আজ জীবনের প্রথম সশস্ত্র ছাত্রলীগ বাহিনীর সম্মুখীন হলাম। যদিও আমাদের ধাওয়ায় তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করতে বাধ্য হয়!
নতুন অভিজ্ঞতা!
পরিবারের সবার এত আদরের সন্তান ছিলাম যে চার দেয়ালের বাইরে খুবই কম বের হতে দিতো সবাই। এমনকি সহপাঠীদের বাসায়ও যেতে হতো প্রহরীসহ!! কোনও আন্দোলনে যে কোনওদিন যাব, এটা পরিবারের কেউ কল্পনাও করেনি! কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়েছিলাম পরিবারকে না জানিয়ে।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে গিয়ে আজ যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি তা আমার জীবনে নতুন!
তবুও আমি যাবই! কারণ, এটা আমার অধিকার আদায়ের আন্দোলন!
কী এই আন্দোলন ?
বাংলাদেশে গত সাতদিন ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নেমে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা যে আন্দোলন করছে।
উল্লেখ্য, আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে গত সাতাশে জুলাই রাজধানী ঢাকায় বেপরোয়া বাস চালনায় 'শহীদ রমিজউদ্দীন কলেজ' এর দুই ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যুতে। সেদিনই ঢাকার প্রায় সব কলেজের ছাত্ররা মিলে ফিটনেসবিহীন বাস ভাঙচুর শুরু করে।পরদিন থেকে শুরু হয় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের। যাতে অংশ নেয় রাজধানীর সব কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। ক্রমেই আন্দোলনের আগুন সারা দেশে জ্বলে ওঠে।
ছাত্র-ছাত্রীরা সড়ক নিরাপত্তা ও বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যার বিচার চেয়ে সরকারের কাছে নয় দফা দাবি জানায়।
তারা রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাব, গুলশান সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ এলাকার মহাসড়ক অবরোধ করে এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় তারা লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন বাস ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা মহাসড়কের প্রত্যেকটি গাড়ির লাইসেন্স, ড্রাইভারের লাইসেন্স চেক করা শুরু করে। লাইসেন্স না দেখাতে পারলে তারা গাড়িগুলোর চাবি রেখে দেয় এবং বাজেয়াপ্ত করে। লাইসেন্সহীন ড্রাইভারের বিরুদ্ধে ট্রাফিক সার্জেন্টের মাধ্যমে মামলা দেয়।
যা ছিল মূলত পুলিশের দায়িত্ব, কিন্তু তারা তা ঠিকমতো পালন করতেন না। ফলে দেখা গেল, সড়কের প্রায় সব গাড়ি এবং গাড়ির চালক লাইসেন্সবিহীন।এতে ছাত্রদের ক্ষোভ আরো বেড়ে যায়।
এদিকে সারা দেশের ছাত্ররা রাস্তায় নেমে লাইসেন্স চেক করা শুরু করে।
এ পরিস্থিতিতে সরকার ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও ছাত্ররা আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে রাজি নয়!
তারা তাদের দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন চায়। ছাত্ররা বলে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের দাবি বাস্তবায়ন করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। ফলে, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা রাজপথে অবস্থান করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
বাংলাদেশের 'আওয়ামী লীগ' সরকারের ছাত্র সংগঠন 'ছাত্রলীগ' এবং এবং আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। ছাত্রদের রাজপথ থেকে তাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। শুধু ছাত্রলীগ না, ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিকদের সংগঠন 'শ্রমিক লীগ'ও ছাত্রদের ওপর হামলা করছে।
শনিবার দুপুরে উত্তরায় ছাত্রদের ওপর 'ছাত্রলীগ' হামলাচেষ্টা করলে ছাত্ররা তা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে তা প্রতিরোধ করে এবং ছাত্রদের ধাওয়ায় একপর্যায়ে 'ছাত্রলীগ' পালিয়ে যায়। (ভিডিও)
এদিকে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের ওপর বর্বরোচিত হামলায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে বাংলাদেশের সর্বস্তরের ছাত্ররা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সন্ধ্যায় 'ছাত্রলীগ' এর বিরুদ্ধে মিছিল করে এবং আগামীকাল,রবিবার ছাত্র ধর্মঘট এর ডাক দেয়।
পুনশ্চঃ এর সাথেই উল্টোদিকে আজ মৃত্যু ও ধর্ষণের বেশ কিছু ভুয়ো খবর ছড়িয়ে চলেছে, ভুয়ো ছবির সাথে। কিছু নমুনা রইল, আমাদের সাবধান থাকতে হবে এইসব গুজবের থেকেও।
ছবিটি শনিবার ধানমন্ডিতে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ছবি বলে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ছবিটি জানুয়ারি ৪ তারিখে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের কিশ্তওয়ারে পাওয়া একজন মহিলার মৃত লাশের ছবি। | ছবিটি বাংলাদেশে ধর্ষিত স্কুলগামী বালিকার বলে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ছবিটি মরক্কোর তারগিস্ত অঞ্চলে গৃহ নির্যাতনের শিকার এক মহিলার। মহিলাটিকে নির্যাতনের পর হত্যা করে তার স্বামী। |