এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • গদ্য সাহিত্যের অনুবাদ প্রসঙ্গে আশীষ লাহিড়ীর সঙ্গে খোলামেলা আড্ডাঃ পর্ব ২

    রূপক বর্ধন রায়
    আলোচনা | বিবিধ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৫১১ বার পঠিত | রেটিং ৩.৭ (৩ জন)
  • পর্ব ১ | পর্ব ২
    ছবিঃ রূপক বর্ধন রায়

    অনুবাদ আসলে সাম সর্ট অফ ক্রিয়েটিভ এ্যাকটিং…


    রূপকঃ তাহলে অনুবাদ নিজেই কী একটা ক্রিয়েটিভ অভিজ্ঞতা বা প্রসেস? আপনার কী মত?

    আশীষঃ সেইটা বলতেই পারো! কারণ কোনো সিরিয়াস অনুবাদের পর আমি কিন্তু আর এক লোক থাকছি না। আর তা যদি হয় ইট ইজ সাম সর্ট অফ ক্রিয়েশন! কারণ প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা ধরণের লেখা, সে তুমি ওয়াইট ফ্যাং ধরো, কী রামচন্দ্র গুহর ইতিহাস ধরো, বার্ণালের বিজ্ঞান-ইতিহাস হোক কিংবা একসময় আমরা প্রচুর পলিটিকাল লিটারেচার অনুবাদ করেছি সেগুলো, কাজেই এই প্রত্যেকটা লেখার ঢঙ এবং বক্তব্য আলাদা। বিশেষত পলিটিকাল লিটারেচারের ক্ষেত্রে এক্কেবারে এ্যাকাডেমিক ধরণের লেখা হলেও তুমি পরিষ্কার ধরতে পারবে যে এর টেন্ডেন্সিটা ওমুক দিকে। কাজেই তোমাকেও ওই এ্যাপারেন্ট এ্যাকাডেমিক নির্লিপ্ততার টোনটা বজায় রেখেই লিখতে হবে। অবভিয়াস করে দিলে হবে না। আবার মাও সে তুং-এর লেখা অনুবাদ করতে গিয়ে দেখেছি স্বাধীনতা খুব কম, কারণ মাওর লেখার অসুবিধা হচ্ছে উনি বেশি সিম্পল! প্যাঁচ থাকলে বাংলা (হাসতে হাসতে) করা অনেক সোজা, প্যাঁচ না থাকলে ভয়ানক কঠিন!
    কাজেই তুমি প্রতিবার নানান ধরণের ভূমিকায় অভিনয় করছ। তাই অনুবাদ হল সাম সর্ট অফ ক্রিয়েটিভ এ্যাকটিং! ইট চেঞ্জেজ ইউ!

    রূপকঃ তাহলে যা দাঁড়ালো তা হল লিটারেচারের ভিতরেও- দেয়ার এগজিস্টস টু কালচার্স?

    আশীষঃ আঙ্গিকের দিক থেকে দেখলে, হ্যাঁ!

    রূপকঃ সেক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ইতিহাস অনুবাদ করতে গিয়ে কোন জিনিসটা আপনার সব থেকে বড় হার্ডল হিসাবে ধরা দিয়েছে। আমরা বার্ণালের “ সায়েন্স ইন হিস্টরি” ধরেই নাহয় কথা বলি?

    আশীষঃ তত্ত্বটাকে বাংলায় নিখুঁত ভাবে প্রকাশ করা! কোনো সন্দেহ নেই যে ওটাই সব থেকে বড় হার্ডল। বিশেষ করে বার্ণালের বইতে যে পরিমাণে তত্ত্ব আছে অন্য কোনো বিজ্ঞানের বইতে, মানে আমার অনুবাদ করা বইগুলোতে তা নেই। তাছাড়া ইন্টেন্ট, এইখানেই কথাটা আবার চলে আসে যে বার্ণাল যেহেতু কমিউনিস্ট, যেহেতু তিনি মার্কসিস্ট, তাই তিনি সমস্ত এ্যাকাডেমিক কথাগুলো যে বলে যাচ্ছেন তার পিছনে এইটা রয়েছে যে এই কথাগুলো মার্ক্সিজমকে সত্য প্রতিপন্ন করতে সাহায্য করবে। কারো কাছে এটা লিমিটেশান, কারো কাছে এটাই এর আকর্ষণ।

    রূপকঃ বায়াসও বটে!

    আশীষঃ হ্যাঁ বায়াসও বটে! এখন যে যেভাবে দেখবে। বার্ণাল নিয়ে আমার নিজেরও অনেক অভিযোগ আছে, ওই বইকে নিয়েই। কিন্তু আমার কথা হল, অনুবাদের সময় লেখকের বায়াসটা তোমাকে ঘাড়ে নিতে হবে।

    মানে ধরো ৮০-র দশকের মাঝামাঝি যখন আমাদের 'অন্বেষা' পত্রিকায় এই লেখাটা ধারাবাহিক হিসাবে বের হয়, এবং তার পরে যখন ধীরেনবাবু (যিনি এর টাকা-পয়সা জোগাড় করেছিলেন, আবার আমায় কিছু টাকাও দিয়েছিলেন) বইটা বের করেন তখন আমি ঠিক মত সমস্ত নোট তৈরি করে উঠতে পারিনি, ছবি তো ছিলই না, আসলে অত টাকা কোথায়? মানে ধরো বার্ণাল যে এত কিছুর তত্ত্ব দেখাচ্ছেন, কোথাও মার্ক্সবাদের কথা বলছেন আবার কোথাও এক্সপ্লিসিটলি বলছেন না; এইযে ফিজিক্সের ইভলিউশান, মানে পার্টিকেল ফিজিক্সের উঠে আসার পরিপ্রেক্ষিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের এত প্রশংসা করছেন সেই সোভিয়েত তো শেষমেশ টিকলো না! কাজেই আমার পরে মনে হয়েছিল এইসব জায়গাগুলোয় আমার কিছু নোট দেওয়া প্রয়োজন। সেটা শুনে অনেকে বলেছিল যে দেখ ক্লাসিক বইতে এটা চলে না। তুমি ভূমিকায় দাও বা পোস্টস্ক্রিপ্ট দাও কিন্তু টেক্সটে ফুটনোট দিও না। কাজেই এটাও একটা শিক্ষা। তাই পরের দিকেরগুলোয় আমি ভূমিকায় ব্যাপারটা ভালো করে বলেওছি। এটা তুমি অনুবাদকের একটা প্রেরোগেটিভ বলতে পারো।
    এইরকম প্রেরোগেটিভের উদাহরণ আরেকটা দি।

    রূপকঃ অবশ্যই।

    আশীষঃ ওই সুগত বসুর ভারতমাতা; ইংরেজিটার নাম “দা নেশন এ্যাজ মাদার”। সেটার আমি বাংলা করেছিলাম। প্রথম অংশটা খুবই ভালো। কিন্তু শেষের অংশটা, যেটা আমি গোড়ায় বুঝিনি, সেটা পার্লামেন্টে তৃণমূলের হয়ে দেওয়া ওনার বক্তৃতা! তার মধ্যে দু চারটে ভালো এলিমেন্ট যে নেই তা নয়। কিন্তু বাকিটা যে পুরোটাই পার্লামেন্টের কথা সেটা না জেনেই আমি হ্যাঁ করে দিয়েছিলাম। যাই হোক হ্যাঁ যখন করে দিয়েছি তখন…

    সে যাই হোক, তোমায় একটা আবিষ্কারের গল্প বলি শোনো। এসব কথায় কথায় উঠে আসে। সুগতবাবু রবীন্দ্রনাথকে নানান জায়গায় কোট করেছেন ওঁর বইতে, তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের আন্তর্জাতিকতা বা কট্টর-জাতীয়তাবাদ-বিরোধিতা ইত্যাদির উপর জোরও দিয়েছেন। তো এক জায়গায় ১৮৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বরে নতুন শতাব্দীর সময়টাকে ধরতে গিয়ে উনি রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতাটা কোট করছেন, 'শতাব্দীর সূর্য আজি রক্তমেঘ মাঝে অস্ত গেল'। এইটা দিয়ে উনি তখনকার পরিস্থিতিটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন, যে কেন রবীন্দ্রনাথ এটা লিখলেন। এইটারই আবার রবীন্দ্রনাথের করা একটা অনুবাদ ন্যাশনালিজম বইয়ের পরিশিষ্টে আছে। তো আমি রবীন্দ্রনাথের বাংলাটা আর ইংরেজিটা মেলাতে গিয়ে দেখলাম ইট ইজ এ রেভিলেশান। কারণ প্রথম লাইনগুলো হুবহু এক, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারপর দেখি কবিতার লাইন আর মিলছে না। আবার কয়েকটা লাইনে দেখি নাহ এই কবিতা থেকেই নেওয়া, খানিক দূর যাওয়ার পর দেখি আবার মিলছে না! ইংরেজি কবিতাটা বেশ বড়, আর বাংলাটা ততটা বড় নয় কারণ ওটা সনেট- ১৪ লাইনের। বাংলাটা লেখা হয়েছিল ১৮৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর, আর উনি ওটার ইংরেজি করছেন ১৯১৩ কি ১৪ সালে- যদ্দূর সম্ভব; কাজেই ততদিনে তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে।

    রূপকঃ কিরকম?

    আশীষঃ প্রথমত বাংলা কবিতাটা, যেটা ১৮৯৯ সালে লেখা সেটা উনি এ্যাড্রেস করছেন ভারতবাসীকে, কিন্তু পরবর্তীকালের ইংরেজিটাতে ভারত নয় পৃথিবী বা মানবতাকে এ্যাড্রেস করা হয়েছে!
    আর মাঝে মাঝে যেগুলো আছে সেগুলো দেখে খালি আমার মনে হচ্ছিল আরে এগুলো তো আমার পড়া কবিতা! তারপর খুঁজে খুঁজে বেরুলো যে প্রথমটা আর শেষটা এক রেখে বাকিটা 'নৈবেদ্য' বইটারই অন্যান্য নানান কবিতার তিনলাইন চারলাইন করে ফাঁক ভরিয়েছেন! (হাসি) এটা প্রায় একটা রিসার্চের মত! আরো বোঝা যায় যে সনেট লেখার সময় যে একটা সূক্ষ্ম হিন্দুত্বের প্রভাব ওনার মধ্যে ছিল সেটা ইংরেজি অনুবাদটা করার সময় কেটে গেছে! এ একটা দারুণ জিনিস!

    রূপকঃ এইখানে একটা কথা মাথায় আসছে, আপনাকে জিজ্ঞেস করি। ওঁর মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে এবং তার উপর উনি নিজে অনুবাদ করছেন বলে তো ইংরেজিটা অন্যরকম দাঁড়ালো? অন্য কেউ করলে তো সনেটটা সনেটই থাকতো তাইনা?

    আশীষঃ একদম! কারেক্ট!

    রূপকঃ সেক্ষেত্রে তো এটা আর অনুবাদ থাকছে না; একটা নতুন ইংরেজি কবিতার জন্ম হচ্ছে, কাজেই এটা তো সৃজন সাহিত্য! নয় কি?

    আশীষঃ হ্যাঁ বাট হ্যাঁভিং সিমিলারিটিজ উইথ অল দোজ পোএমজ!

    রূপকঃ বেশ জমে উঠেছে আড্ডাটা। তবে আমরা বার্ণালের বইয়ের অনুবাদ থেকে খানিকটা সরে এলাম। আবার সেখানে ফিরি। এরপর আমার আর একটাই প্রশ্ন আছে।

    আশীষঃ হ্যাঁ বলো!

    রূপকঃ আপনি হার্ডল সম্বন্ধে বলতে গিয়ে এগজ্যাক্টিচুডের কথা বললেন। এছাড়া আর কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন কি?

    আশীষঃ ভাষা! বার্ণালের বইটা যেহেতু একটা ক্লাসিক বই, তাই আমি ইচ্ছে করেই একটু ভারি বাংলা ব্যবহার করেছিলাম। প্রথমত বার্ণালের নিজের ইংরেজিও একটু ভারি, ঠিক গড়গড়ে নয়। তাছাড়া ছোট্ট জায়গার মধ্যে উনি “মাল” অত্যন্ত বেশি ঢুকিয়েছেন যাকে বলে (হাসি)! মানে অনেকেই বলতো আপনি ওটাকে বাংলা করছেন, ওটার ইংরেজি পড়েই তো বুঝতে পারিনা! তাই প্রথম হার্ডল ছিল উইদাউট ডেভিয়েটিং ফ্রম দি এগজ্যাক্টিচুড ওটাকে বাঙালি পাঠকের কাছে সহজে বোধগম্য করতে হবে। অনেক ভেবে চিনতে আমায় এ্যপ্রোচটা ঠিক করতে হয়েছিল। মানে একদিকে একটু ক্লাসিকাল ভারি শব্দওয়ালা বাক্য রেখেছিলাম, অথচ তা এত ভারিও নয় যে সেটাকে বঙ্কিম যুগের মনে হবে! মানে ধরো রাজশেখর বসুর রামায়ণ মহাভারতটা যে বাংলায় লেখা তেমন, মানে ওঁর প্রবন্ধের ভাষা নয়, রামায়ণ বা মহাভারতের তৎসম শব্দভিত্তিক চলতি ভাষা। তবে আমার এখন মনে হয় আজকে করলে আমি ভাষাটা অনেক সহজ করতাম। আসলে তখন একটা জেদ কাজ করেছিল যে বার্ণালের বাংলা আমি এগজ্যাক্টিচুড থেকে এতটুকু না সরেই গুরুগম্ভীর করতে পারবো! আজকে আমার মনে হয় জোর করে গুরুগম্ভীর করবার দরকার নেই, একটা বাক্য যেন শুধু শব্দের জন্য দুবার পড়তে না হয়! এর পিছনে আমার ভাইয়ের (প্রয়াত সৌমিত্র) কন্ট্রিবিউশান অনেকখানি। ওর সঙ্গে আমার এ নিয়ে প্রচুর তর্ক হয়েছিল। এই 'উৎস মানুষের' অশোক খুব বলতো, ওর যা কথার ধরণ সেভাবেই আরকি, “মশাই কী করেন, একটু আধটু সহজ করে লিখতে পারেন না?”

    রূপকঃ একটা কথা বলুন, এই কাজটা যখন করেন তখন আপনার বয়েস কত?

    আশীষঃ ওইতো ৩৫ কি ৩৬ হবে। আসলে কাজটা আমার উপর বন্ধু সিদ্ধার্থ মানে প্রাবন্ধিক সিদ্ধার্থ ঘোষ দুম করেই চাপিয়ে দিয়েছিল অন্বেষা পত্রিকার মিটিং-এ। এবং কোনো ভূমিকা ছাড়া। আমি বললাম মাথা খারাপ নাকি? বলেছিল, “দ্যাখো ওসব বাজে কথা বোলো না। একাজ পারলে তুমিই পারবে। নাইনটিন্থ সেঞ্চুরির মাঝখান থেকে ধরো, তার আগের অংশটা আমি করবো। আর আমাদের প্রাবৃট বলে আরেক বন্ধু বলল সোশিওলজির পার্টটা সে করবে। কেউ কিসসু কথা রাখেনি (হাসি)! পুরোটা আমার ঘাড়ে এলো!

    রূপকঃ ওটা আগেই ঠিক ছিল মনে হয় (হাসির রোল ওঠে)।

    আশীষঃ তবে সিদ্ধার্থ পারতো! ও পারতো!

    রূপকঃ আচ্ছা এইবার আমার শেষ প্রশ্ন।

    আশীষঃ বেশ, বলো।

    রূপকঃ ব্যাপারটা কাজের মোটিভেশন এবং তার পরবর্তী সময়ের ক্রাইসিস নিয়ে। ধরুন আমি একটা বিজ্ঞান-ইতিহাসের বই নিজের আনন্দে অনুবাদ করলাম। সেটা মোটিভেশনের প্রশ্ন, অসুবিধা নেই। কিন্তু তার পরে তো কোথাও গিয়ে মনে হবে লেখাটা মানুষের কাছে পৌঁছক, অল্প হলেও তার একটা সোশাল ইমপ্যাক্ট চোখে দেখতে পাই।

    আশীষঃ এগজ্যাক্টলি! নিশ্চয় তাই!

    রূপকঃ কিন্তু আশীষদা চারপাশে তো শুনতে পাই আজকাল আর বই পড়ে না কেউ। তাহলে অনুবাদ কেন করবো?

    আশীষঃ আচ্ছা, তাহলে তোমায় একটা কথা বলি। আমারও ঠিক এইরকম ধারণা ছিল যে সত্যিই বুঝি কেউ বই পড়ে না। কিন্তু বার্ণালের বইটা আনন্দ থেকে বেরোবার সময় এবং পরে আমার ভুল ভেঙে যায়। প্রথম সংস্করণের গল্পটা তো আগেই বললাম। বইটা দুখণ্ডে বেরিয়েছিল। তারপর আমি চাকরি ছেড়ে দি। টাকা পয়সারও দরকার। তখন আমার এক বন্ধু বলেছিল যে এক কাজ করো, এইটা নিয়ে একবার আনন্দকে বলো না। আমার তো ধারণা আনন্দ এসব বই ছাপবে না; কারণ এতে পরিষ্কার একটা মার্কসিস্ট ইনক্লিনেশান রয়েছে। তো যাই হোক, আমি কাউকে চিনতাম না, তাও স্ট্রেইট একটা চিঠিতে এ্যাপ্লিকেশান করে জমা দিয়ে আসি। বার্ণালের ছেলে মার্টিন বার্ণালের পারমিশনের ইমেইলও নিয়ে গিয়েছিলাম। তো তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টার সুবীর মিত্র শুনে টুনে একটু অবাক হয়ে বললেন, “ঠিক আছে রেখে যান। বোর্ড অফ ডিরেক্টরের মিটিং সামনের মাসে, তাহলে আপনি দুই মাস পর নিজেই খোঁজ নেবেন একবার। ছাপা হলে তখনই জানতে পারবেন।“ আমি একটু দমেই গিয়েছিলাম। বাড়ি চলে এলাম।

    তুমি ভাবতে পারবে না। ঠিক তিনদিনের মাথায় আমি পাভলভ ইন্সটিটিউটে গেছি, তো ষষ্ঠী, যে এখনও কাজ করে, আমায় বললো, “খুব টাইমলি এসেছেন, আনন্দ পাবলিশার্স থেকে ফোন করেছিল আপনাকে এখুনি দেখা করতে বলেছে।“ শুনেই আমার মনে হল, কিছু একটা ঘটেছে। ওখান থেকে তো পাঁচ মিনিটের রাস্তা, ছুটতে ছুটতে গেছি। সুবীর বাবু বললেন, “আশীষবাবু আই এ্যাম ভেরি সরি বুঝলেন। এটা যে এই মাপের একটা বই তার আমি কিছুই জানতাম না। অনির্বাণ (সাংবাদিক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়) তখন ওই কমিটিতে ছিল। ও নাকি শুনেই সুধীরবাবুকে বলেছে যে আশীষদা বইটা অন্য কোথাও দিয়ে দেওয়ার আগেই ব্যবস্থা করুন। (হাসি) ইন ফ্যাক্ট তারপর আমাকে এন বি এ থেকে নন্দলাল বাবু যোগাযোগও করেছিলেন।

    যাই হোক, যা বলতে চাইছি তা হল একে তো খটমট বিষয়, দামও নেহাত কম নয়, কিন্তু ২০০৫ থেকে ২০২২ টানা বিক্রি হচ্ছে। আর আমি তো রয়াল্টি থেকে বুঝতে পারি! ম্যাক্সিমাম আমি যেটা পেয়েছিলাম তার হিসেব হল এক বছরে ২৫০ কপি। বিরাট যে বিক্রি হচ্ছে তা নয় তবে ২০০/২৫০ কপি করে স্টেডি বিক্রি হয়ে চলেছে এই এতগুলো বছর ধরে। তাহলে এই বইওতো বিক্রি হয়!

    রূপকঃ বিক্রি তো হচ্ছে কিন্তু মানুষ পড়ছে কিনা বুঝছেন কী করে?

    আশীষঃ না না এই বই কেউ শখের জন্য কিনবে না! আর কিনলে ২৫০ কপির বেশি বিক্রি হত। এই সেদিনও সুবীরবাবু বলেছেন, “ আপনি তো জানেন বেশ খানিকটা মিসগিভিং নিয়েই আমরা বইটা ছেপেছিলাম।
    বাট ইট টার্ন্ড আউট টু বি এ ফিনানশিয়াল সাকসেস!”


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    পর্ব ১ | পর্ব ২
  • আলোচনা | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৫১১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শুদ্ধসত্ত্ব দাস | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:৫৯516628
  • প্রশ্নকারী এবং উত্তরদাতা, দুইজনেই খাটি বেংলিশ। বিশুদ্ধ আতলামো করতে বেংলিশই উচিত মাধ্যম। 
  • Mantu Lahiri | 14.139.***.*** | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:১৪516721
  • মন্টু লাহিড়ী:
     
    আশীষ লাহিড়ী জে. ডি. বার্নালের  “Science in History” বইটির বাংলা অনুবাদ করে বাংলাভাষী পাঠকের
    কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন। রূপক বর্ধন রায়-এর নেওয়া বাংলা গদ্য সাহিত্যের অনুবাদ প্রসঙ্গে আশীষবাবুর
    সাক্ষাৎকার আগ্রহের সঙ্গে পড়ছি। এই সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বে আশীষবাবু মন্তব্য করেছেন:
    “বার্ণাল নিয়ে আমার নিজেরও অনেক অভিযোগ আছে, ওই বইকে নিয়েই।”
     
    আশীষবাবু এবং রূপকবাবু এই দুজনকেই অনুরোধ করছি, পরবর্তী সাক্ষাৎকারে বার্নালের ওই
    বই সংক্রান্ত  “অনেক অভিযোগ”গুলি নিয়ে বিস্তারিত এবং সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করুন।
  • রূপক বর্ধন রায় | 77.14.***.*** | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:১৮516724
  •  অনেক ধন্যবাদ মন্টুবাবু। কথাটা অবশ্যই মাথায় থাকলো। আশীষদাকেও জানাবো। ভালো থাকবেন।
    -রূপক-
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন