এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্মৃতিচারণ

  • সীতারাম ইয়েচুরি : কিছু কথা

    Eman Bhasha লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪৯২ বার পঠিত
  • ইয়েচুরির সঙ্গে কয়েকবার কাটানোর সুযোগ হয়েছে। 
    ১৯৮৬তে বর্ধমানে এস এফ আই কেন্দ্রীয় কমিটির তিনদিনের বৈঠক। 
    স্থানীয় ছাত্র নেতা হিসেবে আমি তাঁর সঙ্গে। একজন করে স্বেচ্ছাসেবক দেওয়ার রীতি ছিল কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ম অনুযায়ী। 
    আমি ভাঙাচোরা ইংরেজিতে বাতচিত করতাম। উনি কথা বলতেন স্বচ্ছন্দে। 
    একদিন বললেন, আমার বন্ধুর ঘরে যাবো। 
    কে বন্ধু? 
    অধ্যাপক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। 
    একটু বিক্ষুব্ধ হিসেবে বর্ধমানে পরিচিত ছিলেন, তখন। 

    বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। 
    ভালো মানুষ। 
    দুজনে দেখি বাংলায় গল্প করছেন। এক হোস্টেলে এক ঘরে থাকতেন। বললেন, অপূর্ব আমার বাংলা শিক্ষক। 
    এরপর বার্ণপুরে যুব সম্মেলন। বর্ধমান শহর থেকে বার্ণপুর যাতায়াত তাঁর সঙ্গে। 

    এবার বাংলাতেই কথাবার্তা চলে। 

    আরও কিছু স্মৃতি আছে।।

    শেষ দেখা সামনাসামনি। জ্যোতি বসুর ওপর আয়োজিত এক সভায়। 
    সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘু মৌলবাদ দুটোই সমান বিপদ বলায় সামনে গিয়ে আপত্তি জানাই। 
    বলি, সংখ্যাগুরুর মৌলবাদ ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয় আর সংখ্যালঘুর মৌলবাদ বিচ্ছিন্নতাবাদের। 
    দুটো সমান বিপদ এই চিন্তা বিপজ্জনক ও অমার্কসবাদী। 

    নেহেরুও এই কথা বলতেন তা জানাই। 

    নেতাদের ব্যস্ততার কারণে চলে গেলেন। 
    আমিও আর ফোন করিনি। 
    তবে কারাত জমানার থেকে এক পৃথক পথ ধরেছিলেন। 
    হরকিষেণ সিং সুরজিৎ-এর ছায়া মিলছিল। 

    কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়েছিলেন। 
    রাজ্যসভায় তাঁর বক্তব্য মন দিয়ে শুনতাম। 
     
    বন্ধু শিবাশিস অনুরোধ করায় আর একটু লিখছি। 
    সব লিখতে চাইছি না। 
    আমি বরাবরই বিক্ষুব্ধ বলে পরিচিত। 
    ১৯৮০ থেকেই। 
    তীব্র সমালোচনা করতাম, বিপ্লবী পথ ছেড়ে সংসদীয় নির্বাচনে বেশি আগ্রহী হয়ে যাওয়ায়। সে-সব নানা কথা। সীতারাম ইয়েচুরি ধৈর্য ধরে শুনতেন। ধমকে থামাতেন না। 
    রণদিভে জমানার সমস্যা থেকে সশস্ত্র বিপ্লবে দ্বিধা এসেছে, পি সুন্দরাইয়া লাইনের কথা হয়েছিল। 
    সুন্দরাইয়ার পশ্চিমবঙ্গের পার্টি সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি। 
    আজ থাক, মন খারাপ হয়ে আছে। 
    একজন ভালো মানুষ চলে গেলেন।

    তাঁর ছেলের মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলাম। 
    এটা থাক এখানে:.

    সীতারাম ইয়েচুরির পুত্রের মৃত্যুতে লিখেছিলাম এই কবিতা ২৩ এপ্রিল ২০২১

    সীতারাম ইয়েচুরি-কে।।

    চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে আমার আধা কবিতা।।

    আমার মেজদিকে মা বলতেন বাবা।
    মনে করতেন শিশু বয়সে হারানো মা ফিরে এসেছে রুবি হয়ে।
    দিদিকে যখন শ্বশুরবাড়িতে মেরে ফেলা হয়, বিষ দিয়ে, দাঁতের গোড়ায় নোড়া মেরে মুখ খুলিয়ে বিষ ঢেলে

    মেজদি বই পড়তে ভালোবাসতো।
    এই ছিল অপরাধ।
    আরেক অপরাধ
    যথেষ্ট পণ পায়নি ছেলে
    সুন্দরী মেয়ে খুঁজে।

    ১৯৭৬

    স্তব্ধ বাবার দিকে তাকাতে পারি নি আমি।
    সবাই যখন কবরস্থানে যাচ্ছে
    আমি মুখ গুঁজেছিলাম বইয়ে।
    দিদিকে দেখিনি আমি
    দেখতে পারি নি।
    কাল্টা ভবঘুরে ভাইটিকে ইদের দিন সাবান দিয়ে স্নান করিয়ে দিতো দিদি
    আঁচড়ে দিতো মাথা

    আমি সেই দিদিকে দেখিনি
    দিদির পড়া বই পড়ে দিদিকে খুঁজছিলাম।

    চোখের জলে কি ভেসে যাচ্ছে আমার কথা? 

    এই কথা লিখছি জলে ভাসতে থাকা চোখ নিয়ে
    এই কথা লিখছি কোটি কোটি ভারতবাসীর হয়ে।

    কবরস্থানে যাওয়ার আগে সবাই যখন বলছিল, থানায় যাওয়ার কথা, আমার গান্ধীবাদী কমিউনিস্ট বাবা বলেছিল, কাউকে জেলে পাঠিয়ে তো মেয়েকে ফিরে পাবো না।
    একজন মৃতকে আরেকবার মারতে চাই না আমি।
    #
    আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম, বাবাকে
    হাতে তখনো ধরা আউটবই

    বইটি রেখে আসতে চেয়েছিলাম কবরের পাশে,
    স্বার্থপর আমি পারি নি, সবটুকু পড়া হয় নি যে।
    আমার দিদিও শেষ করতে পারে নি,
    আধপড়া বইয়ের সামনে তাঁর মুখে উপুড় বিষ

    #
    সবাই যখন মোনাজাত করছিল
    আমার বাবা ছিলেন নীরব
    সবাই যখন প্রার্থনা করছিল
    বাবা কী বলছিলেন
    আমি জানি না
    পাথরের মতো
    বেদনার্ত হাহাকার পাথর হয়ে জমেছিল
    তাঁর ভাস্কর মুখে

    # কমরেড ইয়েচুরি
    আমি পুত্র হারানো নির্বাক শেখরদাকে দেখেছি
    #
    আমি আমার পিতাকে দেখছি
    মা হারানো বাবাকে।
    #
    ২০২১
    এতো স্তব্ধতা মুখে, যেন বধির বিস্মৃত বিস্মিত ভারত।

    ভাস্কর্য এক হিমঘ্ন শোকের।।

    চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে আমার আধা কবিতা।

    কমরেড ইয়েচুরি
    তোমার হয়ে আমাদের কাঁদতে দাও, ইচ্ছে হলে।।

    কান্না শোককে কিছুটা হালকা করে দেয়।
    তাই কি ও পাথর মুখ?

    পাথর থেকো না।

    কাঁদো কমরেড।

    একান্ত নির্জনে।

    ও কান্নাকে আমরা আগুনে ঝড় বানাবো।

    (আর যেন কোনো বিকুকে চলে যেতে না হয়
    আর যেন কোনো শঙ্খ ঘোষ, শামসুজ্জামান, আনিসুজ্জামান, দেবেশ রায়কে, দের কেড়ে নিতে না পারে
    কর্পোরেট ব্যাধি)

    Emanul Haque II

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • স্মৃতিচারণ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪৯২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Argha Bagchi | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৪৬537560
  • অপূর্ব ! শেখরদা কি পত্রপাঠের শেখর আহমেদ? বহড়ু‌‌? কবিতাটা মন ছুঁয়ে গেল।
  • . | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৪৮537563
  • এই কবিতার পুরোটাই বেদনা কান্না
  • Eman Bhasha | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:১৩537566
  • শেখর আহমেদ। পত্রপাঠ
  • Argha Bagchi | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:২৯537570
  • ধন্যবাদ। আমি শেখরদার পরিবারে একদা অনেকটা সময় কাটিয়েছি। ওর ছেলে আমায় খুব ভালবাসত। কন্যা অবশ্য একটু দূরেই থাকতে চাইত। পত্রপাঠে আমার বকলম ছিল ব্যাকরণ শিং, বি এ, খাদ্য বিশারদ। অলংকরণেও হাত লাগিয়েছি। আজ বহু পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৫:৪০537576
  • আপনার মেজদির মৃত্যুর এই বিবরণ যতবার পড়ি তীব্র বেদনা আর ক্রোধে মন ছেয়ে যায়। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন