্নী একদল নার্স কিংবা জামিয়া সমেত নানা স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধর্মের ছাত্রযুবরা।
ইতিহাস এঁদের কারো নাম সাকিন লিখে রাখেনি কোথাও। ইতিহাস কেবল লিখে রেখেছে, অভাবনীয় সব বিপর্যয়কে অতিক্রম করে এই মানুষের সারভাইভালের কাহিনী। আনিস কিদওয়াইয়ের জীবন আর লেখার ছত্রে ছত্রেও উঠে এসেছে আম জনতার সেই ক্লান্ত অথচ অপরাজেয় জীবন আর যাপনের কথাই। ব্যক্তিগত শোক থেকে কর্মের বিশ্বলোকে তাঁর সফর, অযুত প্রতিকূলতা স্বত্ত্বেও শোকার্ত উদ্বাস্তু জনতার নতুন করে বাঁচার লড়াই এবং শেষ বিচারে মানুষেরই পাশবিকতাকে হারিয়ে মনুষ্যত্ববোধের জয়; এই সমস্ত কিছুর নির্যাসকে আনিস কিদওয়াই ধরে রেখেছিলেন 'আজাদী কি ছাঁও মে'র শেষদিকের একটি অধ্যায়ের শিরোনামে। এই লেখার শেষে আর পাঠকের মনে রয়ে থাক তাঁর লেখা সেই আশ্চর্য অমোঘ বাক্যটিই; ''ইনসান মর নহি সকতা "....!!
তথ্য সূত্র : . ১) 'ইন ফ্রিডম'স শেড' : আনিস কিদওয়াই ২) 'দ্য ডাস্ট অফ ক্যারাভ্যান : আনিস কিদওয়াই ৩) 'ইন ফ্রিডম'স শেড' বইটি সম্পর্কে আয়েশা কিদওয়াইয়ের ইউটিউব সাক্ষাৎকার পর্ব ১ এর লিঙ্ক ৪) পর্ব ২ এর লিঙ্ক
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
কয়েক বছর আগে আমিও আজাদি কি ছাঁও মেঁ নিয়ে দু চারকথা লিখেছিলাম গুরুতে। কদিন আগে দ্য ডাস্ট অব ক্যারাভানস পড়ে শেষ করলাম। আনিস সত্যিই এক অবিস্মরণীয় চরিত্র। মৃদুলা সারাভাই সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু পাই নি খুঁজে। ওঁর সম্পর্কে আরো জানার ইচ্ছে হয়।
আনিসের মতই অঞ্চল মালহোত্রার বই পড়েও খুব অভিভুত হয়েছিলাম।
ধন্যবাদ। হ্যাঁ আমি আপনার লেখার কথাই শুরুতে মেনশন করেছি। এই বইগুলো যেমন মুগ্ধ করে, তেমন তাড়িয়েও বেড়ায়। সহজে নিস্তার পাওয়া যায় না, এ ধরনের যে কোন বই থেকেই।
বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে,
মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা,
কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
আমাদের কথা
আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের
কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি
জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
বুলবুলভাজা
এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ।
দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও
লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
হরিদাস পালেরা
এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে
পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান
নিজের চোখে...... আরও ...
টইপত্তর
নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান।
এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর।
... আরও ...
ভাটিয়া৯
যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই,
সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক
আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
টইপত্তর, ভাটিয়া৯, হরিদাস পাল(ব্লগ) এবং খেরোর খাতার লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব, গুরুচণ্ডা৯র কোন দায়িত্ব নেই। | ♦ :
পঠিত সংখ্যাটি ১৩ই জানুয়ারি ২০২০ থেকে, লেখাটি যদি তার আগে লেখা হয়ে থাকে তাহলে এই সংখ্যাটি সঠিক পরিমাপ নয়। এই বিভ্রান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।
অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি।
যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।
মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি
বার পঠিত
সকলকে জানান
উপরে যে কোনো বোতাম টিপে পরিচিতদের সঙ্গে ভাগ করে নিন
গুরুচন্ডা৯ বার্তা
গুরুতে নতুন?
এত নামধাম দেখে গুলিয়ে যাচ্ছে? আসলে আপনি এতদিন ইংরিজিতে সামাজিক মাধ্যম দেখে এসেছেন। এবার টুক করে বাংলায়ও সড়গড় হয়ে নিন। কটা তো মাত্র নাম।
গুরুর বিভাগ সমূহ, যা মাথার উপরে অথবা বাঁদিকের ভোজনতালিকায় পাবেনঃ
হরিদাসের বুলবুলভাজা : গুরুর সম্পাদিত বিভাগ। টাটকা তাজা হাতেগরম প্রবন্ধ, লেখালিখি, সম্ভব ও অসম্ভব সকল বিষয় এবং বস্তু নিয়ে। এর ভিতরে আছে অনেক কিছু। তার মধ্যে কয়েকটি বিভাগ নিচে।
শনিবারের বারবেলা : চিত্ররূপ ও অক্ষরে বাঙ্ময় কিছু ধারাবাহিক, যাদের টানে আপনাকে চলে আসতে হবে গুরুর পাতায়, ঠিক শনিবারের বারবেলায়।
রবিবারের পড়াবই : পড়া বই নিয়ে কাটাছেঁড়া সমালোচনা, পাঠপ্রতিক্রিয়া, খবরাখবর, বই নিয়ে হইচই,বই আমরা পড়াবই।
বুধবারের সিরিয়াস৯ : নির্দিষ্ট বিষয় ধরে সাপ্তাহিক বিভাগ। ততটা সিরিয়াসও নয় বলে শেষে রয়ে গেছে ৯।
কূটকচা৯ : গুরু কিন্তু গম্ভীর নয়, তাই গুরুগম্ভীর বিষয়াশয় নিয়ে ইয়ার্কি ফুক্কুড়ি ভরা লেখাপত্তর নিয়েই যতরাজ্যের কূটকচা৯। কবে কখন বেরোয় তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।
হরিদাস পাল : চলতি কথায় যাদের বলে ব্লগার, আমরা বলি হরিদাস পাল। অসম্পাদিত ব্লগের লেখালিখি।
খেরোর খাতা : গুরুর সমস্ত ব্যবহারকারী, হরিদাস পাল দের নিজের দেয়াল। আঁকিবুঁকি, লেখালিখির জায়গা।
টইপত্তর : বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। বাংলায় যাকে বলে মেসেজবোর্ড।
ভাটিয়া৯ : নিখাদ ভাট। নিষ্পাপ ও নিখাদ গলা ছাড়ার জায়গা। কথার পিঠে কথা চালাচালির জায়গা। সুতো খুঁজে পাওয়ার দায়িত্ব, যিনি যাচ্ছেন তাঁর। কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।
লগিন করে থাকলে ডানদিকের ভোজনতালিকায় যা পাবেনঃ
আমার গুরুঃ আপনার নিজস্ব গুরুর পাতা। কোথায় কী ঘটছে, কে কী লিখছে, তার মোটামুটি বিবরণ পেয়ে যাবেন এখানেই।
খাতা বা খেরোর খাতাঃ আপনার নিজস্ব খেরোর খাতা। আঁকিবুকি ও লেখালিখির জায়গা।
এটা-সেটাঃ এদিক সেদিক যা মন্তব্য করেছেন, সেসব গুরুতে হারিয়ে যায়না। সব পাবেন এই পাতায়।
গ্রাহকরাঃ আপনার গ্রাহক তালিকা। আপনি লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকরা পাবেন নোটিফিকেশন।
নোটিঃ আপনার নোটিফিকেশন পাবার জায়গা। আপনাকে কেউ উল্লেখ করুক, আপনি যাদের গ্রাহক, তাঁরা কিছু লিখুন, বা উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটুক, জলদি পেয়ে যাবেন নোটিফিকেশন।
বুকমার্কঃ আপনার জমিয়ে রাখা লেখা। যা আপনি ফিরে এসে বারবার পড়বেন।
প্রিয় লেখকঃ আপনি যাদের গ্রাহক হয়েছেন, তাদের তালিকা।