গেলো কয়েকবছর ধরেই “দাঙ্গা” পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে বারংবার। তবে তা পার্কিং লটে গাড়ি রাখা বড়লোক বাবু'দের অঞ্চলগুলি'তে নয়। বেশির ভাগটাই হচ্ছে –শ্রমিক অঞ্চল, নিম্ন মধ্যবিত্ত-ক্ষুদ্র ব্যবসাদার’দের এলাকা গুলিতে। সেখানেই মূলত সৃষ্টি হচ্ছে যত ধরনের ধর্ম-জাত’ময় কূটকচালি থেকে শুরু করে দাঙ্গাবাজি। ধসে যাচ্ছে সব। দীর্ঘদিনের শ্রম দিয়ে গড়ে তোলা শ্রমজীবী মানুষের সম্পদগুলি। জ্বলছে দোকান-পাট, পুড়ছে একের পর এক ঘর বাড়ি। শেষে গিয়ে দুই দিক দিয়ে সব দায় পড়ছে সেখানকার সংখ্যালঘু মানুষ গুলোর উপর; ক্ষতিও হয়ে চলছে তাঁদের বেশি আবার সমাজে বদনামটাও বেশি। কেউ বলছে এই দাঙ্গার পরিবেশ তৈরির পেছনে দায় তাঁদের। আবার কেউ বলছে, না-না এই দাঙ্গা’য় সবচেয়ে বেশি সাফারার ওরাই! কিন্তু এর মূল কারণ গুলি ঠিক কী কী? এসব যেন কেউ কেউ ভয় পেয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বলতে চাইছে না আবার কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতও মূল কারণ গুলিকে ধামাচাপা দিতে চাইছে। হয়তো তা কেবল কিছু মুষ্টিমেয় বড়লোকদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থেই। সত্যি তো এই পরিবেশ ওই অঞ্চল গুলিতে সৃষ্টি হওয়ার কারণ তবে কী? কোন বেহায়া চাইতে পারে রুজিরুটির বারোটা বাজিয়ে দাঙ্গার পর পেটে গামছা বেঁধে গোটা এক থেকে তিন মাস বাড়িতে বসে থাকি!
আমি লক্ষ্য করে দেখেছি – যে অঞ্চল গুলিতে দাঙ্গা হয়েছে কিংবা দাঙ্গার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেখানেই রয়েছে ছোট-বড় কারখানা। যেগুলি আগে বন্ধ হয়েছে। সাথে সাথে গুটিয়েছে সেখানকার আশেপাশের ক্ষুদ্র পুঁজির দোকান-পাট গুলি। আইসিইউ তে গিয়ে কপাল ঠুকেছে সেই অঞ্চলের অর্থনীতি, সাধারণ মানুষের পকেট গুলি তারপর দীর্ঘদিন জটলা পাকিয়ে বেধেছে সেখানে “দাঙ্গা”। যে দাঙ্গার পেছনে মুখ্য ভূমিকায় কাজ করেনি নবমী, দশমী কিংবা ষষ্ঠী; কাজ করেছে কেবলি ভুখা পেটের রাগ-ক্ষোভ এবং একরাশ হতাশা ও শাসকশ্রেণীর দেখানো ভুয়ো লোভ প্রতিশ্রুতি মাফিক জন্মানো প্রত্যাশা। তারপর বেধেছে দাঙ্গা। যেমন – ভাটপাড়া। সেখানেও দাঙ্গা বেধেছে কখন? যখন পাশাপাশি তিনটি জুটমিলের গেটে তালা ঝুলিয়েছে মালিকশ্রেণী। রিলায়েন্স, কাঁকিনাড়া, জগদ্দল -জুটমিল। এরফলে পকেট ফাঁকা হয়েছে কয়েকশো শ্রমিকের। পথে বসেছে তাঁদের পরিবার গুলি। তারপর তাঁরা কিছু অংশ গ্রামে ফিরেছে। কিছু অংশ আঞ্চলিক শাসকের নেতা ধরে অন্য কাজ খুঁজেছে এবং আরো কিছু অংশ মদ-গাঁজা সহ যাবতীয় অন্ধকারের পথ বেছে নিয়ে পুরোপুরি ধর্মের কোলে গিয়ে পিঠ ঠেকিয়েছে। কারণ তাঁদের মনের ভেতরে তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিনের দানা বাধা এক তীব্র হতাশা ও তার থেকে ধীরে ধীরে আগত জমাট বাঁধা রাগ-ক্ষোভ-হিংসা। একমাত্র যার কেন্দ্র স্থায়ী রুজীরুটির অভাব। যারফলে মরে গেছে সেখানকার আঞ্চলিক অর্থনীতি। এঁদের পরিবারের সন্তানেরাও অভাবের স্বীকার হয়ে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়ে – নেশা-পাতি, চুরি-ডাকাতি করে আঞ্চলিক নেতার খাস গুন্ডায় পরিণত হয়েছে। তাঁদের দিয়েই নেতা-গণ একসময় নিজেদের যাবতীয় কাজ হাসিল করেছে। যখন নেতাদের কাছে এঁদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে তখন তাঁদের মনে রাগ-ক্রোধ-হিংসার মাত্রা বেড়েছে আর তখন তাঁদের কেই আবার আইনি জটিলতায় ফাঁসিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে – শাসকশ্রেণী।
এই দাঙ্গায় অংশ নেয়নি কখনোই আঞ্চলিক শাসকের বাড়ির ছেলে। অংশ নিয়েছে কেবল শ্রমিক বাড়ির সন্তান এবং খেটেখাওয়া নিম্নবিত্ত বাড়ির মানুষ জনেরা(জাত-ধর্ম নির্বিশেষে)। কারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে যাদের বন্ধ হয়ে গেছে আশেপাশের ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসাগুলি। এ পথে যাওয়ার কারণ -এ ছাড়া তাঁদের হাতে আর কোন বিকল্প উপায় নেই। বন্ধ রুজীরুটি’র জায়গা। তারা খাবে কী? আর নেতার খাস লোক হতে পারলে কিংবা কমসে কম চ্যালা চামুণ্ডা হলেও রয়েছে শুধু খাওয়া নয়; সাথে প্রতিদিন এলাহী মদ-মাংস সহ দামী বাইক, মোবাইল ফোন ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর তো রয়েইছে নেতা-মন্ত্রীর গা-জোয়ারি’র, ক্ষমতার আস্ফালনের সদ্ব্যবহার করে এরিয়া কাঁপানোর নিয়ম-নীতি। সুতরাং আর কোন টেনশন নেই। জীবন এগোবে মস্তি ভরেই, অন্তত কয়েকটি দিন। টান নেই আর পেটের। শুনতে হবেনা আর ঘরে মা-বাবা কিংবা বিয়ে করা বউ'য়ের প্যাচপ্যাচানি। উল্টে তারাও ভয়ে থাকবে, ভয়ে হয়তো শ্রদ্ধাও করবে আঞ্চলিক বড় নেতা কিংবা মন্ত্রীর খাস লোক “আমার স্বামী কিংবা পুত্র” এই ভেবেই। অর্থাৎ তাহলে এই দাঙ্গাবাজ আঞ্চলিক নেতা-মন্ত্রীদের উত্থানের মূল কারণ হলো সেখানকার সংখ্যালঘু শ্রমজীবী মানুষের রোজগার হারানোর রাস্তাগুলি।
এরপর তো রয়েছেই কারখানার মালিকশ্রেণীর স্বার্থ; যারা আঞ্চলিক নেতাদের সাথে আঁটঘাট কষেই ভেঙে দেয় শ্রমিকশ্রেণীর দাবিদাওয়ার আন্দোলনগুলি। এই দাঙ্গার পর ফাঁকা হয়ে যায় এক কামরার ঘর কে ঘর সাজানো বস্তিগুলি। ভয়ে-আতঙ্কে সাধারণ মানুষেরা পালায় আত্মীয় বাড়ি কিংবা সব্বাই ফেরত যায় দূরের কোন এক গ্রামে। আর যাদের ক্ষমতায় কুলায় না যাওয়ার তারা থেকে যায় চ্যালা হয়ে। এবার চলে যাওয়া মানুষ গুলোর থাকবার জায়গা দখল হয় ধীরে ধীরে আঞ্চলিক নেতার চ্যালা’দের হাত হয়ে শেষে মালিকশ্রেণীর হাতেই। আর নয়তো গড়ে উঠে সেখানে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক শাসক তথা নেতৃত্বের মোচ্ছব কেন্দ্র। এরপর যখন বছর খানেক বাদে কারখানা গুলি খোলে তখন আর সেখানে থাকেনা কোন পিএফ-গ্র্যাচুইটি ভুক্ত শ্রমিক। ফলে কারখানায় বাড়তে থাকে স্বল্পমূল্যে খাটা ‘ভাউচার' শ্রমিকের সংখ্যা। যাঁদের মাহিনাপত্তর বাকিদের(স্থায়ী-অস্থায়ী) থেকে অনেক কম আবার এঁদের প্রতি মালিকের কোন দায়-দায়িত্বও নেই। এরা ভারী ভারী মেশিন টানতে টানতে বিপদ ঘটে মারা গেলে মালিকের হয় বেশ ভালো; দিতে হয়না আর সেদিনের কাজের টাকা। ফলতঃ লাভ করে কাঁড়িকাঁড়ি মুনাফা। সুতরাং এই অঞ্চল গুলিতে ঘটতে থাকা দাঙ্গার ফলে বৃহত্তর ভাবে লাভবান হয় মালিকশ্রেণী। তাছাড়াও, এই কারখানার মালিক’দের ব্যবসার কোন স্থায়ীত্ব নেই। তারা সেদিকেই ঝোঁকে যখন যেটায় ফাটকা মুনাফা চান্স বেশি। এদের নজর বর্তমানে শ্রমিকের থাকবার জায়গায়-জমির উপরেই। সেগুলো দখল করে এরা সেখানে বানাতে চায় – বড় বড় মাল্টিপ্লেক্স, শপিংমল, আবাসন-রিসোর্ট। এ প্রক্রিয়া গেলো বহু বছর যাবৎ এই অঞ্চল গুলিতে চলছেই। বহু জায়গায় বহু কারখানা ভেঙেই গড়ে উঠেছে এগুলি। এমন অভাগার দেশ আর নেই -যেখানে শাসকশ্রেণী তার দেশের সাধারণ জনগণের পকেট মেরে ধর্ম-জাত এর নেশায় মাতিয়ে ভুলিয়ে দেয় তাঁর মূল সমস্যাগুলি। যেখানে স্থায়ী সংগঠিত ক্ষেত্রের শিল্প ভেঙে গড়ে উঠে ফুটানির ফ্ল্যাট বাড়ি। আর অফুরন্ত উন্নয়নের ফাউ-ফাউ বুলি।
ঠিক এই একই চিত্র হাওড়ার; শিবপুর থানা থেকে শুরু করে হাওড়া জুটমিল, অলোকা সিনেমা, কাজীপাড়া, প্রভৃতি যে যে অঞ্চল জুড়েই দাঙ্গার পরিবেশ গত কয়েকবছর ধরে ক্ষণে ক্ষণে তৈরি হচ্ছে। কখনো তা শিব কোঁদনের দিনে আবার কখনো তা রাম-নাচনের দিনে। গত বছরও এই অঞ্চল গুলিতে এমন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। এবছর জ্বললো অঞ্চল গুলি। এর কারণ সেই একই! প্রায় দুই বছর হয়ে গেলো বন্ধ হাওড়া জুটমিল। ছোট ছোট কারখানা গুলি এই খোলা তো এই বন্ধের দৌড় লেগেই আছে। তাছাড়াও বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। অথচ সঠিক রোজগার পাতি নেই। ফলত: এইরকম বেকায়দায় দৈনন্দিন খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই দায়। তাই পেটের টানে সেখানকার মানুষের উগ্রতাও বেড়েছে চড়চড় করে এবং সাথে সাথে বেড়েছে বিকল্প রোজগারের পথের খোঁজ ও ধর্মের প্রতি মনোযোগ। যা কেবলই রুজিরুটি'র অভাবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার ফলেই। ফলতঃ ফের যা হওয়ার তাই হয়েছে আর কী! সবথেকে মজার বিষয় – কারখানা বন্ধ হলেই শ্রমিক’রা যখন কারখানা খোলার দাবিতে উত্তেজিত থাকে তখন এই অঞ্চলে খুল্লাম খুল্লা উদ্ভব হয় দুই গোষ্ঠীর; এক, উগ্র ধর্ম-বাজ। আরেক, বাঙালি-বিহারী ক্যাচাল পাকানো ছুটকো’দের। একদল বোঝায় মুসলমান’রা সব শেষ করে দিচ্ছে আরেকদল বোঝায় ‘বিহারী শ্রমিক‘ হটলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। একদল গরীব মুসলমান মেরে ভয় ছড়ায়; আরেকদল গরীব বিহারী ফুচকা ওয়ালা কে চর মেরে বাঙালির নেতা হয়ে উঠতে চায়। আর পাছে দূরে সরে যেতে থাকে শ্রমিকের রুজিরুটি তথা পেট চালানোর মূল প্রশ্ন গুলি। তারপর জাত-ধর্ম ধরে বাইরে থেকে দীর্ঘদিনের হিংসা-বিদ্বেষের প্রয়োগ ঘটে কোন এক বিশেষ নাচোন-কোঁদনের দিনেই। যেদিন থাকে সব্বাই ফুল মুডে। আর যেখানে যাদের সংখ্যা বেশি, জোর বেশি তারা সেদিন দাপাতে থাকে সেখানে শাসকশ্রেণীর আঞ্চলিক নেতা-মন্ত্রীদের ছায়াতলে দাঁড়িয়ে।
অতএব মানুষের রুজিরুটি তথা মৌলিক চাহিদা গুলি দিন দিন তলানিতে ঠেকবার –সহজ সরল সত্যগুলিকে আড়াল করতেই ব্যবহার করা হয় ধর্ম-জাতের নেশা’কে। আর তার সাথে ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে'র মতন ভক্ষম মদ-গাঁজা, জুয়ার নেশা -লুম্পেনসি সংস্কৃতির উপদ্রব বাড়ছে সাম্রাজ্যবাদীদের রাজনীতি-অর্থনীতি পালন করা নেতা- মন্ত্রীদের হাত ধরে। যা দিয়ে মূলত সাধারণত মাতিয়ে রেখে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে মূল প্রশ্ন গুলিকে। গতকালের নির্মম ঘটনার পরে কেতাবি পণ্ডিতগণ, নবীন ও পুরাতন –বাংলাবাদী’দের মুখ দিয়ে শোনা যাচ্ছে রামনবমী সাথে দুর্গাপুজোকে তুলনা করতে। তারা বলতে চাইছে দুর্গা পুজো ভালো তাতে হয় না এমন; আর তাই গুড়িয়ে দেওয়া উচিৎ সেখানকার বাকি জাতির মানুষ'দের। কিন্তু তারা বুঝতে অক্ষম দুর্গাপুজো হয় ও সেই উৎসবের উন্মাদনা থাকে মূলত কলকাতার শহুরে মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত ও বড়লোকদের অংশে কিংবা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে। যেখানে এইসব হলে, গোটা মাস খানেক ব্যবসাপাতি বন্ধ হয়ে পড়ে থাকলে সব থেকে বড় ক্ষতি হবে শাসকশ্রেণীর। ক্ষতি হবে বৃহৎ পুঁজির। ফ্ল্যাট-গাড়ি কেনবার লোক কমে যাবে। প্রতি মাসে সেলের শতাংশ বাড়িয়েও বিক্রি হবে না একটিও ফ্ল্যাট-গাড়ি। তাই সেখানে এসব হওয়ার প্রশ্ন তখনই আসবে যখন ওই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও পুরোপুরি তলানিতে ঠেকবে। একে একে কলকাতার ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসার জায়গা গুলি বন্ধ হয়ে যেতে থাকবে। অধিকাংশ মানুষ কাজ হারিয়ে পথে বসবে, কেবল তখনই(যদি না শ্রেণী লড়াই গড়ে উঠে)। আর তখন দুর্গা পুজোর পাঁচদিনেই অচল অবস্থার সৃষ্টি হবে। আর তাছাড়াও যে দেব-দেবী এতো বছরেও দেশের এতো পুজো আছড়ার পরেও দেশের সংখ্যাগুরু শ্রমজীবী মানুষ’কে রুটি-জমি-শান্তি'র মতন মৌলিক অধিকারগুলি দিতে ব্যর্থ তখন এঁরা সব্বাই মিলেই সমাজের এই ঝুট-ঝামেলা-অশান্তির জন্য দায়ী। দায়ী নয় কী? আসলে রাম -বর্তমানে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার যারা বসে আছে ক্ষমতার চূড়ায়। বিশ্বের উঠতি সাম্রাজ্যবাদী'দের এদেশীয় প্রধান ম্যানেজার গোষ্ঠী। যাদের রয়েছে একটি হিন্দুত্ববাদী -কট্টরপন্থী আদর্শ, এক সুদীর্ঘ খুনোখুনির ঐতিহাসিক রাজনীতি। তাই রামের নামে এতো বদনাম। যা অযথাই বাকিদের থেকে আমাদের অজান্তেই হয়ে উঠে বহুগুণে বেশি। এই দেব-দেবী কুলের বাকিরাও আদেও ‘ভালো' কী? স্বয়ং -দেবী দুর্গা’র মূর্তিটি একটি জ্বলন্ত ব্রাহ্মণ্যবাদী হিংসার প্রতীক। যা ছোট থেকে আমাদের পাঠ দেয় একটি জাতি’কে হত্যা করতে হয় কীভাবে। আসলে এ-বাংলার ইতিহাস আলাদা। রামের উত্তরভারতের থেকে। তাই কলা-কৌশল আলাদা রামরাজ্যের বাপেদের। আর দেবী দুর্গার বাঙলার -বাঙালী জাতীয়তবাদী’দের। কিন্তু হিংসা বরাবার ক্ষেত্রেই সমান ভাবে আছে বৈকি। যেহেতু এখানের ইতিহাস আলাদা সেহেতু এখানে জটলা পাকবে কিংবা পাকচ্ছে এক অন্য রকম বিচ্ছিরি ভাবে। ইতিমধ্যে দুর্গা-অসুর থেকে আজকের পরিস্থিতিতে বাঙালি-বিহারী’তে পৌঁছিয়েছে। যার খুবই ভয়ংকর পরিণতি হতে পারে ভবিষ্যতে। এখনি লোকাল ট্রেনে কয়েকশো মধ্যবিত্ত 'শিক্ষিত' বাঙালির দাদাগিরি দেখা যায় কোন ক্রমে একজন বিহারী পেয়ে গেলে। যা দিল্লির বিশেষ দলটির লিঞ্চ'রাজনীতি সূত্রই তুলে ধরে আমাদের চোখের সামনে। মনে করিয়ে দেয় সেই বিভৎস-বিভৎস ঘটনাগুলি। আর আমাদের রাজ্যের শাসকদল এগুলিকে আরো খুব সুন্দর ভাবে রাজনীতির রঙিন চাদরে মুড়িয়ে ব্যবহার করে চাগিয়ে তোলে। হিন্দুত্ববাদী'দের দেখানো উল্টো দিকের পথ ধরে। যদি না এখনি আমরা এইরকম ভুয়ো বিদ্বেষগুলোকে নিজেদের মন থেকে কাচি করি তাহলে আগামীতে আরো ভয়ানক জটিল দ্বন্দ্ব ও ধন্ধ জন্ম নেবে আমাদের মনে। সর্বপরি গোটা সমাজের বুকে। বলাই বাহুল্য গতকালের ঘটনা কেউ একদল ইচ্ছাকৃত ঠেলে দিতে চাইছে এই দ্বন্দ্বে। যাতে দিল্লির ক্ষমতার চূড়ায় থাকা খেঁকশিয়াল’দের উত্তরভারতীয় রাজনীতির নাম মাত্র বিরোধিতা করে আড়াল করে দেওয়া যায় দাঙ্গায় বিধ্বস্ত অঞ্চলের মানুষ গুলির মুখ্য সমস্যা গুলি। আমাদের বোঝা উচিৎ - অরাজকতা ভরা সংস্কৃতিক পরিস্থিতি তৈরির পেছনে সবসময়ই শাসকশ্রেণীর রাজনীতি-অর্থনীতি কারসাজি থাকে। জড়িয়ে থাকে আঞ্চলিক নেতা-মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত মতলুবি স্বার্থগুলি।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।