এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • থাপ্পড়

    Rumjhum Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১৭ মে ২০২২ | ১২২২ বার পঠিত
  •  
     
    থাপ্পড় 

    ভুনিয়া রাগে উত্তেজনায় পছিম হাওয়ায় যেমন 
    গাছের পাতা  কাঁপে তেমন থর থরিয়ে কাঁপতে
     লাগল। হাতের দা খানা ছুঁড়ে ফেলে  দিলো 
    দরিয়ার মাঝ বরাবর। ঝপাৎ আওয়াজ করে 
    সেটা অদৃশ্য হল জলের গভীরে। পিছন ফিরে 
    বাঁশ ঝাড়ের দিকে একবারতাকিয়ে স্বস্তির 
    নি:শ্বাস ফেলল সে। কার্ত্তিকের মুখটা মনে 
    পড়ে যাচ্ছে। ইস শেষে কিনা ম্লেচ্ছর হাতে......
    বাঁশ বাগানের মাথার ওপর থালার মতো 
    গোল চাঁদখানা শুধু নীরব সাক্ষী হয়ে 
    রইল আজকের ঘটনার। নীচু জাত 
    বলে চিরকাল বাবুদের অবহেলা সইতে 
    সইতে মনের ভেতর কখন জানি এত 
    বড় একটা আগুনের পাহাড় তৈরি 
    হয়েছিল। ভুনিয়া নিজেই কি টের 
    পেয়েছিল এতকাল? আজ সেই পাহাড়ের 
    বুক চিরে বেরিয়ে এল তরল লাভা,
     চারপাশটা যেন পুড়িয়ে খাক করে দিতে চাইল।
    ঘটনার সূত্রপাত দু'দিন আগে। 
    সামনে ভোট। পার্টির লোকেরা এই সময়টায় 
    ওদের মতো ম্লেচ্ছদের নিয়ে খুব মাতামাতি 
    করতে থাকে। কিন্তু ভুনিয়া জানে ওসব 
    লোক দেখানো আদিখেত্যা। তবু পরখ 
    করে দেখতে সাধ যায় মাঝে মাঝে। সেদিনও হয়েছিল।
    পার্টির অফিসে ডাক পড়েছিল ওর। 
    দিল্লি থেকে মন্ত্রী আসবে। তিনি নাকি 
    ম্লেচ্ছ পাড়ায় গিয়ে ওদের বাড়িতে বসে পাত
     পেড়ে ভাতখাবেন। ভুনিয়াকে ডেকেছিল সে 
    কথাটা বলবে বলে। ভুনিয়া অফিস ঘরে ঢুকে এক কোণে দাঁড়িয়ে শুনছিল সব। হঠাৎ কি খেয়ালহতে 
    জাতে ওঠার আনন্দে নাকি পরখ করার 
    ইচ্ছাতে পাশের একটা খালি চেয়ার টেনে 
    নিয়ে বসেছিল তাতে। ব্যস যেই না বসা 
    কার্ত্তিক বলে যে ছেলেটা পার্টির বড়ো মুনীশ 
    সে হঠাৎ সটান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে 
    কলার ধরে টেনে তুলল ভুনিয়াকে। সপাটে 
    একটা থাপ্পড় মারল ভুনিয়ার গালে। 
    ছোটলোক হয়ে চেয়ারে বসবি? এত সাহস! 
    তারপর এলোপাথাড়ি চড় থাপ্পড় কতক্ষণ 
    জানেনা  , মনে নেই ভুনিয়ার। টলতে টলতে 
    ঘরে ফিরেছিল ও। ঠোঁটের কোণে লেগে 
    থাকা রক্তের দাগ মুছিয়ে দিতে দিতে  মা-ও 
    একটা থাপ্পড় কষিয়েছিল গালে। টলটলে 
    জলভরা চোখে বলেছিল, "বেশরম তুই কি 
    ভুলঞ গেইছিলি আমরা হলাম  গিয়ে অচ্ছুৎ! 
    আমাদের জায়গাটো হইল গিইয়া ওই ভাগাড়েঞ!"
    ভুনিয়া ভোলে নি। ওই থাপ্পড় ভুনিয়া ভুলতেই 
    পারল না।দিনে রাতে চোখ বন্ধ করলেই সেই 
    দৃশ্য ভেসে ওঠে। কানে ভেসে আসে , 
    "ছোটলোকের আস্পদ্দা দ্যাখ.... 
    শালাটো চেয়ারেঞ বসবঞক...
    "ছোটলোক হয়ে বাঁচতে বাঁচতে 
    ভুনিয়া ভুলে গেছিল সেও কোপ 
    বসাতে পারে। 
    এক কোপ। 

    থাপ্পড় 

    ভূত ও ভবিষ্যৎ

    বেলা তিনটের নাগাদ মধু এসে খবরটা 
    দিল। খবরটা শুনে  আমোদ পোমোটারের 
    মনে আমোদ আর ধরে না। এতদিনে 
    তা'লে বুড়ি টাঁসলো। উফ কবে থেকে চোখ 
    দিয়ে বসে আছে বাড়িটা হাতাবে বলে।
     বুড়ি শালা কিছুতেই টপকাতে চায় না। 
    আজ তিনবছর ধরে এই যায় সেই যায় 
    হচ্ছে তবু যেতে যেতেও বুড়ি আবার নেচে 
    ওঠে। এইটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল 
    মানে বেঁচে ওঠে আরকি!
    বুড়ির তিন কূলে কেউ নেই। এক ছেলে ছিল
     সেও আজ বছর পাঁচেক হল গাড়ির ধাক্কায় 
    পটলডাঙার টিকিট কেটেছে। বুড়ো গেছে 
    তারও আগে। বুড়ির পাসপোর্ট রেডি কিন্তু 
    পটলডাঙ্গার ভিসা আর হচ্ছিল না। যাক 
    আর চিন্তা নেই। এখন শুধু ধৈর্য ধরে 
    ক'টাদিন থাকতে পারলে ব্যাস কেল্লা 
    ফতে। মানে তিন তলা কেল্লাখান হাতে।
     বুড়িকে তো আমোদ বোঝাবার কম চেষ্টা 
    করে নি।মাসীমা মাসীমা করে কতো 
    আধো আধো স্বরে ডেকেছে, কত চিন্তা 
    প্রকাশ করেছে, এত বড় বাড়ি কেউ দেখার 
    নেই। ভয় দেখিয়েছেচোর ডাকাত এসে খুন
     করে দিলেও তো কেউ জানতে পারবে না...
    কিন্তু বুড়ির এক কথা এই বাড়িতে তার 
    বাপির স্মৃতি আছে তাইএ বাড়ি সে প্রাণ 
    থাকতে আমোদের হাতে তুলে দিতে পারবে না। অগত্যা আমোদকে অপেক্ষা করতে হলো। আর 
    দেরি করা চলেনা। আমোদ মুখে 
    শোকের প্লাকার্ড ঝুলিয়ে, সাদা পাঞ্জাবী 
    পাজামা পরে রং করা গোঁফ আর চুল 
    আঁচড়ে তড়িঘড়ি রওনা দিলবুড়ির
     বাড়ির উদ্দেশ্যে। পুরো কেসটাকে 
    নিজের হাতে নিয়ে নিতে হবে। ওদিকে 
    টোটাও বাড়িটার দিকে চোখ দিয়ে 
    বসে আছে।টোটা এন্ট্রি নেওয়ার আগে 
    আমোদের ঢোকা জরুরী। হন্তদন্ত হয়ে 
    বুড়ির বাড়ির কাছে এসে দেখল টোটার 
    মোটর সাইকেল দাঁড়িয়েআছে। বাব্বাঃ 
    এ যে দেখছি আমোদের আগে ঢুকে 
    পড়েছে।" মাসীমা গো- ও-ও তুমি আমাদের
     রেখে কোথায় গেলে গো-ও-ও..." গো এর 
    ওপর জোর দিতে দিতে ঢুকে পড়ল আমোদ।
     পাড়ার দু'চার জন এদিক ওদিক জটলা করে আছে। 
    আমোদ মাতব্বরী চালে বলে 
    উঠল, "ভিড় করবেন না, ভিড় না"...
    টোটার সাথে একচোট ঝামেলা টামেলা  
    করে অবশেষে ঘাটের কাজ শেষ করে 
    ফিরতে সন্ধ্যা হল। মুখাগ্নি করল বুড়ির 
    এক দু:সম্পর্কের ভাইপো। সব খরচ 
    আমোদই করেছে। বড় কিছু পেয়ে গেলে 
    ছোট কিছু তো ছাড়তেই হয়।সেই সময় 
    ফিরে এলেও সে রাতে  অন্ধকারে পাঁচিল 
    টপকে আমোদ ফের ঢুকল বুড়ির বাড়ি। 
    টিম টিম করে একটা আলো জ্বলছে 
    দোতলায়। বুড়ির ঘর চিনে ঢুকতে অসুবিধা 
    কিছু হল না। এ ঘরে আমোদ অনেক বার 
    এসেছে। ঘরের মেঝেতে জ্বালানো আছে 
    একটা প্রদীপ। প্রদীপের আলোয় ঘরের 
    অন্ধকার যেন আরও গাঢ়  হয়েছে।
     বড় মেহগনীকাঠের কারুকার্য করা 
    পালংকটার পেছনে কাঠের সিন্দুকখানা রাখা। আমোদ জানে ওর ভেতরেই বাড়ির দলিলটা আছে।
    আমোদের গাটা ছম ছম করে উঠল। 
    সিন্দুকের কাছে কে যেন দাঁড়িয়ে ছায়া 
    ছায়া মতো। ধুস ওসব মনের ভুল।
     ছোটবেলায় শেখা ছড়াটা মনে মনে 
    আওড়াতে লাগল আমোদ, 
    "ভুত আমার পুত, পেত্নী আমার ঝি, রাম লক্ষণ.... "
     সিন্দুকের হাতলে হাত লাগাতেই গালের 
    ওপর মোক্ষম এক থাপ্পড়। আর কিছু মনে 
    নেই আমোদের। সেই থেকে আমোদ ওই 
    বাড়ির ত্রিসীমানায় ঘেঁসে নি আর।
     লোক মুখে শুনেছে ওখানে 
    আট তলা "টোটা মঞ্জিল" উঠেছে।
     উঠুক তাতে আমোদের কি? 

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ১৭ মে ২০২২ | ১২২২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন