এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থা — ২

    Shubhojoy Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১০ এপ্রিল ২০১৫ | ১৮৬১ বার পঠিত
  • সতেরো আঠেরোর শতকে ইউরোপে প্রচলিত ছিল এক Enlightenment দ্বারা প্রভাবিত ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা যার এক প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মুখস্থ বিদ্যা। এই ব্যবস্থার দ্বারা দুই রকম ছাত্র তৈরী শুরু হতে লাগলো: যারা শিক্ষকের দ্বারা শিখানো না না প্রকারের জ্ঞান ও কৌশল ভালো মনে রাখতে পারত এবং যারা তা পারত না। প্রথম ধরনের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্টস, sciences, লজিক, ইত্যাদি নিয়ে পড়তে যেত। দ্বিতীয় শ্রেণী ছাত্রদের একটাই অপশন ছিল — মনে আছে ছোটবেলায় না পড়লে মাটি কাটার গল্প শুনতে হত? — অনেকটা সেই রকম। এর আগে সাধারণ লোকেরা শিক্ষিত হতে চাইলেও হতে পারত না। সুধু কিছু ক্রিস্টিন monk'রা তাদের নিজেদের লোকেদের শিক্ষিত করত। এর মধ্যে অন্যতম জেসুইট অর্ডারের monkরা যারা কোয়ালিটি education পৃথিবীর অনেক প্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছে (St. Xavier's. etc.)।

    Enlightenment যুগের সংস্কৃতিতে জ্ঞান অর্জন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় উঠলো। তবে তখন ভাবা হত যে একজন লোকের মস্তিষ্ক খুব ভালো অথবা ভালো (brilliant, good) হতে পারে, তবে অন্য আরেকজন লোকের অতটা ভালো না হতেও পারে (mediocre, poor)। এইসবই আমরা কিন্তু আজও দেখি শুনে বড় হয়েছি। এমন কি ছাত্র ছাত্রীদের মস্তিষ্কর ক্ষমতা মাপতে পরীক্ষা, যা কিনা আধুনিক পরিভাষায়ে বলা হয় standardised testing এখনো আমাদের স্কুলগুলো ব্যবহার করে চলেছে। পরীক্ষার মাপকাঠিগুলোর একেবারেই যুক্তিহীন বলা যেতে পারে। ধরুন কেউ ইংরেজিতে ৬০% পেয়েছে। এর মানেটা কি? এক ছাত্র ৬০% ইংরেজি দিয়ে কি করতে পারে — তাতে কত পার্সেন্ট গ্রামার আছে আর কত পার্সেন্ট কবিতা আছে, এবং কি ধরণের? অথবা ৮০% অঙ্ক? জিজ্ঞেস করলে ধরিয়ে দেওয়া হয় একটা সিলেবাস। আবার সেই সিলেবাস রেখে পাশাপাশি নম্বর দেখলে কিছুই বোঝা যায় কি? এক ছাত্র সারা বছর ধরে ৫০% ইংরেজি শিখেছে। কেনই বা ১০০% শিখলো না : সিলেবাসেতো ১০০% জ্ঞান ছিল। তার মানে কি সে সেই সব না শিখেই আরো উচ্চ মাত্রার জ্ঞান শিখতে চলে যাবে? আবার তার জীবনে ৫০% দিয়ে সে কি করতে পারবে? ৫০% মুখস্থ কি যথেষ্ট, না আরো একটু হলে ভালো হত? ৪০% অঙ্কে ঠিক কি জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন করেছে এক ছাত্রী এবং সেটা সে কি ভাবে এখন বা পরে কাজে লাগাতে পারে? আমাদের ব্যবস্থাগুলোতে কিন্তু এই সব প্রশ্ন ওঠানোর কোনো সম্ভাবনাই নেই কারণ সিলেবাস একেবারে বাঁধা এবং তার বাইরে সব কিছু অদরকারী। খুব ভালো কোনো শিক্ষক হলে সে সিলেবাস ও পরীক্ষার বাইরে কিছু শেখানোর চেষ্টা করে তবে exceptionটা rule কেন হবে?

    Enlightenment'র জ্ঞান অর্জনকারী ব্যবস্থার বহুবিস্তৃত ব্যবহারের মধ্যে আরেকটি নতুন বিপ্লব শুরু হয়ে গিয়েছিল ইউরোপে। নাম নিশ্চয় শুনে থাকবেন: ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশান। সরকারী অনুমতিতে শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে উঠলো দেশের উন্নতির জন্য একটি অন্যতম উপদান। এর দ্বারাও জ্ঞান অর্জন ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই প্রভাবিত হয়েছিল। আধুনিক ভাবনা চিন্তা নিয়ে চর্চা করতে গিয়ে এর প্রভাব সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে।

    আধুনিক আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থা জ্ঞান অর্জন ভিত্তিক (knowledge oriented) নয় তবে অনুসন্ধান ভিত্তিক (inquiry oriented)। এটাকে বলা হচ্ছে একটি দৃষ্টান্ত স্থানান্তর (paradigm shift)। এর ফলে স্কুলগুলোর দৈনন্দিন কার্যকলাপ একেবারেই পাল্টে গেছে। এমন কি শিক্ষকদের কাজও অন্য ধরণের হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরানো গুরু শিষ্যর সম্পর্ক বদলে এখন শিক্ষক হয়ে গেছে facilitator. অনুসন্ধান ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় জ্ঞান অর্জন করাটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার নয়, তবে কি জ্ঞান অর্জন হচ্ছে এবং কি ভাবে হচ্ছে সেটা ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    পড়তে শুনতে এই সবই বেশ ভালই লাগতে পারে তবে অনেক প্রশ্ন নিশ্চয় থেকে যায়। সব কিছু একটা প্রবন্ধে লিখে ফেলা মুস্কিল। এখানে আমি কিছু আগে আলোচনা করা হয়েছে বিষয় নিয়ে লিখব এবং নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্য নিয়ে এই প্রবন্ধটা শেষ করব।

    ১. জ্ঞান ও তার প্রয়োগ করার চাহিদা তো থাকবেই। এই নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে ছাত্র ছাত্রীরা খুব কম জ্ঞান অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয় যাবে না তো?

    — অনুসন্ধান কেন্দ্রিক ব্যবস্থা মানে এই না যে জ্ঞান অর্জন করা থামিয়ে দেওয়া। এতে জ্ঞান অর্জন করার পদ্ধতি অন্য রকম। সেই সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা এই প্রবন্ধের শেষে আছে।

    এইটুকু সন্দেহে ছাড়া বলা যায় যে নতুন কৌশল অনেক বেশি উন্নত। দেখা গেছে মস্তিষ্কর জ্ঞান অর্জন করার ক্ষমতার একটা সীমা আছে। আমাদের দুরকমের মনে রাখার ক্ষমতা তো আছেই, – long term ও short term, – আমরা এগুলো ব্যবহার করি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে। একটা ছাত্রর কোন কিছু যদি ভালো না লাগে, তাকে জোর করলেও শিখানো বা মুখস্থ করানো খুবই কঠিন, এবং করাতে সক্ষম হলেও, তার এই বিষয়ের প্রতি সারা জীবন ধরে বিতৃষ্ণা হয়ে যাওয়ার একটা বিশাল সম্ভাবনা থেকে যায়। মুখস্থ করা বিদ্যা বেশি ভাগ short term memory তেই যায়। ফলে ওই জ্ঞান খুব কম অথবা কোনো কাজে দেয় না, উল্টে ক্ষতি করতে পারে। ক্ষতি মানে long term memory তে একটা ত্রুটিপূর্ণ স্মৃতি অথবা ব্যাপারটা পুরোপুরি ভুলে যাওয়া (repression)।

    ২. বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক অথবা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় percentage marks অথবা standard grades ব্যবহার করা হয় না। তাহলে শিক্ষক অথবা মাতাপিতারা ছাত্র ছাত্রীদের প্রগতির উপর কি ভাবে খেয়াল রাখবে?

    — আগেই বোঝানোর চেষ্টা হয়ে standardised testing কতটা যুক্তিহীন হতে পারে। আর একটু বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে আমাদের এই মাপ কাঠির ব্যবহারের পদ্ধতির বিষয়ে নিয়ে ভাবতে হবে। এক দুই ঘণ্টায় কি সত্যি একটি ছাত্রর বুদ্ধি, জ্ঞান ও না না কর্মে দক্ষতা বোঝা যায়? ভেবে দেখুন আপনাদের অনেকেরই মনে আছে হয়ত কোনো একটা পরীক্ষা দিয়ে মনে হয়েছিল যে কেন যেন আরো কিছু লেখার ছিল, আপনি বিষয়ের সম্বন্ধে অনেক বেশি জানলেও সময়ের অভাবে লিখে উঠতে পারেননি। এবারে ভাবুন এমন একটা assessment system যাতে পরীক্ষা নেই তবে তার বদলে নিয়মিত গুনাত্মক পরিমাপ দিয়ে বর্ষব্যাপী assessment। নম্বর অথবা গ্রেড্স হলো সংখ্যাত্মক মাপকাঠি। এদের দ্বারা ছাত্রদের আসল প্রগতি বোঝা সম্ভব না। শিক্ষা যদি জীবনব্যাপী অনুসন্ধানকারী হয় থাকে, তাহলে একটা গুনাত্মক মাপকাঠি দরকার। ধরা যাক এক ছাত্রর অঙ্কর প্রগ্রেস বোঝা জরুরি হল। তখন দরকার একটা assessment sheet যা দেখে বোঝা যাওয়া উচিত যে এই ছাত্র কি ধরণের অঙ্ক করতে পারছে, সেই ধরণের অঙ্কতে তার জ্ঞান, দক্ষতা ও কৌতূহল কতটা, সেই ধরণের অঙ্ক দৈনন্দিন জীবনে লাগে কিনা অথবা এটার সুধু abstract/scientific এপ্লিকেশন আছে তার সম্বন্ধে সে কতটা সচেতন, সে সেই ধরণের অঙ্কর সঙ্গে অন্য বিষয়গুলোর এবং ইতিহাসের কি যোগাযোগ আছে তা সম্বন্ধে কতটা সজাগ, ইত্যাদি। এছাড়া এই বিষয় নিয়ে তার অন্যদের সঙ্গে কাজে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছে (গ্রুপ ওয়ার্ক), অন্যদের সাহায্য করার ইচ্ছে (শেয়ারিং / কেয়ারিং) আর আরো অনেক ফ্যাক্টর নিয়েই assessment হয়ে।

    ৩. ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশান জ্ঞান অর্জনকারী ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে কি ভাবে প্রভাব করেছিল?

    — আমাদের স্কুলগুলো কি ধরণের? সকালে গাড়ি আসলেই ছাত্রদের একদম ঠিক সময় স্কুলে পৌঁছে যেতে হয়। ঘণ্টার আওয়াজে ক্লাসে হাজির হয় পড়তে হয়। অনেকটা দশটা পাঁচটা শিফটিং ডিউটির মতন। স্কুল বিল্ডিংও না না রকম বিভাগে আলাদা করে রাখা যেখানে নির্ধারিত ছাত্ররা ছাড়া অন্য কেউ যেতে পারবে না। এটা যে কোনো ফ্যাক্টরির মতন – specialised departmentএ assembly line production র আলাদা আলাদা স্টেজ।

    এছাড়া পড়াশোনা একেবারে একা একাই করতে বাধ্য করা হয়। ছাত্রর কাজ হলো বেঞ্চিতে বসে পড়ে যাওয়া। আসে পাশে কি হচ্ছে, অন্যরা কে কিভাবে কি করছে সবই বারণ। ঠিক যেন assembly line র জন্য কর্মী তৈরী হচ্ছে।

    শেষে এই স্কুল গুলো থেকে ছাত্ররা প্রতি বছর বয়েস অণুযায় ব্যাচে ব্যাচে "পাস" করে বের হয় ঠিক যেন উৎপাদিত মাল। তাদের সার্টিফিকেট গুলো যেন মালের লেবেল – manufacturing date, ingredients, date of expiry?

    তাহলে আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার পদ্ধতিগুলো কি? আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার একটা সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ঠ হলো হোলিস্টিক দৃষ্টি ভঙ্গি যার থেকেই নানা পদ্ধতির উৎস। এই ব্যবস্থাতে বাঁধা অথবা অনুদ্বায়ী সিলেবাস বলে কিছু নেই তবে তার বদলে আছে নির্দেশক "ইউনিট"। শিক্ষকেরা এগুলো ব্যবহার করে নিজেদের মতন কারিকিউলাম ডিসাইন করে নিয়ে থাকে। লেখা আর পড়া দুটোই চলে এই ইউনিট গুলো ভিত্তি করে। এবং ছাত্রদের যেমন নতুন দক্ষতা শিখতে উত্সাহিত করা হয়ে, তাদের সেই ইউনিটের বিষয়ে আরো জ্ঞান অর্জন করতেও শেখানো হয়ে। এর সঙ্গে ছাত্ররা যত বড় হয় স্পেশালিস্ট শিক্ষকরা তাদের একেকটা ইউনিটের উপর আরো অনেক ভাবে ভাবতে, করতে এবং জানতে দেখায়। এই সব কিন্তু আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার নামে শিক্ষকদের একটা পরিকল্পনাহীন কর্মসূচি নয়। শিক্ষকদের প্রচুর মিটিং করে এক সঙ্গে পুরো একটা স্কুলের সেকশনের (primary বা secondary) কারিকিউলাম ম্যাপের থেকে ইউনিট প্ল্যান তৈরী করেতে হয়। ইউনিট গুলোর জন্য তারা অনেক সুপারিশ করা এবং ব্যক্তিগত টেক্সট, মাল্টি-মিডিয়া, ইত্যাদি ব্যবহার করার স্থির করে। এই বাছাইর পিছনেও আছে সেই হোলিস্টিক প্রিন্সিপাল — ইউনিটের সঙ্গে এক দেশের অথবা ছাত্রদের বাস্তব এবং দৈনন্দিন জীবনের সংযোগ হলো একটা বিশেষ ফ্যাক্টার। তাছাড়া বই এবং ডিজিটাল রিসোর্স ছাড়া field trip, ইন্টার্ভিউ এবং না না এক্সপেরিমেন্টের দ্বারা একটা একাডেমিক ইয়ারের ইউনিট ভিত্তিক পড়াশোনা নিয়ে এগিয়ে চলে। সব কিছু তদারকি এবং বোর্ডের সঙ্গে লিয়েসন করার জন্য প্রতিটি স্কুল সেকশনের একজন শিক্ষক coordinator হিসেবে কাজ করে।

    আধুনিক আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থা ছাত্র ছাত্রীদের সুধু মাত্র তথাকথিত "শিক্ষিত" করানোর একটা কৌশল, অথবা ছলনা নয়। আধুনিক ব্যবস্থার পরিপেক্ষিতে শিক্ষিত মানে একজন মানুষ যে নিজেই নিজেকে শিখিয়ে নিতে পারার ক্ষমতা রাখে ("learning to learn"). এর উদ্দেশ ব্যাচে ব্যাচে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার টেলি-কলার তৈরী করা না। জীবনে একজন সত্যি সত্যি calculated risk taker হলে কথা থেকে কথায় যেতে পারে তার কোনো সীমানা নেই। সে হয় উঠবে সেই "রেনেসাঁস ম্যান" যার কাছে কোনো বিষয় ছোঁয়ার বাইরে ছিল না। একই ছাত্রী হতে পারে একজন প্রোগ্রামার, আর্টিস্ট, বায়োলজিস্ট, চাষী এবং এমন কি লেখক। হোলিস্টিক কাঠামোর এই হলো আরেক বৈশিষ্ট্য: transdisciplinary system যাতে specialisation থাকলেও, overspecialization নেই। তা ছাড়া সেটা (specialisation) তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময়ের ব্যাপার। আর এটাও ঠিক বিদেশী উচ্চ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও একই সঙ্গে অনেক রকম বিষয়ে নিয়ে কাজ করার সুযোগ থাকে।

    ভারতে অনেক স্কুল আছে যারা এই ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। কলকাতায় একটাই স্কুল আছে যেখানে পুরোপুরি ভাবে আধুনিক শিখা ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। সারা ভারতে লেখার সময় ১১৩, তবে এর মধ্যে সবি যে পুরোপুরি ব্যবস্থাটা ব্যবহার করছে তা নয়। এদের মধ্যে অনেকেই সুধু একদম ক্লাস এগারো আর বাড়তে আধুনিক ব্যবস্থা অন্য কারিকিউলাম গুলোর সঙ্গেই চালু করেছে। অন্যরা আবার সুধু প্রাইমারি লেভেলে আধুনিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছে। এতে অবশ্য হোলিস্টিক কারিকিউলামের একটা মুখ্য দিক পুরোপুরি চাপা পরে যায় — লার্নিং কন্তিনুয়াম (continuum). আগেই বলেছি আধুনিক ব্যবস্থাতে কেমন ভাবে ইউনিট প্ল্যান করা হয়। এর সঙ্গে একটা কারিকিউলাম ম্যাপ কিন্তু এমন ভাবে তৈরী হয়ে যাতে প্রতি বছরের সঙ্গে প্রতি বছরের যোগাযোগ থাকে এবং থাকে যাকে বলে "ভার্টিকাল" ভাবে পড়াশোনা করার স্কোপ — না না বছরের ছাত্র ছাত্রীরা একই ক্লাস, প্রজেক্ট অথবা একটিভিটিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ। তাই জন্য যে কোনো স্কুলে সুধু একটা সেকশানে (primary, secondary, senior) ইন্টারন্যাশনাল কারিকিউলাম ব্যবহার হচ্ছে বলা হলে তাদের একটু সন্দেহর চোখে দেখাই ভালো।

    শেষে এটা জানার দরকার যে সত্যিকারের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা যেই স্কুলগুলো ব্যবহার করে থাকি সেগুলোতে কি সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছাত্র ছাত্রীরা যেতে পারে? হ্যাঁ বললে মিথ্যে বলা হয় যায়। এর কারণ হলো এই সব স্কুলগুলোর fees সত্যিই খুব বেশি। আন্তর্জাতিক স্কুলগুলোকে অনেক বার এলিটিস্ট। হাই fees এর কারণ এই স্কুলগুলোর জন্য যা ইনফ্রাস্ট্রাকচার লাগে সেটা সাধারণ স্কুলগুলোর থেকে অনেক বেশি। স্কুলগুলোর ইতিহাস হলো যে এগুলো স্থাপনা করা হয় embassy স্টাফেদের বাচ্চাদের জন্য। পরে অবশ্য অনেক প্রাইভেট স্কুল নব্বই দশকের শেষের দিক থেকে আন্তর্জাতিক কারিকিউলাম নিজেদের স্কুলগুলোতে ব্যবহার শুরু করে। এটাও বুঝতে হবে এডুকেশনও একটা বড় ব্যবসা। তবে যেটা আমি আগেই উল্লেখ করেছি, সিস্টেমের উন্নত দিকগুলো দেখেই এখন developed দেশগুলো নিজেরাই নিজেদের সিস্টেম পাল্টে নিচ্ছে। একটা উদাহরণ: সেটা হলো VELS — অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া স্টেটের শিক্ষা ব্যবস্থা।

    আমার মতে সাধারণ স্কুলগুলো ইচ্ছে করলে ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যেতে পারে। আমার ব্যক্তিগত ভাবে দেখা জাপানে একটা খুবই ছোট স্কুল একদম খুব কম বাজেট আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে চলেছে। নিউ মক্সিকোতেও কিছু "লো বাজেট" স্কুল আছে বলে শুনেছি। আরেকটা বড় ব্যাপার হলো যদি অনেক স্কুল মিলে নতুন ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক হয়ে তখন আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার বোর্ড গুলো আপনি থেকেই ব্যাপারটা আর্থিক ভাবে সহজ করে দেবে বলে আমার ধারণা। একটি international education boardএর অ্যানুয়াল কনফারেন্সে "elitism"এর বিরোধিতা করে অনেক কথা বলা হয়েছিল। বোর্ড একটি ব্যবসায়িক সংগঠন কখনই না। তাদের কারিকিউলাম প্রয়োগ করার বাধা আসলে হলো এক দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক চিন্তাধারা।

    ধরে নেওয়া যাক কোনো স্কুল ব্যবস্থা প্রয়োগ করার ইচ্ছুক এবং তাদের কাছে কোনো রাজনৈতিক বাধা নেই। একই সঙ্গে তারা খুব অল্প বাজেটেই ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরী করে নিয়েছে। তাদের কাছে তারপরের পদক্ষেপটাই সবচেয়ে কঠিন — শিক্ষকদের ট্রেনিং দেওয়া। শিক্ষকদের এই নতুন সিস্টেমে ঠিক ভাবে কাজ করতে হলে প্রচুর ট্রেনিং দরকার হয়ে। এমনকি তাদের নতুন করে অনেক কিছু শিখতে হয় এবং কিছু প্রফেশনালদের কাছে এটা ঠিক যেন স্কুল বা কলেজ লাইফে ফিরে যাওয়ার মতন। ট্রেনিং মাঝে মাঝেই চলতে থাকে বছরের পর বছর। অনেক সময়েই ট্রেনাররা দুখ করে বলে শিক্ষকরা কিছুতেই পুরানো "baggage" ফেলে দিয়ে এগোতে পারছেনা।

    এর সমাধান কি? আজকাল বেশি ভাগ developed দেশগুলো খুব দ্রুত নিজেদের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক মডেলে পাল্টে ফেলছে। বলা বাহুল্য এই পরিবর্তন ওদের অতি সাধারণ পাবলিক স্কুলগুলোর জন্যই চলছে, বিশেষ করে কোনো এলিট স্কুলগুলোর জন্য না। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশে এটা কতটা সম্ভব হবে সেটা বলা মুশকিল। হয়ত জনগণের সচেতনতা বাড়লে তার সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে উঠবে। অথবা আমাদের সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে যখন অন্য দেশগুলো আমাদের থেকে এতটাই এগিয়ে যাবে যে আমাদের পক্ষে এই ব্যাপারটা নিয়ে না ভাবলে প্রচণ্ড ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা পরিষ্কার হয় উঠবে। আশাবাদী হওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই, তাই আশা করব আপনারা যারা এই প্রবন্ধটা পড়েছেন, এই নতুন inquiry based শিক্ষা ব্যবস্থার উপর নিজস্ব গবেষণা করে হয়তবা নতুন প্রজন্মের শিক্ষার ব্যাপারে নতুন ভাবে চিন্তা করবেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১০ এপ্রিল ২০১৫ | ১৮৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন