এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • দুটি ছবি, একদল গিনিপিগ, ও পভার্টি পর্ণ

    Panchali Kar লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৩ মার্চ ২০১৯ | ১৯২৮ বার পঠিত
  • আজ সকালে বন্ধু ঋত্বিজা একটি আর্টিকল দেখালো, অস্কার বিজয়ী ফিল্ম "পিরিয়ড: এন্ড অফ্ সেন্টেন্স" ছবিটিতে ভুয়ো তথ্যের ব্যবহার সম্পর্কে। এর সাথে সাথে আর্টিকেলটিতে তুলে ধরা হয়েছে এই ছবির নির্মাণের পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে কী ভাবে নারীর এবং শিশুদের অধিকার খণ্ডিত হয়েছে, ও কনসেন্ট এবং পার্সোনাল স্পেসের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করা হয়েছে (ছবির নির্মাতাদের ইন্টারভিউ থেকেই তা স্পষ্ট)। আর্টিকলটা দেখে আমি একটুও হতবাক নই, বরং খানিক আস্বস্তই বোধ করেছি। ভারতীয় উপমহাদেশ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ কতটা পিছিয়ে পরা সেই স্ন্যাপশট্ চড়া দামে বিকোয় পশ্চিমী মার্কেটে; মানুষ দেখে চিড়িয়াখানার খাঁচায় শিম্পাঞ্জি দেখার মতো করে। তাই শুরু থেকেই এই ছবির সাফল্য নিয়ে নূন্যতম মাথাব্যথা ছিলনা আমার। আমার চোখে আ্যকাডেমি আ্যওয়ার্ড সিনেমার শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি একেবারেই নয়। ভারতবর্ষের মেয়েদের মেন্সট্রুআল হাইজিন নিয়ে তৈরি ছবি যখন পৃথিবীর সবচেয়ে সিগনিফিক্যান্টলি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র সম্মানে ভূষিত হয়, তখন ছবির গতি-প্রকৃতি নিয়ে বিশেষ দ্বিধা বা আশা কোনটা থাকাই বাঞ্চনীয় নয় বলে আমার মত। ছবিটি আমি দেখিনি, দেখবোও না, কারণ ছবিটির ব্যাকগ্রাউন্ড স্টোরি যা পড়েছি তা যথেষ্ট অস্বস্তিকর এবং এই ছবির নির্মাণের মেথডোলজির সাথে আমার রাজনৈতিক চেতনার স্পষ্ট বিরোধ আছে। বিভিন্ন রিপোর্ট পরে যা বুঝতে পারি: ছবিটিতে দাবি করা হয়েছে যে ভারতে ঋতুমতী মেয়েরা স্কুল কামাই করতে বাধ্য হয় স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং হাইজিনের অভাবে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া টেক্সাস, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি প্রথম বিশ্বের দেশেও মেয়েদের ঋতুস্রাবের সময় স্কুল কামাই করার হার ভারতের সমানুপাতিক অথবা কিঞ্চিৎ বেশী। ভারত সহ সমস্ত দেশেই বহু ক্ষেত্রে এই কামাইয়ের কারণ ন্যাপকিনের অভাব নয়। তলপেটে প্রদাহ, ক্যাম্প, ইত্যাদি।

    মানছি, পিরিয়ড নিয়ে খোলাখুলি কথা না বলা কাজের কথা নয়, কিন্তু তার জন্য মানুষকে প্রস্তুত করতে হয় সংবেদনশীল শিক্ষার ভিতর দিয়ে। হুট করে বাচ্চাদের ক্লাসরুমে হানা দিয়ে তাদের পিরিয়ড সম্পর্কে প্রশ্ন করা স্পেস এবং কনসেন্টের ভায়োলেশন। আসলে ছবির নির্মাতারা সেনসিটাইজ় করতে বিন্দুমাত্র আগ্রহী ছিলেন না, তাঁদের ফুটেজ দরকার ছিল। ভয়ে, ঘৃণায়, লজ্জায় কুঁকড়ে যাওয়া একটি পিছিয়ে পরা দেশের সদ্য পিউবার্টিতে পা রাখা মেয়ের ফুটেজ, তার ভয়ার্ত এক্সপ্রেশন। একটা পিছিয়ে পরা দেশের, পিছিয়ে পরা মানুষের, পিছিয়ে পরার গল্প যত নগ্ন, ভেদ্য, জীর্ন, করুন, গা ঘিন-ঘিন করা ভাবে তুলে ধরা যায়, ততই মানুষ তা চেটে পুটে খায় তাদের স্যাডিস্টিক ক্ষুধার প্রশমন করার জন্য। ক্যাপিটালিস্ট মার্কেট এমন ভাবে প্রজেক্ট করে যেন প্রান্তিক মানুষের কথা তুলে এনে কতই না সামাজিক দায়ভার বহন করা হচ্ছে। কিন্তু সত্যিটা এই যে তথাকথিত কম্যুনিটি সার্ভিসের একটা সেইফ ক্যাপিটাল, চটজলদি লাভ, নাম, যশ, খ্যাতি ইত্যাদি অর্জন করার জন্য; প্রান্তিক মানুষ একদল গিনিপিগ; তাঁরা যেই তিমিরে ছিল, সেখানেই থেকে যায়, তাঁদের গল্প বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করার পরেও।

    এতদূর পর্যন্ত পড়ে যারা ভাবছেন পাশ্চাত্যকে খিস্তানোর অভিপ্রায় নিয়েই লেখাটি এগোবে, সেই প্রাচ্যের মানুষরাও কিন্তু জারোয়াদের সেই একই জঙ্গলি, পিছিয়ে পরা, 'এ-বাবা আজকের পৃথিবীতেও এরকম হয় নাকি?' মার্কা দৃষ্টি দিয়ে দেখেন। জারোয়াদের মুলস্রোতকে প্রত্যাখ্যান করাও একটা প্রোডাক্ট, সেটা বিক্রি হয়, ট্যুরিস্ট আ্যট্রাকশন। তাই জো়য়া আকথার তাঁর ছবি গালি বয়ের গানের দৃশ্যে ধারাভীর কিছু ইমেজারী মাত্র গুঁজে দিয়ে সেই অত্যন্ত মিডিওকার বাণিজ্যিক ছবিকে ক্লাস স্ট্রাগলের গল্প বলে দাবি করতে পারেন; কারণ কমার্শিয়াল আর্টের রাজনীতি একটাই ― মানুষকে সস্তা এবং সহজপাচ্য উপাদান বিক্রি করে এঙ্গেইজ করে রাখো, যাতে সে ভাবার সময় না পায়, প্রশ্ন করার ইচ্ছা হারায়।

    প্রচন্ড দ্বিধায় ছিলাম, গালি বয় দেখবো কি দেখবো না। শেষ পর্যন্ত ডিসিসিভ মোমেন্টে পৌঁছালাম যখন জো়য়া আকথারকে একটি ইন্টারভিউতে বলতে শুনলাম: তাঁর আন্ডারগ্রাউন্ড হিপ-হপ মিউজিকের ওপর ছবিতে ক্লাস স্ট্রাগল প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশাল খটকা লাগলো, কারণ হিপ-হপ মিউজিকের আকর আইডেন্টিটি পলিটিক্সে। কালো এবং খয়েরি চামড়ার মানুষের লড়াই, ধর্ম এবং জাতি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই, গৃহ হিংসা এবং উপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে লড়াই, ইত্যাদি। যদি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক শ্রেণী বৈষম্যের কথা বলাটাই গল্পের মূল হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে হিপ-হপ মিউজিক বেস্ট চয়েস নয়। তার ওপরে অগাধ ভরসা ছিল যে যেই পলিটিক্সই হোক না কেন, বলিউড তার যথাযথ আ্যপ্রোপ্রিয়েশন করে নিজ গুনে ঘেঁটে-ঘ করবেই করবে। অতএব আমি আর সেঁজুতি সমস্ত নিরাশ হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে কোয়েস্ট মলে পৌঁছালাম।

    মজার ব্যাপার গালি বয় ছবিটা থেকে সব চেয়ে দরকারী এলিমেন্ট গুলো ― হিপ-হপ মিউজিক, প্রধান চরিত্রের ধার্মিক আইডেন্টিটি, এবং ধারাভী বাদ দিয়ে দিলেও ছবিটা দাঁড়িয়ে যায়। বুঝতেই পারছেন এই অত্যন্ত জরুরী এলিমেন্ট গুলো কতটা ব্যাক করেছে ছবিটাকে। দারুন গান, সুন্দর মিউজিক ভিডিও হতে পারত, হয়ে গেল পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছায়াছবি। এমন একটা প্যাকেজ যা সাধারণ দর্শককে মোহিত করার ক্ষমতা রাখে; এতটাই মোহিত যে তাঁদের মাথায় দরকারী প্রশ্নগুলো টোকা মরেনা ― আমরা জানতে চাইনা মুরাদ ধারাভীর যেই অংশে বাস করে সেখানে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি কী অবস্থায়? প্রশ্ন করিনা ধারাভীর অস্তিত্ব কোথায় ছবিটাতে, গানের ব্যাকগ্রাউন্ডের র‍্যান্ডম ইমেজারী ছাড়া? সারা ছবি জুড়ে ক্যামেরা মিড-ক্লোজআপেই আটকে রইলো, স্পেসটা এক্সপ্লোর করল না কেন, স্পেসের সাথে মানুষের সম্পর্ক এস্টাব্লিশ করল না কেন? ভাবিনা যে এটা যেকোনো মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প হতে পারত, সেখানে নায়কের প্যাশন আলাদা হতে পারত, তাহলে ধারাভী এবং হিপ-হপের কাজ কী? সেন্টিমেন্ট ক্রিয়েট করে ক্রাউড পূল করা? মুরাদ চরিত্রটা মুসলমান, এবং সেই ধর্মীয় আইডেন্টিটির কোন ক্রাইসিস নেই ছবিতে। ক্রাইসিস ছেড়ে দিলাম, মুরাদ ও তাঁর পরিবার যেই ভাষায় কথা বলে বাড়িতে, মুরাদের কবিতায় তার কোন ছাপ নেই। আরবী প্রভাব কাটিয়ে মুরাদের কবিতা সংস্কৃত ঘেঁষা তথাকথিত শুদ্ধ হিন্দিতে। মুরাদের কেরিয়ার চয়েসের এবং প্যাশনের ক্রাইসিস পার্সোনাল, তাঁর সাফল্য পার্সোনাল। একটি ব্যক্তি বিশেষের উত্তরণের কাহিনী ক্লাসের গল্প হয়ে ওঠে না যতক্ষণ না ব্যক্তি বিশেষের লড়াইয়ের সাথে শ্রেণীর উত্থান-পতনের ইন্টার-পার্সোনাল নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। এই কথাগুলো কোনোটাই অজানা নয় পরিচালকের। অত্যন্ত সূচতুর ভাবে রাজনৈতিক গভীরতা এড়িয়ে গিয়েছেন ছবির নির্মাতা। তিনি জানেন যে ক্লাস স্ট্রাগলের মোড়কে একটা অতি পরিচিত, অতি ব্যবহৃত গল্প তিনি সামনে রাখছেন, তাই "সবকা টাইম আয়েগা" মুছে "অপনা টাইম আয়েগা" ভ্যালিডিটি পেয়ে যায়। ধারাভীর মানুষ একদল গিনিপিগ, এবং তাঁদের শ্রেণী বৈষম্য, তাঁদের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার লড়াই একটা টোকেন মাত্র, ছবি নামক প্রোডাক্টটির বিক্রি বাড়াতে।

    ছবির শেষে আমি আর সেঁজুতি একটা পাবে বসে মার্গারিটায় চুমুক দিতে দিতে আক্ষেপ করছিলাম: পভার্টি পর্ণ, অর্থাৎ দারিদ্র্য ব্যবসার মার্কেটটা অনেক ব্যাপ্ত; পাব্লিক হেব্বি খায়!

    (ঋত্বিজার পাঠানো আর্টিকলের লিংক: https://mythrispeaks.wordpress.com/2019/02/26/and-the-oscar-goes-to-period-end-of-sentence-for-use-of-false-data-misrepresentation-of-indian-women-and-violation-of-child-rights/amp/?__twitter_impression=true&fbclid=IwAR3I-WY65pGjm4rQa8OjRdw9uEMhAUrPcVSfHYNEBLiA_9XAIknNHQk-FRI )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৩ মার্চ ২০১৯ | ১৯২৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Prativa Sarker | ***:*** | ০৪ মার্চ ২০১৯ ০৫:২০49589
  • পথের। বোঝাই যাচ্ছে।
  • Prativa Sarker | ***:*** | ০৪ মার্চ ২০১৯ ০৫:২০49588
  • নার্গিসের প্রতিবাদ মনে পড়ে গেল। পথার পাঁচালী নিয়ে। তবে তোমার লেখাটা যৌক্তিক। ছবিটা আমি দেখেছি ও হতাশ হয়েছি। সাধারণ দর্শকের হতাশা। তুমি তাতে অনেক মাত্রা যোগ করে দিলে।
  • S | ***:*** | ০৬ মার্চ ২০১৯ ০১:৫৫49593
  • নেইজি আর ডিভাইনকে নিয়েই তো গালি বয় তৈরী করা হয়েছে। গালি বয়ের ট্রেইলার দেখেছি। পুরো এইট মাইলসের কপি মনে হয়েছে। আসল সিনেমাটা দেখিনি। তাই কতটা নকল, সেইটা জানিনা। অথচ নেইজি বা ডিভাইনের র‌্যাপ শুনে (খুব কমই শুনেছি) তো খুবই অরিজিনাল মনে হয়েছে। মুম্বাইয়ের ভাষায়, অ্যাক্সেন্টে, পিচে, ব্যাকগ্রাউন্ডে র‌্যাপ।

    জোয়া আখতারকে আমার চিরকালই খুবই মাঝারি মানের পরিচালক মনে হয়েছে। খুবই আপার ক্লাসে তার বিচরণ। তাই জিন্দেগি না মিলেগি বা দিল ধরকনে দো অবধি ঠিক আছে। ধারাভী নিয়ে বা এমনকি র‌্যাপ মিউজিক নিয়ে অনেস্ট ফিলাম ওর কাছ থেকে এক্সপেক্টও করিনা। কম্ফোর্ট জোনের অনেক অনেক বাইরে।

    তবে লেখিকার একটা কথার সঙ্গে সহমত নই। আজকের দিনে র‌্যাপ মিউজিকের ওরকম নির্দিষ্ট কোনও সাবজেক্ট ম্যাটার আর নেই। এমিনেম এসে সাফল্যের সঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। আর ক্লাস স্ট্রাগল না হোক, ক্লাস আইডেন্টিটি ব্যাপারটা র‌্যাপ মিউজিকে আছে। তাই এইট মাইলসের র‌্যাপ ব্যাটেলে র‌্যাবিট তার প্রতিপক্ষকে এই বলে হ্যাঠা করছে যে সে প্রাইভেট স্কুলে গেছে।

    ক্লাসিক। যতবার দেখি গায়ে কাঁটা দেয়।
  • S | ***:*** | ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৩:২১49594
  • pi | ***:*** | ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৪49595
  • অনেকে আবার বলল, দারুণ সিনেমা! মানে বেশ বোদ্ধা লোকজনই। দেখতে হবে।
  • de | ***:*** | ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৮:৪০49590
  • লেখিকার বম্বের স্লাম সম্বন্ধে আইডিয়া বোধহয় একটু কম! সমস্ত মুসলমানের ধর্মীয় আইডেন্টিটি নিয়ে ক্রাইসিস থাকতেই হবে - এই ডিম্যান্ডের বেশ উল্টোদিকেই বম্বের স্লামগুলো থাকে। ধারাভী, তিলকনগর, মানখুর্দ, ঘাটকোপার এইরকম অজস্র স্লামে প্রত্যহ জীবনধারণের স্ট্রাগল কম্যুনাল স্ট্রাগলকে ছাপিয়ে যায়। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতায় আমি অনায়াসে দুই ভিন্ন ধর্মের মায়েদের শিফটে নিজেদের বাচ্চা সামলাতে দেখেছি। কিছু কম্যুনাল ক্রাইসিস অবশ্যই আছে - সেটা মুসলিম এরিয়ার স্লামে হিন্দুদেরও আছে। আদারওয়াইজ স্লামগুলো কম্যুনাল হারমোনির সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ - বছরের পর বছর শিবসেনার আর ইদানীং বিজেপির বাঁদরামোতেও এই সহযোগিতা একটুও বদলায়নি।

    গালিবয় একটি অতি জঘন্য ছবি। সেই ছবিকে ডিফেন্ড করার জন্য এই কথাগুলো লিখছি না। ধারাভীতে কিন্তু সত্যিই এরকম অসংখ্য র‌্যাপার দের গ্রুপ আছে - যেটাকে মুম্বই হিপ-হপ কালচার বলে প্রোমোট করা হয়ে থাকে।
  • de | ***:*** | ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৯:২৩49591
  • ডিভাইন - এমনি একটা গ্রুপ - এইটা আসল গান, যেখান থেকে গালিবয়ের গানটা তোলা হয়েছে -

  • de | ***:*** | ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৯:২৬49592
  • বলিউড ফিল্মস্টারকে দিয়ে না করিয়ে জোয়া আখতার একটা ডকুমেন্টরি বানাতে পারতেন এইধরনের গ্রুপ গুলোকে নিয়ে -
  • S | ***:*** | ১৫ মার্চ ২০১৯ ০৫:০৭49596
  • Tim | ***:*** | ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:৩৫49597
  • ছবিটা দেখলাম। বেশ ভালো লাগলো। আড়াই ঘন্টার ছবি খুবই টানটান, অসাধারণ অভিনয় প্রত্যেকের। রিভিউতে দেখলাম ছবির পরিচালক কী বলেছেন সেকথা খুবই গুরুত্ব পেয়েছে। সিনেমা তো পরিচালকের মাধ্যম, কিন্তু বানিয়ে ফেলার পর দর্শক যা বুঝছে তাই বক্তব্য। ভাব সম্প্রসারণ বৃথা। যদিও আমার ব্যক্তিগতভাবে বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে গল্পটা সরলীকৃত। অনেক জটিলতা এড়ানো হলো, মোটের ওপর সবাই বেশ মেনেটেনেই নিয়েছে বাস্তবটা এটাও দেখানো হলো। কিন্তু এত হওয়ারই ছিলো, গল্পটাই সেভাবে লেখা হয়েছে। ক্লাসের সমস্ত ওঠাপড়া, বামপন্থী রাজনীতির যাবতীয় বক্তব্য একটা ছবিতে থাকতেই হবে এই শর্তটাও খানিকটা বাড়াবাড়ি। দে দি দেখলাম লিখেছে ডকুমেন্টরি বানালে ভালো হতো। নিশ্চয়ই ভালো হতো আর সে পথ তো এখনও খোলাই আছে। কিন্তু, সিনেমা আর ডকুমেন্টরি তো আলাদা মাধ্যম, ডকুমেন্টরির উপাদান খুঁজতে হলে সিনেমা দেখার কষ্ট কেউ কেন করবেন?

    আমি ছবিটা দেখে ব্যক্তিগত স্ট্রাগলের ছবিই বুঝলাম। গল্পটা এত সহজ নাও হতে পারতো। মানে, মাইনরিটি অর নট, কটা লোকেরই বা ডাক্তার হতে চলা বান্ধবী থাকে? চাকরিতে ঢুকিয়ে দিতে পারার মত মামা থাকে? এমনকি বেশিরভাগ লোকের তো তেমন কোন প্রতিভাও থাকেনা। সেদিক থেকে মুরাদের গল্প একটি ব্যতিক্রম। ভারতের মত দেশের বেশির ভাগ মানুষের যা হয়না, কিন্তু হলে ভালো হয় মুরাদের গল্প হলো তাই। আমার দৃষ্টি এড়ায়নি মুরাদের মায়ের গল্পটা, যিনি স্বামীর ঘর ছেড়ে এসে বলছেন সব কিছু আবার ঠিক না হলেই ভালো হয়।

    বাকি রইলো পভার্টি পর্ণ। এটা সিরিয়াসলি অভিযোগ হতে পারে ভাবিনি। এই ছবি পভার্টি পর্ণ হলে ঠ্গ বাছতে গাঁ উজার হবে, এবং তথাকথিত সমান্তরাল ধারার দিকপাল পরিচালকেরাও পাস করতে পারবেন কিনা সন্দেহ। এই ছবি দর্শককে যে বিনোদন দেয় তার উৎস মানুষের দারিদ্র্য বলে আমার মনে হয় নি। তার উৎস র‌্যাপ হতে পারে, মুরাদ-সফিনার প্রেম হতে পারে, র‌্যাপ গ্যাং এর কেমিস্ট্রি হতে পারে মায় মুরাদের রূপকথার মত উত্থানও হতে পারে।

    S
    আমি এইট মাইল্স দেখিনি, তবে এমিনেম এট অলের কাজের সাথে পরিচয় আছে। বলে ভালো করলেন, দেখতে হবে। এই ছবি যদি এইট মাইল্সের থেকে টোকা হয় তো বলতে হবে ভালো টুকেছে। ;-)
  • S | ***:*** | ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:৩২49598
  • একটা জিনিস দেখে সত্যিই খারাপ লাগে যে হিন্দিতে এখন র‌্যাপ, স্ট্যান্ডাপ কমেডি থেকে ওয়েব সিরিজ এতো সাফল্যের সঙ্গে চলছে। মানে বিনোদনের নতুন সব ফর্ম্যাট এবং মাধ্যম। অথচ বাংলায় এসব ভাবাই যায়্না। এক তো মার্কেটই নেই, তাই পুঁজিও নেই। তাছাড়া, বাঙালীর রবিঠাকুর আর সত্যজিত-ঋত্বিক আর উত্তম-সুচিত্রা নিয়ে পরে থাকটা এখন অনেকটা রিগ্রেসিভ এবং পরিবর্তন বিমুখতাই মনে হয়।
  • রঞ্জন রায় | ***:*** | ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:২৯49599
  • .১)
    গালি বয় দেখেছি। মোটামুটি টিমের সংগে একমত।
    ধারাভী ও কিছু মুম্বাই স্লাম একসময় গেছি, তবে থাকি নি । ভাষা তো ঠিকই লাগল। ধারাভীর মুসলিম আরবি জুবান বলবে কেন? এখন খরিবোলি হিন্দি, সামান্য ঊর্দূ, ও মারাঠি বোলির মিশ্রণ ওখানকার ভাষা ।
    দে'র বক্তব্য সঠিক, অন্ততঃ আমি যতটুকু জানি।
    ২)এবার এম এইচ এম বা মেন্সট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট প্রসঙ্গেঃ
    আমি 'কর্মদক্ষ' বলে একটি এনজিও'র পরিচালন সমিতিতে আছি। ওরা ছত্তিশগড়ের পালী বলে আদিবাসী ব্লকে এ নিয়ে দশ বছর কাজ করেছে।
    আম্মাদের সার্ভে অনুযায়ী ক্লাস নাইনের পর অনেক মেয়ে স্কুল ছেড়ে দেয় ।তার কারণ গরীবি নয়, ছেলেমেয়েদের আলাদা শৌচালয় না থাকা। ওরা অনেক সময় লজ্জায় পড়ে । খোলাখুলি কথাবার্তা বলা ট্যাবু।
    তাই ইংল্যান্ডের 'ওয়াটার এইড ' সংস্থার গ্র্যান্ট নিয়ে আমাদেরমেয়েরা ক্লাস সিক্স থেকেই টিচারের সহযোগিতায় মেয়েদের সংগে কথা বলে। আমরা শস্তায় ইকো ফ্রেন্ডলি বাথ্রুম বানিয়ে দি। এবং ওই সংস্থাটির সহযোগে ন্যাপকিন প্রস্তুতি মেশিন ইন্সটাল করিয়ে আদিবাসী মেয়েদের ট্রেনিং দিয়ে সেগুলি তৈরি ও প্যাকেজিং এবং একটাকা দামে বিক্রির ব্যবস্থা করি।
    ওই ডকু দেখি নি , অস্কার প্রোগ্রামে যা দেখেছি তাতে লেখিকার বেসিক বক্তব্যের সাথে একমত।
  • রঞ্জন রায় | ***:*** | ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:২৯49600
  • .১)
    গালি বয় দেখেছি। মোটামুটি টিমের সংগে একমত।
    ধারাভী ও কিছু মুম্বাই স্লাম একসময় গেছি, তবে থাকি নি । ভাষা তো ঠিকই লাগল। ধারাভীর মুসলিম আরবি জুবান বলবে কেন? এখন খরিবোলি হিন্দি, সামান্য ঊর্দূ, ও মারাঠি বোলির মিশ্রণ ওখানকার ভাষা ।
    দে'র বক্তব্য সঠিক, অন্ততঃ আমি যতটুকু জানি।
    ২)এবার এম এইচ এম বা মেন্সট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট প্রসঙ্গেঃ
    আমি 'কর্মদক্ষ' বলে একটি এনজিও'র পরিচালন সমিতিতে আছি। ওরা ছত্তিশগড়ের পালী বলে আদিবাসী ব্লকে এ নিয়ে দশ বছর কাজ করেছে।
    আম্মাদের সার্ভে অনুযায়ী ক্লাস নাইনের পর অনেক মেয়ে স্কুল ছেড়ে দেয় ।তার কারণ গরীবি নয়, ছেলেমেয়েদের আলাদা শৌচালয় না থাকা। ওরা অনেক সময় লজ্জায় পড়ে । খোলাখুলি কথাবার্তা বলা ট্যাবু।
    তাই ইংল্যান্ডের 'ওয়াটার এইড ' সংস্থার গ্র্যান্ট নিয়ে আমাদেরমেয়েরা ক্লাস সিক্স থেকেই টিচারের সহযোগিতায় মেয়েদের সংগে কথা বলে। আমরা শস্তায় ইকো ফ্রেন্ডলি বাথ্রুম বানিয়ে দি। এবং ওই সংস্থাটির সহযোগে ন্যাপকিন প্রস্তুতি মেশিন ইন্সটাল করিয়ে আদিবাসী মেয়েদের ট্রেনিং দিয়ে সেগুলি তৈরি ও প্যাকেজিং এবং একটাকা দামে বিক্রির ব্যবস্থা করি।
    ওই ডকু দেখি নি , অস্কার প্রোগ্রামে যা দেখেছি তাতে লেখিকার বেসিক বক্তব্যের সাথে একমত।
  • রঞ্জন রায় | ***:*** | ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৩০49601
  • ধেত্তেরি!
  • কল্লোল | ***:*** | ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৩৪49602
  • বড় এস। বাঙ্গালী মানে পব'র বাঙ্গালী। বাংলাদেশে প্রচুর র‌্যাপ হয়। বেশ ভালো র‌্যাপ।
  • S | ***:*** | ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৩৪49603
  • হ্যাঁ কল্লোলদা। আমি ফকির লালের র‌্যাপ শুনেছি। খুব ভালো লেগেছে।

    ফকির লালের সবথেকে পছন্দ হয়েছে "বিচার চাই" নামক র‌্যাপ, একসময় লিন্ক দিয়েছিলাম এখানে। তার ইউটিউবে ভিউ মোটে ৪ মিলিয়ন। সেটা ডিভাইন/নেইজির র‌্যাপ ভিডিও গুলোর তুলনায় অনেক অনেক কম। তাছাড়া মিউজিক লেবেলটা দেখুন, পুঁজির পার্থক্যটাও বুঝতে পারবেন।
  • S | ***:*** | ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৩৭49604
  • রন্জনদা, শুধু কি তাই? মোদির জনদরদী সরকার এবং তার সবথেকে ইন্টেলিজেন্ট মন্তি অরুন পাঁঠা স্যানিটরি প্যাডের উপরে ১৮% ভ্যাট বসিয়েছিলো (সিঁদুরের উপরে ০%)। পরে চেঁচামেচি করায় কমিয়েছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন