এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থা — ১

    Shubhojoy Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৪ মার্চ ২০১৫ | ২০১০ বার পঠিত
  • আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের দেশে হয়ত অনেকের কৌতুহল থাকতে পারে কারণ যদিও প্রতিটি বড় শহরে তথাকথিত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল আছে, এদের শিক্ষা ব্যাবস্থার অথবা কারিকিউলামের কাঠামোর সঙ্গে আধুনিক শিক্ষা দর্শনের কতটা মিল সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ভারতে, এবং পৃথিবীর বেশি ভাগ দেশেই একই ব্যাপার: শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কি নতুন ভাবনা চিন্তা হয়েছে বা হচ্ছে সাধারণ মানুষরা জানেনা অথবা খবর রাখে না।

    এর কারণ?

    ১. ইন্টারন্যাশনাল স্কুল গুলো সাধারণত আর্থিক কারণে উচ্চ মধ্যবিত্ত অথবা উচ্চ শ্রেণীদের ছেলে মেয়েদেরই জন্য। সাধারণ মানুষদের পক্ষে এই ধরণের শিক্ষা তাদের ছেলে মেয়েদের দাওয়া ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই কারণে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার কারিকিউলামের বিশেষত্ব গুলো সম্মন্ধে সাধারণ মানুষদের অপরিচিতি অবাক হওয়ার কারণ নয়।

    ২. বিশেষ করে ভারতে একটা ভুল ধারণা আছে যে আধুনিক শিক্ষার সম্পাদন হলো প্রধানত ছাত্র ছাত্রীদের ব্রিটিশ GCSE বোর্ডের পরীক্ষার জন্য তৈরী করা। এতে আছে "O" আর "A" লেভেল এবং এগুলো আমাদের ICSE অথবা CBSE'র মতন। ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতে ICSE এবং ISCর উত্স ইংরেজদের সিনিয়র আর জুনিয়র কেমব্রিজ থেকে। আর বলা যেতে পারে CBSE ওদের GCSE'র একটা সহজ সংকরণ। বলা বাহুল্য কোন সার্টিফিকেশনের কোথায় কি দাম সেটা বোঝার জন্য বিশেষ গবেষণা দরকার হয় না।

    ৩. তথাকথিত ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষা ব্যবস্থা যেমন এক ধরণের উন্নত সার্টিফিকেশন (O অথবা A লেভেল) পাওয়ার জন্যে পড়াশোনা করা, তেমন আর একটা ভুল ধারণা হলো আধুনিক শিক্ষা হলো দৈনন্দিন পড়াশোনার মধ্যে কিছু নতুন এক্সপেরিমেন্টাল পড়ানোর কৌশল যেমন "প্লে টিচিং", ইত্যাদি। কেউ বা এইসব কে লোক দেখানো stunt বলে মনে করে, আর কেউ ভাবে এগুলো হয়েত খুব একটা জরুরি না হলেও এসবের কিছু ভালো প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে।

    যদিও ইন্টারন্যাশনাল স্কুলগুলো, বিশেষ করে আমাদের দেশে যে গুলো GCSE অথবা Cambridgeএর সঙ্গে যুক্ত আছে এবং আধুনিক অথবা আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োগ করে বলে প্রচার করে, এই বিষয় আমাদের এটা বুঝতে হবে যে বিশেষ একটা দেশের কারিকিউলাম কে আন্তর্জাতিক বলা ঠিক নয় (এই ক্ষেত্রে ব্রিটিশ)। আর যদি আধুনিকতার প্রশ্ন ওঠে তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার দর্শন, কাঠামো এবং সম্পাদন নিয়ে অনুসন্ধান করলেই তাতে নতুন কিছু আদৌ আছে কিনা তা জানা যেতে পারে।

    প্রথমেই বলা দরকার প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি লেভেলে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা কেন্দ্রিক নয়। এই নিয়ে আমাদের দেশে নানা রকম মতামত আছে। তবে এই ব্যাপারে আমি এখন বিস্তারিত আলোচনা করবনা। তার কারণ আশাকরি পরে পরিষ্কার হয় উঠবে। আরেকটা প্রশ্ন হলো যদি আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা এখনকার প্রচলিত ব্যবস্থাগুলো থেকে অনেক উন্নত হয় থাকে, তাহলে সেটা কারা কোথায় ব্যবহার করছে? এর উত্তরও আমি দেব তবে কিছু পরে। আগে আসুন আমরা দেখি এই আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাপারটা কি আর এটা পুরানো সিস্টেমগুলোর থেকে কি ভাবে আলাদা।

    শিক্ষার লক্ষ্য কি? জ্ঞান অর্জন করা। হয়ত এটা খুব সরল ভাবে বলা হয়েছে তবে উত্তরটা এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থার উপর প্রয়োগ করলে খুব একটা ভুল বলে মনে হয় না। কি ধরণের জ্ঞান, তাতে কি হবে এই সব প্রশ্ন আমার প্রবন্ধর স্কোপের বাইরে। এই টুকুই ধরে নেওয়া যাক যে এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থা জ্ঞান অর্জন কেন্দ্রিক।

    আধুনিক চিন্তা ধারা একরকম এর বিপরীত। জ্ঞান অর্জনকে মনে করা হয় সারা জীবনের কাজ (life long learning)। তা আবার নতুন কি? সব শিক্ষিত লোকই এই ব্যাপারটা শুনেছে। তবে ভেবে দেখুন তো সত্যিই কতজন লোক সেই স্কুল কলেজের মতন আজো শিখেই চলেছে? আর তার চেও বড় ব্যাপার হলো আমরা যা স্কুল কলেজে শিখে ছিলাম, তার কতটা আমাদের মনে আছে, অথবা মনে থাকলেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তা কতটা প্রয়োগ করে থাকি? জ্ঞান কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার মূল পার্থক্য হলো আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা জ্ঞান কেন্দ্রিক নয় এবং তার লক্ষ্য সারা জীবন ব্যাপী শিক্ষা অর্জন করার পদ্ধতির উপর বেশি জোর দেওয়া। জ্ঞান অর্জন কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাতে নিশ্চই কোনো জটিল সমস্যা আছে। সমস্যাটা ঠিক কি জানতে হলে আমাদের এখনকার প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাটার উত্স, ইতিহাস এবং চাহিদা নিয়ে জানতে হবে।

    যদিও এর আগে প্রধাণত "ইংলিশ মিডিয়াম" স্কুলগুলোর কারিকিউলাম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, এর মানে এই না যে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক (বেশির ভাগ "বাংলা অথবা ভার্নাকিউলার মিডিয়াম") স্কুলগুলো জ্ঞান অর্জন কেন্দ্রিক কারিকিউলামের থেকে বিচ্ছিন্ন। কিছুদিন আগেই একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল যিনি মনে কারেন ইংরেজি ও বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোর ছাত্র ছাত্রীদের ভাবনা ও চিন্তা একেবারে গোড়াতেই আলাদা। এই রাকাম ধারণা সুধু হাস্যকর নয় তবে একটা ভীষণ ভাবে ভুল এবং হয়তো ক্ষতিকর। বাস্তবে এই মিডিয়ামগুলোর ভেদাভেদের কারণ সরকারী পলিসির দ্বারা প্রায়ে একই ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা কৌশলী ভাবে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন ভাষায়ে প্রয়োগ করা যার দরুন উচ্চ এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন শ্রেণীদের মধ্যে ক্লাস ডিভিশন এখনকার মতনই ভবিষ্যৎও বজায় রাখা যায় (status quo)। তবে ব্যাপারটা হয়ত এই status quoর ব্যাপারটা আরেকটি প্রবন্ধের বিশয়। এখানকার প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পাশ্চাত্য উৎসর কোনো প্রমান দরকার আছে বলে মনে হয় না তবে যেটা বোঝা দরকার হলো সেই উৎসর কারণে আমদের উপর কিভাবে কুপ্রভাব পরেছিল। এ ছাড়া আরো জানার আছে আধুনিক ব্যবস্থা নতুন প্রজন্মকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারে যাতে অতিতের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না হয়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৪ মার্চ ২০১৫ | ২০১০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • hu | ***:*** | ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০৬:১২68641
  • এটা চলুক
  • ন্যাড়া | ***:*** | ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০৬:৩৮68642
  • সুইপিং ওপিনিয়নেটেড স্টেটমেন্টে ভর্তি। প্রবন্ধ বলে ঠিক মনে হচ্ছেনা, অনেকটা সোপবক্স লাগছে।
  • শুভজয় | ***:*** | ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৩৮68643
  • "সুইপিং ওপিনিয়নেটেড স্টেটমেন্টে ভর্তি" — কিছু উধাহরণ ভালো হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন