এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • এইচইসিআই নিয়ে হইচই

    Swati Moitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৭ জুলাই ২০১৮ | ২০৬০ বার পঠিত
  • আগামী সপ্তাহে খুব সম্ভবত সংসদে পেশ হতে চলেছে হাইয়ার এডুকেশন কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এইচইসিআই) বিল ২০১৮। এই বিল পাশ হয়ে গেলে ১৯৫৬ সালের ইউজিসি অ্যাক্ট রদ হয়ে যাবে, এবং ইউজিসির পরিবর্তে গঠিত হবে একটি নতুন উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যার নাম এইচইসিআই।

    প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাতে কী এসে গেল? বিশেষত শিক্ষাবিদরা যখন মাসে একবার ইউজিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে থাকেন, অতএব ইউজিসি ভেঙ্গে দেওয়া হলে তাঁদের আপত্তি কেন?

    আপত্তি অনেক। প্রাথমিক স্তরে মাননীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী শ্রী প্রকাশ জাভাড়েকর যখন তাঁর মন্ত্রকের তরফ থেকে জনসাধারণের কাছে এইচইসিআই বিলের খসড়ার প্রসঙ্গে মতামত চেয়ে পাঠান (২৯ জুন খসড়া প্রকাশ হয়, সময় ছিল ২০ জুলাই অবধি), তখন সেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই হাজার দশেক ই-মেল পৌঁছে যায় তাঁদের কাছে। বহু শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠন সরব হয় এই বিলের বিরুদ্ধে।।এমনকি ভারতীয় জনতা পার্টীর ছাত্র উইং, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদও এই বিল সম্পর্কে আপত্তি জানিয়েছে।

    জাতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত কিছু সূত্রে জানা গেছে যে জনসাধারণের মতামত মেনে নিয়ে বিলে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, কিন্তু সেই পরিবর্তন কী কী, সে কথা আর মন্ত্রকের তরফ থেকে পরিষ্কার করে জানানো হয়নি। বাছাই করা কিছু পছন্দের মানুষজনের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক ছাড়া সাধারণ শিক্ষাসমাজ - অর্থাৎ ছাত্র, শিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষাকর্মী - কারো সাথেই কোন আলোচনার প্রচেষ্টাও করা হয়নি। বলা হচ্ছে, সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনেই নাকি এই বিল পাশ হয়ে যাবে।

    সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের নেতৃত্বে স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম ইউনিভার্সিটি এডুকেশন কমিশন বছর দেড়েকের অক্লান্ত পরিশ্রমে শেষ পর্যন্ত একটি রিপোর্ট জমা করেন, যা আজও মোটামুটি ভারতীয় শিক্ষানীতির বেঞ্চমার্ক হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৪৯ সালের সেই রিপোর্টে কিছু কথা তাঁরা লেখেন, যা আজকের দিনেও সমান ভাবে জরুরি,

    “Freedom of individual development is the basis of democracy. Exclusive control of education by the State has been an important factor in facilitating the maintenance of totalitarian tyrannies. In such States institutions of higher learning controlled and managed by governmental agencies act like mercenaries, promote the political purposes of the State, make them acceptable to an increasing number of their populations and supply them with the weapons they need. We must resist, in the interests of our own democracy, the trend towards the governmental domination of the educational process. Higher education is, undoubtedly, an obligation of the State but State aid is not to be confused with State control over academic policies and practices. Intellectual progress demands the maintenance of the spirit of free inquiry. The pursuit and practice of truth regardless of consequences has been the ambition of universities. Professional integrity requires that teachers should be as free to speak on controversial issues as any other citizens of a free country. An atmosphere of freedom is essential for developing this ‘morality of the mind’.”

    এই ভাবনাচিন্তারই ফসল ইউজিসি। এ কথা কখনোই মিথ্যা নয় যে ইউজিসি বহু ক্ষেত্রেই শিক্ষায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে সফল হয়নি - বিশেষত শেষ কয়েক বছরে ফোর ইয়ার প্রোগ্রামের ব্যর্থ এক্সপেরিমেন্ট, স্নাতক স্তরে সিবিসিএস ও তার ওয়ান সাইজ ফিটস অল পাঠ্যক্রম, এই ধরণের নানা পদক্ষেপের ফলে উচ্চ শিক্ষায় কেন্দ্রীয় বজ্র আঁটুনি আরও দৃঢ় হয়েছে। আসতে চলেছে নতুন শিক্ষানীতি, যা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন অনেক শিক্ষাবিদ। এসেছে ইন্সটিউটস অফ এমিনেন্স জাতীয় অদ্ভুত কিছু পদক্ষেপ। এই সবের মধ্যে, স্রেফ কয়েক সপ্তাহে, বিনা আলোচনায় ইউজিসি ভেঙ্গে ফেলে একটি নতুন সংস্থা গঠন করা কতটা যুক্তিগ্রাহ্য?

    সংসদে শ্রী সুগত বসু ও ডেপুটি স্পিকার পি থাম্বিদুরাই ইতিমধ্যেই এইচইসিআইয়ের প্রসঙ্গ তুলেছেন, সরাসরি বিরোধিতা করা হবে বলে জানিয়েছে সিপিআই(এম)। এই সমস্ত কথা মাথায় রেখেই কিছু শিক্ষাবিদ সাংসদদের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেছেন, ইতিমধ্যেই যার অনুবাদ হয়েছে আটটি ভাষায়। চিঠির বয়ান এখানে তুলে ধরলাম, এবং এর সাথে ই-মেল ক্যাম্পেনের লিংক দিয়ে রাখলাম।

    *

    মাননীয়/মাননীয়া সাংসদ,

    ভারতবর্ষের বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে ধ্বংসের পথে না হাঁটে, সেই আশঙ্কাতেই আপনাকে এই পত্র লেখার প্রয়াস। আমার একান্ত অনুরোধ যে আপনি সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে হাইয়ার এডুকেশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া (এইচইসিআই) ২০১৮ নামক প্রস্তাবিত বিলটির বিরোধিতায় সরব হন।

    এই বিল পাশ হয়ে গেলে ১৯৫৬ সালের ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন (ইউজিসি) অ্যাক্ট বাতিল হয়ে যাবে। সমস্যা এই, যে ইউজিসি অ্যাক্ট বাতিল করবার এত জরুরি প্রয়োজন কেন, এবং সেটা এই মুহূর্তে, এতটা তাড়াহুড়ো করে কেন করতে হবে, তার কোন কারণ দেশের জনগণের সামনে পেশ করা হয়নি। যেই সংস্থাটি ১৯৫৬ সাল থেকে দেশের উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব নিয়ে এসেছে, তাকে স্রেফ তিন মাসে ভেঙ্গে দেওয়া কতটা যুক্তিগ্রাহ্য? ছাত্র, শিক্ষক, উচ্চশিক্ষার নানান প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ কিনা শিক্ষা ব্যবস্থার মূল অংশীদার যারা, তাদের কারো সাথেই এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি। রাজ্যগুলোকেও এই প্রস্তাবিত বিল প্রসঙ্গে আলোচনা করবার উপযুক্ত সময় দেওয়া হয়নি।

    প্রস্তাবিত বিলটির অসংখ্য ত্রুটি রয়েছে, এবং সেটি পাশ হয়ে গেলে আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ২৭ জুন ২০১৮ জনসাধারণের সামনে প্রস্তাবিত বিলের খসড়া পেশ করা হয়, এবং বলা হয় যে মতামত দান করতে। সময়সীমা ছিল মাত্র তিন সপ্তাহ। তাও, এই তিন সপ্তাহের মধ্যেই বিপুল পরিমাণে মানুষজন (মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭৫২৯টি মতামত) এই বিল সম্পর্কে মতদান করেন। সমাজের নানান প্রান্তের এতজন মানুষকে যেই বিল এতটা চিন্তায় ফেলেছে, সেই বিল সম্পর্কে যে আরও আলোচনা হওয়া উচিত, এই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। মানবসম্পদ মন্ত্রকও স্বীকার করেছেন যে তাঁরা এই প্রসঙ্গে প্রচুর মতামত ও সমালোচনা পেয়েছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা এর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে আলোচনায় যাওয়ার কোন সদিচ্ছাই প্রকাশ করেননি। বরং, আবারও খবরের কাগজের পাতায় আমরা জানতে পেরেছি যে বিলের কিছু সংশোধন হয়েছে – কিন্তু সেই সংশোধন কী, তা আমরা জানিনা। সেই সংশোধিত বিল এবার জনসাধারণকে অগ্রাহ্য করে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে পেশ করা হবে। যেই মানুষজন উৎকণ্ঠিত হয়ে মানবসম্পদ মন্ত্রকের সাথে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন, তাঁরাই জানেননা এই বিলে কী রয়েছে। আশঙ্কা হয়, সরকার হয়তো জনসাধারণের মতামত নিয়ে আদৌ উৎসাহী নন।

    সমাজের নানান অংশ থেকে যে ধরণের সমালোচনা হয়েছে, তার উদাহরণ স্বরূপ একটি লিংক দিচ্ছিঃ https://betteruniversities.in/2018/07/23/heci-draft-bill-2018-responses/

    এর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনামূলক কিছু বিষয় এখানে তুলে ধরছিঃ

    ১। ইউজিসির হাতে এই মুহূর্তে অনুদান দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এইচইসিআই বিল এই ক্ষমতাই কেড়ে নিতে চলেছে নতুন উচ্চশিক্ষা সংস্থানটির কাছ থেকে। বলা হয়েছে যে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক বা অন্য কোন একটি সংস্থা এর দায়িত্ব নেবে। এর ফলে, শিক্ষায় অনুদান পদ্ধতি আরও জটিল হয়ে দাঁড়াবে, এবং অনেকটাই রাজনীতির উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে কারণ এইচইসিআইয়ের হাতে এমন কোন ক্ষমতা থাকবেনা যার দ্বারা সংস্থাটি তার নিজস্ব সুপারিশ বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হবে। এইভাবে উচ্চশিক্ষার নীতি ও উচ্চশিক্ষার অনুদান পৃথক হয়ে গেলে যা হবে তাকে এক কথায় বলা যেতে পারে ভয়াবহ। এর ফলে জনগণের রাজস্বকে ব্যবহার করা হবে কোন বিশেষ রাজনৈতিক মতের প্রতি সমর্থন/অসমর্থনের ফল হিসেবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুরষ্কার অথবা শাস্তি দেওয়ার কাজে। সীমাহীন দূরত্ব তৈরি হবে নানা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে, যা শেষ পর্যন্ত রাজ্যের তরুণ-তরুণীদের পক্ষে চরম ক্ষতিকারক।

    ২| এইচইসিআইয়ের সংগঠন এ কথা পরিষ্কার করে দেয় যে উচ্চশিক্ষার দায়িত্বে এরপর থেকে কেবল মাত্র কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরাই থাকবেন। কমিশনের ১২ জনের মধ্যে ১০ জন কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের নমিনি হবেন। শিক্ষক থাকবেন কেবল দুজন। যেই সংস্থা দেশে উচ্চশিক্ষা নীতি প্রস্তুত করবে এবং উচ্চশিক্ষার মান নির্ধারণ করবে, সেই সংস্থায় কেবলমাত্র দুজন শিক্ষকের স্থান হওয়া কোনভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়াও কমিশনের গঠনে ভারতবর্ষের জনসাধারণের বৈচিত্র্য কোনরকম স্থান পায়নি – কোন স্থান হয়নি এসসি/এসটি/ওবিসি/মহিলা/রূপান্তরকামী/বিকলাঙ্গ/সংখ্যালঘুদেরও।

    ৩| এইচইসিআইয়ের হাতে কিছু অভূতপূর্ব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যেমন স্তরভিত্তিক স্বশাসন প্রদান, অথরাইজেশন প্রদান, এবং বন্ধ করবার নোটিশ প্রদান। এই ধরণের ক্ষমতা থাকার ফলে উচ্চশিক্ষার সম্পূর্ণ কেন্দ্রীকরণ হবে, এবং এর ফলে নষ্ট হবে সময় এবং জনসম্পদ। এর ফলে ব্যাপক হারে কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইনে বাড়বে, বাড়বে প্রাইভেট সংস্থার রমরমা। এর ফলে শিক্ষকদের চাকরি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এতে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি, এবং দেশের ফেডেরাল চরিত্র বদলে যাবে।

    ৪। উচ্চশিক্ষায় মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘হরেক মাল দশ টাকা’ জাতীয় মডেল কখনোই সফল হতে পারেনা। বিবিধের মাঝে মিলনে মহান এই দেশ ভারতবর্ষ, সেখানে এ হেন কেন্দ্রীকরণ সর্বনাশ ছাড়া কিছুই ডেকে আনতে পারেনা। এ ছাড়াও, যে দেশে এখনো বহু সংখ্যক মানুষ এখনো শিক্ষার আলো থেকে বহুদূরে, সেখানে উচ্চশিক্ষা নির্ধারক সংস্থা কখনোই সামাজিক ন্যায়ের দায়িত্ব ত্যাগ করতে পারেনা। এইচইসিআই বিল অন্তত এই মুহূর্তে এই প্রকারের কোন সংস্থা গঠনের আশা দেখাতে পারেনি।

    ৫| এইচইসিআই বিলের সাথে সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বশাসন শেষ হয়ে যাবে, এবং উচ্চশিক্ষা নির্ধারিত হবে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা। কমিশনকে যে কোন সুপারিশ করবার আগে কেন্দ্রীয় সরকারের মতামত নিতে হবে। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে এই ক্ষমতার ব্যবহার করে মতবিরোধের অধিকার, চিন্তা ও মত প্রকারের অধিকার, সবেতেই আঘাত করা হবে। জোর-জবরদস্তির মাধ্যমে শিক্ষার বিকাশ যে হয়না, এ কথা বলাই বাহুল্য।

    আমি আশা করবো আপনি আমার এই আশঙ্কার বিষয়ে সংসদে আলোচনা করবেন, এবং সংসদে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে এই সর্বনাশা বিলের বিরুদ্ধে মতদান করবেন। আমার একান্ত অনুরোধ যে এই বিলটি যাতে স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে বৃহত্তর আলোচনার জন্য পাঠানো হয়, তার জন্য আপনি সওয়াল করুন।

    অসংখ্য ধন্যবাদ।

    *

    ক্যাম্পেনের মূল পেজ এখানে। সময় বেশি নেই, সম্ভব হলে ই-মেল পাঠান আপনিও। https://betteruniversities.in/2018/07/25/heci-draft-bill-2018-the-way-forward/
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৭ জুলাই ২০১৮ | ২০৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | ***:*** | ২৭ জুলাই ২০১৮ ০৮:২৫65122
  • অনেক ধন্যবাদ, গুছিয়ে পুরো ইস্যুট্স নিয়ে আসার জন্য।

    ক্রমে শিবঠাকুরের আপন দেশ হয়ে যাচ্ছে।

    তবে,
    'সমস্যা এই, যে ইউজিসি অ্যাক্ট বাতিল করবার এত জরুরি প্রয়োজন কেন, এবং সেটা এই মুহূর্তে, এতটা তাড়াহুড়ো করে কেন করতে হবে, তার কোন কারণ দেশের জনগণের সামনে পেশ করা হয়নি। '।

    এর এই তড়িঘড়ি প্রয়োজম বোধহয় এটার কারণেই।

    '

    শিক্ষায় অনুদান পদ্ধতি আরও জটিল হয়ে দাঁড়াবে, এবং অনেকটাই রাজনীতির উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে কারণ এইচইসিআইয়ের হাতে এমন কোন ক্ষমতা থাকবেনা যার দ্বারা সংস্থাটি তার নিজস্ব সুপারিশ বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হবে। এইভাবে উচ্চশিক্ষার নীতি ও উচ্চশিক্ষার অনুদান পৃথক হয়ে গেলে যা হবে তাকে এক কথায় বলা যেতে পারে ভয়াবহ। এর ফলে জনগণের রাজস্বকে ব্যবহার করা হবে কোন বিশেষ রাজনৈতিক মতের প্রতি সমর্থন/অসমর্থনের ফল হিসেবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুরষ্কার অথবা শাস্তি দেওয়ার কাজে। সীমাহীন দূরত্ব তৈরি হবে নানা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে, যা শেষ পর্যন্ত রাজ্যের তরুণ-তরুণীদের পক্ষে চরম ক্ষতিকারক।'

    ভাল কথা, যোজনা কমিশনের জায়গায় নীতি আয়োগ এসে কী কী বদল, তার ভাল, মন্দ কী কী হয়েছে বলতে পারেন?
  • ani | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৪:৫১65123
  • আবার কিছুদিন আগেই গেজেটে বেরিয়েছে দেখলাম, কলেজ সার্ভিস কমিশনে রিক্রুটমেন্টের জন্য ইউজিসির নতুন নিয়ম। আগে নিয়ম ছিল নেট অথবা সেট অথবা পিএইচডি(?) থাকলে, কলেজ সার্ভিস কমিশনে এপ্লাই করলে ইন্টার্ভিউতে নিশ্চিত ডাক পাওয়া যাবে। তারপর, গ্র্যাড, পোস্ট গ্র্যাড, নেট/ সেট/ পিএইচডি, রিসার্চ পেপার ইত্যাদির নম্বর এবং ইন্টার্ভিউয়ের নম্বর যোগ করে ঠিক হবে কাট অফ এবং রিক্রুটমেন্টের লিস্ট। শেষবারে ফর্মের দাম ছিল ১৫০০ টাকা।
    এখন নিয়ম হয়েছে ফর্ম কিনে ফিলাপ করে জমা দেওয়ার পরে গ্র্যাড, পোস্ট গ্র্যাড, নেট/ সেট/ পিএইচডি, রিসার্চ পেপার ইত্যাদির নম্বর দেখে ঠিক হবে কাট অফ, অর্থাৎ যারা এপ্লাই করবেন তাদের মধ্যে থেকে বেছে নিয়ে ইন্টার্ভিউতে ডাকা হবে। এবং সেক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রি আছে কিনা তাতে ২৫ নম্বর আছে (আগের নিয়মে ছিল ৭ না ৮ নম্বর)। অর্থাৎ ঘুরিয়ে পিএইচডিকে কমপালসরি করে দেওয়ার জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
    এমন অনেক ক্যান্ডিডেট থাকেন যারা ভালো রেজাল্ট করেন নি। মার্কস বাকিদের থেকে খুব একটা ভালো নয়। অথচ পড়ান, বোঝান দারুণ। ছাত্রবস্থায় কলেজে আমরা দেখেছি এমন টিচাররা রয়েছেন, নামকরা স্টুডেন্ট ছিলেন না, পড়ান অসাধারণ। আবার অসাধারণ রেজাল্ট কিন্তু পড়াতে গেলেই সমস্যায় পরেন, স্টুডেন্টদের বোঝাতে পারেন না, এমন টিচারও পেয়েছি প্রায় সকলেই। রেজাল্ট ভাল কিনা, রিসার্চ ভাল করেছেন কিনা তা দিয়ে ঠিক হয় না পড়াবেনও ভাল কিনা। এখন ভাল রেজাল্ট, পিএইচডি এইসব ম্যান্ডেটরি হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ রেজাল্ট করা অনেক ক্যান্ডিডেটই ইন্টার্ভিউতে ভাল করে কলেজ সার্ভিস কমিশনের চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। এখন সে স্বপ্নও চুরি গেল।

    গেজেটের ছবিগুলো আপ্লোডাতে পারলাম না।
  • | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৫:১৫65124
  • সুন্দর গোছানো লেখা। এইটে নিয়ে আশেপাশে কথা বলতে গেলে দেখেছি 'খায় না মাথায় দেয়' গোছের এক্সপ্রেশান। তো তাদের অ্যাড্রেস করার জন্য ভাল লেখা।
  • pi | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৫:২৭65125
  • ছবি আপলোডের ব্যাপারটা কেউ বলে দাও না।

    এটা সাইটে কোথাও লিখে দেওয়া উচিত।
  • sswarnendu | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৫:২৮65126
  • aniর পোস্ট প্রসঙ্গে

    জরুরী বিষয়ই। কিন্তু গোলমেলেও।

    একদিকে গাদা গাদা জায়গায় লোক নেই, ফাঁকা পড়ে আছে, অথচ সরকারের যুক্তি প্রচুর অ্যাপ্লিক্যান্ট তাই এলিমিনেশনের জন্যে পিএইচডির ওয়েটেজ বাড়ানো হচ্ছে। এতে দেশে বাজে মানের পিএইচডির সংখ্যা ( যা এমনিই বেশ বেশী) আরও বাড়তে থাকবে, সাধারণ অবস্থায় রিসার্চে অনুৎসাহী কিন্তু পড়াতে চান এমন ছাত্রছাত্রীদেরও পিএইচডি করতে বাস্তবত যেতেই হবে। ভারত এমনিই সর্বাধিক সংখ্যক পিএইচডি উৎপাদন করে, অথচ গবেষণা ক্ষেত্রে কোন বিষয়েই উৎপাদন আদৌ সেই বিপুল সংখ্যার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সেই অদ্ভুত মেকানিজমটাকেই আরও রিইনফোর্স করা হচ্ছে।

    আবার অন্যদিকে ইন্টারভিউতে দুর্নীতি কিম্বা ইন্টারভিউয়ারদের প্রেফারেন্স, প্রেজুডিস এসবের সম্ভাবনা কমতে পারে, এটাও ঠিক।

    এইচইসিআই স্বতন্ত্র গল্প, সে নিয়ে আর নতুন করে কি বলব। ওইটা উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ শেষ করে দেওয়ার কল, সবটাই রাজনৈতিক আনুগত্য দিয়ে চলবে এবার।
  • ani | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৬:১০65127
  • নাম্বার, রিসার্চ দেখেই যেহেতু অনেকটা ঠিক হবে কলেজ সার্ভিস কমিশনে কারা চাকরি পাবেন সেদিক থেকে ইন্টারভিউতে দুর্নীতি কমতে পারে বলে মনে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সত্যিই কি এই শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি নিয়মের কিছু অলি গলি ফাঁকা পড়েছিল বলে হতো! আমার তো মনে হয় এই দুর্নীতিকারী যাঁরা, তাঁরা এবারেও ঠিকই অলি গলি খুঁজে নেবেন।
    দরকার ছিল লোকজন পড়াতে পারে কিনা সেটা যাচাই করা, হয়ে গেল নাম্বার ভালো পেয়েছো কিনা, পিএইচডি করেছি কিনা তার পরীক্ষা।
  • sswarnendu | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৬:২৫65129
  • ani

    আমার দুর্নীতি কমতে পারে মনে হচ্ছে না... ওইটা সরকারপক্ষের যুক্তি, তাই লিখলাম। আর বাস্তবত এতে যা হচ্ছে সেইটা কিছু কম দুর্নীতি নয়। বাস্তবে যা হচ্ছে যে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ বস্তুত বন্ধ। যে সমস্ত পার্টটাইম লেকচারাররা কলেজে পড়াচ্ছেন তাঁরা ওই পড়াতে পড়াতেই নেট ক্লিয়ার করে রাখছেন ( মানে লেকচারারশিপ ), তারপর যা হোক কিছু একটা পিএইচডি করে নিচ্ছেন ( এইভাবে করা পিএইচডি ভাল পিএইচডি হবে এ আশা করা হাস্যকর মনে হয় আমার), তারপর তাঁরাই সেই কলেজে পার্মানেন্ট হচ্ছেন। এতে ব্যক্তিগত দুর্নীতি আছে এইটা বলতে চাইছি না, দুর্নীতিটাই ব্যবস্থা হয়ে গেছে বস্তুত।
  • pi | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৬:২৮65130
  • কিন্তু পিএইচ ডি বাড়ানোর উপায় ও রাখছে কই? ফেলোশিপ তো প্রচুর কমাচ্ছে।
  • ani | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৬:৩৫65131
  • @SS ঠিক ঠিক।
    @pi ফেলোশিপ তো কমছেই। পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপের দিকে তাকালে বোঝা যাবে। ওগুলোর খোঁজ তো খুব বেশি জনগণ রাখেন না। তাই হয়তো বেশি কোপ ওখানেই। npdf এর টাকা ঢুকতেই সময় পার করে দিচ্ছে প্রায়। বছরে দুটো adv হওয়ার কথা, কিন্তু তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। ইত্যাদি প্রভৃতি।
  • স্বাতী | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৯:৫৫65132
  • রিক্রুটমেন্ট কিন্তু একটা গৌণ (যদিও জরুরি) ইস্যু এই গোটা ব্যাপারে। এপিআই নিয়ে বাওয়াল আজকের নয়। সমস্ত প্রভিশনগুলো দেখুন, গায়ে কাঁটা দেবে। গ্রেডেড অটোনমি, কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা, প্রয়োজনে প্রিন্সিপালকে জেলে ভরার ক্ষমতা (হ্যাঁ সত্যি), গোটা কমিশনে মাত্র দুজন শিক্ষক কিন্তু "ইন্ডাস্ট্রির বিশিষ্টদের" স্থান, মানে কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবো?
  • swati | ***:*** | ০৩ আগস্ট ২০১৮ ০৪:৫৯65134
  • আপডেট: আজকের রিপোর্ট বলছে এইচইসিআই বিল বর্ষাকালীন সেশনে আর উঠছে না পার্লামেন্টে। এর মানে এই নয় যে বিলটি মৃত, তাও সকলকে অভিনন্দন।
  • pi | ***:*** | ০৩ আগস্ট ২০১৮ ০৬:৪০65135
  • বাহ, ভাল খবর।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন