এসব আলোচনা এখন হবার কোনো মানে নেই, কিন্তু সম্পাদক নিরুপায়। গুরুচণ্ডা৯তে প্রায় ১৪ বছর আগে প্রকাশিত একটি লেখা (https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=18135) নিয়ে সম্প্রতি কোনো কোনো গোষ্ঠী নেট মাধ্যমে প্রবল হইচই সৃষ্টি করেছেন। গুরুর সম্পাদনার সঙ্গে অতীতে বা বর্তমনে সংশ্লিষ্ট লোকজনের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। কোনো কোনো মহলে 'ফেক নিউজ' ছড়ানোর জন্যও দায়ী করা হয়েছে। গুরুতেও বিষাণ বসু, এই লেখাটি নিয়েই একটি সমালোচনাও লিখেছেন (https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=20571)। ১৪ বছর আগের কোনো ঘটনার, এই মুহূর্তে, আলোচনার অগ্রাধিকার পাবার কথা নয়। কিন্তু যেহেতু অভিযোগগুলি উঠেছে, ফলে সম্পাদকের দিক থেকে সংক্ষেপে উত্তর দেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমে কয়েকটি খুচরো কথা।
১। লেখাটি ১৪ বছর আগের। আজকের গুরুর লোকজনের কাছে তার জবাবদিহি চাওয়া অর্থহীন। লেখাটি প্রকাশ করার পিছনে গুরুর বর্তমান বা অতীত টিমের কারো যদি কোনো দায় থেকে থাকে, সেটি এই শর্মার। ফলে অন্য কারো কাছে কোনোরকম ব্যাখ্যা চাওয়ার কোনো মানেই নেই।
২। 'ফেক নিউজ' কথাটিও সম্পূর্ণ ভুল। যাঁরা কথাটি ছড়াচ্ছেন, তাঁদের গুরুর সাইট তো নয়ই, উদার পরিসর বা লিবারাল স্পেস সম্পর্কেই ধারণা খুব সীমিত। অথবা জেনেবুঝেই করছেন। কোনটা জানা নেই। তাই জানিয়ে রাখা যাক, গুরু কস্মিনকালেও কোনো সংবাদপত্র নয়, তেমন কোনো দাবিও নেই। ইদানিং কিছু প্রতিবেদন বেরোয় বটে, কিন্তু যে সময়ের কথা, তখন তাও বেরোত না। যা বেরোত, তা প্রবন্ধ। সংবাদ নয়, নিবন্ধ। নিউজ নয়, ভিউজ। উল্লেখ্য লেখাটিও কোনো নিউজ নয়। যেহেতু গুরু একটি একটি উদার পরিসর, তাই সমস্ত পক্ষের লেখা প্রকাশিত হয়। এই লেখাটির সমালোচনাও প্রকাশিত হয়েছে। অন্য দৃষ্টিভঙ্গিও প্রকাশিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। তার কোনো লেখাই নিউজ নয়, এবং লেখকের দৃষ্টিভঙ্গিজাত। নানা দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বিরোধ থাকবে, ফলে একটি লেখা অন্যটির বিরোধিতাও করতেই পারে। পারে শুধু নয়, উদার পরিসরে সেটাই কাম্য। গুরুর একটি লেখার কিয়দংশ শেয়ার করে যাঁরা ফেক এবং নিউজ, শব্দদুটি ছড়াচ্ছেন, তাঁরা উদার পরিসর ব্যাপারটিই বুঝছেন না, বা চাইছেন না। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ঢুকে আছে যে মৌলবাদ, গুরু সেদিনও তার বিরোধী ছিল এবং আজও।
এবার জরুরি প্রশ্নটি। যা ততটা খুচরো নয়। লেখাটি বেরিয়েছিল সম্পাদিত বিভাগে। সম্পাদকের ইচ্ছে না হলে বেরোত না। বিভিন্ন মতকে ঠিক কতটা স্থান দেওয়া যায় একটি উদার পরিসরে? এটি খুচরো কথা নয়, উদার পরিসর সম্পর্কিত যে চলমান বিতর্ক, তার অংশ। দার্শনিক আলোচনায় এখানে ঢোকা যাবেনা, শুধু ওই লেখার নির্দিষ্ট প্রেক্ষিতেই থাকা যাক। লেখা প্রকাশের সময়কাল ২০০৭। খুব সম্ভবত লেখা হয়েছিল ১৫ তারিখ রাতে। তার ঠিক একদিন আগে সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম নারকীয় একটি ঘটনা ঘটে গেছে। নন্দীগ্রামের গুলিচালনা। বাম জমানায় পুলিশের গুলিচালনা একেবারেই বিরল ঘটনা ছিলনা, কিন্তু এক্ষেত্রে সব সীমারেখাই পেরিয়ে যায়। খুব সংক্ষেপে বললে, নিরস্ত্র জমায়েতের উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। সরকারি হিসেবে ১৪ জন মারা যান। তার কিছু অংশ পুলিশ যেদিক থেকে গুলি চালাচ্ছিল, সেদিক থেকে তোলা ঝাপসা ভিডিওয় ধরা আছে। তখনও হাতে হাতে সেলফোন আসেনি।
এরপর পুলিশ এলাকায় ঢোকে। সঙ্গে ঢোকে দলীয় কর্মীরা। তারপর সে এলাকায় কী ঘটে তার খবর আর পাওয়া যায়নি। কারণ গোটা এলাকাকে অবরুদ্ধ রেখে, সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে না দিয়ে চলছিল পুলিশি তাণ্ডব। সংবাদমাধ্যমের হাতে-গোনা যে কজন এলাকায় ছিলেন, তাঁদের বর্ণনানুযায়ীই গুলি চালনার পর তাঁরা প্রাণ হাতে পালান। সাংবাদিক সুকুমার মিত্র প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে (https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=20569) লিখেছেন, "শ্রীকান্ত পাইকের কথা শোনার পর আর কোনও ঝুঁকি নেওয়ার কথা ভাবিনি। চোখে যা দেখেছি, কানে যা শুনেছি তা সম্বল করে প্রাণ নিয়ে পালানো... এরপর আর পাঁচ ঘন্টা ফোনে যোগাযোগ নেই। জ্যামার লাগানো হয়েছিল। যাতে ভিতরের খবর দ্রুত না বেরোতে পারে। নন্দীগ্রামে ওইদিনও গণহত্যা চালানোর সময় এলাকার চারধারে ছিল সিপিএম ও পুলিশের কঠোর নাকাবন্দী। কাউকে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকী সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদেরও না।"
পরদিন সকালে আনন্দবাজারের হেডলাইন ছিল "রক্তে দখল মুক্তাঞ্চল"। সেদিন এর চেয়ে বেশি খবর তারাও জোগাড় করতে পারেনি। সেদিন, অর্থাৎ ১৫ তারিখ হাইকোর্ট পুলিশের কাজকে অসাংবিধানিক আখ্যা দেয়। জ্যোতি বসু প্রশ্ন করেন পিঠে গুলি কেন? মহিলাদের গুলি কেন? সবই পরের দিনের কাগজে বেরোয়। অর্থাৎ ১৬ তারিখ। সঙ্গে প্রথম পাতায় আরেকটি হেডলাইন ছিলঃ "হাড়হিম করা ত্রাসে নন্দীগ্রাম কার্যত বোবা"। "হাড়-হিম" শব্দবন্ধটি রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধির।
এর পরের দিন, অর্থাৎ ১৭ তারিখ বেরোয় বহু আলোচিত সৌমিত্র বসুর লেখাটি। কার্যত নন্দীগ্রাম তখনও অবরুদ্ধ। সন্ত্রাস, ক্ষয়ক্ষতি, মৃত্যুর পরিমাপ বাকি পৃথিবীর মানুষ জানেননা, জানতে দেওয়া হয়নি। লেখক নন্দীগ্রামে যাননি। যাবার কোনো উপায় ছিলনা। খবর জানারও। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান হুবহু উদ্ধৃত করেছেন মাত্র। অবশ্যই উদ্ধৃতি চিহ্নের ভিতরে। সে বয়ানে সুকুমার মিত্রর কথাও আছে, যিনি প্রাণ হাতে করে পালান নন্দীগ্রাম থেকে। বয়ানে মনে হয়না কোনো কিছু বিকৃত করা হয়েছে। কারণ এর কদিন পর সরকারি অবরোধ উঠে গেলে অমিতাভ গুপ্ত এবং বোলান গঙ্গোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে যে কথাবার্তা বলেছিলেন, তাতেও হুবহু একই চিত্র। এপ্রিলের ৫ তারিখ, আনন্দবাজারের এক উত্তর সম্পাদকীয়তে অমিতাভ গুপ্ত লেখেন "অশীতিপর বৃদ্ধা বলতে থাকেন 'পুলিশ প্রথমে গ্যাস মারল, তারপর গুলি করল। পুকুরে বিষ দিলে দেখেছেন কীভাবে পুঁটিমাছ ভেসে ওঠে? সেরকম ভাবে গাদাগাদি করে পড়ে ছিল মানুষগুলো। মেয়েদের টেনে নিল। গাছের সঙ্গে হাত বেঁধে কাপড় খুলে নিল। ইজ্জত লুটল। তারপর বুক কেটে নিল, মাংস খুবলে নিল, খুন করল।' শুনতে শুনতে শরীরের ভিতরটা গুলিয়ে ওঠে, কিন্তু তিনি বিবরণ দিয়েই চলেন... 'গুলি লেগে একটা বউ পড়ে গেল। কোলে একটা বাচ্চা ছিল, বুকের দুধ খাচ্ছিল। মা পড়ে যাওয়ায় বাচ্চাটাও মাটিতে ছিটকে পড়ল। সেই বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে দুপা ধরে টেনে আড়াআড়ি ছিঁড়ে ফেলল'। স্পষ্ট বুঝতে পারি, টেলিভিশনের পর্দায় ছবি দেখে আর খবরের কাগজের রিপোর্ট পড়ে এই নৃশংসতার অনেকটাই বুঝতে পারিনি এতদিন। বোঝা সম্ভব ছিলনা... উত্তর দেন বছর চল্লিশের কৃষক 'চোখ বন্ধ করলে শুধু রক্ত দেখতে পাই। ঘুমের মধ্যে দুহাত ছিটকে ওঠে, যেভাবে ওই বাচ্চাটাকে টেনে ছিঁড়ে দিয়েছিল পুলিশ, সেই ভাবে। আরও কতগুলো বাচ্চাকে যে পা দিয়ে চেপে, টেনে মারল... ঘুম হয়না...'"।
বোলান লেখেন মেয়েদের কথা। ধর্ষিতাদের বয়ান। হ্যান্ডিক্যাম দেখলেও কেঁপে উঠছেন কেউ। কারো যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে লাঠি। কারও রক্তস্রাব বন্ধ হয়নি তখনও। এইসব।
এ সবেরই জায়গা হয়েছিল, খবরে নয়, উত্তর সম্পাদকীয়তে। নিবন্ধ আকারে। কারণ, খবর জানার কোনো উপায় ছিলনা। একমাত্র ভরসা ছিল প্রত্যক্ষদর্শীরা। প্রশ্ন হল, কী বলবেন, এইসব বয়ানকে? বানানো? গোটা সংবাদমাধ্যম, পুরোটাই ফেক নিউজ তৈরির ফ্যাক্টরি? শুনলে সুমিত সরকার থেকে নোয়াম চমস্কি অবধি সকলে হেসে উঠবেন।
ফলে টেকনিকালি, এই সমস্ত নিবন্ধে, আনন্দবাজার হোক, বা গুরু, কোথাও ভুল নেই। খবর তো না, এগুলো উদ্ধৃতি। কিন্তু তার পরেও অবশ্যই একটি কথা আসে। যে কথা বিষাণ বসু লিখেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলেন, তা মিথ্যা না হলেও, অবশ্যই নানা অতিরঞ্জন মিশে থাকে। এক্ষেত্রেও আন্দাজ করা যায় কিছু অতিরঞ্জন ছিল। টেকনিকালি উদ্ধৃতির মধ্যের বক্তব্যের সরাসরি কোনো দায় নেবার প্রয়োজন না থাকলেও (যিনি বলেছেন, সেটা তাঁর দায়), নৈতিক দায়িত্বের কিছুটা নিশ্চয়ই লেখক এবং সম্পাদকের উপর বর্তায়। সে দায়, অবশ্যই স্বীকার করা দরকার। করছিও। ভবিষ্যতে, আশা করি, যুদ্ধপরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না, হলে, অবশ্যই এই শিক্ষা কাজে লাগবে। কিন্তু একই সঙ্গে এটুকুও মাথায় রাখতে হবে, যে, পরিস্থিতিটি যুদ্ধক্ষেত্রেরই ছিল। ক্ষয়ক্ষতি, খুন-জখম, মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধ, সব মিলিয়েই। যে সরকারি দল যুদ্ধক্ষেত্রের হত্যালীলার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল নিজের রাজ্যের অধিবাসীদের, তারও সেই ভয়াবহ অপরাধ স্বীকার করার সময় হয়েছে। এই লেখাটির যাঁরা সমালোচনা করেছেন, তাঁরা এই প্রসঙ্গটি পুনরুত্থাপন করেছেন যখন, তখন আশা করি, এই বিষয়টিও মাথায় রাখবেন।
প্রসঙ্গটি যখন উঠেছেই, তখন আরও একটি কথা এখানে বলে রাখা জরুরি। এই যুদ্ধাপরাধের বিচার এখনও হয়নি। অন্যান্য অনেক কিছুর মতই (কাশীপুর-বরানগর, ৭২-৭৭ এর খুন-জখম, মরিচঝাঁপি) সেদিনের ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হয়নি। সেদিনের অপরাধী যাঁরা, তাঁদেরও কোনো তদন্ত বা বিচার আদৌ হবে কিনা সন্দেহ। কারণ এর মধ্যে যুযুধান দুই শিবিরের দুই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাই, লক্ষ্মণ শেঠ এবং শুভেন্দু অধিকারী, এক এক করে কেন্দ্রীয় সরকারি দলে যোগ দিয়ে দিয়েছেন, তারপর সমীকরণ আরও বদলেছে, বদলাচ্ছেও, পুলিশ আধিকারিকদের পদোন্নতি হয়েছে। চেপে দেওয়ার খেলা যে দিগন্তপ্রসারী, সে নিয়ে সন্দেহের বিশেষ কোনো অবকাশ নেই। তা সত্ত্বেও দাবিটি রেখে যেতে হবে। কারণ, সেটাই গণতন্ত্র।
প্রশ্ন থেকেই যায়।
পিসী সিপিএম অধিকারী আঁতাত জেনেও কেন অধিকারীদের এত ক্ষমতা দিয়ে আদর করে রেখেছিলেন?
নন্দীগ্রামের সেই পুলিস অফিসার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন তৃণমূলে নিয়েছিলেন?
সিবিআই যখন নন্দীগ্রামের কেসটা নিয়ে মামলা করতে চাইল তখন কেন পিসীমা রাজ্যের তরফে অনুমতি দেননি (পুলিস অফিসারেরা ইনভলভড বলে রাজ্যের অনুমতি দরকার ছিল)? সেটা কি জেরার মুখে ওনার গনহত্যায় জড়িত থাকা ফাঁস হয়ে যেতে পারে ভয়ে?
প্রশ্ন থেকেই যায়।
রাইটার্স থেকে গুলি চালানোর অর্ডার যায় নি জেনেও, বুদ্ধদা/বিমানদা/লক্ষণদা/সুশান্তদা রা কেন চার চারটে বছর চুপ করে রইলেন, মানুষের কাছে সত্যিটা জানালেন না কেন - এমন কি ২০০৯ এবং ২০১১ ইলেকশনের প্রচারেও এ নিয়ে কিছুই বললেন না
নন্দীগ্রামের সেই পুলিশ অফিসার সত্যজিৎ বন্দোপাধ্যায়কে বামফ্রন্ট সরকার কেন চার বছর ধরে কিছু করল না, অন্তত একটা বদলিও করালো না কেন
নভেম্বরে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বুদ্ধদা ওইসব - পেইড ব্যাক বাই কয়েন বললেন কেন [ ইন্টারভিউতে প্রশ্ন ছিল স্পেসিফিক্যালি নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি নিয়ে, অন্য কিছু নিয়ে নয়, এবং বুদ্ধদা উত্তরও দিয়েছিলেন গুলি চালনা নিয়েই, এর অনেক পরে অবশ্য বুদ্ধদা বলেছিলেন ঐ মন্তব্যটা করা ঠিক হয় নি ]
যতই ঘুড়ি ওরাও রাতে .......
বারবারের লাইনটা সব্যসাচীর গলাতেই সবচাইতে বাঙ্ময়।
না না এ নকল কুমীর। পায়ে চটি নেই তো।
আসলে কিছুই হয়নি নন্দীগ্রামে।
প্রশ্ন থাকে না।
গুলি চালানোর অর্ডার রাইটার্স থেকে যায় না। ওটা পুলিশ লোকালি ডিসিশন নেয়।
পুলিশ অফিসার সত্যজিতের তৃণমূলে যোগদান 2020র ঘটনা। সেটা 2007এ জানার উপায় ছিল না।
কুমীরেরা পায়ে চটির কথাটা খুব সুপ্রযোজ্য।
বুদ্ধবাবুর ইন্টারভিউ।
গুরুর পুরোনো লোকেরা এরকম নিঘিন্নে টাইপের কেন? ফেবুতে গুজগুজ করে বেড়ায়, লেখার নীচে এসে বক্তব্য জানাবার মুরোদ নেই?
পুরো বক্তব্যটা এটা।
https://www.facebook.com/watch/?v=558809755038084
সিপিএম এর লোকজন এখান থেকে কাট করা একটা ভারশন অর্ধেক কথা কাটা, দুটো মাত্র বাক্য তোলা একড়া ভিডিও চালিয়ে যাচ্ছে।
যাঁরা অন্য ভার্শনটা শুনে বলছেন, তাঁরা নাহয় একরকম না জেনে বা ভুল জেনে বলছেন কিন্তু যাঁরা পুরোটা দেখে করছেন, তাঁরা জেনেশুনে ফেক নিউজ ছড়াচ্ছেন, রামের আইটি সেলের বাপ এই রামবামরা!
কিছুদিন গুরুচণ্ডা৯-তে লিখছি; এই প্রথম সম্পাদকের নাম জানলাম। :) সামান্য দেখায় মনে হয়েছে বিভিন্ন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখানে আছে এবং যে কেউ যা খুশি লিখতে পারে, যেটা আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে খুব বড়ো ব্যাপার। এই লেখায় সম্পাদক প্রথমেই নিজে দায়ভার গ্রহণ করেছেন, সেটা খুব ভালো মনের পরিচয়। গুরুচণ্ডা৯ পত্রিকার প্রতি আস্থা বাড়ল।
এই পুরোনো লোকই তো ২০১৬ তে কংগ্রেসের সাথে জোট নিয়ে একটু নিরীহ খোঁটা সহ্য করতে না পেরে নিজের ওয়ালে গিয়ে 'পয়সা বোলতা হ্যয়' লিখে ইঙ্গিত দিতে চেয়েছিলেন গুরু তৃণমূলের পয়সা খেয়েছে। এদিকে নানা নামে ভাটেও তাঁর আসা চাই। আবার ভাটে যখন সবাই জিগায় কে বলেছে, কে বলেছে, কেউই তার নাম নেয় না। সাসপেন্স ধরে রাখতে না পেরে কেউ একজন মুখ ফস্কে নামটা বলে ফেলায় সে কী গোঁসা। এখন এনারা এক গুরুবিরোধী গ্যাং বানিয়ে একে ওকে 'গুরুতে কেন পড়ে আচিস, বেরিয়ে আয়' বলে ভাঙানোর চেষ্টা চালান। আর গুরু যত না ওনাদের নিয়ে চর্চা করে ওনারা তার চেয়ে বেশি গুরুর কে কী লিখছে সেসবে চোখ লাগিয়ে বসে থাকেন। মানে চোখে হারান আর কী! গুরুর ভাবা উচিৎ এই ভালবাসার কী প্রতিদান দেবে।
গ্রাহক কী ভাবে হওয়া যাবে ?
এই লিংকে ক্লিক করলে দেখতে পাবেন। কোনো অসুবিধে হলে বা প্রশ্ন থাকলে guruchandali@gmail.com এ মেল করুন।
সরি লিংকটাই দেওয়া হয়নি।
সায়ন্তন চৌধুরী মশায়ের সঙ্গে তাল সুর মিলিয়ে একটাই কথা বলব যে সৈকত ব্যানার্জি এই লেখাটি লিখে নৈতিক গুরুভার নিয়ে এবং সিপিএম-তিনো অন্তহীন বাইনারির বাইরে গিয়ে বিষয়টির প্রেক্ষিত ও বহুমাত্রিকতা দেখিয়ে আমার শ্রদ্ধাভাজন হয়েছেন। আমার চোখে ওঁর হাইট কিঞ্চিৎ বেড়ে গেল।
আর এই সময়ে গুরুচন্ডালি কৃষি ও ভোট বিষয়ে সব দৃষ্টিভঙ্গীর লেখা সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে যার জন্য সম্পাদকমডলীর ধন্যবাদ প্রাপ্য।
যাক, আমি সম্পাদক মশাইকে এই লেখাটার জন্য মানে গুরুচণ্ডালির তরফে একটা স্পষ্ট অবস্থানের জন্য সাধুবাদ জানাতে চাই সবার আগে। অনেক দেরিতে হলেও এটা দরকার ছিল বলে মনে হয়।।
এবার আসি সেই বিতর্কিত লেখা প্রসঙ্গে। এই। যে আপনারা দাবি করছেন যে ব্লগের লেখা একজনের লেখকের নিজের বক্তব্য মাত্র, সেটা কোন "খবর" নয়। তাই তার সত্যাসত্য যাচাইয়ের প্রশ্ন ওঠে না। সেক্ষেত্রে কেউ যদি তার বক্তব্য হিসেবে "মমতা বেগমের আমলে বাংলাদেশী মুসনমানদের হাতে শত শত হিন্দুর ওপর অকথ্য অত্যাচারের" গল্প লিখে গুরুতে দিতে চায়, সেটা করা যাবে?
ওপরের প্রশ্নটার উত্তর আমি দিই, যদিও আমি সম্পাদক বা সম্পাদকীয় বিভাগের কেউ নই। তবে উত্তরটা জানি বলেই বলছি।
না, যাবে না, যাওয়ার প্রশ্নই নেই।
কেন যাবে না সেই উত্তরটা দেওয়ার চেষ্টা করে সময় নষ্ট করবো না। প্রশ্নটা নিতান্তই রেটরিক্যাল, যাই উত্তর আসবে তার থেকে কিছু সমান্তরাল টানা হবে ইত্যাদি। সম্পাদকের বা সম্পাদকীয় বিভাগের অন্যদের দরকার মনে হলে উত্তর দেবে।
তবে ব্লগ লিখে কেউ সাবমিট করে দিলে কিছু করার নেই, পরে ডিলিট করে দেওয়া এবং ব্লগ অ্যাকসেস রিভোক করা হবে নিশ্চয়।
সম্পাদনার ক্ষেত্রে পলিসিটা তো সব লেখকের জন্য সমান হবে। এই জন্যই ওই গোদা উদাহরণটা দিলাম। যদি "প্ররোচনামূলক অতিরঞ্জিত" বক্তব্য কোন লেখকের নিজেরই হয়, তার ক্ষতিকর দিকটা অন্তত খতিয়ে দেখে তবেই লেখাটি প্রকাশ করা উচিত মনে হয়। যদি তাই হয় তাহলে সৌমিত্র বসুুর লেখাটিও প্রকাশ ও প্রচার হওয়া উচিত হয়নি। সেটুকু মেনে নিলে ভাল লাগত।
কিসের প্ররোচনা।
নন্দীগ্রামে গন্ডগোল হয়েছিল, মারপিট হয়েছিল, ভাঙ্গচুর হয়েছিল, খুনোখুনি হয়েছিল। এবং এসব নিয়ে অতিরঞ্জনও হয়েছিল। সব সত্যি। গন্ডগোল, ভাঙ্গচুর, খুনোখুনি যেমন সত্যি, তেমনি এসব নিয়ে অতিরঞ্জন, গুজব সেসবও সত্যি।
যেমন, হাজার হাজার সিপিএম কর্মীকে বাড়িছাড়া করেছিল তৃণমূল কর্মীরা, নিহত হয়েছেন প্রচুর - কিন্তু কতজন - দশ, পঞ্চাশ, একশো, পাঁচশো, এক হাজার -- শোনা যায় না - শুধু বলে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু হয়েছিল, সিপিএম কর্মীরা বাড়িছাড়া হয়েছিল, নিহতও হয়েছিল, সে সব সত্যি, আবার এরকম হাজার হাজার সংখ্যা বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া সেও সত্যি।
গুজব একটা ইস্যু। কিন্তু এমন সিলেকটিভ সেনসিটিভিটি দিয়ে কি হবে।
এই যে একটা ক্ষেত্রে (মমতা বেগমের গল্পটা) প্ররোচনাটা বোঝা গেল কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে (হলদী নদীর কুমীরের গল্পটা) প্ররোচনাটা বোঝা গেল না, এটাকেই সিলেকটিভ সেনসিটিভিটি বলে। যাক গে :)
"এই যে একটা ক্ষেত্রে (মমতা বেগমের গল্পটা) প্ররোচনাটা বোঝা গেল কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে (হলদী নদীর কুমীরের গল্পটা) প্ররোচনাটা বোঝা গেল না, এটাকেই সিলেকটিভ সেনসিটিভিটি বলে। যাক গে :)"
আজ্ঞে না। দুটো পরিস্থিতির মধ্যে তফাৎ এইটাই যে আপনার গল্পটি রিয়েল টাইমে ঘটে চলা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসা খবর নয়, যেখানে সাংবাদিকরা ঢুকতে পারছেন না। আজ যদি ভারত সরকারের মিলিটারি কাশ্মীরের কোনো এক অঞ্চল অবরুদ্ধ করে গণহত্যা / গণধর্ষণ চালায়, বাইরের দুনিয়ায় বসে যদি আমি জানতে পারি যে এটা ঘটছে এবং মিডিয়া / ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট চলছে, সেই অবস্থায় সেই যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে থেকে যদি কোনোভাবে ফাঁক গলে কোনো ভয়াবহ চিত্র আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়, তাহলে তার মধ্যে অতিরঞ্জনের সম্ভবনা জেনেও সেটা প্রকাশ করা সেই মুহূর্তের কর্তব্য। সেখানে অতিরঞ্জনের সম্ভবনার ডিসক্লেমারটুকুই দেওয়া যেতে পারে বড়জোর, কিন্তু কবে সেই হত্যালীলারভেরিফায়েড তথ্য এসে পৌঁছোবে, কবে সেখানে সংবাদিক পৌঁছোবে, তবে সেই কথা লেখা হবে - এটা জাস্ট করা যায় না। ১৪ বছর আগে আমাদের পোস্ট ট্রুথের সাথে পরিচয় ছিল না। ফলে গার্ড কম ছিল। এখন হলে গার্ড হিসেবে ঐ অতিরঞ্জনের সম্ভবনার ডিসক্লেমারটুকু দেওয়া হবে। কিন্তু এরকম একটা শাসকের তরফ থেকে চাপিয়ে দেওয়া ক্রাইসিসের সময়, শাসক এবং প্রান্তিক মানুষের মধ্যে প্রান্তিক মানুষের পক্ষটুকু নিতে পারতে হবে, নইলে আর ইনডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া নিয়ে এত বাগাড়ম্বর করা কেন? আপনাদের সমস্যা হল, ঐ ঘটনায় আপনাদের প্রিয় পার্টিটি শাসকের ভূমিকায় আর প্রান্তিক মানুষের বিপক্ষে ছিল, তাই মেনে নিতে অসুবিধে হয়। এটা আন্ডারস্টুড। কিন্তু বারবার এটা নিয়ে খুঁচিয়ে ঘা আপনারাই করেন। তাতে কাদের সুবিধে হয় আপনারাই জানেন। দুনিয়াময় কুমীরের ছবি সেঁটে বেড়ালেও ঐ লেখা গুরুর আর্কাইভ থেকে সরানো হবে না, কলঙ্কের দাগটি বুদ্ধবাবু এবং তাঁর অপকীর্তির আপামর সমর্থকের জামায় লেগে থাকবে চিরকাল - এটা মেনে নিয়ে গ্রো আপ করলে মনে হয় ভাল করতেন। যাগ্গে। আপনাদের মর্জি। :-)
খুঁচিয়ে ঘা তো আপনাদের প্রিয় নেত্রী ই করছেন। :) বাকিরা কোথায় ?
না না, এই লেখা নিয়ে নৃত্য তো কদিন আগে শুরু হয়েছে। :-) সেটার কোনো ট্রিগার ছিল না। আপনি মনে হয় ফলো করেননি।
তবে হ্যাঁ, ট্রিগার কার কীসে হয় বলা মুশকিল। :-)
হ্যা পুরো লেখাটাই পড়েছি। কিচ্ছু মিস করিনি। এখানে এবং ফেবুর পাতায়। মমব্যান এরকম লোপ্পা ফুলটস দিলে বাম সমর্থকরা ব্যাট চালাবেনা এতটা গাঁন্ধীগিরি কেন আশা করা হচ্ছে ?এটাতো নির্বাচন হচ্ছে আফটারাল , দোলের আবির ছোড়াছুড়ি নয়।
বাম সমর্থকদের সমস্যার এতটা লম্বা লিস্টের জন্য ধন্যবাদ। বারবার এতটা প্রান্তিক মানুষের জন্যে ব্যাকুলতা দেখানোর কথা হচ্ছে, তো সেই প্রান্তিক মানুষের দলে কি যেসব বাম সমর্থকদের খুন বা বাড়িছাড়া হতে হয়েছিল তারা ও পড়ে ? নাকি বাম বলে তারা প্রান্তিক নন , তাদেরকে খুন করাই যায় ?
এটাকেই সিলেকটিভ সেনসিটিভিটি বলা হয়েছে। আর প্রান্তিক মানুষের আন্দোলন যখন মমতার মতো জোচ্চোর কয়েকজন হাইজ্যাক করে নিচ্ছিলেন , তখন আপনাদের ভূমিকা কি ছিল ?
আপনি কিছুই পড়েননি। মমব্যান কোনোরকম ফুলটস দেওয়ার কদিন আগেই এই নিয়ে মড়াকান্না শুরু হয়েছে।
সে ঠিকই আছে। কান্নাকাটি চলতে থাকুক। এ নিয়ে এত হাজার শব্দ অতীতে লেখা হয়েছে যে যাই লেখা হোক পুনরাবৃত্তি হবে। সিপিএম সিলেক্টিভ ভাবল, নাকি চক্রান্ত ভাবল সেই নিয়ে সত্যি বলছি, কিছু এসে যায় না।