#ব্যোমকেশের খোঁজে
#বেরসিক
কেন? ব্যোমকেশই কেন?
এর উত্তর এখনই দেবো না। এর উত্তর থাকবে এই লেখার প্রতিটি পাতায়। প্রতিটি বাক্যের মধ্যে।
ব্যোমকেশের গল্প গুলো লেখা হয়েছিল অজিতের বয়ানে। অজিতের দৃষ্টিভঙ্গিতে। দৃষ্টিকোণ থেকে। এখানে সেই গল্পগুলোকে নিয়েই একটু আলোচনা করা হবে, তবে ব্যোমকেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে। আর গল্প গুলো থেকে টুকরো টুকরো করে ঝেঁড়েবেছে ব্যোমকেশের জীবনকে বোঝার চেষ্টা করা হবে। অনেক কিছুই দেওয়া নেই। কল্পনা করে নিতে হয়েছে। যদিও কল্পনাকে কখনোই ডানা মেলে আকাশে উড়তে দেইনি। বাস্তবের মাটিতে পা রেখেই কল্পনাকে মেশাতে হয়ছে। চলুন এগিয়ে যাওয়া যাক।
ওহ্... আরেকটা কথা। এই লেখাটা যদি কেউ আদৌ পড়েন... 'যদি' 'কেউ' 'আদৌ'... তাহলে টিকা গুলো বাদ দেবেনা দয়া করে। এই টিকার মধ্যেই অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। লুকিয়ে আছে অনেক প্রশ্নের উত্তর। লুকিয়ে আছি আমি।
প্রথম অধ্যায়। পর্ব এক।
সমস্ত কিছুর একটা পরিপ্রেক্ষিতের প্রয়োজন হয়। হঠাৎ করে কোন ছিল বলে ফেলতে তার মিষ্টত্ব নষ্ট হয়। আচ্ছা বলুন দেখি কোন গল্পের শুরুতেই কি তাঁর নায়কের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, একদম প্রথম লাইনেই। একটা বেস তৈরি করা হয়, তারপরে ধীরে ধীরে নায়ককে সামনে তুলে ধরা হয়।না হলে নায়ক যে বাকী সকলের চেয়ে কিছু বেশি তা বোঝাতে অসুবিধা হয়। আমাদের এটা গল্প নয়।আর সেই নায়ককের সাথে আমাদের পরিচয় বহু আগে থেকেই হয়ে আছে। সকলেই তাকে চেনে। জানে। তাঁর কাণ্ডকারখানা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল।তাই এক্ষেত্রে সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করার প্রয়োজন নেই।
পরাধীন ভারতের অবিভক্ত বাংলার এক হিন্দু কায়স্থ (১) পরিবারে, ১৯০৪ সালের ১৩ই জুলাই (২) ব্যোমকেশের জন্ম হয়। মা বৈষ্ণব বংশের মেয়ে, নন্দগোপাল নিয়ে থাকতেন আর বাবা ছিলেন স্কুলের শিক্ষক, অঙ্ক শেখাতেন (৩)।
[টিকা -১
(১) আনন্দবাজার পত্রিকা, ৪ কার্তিক, ১৩৭৫ সালে প্রকাশিত, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের 'ব্যোমকেশের সঙ্গে সাক্ষাৎকার'-এ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন "আমার ধারণা কায়স্থরা ব্রাহ্মণদের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধি ধরে"। সেই কারণেই কি ব্যোমকেশের জন্ম 'কায়স্থ' পরিবারে? সম্ভবত তাই।
ব্যোমকেশ নিজেও অবশ্য বলেছে সে হিন্দু। মনে করুন 'রক্তমুখী নীলা'তে সে বলছে "আমি কুসংস্কারাচ্ছন্ন গোঁড়া হিন্দু নই"
(সূত্র: রক্তমুখী নীলা; পৃষ্ঠা: ২০৬; ব্যোমকেশ সমগ্র; আনন্দ পাবলিশার্স; ত্রয়োবিংশ মুদ্রণ)।
অর্থাৎ আমি হিন্দু কিন্তু কুসংস্কারাচ্ছন্ন নই, গোঁড়াও নই। ব্যোমকেশের মা 'বৈষ্ণব' ছিলেন, নন্দগোপাল নিয়ে থাকতেন। যদি শুধু 'বৈষ্ণব' কথাটা থাকতো তাহলে মাথায় আসতো না। কিন্তু, 'নন্দগোপাল নিয়েই থাকতেন' কথাটা বলাতে মনে হয়, তিনি হয়তো 'খুব' কুসংস্কারাচ্ছন্ন বা গোঁড়া না হলেও, খানিকটা অন্তত দুটোই ব্যোমকেশের মা ছিলেন। আর জীবনের প্রথম সতেরোটা বছর এই নিয়েই বসবাস করেছে ব্যোমকেশ। আর কারণেই হয়তো, এই শব্দ দুটি নিজেই উচ্চারণ করে, মায়ের কুসংস্কারাচ্ছন্নতা আর গোঁড়ামির প্রতি নিজের অপ্রসন্নতা কে ব্যাক্ত করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মায়ের এই প্রভাব থেকে ব্যোমকেশ কীভাবে কাটিয়ে উঠলো? মায়ে প্রভাব কী ব্যোমকেশের মধ্যে এতটুকু পড়েনি? তাহলে কি ব্যোমকেশের বাবার প্রভাবেই ব্যোমকেশ এমনটা? সত্যিই বলছি, উত্তর জানা নেই। তবে সেটাই সবচেয়ে সম্মানজনক সমাধান।
ভাইসরয় লর্ড কার্জন আর লেফটেন্যানট গর্ভনর অ্যান্ডু ফ্রেজার তখন বঙ্গভঙ্গের জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সমস্ত কিছু চলছে পরিকল্পনা মাফিক। যদিও বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ভাঙার প্রস্তাব বহুদিন ধরেই আছে। এতো বড়ো যায়গা, প্রশাসনিক দিক থেকে অসুবিধা হচ্ছে, পরিচালনা করতে। কিন্তু হঠাৎ এই সময়েই কেন? বিদেশি শাসকের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা বাঙালিদের আন্দোলনকে গুড়িয়ে দিতেই এই পরিকল্পনা। নরমপন্থী জাতীয় কংগ্রেসের থেকে বেরিয়ে এসে শুরু হয়েছে চরমপন্থী আন্দোলন। দিকে দিকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। চারিদিকে এক অস্থির পরিস্থিতি। সেই সময় ব্যোমকেশের জন্ম।
(২) 'অর্থমনর্থম' গল্পে করালী চরণ বসু শেষ উইলটি করেছিলেন ১৯৩৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। সেই উইলটির বয়ান ছিল,
'অদ্য ইংরেজি ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দের ২২ শে সেপ্টেম্বর তারিখে, আমি সজ্ঞানে সুস্থ শরীরে এই উইল করিতেছি ...'।
এই উইল টাইপ করা শেষ করে, ২২ তারিখ মাঝরাতে 'ঠিক বারোটার সময়' মারা যান (খুন হন) করালী বাবু। যদিও ফোনটি করেছিলেন ডেপুটি কমিশনার বিধুবাবু, তবু 'উপর থেকে হুড়ো' এসেছিল। আর 'উপর' মানে তখন কলকাতার পুলিশ কমিশনার এল এইচ কলসন। পুলিশ কমিশনার কলসনই, আদেশ করেছিলেন বিধুবাবুকে, এই খুনের সমাধানের কাজে ব্যোমকেশের সাহায্য নেবার জন্যে [সূত্র: Wikipedia; List of Commissioners of Police, Kolkata (previously Calcutta). (https://en.wikipedia.org/wiki/Police_Commissioner_of_Kolkata) L H Colson; Period: 1931-1939]। কেন পুলিশ কমিশনারকে ব্যোমকেশের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল, আর তিনি ব্যোমকেশকে কিভাবে চিনলেন, তা এখানে বিস্তারিত না বলে বরং পরে কখনো বলবো, সময়মতো। আপাতত চলুন ব্যোমকেশের জন্মদিনের রহস্য ভেদ করি। ব্যোমকেশ আর অজিত, খুনের তদন্ত করতে সেখানে উপস্থিত হন ২৩ তারিখ সকালে। পরদিন ২৪ তারিখ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সুকুমার বাবু গ্রেপ্তার হন এবং বিকেলে, সত্যবতী ব্যোমকেশদের ঘরে 'ব্যাচেলর এস্টাবলিশমেন্ট'-এ আসেন। সাহায্য চান ব্যোমকেশের কাছে। এবং আগের দিন মানে ২৩ তারিখ সকালে যা গোপন করেছিলেন আর যা জানেন, সত্যি বলেন, যা আগে তিনি ভয়ে বলতে পারেননি। সত্যবতী চলে যাবার পর ব্যোমকেশ অজিতের থেকে তার 'ঠিক হিসেব' 'কত বছর ক'মাস ক'দিন' বয়স জানতে চান। জানা যায় অজিতের বয়স উনত্রিশ বছর পাঁচ মাস এগারো দিন। অর্থাৎ জন্ম তারিখ ১৯০৪ সালের এপ্রিল মাসের ১৩ তারিখ। 'যাক তুমি আমার চেয়ে তিন মাসের বড়' বলেন ব্যোমকেশ। সুতরাং ব্যোমকেশের জন্ম তারিখ, ১৩ই জুলাই ১৯০৪ সাল। যদিও তিন মাস বলতে আমরা দু-পাঁচ দিন এদিক ওদিক ভাবতে পারি। কিন্তু কথাটা ব্যোমকেশ বলছেন। ব্যোমকেশের মতো মানুষের কাছে তিন মাস মানে 'ঠিক হিসেব' তিন মাসই হবে ধরে নিতে পারি। তাই ব্যোমকেশের জন্ম তারিখ ১৩ জুলাইটাকেই ধরে নিচ্ছি (সূত্র: অর্থমনর্থম; পৃষ্ঠা: ১২০; ব্যোমকেশ সমগ্র; আনন্দ পাবলিশার্স; ত্রয়োবিংশ মুদ্রণ)।
শ্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে 'ব্যোমকেশের সাথে সাক্ষাৎকার'-এ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় 'বেণীসংহার'-এ ব্যোমকেশের বয়স ষাট বলে জানিয়েছিলেন। "তাঁর বয়স এখন ষাট। বেণীসংহারে তার বয়স এখন ষাট বছরই" (সূত্র: )। 'বেণীসংহার' লেখা শেষ হয় ১৫ মে ১৯৬৮ সালে (সূত্র: )। যদিও ঘটনাটি ১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের। কেন ১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারির ঘটনা, সেই সব 'বেণীসংহার' যখন আসবে তখন বোঝাবো। হিসেব নিকেশ তখন হবে। তাহলে ব্যোমকেশকে জন্মাতে হবে ১৯০৮ সালে। তাহলে সব কিছু, সমস্ত হিসেব গন্ডগোল হয়ে যাবে। ১৯২৫ সালে যখন অজিতের সাথে দেখা হচ্ছে তখন ব্যোমকেশের বয়স মাত্র সতেরো। অথচ আমার হিসেবে মানে যে হিসেব মেনে চলেছি তাতে 'বেণীসংহার' কালে ব্যোমকেশের বয়স চৌষট্টি বছর।
আবার 'সত্যান্বেষী' গল্পে অজিত ব্যোমকেশকে প্রথমবার দেখে জানিয়েছিল "তাহার বয়স বোধকরি তেইশ-চব্বিশ হইবে"। 'সত্যান্বেষী' ১৯২৫ সালের ঘটনা। 'সত্যান্বেষী'র শুরুতেই আছে "সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর সহিত আমার পরিচয় হইয়াছিলসন তেরশ একত্রিশ সালে।" ১৩৩১ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৯২৪ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ১৯২৫ সালের ১৩ এপ্রিল। ১৯২৫ সালের ১৪ এপ্রিল হলেই ১৩৩২ বঙ্গাব্দ হয়ে যেত। তাই 'সত্যান্বেষী' ১৯২৫ সালের ঘটনা। কোন সন্দেহ নেই। কেন ১৯২৪ সালের বদলে ১৯২৫ সালের কথা বলছি, তা 'সত্যান্বেষী' গল্পের আলোচনার সময় বিস্তারিত ভাবে বলবো। তা ১৯২৫ সালে ব্যোমকেশের বয়স চব্বিশ বছর হলে তার জন্ম সাল ১৯০১ হতে হবে। তাহলে আবার 'বেণীসংহার' এর সময় ব্যোমকেশের বয়স গিয়ে দাঁড়াবে সাতষট্টি। ষাট কিছুতেই নয়। অবশ্য একঝলক দেখেই কারো বয়স বুঝতে ভুল হতেই পারে, অমার্জনীয় অপরাধ কিছু নয়। আমার হিসেবে ব্যোমকেশের তখন একুশ বছর।
তবে একটা কথা না বলে পারছি না। অজিতের এই 'ভুল', মানে ব্যোমকেশের বয়স যে 'তেইশ-চব্বিশ' মনে হওয়া, তা কিন্তু পুরোটা অজিতের 'ভুল' ছিল না। ছিল 'কর্তার ইচ্ছে'। মানে স্বয়ং শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছে ছিল। কেন? আচ্ছা বলছি শুনুন। 'সচিত্র মাসিক বসুমতী' পত্রিকায় 'অর্থমনর্থম' প্রকাশিত হয়েছিল....
সেখানে করালী চরণ বসু শেষ উইলটি করেছিলেন ১৯৩০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। সেই উইলটির বয়ান ছিল, 'অদ্য ইংরেজি ১৯৩০ খৃষ্টাব্দের ২২ শে সেপ্টেম্বর তারিখে, আমি সজ্ঞানে সুস্থ শরীরে এই উইল করিতেছি ...'। (সূত্র: সচিত্র মাসিক বসুমতী; ) সেই হিসেব অনুযায়ী ব্যোমকেশের জন্ম ১৯০১ সালে হচ্ছে। অর্থাৎ ১৯২৫ সালে ব্যোমকেশের বয়স চব্বিশ বছর। কী এখন আর অজিতের 'ভুল'কে ভুল মনে হচ্ছে? আসলে পরে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৩০ খৃষ্টাব্দকে পরিবর্তন করে ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দ করে দিয়েছিলেন, কিন্তু তখন অজিতের বয়ানকে আর বদল করেননি। তাইই অজিত বরং বেকুব হয়েছে।
আসলে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ব্যোমকেশকে কখনো ১৯০১ সালে জন্মগ্রহণ করিয়েছেন, কখনো ১৯০৪ সালে আবার কখনো বা ১৯০৮ সালে। বিভ্রান্তিই হোক বা অন্য যা কিছু, সবকিছুর শুরু এখান থেকেই। তা আমরা এসব 'রেড-হেরিং' এর চক্করে না পরে, গোলকধাঁধায় না ঘুরে ব্যোমকেশের জন্ম সাল ১৯০৪ মেনেই চলবো। তাতে যা হবার হবে।
(৩) আদিম রিপু; পৃষ্ঠা: ৪৩৪; ব্যোমকেশ সমগ্র; আনন্দ পাবলিশার্স; ত্রয়োবিংশ মুদ্রণ]
ব্যোমকেশের জন্মস্থান অথবা ছোটবেলা সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। হয় ব্যোমকেশ নিজেই বলতে চায়নি অথবা অজিত লেখেনি। আমার ধারণা অজিত নিজেই লেখেনি, অপ্রয়োজনীয় ভেবে। ব্যোমকেশ অজিতকে বলেছিল বলেই আমার ধারণা। কয়েকটা গল্পে ব্যোমকেশের ছোটবেলার কথা, মা-বাবার কথা লিখেছিলো বটে অজিত। তবে এতোটাই ছাড়া ছাড়া ভাবে যে এক জায়গায় নিয়ে আসা বড়ই দুষ্কর। চাইলেই এখানে কল্পনায় ব্যোমকেশের ছোটবেলার কথা লিখে ফেলতে পারা যেত। কিন্তু ভেবে দেখলাম, যা ব্যোমকেশ চায়নি, যা অজিত চায়নি, সর্বোপরি যা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ও চাননি, তা না হয় নাই বা লিখলাম। ক্ষতি কী? থাক।
তবে ব্যোমকেশ ছিল 'লগনচাঁদা ছেলে'। জন্মের পরে ভট্টাচায্যিমশাই কুষ্ঠি তৈরি করে বলেছিলেন 'এ ছেলে ঘোর উন্মাদ হবে' (১)। ব্যোমকেশের স্কুল কোথায় ছিল জানি না। অন্তত অজিত সরাসরি লেখেনি। তবে স্কুল জীবনে ব্যোমকেশ যে স্কুলে পড়ার সময় বন্ধুদের শখ করে ম্যাজিক দেখাতো তা জানতে পেরেছি। অন্যান্য ম্যাজিকের সঙ্গে পেঁয়াজের রসে লেখা অদৃশ্য লেখাকে আগুনের তাপে ফুটিয়ে তোলার ম্যাজিকও ছিল। ব্যোমকেশের কথা অনুযায়ী "আমি যখন স্কুলে পড়তাম ওখন ম্যাজিক দেখানোর শখ ছিল; অনেকবার সহপাঠীদের এই ম্যাজিক দেখিয়েছি"। অর্থাৎ বন্ধুদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল ব্যোমকেশ। তা না হলে 'অনেকবার' ম্যাজিক দেখাতে হতো না। ব্যোমকেশ 'স্বভাবত স্বল্পভাষী' (২) কিন্তু প্রয়োজনে সে সকলের সাথে চট করে মিশে যেতে পারতো, 'সম্প্রীতি' (৩) জমিয়ে ফেলতে পারতো। 'ইচ্ছা করিলে খুব সহজে মানুষের মন ও বিশ্বাস জয় করিয়া লইতে পারিত' (৪), তাঁর স্বভাব গুনে, তা দেখা গেছে। ভাগ্যিস তখন এই ম্যাজিক দেখিয়েছিল 'অনেকবার'! ভাগ্যিস এই ম্যাজিকের কথা ভুলে যায়নি ব্যোমকেশ, সেই জন্যই বহুবছর পর (১৯৫৩ সালে) ব্যোমকেশ ধরতে পেরেছিল রামেশ্বরবাবুর ধাঁধা। সমাধান করতে পেরেছিলো, এক রহস্যের। আর নলিনী পেয়েছিল তার প্রাপ্য অধিকার (৫)। স্কুলে পড়ার সময়ই তাঁর এক 'বন্ধু' ছিল শশাঙ্ক। এই শশাঙ্কই ভবিষ্যতে (১৯৩৫ সালে) বিহারের মুঙ্গের জেলার ডি এস পি হবেন এবং মুঙ্গেরে 'ব্যোমকেশ ও বরদা' গল্পে দেখা হবে। তিনি আমন্ত্রণ জানাবেন মুঙ্গের ঘুরতে আসবার জন্যে। আর তারপর সেখানে পৌঁছাবার পর বৈকুন্ঠ দাসের হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ক্ষেত্রে সাহায্য চাইবেন ব্যোমকেশের কাছে। ছোটবেলার বন্ধুত্ব কতোটা গাঢ় ছিলো জানা যায়নি, তবে বড়ো হয়ে 'পুরাতন অর্ধবিস্মৃত'। এখানেই আলাপ হবে 'ভূতান্বেষী বরদাবাবু'র সাথে (৬)।
[টিকা - ২
(১) অর্থমনর্থম; পৃষ্ঠা: ১২০; ব্যোমকেশ সমগ্র; আনন্দ পাবলিশার্স; ত্রয়োবিংশ মুদ্রণ
(২) পথের কাঁটা; পৃষ্ঠা: ৪৩; ব্যোমকেশ সমগ্র; আনন্দ পাবলিশার্স; ত্রয়োবিংশ মুদ্রণ
(৩) সত্যান্বেষী; পৃষ্ঠা: ২৮; ব্যোমকেশ সমগ্র; আনন্দ পাবলিশার্স; ত্রয়োবিংশ মুদ্রণ
(৪) সীমন্ত-হীরা; পৃষ্ঠা: ৮৫; ব্যোমকেশ সমগ্র; আনন্দ পাবলিশার্স; ত্রয়োবিংশ মুদ্রণ
(৫) খুঁজি খুঁজি নারি; পৃষ্ঠা: ৭৩৯; ব্যোমকেশ সমগ্র; আনন্দ পাবলিশার্স; ত্রয়োবিংশ মুদ্রণ
(৬) ব্যোমকেশ ও বরদা; পৃষ্ঠা: ২১৫ এবং ২১৯; ব্যোমকেশ সমগ্র; আনন্দ পাবলিশার্স; ত্রয়োবিংশ মুদ্রণ]
বেণীসংহার এ ব্যোমকেশের বয়স 60 না ঐ ভদ্রলোকের?
অসীমবাবু
সেটাই তো লিখেছি। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় যতই বলুক, 'বেণীসংহার'এ ব্যোমকেশের বয়স ষাট। আদতে প্রায় চৌষট্টি।