এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বার্সিলোনা - পর্ব ৩

    Binary লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৪ আগস্ট ২০১৯ | ১৭৯৯ বার পঠিত
  • ঊনবিংশ শতকের শেষে বা বিংশশতকের প্রথমে বার্সিলোনার যেসব স্থাপত্য তৈরী হয়েছে , যেমন বসতবাটি ক্যাথিড্রাল ইত্যাদি , যে সময়ের সেলিব্রিটি স্থপতি ছিলেন এন্টোনি গাউদি, সেগুলো মধ্যে একটা অপ্রচলিত ব্যাপার আছে। যেমন আমরা বিল্ডিং বলতে ভাবি কোনো জ্যামিতিক আকার। যেমন বর্গ বা আয়তক্ষেত্র , ত্রিভুজ, নিদেন পক্ষে বৃত্ত বা রম্বস। এন্টোনি গাউদি-র স্থাপত্য ব্যাপারটা অনেকটা বিমূর্ত। বাড়ির চাদ বা দেওয়ালের আকার লতানো গাছের মত , বাড়ির আটিক নৌকার খোলের মত ইত্যাদি। সাগ্রাদা ফ্যামিলিয়া হল গিয়ে বার্সিলোনার আইকনিক মনুমেন্ট । রোমান ক্যাথলিক ক্যাথিড্রাল। এর-ও আকার দর্শন ওই রকম নন কনভেনশনাল।

    সে যাইহোক, পরদিন সকালে হোটেলে প্রতি:রাশ সারলাম ১০টায়। ইউরোপে দেখেছি হোটেলের কম্প্লিমেন্টারি প্রতি:রাশ বেশ ভাল হয়। প্রচুর গরম ঠান্ডা খাবার , ১০ রকমের জুস , সসেজ , ডিমের আইটেম ইত্যাদি। আমরা খেয়ে দেয়ে হেঁটে, ট্রাম, মেট্রো করে সাগ্রাদা ফ্যামিলিয়া স্টেশন নামলাম। সোমবারের সকালেও আশেপাশে প্রায় গুঁতোগুঁতি ভিড়। আগস্ট মাস নাকি পয়লা নম্বর টুরিস্ট সিজিন। লাইনদিয়ে শহর ঘোরানোর টুরিস্ট বাস, যার সবগুলোই ভর্তি মানুষে। আমরা কানাডাতেই সাগ্রাদা ফ্যামিলিয়া-র ভেতরে ঢোকার টিকিট কেটে রেখেছিলাম, কোনো ট্রাভেল সাইটে নাকি বলেছিলো অগাস্টে এত ভিড় হয় যে পরে টিকিট পাওয়া যায় না। ভেতরে ঢাকার সময় তিনজনের হাতে তিনটে ফোন গাইড ধরিয়ে দিল , নিজে দেখে শুনে বুঝে নাও এরকম ব্যাপার। আমার আবার দেবদ্বিজে ভক্তি নেই। সে মন্দির মসজিদ চার্চ কোথাও নয়। তবে সাগ্রাদা ফ্যামিলিয়া তৈরী শুরু হয়েছিল ১৮৮২ সালে আর এখনো আন্ডার কনস্ট্রাকশন ব্যাপারটায় বেশ শিহরণ হয়েছিল এটুকু বলতে পারি। ফোন গাইডে শুনলাম ২০২৬ সালে পুরোটা শেষ করার টার্গেট আছে। ২০২৬, স্থপতি এন্টোনি গাউদি-র শততম মৃত্যু বার্ষিকী। ক্যাথিড্রাল দেখে লিফটে করে টাওয়ারে চড়লাম। খুব ছোট্ট জায়গা ওপরে, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ানোর মত টাওয়ার ব্রিজের জায়গা , তারপর ঘুরে ঘুরে প্রায় ৪০০ সিঁড়ি হেঁটে নামতে হল। বৌয়ের আবার সিঁড়ি উঠতে নামতে কোমড় ধরে যায় তায় আবার ৪০০ সিঁড়ি। তারও পরে আবার পাশাপাশি এক জনের বেশী জায়গা নেই বলে লাইনদিয়ে নামতে হয় আর দাঁড়িয়ে পড়লে পেছনের লোক উসখুস করে। মনে ভাবিলাম লোক পুণ্যার্জনের জন্য কেদার বদ্রি হেঁটে যায় শুনেছি , সে তুলনায় এতো নস্যি।

    নিচে নেমে সামনের ট্যাক্সিস্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সি নিলাম। ট্যাক্সিওয়ালা স্প্যানিশে কথা বললো আমি ইংরেজিতে জবাব দিলাম আর ভাইসভার্সা। অনেক কিছু হিজিবিজি কথার মধ্যে বোঝাতে পারলাম যে ক্যাটালুনিয়া স্কোয়ার যাব। ক্যাটালুনিয়া স্কোয়ার আমাদের আদি কলকাতার ধর্মতলার মত। সেই রকম ভিড় , খালি ধুলোবালি নোংরাকাদা নেই। সাইড ওয়াকের একটা দোকান থেকে ৫ ইউরো দিয়ে একটা বার্সিলোনার ম্যাপ কিনলাম। মোবাইলের ডাটা অফ করে রেখেছি কিনা , তাই ম্যাপ-ই ভরসা।

    আসলে ক্যাটালুনিয়া স্কোয়ার থেকে শুরু হয়েছে লা-রাম্বলা। পৃথিবী বিখ্যাত পেডেস্ট্রিয়ান স্ট্রিট। মেয়ে কানে-র মাথা খেয়ে ফেলেছে কখন লা-রাম্বলা যাব বলে বলে। লা-রাম্বলাতে ঢুকে বুঝলাম সে এক হৈচৈ হট্টগোলের রাস্তা। ডিভাইডার ধরে পরপর খাবারের দোকান, মেমেন্টোসপ, খেলনার দোকান, বইয়ের দোকান, পান ভোজনের খোলা রেস্তোরা। তাছাড়াও টুরিস্ট সেন্টার , গুচি, নাইকে , আমেরিকান ঈগল , এইচএনএম, লেভিস, ষ্টারবাক্স সব। প্রায় কলকাতা দুর্গাপুজোর মত ভিড়। একটা এরোটিক মিউজিয়াম-ও দেখলাম আলো ঝলমল করা। মেয়ে আর বৌ আগে থেকে হোমওয়ার্ক করে গেছিলো , আর আমিও শুনছিলাম লা-রাম্বলা নাকি পকেটমারদের গ্রিন ফিল্ড। তো বৌ আমার কানে কানে অষ্টত্বর শতনাম জপার মত 'পকেট সামলে' 'পকেট সামলে' বলতে বলতে চলেছে , আর তখন প্রায় বিকেল চারটে বাজে বলে আমি দুপুরের খাওয়ার জন্য রেস্তোরা চয়েস করছি।

    প্রথমে একটা দোকান পেলাম কিন্তু তাতে জায়গা হলো না। কুড়ি মিনিট ওয়েটিং লিস্টে দাঁড়িয়ে থেকে খিদে মাথায় উঠে গেল। তারপরের রেস্তোরায় একটা ঘুপচি কোনে কোনোরকমে জায়গা পেলাম। মেনুকার্ড দেখি তিনটে। একটা স্টার্টার , আরেকটা মেন আইটেম আরেকটা টাপাস (মানে আমি তাপস বলেছিলাম , মেয়ে শুধরে দিয়ে বললো টাপাস)। তো টাপাস দেখলাম আগের দিনের সেই স্ন্যাক সাইজ গুলো , আর এই দোকানে লোকজন যা ব্যস্ত , টাপাস অর্ডার দিতে গেলে দাঁত খিঁচিয়ে দিতে পারে। মেনকোর্স দেখি সব পাইয়া। ভেজিটেবল পাইয়া , সীফুড পাইয়া , চিকেন পাইয়া, পর্ক পাইয়া। দাম মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ ইউরো। যা থাকে কপালে বলে আমি আর মেয়ে সীফুড পাইয়া আর বৌ চিকেন পাইয়া অর্ডার করলাম। বললো পাইয়া আস্তে ২৫/৩০ মিনিট লাগবে। আর ততক্ষনের জন্য মিষ্টি আলু ভাজা দিয়ে গেলো। ২৫/৩০ মিনিট পরে দেখি তিনটে চ্যাপটা কড়াই নিয়ে আসছে। তাতে আমাদের মোটা আতপ চালের ভাত, অসাধারণ মশলা দেওয়া , তাতে আমার আর মেয়ের কড়াইতে চিংড়ি মাছ , অক্টপাস ইত্যাদি, বৌয়েরটায় চিকেন। খেতে মোটের ওপর বেশ ভাল।

    খাওয়ার পরে প্রায় দু ঘন্টা লা-রাম্বলায় হেঁটে বেড়ালাম , ছবি তুললাম , ছোটোখাটো মেমেন্টো কিনলাম , কিন্তু দাম দেখে ভীমড়ি খাওয়ার জোগাড়। দুআড়াই ঘন্টা হেঁটে ক্লান্ত হয়ে প্যাটিও রেস্তোরায় বসে কিছু না জিজ্ঞেস করেই সাংগ্রিয়া অর্ডার দিলুম। আগে যা বলেছি, এখানে কেউ এক লিটারের কম মদ খায় না , আমাকেও এক ঢাউস জাগে করে সাংগ্রিয়া দিয়ে গেল। তো, আরো প্রায় ঘন্টা দেড়েক বসে বসে এক লিটার সাংগ্রিয়া খেয়ে বেশ তূরীও মেজাজে বিল চাইলাম। বিল পেয়েই , বাপ্রে বলে নেশা ছুটে গেল। এক লিটার সাংগ্রিয়ার দাম ৩০ ইউরো !!!

    তাছাড়া ফেরার পথে মেট্রো-র সুড়ঙ্গ-এ ঢুকছি , দেখি সিঁড়ির মুখে একটা দেওয়ালে লালকালীতে পোস্টার, পরিষ্কার ইংরেজিতে লেখা "টুরিস্ট গো ব্যাক হোম, ইমিগ্রান্টস ওয়েলকাম"।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৪ আগস্ট ২০১৯ | ১৭৯৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Binary | ***:*** | ২৪ আগস্ট ২০১৯ ০৫:০৩49424
  • *
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন