হঠাৎ করেই দেশ জুড়ে, বিশেষতঃ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে “জনসংখ্যা সমস্যা” এখন চর্চার কেন্দ্রে। আসাম বা উত্তরপ্রদেশের মত কিছু রাজ্য ইতিমধ্যেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন আইনের খসড়া বানাতে উদ্যোগী। উত্তরপ্রদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের খসড়া আইনে দুই-সন্তান নীতিকে উৎসাহিত করার কথা বলা আছে এবং যাদের দুই-এর অধিক সন্তান আছে তাদের স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অথবা সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে জানানো হয়েছে। আসামেও প্রায় একই ধরনের আইনের খসড়া প্রস্তাবিত হয়েছে এবং সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘লোয়ার আসাম’ অঞ্চলে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে রাশ টানতে একটি জনসংখ্যারোধী সেনা (পপুলেশন আর্মি) তৈরি করা হবে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন তাঁর রাজ্যের সামগ্রিক জন্মহার কমানোই এই নীতির লক্ষ্য।
২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দ্বারা প্রকাশিত জনসংখ্যা সম্পর্কিত পূর্বাভাসের দলিলটি এই দুই মুখ্যমন্ত্রী বা তাদের উপদেষ্টারা কেউই পড়ে দেখা জরুরি মনে করেননি বলেই মনে হয়। এই দলিল অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের জন্মহার (১৫-৪৯ বছর মহিলাদের গড় সন্তানের সংখ্যা) স্বাভাবিকভাবেই “প্রতিস্থাপনযোগ্য জন্মহার”-এ (যেই জন্মহার দেশে বা রাজ্যে স্থাপিত হলে জনসংখ্যার বৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়), অর্থাৎ, প্রতি মহিলার গড়ে ২.১ সন্তান থাকবে। আর আসামের ক্ষেত্রে ২০২০ সালেই সেই হারে পৌঁছে যাওয়া গেছে। তাহলে আসামে যদি সেই হার ইতিমধ্যেই অর্জিত হয়ে গিয়ে থাকে এবং উত্তরপ্রদেশেও ২০২৫ এর মধ্যে এমনিতেই তা অর্জনের পূর্বানুমান রয়েছে, তাহলে হঠাৎ করে এই কঠোর জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির প্রয়োগের কারণ কী?
এই নীতির আসল প্রয়োজন অন্যত্র। মুসলমান জনসংখ্যাকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে তোলা দেশজুড়ে হিন্দুত্ব ব্রিগেডের অস্ত্রভাণ্ডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার জন্য আসামের মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত “পপুলেশন আর্মি” অথবা বিভিন্ন জায়গায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বহুবিধ বক্তব্যে এর প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, এমন কি এই প্রেক্ষিতে দেখতে হলেও এদের নীতি-কাঠামোতে বড়সড় গলদ রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, NFHS (জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা)-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮-৯৯ সালে উত্তরপ্রদেশের সামগ্রিক জন্মহার (TFR) ছিল হিন্দুদের ক্ষেত্রে ৩.৮৭ এবং মুসলমানদের ক্ষেত্রে ৪.৭৬। কিন্তু ২০১৫-১৬ সালে এই জন্মহার কমে হিন্দুদের ক্ষেত্রে হয়েছে ২.৬৭ এবং মুসলমানদের ক্ষেত্রে ৩.১০। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে এই সময়কালে হিন্দুদের সামগ্রিক জন্মহার হ্রাসের পরিমাণ ১.২ এবং মুসলমানদের ক্ষেত্রে সেটি ১.৬৬, হিন্দুদের তুলনায় বেশ কিছুটা বেশি। ২০১৯-২০ সালের উত্তরপ্রদেশের NFHS তথ্য এখনো প্রকাশিত হয় নি। এই তথ্য প্রকাশিত হলে তা কিন্তু নিশ্চিতভাবেই দেখাবে যে হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেই এই জন্মহার আরও হ্রাস পেয়েছে।
আসামের জন্মহারের দিকে তাকালে এই প্রবণতা আরও বেশি স্পষ্ট করে বোঝা যায়। NFHS এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯২-৯৩ সালে আসামের সামগ্রিক জন্মহার ছিল ৩.৫ যা ২০১৯-২০তে ১.৯ তে এসে দাঁড়িয়েছে। জন্মহারের এরকম বিপুল হ্রাসের পরেও সেই হার আরও কমানোয় মুখ্যমন্ত্রীর প্রবল উৎসাহ সাধারণ বুদ্ধিতে ব্যাখ্যাতীত মনে হয়, একমাত্র যদি না সম্প্রদায়ভিত্তিক জনসংখ্যাবৃদ্ধির ভ্রান্ত-ধারণাটির ভিত্তিতে রাজনৈতিক হিসাব মেটানো তার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। ১৯৯৮-৯৯ সালে আসামের হিন্দুদের জন্মহার ছিল ২.০ যা ২০১৯-২০ তে কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১.৫৯ তে – যা প্রতিস্থাপনযোগ্য জন্মহারের তুলনায় (২.১) অনেকটাই কম। একই সময়ে মুসলমান জন্মহার কমেছে ৩.০৫ থেকে ২.৩৮ – এক্ষেত্রেও এই হ্রাস হিন্দু জনসংখ্যার তুলনায় বেশি এবং প্রতিস্থাপনযোগ্য জন্মহারের (২.১) বেশ কাছাকাছি এবং অদূর ভবিষ্যতে সরকারের তরফে বাড়তি উদ্যোগ ছাড়াই তা প্রতিস্থাপনযোগ্য হারে পৌঁছে যাবে তা বলাই বাহুল্য।
প্রকৃতপক্ষে জন্মহার শুধুমাত্র “সম্প্রদায়”-এর ওপর নির্ভরশীল নয়। জন্মহার নির্ভর করে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্যের ওপর – যেমন শিক্ষা, উপার্জনক্ষমতা, মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলির ওপর। নিচের লেখচিত্রটিতে এই বিষয়টা একত্রে দেখানো হয়েছে। এখানে চারটি আলাদা রাজ্য, উত্তরপ্রদেশ, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারের হিন্দু এবং মুসলিম জাতির আলাদা করে জেলাভিত্তিক জন্মহার দেখানো হয়েছে (NFHS এর ২০১৫-১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে লেখকদের গণনা)। আনুভূমিক অক্ষটি হিন্দুদের এবং উলম্ব অক্ষটি মুসলিমদের জন্মহার দেখাচ্ছে। লেখচিত্র থেকে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে হিন্দু এবং মুসলমানদের জন্মহারের মধ্যে একটা সাধারণ সম্পর্ক আছে। অন্যভাবে দেখলে, যে সব জেলায় হিন্দুদের জন্মহার বেশি, সেখানে মুসলিমদেরও জন্মহার অপেক্ষাকৃত বেশি। সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে হিসেব করলে এর কোনও ব্যাখ্যা নেই – কিন্তু জেলাগুলির আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি দিয়ে এই প্রবণতাকে সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়। এই লেখচিত্রে এমন কি স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে যে সব রাজ্যেই এমন জেলাও আছে যেখানে হিন্দুদের জন্মহার মুসলমানদের তুলনায় বেশি। এরকম জেলা আসামে ৪টি, বিহারে ১১টি, উত্তরপ্রদেশে ২২টি এবং পশ্চিমবঙ্গে ৩টি রয়েছে যেখানে হিন্দুদের জন্মহার মুসলমানদের তুলনায় বেশি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মুসলমান সম্প্রদায়কে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য এককভাবে দায়ী করা এবং বেশি সন্তানের জন্ম দেওয়ার অভিযোগ আনা বস্তুত একটি দক্ষিণপন্থী অতিকল্পনা মাত্র এবং বাস্তব তথ্য তাকে সমর্থন করছে না।
চার্ট ১:
সুতরাং পূর্বোক্ত আলোচনায় আমরা দেখলাম যে এভাবে সরকারের পক্ষ থেকে দুই সন্তানের সীমা চাপিয়ে দেবার জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি আদৌ তথ্যনির্ভর বা বাস্তবানুগ নয়। কিন্তু এছাড়াও এই নীতির আরও কিছু অবাঞ্ছিত ফলাফল থাকতে পারে, যা গণপরিসরে সেভাবে আলোচিতই হয়নি এখনো। সাধারণতঃ জনসংখ্যাবৃদ্ধি সংক্রান্ত যে কোনও আলোচনায় স্ত্রী-শিক্ষার বিস্তারের বিষয়টি এবং তৎসংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শকেই আলোচনার কেন্দ্রে রাখা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ধরনের একমুখী নীতি নির্ধারণে নামলে পুত্রসন্তানকামিতার পুরো বিষয়টিই আড়ালে চলে যায় – অথচ সেটি আমাদের দেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। হিন্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে (গো-বলয়) বর্তমান লেখকদের একটি পূর্বতন গবেষণায় দেখা গেছিল, যাদের দুটি করে কন্যাসন্তান জীবিত আছে এরূপ স্নাতক (শিক্ষাগত যোগ্যতায়) মহিলাদের আরও একটি সন্তান চাইবার হার - বিহারে ২৩.৭%, উত্তরপ্রদেশে ২৭.৩% এবং রাজস্থানে ২৮.৩%। এটি নিঃসন্দেহে একটি পিতৃতান্ত্রিক এবং জাতপাত নিয়ন্ত্রিত সমাজের পুত্রসন্তান কামনার দ্যোতক। এবং এই প্রেক্ষিত মাথায় রাখলে, এই পুত্রসন্তান কামনাকারী সমাজে দুই সন্তানের আইন চালু করার অর্থই হল লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাত বা কন্যাভ্রুণহত্যা এবং শিশুকন্যাহত্যার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তোলা, কারণ বেশিরভাগ পরিবার বা দম্পতিই, বিশেষ করে শিক্ষিত সম্প্রদায়, চাইবেন দুটি সন্তানের নীতি মেনে চলতে এবং একই সাথে তাদের পুত্রসন্তানকামনাও বজায় রাখতে।
চীনের অভিজ্ঞতা থেকেও আমরা দেখেছি, পারিবারিক জন্মহারের পছন্দের ওপর রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত ব্যর্থ হতে বাধ্য। চীনের এক সন্তান নীতির প্রত্যক্ষ ফল হিসাবে সেখানে বয়স্কদের জনসংখ্যার অনুপাত ক্রমশঃ বাড়ছে এবং যুবক কর্মীর সংখ্যা ক্রমশঃ কমছে – যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে চীনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কমে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার ফলে সম্প্রতি সে দেশের সরকারকে কার্যত বাধ্য হয়ে এক-সন্তান নীতি পালটে তিন-সন্তান নীতি প্রয়োগ করতে হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রেও জনসংখ্যার আনুমানিক বৃদ্ধির হিসেব বলছে ২০১১ সালে এ দেশের ষাটোর্ধ জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৩.৮% থেকে বেড়ে ২০৩৬ সালে প্রায় ২৩.১% তে দাঁড়াবে। এই মুহূর্তে দুই-সন্তান নীতির প্রয়োগ এই বয়োজ্যেষ্ঠ জনসংখ্যার অনুপাত বৃদ্ধিতেই আরও সহায়ক হবে মাত্র।
আমাদের বুঝতে হবে সন্তানের সংখ্যা কত হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার সবচেয়ে উপযুক্ত পক্ষ হল সংশ্লিষ্ট পরিবার (যেমন কিছু প্রখ্যাত ডেমোগ্রাফার বলে থাকেন যে কোনও দম্পতির জন্মহার বিষয়ক কার্যকলাপ আসলে তাদের সচেতন পছন্দের বহিঃপ্রকাশ মাত্র)। রাষ্ট্র শুধু সেখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে পারে যা তাদের (দম্পতি/পরিবার) সুপরিকল্পিত জন্মহারের দিকে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করবে। ভারতে বিগত কয়েক দশক ধরে যে জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি চালু আছে তা বিশেষ কোনও কড়া পদক্ষেপ ছাড়াই আমাদের প্রতিস্থাপনযোগ্য জন্মহারের খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছে ইতিমধ্যেই। সরকারগুলির উচিৎ এযাবৎ পরীক্ষিত এই পদ্ধতিগুলি, যা যা এতদিন ধরে কার্যকর হয়ে এসেছে, সেগুলির ওপর যথেষ্ট বিশ্বাস রাখা এবং একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্মহার সংক্রান্ত পছন্দ-অপছন্দের ওপরে ভ্রান্ত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নীতি চাপিয়ে না দিয়ে তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করা।
দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত লেখার সম্প্রসারিত রূপ
তর্জমা- রৌহিন ব্যানার্জি
লেখকদ্বয় ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কলকাতা (IDSK) র শিক্ষক
Replacement Level Fertility: | প্রতিস্থাপনযোগ্য জন্মহার |
Total Fertility Rate (TFR) : | সামগ্রিক জন্মহার |
NFHS (National Family Health Survey): | জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা |
Demography: | জনাঞ্চল / অঞ্চল |
Population Policy: | জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি |
চমৎকার। যে সব পন্ডিতরা এসব নিয়ে গবেষণা করেছেন তারা কোথায়?
Ha ha ha...pimps of Muslims...sell out your wives-sisters-moms to Muslims!
আমার মনে হয় লেখক যুগল সঠিক কথায় বলছেন | কারণ দেশে ইয়ং জনসংখ্যা কমে গেলে যে আখেরে কোন লাভ নেই (রাজনৈতিক লাভ ছাড়া )সেটা চিন দেরিতে হলেও বুঝেছে | আসলে মুসলমান বিদ্বেষ ছড়ানো বিজেপি র রাজনৈতিক অস্ত্র| এর মধ্যে সত্যিকারের কোন প্রকৃত যুক্তি বা তথ্য নেই | এই সত্য টি বিজেপির দ্বারা ভুল বোঝানো হিন্দু রা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততই দেশের মঙ্গল | পেশাদার ট্রোল দের দোষ দিলাম না | গত সাত বছরে তলানি তে চলে যাওয়া এই অর্থনীতিতে তাদের কেও বিজেপি আই টি সেলের ছুড়ে দেওয়া ওই সামান্য টাকা তে সংসার চালাতে হয় |
নেপচুন দাদা, স্বামী-ভাই-বাবাদের বিক্রি করা যাবে না?
পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলায় হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি। এর মানে কি বাকি কুড়িটি জেলায় যা বলা বারণ, তাই ঘটছে? অর্থাৎ মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি?
সমান হতে পারে না?
সমান হলে (বা নেগলিজিবল তফাত হলে) অবশ্য ওদের ডিমনাইজ করতে অসুবিধে হয়।
একটা জিনিস খুব তলিয়ে না ভাবলে কারোর মাথাতে ঢোকে না সেটা হলো মোট সংখ্যা (absolute number), বৃদ্ধি (growth) ও বৃদ্ধির হার (rate of growth) সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় | এই তিনটি বিষয় কে জেনে শুনেই হয়তো গুলিয়ে দেওয়া হয় এই জুজুর ভয় দেখানোর জন্য যে এভাবে চললে একদিন মুসলমান রা সংখ্যাধিক্য হয়ে যাবে আর হিন্দু রা সংখ্যা লঘুতে পরিণত হবে | কিন্তু ডেমোগ্রাফার মাত্রই জানেন যে ফার্টিলিটি রেট কখনো সরল রেখা ধরে চলে না |সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ফার্টিলিটি রেট কমতে থাকে |
সুব্রতবাবু খুব ভালো বলেছেন। আর এই ফ্যালাসিটা বহু পুরনো, গোয়েবলস থেকে শুরু করে প্রায় সব রাইট উইং ডেমাগগরাই এটা ব্যবহার করে। ধরা যাক কোন এক জায়গায় মুসলমানরা ৩০ জন থাকে আর হিন্দুরা ৭০ জন থাকে। এবার কয়েক বছর পর দেখা গেল দুদলেই একজন করে বেড়েছে, অর্থাত ৩১ আর ৭১। তাহলে মোট সংখ্যার বৃদ্ধি দুদলেই সমান, কিন্তু মুসলমানদের বৃদ্ধির হার হলো 3.3% আর হিন্দুদের হলো 1.4%। বিষ ঢালতে সুবিধে হলো।
আমরা নিতান্ত ছাপোষা মানুষ। এইসব উচ্চ আলোচনা ঠিক বুঝতে পারি না। তবে আশা করা যায় আগামীদিনে সমস্ত বিরোধী পক্ষ এক হয়ে এই বিষ বৃক্ষ সদৃশ বিজেপি কে পরাস্ত করবে এবং একটি সুন্দর "অসাম্প্রদায়িক জনদরদী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল" নিশ্চিত ভাবে নিয়ে আসবে। আপনাদের মত পণ্ডিত ব্যাক্তিদের থেকেও, আপনাদের এই মূল্যবান মতামত গুলো নিশ্চিত ভাবে সংগ্রহ করে নেবে। তাই আপনাদের বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না!
চীনের এক সন্তান নীতির আরো একটি ফল পড়েছিল লিঙ্গ অনুপাতের ওপর। কন্যাভ্রূণ হত্যা হওয়ার ফলে যুবকের সংখ্যা যুবতীর তুলনায় বেড়ে যায় এবং সব পাত্রের জন্য বিবাহযোগ্যা পাত্রীর অভাব দেখা দেয়।
লিঙ্গ অনুপাতে অসাম্য দীর্ঘমেয়াদী অনুন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি।
From wikipedia:
Trends in Muslim population of West Bengal after Partition
Census year % of total population Decadal growth Increase
1946 (Before partition) 30.32% NA NA
1951 19.85% 27.26% -10.47%
1961 20% 36.48% +0.15%
1971 20.46% 29.76% +0.46%
1981 21.51% 29.55% +1.05%
1991 23.61% 36.89% +2.1%
2001 25.25% 25.91% +1.64%
2011 27.01% 21.80% +1.76%
population স্বাধীনতার সময় ৩০ কোটি থেকে এখন ১৪০ কোটি। আমাদের নাগরিকদের কর্তব্য কুকুর-বিড়াল এর মতো সন্তান জন্ম দেওয়া। জন্ম দিয়েই খালাস। ব্যস বাকি সব রাস্ত্রের দায়িত্ব্য। খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, mobile.... সব আমাদের অধিকার!! সব রাস্ট্র কে দিতে হবে।
একবারও কি ভেবে দেখেছি population ঐ স্কানডিনেভিয়ান দেশের মতো হলে আমাদের দেশের লোকেরাও কি ভাবে থাকতো?