এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  বিবিধ

  • মে ডে - ইতিহাসের ছবি

    lcm
    আলোচনা | বিবিধ | ০১ মে ২০২০ | ২৪৬৫ বার পঠিত
  • (১) ১-৩ মে, ১৮৮৬ - শিকাগো



    দৈনিক কাজের সময় ৮ ঘণ্টা রাখার (তার বেশি নয়) দাবি নিয়ে আমেরিকায় শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয় ১৮৮৬ পয়লা মে তে। ১,৩৫,০০০ মানুষ এই দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন। ২, ৩ তারিখে আরও মানুষ তাতে যোগ দিতে থাকেন। এর মধ্যে ৩ তারিখে শিকাগোর একটি ফ্যাক্টরিতে ধর্মঘটকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালায় এবং দুজন মারা যান। এর প্রতিবাদে পরের দিন, অর্থাৎ ৪ তারিখে শিকাগোর হেমার্কেট স্কোয়ার এলাকায় একটি জমায়েত ডাকা হয়। সেখানে কেউ একজন একটি বোমা ছোঁড়ে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, সাত জন পুলিশ এবং চার জন নাগরিক মারা যান। পুলিশ প্রায় ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করে, সাতজনের মৃত্যদন্ড হয়, যদিও তাদের অপরাধ প্রমাণ হয় নি। বোমাটি কে ছুঁড়েছিল তা আজও জানা যায় নি, তবে কারা লোক লাগিয়ে আন্দোলনের ওপর বোমা ছুঁড়তে পারে তাই নিয়ে কাগজে বিস্তর লেখালেখি হয়।
    ওপরের ছবিটি (পেইন্টিং) হেমার্কেটে বোমা বর্ষনের।

    (২) পয়লা মে, ১৮৯০ - প্যারিস



    ইন্টারন্যাশনাল সেকেন্ড - পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শ্রমিক এবং খেটে খাওয়া মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে কয়েক বছর ধরে সম্মেলন হয় - ১৮৯০ এ হয় প্যারিসে, তার আগের বছর হয়েছিল লন্ডনে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি আসেন, ইউএস থেকে পাঁচ জন আসেন, এরা ছিলেন সোশ্যালিস্ট লেবার পার্টির সদস্য (১৮৭৬ এ প্রতিষ্ঠিত এটি ছিল আমেরিকার প্রাচীনতম সোশালিস্ট পার্টি)।

    এই সম্মেলনের প্রস্তুতিতে এবং সঞ্চালনায় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিলেন ফ্রেডরিক এঙ্গলস। সম্মেলনে এঙ্গলস বলেন যে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টায় বেঁধে ফেলা ছিল অভাবনীয় - "the best thing that our Congress has done" । শিকাগোতে শ্রমিক আন্দোলনকে স্মরণ করে এঙ্গলস এই সম্মলনে ঘোষণা করেন যে প্রতি বছর পয়লা মে দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস হিসেবে পালন করা হবে।

    যদিও ইউএসএ-তে অফিসিয়ালি আইনগত ভাবে দৈনিক কাজের সময় আট ঘন্টা চালু হয় ১৯১৬ সাল থেকে, আরও আন্দোলন/ধর্মঘটের পরে।
    ওপরের ছবিটি ওই সম্মেলনের পোস্টার।

    (৩) পয়লা মে, ১৯০৬ - মস্কো



    ওপরের ছবিটি রাশিয়ান শিল্পী বরিস কুস্তোদিয়েভ-এর আঁকা, ১৯০৬ সালের মে দিবস পালনের। রাশিয়ার জার সম্রাটদের সময়ে মে দিবস পালন সহজ ছিল না, ফ্যাক্টরি মালিকেরা ভয় দেখাত যে কাজে না এলে চাকরি যাবে ইত্যাদি, যদিও তাতে সবসময় খুব একটা কাজ হত না, লোকজন বেরিয়ে পড়তেন।

    পরে, কম্যুনিস্ট শাসনের সময় সোভিয়েত দেশে মে দিবস পালন হত ধুমধাম করে, তিন-চার দিন ধরে টানা ছুটি, প্যারেড, গান-বাজনা, খাওয়া-দাওয়া, সিনেমা দেখা, যাদের সামর্থ্য ছিল তারা ছুটি নিয়ে বেড়াতে যেতেন । দীর্ঘ উইন্টার সিজনের পরে মে ডে ছিল স্প্রিং সিজনের শুরুর একটি সেলিব্রেশনও ।

    (৪) সপ্তাহে ৩০ ঘন্টা কাজের সময়ের দাবি



    ওপরের ছবিটি ১৯৩৬ সালের মে দিবসের প্যারেডের - মহিলা শ্রমিকেরা সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টা কাজের সময়ের দাবিতে হাঁটছেন। তিরিশের দশকে সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার কাজের দাবি নিয়ে কিছু আন্দোলন হয়, স্যান ফ্ৰান্সিস্কোতে টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি এবং বন্দরের কর্মীরা এই দাবি করে মিছিল করেন। অবশ্য এর একটি কারণ ছিল - তিরিশের দশকের অর্থনৈতিক মন্দার পরে, কাজের সময় কমিয়ে বেশি লোককে চাকরিতে বজায় রেখে ছাঁটাই কমানো। ফোর্ড মোটর প্রথম চালু করে সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ, শনি-রবি ছুটি -- পরে সপ্তাহে দুদিন ছুটি অনেক ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড হয়ে যাওয়ায়, ৩০ ঘন্টা কাজের দাবি চাপা পরে যায়।

    (৫) মে ডে, চায়না ১৯৫৭



    ওপরের ছবিটি বেজিং এর তিয়েননমেন স্কোয়ারে ১৯৫৭ সালের মে দিবস প্যারেডের । চিনেও মে-দিবস পালন হয় চার দিন ধরে, ২০২০ তে নাকি পাঁচ দিন ধরে হবে - যদিও অফিসিয়াল ছুটি এক দিনের ।

    ---
    (৬) ২০২০ - পয়লা মে



    পৃথিবী জুড়ে একশো কোটি মানুষ কর্মহীন হতে পারেন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই মে দিবস অনিশ্চয়তার - ভয় ভাইরাস-এর, ভয় রোজগারহীনতার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ০১ মে ২০২০ ১৬:৫৭730994
  • "এই মে দিবস অনিশ্চয়তার - ভয় ভাইরাস-এর, ভয় রোজগারহীনতার।" 

    করোনা শহীদ হওয়ার আগেই মানুষগুলো না অনাহারে মারা যান! 

    ছবি ও লেখা দুইই মনে করায় শ্রমিক রাজ। জয় হোক!      

  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 14.***.*** | ০১ মে ২০২০ ২২:৩৪731005
  • থ্যাঙ্ক ইউ এল সি এম
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন