এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শীতকাল কবে আসবে, সুপর্ণা?

    কুশান গুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৬৪৪ বার পঠিত
  • শীতের সেই শিহরিত সন্ধেগুলো মনে পড়ে, আশিস?

    হাড়জমানো বাঘের মত জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ত দক্ষিণবঙ্গের ডিসেম্বর-অধ্যুষিত 'মাওয়া' গ্রামে। বাঁদর টুপি, রঙিন মাফলার ও ধূসর চাদরে ঢেকে যেত নানাবয়সের মুখ, কান, নাকসকল। সন্ধে থেকে রাত শীতকালীন গ্রামবাংলা মেতে উঠত পাঁচদিন ব্যাপী যাত্রানুষ্ঠানে। এ সেই সুসময়, যখন খেজুর রসের মৌতাত ও শস্যফলনের হাসি বাংলার ঘরে ঘরে, আপামর বাংলার গ্রামীণ জীবনের এ এক ঐকান্তিক উদযাপন। গ্রামের, গঞ্জের আবালবৃদ্ধবনিতাকে জাপটে ধরত শীতের বিশ্রুত যাত্রাজ্বরের তাড়স।

    ক্লাস ফোরে দেখা শান্তিগোপাল অভিনীত 'তরুণ অপেরা'র 'কালপুরুষ', সাঁওতাল বিদ্রোহ অবলম্বনে। ১৯৮১ তে শৈশবে দেখা সেই যাত্রার দৃশ্যগুলি আজ স্মৃতিতে আবছা। কিন্তু স্মৃতির নিজস্ব গ্যালাক্সীতে আজো উজ্জ্বল আলোকিত শেষ দৃশ্যটি: সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা এবং  অভ্যুত্থানের স্যাঙ্গাতকুলের ধনুক উর্ধ্বমুখী, ধনুকের ছিলা আকাশের বিপরীতে টানটান, দৃপ্ত ভঙ্গিমায় ফ্রিজ শটে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁরা। সঙ্গে সেই শান্তিগোপালের সংলাপ, বসন্ত আসেনি, আসেনি পলাশে রঙ, তথাপি, সেই অমোঘ বজ্রনির্ঘোষ: 'আজ থেকে রাতের আকাশে জ্বলজ্বল ক'রবে, (একটু থেমে) কালপুরুষ'।

    আমি আর আমার পিসতুতো ভাই আশিস মিলে এই সময়ে কোনো এক অলিখিত ও উদ্দেশ্যহীন প্রেরণায় যাত্রা যাত্রা খেলতাম, তরবারি ও তীরধনুক (গ্রামের স্থানীয় ভাষায় বলা হত 'তীর কাঁড়') বানাতাম নানাবিধ গাছের ডাল কাটারি দিয়ে কেটে, কাঁচা, অপটু কৌশলে। তারপর 'কালপুরুষ' অবলম্বনে তীর ছুঁড়তে ছুঁড়তে 'রামব্রা কেচে কেচে'র দ্বৈত, অবুঝ সাঁওতালি চিৎকার শুরু হতো। দেশের বাড়ির নির্জন কক্ষে চলত বালকোচিত যাত্রাক্রীড়া, কেননা তখনো কাটেনি নিশিরাতের সেই মহুলমেশা যাত্রাব্যাধিঘোর। কিন্তু, ওই 'আজ থেকে রাতের আকাশে' শীর্ষক শেষ ডায়লগটি কে বলবে তাই নিয়ে দুজনের মধ্যে একটা অহেতুক রেষারেষি কাজ করত। শেষের দিকে 'কালপুরুষ'-উচ্চারণ করতে হতো অনেকটা টেনে, শান্তিগোপালীয় বলিষ্ঠ কায়দায়: ' কা আ আ ল পুরুষ', এভাবে।

    পাঁচ দিনই যে-দর্শক যাত্রা দেখতে পেত তার বিশেষ টিকিটের নাম ছিল 'সিজন টিকিট'। সিজন টিকিট যার হাতে থাকত সেই সৌভাগ্যবান নিঃসন্দেহে ছিল সকলের ঈর্ষার সঙ্গত কারণ। আমরা বড়দের পটিয়ে চেষ্টা করতাম অন্তত চারটে, ন্যূনতম তিনটে পালা যেন দেখতে দেওয়া হয়। বিভিন্ন বাজেটের রকমারি সমস্ত যাত্রাদল ছিল। সবাই কলকাতার চিৎপুরের। ঘ্যাম দল ছিল নট্ট কোম্পানি, অগ্রগামী, তরুণ অপেরা প্রমুখ। এদের মধ্যে খ্যাতনামা ছিলেন বীণা দাশগুপ্তা নামের এক লিভিং লেজেন্ড। তিনি গায়িকা-নায়িকা। অদ্ভুত মাদকতা ছিল তাঁর কণ্ঠস্বরে। বীণা ছিলেন তৎকালীন মেল ডমিনেটেড যাত্রা শিল্পের একাকী বিদ্যা বালান। একটি গান মনে পড়ে গেল অই বীণাকণ্ঠের: 'পথের খোঁজে, পথ হারিয়ে, আমি কোথায় এলাম?' এই সব কুড়িয়ে পাওয়া গানের অনিবার্য যাত্রাসুরকার এক অনিবার্য নাম, প্রশান্ত ভট্টাচার্য(বড়)। ছোট প্রশান্ত কে, তা কোনোদিনই জানতে পারিনি।  বীণা অভিনীত সবচেয়ে বিখ্যাত কালজয়ী যাত্রাপালা ছিল :'মীরার বঁধুয়া'। ছিলেন গায়ক-নায়ক স্বপনকুমার নামের এক বিখ্যাত অভিনেতা। তাঁর এক অমর ডায়লগ, মৃত পিতার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ভাইকে আগলে রক্ষা করবেন, আজীবন, প্রয়োজনে প্রাণ দিয়ে। সেই ডায়লগ মনে পড়ছে, কিন্তু, পাঠক, কন্ঠস্বর কি উপমা দিয়ে বোঝানো যায়? কি সেই ডায়লগ? স্বপনকুমার বলছেন, কিছুটা শ্লথ ও বিজড়িত কন্ঠে: 'কাশী তো আমার ভাই নয়, সে আমার ঈশ্বর!' 'ঈশ্বর' বলার অব্যবহিত পরের নীরবতা যেন মুহূর্তটিকে ঐশ্বরিক গরিমা দিত। সব ভুলে গেছি, তবু এমন মুহূর্ত তো ভুলিনি, এরকম গতকাল যেন ঘনিয়েছে, স্মৃতির চেয়েও ব্যক্ত সেই শীতের কাল।

    একটু পরের দিকে শিবদাস মুখার্জি নামে এক অ্যা‍ংগ্রি ইয়ং ম্যান এসে ক্ল্যাসিক্যাল যাত্রার চিরাচরিত ধারণাকে ঘেঁটে দেন। শার্দুল জারাক খান দেখতে পাচ্ছি না, আফশোস, ক্রূর অ্যা‍ন্টি হিরোকে দেখতে পাচ্ছি না, এই হতাশা কুরে কুরে খেত। প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিত দুপুরের বিবিধ ভারতীর যাত্রাপালার স্বল্পকালীন বিজ্ঞাপনে আকর্ষণীয় ডায়লগ। তাছাড়া  ভক্তকাকুর টেপরেকর্ডারে শোনা ক্যাসেটবন্দী শার্দুল জারাকের দুর্লভ অট্টহাস্য, যা ন্যূনতম বত্রিশ সেকেন্ড স্থায়ী হত, যা শুনে বাগদাদের বাঘ কুঁকড়ে কুকুরছানার মত আচরণ করত। এবং সেই ভয়ঙ্কর জারাক যখন প্রেমের কাছে অসহায় হয়ে হাঁটু মুড়ে নতজানু, তখন করুণা যেন নতুন অভিঘাত তৈরি করত ক্লাস সেভেনের আনাড়ি হৃদয়ে। এ সেই ঐশী করুণা, যার কথা, তথাগতের নিঃসঙ্গতায় ভর ক'রে পরে লিখবেন অস্তরাগের কবীর সুমন। সেই করুণা, যা অজাতশত্রুকে চ্যালেঞ্জ ঠুকে বলে: ' আমি বুদ্ধের দাসী।' কে এই হিংস্র একরোখা রক্তস্নাত লড়াকু জারাক( আসল উচ্চারণ Zaraq), কেমন লাগে তাকে স্টেজে, যখন সে মানবিক প্রেমের কাছে অসহায়? ভেবে ভেবে নিরর্থক প্রহর কেটে গেছে না-বুঝ কৈশোরের।

    নানা ধরণের পালা হতো। ঐতিহাসিক, কনটেম্পোরারী (সামাজিক), রাজনৈতিক ইত্যাদি। শান্তিগোপাল অভিনীত 'লেনিন' ক্লাস এইটে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। হুবহু একই দাড়ি, একই রকম টাক, লেনিনের ভূমিকায় অনন্য শান্তিগোপাল, বিপ্লব স্পন্দিত বুকে তাঁকেই লেনিন বলে ভ্রম হয়। নিখুঁত মেকআপে সমস্ত চরিত্র ইউরোপীয় ধরনের বেশভূষায় স্টেজে স্বচ্ছন্দে হাঁটছে, ফিরছে। বাংলার সেই ডিসেম্বরে যেন নেমে এসেছে নভেম্বর বিপ্লব। একটি দৃশ্য এখনো মনে আছে। লেনিনপত্নী নাদেঝদা স্বামীর(নেতার) নির্দেশ অমান্য করে বৃদ্ধার ছদ্মবেশ নিয়ে কোনো একটা বৈপ্লবিক টাস্ক করতে গেছেন, লেনিন মিটিমিটি হাসতে হাসতে ধরে ফেললেন।

    পাশাপাশি মনে পড়ছে 'সীতা বিসর্জন' নামের একটি সামাজিক যাত্রাপালা দেখেছিলাম ১৯৮৬ তে, ক্লাস নাইন তখন। কোন অপেরা মনে নেই।  উক্ত যাত্রাটির কাহিনীকার দুলেন্দ্র ভৌমিক। দুলেন্দ্র সম্ভবত আনন্দলোক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। অপর্ণা সেন ও দিলীপ রায় অভিনীত ' নীলকন্ঠ' ছবিও এই কাহিনী অবলম্বনে। প্রসঙ্গত, ছবিটি দেখে সেই বয়সেই মনে হয়েছিল প্রসেনজিৎ আন্ডারঅ্যাক্টিং করতে সক্ষম। কাহিনীটি এইরকম: কলেজ স্ট্রিটের এক পাবলিশার (মালিক) গোবিন্দ নামের কোনো এক কর্মচারীর খোঁজ না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে, এবং বাধ্যত, সোনাগাছি  যান। সোনাগাছিতে গিয়ে নিজের ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়া বোনকে বেশ্যারূপে সনাক্ত করতে পারেন। এরপর নানা কাঠখড় পুড়িয়ে তিনি ওই বোনকে নিজের বাড়িতে, সকলের বিরুদ্ধে, সমাজের রক্তিম ভ্রূকুটি অগ্রাহ্য করে, ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এতে তাঁর যৌথ পরিবারের সবাই তাঁর বিরুদ্ধে চলে যায়। একরোখা তিনি তখন বোনকে নিয়ে আলাদা বাসায় যান। একমাত্র ছোট ভাই (প্রসেনজিৎ) তাঁকে সমর্থন করে। এ ছিল প্রান্তিক ও সমাজচ্যূত মানুষকে মেইমস্ট্রিমে ফেরানোর স্পর্ধিত সামাজিক আখ্যান। উক্ত ছবিটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, যাত্রাটিও তাই। যাঁরা 'নীলকন্ঠ' দেখেছেন তাঁরা স্মরণ করে দেখুন সোনাগাছির মাসির ডায়লগ:' মাছ খাইনি, মাছ খাইনি, মাছের পেটে কাঁটা/ নাং করিনি, নাং করিনি, নাঙের পিঠে কাঁথা', এবং পরক্ষণেই  অপর্ণার ঈষৎ বিরক্ত হাস্কি কন্ঠস্বর: ' আহ, মাসি! ফালতু খিস্তি করছ কেন?' একই ধরণের বিস্ফোরক উপাদান উক্ত 'সীতা বিসর্জন' যাত্রাপালায় পূর্ণ মাত্রায় ছিল। শুধু তফাৎ এই যে, 'নীলকন্ঠ' ছবিতে কাহিনী মিলনান্তক ছিল, আর 'সীতা বিসর্জন' ছিল বিয়োগান্তক। শেষ দৃশ্যে, আপ্রাণ, চোখে জল আটকাচ্ছে নাকাল দর্শক, মৃত্যুপথযাত্রী সীতার মুখে নরম আলো পড়ছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে বিষণ্ন বিরহসুর, অন্ধকার থেকে তার শরীরের ওপর ঝুঁকে রয়েছে অসহায় দাদা, আসন্ন মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে সীতা বলছে, 'দাদা, সেই গানটা শোনাও, যেটা ছোটবেলায় শোনাতে...'

    আর একজনের কথা না বললেই নয়। তুখোড় যাত্রাড়ু ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়। এই ভদ্রলোক ফাটানো সংলাপ লিখতেন। প্রথমদিকে পৌরাণিক পালা করতেন। পরে সামাজিক পালায় সরে আসেন। সেই সময় যখন পাঞ্জাব সমস্যায় ইন্দিরাতনয়ের, তথা ভারত সরকারের,  ন্যাশনাল ইন্টিগ্রিটি তুমুল মাত্রায় বিপন্ন, তখন ভৈরবের সেই  যুগোপযোগী দৃশ্য মনে পড়ে: একজন অবলীলায় একটি ভারতের ম্যাপ আঁকা কাগজ কুচিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিল। কুড়োচ্ছে এক পাগল, একটা একটা করে  টুকরো কুড়োতে লাগল সেই পাগল, স্টেজের আলো রঙ বদলাতে লাগল, আর সেই পাগল কাগজ কাউন্ট করতে লাগল-'পাঞ্জাব, গুজরাট, কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড...' একে একে খন্ডিত ভারতবর্ষ কুড়োতে লাগল সেই পাগল, তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল, এবং উদ্বুদ্ধ দর্শকের  করতালিতে উষ্ণ হয়ে উঠল শীতের মায়াবী রাত।

    বড় বড় দলের পাশাপাশি স্বল্প বাজেটের ছোট ছোট দলও ছিল। গ্রামগুলি বছরভর মেতে থাকত রিহার্সাল ও প্রস্তুতিতে। মেদিনীপুর জেলার একটি গ্রামের স্বনামধন্য 'নিউ তরুণ অপেরা'র যাত্রা দেখতে যাচ্ছি রাতের ধানে ঘেরা আলপথ বেয়ে অন্ধকারে আমরা ক'জন: যথাক্রমে রথীনদা, টোটনকাকু, বাবলুদা, দেবুদা, আশিস, বুবু ও আমি। রথীনদার হাতে একটি লম্বা লাঠি, সে অন্ধকারাচ্ছন্ন আলে সতর্ক লাঠি ঠুকতে ঠুকতে যাচ্ছে। আমাদের আনুমানিক বয়স তখন ১২ থেকে ১৫ র মধ্যে। অনেক অপেক্ষার পর গভীর রাতে শুরু হলো 'সিরাজদৌল্লা'। দেবুদা ও টোটনকাকু দেখাল, ' ওই যে শাম চৌধুরী'। তরুণ শাম (শ্যাম নয়) চৌধুরী সুদর্শন, তুখোড় অভিনেতা। এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। পলাশীর প্রান্তরে ভারতের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার বিষণ্নতা বুকে নিয়ে ভোররাতে আলপথ দিয়েই ফেরা।

    পরদিন দুপুরে দেশের বাড়িতে হৈ হৈ কান্ড। প্রবল শোরগোল। কি ব্যাপার? গত রাতের দেখা শাম চৌধুরী এসেছেন, এখন মেকআপহীন, পরনে উজ্জ্বল রঙিন ফুলফুল ছাপ একটি লুঙ্গি, তার ওপর একটি সাধারণ কাচা শার্ট। সঙ্গে সঙ্গে কাকিমারা অতি ব্যস্ততায় শরবত তৈরি করে ফেললেন। শুরু হল সুদর্শন শামের আপ্যায়ন। কেউ তালপাখা নিয়ে বাতাস করছেন, কেউ বলছেন, দোহাই শাম, অন্তত একটা গান শোনান, তরুণীকূল উড়ুউড়ু, ফিদা।

    তারপরে বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব গল্পটল্প সেরে যত্নে পাতা আসনে পান্তাভাত নিয়ে বসলেন। সঙ্গে ধূমায়িত শাকভাজা, থেঁতো কুচো মাছভাজা, টাটকা কাঁচা লঙ্কা ও চাট্টি নুন। কাকিমাদের অবিশ্রান্ত পাখার বাতাস চলতেই লাগল। শেষে সিরাজদৌল্লা পান্তা শেষ করে তৃপ্তিসহ আমানিতে শেষ নুনটুকু মেরে চুকচুক করে খেলেন। তারপর কাকাদের সঙ্গে মাদুরে বসে টোয়েন্টি নাইন খেলতে বসলেন।

    ১৯৮৮ থেকে ধীরে ধীরে টলিউডের নায়কের সংক্রমণ শুরু যাত্রাতে। এবং এই সময় থেকে বাংলার যাত্রার অধোগতির শুরু। যাত্রার সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত রক্ত ঘাম ফেলা মেহনতী সাবেকী নায়ক নায়িকাদের জায়গা দখল করল টলিউডের তুলনামূলকভাবে বেশি গ্ল্যামারাস, অথচ ঝড়তি পড়তি নায়ক নায়িকারা। সন্তু অভিনীত, সমরেশ বসুর কাহিনী অবলম্বনে, যাত্রা দেখেছি খালশিউলি নামক গ্রামে। মন্দ লাগে নি। কিন্তু সন্তু অল্প আয়াসেই আদতে যেটা নামালেন সেটা আর্বান নাটক। উদ্যোক্তারা যাত্রার শেষে সন্তুকে অনুরোধ করলেন একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে। সন্তু অনুরোধ রাখলেন। হাততালি পড়ল।

    এরপরের ঘটনা সবারই জানা। দূরদর্শন ঢুকল। সিরিয়াল এল। হিন্দি অতিদ্রুত বাংলার নগর থেকে শহর খেয়ে ফেলছিল। এবার আগ্রাসী হিন্দি ধ্বংস করতে লাগল বাংলার স্বকীয় গ্রামসমূহ। কেবল টিভি এসে শেষ পেরেক ঠুকে দিল। এরপর যাত্রার নামে চলতে লাগল অশালীন মুম্বাইয়া অনুকরণ। যাত্রার নামে যে জঘন্য, গা ঘিনঘিনে মুম্বাই-উচ্ছিষ্ট আজ পড়ে আছে তা দেখে আজ গ্লানি হয়।

    শীতকাল ফিরে আসছে, সুপর্ণা, তোমাকেই লিখছি, এখন রাত। সেই কাঁচা রাস্তা বেয়ে 'মাওয়া' গ্রামের ধুলাধুসরিত 'কাবাগড়া'র বিস্তীর্ণ প্রান্তর, যেখানে আমরা অসমান জমিতে শতরঞ্জির ওপরে 'ভুলি ভেদাভেদ জ্ঞান' একসঙ্গে বসতাম রাত জেগে! সেই যাত্রা, যা চিরন্তন সিপিএম-কংগ্রেস ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিত, ভুলিয়ে দিত সিপিএম-সিপিআই এর মেদিনীপুরের শরিকি রক্তাক্ত লড়াই...

    ওই যে শান্তিগোপালের নতুন পালা, 'শেরউড বনের রবিনহুড' নামবে, ফ্রায়ার ট্রাক দৌড়ে যাবে, আর সোনাগাছির সীতার মুখে পড়বে উষ্ণ, মেদুর আলো, রাগী শার্দুল দাঁড়িয়ে থাকবেন অদূরেই, অনন্ত প্রতীক্ষার শাম চৌধুরীও কাছেই কোথাও, যাত্রালক্ষী বীণা দাশগুপ্তা তাঁর সুললিত কন্ঠে গেয়ে উঠবেন কৃষ্ণের ভজন, আমাদের এই অনন্ত যাত্রায় ড্রপসিন কখ্খোনো পড়বে না, দেখো।

    আর, টুপটুপ ক'রে সারারাত সবার অলক্ষ্যে বাইরে পড়বে শিশির।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৬৪৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্রতিভা | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০০65473
  • অসাধারণ লেখা। যাত্রাপালার আসরে মফস্বলে মেয়েদের ভিড় কিন্তু কম থাকতো। কিন্তু ছোট হবার সুবাদে আমরা চান্স পেতাম। ঠিক এইরকমই আনন্দ হতো, এইরকমই মনভার। কৌশিক যেন ছোটবেলাটা ফিরিয়ে দিলে।
  • স্বাতী রায় | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৮65474
  • যাত্রা দেখি নি কখনো - কিন্তু বীণা দাশগুপ্তাকে দেখেছি! আজ দুঃখ হয় যে সেদিনের চোখে ওঁর পুরো কৃতিত্বটা বুঝি নি ! তবে যেটুকু মনে আছে খুব পার্সোনালিটি ওলা চেহারা - ঘরে ঢুকলেন আর কেমন ঘরটা ওঁর চারপাশেই ঘুরতে লাগল ! মনে পড়ে গেল!

    লেখাটা দুর্ধর্ষ!
  • Debasis Adhikari # দেবুদা | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩০65475
  • লেখটা বেশ ভালো লাগল....এক্কেবারে Nostalgic feelings এনে দিল | চালিয়ে যাও ......
  • মহুয়া সেনগুপ্ত | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৬65468
  • অপূর্ব। এ যেন এক ফেলে আসা সময়ের জায়মান দলীল। মফস্বলে বড় হওয়া আমি যেন ফিরে পেলাম শৈশবের সেই ঝকঝকে সন্ধ্যাগুলো। সংগ্রহে রাখার মত লেখা।
  • মহুয়া সেনগুপ্ত | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৬65467
  • অপূর্ব। এ যেন এক ফেলে আসা সময়ের জায়মান দলীল। মফস্বলে বড় হওয়া আমি যেন ফিরে পেলাম শৈশবের সেই ঝকঝকে সন্ধ্যাগুলো। সংগ্রহে রাখার মত লেখা।
  • সুব্রত বসাক | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫৯65476
  • খুব ভালো লাগল। আমিও অনেক যাত্রা দেখতাম । মনে পড়ে গেল সেই সব দিনের কথা । শিবদাস মুখোপাধ্যায়ের খোঁড়া বাদশা, কালা শের দেখেছি। উনি ঐতিহাসিক পালা ই করতেন। আর কয়েজনের কথা মনে পড়ল । বীণা দাসগুপ্ত, ছন্দা চ্যাটার্জি, শেখর গাঙ্গুলী, দ্বিজু ভাওয়াল, রাখাল সিং ইত্যাদি । শীতের একটা বড় আকর্ষণ ছিল এই যাত্রা ।
  • ! | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৮65469
  • কিন্তু
    বাংলা বিহার ঊড়িষ্যার নবাব সিরাজৌদ্দল্লা

    কখনো কাঁচা পেঁয়াজ ছাড়া মুড়ি খান না
  • লোপামুদ্রা বল সরকার | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:০৪65477
  • খুব ভালো লাগলো , যাত্রা দেখার অভিজ্ঞতা নেই ।।… তবুও ছবির মত যেন একটা যুগ সামনে উপস্থিত হলো ।
  • বিপ্লব রহমান | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৩65478
  • "সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে"...

    এই রকম শেকড় সংবাদ আরো লিখুন। হা শৈশব!
  • Sampad Roy | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:২১65479
  • আহা আহা সব যেন চোখের সামনে ভাসছে । যাত্রালক্ষ্মী বীণা
    দাশগুপ্তা, নিউ বিশ্বরূপ যাত্রা সংস্থার কিংবদন্তি নায়ক স্বপনকুমার , বা নায়িকা বেলা সরকার ।

    গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম , নট্ট কোম্পানি এর সেই অমর যাত্রাপালা
    বা ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় এর সব অসাধারণ রচনা ।

    শীতকাল কে জড়িয়ে থাকা এই সব চিরকালীন স্মৃতি সত্যি সত্যি হারিয়ে গেলো। এখন এই মাঝবয়সে এসে এইসব লেখা পড়ে মাঝে কান্না পায়।

    দারুন লেখা ।
  • Rakhi Banerjee | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:৫৬65470
  • যাত্রা দেখার সুযোোগ হয় নি ,লেখাটি পড়ে চোখেের সা মনে সব দেখতে পাচছিি আর ও লেখা চাই ।।অভিিজ্ঞতা শেয়ার করা র জন্য ধন্যবাদ
  • ঝরা | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:৪৩65471
  • যদিও সেভাবে কখনও যাত্রা দেখা হয়ে ওঠেনি তবে বীনা দাশগুপ্তা, ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়, শান্তি গোপাল, নট্ট কোম্পানি... এইসব নামগুলো মাইকে শুনতে শুনতে আর এনাদের ছবি পোস্টারে, খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনে দেখতে দেখতেই বড় হয়েছি আমরা। যাত্রার নামগুলো বরাবরই খুব আমার খুব আকর্ষণীয় মনে হয়। লেখাটা পড়ে খুব আফসোস হচ্ছে তখন যাত্রা না দেখার জন্য। ইশশ্ এখন যদি একবার সুযোগ পাওয়া যেত...।
  • Prabir Banerjee | ***:*** | ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:০৫65472
  • Nice description.How could you remember those days in Mawa after a long time.Now a days jatras are not so much attractive as before. Nice remembrance. 9
  • নাহার তৃণা | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩১65480
  • এমন মনোরম বর্ণনা কুশারদা আপনার, যাত্রাপালা সম্পর্কে বিদুবিসর্গ জ্ঞান না থাকা পাবলিক হিসেবে এ লেখা পাঠে, নিজেকে একদমই উটকো মনে হয়নি। লেখার হাত ধরে আমিও কেমন দিব্যি রাতের ধানে ঘেরা আলপথ বেয়ে অন্ধকার টপকে গিয়ে বসে গেছি 'সিরাজদৌল্লা' দেখবো বলে! দারুণস্য দারুণ, ভ্রাত!
  • নাহার তৃণা | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৫65481
  • আন্তরিকভাবে দুঃখিত, বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাবকে চাক্ষুসের উত্তেজনায় আপনার নামটা ভুল লেখেছি কুশানদা। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার বিপ্লবী আহ্বান থাকলো ভ্রাত। :)
  • Du | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:২৪65482
  • দারুন লেখা। অদ্ভুত ভালো লাগলো। সিরাজদ্দৌল্লা কি রেডিওতেও হত?
  • রহো | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:৩৭65483
  • এ যেন এক ঘুমিয়ে পড়া আ‍্যলবাম আবার জেগে উঠল তোমার কলমের খোঁচায়। আমরা গরুর গাড়িতে বিছানায় শুয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের কুঠীঘাট থেকে গভীর রাতে যাত্রা দেখে ফিরতাম।

    সেই সময় যন্ত্র শিল্পী যা মঞ্চের বামদিকে বসতেন। তাঁদের আগমন ও বিভিন্ন বেলের আওয়াজ জানান দিত যাত্রা আরম্ভ হয়ে কত বাকি। এখন আর বেল পড়েনা।

    আশির দশকে গ্রামে গ্রামে ভিডিও হলের রমরমা মানুষের রুচি পাল্টে দিতে থাকে। পাল্লা দিয়ে যাত্রাপালার ধরনের পরিবর্তন ঘটে।
    তবে এতো সবের পরেও যাত্রার প্রতি ছোটদের টান অটুট আছে। এবার কালিপুজায় গ্রামে গিয়ে দেখলাম সকাল থেকে ছেলেররা চাটাই পেতে জায়গা ধরে রাখছে। ওদের কথায় সিনেমাতো মোবাইলে সবসময়ই দেখা যায় কিন্তু যাত্রা বছরে একবার!
    কালের নিয়মে কথকথা, পুতুলনাচ, হারিয়ে গেল প্রায়। আসলে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো আয়োজকরা হারিয়ে যাচ্ছেন! তাই উদ্যোগ এর অভাবে আয়োজন কম হয় আজকাল। ছেলে ছোকরাদেরকে আকর্ষন বেড়েছে অর্কেস্ট্রা আর DJ তে....... যাত্রা পালার ভবিষ্যত তাই সময়ের হাতে।

    তবু কোনো ভর সন্ধ্যায় কানে ভাসে মাইকের আওয়াজ মি...........রা......র ....... বধুয়া.... শুরুটা স্কুল বাজারে আর শেষ টা রাশময়রার চকে।
  • Tapas Dey | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:২৮65486
  • Jatra nie bornonata khubsundar hoiechhe, bishhesh kore lekhaata somoi ke dhore rakhte perechhe kintu eta goddo hole thik achhe notuba ektu rusher obhab bodh korchhi...

    Amar soisob gramei ketechhe tai share korchhi..
    Grame jatra houa mane saatdin age theke Mike prochar...jatra doler bas grame asbe ta nieo ekta uttejona thakto...matther ail kete baser rasta toiri hoto. High school ba primary shoolgulote jatra doler thakar bebostha hoto...aar sekane lukie lukie hero aar heroinder green room e jhakie dekbar koutohol obal bridhho bonitader thakto.

    Jatrar dol chole jaoar por tar res kichhudin porjonto nischoi thakto..

    Class four e grisser dupure maa jokhon ghumie porto chupi chupi banser torbari nie berie portam bondhuder sathe jatra khelar uddesse..amra jetam karor matir barir dotalate baa kono notun katano shukno pukure...
    Sei abhinoe amra joddho juddho khelar somoi amra protteke prottekke taroal die aghat kore mere pheltam kintu asole keoi mortona karon keoi more gie stager biere jete chaitona tai amra abar benche uthtam ...
  • রিভু | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:০২65487
  • "১৯৮৮ থেকে ধীরে ধীরে টলিউডের নায়কের সংক্রমণ শুরু যাত্রাতে" আমি একবার ই যাত্রা দেখতে গেছিলাম ২০০০ এর সামান্য আগে। খুবই আশাহত হয়েছিলাম, কিছুটা বিরক্তও। আগের যাত্রা দেখার সুযোগ হয়নি, লেখাটা ভারী সুন্দর ওম দিলো।

    নীলকণ্ঠ সিনেমাটি দেখার ইচ্ছে রইলো, প্রসেনজিৎ এর আন্ডার এক্টিং কেইবা না দেখতে চায় ।

    যাত্রার পতনের কারণ হিসেবে হিন্দির ঢোকার ব্যাপারটা বিনা তর্কে মেনে নিতে রাজী নই । কিন্তু সেই তর্ক এখানে তুলবো না।

    বড়ো মায়াময় লেখা।
  • Shibabrota | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:১০65484
  • দারুণ। চালিয়ে যা।
  • সন্দীপ মুখার্জী | ***:*** | ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:৩৩65485
  • পুরোনো দিনের অনেক কথা চোখের সামনে ভেসে উঠল, অসাধারণ লেখা.
  • সুকি | ***:*** | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৬65488
  • যাত্রার সাথে একসময় ভালোই সম্পর্ক ছিল। টলিউডের নায়ক-নায়িকা ব্যাপারে যেটা কথা বলে বুঝেছি, দুজনকে যাত্রা পাগল জনতাও খুব পছন্দ করেছিল, সন্তু ও পাপিয়া অধিকারী।
  • Sangeeta Adhikari | ***:*** | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:১৪65490
  • Khub sundar ekta lekha......sei kobekar observation....se jeno ekhono clear ...brilliant memory
  • সিকি | ***:*** | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:৪৯65489
  • যাত্রা দেখেছি, প্রচুর। দস্যুরাণী ফুলনদেবী, ডাকু মালখান সিং, বরণীয়া বধূ, সোনাই দিঘী, অঘটন, শত্রু, কৃষ্ণ ভগবান, এমনকি শেষদিকে তাপস পাল অন স্টেজ, ধন্যি মেয়েও দেখেছি।

    ছোটবেলা মনে পড়ে গেল।
  • কুশান | ***:*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৫65491
  • আপনাদের সবাইকে লেখাটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
    আমি যে সময়ে বাল্য ও কৈশোর কাটিয়েছি সেই সময়ের বহু চিহ্নই ঐতিহাসিক নিয়মে আজ লুপ্ত। সেই সময় হারিয়ে গেছে।
    এটিও সেই হারানো সময়কে নিয়ে স্মৃতির ভাষ্য লেখা।

    ভালো থাকবেন, বন্ধুরা
  • Titir | ***:*** | ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫৬65492
  • কত্ত দিন পরে আবার গ্রাম বাংলার যাত্রাপালা নিয়ে এক স্মৃতিমেদুর লেখা পড়লাম। সব যেন চোখের সামনে ভাসছে। কলেজে যাওয়ার আগে পর্যন্ত্য কত জায়গায় দেখতে গিয়েছি সদলবলে।
    মীরার বঁধুয়া তিনবার দেখতে গিয়েও পুরো দেখা হয় নি। প্রথমবার ডেবরাতে। আমার বেশিরভাগ সময়ের সঙ্গী ছিল এক পিসতুতো দিদি। তা সেবার ও সে সঙ্গে গিয়েছে। যাত্রা শেষ হতে তখনো ঘন্টাখানেক বাকি। এদিকে দিদি বলতে শুরু করেছে এখন না বেরোলে বাস পাৱ না, চল বেরিয়ে যাই। এদিকে বাস না ধরতে পারলে ডেবরা থেকে বাড়ি আসা খুব মুশকিল। তাই তাড়াতাড়ি চলে আসা। সে বছর মীরার বঁধুয়া ছিল সুপারহিট। আগের বার পুরো দেখা হয় বলে আবার আর এক জায়গায় যাওয়া। সেখানে বৃষ্টির জন্য মাঝপথে যাত্রা বন্ধ। পরেরবার আমাদেরই গ্রামে হবে। সেখানে কি গন্ডগোলের জন্য শেষ পর্যন্ত্য আর হয় নি।
    জ্যোৎস্না দত্ত, গুরুদাস ধারা,দ্বিজু ভাওয়াল, মোহন চ্যাটার্জি, মিতা চ্যাটার্জি, অরুন দাসগুপ্ত, বীণা দাসগুপ্ত, বেলা সরকার, আরো কত নাম বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে।
    একটু অপ্রাসঙ্গিক হলেও একটা নাটক 'কড়ি দিয়ে কিনলাম'র কথা মনে পড়ছে। তপন থিয়েটারের এই নাটক হবে বালিচকে। বালিচক স্কুলের মাঠে হবে এই নাটক। তা সেবারে যত না জায়গা তার চেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি হয়। ফল মিললো নাটকের দিন। এতো লোক হয়েছিল সেখানে যে ভিড় সামলাতে না পেরে লোকজন স্কুলের প্রাচীর ভেঙে ফেলে। সে একটা বিরাট ঝঞ্জাট হয়েছিল। পুলিশ এসে সামাল দিতে পারে নি। লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে গিয়েছিল ' কড়ি দিয়ে কিনলাম' নয় ওটা দড়ি দিয়ে বাঁধলাম হবে। নাটক আর হয় নি গণ্ডগোলের চোটে। লোকেদের কি আফশোষ!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন