এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ♥ রমজান নিয়ে - ১ ♥

    সেখ সাহেবুল হক লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ জুন ২০১৭ | ১২৪৭ বার পঠিত
  • ♦ রমজান নিয়ে - ১ ♦

    সেহেরীর সেকাল
    ---------------------------------------------------------------
    সেহেরী শব্দটির নিয়ে আমার ভুল ধারণা ছিলো ছোটবেলায়। আমি ভাবতাম শব্দটি বোধহয় ‘শ্রীহরি’। বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়েই শ্রীহরি ভাবতাম। সত্যি বলতে সেহেরী শব্দটি ক্যালেন্ডারসুলভ রমজানের তালিকায় প্রথম যেবার পড়লাম শ্রীহরিটা শুধরে ‘সেহেরী’ হয়ে গেলো। সেদিন খুব বোকা লেগেছিলো নিজেকে।

    রোজার সময় হাওড়ার গ্রামের বাড়িতে ভোর ভোর উঠে পড়ার ব্যাপার ছিলো। কনকনে শীত হোক বা গরমের দিন মসজিদের মাইকে জালাল চাচা হেঁকে উঠতেন - “মেহেরবানি করে আপনারা উঠ্যেএ পড়ুন। সেহেরীর সময় হয়ে গেএছে…”
    আমরা ছোটরা শুধু শেষের দিকের রোজাগুলো রাখতাম। কারন শেষদিকে বেলা ছোট হয়ে আসতো। কাজেই অপেক্ষাকৃত কম সময় রোজা রাখতে হতো। এছাড়া বাড়ির নির্দেশ ছিলো, বেলা ছোট হলে তবেই রোজা রাখা যাবে। কে কটা রোজা রাখতে পারে তাই নিয়ে ছিলো রেষারেষি…।
    - জানিস আমার ছটা হলো।
    - অমন লুকিয়ে লুকিয়ে খেলে আমিও ছটার বেশি রাখতে পারতাম। আমার ইস্কুল থাকে, তোর তো পড়াশোনা নেই।
    রোজা রাখা হোক বা না হোক সেহেরী খাওয়ার আলাদা মজা ছিলো।

    - আব্বু উঠে পড় বাবা, আর টাইম নেই। সেহেরী খাবি যে…। মাকে উঠছি তো বলে আবার শুয়ে যাওয়া।
    এবার দাদি আসলেন, “ভাই খেয়ে লিবে যাও, অ্যাক্ষুনি আজান দিয়ে দিবে”
    চোখ কচলে প্রায় টলতে টলতে গিয়ে ব্রাশ না করেই, কোনওমতে হাত ধুয়ে খাওয়া স্টার্ট…

    খাওয়ার মধ্যে মূলত দুধ-আলুভাতে, সাথে খেজুর বা আম। অনেক বাড়িতে স্বাভাবিক ভাত তরকারি খেলেও আমাদের বাড়িতে দুধ-আলুভাতের চলটাই বেশি। এমনিতেও একলিটার দুধ সারাবছরই নেওয়া হয়। অনেকে আবার ভোরে রান্না করেন। সেই ভোরবেলার হাঁড়ি-খুন্তির টুংটাংয়ে আজিব মাদকতা আছে। কখনও হালকা গরম মশলা বা জিরের গন্ধ জানলা দিয়ে ভেসে আসতো। কেউ কেউ ভোরে এতো খান যে দুদিন না খেয়েও থাকতে পারবেন বলে মনে হয়।

    গ্রামে হাঁকাহাঁকি, ডাকাডাকির ভিড়ে মসজিদে সময়ের কাউন্টডাউন। “আপনারা যারা সেহেরী করেননি, দয়া করে সেহেরী করে নিন। আর মাত্র আধঘন্টা বাকি আছে”। এভাবে কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর ঘোষণা হয় মাইকে।

    খুব মনে পড়ে, সেই রেডিওর যুগে বাংলাদেশ বেতার ঢাকা বা খুলনা চালানো হতো। সেহেরী খাওয়ার সাথেসাথে রেডিওতে ধর্মীয় আলোচনা, নাতে রসুল (গজল), মোনাজাত হতো। সবশেষে ফজরের আজান দিয়ে শেষ হতো অনুষ্ঠান। আমরা বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। ঠিক তখনি বাংলাদেশের সাথে ভারতের সময়ের পার্থক্যটা বুঝতে শিখেছিলাম।
    ‘খোদার প্রেমে পাগল হয়ে’ বা ‘নবি মোর পরশমণি’ ইত্যাদি গজল আমাদের ঠোঁটস্থ ছিলো।

    বাংলাদেশের সময় যেহেতু এগিয়ে। তাই আগেই বাংলাদেশে ফজরের আজান হয়ে যেতো। তারপর হতো আমাদের আজান। আজান হওয়া মানেই খাওয়া বন্ধ।
    মাঝেমধ্যে এমন হতো যে কারো ঘুমই ভাঙেনি। শেষমুহুর্তে উঠে তাড়াহুড়োয় শুধুমাত্র পানি খেয়ে রোজা রাখতে হতো।

    ইফতার আর সেহেরী দুটো ভিন্ন ক্ষেত্র। যে মানুষটা সেহেরীতে যৎসামান্য খান, তিনি কিন্তু ইফতার জমিয়ে করতে ছাড়েন না। আসলে অনেকেই আছেন যাঁরা ভোররাতে খেতে পারেন না। নেহাতই সুন্নত আদায়ের জন্যই খাওয়াদাওয়া।
    যারা রোজা না রেখেও রোজা রেখেছি দাবি করতো তাদের বলা হতো - ‘সাতবার খেয়ে রোজা রাখা পাবলিক’।

    সময় বদলেছে। এখন হাতে হাতে স্মার্টফোন। আমাদের জেনারেশন রাত জেগে সেহেরী খেয়েই ঘুমায়। হোয়াটস অ্যাপ বা মেসেঞ্জারে জাগা মানুষকে পিং করে ভার্চুয়ালী জাগিয়ে দেওয়া যায়।
    হাওড়ার সেই ব্যাপার কাকদ্বীপে বাড়িতে নেই। একমাত্র মুসলিম পরিবার হওয়ায়, পড়শিদের টুংটাং মিস করতে হয়। মসজিদের সেই কাউন্টডাউনও নেই। নেই ফজরের নামাজ মসজিদে পড়ার তাগিদ।

    সেই বাংলাদেশ বেতার, দাদির ঘুম থেকে তোলা, জালাল চাচার টেনে টেনে বাংলা উচ্চারণ…।
    শনিবার স্কুল করে কাকদ্বীপ থেকে হাওড়ায় ফেরা রাতে আব্বার ফলভরা ব্যাগের সুবাস। সব হারিয়ে গেছে কালের নিয়মে।

    #হককথা
    ♦ রমজান নিয়ে - ২ ♦

    সেহেরীতে দুধেভাতে
    -------------------------------------------------------------

    আগের লেখাটা পড়েই অনেকে ইনবক্সে সেহেরীতে খাওয়া দুধভাতের ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন। সংক্ষেপে সেটাই তুলে ধরছি।

    প্রথমত, দুধভাত খেতে গেলে এই সাধারণ খাবারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আনতে হবে। অনেকেরই এমন ধারণা আছে - “দুধভাত আবার কোনও খাবার হলো নাকি!”। বিশেষত যারা কোনওদিন এভাবে খেয়ে দেখেননি তাঁদের মনে হওয়াটাও স্বাভাবিক। দুধ তো সকলেই খান, কিন্তু দুধভাত! খেলেও সেটা কালেভদ্রে।

    গরম ভাত হলেও চলে আবার ঠান্ডা ভাত গরম দুধের সঙ্গতে দিব্যি মানিয়ে যায়।
    আগেই দুধ গরম করে রাখুন। কড়াই গরম করে অল্প তেল দিয়ে হালকা করে শুকনো লংকা ভেজে ফেলুন অল্প আঁচে। লালচে হয়ে গেলেই হবে।
    এবার লংকা মাখিয়ে একটি গামলা বা থালায় নিয়ে লবন দিয়ে মাখুন, তারপরে আলু দিয়ে চটকে আলুভর্তা করুন। লংকার গায়ে লেগে থাকা তেলটিই আলাদা মাত্রা এনে দেবে।

    ভাত চটকে খেতে আপত্তি না থাকলে ভাত চটকে ফেলুন থালায় নিয়ে। তারপর দুধ মেশান প্রয়োজন অনুযায়ী। দুধ বেশি খেতে পারলে ভাত ডুবিয়ে দুধ নিন।
    এবার খাওয়া শুরু। অল্প অল্প ভাত খান আর সাথে আলুভর্তা নিন পর্যায়ক্রমে। প্রয়োজন হলে দুধভাতে চিনিও মেশাতে পারেন।
    খেজুর এবং আম সহযোগে খেলেও ভালোলাগবে।

    গ্রামের দিকে দুধ আলুভাতে খাবার হিসেবে খুবই সমাদৃত। আমের মরশুমে খেয়ে দেখতে পারেন। সেহেরীতে খাওয়ার পক্ষে এটি উৎকৃষ্ট খাবার।

    #হককথা
    ♦ রমজান নিয়ে - ৩ ♦

    অপেক্ষার মাস
    --------------------------------------------------------
    গোটা রমজান জুড়েই একটা শূন্যতা প্রকট হয়। যে মহিলার স্বামী প্রবাসে কাজের সূত্রে পড়ে আছেন, যে দাদার সাথে ইফতারের ফলের টুকরো কাড়াকাড়ি করে অতীত কেটেছে সেই দাদা চাকরিসূত্রে বিদেশে। ভাই আর আপেলের টুকরোয় সেই স্বাদ খুঁজে পায় না।

    মা বয়সের ভারে রোজা রাখতে পারেন না, ছেলে জরির কাজে পড়ে আছে ‘বোম্বেতে’। মনটা তার জন্য রোজা না রাখার কষ্টের চেয়ে, বেশি করে কেঁদে ওঠে। যে আব্বা ছেলেকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দিতেন না, সেই কঠোর মানুষটিও বিষণ্ণতায় বুঁদ হয়ে অপেক্ষা করেন ছেলের ফেরার। রমজান এখানে যেন এক শূন্যতাবোধক শরীয়তী মাপকাঠি।

    বাওয়াল প্রিয় বন্ধুরা সারাবছর যারা জুম্মার নামাজেও ফিক ফিক করে হাসে, লুকিয়ে কথা বলে, ইয়ার্কি করে চুল টানে, আড়াল থেকে মাথায় টোকা মারে, টুপি খুলে দেয়...। তারাও কেমন ধর্মীয় হয়ে যায় এইমাসে। বন্ধুর ঈয়াদে ইফতার সাজায়, সেহেরীর আগে সিগারেট ধরায় বন্ধুকে মনে করে। জামাতে তারাবীর নামাজের দ্রুততার ভিড়ে কিছুটা থমকে যায় আনমনে।

    আজানে একটু আগে ভেসে এলো - “আস সলাতু খাইরুম মিনান নাউম” অর্থাৎ ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম। কিন্তু সে এর অর্থ জানে না। আব্বা আর্মিতে জাগছে জেনে ক্লাস এইটের মেয়েটি সেহেরীর পরও ইচ্ছে করেই জেগে থাকে, মায়ের ফোনে গেম খেলতে খেলতে চোখের জল গড়িয়ে চুলে গিয়ে লুকোয়। সে জানে রমজানের দিনে দেশপ্রেমও আব্বার কাছে আরেক পরীক্ষা। চোখ মুছে নিয়ে, ভাইকে চুমু খায় সে। ঘুমে অচৈতন্য মায়ের হাতটা চেপে ধরে।

    অপরদিকের গল্পগুলো আবার অন্যরকম। আরবে বসে কোনও বীরভূমের ছেলে দেশের মাটির অভাব লিখে চলে অদৃশ্য ডায়রিতে। ওদেশে নাকি তেলেভাজার অভাব। ইফতারের পর মুড়ির সাথে মায়ের হাতের ঘরোয়া তেলেভাজাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে তার। শ্বাস ভারী হয়ে আসে। নবীর (সঃ) দেশে ধর্মীয় পরিমন্ডলে থেকেও তার প্রাণ কেঁদে ওঠে দেশের জন্য। ধর্মীয় আবেগকে ছাপিয়ে যায় দেশাত্মবোধ।

    কেরালায় লেবারের কাজ করতে গেছে কাকদ্বীপের কৈশোর পেরোনো স্কুলছুট। সারাদিনের গাধারখাটুনিতে রোজা রাখা হয়ে ওঠে না। অনুতাপ জাগে তার। চোখ বুজলেই মনেপড়ে মায়ের মুখ, গ্রামের মসজিদের ইফতার। প্রতিটা রমজান যেন তাকে পরিনত করে তোলে। গড়ে দেয় পরিবারের প্রতি দায়বোধ, শিখিয়ে নেয় হিসেবের পাটিগণিত। অহেতুক খরচ করে না সে। ঈদেরছুটিতে মায়ের জন্য শাড়ি, ভাইয়ের পাঞ্জাবি, বোনের সালোয়ার…

    ‘বোম্বেতে’ রেডিমেড কাপড়ের কাজের ফাঁকে ঘুপচি ঘরের জানলায় এসে দাঁড়ায় আসফাক। বিকেল পাঁচটা মানে এতক্ষণ তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। বউটা নিশ্চয় থালা ধুয়ে কাঁচাছোলা রাখছে, মেয়ে শশা কাটছে। ছেলেটা যথারীতি এখনো মাঠে, নাহলে পুকুরপাড় থেকে দাঁতন কেটে আনছে। বয়স্ক আব্বা বোধহয় লাঠি নিয়ে একটু পরেই মসজিদের দিকে যাবে।

    ইসলামি দেশে কাজের ডেক্সে বসে যে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে যায় রোজা সংক্রান্ত দূর্বলতাকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে। তার কম্পিউটারের ভাষায় মধ্যেই যেন বাংলাতেই লিখে ফেলতে চায় বাড়ি ফেরার আকুতি। কর্পোরেট নামক চকচকে কার্পেটের নীচের ধুলো সরিয়ে ঈদে স্ত্রী,সন্তান,আব্বা,মায়ের কাছে ফিরে আসার প্রবল সংকল্প।

    ব্যক্তিগতজীবনে আব্বার কর্মসূত্রে ছোটবেলার একটা সময় পরে নিজের গ্রাম ছেড়ে চলে আসার পর সপরিবারে বাড়িতে ফেরার ছুতো দুটো ঈদ। সারাবছর তালা দেওয়া দাদুর আমলের বাড়ির আলো জ্বলে ওঠে। সাতাইশার (সাতাশতম রোজার) আগে বা পরেরদিন দুপুরে গ্রামের বাড়ি ফিরে ঘরদোরের আধ ইঞ্চি ধুলো সরিয়ে কোনও মতে সেদিনের ইফতার। ইফতার সেরে বন্ধুদের খোঁজে বেরোনো। “কি বে আব্বু, কখন এলি। শালা কতো মুটা হয়ে গেছিস বে” কিংবা “আব্বু কখুন এলে বাবা” এই জাতীয় কথাগুলো শোনার জন্যই সারা বছরের অপেক্ষা।

    রমজান মানেই প্রিয়জনের অভাব বোঝার মাস, প্রিয়জন ফেরার অপেক্ষার মাস। এগুলো ধর্মগ্রন্থে নেই, বুকের পাতা খুলে দেখলেই বেমালুম বোঝা যায়।

    বাড়ির জন্য বিশেষ সঞ্চয়ের দিন, পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করে রাখার দিন।
    ইফতার সামনে সাজিয়ে রেখে প্রিয়জনের জন্য আক্ষেপ করা - ‘If তার’ সাথে যদি ইফতার করা যেতো!।
    এইসব শূন্যতা জমাচ্ছে যেসব বুক, ঈদে প্রিয়জনের সাথে মোলাকাত অনাবিল খুশির সওগাত মেলে দেবে নতুন পোষাকে।

    #হককথা
    ♦ রমজান নিয়ে - ৪ ♦

    তারাবির নামাজের একাল সেকাল
    -------------------------------------------------
    হাওড়ার আদি বাড়িতে ছোটবেলায় বাচ্চাদের তারাবি(রমজান উপলক্ষ্যে বিশেষ নামাজ) থাকতো না, ওনলি রোজা। মাগরিবের(সান্ধ্যকালীন নামাজ) পরেই বড়দের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়ে যেতো। পুকুর ঘাটে ওজু( সাধারণ অর্থে মুখ-হাত-পা ধোয়ার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন) করে মাথায় টুপি দিয়ে মসজিদমুখো হতেন সবাই। বয়স্করা কাঁপতে কাঁপতে লাঠিতে ভর দিয়ে যেতেন। অল্পবয়সীরা কেউ কেউ আবার হাতে ধরে এগিয়ে দিতো বয়স্কদের। বেশ বয়স্করা অনেকেই আন্দাজ করতে পারতেন এটিই হয়তো তাঁদের শেষ রমজান। এই অবস্থায় শেষতম শক্তিবল দিয়ে নামাজ এবং ইসলামি তরিকা মেনে চলতেন। তাঁদের চোখ ছলছল করে উঠতো চলে যাওয়ার কথা ভেবে।

    সারাবছর মসজিদে না ওঠা পাবলিকরাও তারাবি পড়তে হাজির। যুবক দাদাদের কেউ কেউ তো আবার সঠিক নামাজটাও জানতো না। সবাই যা করছে, তাই করে যেতো আর মুখ নাড়তো।
    আমরা বাচ্চারা কেত মেরে মাঝেমধ্যে তারাবি পড়তে যেতাম। যাতে একটু বন্ধুদের কাছে ঘ্যাম নিয়ে চলা যায়। নামাজ কালাম পড়লে পাড়ার লোকেরা আলাদা নেকনজরে দ্যাখে। আদতে ব্যাপারটা সামনের কাতারের বড়দের দেখাদেখি আর গোটাচারেক সুরাহ(নামাজ পড়ার সময় যা বলতে হয়, শ্লোকবিশেষ) সম্বল করে মেকআপ দেওয়ার চেষ্টা ছিলো।
    যদিও মা আমাকে ছয় বছর বয়সেই কাজ চলার মতো নামাজের সুরাহ শিখিয়ে দিয়েছিলেন।

    তখনকার মসজিদ মানে বেশিরভাগই টিনের চাল অথবা টালি। কিন্তু আমাদের মসজিদে পাকা ছাদ ছিলো। একশো ওয়াটের হলদেটে বাল্ব লো ভোলটেজে মিউমিউ করে জ্বলতো। দু একটি আধমরা টিউবলাইটও ছিলো। তার মধ্যেই নামাজ। গরমের দিনে নামমাত্র চলতে থাকা দুটো ফ্যান তথাকথিত ইসলামী সাম্যতা এনে দিতে পারতো না। উচ্চ-নীচ, ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ ভুলে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে নামাজ পড়লেও সকলের কাছে পাখার হাওয়া পৌঁছতো না।
    দরদর করে ঘামতে থাকা পিঠে চেপ্টে বসতো পাঞ্জাবি। টপাটপ নদী বয়ে চলতো কানের পাশ থেকে। আতর, গোলাপপানি কিংবা আগরবাতি সম্মিলিত ঘামের গন্ধকে ঢাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করতো। খুব দ্রুত তারাবির নামাজের মধ্যে অলসদের বাড়তি চাপ ছিলো চোখে পড়ার মতো।

    কিছুজন আবার দীর্ঘ সুরাহ পড়া হলে উশখুশ করে উঠতেন। মানে সংক্ষেপে সারা হোক এই তাঁদের দাবি। নাদুসনুদুস বা পেটঝোলা লোকেদের গলাপর্যন্ত ইফতারের পরে তারাবির নামাজ পড়া এভারেস্ট জয়ের সামিল ছিলো। অনেকে মসজিদের জামাতের ছন্দে পড়তে পারবেন না বলে বাড়িতেই পড়তেন। যদিও জামাতে পড়াটা অপেক্ষাকৃত উত্তম ব্যাপার।

    তারাবির জামাতেও দুষ্টু পাবলিকদের অভাব ছিলো না। টুপি খুলে দেওয়া, পেছোন থেকে চুল টানা, ফিসফিসিয়ে কথা বলা বা ফিক করে হেসে দেওয়াটা খুবই কমন ছিলো। এরই মাঝে নামাজের ওঠানামার চাপে অসাবধানতাবশত কেউ সশব্দে হাওয়া ছাড়লে ফিচকে ছেলেরা হো হো করে উঠতো। মুরুব্বিরা এহেন বেহুদা আচরন দেখলেই ক্ষেপে যেতেন। সংশ্লিষ্ট শব্দবাজকে গিয়ে পুনরায় ওজু করতে হতো। কারন হাওয়া নির্গমনের পরে আবার ওজু করে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম রয়েছে।

    কেউ কেউ আবার নিঃশব্দে এই মহান প্রাণঘাতী কাজটি সেরে দিয়ে মজা লুটতো। তাদের গ্রুপ ছিলো, কিন্তু আলকায়দাসুলভ দায়স্বীকার করতো না। এদের অপকর্মের সিগনেচার ছিলো। কাজেই সন্দেহের তির নির্দিষ্ট দিকে গেলেও নামাজের মাঝে কিছুই করার ছিলো না। নিদেনপক্ষে ইশ-বিষ-ধানের শিষ করে অপরাধী ধরার সুযোগটাও থাকতো না।
    ক্যাচালপ্রিয় পাবলিকরা লোডশেডিংয়ের ছুতো খুঁজতো। একটা টিমটিমে ইমার্জেন্সী লাইট অটোমেটিক্যালি জ্বলে যেতো। তাতে পড়া হতো বাকি নামাজ।

    তারাবির নামাজ মানে আট রাকাত(রাকাত শব্দটিকে নামাজের হিসেবে একক বলা যেতে পারে) আর কুড়ি রাকাতের চিরন্তনী দ্বন্দ্ব। পুরানো জেনারেশন কুড়ি রাকাত পড়লেও ফাঁকিবাজ জেনারেশন আট রাকাত পড়েই পাড়ার মোড়ে এসে গুলতানি মারতো।
    শীতের সময়ে এসে যেতো সোয়াটার-মাফলারের রংবাহারি। ঘুমুঘুমু চোখে অনেকে কোনওমতে নামাজ সারাতেন। সারাদিনে রোজা অবস্থায় খেটে খাওয়া মানুষদের স্বাভাবিক খাটাখাটি করে কুড়ি রাকাত নামাজ আদায় করাটা কম পরিশ্রমের ছিলো না।

    কেউ কেউ আবার নামাজ-রোজার পাশাপাশি খারাপ কাজ এবং মনমালিন্য জিইয়ে রাখতেন। তাঁদের জন্য মজা করে বলা হতো -
    "চাচা নামাজ পড়লে রোজা করলে
    আর পড়লে তারাবি
    তবুও পাবলিকের পেছোন মারো
    এই তো তোমার খারাবি"

    পবিত্র রমজানে এক মাস রোজা রাখা যেমন ফরজ (অবশ্য কর্তব্য)। তেমনি তারবির নামাজও একটা বড় ভূমিকা নেয়।
    প্রিয় নবী (সাঃ) ব্যক্ত করেছেন - ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবির নামাজকে সুন্নত করেছি; অতএব যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের(পুণ্য অর্জন) আশায় রমজানে রোজা পালন করবে ও তারাবির নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেভাবে নবজাত শিশু মাতৃগর্ভ থেকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) ভূমিষ্ঠ হয়।
    রমজানের চাঁদ দেখা গেলে প্রথম যে আমলটি(সাধনা বিশেষ) করা হয়, তা হলো তারাবির নামাজ। বিধান অনুসারে - ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের(পুণ্য অর্জনের) উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়বে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ(পাপ) ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

    বর্তমানে প্রায় সব মসজিদে মার্বেল পাথর বসেছে। টাইলসে গোছানো ঝলমলে তারাবির নামাজ। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বসেছে এল.ই.ডি লাইটের ঝিনচ্যাক পসরা, উচ্চমানের সাউন্ড বক্স। সেই প্যাঁচপ্যাঁচে ঘাম, গাদাগাদি করে নামাজ পড়ার মরশুম নেই। বিস্তৃত জায়গা, ফ্যানের মিষ্টি বাতাস, রঙচঙে পোষাকের মাঝে নামাজের প্রতি আন্তরিকতা কিছুটা হলেও কমেছে। মানুষের হাতে পয়সা আসায় মসজিদ বড় হয়েছে, তুলনায় কাতারের সংখ্যা কিছুটা কমেছে…।

    সেই ধর্মপ্রাণ প্রিয়জনরা আজ দুনিয়ায় নেই। দুষ্টু ছেলেরা আর ততোটাও দুষ্টু নয় নামাজের কাতারে। কারন দুষ্টুমিগুলো স্থান পরিবর্তন করেছে। বলা ভালো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাগ হয়ে গেছে।
    সেই চোঙমাইক, ক্লান্তিমেশানো গলায় ঈমাম সাহেবের নামাজ পড়ানো। একটা অন্যরকম অভাব পরিলক্ষিত হয়।
    তারাবির নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া করে জলদি ঘুমিয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক ছিলো। যাতে ভোরে সেহেরি খেতে ওঠায় সমস্যা না হয়।
    বদলে যাওয়াটা সময়ের বিশেষ ধর্ম, সেই নিয়ম মেনেই সব বদলে যাওয়া। অথচ চোখ বুজলেই এক নিমেষে ফিরে যাওয়া যায়...।

    #হককথা
    ♥ রমজান নিয়ে - ৫ ♥

    ♦ অপেক্ষার ইফতার ♦
    --------------------------------------------------------------------------

    সেহেরিতে যৎসামান্য খাওয়া। মানে খুব কম লোকই এই সময়টা পেট ভরে খেতে পারেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি শুধু কেক, বিস্কুট, দুধ বা শুধু পানি খেয়েই রোজা রেখে দিই। মা খুব জেদাজেদি করলে দুধভাত খাই। লক্ষ্য একটাই থাকে প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়া। যা সারাদিন শরীরটাকে সচল রাখবে, বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখবে।

    সারাদিন রোজা রেখে স্বাভাবিক কাজ করাটাও চ্যালেঞ্জ। অফিস হোক বা স্কুল, চেম্বার হোক বা কোর্টরুম, মাটিকাটা হোক বা ভ্যান টানা। মনের জোরের সাথে শারীরিক সক্ষমতাও বড় ভুমিকা নেয়। এইজন্য অসুস্থ বা অক্ষম মানুষের ক্ষেত্রে রোজা ফরজ নয়, এমনকি মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় রয়েছে।
    অফিস ফেরত আপনাকে বাসে বা ট্রেনে দাঁড়াতে হবে, আপনার সামনেই সহযাত্রী ঠান্ডা জলের বোতল ঢকঢকিয়ে গিলবেন। কিংবা রাস্তায় গরম গরম চপ ভাজা হচ্ছে, আপনি সেইসময় অপেক্ষা করবেন ইফতারের। এই অপেক্ষার কারনেই ইফতার এতো সুন্দর, এতো মনোমুগ্ধকর।

    আসরের(বিকেলের) আজান কানে এলেই মন বলে ওঠে - আর ঘন্টাদুয়েক...। এর ঠিক পরেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় ঘরে ঘরে। মহিলারা খেজুর, আদাকুচি, ছোলা, সরবত এবং সাধ্যমত বিভিন্ন ফল কেটে সাজিয়ে রাখেন।

    => অপেক্ষা পর্ব -
    সামনে থালায় ফলের সারি সাজিয়ে আজানের জন্য অপেক্ষা করার মধ্যে এক অন্যপ্রকার অনুভূতি আছে। ঠিক যেন মনেমনে কাউন্টডাউন...।
    কখনো সকলের জন্য পৃথক থালা, কখনও বড় মাপের খাঞ্চায় একসাথে পাঁচছয়জন করে। এক সাথে খাওয়ায় ভ্রাতৃত্ববোধ যেমন বাড়ে। এই খাওয়ায় এক ভদ্রতাপূর্ণ মানসিকতা কাজ করে। ধীরেসুস্থে, ভাগ করে খাওয়ার যে সুন্দর রীতি তা মিডিয়ায় আসে না। অনেকেই জানেন না।
    আজান হলেই দোয়া পড়ে ইফতার করা হবে। এই অপেক্ষা অন্য জাগতিক অপেক্ষার চেয়ে আলাদা।
    পরিবারের সবাই, বা মসজিদে জড়ো হয়ে হাত তুলে দোয়া চাওয়া আল্লার কাছে। এ এক অদ্ভুত প্রশান্তি।
    পরিবারের প্রধান বা স্থানভেদে মসজিদের ঈমাম দোয়া চাইছেন। সকলে ‘আমিন’ বলে সেই দোয়ায় শরীক হচ্ছেন।
    দোয়ায় কখনো উঠে আসছে - “রব্বির হামহুমা কামা রব্বাইয়ানী সগিরা”(হে আল্লাহ, আমাদের পিতামাতা উভয়কে ক্ষমা করো, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবকালে লালনপালন করেছেন)। কখনো - রাব্বি জিদনি ইলমা (আল্লাহ আমাকে জ্ঞানদান করুন)।
    চোখের কোনা ভিজে আসছে, সমগ্র মানবজাতির জন্য দোয়া হচ্ছে...।

    => ইফতার পর্ব - ১

    ইফতার খেজুর দিয়ে শুরু করা সুন্নত। এর পরেই আসে কাঁচাছোলা এবং আদাকুচির স্থান। অল্প লবন দিয়ে এই আদাকুচি আর ছোলার যে কি স্বাদ তা শুধু একজন রোজাদার বুঝবেন। জলের গুরুত্ব বোঝা যায় সারাদিনের পর স্টিলের গ্লাসে ঠান্ডা পানিতে চুমুক দিয়ে। বারদুয়েক দম নিয়ে গ্লাসের পানি খেলেন। অদ্ভুত এক ঠান্ডা নদী বয়ে গেলো শিরদাঁড়া বরাবর।
    ফালিফালি শশা কচ কচ শব্দে আপনার দাঁতে পেষাই হচ্ছে। এরপর হাত বাড়ালেন আপেলে, একফালি আপেল তুলে নিয়ে কামড় লাগালেন। সামান্য লবন দিয়ে আপেল খেয়ে দেখুন, অন্যরকম লাগবে।
    ও বাবা! ডাঁশা পেয়ারার ফালিটা মনখারাপ করে বসে আছে। আপনি তাকে কদর দিচ্ছেন না বলে, এমন সময় আলতো করে হাতে তুলে পেয়ারাটাও সাবড়ে দিলেন ইফতারি আদবকায়দায়।

    এরপর আস্তে আস্তে মুসাম্বি, তরমুজদের সমাধা করলেন। দেখলেন কলার টুকরোগুলোর দিকে নজর পড়েনি, সেগুলোকেও যোগ্য সম্মান দিলেন। বেদানার বাচ্চাকাচ্চারা সমবেতভাবে বেদনা প্রকাশ করছিলো, তাদেরও পেটের দুনিয়াটা দেখিয়ে দিলেন। নিজে আম আদমি হয়ে আমের কদর করবেন না, তা কি হয়?
    থালায় সাজানো আমের ফালিগুলো খেয়ে খোসাগুলোকে নৌকা করে ছেড়ে দিলেন।
    এর সাথে আঙুর বা কালোজাম জুটে গেলে আরো ভালো হয়। ভাগ্যবানেরা কাঁঠালও পেয়ে যান!

    দেদার ফলাহার করে সরবত ঢেলে নিলেন মগ থেকে গ্লাসে। ধীরে ধীরে লেবুর ঠান্ডা সরবত পান করলেন। এবার একটা পেল্লায় তৃপ্তির ঢেকুর উঠবেই উঠবে।
    বিভিন্ন ধরনের শরবত থাকে। কেউ কেউ রুহ আফজা পছন্দ করেন।

    => মাগরিবের(সান্ধ্যকালীন) নামাজের বিরতি -
    আচমকা একগাদা ফল আর জল খেয়ে ফেলায় স্থূলকায়দের একটু উঠতে সমস্যা হবে। কিন্তু মাগরিবের নামাজের সময় তুলনায় কম। তাই কাতার(লাইন) সাজিয়ে বাড়িতে বা মসজিদে নামাজ আদায় করাটা স্বল্প সময়ের মধ্যে করতে হয়।

    => ইফতার পর্ব - ২
    নামাজের শেষে ছোট্ট করে দোয়া শেষে তাকিয়ে দেখলেন তেলেভাজা এসে গেছে। সাথে মুড়ির সাথে চপ-পেঁয়াজি-বোমের অনবদ্য সংকলন। শুকনোটাই বেশি চলে। কারন একসাথে অনেকে খাওয়া যায়। মুড়ির সাথে তেলেভাজা খাচ্ছেন। আর কাঁচালঙ্কায় কামড় বসাচ্ছেন। এই গরমে ঘেমে যাচ্ছেন, কান গরম হয়ে আসছে। উহহ! উহহ! করে মুখ বাঁকাচ্ছেন। তবে ঝালটাই আলাদা মাত্রা এনে দিচ্ছে।
    অল্প পেঁয়াজকুচি, আলুভাজা বা ছোলাসেদ্ধরা কেউ উইংয়ে খেলছে, কেউ মিডফিল্ডে, কেউ গোটা মাঠ চষে নিচ্ছে...।

    অনেকক্ষেত্রে বাড়িতেই বানানো হয় চপ-বেগুনি-পেঁয়াজি। আসরের পরেই কাজ শুরু হয়ে যায়। ঘরোয়া চপে আন্তরিকতা লেগে থাকায়, অসুস্থ হওয়ার চান্স কম।

    তেলেভাজার একঘেয়েমি কাটানোর জন্য কখনও ঘুগনী আসে, হালিমকে ডাক দেওয়া হয়, বা ক্লাসিক গোস্তরুটি ইফতারের শেষাংশ জমিয়ে দেয়। মিষ্টিমুখ করতে ফিরনির জুড়ি মেলা ভার!

    => অন্যরকম ইফতার -

    রমজানে সাধারণ গরিব মানুষকে ডেকে ইফতার করানো ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তম কাজ। এর ফলে অপেক্ষাকৃত গরিবরা ছোলা-খেজুরের সাদামাটা ইফতারের পাশাপাশি অন্যান্য ফল এবং ইফতার সামগ্রীর স্বাদ নিতে পারেন।
    ইসলাম রমজানে বিশেষ দানের কথাও বলে। সেটা বিস্তারিত লেখা দাবি করে।

    #হককথা
    ♥ রমজান নিয়ে - ৬ ♥
    -------------------------------------------------

    ♦ সংযম, সাহায্যের মাস ♦

    রমাজান মাসে রোজার অর্থ অমুসলিমদের বড় অংশ তো বটেই, বৃহৎ সংখ্যক মুসলিমদের কাছেই অনেকক্ষেত্রে স্পষ্ট নয়। অনেকেই মনে করেন রোজা পালন আসলে অভুক্ত থাকার প্রক্রিয়া। অথচ ব্যাপারটা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তেমন নয়।
    রমজান মাস আসলে সংযম, সাধনা, ঈবাদত, দানধ্যানের সওগাত বয়ে আনে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে সুযোগ থাকে পুণ্য সঞ্চয়ের, পাপ ক্ষয়ের, সাধ্যমত দান করার।

    প্রাথমিকভাবে রোজা হলো গোটা শরীরের সংযম। মানে চোখ দিয়ে খারাপ দেখবো না, মুখ দিয়ে খারাপ বলবো না, কান দিয়ে খারাপ শুনবো না, হাত দিয়ে খারাপ করবো না ইত্যাদি। এই রেশ সারাবছর বয়ে বেড়ানো। অভুক্ত পেট সংযমে সহায়ক।

    তারাবির নামাজ, কোরানপাঠের পাশাপাশি সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য দানের নির্দেশ আছে। ফিতরা, যাকাতের মতো ধর্মীয় বিধানের পাশাপাশি, ব্যক্তিগতভাবেও সাহায্য করে থাকেন অনেকে। কারন এই মাসে দান অন্য মাসগুলির থেকে অনেকাংশে উত্তম।
    রমজানে গরিব মানুষকে ডেকে ইফতার করানোর সওয়াবের(পুণ্য) কথা আগের পর্বেই লিখেছি।

    নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সকল মুসলিমের জন্য ফিতরা(বিশেষ দান) প্রদান করা ওয়াজিব(পালনীয় কর্তব্য)।

    ফিতরা দেয়ার সামর্থ্য আছে এরকম প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের ও পরিবারের সমস্ত সদস্যদের পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদান করা ফরজ। যাঁদের লালন-পালনের দায়িত্ব শরীয়ত কর্তৃক তার উপরে অর্পিত হয়েছে। যার কাছে এক দুই বেলার খাবার ব্যতীত অন্য কিছু নেই তার ফিতরা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
    এই ফিতরা হিসেবে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমান শস্যসামগ্রী(প্রায় এক কিলো আটশো) দানের নিয়ম আছে। এই উপমহাদেশ মূলত ধান বা চাল দিয়েই ফিতরা দেওয়া প্রচলন থাকলেও, গম বা অন্য শস্য দিয়েও ফিতরা দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ওজনের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এতে নিয়ম বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নরকম।
    এছাড়া ওই ওজনের শস্যের বদলে তার মূল্য নগদ হিসেবে ফিতরা দেওয়াও যায়।

    যাকাত ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের একটি। নিদিষ্ট পরিমান সম্পদের বেশি থাকলেই যাকাত ফরজ(বাধ্যতামূলক) হয়ে যায়। তখন প্রতি একশো টাকায় আড়াইটাকা হিসেবে দান করতে হয়। এর ফলে পয়সার রোটেশন হওয়ার বড় চান্স থাকে। ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে সাধারণত ধনী আরো ধনী হয়, গরীর আরো গরীব হয়। সেখানে এই যাকাত গরীবদের মধ্য কিছুটা অর্থের সংস্থান এনে দেয়।
    আমার বিশ্বাস, বিত্তশালী মুসলমানরা সবাই যদি ঠিকভাবে যাকাত দিতেন তাহলে ঈদ আরো সুন্দর হতো। তবু প্রচুর বিত্তশালী মুসলমান যাকাত দেন। যাকাতের প্রবণতা বিহারী মুসলমানদের মধ্যে বেশি।
    সাধারণ চাকুরে, ছোট ব্যবসায়ীরাও সাধ্যমত শাড়ি, লুঙ্গি ইত্যাদি দান করেন।

    বাগদিপাড়ার ভক্তির মা, বয়সের ভারে জরাজীর্ণ। তবু ঈদ এলেই ছুটে আসেন। আব্বাকে দেখলেই - “বাপ তোদের পাব্বোন হচ্ছে, কাপুড় দিবিনি?”। প্রতিবারের মতো আব্বা ভক্তির মায়ের হাতে তুলে দেন। দাদি বেঁচে থাকলে তাঁরজন্যও ঠিক এইভাবে কেনা হতো। এই ঈদ ভক্তির মায়েরও। প্লাস্টিকের প্যাকেটে লাচ্ছা-সিমুই মুড়ে দিলে নিয়ে যান নিজের নাতি নাতনিদের জন্য। অভাবের সংসারে এই সামান্য মিষ্টিমুখও অনেক বড়কিছু।
    এছাড়া বড়চাচাদের বাড়িতেও অনেকে আসেন। পাশাপাশি গ্রামের স্বামীহীনা মহিলারা, বয়স্ক হতদরিদ্ররাও সাহায্য নিয়ে যান।

    রমজানের কৃচ্ছ্রসাধনা বেপরোয়া খুশির ঈদ বয়ে আনে। নতুন পোশাকের ভিড়ে, পিতৃহারা গরিব বাচ্চাটাও নতুন পাঞ্জাবি পরে আসার সুযোগ পাবে, এই ভাবনার সূত্রপাত রমজানের নিয়েতে। রমজান শুধুই খালি পেটে থাকা নয়, সংযত জীবনধারণের মাঝে অভাবী মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার দায়বোধ।

    #হককথা
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ জুন ২০১৭ | ১২৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সেখ সাহেবুল হক | ***:*** | ১৪ জুন ২০১৭ ০৪:৫১60422
  • ভাল লাগছে। পাশাপাশি থেকেও কতটাই অজানা জগত। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

    কিন্তু আমার নাম লেখার জায়গা আসছেনা কেন? এটাও কি ব্লগারের নামে পোস্ট হয়ে যাবে! ঃ(
  • সেখ সাহেবুল হক | ***:*** | ১৪ জুন ২০১৭ ০৫:৩৪60423
  • ভালো লাগল লেখাটা
  • Muhammad Sadequzzaman Sharif | ***:*** | ১৪ জুন ২০১৭ ০৭:২৫60425
  • দারুন লাগলো পড়ে।আমাদের অভিজ্ঞতা প্রায় কাছাকছি। শীতের রোজা কে দারুন মিস করছি এখন। শীতে কাঁপতে কাঁপতে সেহেরি খাওয়ার দিন গুলা। ইফতারের আগে আগে খেজুরের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা শুরু হয়ে যেত আমাদের মাঝে। একটু বাড়ির আসেপাসে হাঁটাহাঁটি আর মেসওয়াক নিয়ে গুতগুতি!! তারপর ইফাতার। রুফ আফজার শরবত দিয়ে রোজা খুলতাম আমরা। তারাবির জন্য সদলবলে বের হতাম বাসা থেকে কিন্তু ঠিক মসজিদ পর্যন্ত আর যাওয়া পর আর সেই স্পীড আর থাকত না। দল বেঁধে রাতে ঘোরাঘুরির এর চেয়ে মোক্ষম সুযোগ তো আর পাওয়া যেত না। আর এরপর যা করা হত তাকে আসলে ঠিক সভ্য কাজ বলা যায় না। কার গাছে কি আছে তা দুপুরেই দেখে রাখা হত আর রাতে হানা দেওয়া হত সেই সব জায়গায়। খেজুরের রস চুরি, ডাব চুরি সেই সাথে ধরা খেয়ে দৌড়ানো তো ছিলই। যাদের কাছে দিনের বেলায় গিয়ে বললেই বিনা দ্বিধায় খাওয়ার জন্য যা চাওয়া যেত তাই দিয়ে দিত তাদের কাছেই রাতে হানা দেওয়া হত। চেয়ে খেয়ে কি আর সেই মজা পাওয়া যায়!!
    আরেকটা জিনিস এখন আর খুঁজে পাই না। ইফতার নিয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি যাওয়া। আম্মা দিয়ে পাঠাত আর আমাদের কাজ ছিল ঘুরে ঘুরে ইফতারের আগে আগে সবার বাড়িতে পৌঁছানো। সে কি ব্যস্ততা আমার তখন। দৌড়ে যাচ্ছি আবার আসছি। আম্মা কে তাগদা দিচ্ছি, তাড়াতাড়ি, আরও কতগুলা বাড়ি আছে,ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছে.... মিস করছি খুব সময়টাকে।
    ঢাকা শহরে যখন থাকা শুরু করলাম তখন শুরু হলো আসল চ্যালেঞ্জ।কোনোদিন বাড়ির বাহিরে সেহেরি বা ইফতার করি নাই তখনো। সেহেরির সময় মাথা পুরো উলট পালট, খাব কিভাবে? গলা দিয়ে তো খাবার নামে না। মেসের ইফতারেও প্রথম প্রথম খেতে হোঁচট খেতাম। তারপর কবে কখন জানি দারুন ভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম দোকানের কেনা ইফতারে। আর যখন ঢাকা শহর হাতের মুঠোয় চলে আসলো তখন শুরু হয়ে গেল এক্সপেরিমেন্ট করা। স্টারের কাবাব, আল রাজ্জাকের ইফতারি, রয়েলের শরবত আর পুরান ঢাকা মানে চকের ঐতিহাসিক ইফতারি। আর গত কয়েক বছর ধরে শুরু হয়ে গেছে সেহেরিও বাহিরে খাওয়া।সেহেরি ইফতারের সময় বাড়ি থেকে ফোন আসত, ঠিকঠাক খেতে পারছি কিনা নিশ্চিত হতে,সেহেরির সময় উঠতে পারলাম কিনা জানতে। বাড়ি জানত না ছেলে তখন সেহেরি খেয়েই ঘুমায়!!!
    তখন যখন বাড়ি ফিরতাম তখন হত আরেক অভিজ্ঞতা।বাড়ি ফিরতে ফিরতে ইফতারের সময় হয়ে যেত।ইফতার করতে হত রাস্তায়।বাড়ি থেকে আমার উপরে চলত প্রবল তিরস্কার, কেন আমি আরও আগে রউনা হলাম না, সকাল সকাল রউনা হলেই তো বাড়ি এসে ইফতার করা যেত! রাস্তায় ইফতার ছিল আরেক অভিজ্ঞতা। বাসের লোক জন যাত্রী মিলেমিশে ইফতার। বাসের ড্রাইভার, হেল্পার আর কিছু যাত্রী তখন একটা পরিবার। বাড়ি ফিরতেই আম্মার বারবার করে জিজ্ঞাসা, সব ঠিক ছিল কিনা? রোজা কোনটা ছেড়ে দিয়েছি কিনা? জবাবে আমার রহস্যময় হাঁসি!!
    আম্মা বেঁচে নেই এখন। এখন বাড়ি ফেরা আর না ফেরার মাঝে আর কোন পার্থক্য খুঁজে পাই না। বাড়ি ফিরে আব্বার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ছুট বাহিরে। বন্ধুরা কে কে এসে পৌছাল আর যারা এখানেই আছে তাদের সাথে কত্ত কথা ….
  • মুহাম্মদ সাদেকুজ্জামান | ***:*** | ১৪ জুন ২০১৭ ০৭:৪৪60424
  • দারুন লাগলো পড়ে। অভিজ্ঞতা প্রায় কাছাকছি। শীতের রোজা কে দারুন মিস করছি এখন। শীতে কাঁপতে কাঁপতে সেহেরি খাওয়ার দিন গুলা। ইফতারের আগে আগে খেজুরের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা শুরু হয়ে যেত আমাদের মাঝে। একটু বাড়ির আসেপাসে হাঁটাহাঁটি আর মেসওয়াক নিয়ে গুতগুতি!! তারপর ইফাতার। রুফ আফজার শরবত দিয়ে রোজা খুলতাম আমরা। অসাধারণ দিন সব!!
  • সেখ সাহেবুল হক | ***:*** | ১৫ জুন ২০১৭ ০৮:৩৮60426
  • একটা গ্রামে সেদিন দেখলাম প্রায় সকলে বেলা পড়ে এলে নিম গাছের ডাল দিয়ে দাঁতন করছেন। প্রথমে ভাবলাম এও কোন আচার কিনা। বৌ ঝি রা আমার ভুল ভাঙিয়ে বললেন টুথপেস্ট একদম চলবে না ইফতারের আগে। তাই গ্রামশুদ্ধ লোক নিমডাল হাতে।
    সত্যি, পাশাপাশি থাকি বটে, কিন্তু নিকটতম প্রতিবেশীকে,তার সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান, আচারকে, কিছুই জানা হল না।
    প্রতিভা সরকার।
  • Du | ***:*** | ১৫ জুন ২০১৭ ০৮:৪০60428
  • সেহের মানে কি সকাল? কেন যেন শাম সেহর কথাটা শোনা লাগছে। লেখা এব'ম সবার অভিজ্ঞতার গল্প ভালো লাগছে বলাই বাহুল্য।
  • Rabaahuta | ***:*** | ১৫ জুন ২০১৭ ০৮:৫১60427
  • খুব ভালো লাগছে, মূল লেখা ও আলোচনা দুইই।
  • h | ***:*** | ১৭ জুন ২০১৭ ০৪:২২60429
  • কি সুন্দর লেখা। ফ্যান্টাস্টিক।
  • h | ***:*** | ১৭ জুন ২০১৭ ০৪:২২60430
  • কি সুন্দর লেখা। ফ্যান্টাস্টিক।
  • | ***:*** | ১৭ জুন ২০১৭ ০৪:৩৮60431
  • খুঁটিনাটি কতকিছু অজানা ছিল। দারুণ লাগছে পড়তে।
  • pi | ***:*** | ২৪ জুন ২০১৭ ০৪:০৬60432
  • খুব ভাল লাগছে।
  • কল্লোল | ***:*** | ২৫ জুন ২০১৭ ০২:৩০60433
  • নতুন বাড়িতে ঘুরে বেড়নোর আনন্দই অন্যরকম।
    অনেক ধন্যবাদ সেখ সাহেবুল হক, এই সুযোগ করে দেবার জন্য।
    আমাদের প্রচুর মুসলমান বন্ধু/পরিচিত থাকা সত্ত্বেও আমি আজও কোন ইফতারে যাই নি। সুযোগও হয়নি। তবে ঈদের দিন পরোটা মাংস, বা বিরিয়ানীর সাথে জর্দাভাত কদাপি ছুট যায়নি, যতদিন কলকাতায় ছিলাম। ব্যাঙ্গালোরে একজনই মুসলমান নামের বন্ধু ছিলো, সে আবার নাস্তিক। কি করা! তাই ইফতারের সময় মস্ক রোডে চলে যেতাম, পাত্থর কে গোশ্ত, রোটিপে বোটি আর হায়্দ্রাবাদী হালিম খেতে। সে ছিলো সাতশো মজার দিন।
  • শুভ ভট্টাচার্য | ***:*** | ২৫ জুন ২০১৭ ০৫:৫৪60434
  • প্রতিটিই পড়েছি। এখানে দেখে ভালো লাগলো।
  • অতনু | ***:*** | ২৬ জুন ২০১৭ ০৪:২৫60436
  • কিছু লেখা আগে পড়েছি৷ পুরোটা একসঙ্গে পেয়ে খুব ভালো লাগল৷
  • শঙ্খ | ***:*** | ২৬ জুন ২০১৭ ০৭:৩১60437
  • খুব ভালো লাগছে। সাহেবুল কে ঈদের শুভেচ্ছা
  • শঙ্খ | ***:*** | ২৬ জুন ২০১৭ ০৭:৩১60438
  • খুব ভালো লাগছে। সাহেবুল কে ঈদের শুভেচ্ছা
  • সেখ সাহেবুল হক | ***:*** | ৩০ জুন ২০১৭ ০৬:৫২60439
  • সবাইকে ধন্যবাদ আমায় পড়ার জন্য। ইসলাম নিয়ে কিছু কথা জানার আগ্রহ দেখানোর জন্য। ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে দেরি হলো ঠিকই। তবু ভালোবাসার লাচ্ছা-সিমুই দিয়ে জানালাম - 'ঈদ মোবারক'
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন