শিক্ষাচার্য বিদ্যুৎকুমার মধ্যাহ্নের দিবাস্বপ্ন দেখছিলেন। এমন সময় প্রধানসেবক এসে কাঁচুমাচু মুখে জানালেন -- চারদিকে কি লেখা হচ্ছে জানেন স্যার?
বিদ্যুতের বড্ড তেজ
করে দেব লো ভোল্টেজ।*
শুনে বিদ্যুৎকুমারের স্থির ভ্রূ কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হল। তিনি দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, লো-ভোল্টেজ? দেখাচ্ছি তোদের। যন্ত্রবিদ, ইধার আও। আজ থেকে গোটা বিশ্বভারতীতে সারা রাত গনগন করে আলো জ্বলবে। কোথাও কোনো আলো নিভলেই, তোমার চাকরি নট।
যন্ত্রবিদ বললেন, যথা আজ্ঞা। রাত্রে শিক্ষাচার্যের শান্তিতে ঘুম হল। ব্যাটাদের উচিত শিক্ষা দেওয়া গেছে। ভোর রাতে স্বপ্নে দেখলেন, বাকি সবকিছুর সঙ্গে বিশ্বভারতীকেও নিলাম করে দেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ সমেত। কী আনন্দ, কী আনন্দ। ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। কিন্তু ঘুম ভাঙতেই কোথায় কী। প্রধানসেবক গলদঘর্ম হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে। -- এ তো হিতে বিপরীত হল স্যার। সারারাত আলো জ্বলেছে, নচ্ছারগুলো বসে বসে পোস্টার লিখেছে।
-- কী লিখেছে?
-- আপনাকেই বেচে দেবে বলেছে স্যার।
বিদ্যুতের বাড়লে দাম
মোদীর নামে হবে নিলাম।
বিদ্যুৎকুমার ধড়মড় করে উঠে বসলেন। এ কী সর্বনাশা কান্ড। এ তো ছেলেখেলা নয়, রীতিমতো রাজনীতি। তদুপরি রাষ্ট্রদ্রোহ। প্রধানমন্ত্রীকে অপমান। ব্যাটাদের ইউএপিএ দেওয়া যায়না?
প্রধানসেবক মাথা নিচু করে বললেন -- না মনে হয়।
উপাচার্য বললেন -- আহাম্মক। একটা যদি কোনো কাজ পারে। শোনো, নোটিস দাও, আজ থেকে ক্যাম্পাসে আর কোনো রাজনীতি চলবেনা। আর কোনো আলো নয়। সব তার কেটে দাও। পোস্টার লেখা বার করছি।
সে রাতে ঘুমটা তেমন জমলনা। একে তো বিদ্যুৎ বন্ধ। এসি অফ। জানলা খুলে শুতে হল। তার উপর শিক্ষাচার্য সবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, তিনি মুসোলিনিকে স্যালুট মারছেন, ঠিক সেই সময় পিছনে কে যেন চিমটি কাটল। ধড়ফড় করে উঠে দেখলেন, তেমন কিছু না, মশা। এই হতচ্ছাড়া জায়গায় সবাই আমিষ খায়। মশারি টাঙিয়ে ভোরে আরেকদফা ঘুমোতে যাবেন, এমন সময় ভগ্নদূতের মতো প্রধানসেবকের আবির্ভাব। দেখেই শিক্ষাচার্যের বুক ধুকপুক করে উঠল।
-- আবার কী হল? আবার পোস্টার লিখেছে?
-- না স্যার। এবার ইন্টারনেটে।
--কী লিখেছে?
বিদ্যুতের তো তারকাটা
এবার বিদেয় হচ্ছে ব্যাটা।
দেখেই মাথাটা বোঁ করে ঘুরে গেল শিক্ষাচার্যের। বুকের ভিতর রঝম গঝম। --কী? আমাকে তারকাটা বলেছে? আর্মি ডাকো। শিগগির।
--স্যার। প্রধানসেবক আধোআধো স্বরে বললেন। -- কিছু করার নেই স্যার। টেকনিকালি তো ওরা ঠিকই বলেছে। তার তো আপনিই কাটতে বলেছিলেন।
-- উফ। বললেন বিদ্যুৎকুমার। যন্ত্রবিদ লাও। অন্ধকারেই থাকুক ব্যাটারা। আমি যতদিন শিক্ষাচার্য আছি, আলো যেন না জ্বলে।
সে রাতে আর ঘুম হলনা বিদ্যুৎকুমারের। পেটের মধ্যে অস্বস্তি। মাথার মধ্যে কী যেন সেঁধিয়ে আছে। সকালে প্রধানসেবককে তলব করে জিজ্ঞাসা করলেন -- আর কিছু হয়েছে? প্রধানসেবক বললেন -- না স্যার। শিক্ষাচার্যের ঠিক বিশ্বাস হলনা। তিনি ল্যাপটপ খুললেন। যদি কোথাও কোনো খবর থাকে। কে যেন একটা মেল পাঠিয়েছে। ঝপ করে খুলে ফেললেন। তাতে বড়বড় করে লেখাঃ
নিজেই নিজেকে করল ব্যান
বিদ্যুৎ তো সুপারম্যান।
দেখে মাথাটা বোঁবোঁ করে ঘুরতে লাগল শিক্ষাচার্যের। ধপ করে চেয়ার ছেড়ে মেঝেতেই বসে পড়লেন। ঠিক তখনই বাইরে এক পশলা বৃষ্টি এল। বর্ষার দমকা হাওয়ায় শ্যামল পল্লবগুলি দুলে দুলে উঠল। প্রাঙ্গনজুড়ে প্রার্থনারবের মতো গুঞ্জন উঠলঃ
কুমোরপাড়ার গরুর গাড়ি
ফেকু মোদির লম্বা দাড়ি।
দিগ্বিদিক ছেয়ে গেল গুঞ্জনে। শিক্ষাচার্য মেঝেয় বসে বসে শুনতে লাগলেন।
-----------------------
* এই প্রথম কাপলেটটি আমার লেখা নয়। নেটে ঘুরছে। একটু বদলে ব্যবহার করে ফেললাম। কার লেখা তিনি জানালে, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নেব।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।