এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার, Autism Spectrum Disorder. (ASD). অটিজেমর নানা ধরন, বৈশিষ্ঠ্য,মাত্রা থাকে বলে সবগুলো ধরন আর বৈশিষ্ঠ্যকে একত্রে একসঙ্গে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার বলা হয়

    Shomita Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৯ আগস্ট ২০২১ | ২৪৯১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • পৃথিবীতে কিছু শিশু নানান ধরনের সমস্যা নিয়ে জন্মায় এবং বড় হয়। যাদের আমরা "পিছিয়ে পড়া শিশু বা বিশেষ শিশু" বলে থাকি। তাদের সম্পর্কিত বিষয়ে ইংরাজী ভাষার বইপত্তর থাকলেও সহজ বাংলায় তার বেশ অভাব। যেটুকু আছে তাতে সবসময় সব সঠিক তথ্যও থাকে না। নিজের বহুবছরের অভিজ্ঞতার নিরিখে এই শিশুদের নানান ধরনের সমস্যা নিয়ে সহজবোধ্য ভাবে এবং গল্পাকারে চোদ্দটি পর্বের ধারাবাহিক লেখার প্রচেষ্টা করেছি। গুরুর কৃপায় আজ থেকে গুরু'র ব্লগে প্রতিবার সোমবার তার এক একটি বিষয়ের ওপর বলবো। আজকের বিষয় — "অটিজম"
    বছর দেড় এর ফুটফুটে ছেলেটির নাম জুড। জুড ক্রিষ্টিলানো। ভারি মিষ্টি ছেলে, সবার আদরে দিব্যি বড় হচ্ছিল, বছর দুই বয়স তখন, প্লে স্কুলে দেবেন ভাবছেন জুডের বাবা মা। বাবা/মা দুজনেই শিক্ষকতা করেন কনভেন্ট স্কুলে। শিক্ষিত, রুচিশীল পরিবার। জুড নিজের মনেই খেলে বেশী। একটু যেন একা থাকতে পছন্দ করে। ভর্তি হল জুড স্কুলে। প্রথম দিন, সে তো কিছুতেই ঢুকবে না স্কুলে, কেঁদে কেটে একসা। প্লে স্কুলের প্রথম দিনকতক এরকম দৃশ্য খুব স্বাভাবিক। কিন্তু দিন সাতেক পরও জুডের কান্না কমলো না। আরো সপ্তাহ খানেক পর থেকে জুড একটু স্থিতু হল। এবারে শুরু হল নতুন আরেক সমস্যা। টিফিন পিরিয়ডে জুডকে কিছু খাওয়ানো যাচ্ছে না। দেড় ঘন্টার তো স্কুল, তাতে যদি টিফিন নাই বা খায় কি আর এমন হবে ভেবে জুডের মা'ও বিশেষ চিন্তিত হলেন না। দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল। ততদিনে জুডের বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। জুড কথা বলা খুব কম করে দিয়েছে, বেশীর ভাগ সময়ই একা থাকতে পছন্দ করছে, একটা গাড়ি নিয়েই সবসময় খেলে, কারুর চোখের দিকে তাকায় না, ক্ষনে ক্ষনে দুই হাত ওপরে তুলে নাড়াতে থাকে, ভীড় দেখলে কাদঁতে শুরু করে, জোর আওয়াজেকা কানে হাত চেপে ধরে আর এক জায়গায় বসলে দুলতে থাকে — জুডের কিন্তু পড়াশুনো করতে কোন সমস্যা নেই। যত সমস্যা ওর ভাব প্রকাশে, মেলামেশাতে আর ব্যবহারে। বিষয়গুলো যখন চোখে পড়ার মতো অবস্থায় এলো তখন বাবা/মা জুডকে নিয়ে গেলেন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে। তিনি দেখে বললেন — জুডের অটিজম আছে। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো বাবা/মা'য়ের। 'অটিজম' শব্দটির সঙ্গে ওনারা দুজনেই পরিচিত। কিন্তু নিজের সন্তানের ক্ষেত্রে সেটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। মিঃ এবং মিসেস ক্রিষ্টিলানো ভাবতেই পারছেন না যে তাদের সন্তান অটিজমে আক্রান্ত।

    অটিজম একধরনের নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার। এর কারন সম্পর্কে এখনো কোনো নির্দিষ্ট তথ্য আবিষ্কৃত হয় নি। কোন ঔষধে অটিজম সারে না। অনেক সম্ভাব্য কারণের মধ্যে জিন ঘটিত কারণ একটি। একই অটিজমের নানান মাত্রা এবং বহু ধরনের বৈশিষ্ট্য বা ক্যারাক্টারিষ্টিকস থাকার জন্য একত্রে বলা হয় অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার। অটিজম আক্রান্ত শিশুর মূল সমস্যা তাদের মনের ভাব প্রকাশে এবং অপরের সঙ্গে মেলামেশা করতে। ওদের পক্ষে নিজের মনের ভাবের আদান প্রদান করা কঠিন। সঠিক ভাবে নিজেদের প্রয়োজন, ইচ্ছে,পছন্দ/অপছন্দ বোঝাতে না পারার দরুন এদের মধ্যে নানান ধরনের ব্যাবহারিক সমস্যা বা  চ্যালেঞ্জিং বিহেভিয়ার দেখা যায়। এছাড়া অটিজমের আরো একটি সমস্যা কারুর সঙ্গে মিশতে না পারা। রোজকার কাজ পর পর করাও এদের স্বভাবগত বৈশিষ্ঠ্য, তাই রুটিনের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারাও অটিজমের একটি বড় সমস্যা। এছাড়া একটি নির্দিষ্ট জিনিস বা বস্তু'র প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে। একটা কাজ বা একই ধরনের খেলা বারবার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বহু সময় অটিজমের সঙ্গে অনুভূতি জনিত সমস্যাও জুড়ে থাকে। আবার অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে অনেকেরই বিশেষ একটি বিষয়ের ওপর বিপুল পারদর্শিতা লক্ষ্য করা যায়। এদের অনেকের আবার মনে রাখার ক্ষমতাও ঈর্ষনীয়। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের নানন ধরনের ছবি, ভিডিও ইত্যাদির মাধ্যমে জীবনের পাঠ দেওয়া সহজ হয়। কারুর সঙ্গে মিশতে অপছন্দ করার দরুন এরা টেকনোলজি বা গ্যাজেট ব্যাবহার করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে অনেক বেশী। আর অটিজমে আক্রান্ত হলেই যে বৌদ্ধিক বিকাশের সমস্যা থাকে তা কিন্তু নয়। বহু বিখ্যাত মানুষ অটিজমে আক্রান্ত। নাম বলে শেষ করা যায় না, মহান বৈজ্ঞানিকদ্বয় আইনষ্টাইন এবং নিউটন অটিজমে আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়াও ফেসবুকের আবিষ্কারকর্তা মার্ক জুকেরবার্গ, স্টিভ জোবস, বিল গেটস এনারা সকলেই কমবেশী অটিজমে কোন না কোন ধারাতে আক্রান্ত। জুডেরও কোন বৌদ্ধিক বিকাশের সমস্যা নেই। ওনারা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ছবি আর টেকনোলজি ব্যবহার করে জুডকে পড়ানো শুরু করলেন। সঙ্গে স্কুল চলতে লাগলো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জুডও টুক টুক করে এগিয়ে চলে নিজ লক্ষ্যের দিকে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৯ আগস্ট ২০২১ | ২৪৯১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চিঠি - Shomita Banerjee
    আরও পড়ুন
      - Shomita Banerjee
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 193.192.***.*** | ০৯ আগস্ট ২০২১ ১২:৩৫496596
  • খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়। সেরিব্রাল পালসি এবং অটিজমের পার্থক্য নিয়েও লিখবেন আশা করি।

  • Shomita Banerjee | ০৯ আগস্ট ২০২১ ১২:৫১496597
  • অনেক ধন্যবাদ৷ অবশ্যই লিখবো৷ দুটো সম্পূর্ন আলাদা দুটো সমস্যা৷

  • Tamal Taru Halder | ০৯ আগস্ট ২০২১ ১৩:০৫496598
  • খুবই ভালো লাগলো। পরবর্তী লেখা গুলোতে আরো বিশদে জানতে পারবো আশা করি

  • b | 14.139.***.*** | ০৯ আগস্ট ২০২১ ২২:১১496611
  • এরকম একটি ছেলেকে আমি চিনি । খুব ভালো ছবি আঁকে। তার বাবার সাথে একদিন ফোন করে কথা হচ্ছিলো। ছেলেটি তখন  আমার সাথে কথা বলে, প্রায় বারো বছর   পরে। সে শুধু আমার নাম মনে রেখেছে, তাই নয়, আমি কবে তাদের বাড়ি গেছিলাম, ২০০৮ সালের জানুয়ারী মাসে , কোন দিন, কি বার, সব গড়গড়িয়ে বলে দেয়। রেন ম্যান সিনেমাটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো। 

  • Shomita Banerjee | ০৯ আগস্ট ২০২১ ২৩:৫৩496613
  • ঠিক, একদমই তাই৷ রেনম্যান আর ফরেষ্ট গাম্প —এই দুটি সিনেমাতেই মূল চরিত্র অটিজমে আক্রান্ত৷

  • Ranjan Roy | ১০ আগস্ট ২০২১ ১০:৩২496623
  • আরেকটি বাচ্চার সম্পর্কে সম্প্রতি জেনেছি। দক্ষিণ কোলকাতার। উত্তেজিত হলে অঙ্ক কষতে বসে যায়। ওটাই ওর প্রাণের আরাম। পড়ে ক্লাস থ্রিতে, কষে ক্যালকুলাস। টিচার ওকে পারমিশন দিয়েছেন দরকার পড়লে অন্য সহপাঠীদের অঙ্ক শেখাতে।


          প্রাথমিক ভাষা শেখার সমস্যা কাটিয়ে উঠে ইংরেজিতে বই লিখেছে বিশ্বরহস্যের উপর--  আওয়ার ওয়ার্ল্ড, পাস্ট প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার। অ্যামাজনে শুধু কিন্ডল ভার্সনে পাওয়া যাচ্ছে। ছেলেটি সেটা নিয়ে নির্বিকার, পড়ে ক্লাস থ্রিতে।

  • Shomita Banerjee | ১০ আগস্ট ২০২১ ১৭:১৭496633
  • হতেই পারে, ASD বা অটিজম তো স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার, সেখানে প্রচুর বৈচিত্র দেখা যায়৷ ভাল লাগলো আপনার কাছ থেকে এই ছেলেটির কথা শুনে৷ 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন