এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বাকিসব  নেট-ঠেক-কড়চা

  • গভীর সমুদ্রে জাদু-বাস্তব প্রেম

    Mani Sankar Biswas লেখকের গ্রাহক হোন
    বাকিসব | নেট-ঠেক-কড়চা | ২৭ অক্টোবর ২০২০ | ৩১১৪ বার পঠিত
  • এই ‘অপূর্ব’-দেখতে প্রাণীটি প্রেম-ভালোবাসার গল্প একেবারেই সাররিয়াল। অন্য লেভেলের।

    কিছুটা পিছনের কথা বলি, ১৯২০ সাল থেকে, দীর্ঘদিন ধরে বর্নি সাইমুন্ডসেন (Bjarni Saemundsson) নামের এক প্রাণীবিদ বিরল জাতের এই অ্যাঙ্গলার ফিস স্টাডি করেছিলেন। মাছটার পেটের সঙ্গে দুটো খুব ছোট মাছ সংযুক্ত ছিল। অনেক ভেবেও বর্নি বুঝতে পারলেন না, ঠিক কীভাবে এই মাছটির জনন-প্রক্রিয়া, এমন একটা কাণ্ড ঘটাতে পারে! প্রজননের ঠিক কোন পর্যায়ে গিয়ে এটা ঘটে, সেটাও তিনি আবিষ্কার করতে পারলেন না। আর সবচাইতে আশ্চর্য বিষয় হল, পুরুষ অ্যাঙ্গলার ফিসটাকে কিছুতেই খুঁজেও পাওয়া গেল না! ১৯২৪-সাল অব্ধি এই ‘ছেলেটা কে’ রহস্য থেকেই গেল। এই সময় নেচার হিস্টোরিয়ান চার্লস রেগান সমস্যাটিকে আরও একটু নিবিড়ভাবে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি একটা মৃত অ্যাঙ্গলার ফিস খুঁজে পেলেন এবং সেটার শব ব্যবচ্ছেদ করলেন। এই মাছটিতেও একটা ছোট মাছ, ভালো করে না-দেখলে বোঝাই যায় না, তলপেটে লেপ্টে ছিল। এ যেন এক অপরিণত শিশু বা পরিণত ভ্রূণ, কিন্তু পেটের বাইরে। এই খুব ছোট, তলপেটে লেগে থাকা মাছটিকে পরীক্ষানিরীক্ষা করবার ফলে, এই প্রথম একটা পুরুষ অ্যাঙ্গলার ফিস-এর সন্ধান পাওয়া গেল, যার সন্ধান চলছিল প্রায় অর্ধদশক ধরে!

    হ্যাঁ, এই উনিই ‘স্বামী কেন আসামী’!

    পাওয়া তো গেল পুরুষটিকে, কিন্তু এখানে রহস্য শেষ হল না, বরং শুরু হল। কেননা ঠিক যে বৈশিষ্ট্যগুলি দিয়ে একটা অ্যাঙ্গলার ফিস-কে চিনে নেওয়া যায়, তার প্রায় কোনোটাই এই ‘আসামী’টির মধ্যে উপস্থিত নেই। এ যেন হলিউডের মুভিতে কোনো ঘৃণ্য ক্রিমিনালের সম্পূর্ণ মেকওভার বা তার থেকেও বেশি।
    এই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষটির কোনো দাঁত নেই, বিরুদ্ধ-পরিবেশের সঙ্গে লড়বার মতো শারীরিক আকার বা সক্ষমতাও নেই। রেগন, এই অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছালেন, যে পুরুষ মাছটি সম্পূর্ণত তার শারীরিক খিদে ও পুষ্টির জন্য স্ত্রী-মাছটির উপর নির্ভরশীল।

    এর পর ধীরে ধীরে যে সব তথ্য গুলি পাওয়া গেল, সে গুলি শুধু চমকপ্রদ নয়, ম্যাজিক্যাল, জাদু-বাস্তব! সঙ্গমের ঋতু যখন আসে তখন পুরুষরা নির্দিষ্ট এক ধরণের রাসায়নিকের সংকেতের অপেক্ষায় থাকে। প্রত্যেক মহিলা অ্যাঙ্গলার ফিসই এই সময় এক প্রকারের রাসায়নিক সংকেত নিঃসরণ করে। যখন পুরুষটি গভীর ‘সমুদ্রে বুনো ফুলের গন্ধ’ পায় অর্থাৎ তার মনের মতো বা উপযুক্ত কেমিক্যাল সিগন্যাল খুঁজে পায়, তখনই শুধু পুরুষটি ওই মহিলাকে ‘জীবন-সঙ্গী’ হিসেবে নির্বাচন করে। পুরুষটি এর পর মহিলা-মাছটির নীচে সাঁতার কাটতে থাকে এবং ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো এক পর্যায়ে নোঙ্গর ফেলে দেয়। এই মিলন বা এই দংশন এতটাই গভীর যে মহিলা-মাছটি যতই চেষ্টা করুক, পুরুষটিকে আর ঝেড়ে ফেলতে পারে না। এবং এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাদের রক্তনালী, মাংস সব একসাথে মিশে যেতে শুরু করে। জৈবিকভাবে বলতে হয় তারা তখন একটি একক প্রাণী।

    পুরুষটিকে এখন আর খাদ্য, পুষ্টি বা সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। স্ত্রী-মাছটি, যা কিছু খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, অংশবিশেষ বা প্রয়োজনীয়, সবটুকুই রক্ত-প্রবাহের মাধ্যমে পুরুষটির শরীরে পৌঁছে যায়।

    পুরুষটির এখন যা যা প্রয়োজন নেই, এমন সমস্ত কিছুই — চোখ, পাখনা, বা অন্যান্য প্রত্যঙ্গ ইত্যাদি — সমস্ত কিছুই ঝরে পড়তে থাকে বা নষ্ট হতে শুরু করে। ক্রমে পুরুষটিকে দৃশ্যত একটি পরজীবী ছোট মাংসের দলা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

    আর ঠিক এই অবস্থাতেই শুরু ও সম্পন্ন হয় প্রজননের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি। সংসারে যেমন পুরুষ, মহিলাদের মন বুঝতে পারে না অনেক সময়ই, এমনকি কাব্যি করে যে বলা হয়, মহিলাদের মন বোঝা দেবতারও অসাধ্য কাজ, স্বাভাবিক ভাবেই, পুরুষ মাছটির সে অসুবিধে নেই। সমস্ত শরীর মন দিয়ে পুরুষ মাছটি যখন স্ত্রী-মাছটির সাধ ও সাধ্য (ফার্টিলিটি) টের পায়, তখন পুরুষটি তার শুক্রাণু ছেড়ে দেয়। শুক্রপাত একবার হয়ে গেলে, আবার পরের বছর (মেটিং সিজন) পর্যন্ত অপেক্ষা করে, যতক্ষণ না পর্যন্ত মেয়েটির আবার সাধ-আহ্লাদ জাগে। অর্থাৎ এই পদ্ধতি চলতেই থাকে। জানি অনেক পুরুষ-পাঠক এই পর্যন্ত পড়ে ভাবছেন, আহা পুরুষের কী অপূর্ব জীবন-চক্র! আবার যে সব মহিলা-পাঠকরা ভাবছেন, এ-তো রীতিমতো অন্যায়, ফ্যামিলি-কোর্টে যাবার কোনো উপায়ই নেই! যতই অপছন্দ হোক, হারামজাদা 'পায়ের উপর পা তুলে খাবে’ অথচ ডিভোর্স বা সেপারেশনের কোনো মামলাই করা যাবে না!

    দুই পক্ষকেই এখানে একটা ইন্টারেস্টিং তথ্য দিই। যখন একটা পুরুষ একটা স্ত্রী-মাছের সঙ্গে অলরেডি অ্যাটাচ্‌ড ও দেহসাধনার সঙ্গে যুক্ত, তখনও একজন নতুন পুরুষ-মাছ এসে এই মহিলার শারীরিক সংসারে জয়েন করতে পারে। এমনও দেখা গেছে যে, আট জন পুরুষ একই মহিলার সাথে সংযুক্ত হয়েছে এবং মহিলার মুড বুঝে প্রত্যেকেই শুক্রপাত করছে। এই প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি হতেই থাকে, যতক্ষণ না পর্যন্ত মহিলা, হয় মারা যায় বা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পড়ে।

    এক্ষেত্রে এক দেহ একাধিক প্রাণ মানে তো, নারী-সঙ্গীটি মারা গেলে ‘অপর’-ও মারা যাবে!!

    অবশ্য অমন পরাধীন ভাবে বেঁচে থেকেও বা কী লাভ!








    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • বাকিসব | ২৭ অক্টোবর ২০২০ | ৩১১৪ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    উংলি - Malay Roychoudhury
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন