আমার নাম দীপমাল্য।আমি এক রূপান্তরকামী মানুষ! মানে আমার শরীরটি একজন পুরুষের আর মননটি নারীর! আবার অনেকে বলেন আমাকে দেখতেও নাকি অনেকটা মহিলাসুলভ।আবার অনেকের মনে হতে পারে রূপান্তরকামী বল্লেও আমার নামটি কেন মেয়েদের নয়? তাই বলে রাখা ভাল,“সমাজের তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিকতা অমান্য করার জন্যই আমার এই নাম!”
এবার বলি,আমার জীবনের কথা।আমার জন্ম হল ১৯৮৬ এর ২৫শে জানুয়ারি । আগেই বলেছি, আমি নিজেকে একটি মেয়ে বলে মনে করি আর আমার সেই মেয়েলিত্বের জন্য আমাকে সারা জীবন ধরে খেসারত দিতে হয়েছে!
আমার বয়স যখন ১০ বছর ,তখন আমি আমার দিদির বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম।আমার জামাইবাবু থেকে আমি প্রায় ২০ বছরের ছোট,মানে আমি তার সন্তানসম।আমিও তাঁকে সেইভাবেই দেখতাম ও শ্রদ্ধা করতাম।কিন্তু তাঁর নজর ও ভালবাসা কী রকম সেটি বুঝতে আমার দেরি হয়েছিল। তার ফল স্বরূপঃ একদিন আমার দিদি বেরিয়ে যাবার পর, উনি আমাকে একা পেয়ে বলেন,আমার সঙ্গে খেলবেন,এই ছুতোতে আমাকে জোর করে ঘরে নিয়ে গিয়ে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।একদিনে চারবার আমার পায়ুমৈথুন করা হয়।এই অত্যাচার আমার উপর চলে টানা ১০দিন ধরে। আমি সেদিন কাউকে কিছু বলতে পারিনি।আমাকে ভয় দেখানহয়,মেরে ফেলার।কিন্তু কোন কারণে দিদি কিছু একটা আন্দাজ করেন ও আমাকে বাড়ি দিয়ে যান।বাড়িতে মা কে বললে, মা পুরো ব্যাপারটা বিশ্বাসই করেননি।
যৌনতা সম্পর্কে কিছু না জানতেই; আমি ধর্ষিত হলাম ও হারালাম আমার শৈশবকে।
তার কিছু বছর পর, আমার ১৩/১৪ বছরে যখন আমি আরো নারী হয়ে উঠেছি,এক পূজার দিনে,আমার দাদা আর তার ৪ বন্ধু মিলে আমাকে ছাতে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। সেই কথাও কাউকে বলতে পারিনি।কারণ,তাতে সবাই বলত আমি নোংরা,আমার দোষ!
তারপর শুরু হলো দশম শ্রেণীর পথ চলা। জানেন,আমি কখনো রোজ স্কুল করতে পারিনি!
কারণ,স্কুলের ছেলেরা আমার গায়ে হাত দিতে চাইত।কখনও আমার প্যান্টের ভেতর,কখনও আমার বক্ষ মর্দনের জন্য,কখনও আমাকে চুমু খাবার জন্য। এই, এত সব অত্যাচার সহ্য করেও আমি ভাল ফল করে ক্লাস ১১ এ উত্তীর্ণ হলাম।সেই বছরটিও কাটল একই রকম।
তারপর আমার জীবনে এলো কালো বছর।
ঠিক টেস্টপরীক্ষার আগে আমাদের দু’জন ক্লাস টিচার সাজেশন দেবার জন্য আমাকে একটা ক্লাস রুমে ডাকেন ও তারপর শুরু হয় তাঁদের যৌন ক্ষুধা চরিতার্থ করার নোংরা খেলা।আমি পালাতে গেলে আমাকে মারা হয় ও বেঞ্চে ফেলে আমার গোড়ালি থেঁতো করে দিয়ে আমার উপর দু'জন চালায় যৌন অত্যাচার।সেইদিন আবার সেই আমিই ধর্ষিত হলাম। সবাই নোংরা বলল আমাকে।আমিই নাকি দোষী!
মা,বাবা,তারপর আমার সঙ্গে কথাই বলতেন না।আমি ৬ মাস হাসপাতালে রইলাম। আমার আর কোনদিন স্কুলে যাওয়া হল না।সেই সাথে, মা বাবার সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হল।
তাঁরা, আমার মেয়েলিত্বকে আজও মেনে নেননি।তাঁরা আজও বলেন,এই রকম সন্তান হবার থেকে মরে যাওয়া ভাল।
হ্যাঁ,আমি মরেই গেছি,বেঁচে আছা আমার শরীরটা।
তারপর কতগুলো বছর কাটল।আলাপ হল,আমার মনের মধ্যে থাকা আমার স্বপ্নের পুরুষের সাথে।আজ আমরা চারবছর একসাথে আছি।
ও আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে,হাসতে শিখিয়েছে।শৈশবকে ভুলে, বাবা মার হাত ছেড়ে,আমি আজও বেঁচে আছি ওই মানুষটার হাত ধরে। আজ,বাবা মার সাথে থাকলেও ওই মানুষটা ছাড়া আমার আর কেউ নেই।
এই অত্যাচার শুধু আমার জীবনেই নয়,আছে প্রত্যেক এলজিবিটি মানুষের জীবনে।আমাদের আছে দুঃখ,কষ্ট,না পাওয়া আর অপমানের যন্ত্রণা! কবে আমরা প্রাণ খুলে বাঁচতে পারবো!
কবে আমরা প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারবো!!
আর কবে?