সৈকতের লেখাটি, বাঙালী জাতীয়বাদের মতই, যাকে বলে স্কোপের খেলা।
সংক্ষেপে বললে , নেশন ইন ফ্র্যাগমেন্ট্স এর প্রতিটি টুকরো কেই, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ সিপিএম কে আক্রমণ করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এটি ই ঐতিহ্য এবং এই ট্র্যাডিশনে সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নতুন নাম মাত্র। বিষয়ের দিক থেকে নতুন কিছু না। সেই টিনের তলোয়ারের নাটকে প্রিয়নাথ মল্লিকের কথা, মাইকেল গত হয়েছেন, কালিদাস ও আর নেই, নবজাগরণের হাল কে ধরবেন। অতএব প্রিয়নাথ সৈকত। কিন্তু তবু গুরুচন্ডালি তে এই রচনা প্রকাশের একটা গুরুত্ত্ব আছে, সে তো এখনো বাজার হয় নি।
বাঙালী জাতীয়তাবাদ, নিম্নবর্গের সঙ্গে ভদ্রলোকের রাজনীতির সম্পর্ক, উত্তরবঙ্গ, আদিবাসী সমাজ, পার্টিশনের ক্ষতি , তাতে সিপিএম এর কিছুদিন লাভ, তার পরে মুসলমান প্রেম, তার পরে আবার বেশি মুসলমান প্রেম, তার পরে তৃণমূলের মহত সেকুলারিজম এর বিরোধিতা করে বিজেপি কে ২০১৯ e ভোট দান এগুলি প্রত্যেকটি সিপিএম এর বিরুদ্ধে প্রচারে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। নতুন কিছু না।
দ্বিচারিতা গুলিও নতুন কিছু না। সৈকতের এগুলি কোনটাই অজানা নয়, তবে ঐ আর কি স্কোপের খেলাধূলোয় সে নাম লিখিয়েছে, বিজেপির বিরুদ্ধে নানা ধরণের প্রোপাগান্ডার একটা প্রয়োজন তো আছেই, তাই আভ্যন্তরীন সখ্যতায় নর্মালি আমি কিছু বলি না, ভাবি আর কি করা যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আক্রমণটা জেহেতু সিপিএম কে, এবং সেটাকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের গার্বে ঢাকা, তাই একটু তাত্ত্বিক দ্বিচারিতা গুলি বলে দেই। আমি তো প্রতিভাবান নেড়ুখোকন বা তার ফ্যানকুল নই, যে শুধু সাবজেক্টিভ ব্যক্তিগত অ্যাটাক করে বিদেয় নেবো। কারণ বিষয়্টা আদৌ ব্যক্তিগত না, মতাদর্শের লড়াই তে সৈকতের একটি তার বেছে নেওয়া লড়াই এর প্রয়োজনে করা চয়েস। হুইচ ইজ ফাইন।
৭ , ৮ এবং ৯ এর দশকে এমনকি ২০০০ এর দশকেও পরেও ত্রিপুরা এবং আসামে বাঙালী বামপন্থী রা প্র্যাকটিকালি এক ই সময় জুড়ে একই আন্দোলন করেছেন, সেটা বাঙালী জাতিসত্ত্বার বামপন্থী সাংগঠনিক প্রকাশ মাত্র। অল্প আগে পরে প্রচন্ড মার খেয়ে আসামে অল্প ঘুরে দাঁড়ানো এবং তার পরে বিলীন হওয়া, ত্রিপুরা তে বড় একটা সময় ধরে ঘুরে দাঁড়ানো গেছিল। শুধু লাল পতাকা না, রিফিউজি বাঙালিরা, বহুদিন ধরে নানা জায়গায় থাকা বাঙালিরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন।
এই গোটা সময়টা জুড়েই, কংগ্রেস , তৃণমূল কংগ্রেস ও ৭ er দশকের বিপ্লবীরা নানা খেলা খেলেছেন, ফ্র্যাগমেন্ট গুলির সঙ্গে একেকবার একেকরকম ভাবে জুড়ে।
কংগ্রেস , ত্র্ণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি ত্রিপুরাতে আদিবাসী সত্ত্বা নিয়ে খেলা ধুলো করেছে ও করছে। তৃণমূল o কংগ্রেস বিজেপি কে সংগঠন উপহার দিয়েছে বামেদের হারানোর জন্য, আর একাধারে বাঙালি জাতি সত্ত্বা সেকুলারিজম রক্ষার দায় দেওয়া হয়েছে বামেদের। আসামে , এই গুরুচন্ডাল্লির গত স্বাধীনতা দিবসে অহব জাতীয়তাবাদী রা বলে গেছেন সিপিএম এর নেতাদের আক্রমণের মুখে আত্মত্যাগের কথা, মাটি কামড়ানো জিনিসটা তখনো ফ্যাশনেবল বুলি হয় নি।
এর পরে আসা যাক আসামের কথায়। আসাম জাতিসত্ত্বার রাজনীতির বরাবরের বয়্লিং পট। এখন উত্তরবঙ্গে সেই রাজনীতির আমদানী চলছে। এবং ততদিন সৈকত যে বৌদ্ধিক উত্তরাধিকার স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছে, তার লোকেরা কিছুই বলবেন না, শুধু পাহাড়ে হাসি দেখবেন আর জন বার্লা দের গতায়াত সঞ্চার পথ ইত্যাদি নীরবে দেখবেন।
আসামে অগপর রাজনীতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিপিএম সমর্থন করেছিল , সমর্থক দের আপত্তি সত্ত্বেও , প্র্যাকটিকালি মার খাওয়া সত্তএও কারণ তারা মনে করেছিল কংগ্রেসের শক্তি অতিরিক্ত হচ্ছে এবং তারা পূর্বাঞ্চলের মানুষ কে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আসাম চুক্তি একটা সাময়িক শান্তি এনেছিল। তার পরে অগপ, কংগেস আর বিজেপির মধ্যে প্রায় ২০২০-২১ এর তৃণমূল বিজ্পের মত খেলা ধুলো যাতায়াত চলতে থাকে , হুইচ ইজ হুইচ এর সমস্যা বেড়ে ওঠে। বাকিটা ইতিহাস , আজ , সবথেকে বড় অহম রাজনীতির শভিনিস্ট রাই বিজেপি ও স্থানীয় দল গুলির হর্তা কর্তা । মাহাকালের রসবোধে দুটি রাজ্যের পুলিশের মধ্যে গৃহযুদ্ধ হচ্ছে জাতি প্রশ্নে, এমন একটা সময়ে, যখন পূর্বাঞ্চলে শভিনিস্ট মাত্রেই বিজেপি র সঙ্গে স্বপ্নের জোটের খোঁজে, সকলেই আসাম হতে চায়। ত্রিপুরা ব্যতিক্রম খানিকটা কারণ সেখানে অনেক শিবির বদল ঘটলেও নীতিভিত্তিক রাজনীতির একটা প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, যেটাকে হরিশ চ্যাটার্জির ইচ্ছা পূর্ণ করতে
গেলে তাঁর বুদ্ধিজীবি সমর্থকদের কেও খুন করে ফেলতে হবে।
বস্তুত সিপিএম কে শুধুই ফ্র্যাগমেন্টের প্রতি অযত্নের অভিযোগ যথেষ্ট করা হয় নি, আবার এও বলা হয়েছে তারা সর্ব ভারতীয় ক্ষেত্রে কোথায় তেমন করে বাড়ছে না। বাড়ার পদ্ধতি হিসেবে যদি রাজস্থানে বা অন্যত্র ক্ষত্রিয় সমিতি
র সঙ্গে যেতে হত, তাহলে আর যাই হোক সম্পাদকীয় কম পড়তো না, কিন্তু সেটাই প্র্যাগমাটিক তৃণমূল করে ফেললে কোন অসুবিধে থাকবে না ইত্যাদি।
ঘটনা হল, ভারতীয়ত্ত্ব জিনিসটা শুধু না, মানুষের অর্থনৈতিক শুধু না সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই তে রাষ্ট্র একটা যেমন একটা ধাপ তেমনি এবং তাকে জনকল্যানের পথে রাখা একটা লম্বা পদ্ধতি, তেমন ই দায়্ত্ত্বজ্ঞানহীন স্থানীয় রাজনীতি করা শুধু না, রাষ্ট্রের বড় গল্পে যে অসংখ্য স্থানীয় অ্যাসপিরেশন এর বারোটা বাজানো হয়, স্থানীয় অধিকার ক্ষুন্ন করা হয় দমন করা হয়, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবেই, সিপিএম নিজেকে যতদিন গোটা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি হিসেবে ভাবা বন্ধ করবে ততদিন এটা চলবে। মানে তাকে সরবভারতীয় পার্টি হিসেবে গালাগাল দেওয়া যাবে।
এবং রাজনৈতিক নৈকট্যের কারণে অন্য দল যখন সর্বভারতীয় হতে চাইবে, এবং সে জন্য আন্দোলনের কোন ঐতিহ্য ছাড়াই ত্রিপুরায় বা আসামে বা মণিপুরে মশ্করা করবে, তখন ও তাকে ছাড় দেওয়া যাবে। এগুলি স্কোপের খেলা ধুলো।।
এই প্রবন্ধের যৌক্তিক ফ্যালাসি শুধু এই জাতীয় স্কোপের খেলা না, সিপিএম এবং ভারতীয় মেন স্ট্রীম পার্লামেন্টের মধ্যেকার বামপন্থী দের ,সর্বভারতীয়ত্ত্বের ঐতিহ্যটির সঙ্গে গ্লোবালাইজেশন এবং তার অর্থনৈতিক বিচার কে জুড়ে দেওয়া। বাম আন্দোলনের সর্বভারতীয়ত্ত্বএর ঐতিহ্যের সঙ্গে গ্লোবালাইজেশন এর সম্পর্ক জোর করে স্থাপন করা হচ্ছে।
সিপিএম এর মধ্যে নিও লিবেরাল ঝোঁক অবশ্যই ছিল, কিন্তু ঘটনা হল, সেটা কোন দলের মধ্যেই কম ছিল না। কারণ কিহ্হুই না সব দলের সমড়ক দের অ্যাসপিরেশন ই ছিল নতুন শিল্পের সুযূগ নেওয়ার। এবং সাবসিস্টেন্স ফার্মিং এর রোজগার কমার ফলে তাকেই মুক্তির পথ ধরা হয়েছিল এবং যখন ধরা হয়েছ্হিল তখন প্রান্তিক অঞ্চলে ভাঅগ কম পড়ছে বলে রোল উঠেছিল কারণ কৃষি থেকে শিল্পের ট্রান্সফর্মেশনের গল্প পশ্চিমাঞ্চল o পাহাড়ে সম্ভব ছিল না, এক ডুয়ার্সের চা বাগানকে টুরিজম ডেস্টিনেশনে পরিণত করা ছাড়া ইত্যাদি। এবং রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্পের দিন গিয়াছে ইত্যাদি তত্ত্ব এখনো যা আউড়ানো হয়, ডিসইন্ভেস্ট মিনিস্ট্রি ইত্যাদি তৈরী করেছিল যে এন ডি এ সরকার তার সঙ্গে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁকে অবশ্য ভাষাপ্রেমী বুদ্ধিজীবিদের ভ্রুকুটি সহ্য করতে হয় নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকা কালীন যখন অনেক মূলতঃ ঘোষণা করেছেন, তার কটি কিরকম বাস্তবায়িয় হয়েছে, চিত্তরঞজনের কারখানার একাংশ সরিয়ে এনে ডানকুনি তে আনার বাঙালী জাতীয়তাবাদী চমক মানুষকে ভুলতে সাহায্য করেছেন যাঁরা আনফরচুনেটলি সেই প্রোপাগান্ডা ঐতিহ্যের হাল ধরতে হচ্ছে প্রিয়নাথ রূপী সৈকত কে। :-)))))
মজাটা হল ভারসাম্যের দায় সরকার ছাড়া কারো নেই, কর্ম সংস্থান তৈরীর দায় বাম সরকারের ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে সে দায় থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তিনি ডিরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফারেই ম্যাজিক দেখাচ্ছেন বলে শোনা গেছে, কারণ তাঁকেই সর্বভারতীয় সেকুলারিজমের প্রিয়নাথ হতে হবে।
এই জন্যেই ২০১১ তে এই গল্প শেশ হয়ে গিয়েহ্হে বলে সরে আসতে হয়েছে এই প্রবন্ধে। কারণ গল্প শেষ হয় নি। শুধু বিইজেপি নামক মর্কটেরা, কংগ্রেস ও তৃণমূল থেকে অসংখ্য নেতা উপহার পেয়ে একটু চেগে উঠেছে এই আর কি।
এবারে বেচারি দীপসিতা র কথায় আসা যাক। তিনি তরুন বয়স্ক নেত্রী। তিনি এমন একটা প্রজন্মের লোক, আনন্দবাজার পাঠ ছাড়া যে আর কোন সমসাময়িক বিতর্কের কাঠামো গড়ার পদ্ধতি আছে তাঁর জানা নেই। তিনি নিজের মত উত্তর দিয়েছেন। তাঁর সেন্সিবল কথা গুলি হেডলাইন হবে না জানা কথা, আবাপ তে বা গুরুচন্ডালিতে তবু তাঁদের প্রাসঙ্গিক থাকারা তাড়না ও যশপ্রার্থনায় বড় মেডিয়ার ডিজিটাল প্লাটফর্মে ছুটতে হয়।
আমার সাম্র্পতিক একটা প্রবন্ধে আমি লিখেছি, সিপিএম সমর্থক হিসেবেই লিখেছি, সিপিএম এর একটা সমস্যা হল, তার পশ্চিম বঙ্গের সদস্যদের মধ্যে রাজ্য রাজনীতি প্রশ্নে বিতর্ক টা জ্যোতিবাবু ফ্যান্স আর বুদ্ধবাবু ফ্যান্স এর মধ্যে আর্টিকুলেশন এর কানা গলি তে ঘুরছে, এবং এর থেকে সরে আসার প্রচেষ্টাও চলছে, তবে সিপিএম এর নির্বাচনী ফলাফল ভালো হতে না শুরু করলে তার কোন এভিডেন্স দাবী করা যাবে না। সেতো লম্বা ও অন্যান্য গল্প।
আপাতত ভাষাপ্রেমী যোদ্ধারা, সেকুলারিজম কে বাঁচিয়ে রাখতে যদি ভবানীপুরে প্রার্থী দেন, ও প্রতিটি মার্যোয়াড়ী সমাজ, গুজরাটী সমাজ ও পাঞ্জাবী সমাজে তৃণমূল নেতাদের আউটরিইচ প্রোগ্রামের পরেই একটি সম্পাদকীয় লেখেন তাইলে দেশ ও ভাষা বাঁচে :-))