রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হবার দিন থেকেই আশঙ্কা ছিল। আনন্দবাজার পরদিন শিরোনাম করে, 'মুসলমানদের কেন নাগরিকত্ব দেব? রাজ্যসভায় রাখ ঢাক নেই অমিত শাহর।' আতঙ্ক ছড়ায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে। ক্রমশ খবর পাওয়া যায়, সংখ্যাগুরু বাঙালিরও রেহাই নেই। এখনও পর্যন্ত নাগরিকত্বের যা প্রমাণ তার কোনোটাই গৃহীত না হতে পারে। তবে কি আবার দেশচ্যুত হবার খাঁড়া মাথায় নিয়ে ঘুরতে হবে? বিক্ষোভ ঘনীভূত হচ্ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে চলছিল প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতিও।
গতকালই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন দিল্লি পুলিশ অভিযান চালায় দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ শিশোদিয়া ছবিসহ (ভিডিও দেখুন) অভিযোগ করেন, পুলিশই ভাঙ্চুর চালায় এবং বাসে অগ্নিসংযোগ করে। এরকম কয়েকটি ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়েও পড়ে (সঙ্গের ভিডিও দেখুন)। পুলিশ সেই অজুহাতকেই ব্যবহার করে নিরস্ত্র ছাত্রছাত্রীদের নির্মমভাবে মারে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া অজস্র ভিডিও`য় সেই মারধোরের ছবি পরিষ্কার। সঙ্গের ভিডিও তে তার মধ্যে একটি দেওয়া আছে। এক ছাত্রের মৃত্যুর খবরও ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু গভীর রাত পর্যন্ত নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়েও একই ঘটনা ঘটে। সেখানে ভিডিওতে পরিষ্কার ভাবেই পুলিশকে বাইক ভাঙ্তে দেখা যায়। তারপর আধুনিক অস্ত্র নিয়ে গুলি ছুঁড়তেও দেখা যায়। ছাত্রদের অভিযোগ পুলিশ হস্টেলে ঢুকে হস্টেলে আগুন লাগায়, মারধোর করে (সঙ্গের ভিডিও দেখুন)।
রাতের অন্ধকারে এই সমস্ত চলতে থাকে, মিডিয়ায় কেবল সরকারি ভাষ্যগুলিই আসতে থাকে। কিন্তু ইন্টারনেটকে আটকে রাখা যায়নি। ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি প্রান্তেই গভীর রাতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়। মুম্বাইয়ের টিআইএসস এবং আইআইটি, হায়দ্রাবাদ, কেরালা, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি, বিক্ষোভ ছড়ায় সর্বত্র। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও বেরোয় মিছিল। জ্বালানো হয় কুশপুত্তলিকা। দিল্লিতে পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে সারা রাত ধরে চলতে থাকে বিক্ষোভ। (ভিডিও দেখুন)
গভীর রাত থেকেই ছাত্ররা রাজপথে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে অবস্থান। ছাত্রছাত্রীরা গভীর রাতে যাদবপুর থেকে উপস্থিত হয়েছেন সেখানে। সারা রাত অবস্থান বিক্ষোভ চলেছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত। বিক্ষোভ চলছে এন-আর-সির বিরুদ্ধে, এন-পি-আর এর বিরুদ্ধে। নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। স্লোগান চলছে কেন্দ্রীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় সরকারের একনায়কত্ব না যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঞ্চলিকতাকে রক্ষা করা? সংখ্যাগুরুর একচেটা একনায়কতন্ত্র, নাকি ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুর সমানাধিকার? বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে মূল প্রশ্নটি এইই। প্রথাগত বাম, শাসক তৃণমূল ছাড়াও বাংলা জাতিয়তাবাদী শক্তিগুলিও এবারের আন্দোলনে ভীষণভাবে সক্রিয়। সব মিলিয়ে কলকাতা হয়তো শাহবাগ ধাঁচের একটি গণ-আন্দোলন দেখতে চলেছে আজ থেকে।
অন্যান্য মিডিয়া প্রকাশ করুক না করুন, এই আন্দোলনের খবর আমরা প্রকাশ করে চলব। নজর রাখুন এই পাতায়।