নোবেল পুরস্কার গ্রহণের বক্তৃতায় গাব্রিয়াল গার্সিয়া মার্কেজ দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, “কোনরকম পূর্বসৃষ্ট ধারণা না নিয়ে বাস্তবের দিকে তাকানোই লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট।প্রতিদিনের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত নানান বিষয় নিয়েই আমাদের ভাবনা সংবৃত। লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান উপসাগরীয় অঞ্চলের কুড়ি কোটি মানুষের রোজগার মাসে ষাট ডলারের থেকেও কম। সকাল বেলায় কাজের খোঁজে বাড়ি থেকে রওনা দেওয়ার পর প্রতিদিন অন্তত এক কোটি লোক কাজ না পেয়ে আবার বাড়িতেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এই অবস্থানের পরিবর্তন করাই হল আসল কাজ”। বুঝতে এতটুকু অসুবিধা নেই গাব্রিয়েলের সাহিত্য উপাদানের উৎস কী। আরও একবার গাব্রিয়ালকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁর সাহিত্যসৃষ্টিতে স্বপ্নের ভূমিকা কতটা! এর উত্তরেও তিনি বলেছিলেন, “প্রথম প্রথম এতে আমি বিশেষ মনোযোগ প্রদর্শন করতাম। পরে অনুধাবন করলাম যে চারপাশের জীবনই অনুপ্রেরণার এক বিরাট উৎস। সেই প্রবাহে জীবনের তুলনায় স্বপ্নের ভূমিকা অত্যল্প”।
বিশ্বের দরবারে যে মহান কথাসাহিত্যিকরা আমাদের আলোড়িত করেন তাঁদের মহৎ সৃষ্টিকর্মের দ্বারা, তাঁরা সকলেই এই প্রত্যয়ের বাণী আমাদের শুনিয়েছেন। স্বপ্ন, যাদু, কল্পনা এসবই হয়তো কিছু পরিমাণে থাকে, তবে আসল উপাদান খুঁজে পেতে হয় নিজেদের চারপাশের বাস্তব জীবন থেকেই। যে সাহিত্য এই বাস্তব জীবনের বহুমুখী কলরব, প্রত্যাশা এবং আকাঙ্খার নিবিড় সংশ্লেষে মথিত হয়ে জীবনকে পৌঁছে দেয় পরবর্তী উচ্চতায় সেই সাহিত্যই আমাদের হৃদয়কে অধিকার করে, বেঁচে থাকে অনেক, অনেক কাল।
উপন্যাস রচিত হতে পারে ইতিহাসকে আশ্রয় করে, কৌম কোন সম্প্রদায়ের যাপনচিত্রের ক্রমান্বয়ী উত্তরণ বা অবসানকে কেন্দ্র করে, কোন বিপ্লব বা বিদ্রোহকে আধার করে, নর-নারীর প্রেম-ভালবাসাকে কেন্দ্রে রেখে বা কল্পিত চরিত্রদের মধ্যে দিয়ে একটি আদর্শগত অবস্থানকে উন্মোচন করার উদ্দেশ্যে। হয়তো প্রকৃতিও হতে পারে উপন্যাসের প্রধান চরিত্র।অনেক সময় পরাবাস্তব হয়ে ওঠে উপন্যাসের শরীর নির্মাণের কৃতকৌশল। এবং হচ্ছেও হয়তো অনেক লেখা কিন্তু কোনটা আমাদের হৃদয় এবং মনকে উদ্বেলিত করে, চোখে জল আনে বা ক্রুদ্ধ করে তোলে অথবা প্রাণিত করে বিমল প্রভাতের অপেক্ষায় – তা নির্ভর করে শুধু কৌশলী লেখকের কলমের মুন্সিয়ানায় নয়, গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের পূর্বোক্ত বক্তব্যের নিহিত সত্যে। অর্থাৎ, চারপাশটা আছে কিনা সঠিক পর্যবেক্ষণে এবং যত্নে।
এই কথাগুলো বলতে হলো একটি উপন্যাসের পাঠ-প্রতিক্রিয়ার সূত্র ধরে, অসিত কর্মকারের সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘’বাঁক বদলের উপাখ্যান’’-যার প্রথম পাঠই আমাকে মুগ্ধ করেছে, আবিষ্ট করেছে এবং বাধ্য করেছে দ্বিতীয় পাঠে, কারণ গাব্রিয়েলের উপলব্ধ সত্যর এক অমোঘ প্রতিফলন পেয়েছি এই উপন্যাসে। কীভাবে? সেটাই সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করছি।
এক ছোট্ট ভূখণ্ড পুরন্দরপুর, সুন্দরবনের বাসন্তী সংলগ্ন এই অঞ্চল। দেশভাগের বলি হয়ে অসংখ্য মানুষ এবং পরবর্তীতে ১৯৭১-এর বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের সাগরেদ জামাত-রাজাকার বাহিনীর হাতে তিরিশ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে,বহু নারী ধর্ষিত হয়েছেন এবং প্রায় এক কোটি মানুষ আমাদের দেশে পালিয়ে এসেছেন সবকিছু হারিয়ে শুধু প্রাণটুকু হাতে নিয়ে - ইতিহাসের এই নির্মম সত্য আমরা জানি। পরিবর্তে তারা পেয়েছে এক স্বাধীন বাংলাদেশ। সেই প্রাণটুকু হাতে নিয়ে পালিয়ে আসা কিছু নিঃস্ব মানুষর বাসস্থানই হচ্ছে এই পুরন্দরপুর। লেখকের কথায় “ওপার বাংলা থেকে আসা ছিন্নমূল মানুষের বসতি। তাদের মুখে জন্মভূমির বুলি। নদী আর সমুদ্রে মাছ ধরে ওরা সংসার চালায়”। পুরন্দরপুরের অবস্থান হচ্ছে “তিন নোনা নদী মাতলা, বিদ্যাধরী আর হোগলের সঙ্গমে,’’ এখানে নদীতে চোরাস্রোত লাট্টুর মতো পাক খায়। যারা নদীকে বুঝতে না পারবে তলিয়ে যাবে। এখানকার মানুষগুলো এসেছে কেউ স্বরূপকাঠি, কেউ ঝালকাঠি, কেউ সুতিয়াকাঠি আবার কেউ মধুরকাঠি থেকে। এই নোনাজলের দেশে এসে তাদের প্রায় সকলেরই একমাত্র জীবিকা হয়েছে নদী-সমুদ্রের মাছ”-
১
মীন ধরা বা জঙ্গলে কাঠ কাটতে যাওয়া। সবসময় মাছ বা মীন পাওয়া যায় না, নোনামাটিতে চাষ হয় না, আর এই মানুষগুলোর তো বসতির বাইরে কোন জমিই নেই। তাই ঘরে ঘরে দারিদ্র, নিঃস্বতা এবং বিষণ্ণতার পরিমণ্ডল। এই মানুষগুলির কারো নাম সুধন্য, কারো বলরাম, দ্বিজু, বিষ্ণু, নকুল, খনা, আন্না, শচী, মানদা ইত্যাদি। কিন্তু এখানে এসে যে তারা বসতি গড়ল, কীভাবে সেটা সম্ভব হল, কোন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এল তাদের সাহায্যে? একজন মানুষ। তার নাম মহিন সাহা। এই মহিন সাহাই সমগ্র উপন্যাসের ভরকেন্দ্র। সে-ই এই অসহায় মানুষগুলিকে ঘর বেঁধে দিয়েছে। জলের ব্যবস্থা করেছে, লঙ্গরখানা খুলে গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করেছে। কেন করতে গেল এসব মহিন সাহা। কারণ তার কথায়, “তোমরা ব্যাবাগ আমার দ্যাশের মানুষ। আমার দ্যাশ ছিল ঝালকাডি”। কিন্তু শুধু এই দেশের মানুষের প্রতি আবেগ ভালবাসাই কি তাকে প্ররোচিত করেছিল পুরন্দরপুর নামক এক বাসভূমি নির্মাণ করতে এই ছিন্নমূল মানুষদের জন্য! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কে এই মহিন সাহা, কীভাবেই বা তার উত্থান? বর্তমানে কলকাতায় নিবাস সুন্দরবনের বড় জমিদার মিত্তিরবাবুদের রাইসমিলে সাধারণ চাকুরি করতো মহিন সাহা। ধানের পরিবর্তে তুষ ভর্তি করে সাপ্লাই করাতো। অর্ধেক টাকা নিজের পকেটে পুরতো। এভাবেই ক্রমাগত তার উত্থান। তারপর অনেক ধরনের ব্যবসায় ক্রমাগত ফুলেফেঁপে উঠেছে। এই বিপুল সম্পত্তির মালিকানাই তার মধ্যে এনেছে আধিপত্যের অদম্য বাসনা। সে আধিপত্য শুধু টাকাপয়সায় নয়, মানুষের চূড়ান্ত অভাবকে ব্যবহার করে তাদের দৈনন্দিন জীবন, তাদের একান্ত মানবিক আবেগের পরিসরটুকুকেও দখল করে নিজের প্রভুত্বকে কায়েম করার উদগ্র ইচ্ছাও ঐ নিরন্ন, নিঃস্ব মানুষগুলিকে বাসভূমি দানের পেছনে অনুঘটকের কাজ করেছে। কারণ সব রাজারই প্রজা লাগে।
কিন্তু শুধু এটুকুই নয়, এক ব্যক্তিগত ট্রাজেডিও তাড়িয়ে বেড়ায় মহিন সাহাকে। তার অপরূপ সুন্দরী স্ত্রী ভবসুন্দরী আত্মঘাতী হয়েছে তারই তৈরি বাগানের গাছে লটকে পড়ে। ভবসুন্দরী তিনটি মৃত সন্তান প্রসব করে। কোন জীবিত সন্তানের পিতৃত্ব দিতে পারেনি মহিন সাহাকে। এই আত্মগ্লানিতে অথবা মহিন সাহার অত্যাচারে সেটা খুব স্পষ্ট নয়, তবে ভবসুন্দরীর এই আত্মহত্যা আতঙ্কগ্রস্ত করেছিল মহিন সাহাকে, রাত হলেই তার ভয় বাড়ে, মনে হয় ঐ অন্ধকারে ভবসুন্দরী হয়তো বাগানে এসে জবাব চাইবে তার কাছে। তাই সে চায় দিনের আলো এবং অনুগত অনেক মানুষের সাহচর্য - যারা তার কথায় উঠবে-বসবে এবং তাকে ভুলিয়ে রাখবে ভবসুন্দরীর ভৌতিক উপস্থিতির আতঙ্ক থেকে। এই অনুগত মানুষদেরই একজন হচ্ছে পদম গোঁসাই; যার সঙ্গে নিভৃতে ষড়যন্ত্র করে কোন কাজ কীভাবে করলে তার আকাঙ্ক্ষার তৃপ্তি ঘটবে। একটা কথা এখানে বলে রাখা ভাল, পুরন্দরপুরের মানুষদের জমির কোন পাট্টা নেই। অর্থাৎ বসবাসের সরকারি স্বীকৃতি নেই, ফলে একটা ভয় তাদের মনে সবসময়ই আছে যে, যে কোনদিন সরকার তাদের উচ্ছেদ করতে পারে। অথচ পাট্টা কীভাবে পাবে তাও তাদের জানা নেই। সব জানে মহিন সাহা; তার যোগাযোগ, উমেদারি এবং সদিচ্ছার উপরই পাট্টা পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে। উপন্যাসের বিভিন্ন পর্বেই পাট্টার প্রসঙ্গ আসে আর পদম গোঁসাইয়েরও সুযোগ আসে মহিন সাহার মহানুভবতা এবং কর্তব্যবোধের বিষয়টি বার বার উচ্চারণ করে কলোনীবাসীদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার।
পদম গোঁসাই-এর গোঁসাই হয়ে ওঠার পিছনেও এক গোপন ইতিবৃত্ত আছে। পদম গোঁসাইয়ের ঠাকুরদা জীবন দাস অর্থবান মৎসজীবী ছিল। একদিন পুকুর কাটাতে গিয়ে এক বাঁশিধারী কৃষ্ণমূর্তি পায়। তারপর থেকে তার জীবন পাল্টে যায়।কৃষ্ণ আরাধনা রামায়ণ-মহাভারত পাঠ নিয়েই তার সময় কাটে। দীক্ষা নিয়ে হয়ে গেল “গোঁসাই’’। গড়ে উঠল আখড়া, বাড়ল ভক্ত আর শিষ্যের সংখ্যা, জুটতো প্রভুত প্রণামী। জীবন গোঁসাইয়ের ছেলে কালো গোঁসাই, তার ছেলে শ্রীপদ। বাবার ইচ্ছা ছিল সে কবিরাজ হোক, কারণ গাঁ-গঞ্জে চিকিৎসার বড়ই অভাব, কিন্তু শ্রীপদর ওসবে মন ছিল না। সে তার শিক্ষকের মেয়ে এলাচিকে নিয়ে পালিয়ে আসে। কালো গোঁসাই মারা গেলে সেও হয়ে উঠলো ‘পদম গোঁসাই’। গোঁসাইয়ের ছেলে গোঁসাই। কত সহজ জীবনযাপন। তাই কীর্তনের আখড়াই হয়ে ওঠে মহিম-পদমের নিভৃত সংলাপের আদর্শস্থল।
তমালহরি নদীর পাড়ে পড়ে থাকা সহায়সম্বলহীন এক বৃদ্ধ, যার নিজের কোন আগ্রহ নেই তাকেই বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে হয়েছে মহিন সাহার, তাই পদম গোঁসাইয়ের উপর দায়িত্ব পড়েছে মেয়ে বাছাই করার। গোঁসাই অবাক হয়ে গিয়েছিল, তাই তার জিজ্ঞাসা, “তার তো বয়স অইছে অনেক, কত্তা, তা সে কি আপনার লগে বিয়ার ইচ্ছার কথা কইছে?’’ এক অসাধারণ উত্তর দিয়েছে মহিন সাহা, “না কয় নাই।ই চ্ছা নাই কিন্তু তা জাগাইতে কতক্ষণ!’’ এক অনিচ্ছুক বৃদ্ধের কাছে এক যুবতীকে গছিয়ে দেবার জন্য “ইচ্ছার’’ সঞ্চার করছে মহিন সাহা। ‘এক দ্যাশের’ লোকের প্রতি কর্তব্য পালনের অছিলায়। অথচ ভাবছে না এই বুড়ো মরে গেলে যুবতীর কী হবে। যতদিন বাঁচবে ততদিন তো নাকি সে-ই খাইয়ে-পরিয়ে রাখবে। পাত্রী নিশ্চই জুটে যাবে, মেয়েছেলে বই তো নয়! কিন্তু এ কি শুধু কর্তব্যবোধেরই বিষয় না আদি-অন্ত জীবনের সর্বত্র মহিন সাহার আধিপত্য বিস্তারের আদিম আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন? অসাধারণ এই উন্মোচন। উপন্যাসে বর্ণিত জীবন সংগ্রামের অনিবার্য এবং সংঘাতময় পর্বগুলির প্রাণবন্ত অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক চরিত্র উঠে আসে তাদের বর্ণময় বৈশিষ্ট্য নিয়ে। এদের কয়েকজন হচ্ছে সুধন্য, বলরাম, মানদা, আন্না, খনা, জটাই, মরণি, হরেকিষ্ট, চুনিলাল এবং একটি অপেক্ষমান ভাগাড় যেখানে গড়ে উঠবে মহিন সাহার হাড়গোড়ের ব্যবসা। সুধন্য আর বলরাম দুই প্রাণাধিক বন্ধু, একসঙ্গে মাছ ধরে জাল ভাড়া করে। যা পায় দুজনে সমান ভাগ করে নেয়। সঙ্গে থাকে বলরামের ছেলে বিষ্টু, সে সাহায্যকারী। সুধন্য’র কোন ছেলে নেই, চার মেয়ের বাপ সে। শচী তার স্ত্রী। ছেলে না থাকার দুঃখ তাদের আছে। এই দুঃখে আর দারিদ্রের যন্ত্রণায় অনেক সময় সে নেশা করে। কখনো কখনো শচীকে নির্যাতনও করে। কিন্তু বৌকে সে ভালবাসে। সে জানে ‘’পোলা বিয়ানোর যাদুকাডি’’ শচীর হাতে নেই। বলরাম ব্যক্তিগতভাবে ঋণী মহিন সাহার কাছে। ছেলে বিষ্টুকে ধরেছিল মারণ রোগ কলেরায়, তখন ছেলের চিকিৎসার জন্য মহিন সাহার পায়ে ধরে একশো টাকা নিয়েছিল, কিন্তু শোধ করতে পারেনি। গায়ে খেটে শোধ করার কথা ছিল। তাও করেনি। ফলে এক অসহায়তাজনিত দুর্বলতা আছে বলরামের মহিন সাহার প্রতি। খানিকটা অপরাধবোধ। মহিন সাহাও সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দেয় বলরামকে বিষয়টা।
বন্ধু হলেও সুধন্য কিন্তু বলরামের মত নয়। তার দারিদ্র বাইরে, অন্তরে নয়। তলা ফেঁসে গিয়েছিল বলে নৌকো সারাই করতে দিয়েছিল মহিন সাহা সুধন্যর কাছে। কাজ শেষ হলেও মহিন সাহা পুরো টাকা না দিয়ে বলেছিল কয়েক মাস চালিয়ে দেখে নেবে ঠিকঠাক সারান হয়েছে কিনা। সুধন্য মেনে নিতে পারেনি মহিন সাহার এই একপেশে সিদ্ধান্ত। সে নৌকোটাকে ভাসিয়ে দিয়েছিল জলে। শুধু তাই নয়,তারপরও সে টাকা চাইতে গিয়েছিল। এই বেয়াদপি মহিন সাহার সহ্য করার কথা নয়। সে থানা-পুলিশ করেনি ঠিকই তবে সুযোগ খুঁজছিল বদলা নেবার। একই সঙ্গে সে বুঝে নিয়েছিল বলরাম এবং সুধন্যর মধ্যে মৌলিক তফাৎকে।
২
বলরামের বোন আন্না। দেখতে খারাপ। কিন্তু সংসার করার ইচ্ছে রয়েছে, যেমন থাকে সব মেয়েদের মধ্যেই। সুধন্যর বোন খনা। দেখতে ভাল। লেখকের ভাষায়, “খনাকে দেখলে কে বলবে বাপ মরা গরীব ঘরের মেয়ে সে! নোনা মাটি-হাওয়ায় তার গায়ের রঙ লজ্জাবনত শ্যামবর্ণ। দোহারা গড়ন, ডিম্বাকৃতি মুখমণ্ডল। টানা টানা নাক-চোখ। লালচে চুল মাথায়, কিঞ্চিত ঢেউ খেলানো হওয়ায় আশ্চর্য সুন্দর লাগে”। এহেন সুন্দরী খনাকে বিয়ে দেওয়ারও সামর্থ নেই সুধন্যর। তাই পদম গোঁসাই প্রস্তাব দেয় মহিন সাহার নির্বাচিত পাত্র তমালহরির সঙ্গে খনার বিবাহের। খনার মা মানদাও গোপনে গোপনে এই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে আসে। কিন্তু সুধন্য কিছুতেই তার এই অতি প্রিয় বোনটিকে বানের জলে ভাসিয়ে দেবে না। শুধু পদম গোঁসাইকে নয় নিজের মাকেও একথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় সুধন্য। খনাও কিন্তু সাধারণ মেয়ে নয়। তার প্রেমিক আছে। এক অপরূপ লাবণ্যময় প্রেমিক। জটাই। যার শুধু আছে খনার জন্য বুকভরা ভালবাসা। আর নদী-নৌকো। এবং ক্রমাগত ভেসে চলা এক অকৃত্রিম মোহনার উদ্দেশ্যে। খনা অন্তহীন স্বপ্ন দেখে জটাইয়ের সঙ্গে ঘর বাঁধার। অপেক্ষা করে কবে মানুষটা ঘর বাঁধবে, তাকে নিয়ে যাবে বিয়ে করে। সে নতুন সংসারের ঘরের দেয়ালে টানিয়ে দেবে তার অনবদ্য শিল্পকীর্তি, “সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’’। পিছিয়ে নেই জটাইও। সে বানিয়ে এনেছে খনার জন্য একজোড়া ঝুমকোপাশা। পিসি মরণির হাতে দিয়েছে খনার কাছে পৌঁছে দিতে। পিসিকে সে বলেও দিয়েছে,বাড়ি-জমি-সম্পত্তির থেকেও খনা তার কাছে অনেক দামি। খনার কোন বিক্রয়মূল্য হয় না তার কাছে। এ যেন চির প্রবহমান শুদ্ধতম আবেগের এক নিবিড় গোপন সংলাপের নিঃশব্দ উচ্চারণ।
খনা কিন্তু শুধু নিজের কথাই ভাবেনি। আন্নাকেও বলেছে, সেও যেন ওই তমালহরিকে বিয়ে না করে। আর আন্না, সে যতই কর্মঠ হোক নিষ্ঠুর বাস্তবের কাছে অসহায়। তবু সে খনার গোপন অভিসারকে সফল করার জন্য সবটুকু দিয়ে সাহায্য করে। টুকরো টুকরো কথার ছবি এঁকে মা-দাদা-বৌদি-বোন এবং প্রেমিকের সম্পর্কের যে রসায়ন উপস্থিত করেছেন লেখক তা এক কথায় অপূর্ব। নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং গভীর সহানুভূতি না থাকলে এই বিশুদ্ধ রস সৃষ্টি করা যায় না।
এক অসম্ভব উজ্জ্বল চরিত্র এই মরণি। মরণির স্বামী অন্য কাঠুরেদের সঙ্গে গাছ কাটতে জঙ্গলে গিয়ে আর ফেরেনি। মহিন সাহা বলে দিয়েছে, সে বিবাগী হয়ে গেছে। অন্তত দুজন একথা বিশ্বাস করেনি। একজন মরণি নিজে, আরেকজন সুধন্য। তাই এখনও মরণির কপালে সিঁদুর এবং হাতে শাঁখা। ক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখি মরণিকে পাট্টা বিলি সংক্রান্ত মিটিং-এ। সে পরিষ্কার মহিন সাহাকে দায়ী করে তার স্বামী না ফিরে আসার জন্য। সঙ্গী কাঠুরেরা যখন মহিন সাহার সঙ্গে গলা মেলায় তখন সে এই প্রতারণার ষড়যন্ত্রকে উন্মুক্ত করে দেয় এই বলে, “সে মানুষগুলোকে তো তুমি টাকা খাইয়ে বশ করি রেকিচ। তোমার হয়ি তো তারা কতা বলবেই। কিন্তু জেনি রেক, সময় একদিন ঠিক আসবে”। নগ্ন হয়ে যায় মহিন সাহা। আবার এই মরণিই ভাইপোর জন্য সম্বন্ধ আনে। বিয়ে করলে জমি-বাড়ি পাবে। কিন্তু যখন শুনল খনাকে ছাড়া সে কাউকেই বিয়ে করবে না তখন সে-ই আবার ঝুমকোপাশা দিতে গেল ভাইপোর সুন্দরী হবু বৌটিকে। এ এক মরমী কাব্য। জীবন প্রস্ফুটিত হওয়ার কাব্য।
অন্য আর এক দিক রয়েছে। অনেক ঘটনা যা আবর্তিত হয় বলরামকে ঘিরে। আগেই বলেছি চারিত্রিক গুণে বলরাম কিছুটা দুর্বল যা মহিন সাহা অচিরেই বুঝতে পেরেছিল। বিশেষত কৈ-ভোলা মাছকে কেন্দ্র করে যা ঘটতে থাকে এবং বলরামের সে ক্ষেত্রে যে আত্মপীড়নকারী ভূমিকা, বার বার গায়ে খেটে পুরনো ঋণ শোধ করার আর্জি, তদুপরি অসহায় সংসারে আন্নার মতো দৈহিকভাবে অসুন্দর বোনকে বিয়ে দেওয়ার সমস্যায় বিভ্রান্ত বলরামকে যে লোভ দেখানো যায় এবং লোভ দেখালে তা সে যতই অস্বাভাবিক হোক, বলরাম যে তা গিলে ফেলবে এ প্রত্যয় মহিন সাহার ছিল। ছিল বলেই সে অবলীলাক্রমে হাড়গোড়ের ব্যবসা যে জমিতে করবে অর্থাৎ মিত্তিরদের সেই শেষ তিন বিঘা জমি, সেখানে তাকে নিয়ে যায় এবং এক সময় বলে ফেলে, এই ব্যবসার মালিক করে দেবে বলরামকে। আচমকা এই প্রস্তাবে হতভম্ব হয়ে যায় বলরাম। সেটাই স্বাভাবক। কিন্ত একটু পরেই কথার যাদুতে আবিষ্ট হয়ে সে বিশ্বাস করে ফেলে মহিন সাহাকে। এ শুধু কথার যাদুতে নয়,বলরামের ভেতরে লুকিয়ে থাকা আশা-প্রত্যাশার জগতে যেন এক বিস্ফোরণ ঘটে যায়। তখন যেটা একেবারেই অসম্ভব তাকেও মনে হয় নিকট- সম্ভব। মহিন সাহাই যেন ছোট্ট হয়ে ঢুকে যায় তার ভেতরে। পাল্টে যায় তার কণ্ঠস্বর, তার আচরণ, তার চলাফেরার ধরন। এই বুক-চিতানো বলরাম যে আসলে ফক্কা আমরা তা বুঝতে পেরে যাই ধনা দাসের বৌ নয়নতারার সহাস্য উক্তিতে, “ঠাকুরপোর কি পিছনে ফোঁড়া অইছে?’’। অচিরেই কলোনির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মুখে ফুটে ওঠে ছড়া,
বুইনের কপাল পোড়া
বলরামের পিছনে ফোঁড়া।
বিষ্টু কিছু বুঝতে না পেরে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়, আন্না হয়তো বুঝতে পেরে তাকে সামলায় কিন্তু পাঠকদের কাছে লেখক পাঠিয়ে দেন তাঁর উপলব্ধিজাত বার্তা, কত সহজে। এরপরে যে ফানুসটা ফাটবে তা বুঝতে আমাদের বাকি থাকে না। মহিন সাহা কিন্তু তমালহরির সঙ্গে সুধন্যর বোন খনার বিয়ে দেওয়াই মনস্থ করেছে, কারণ তাহলেই উপযুক্ত বদলা নেওয়া হবে। তাই কূট কৌশলে পাট্টা বিলির লিস্টে সুধন্যর নামটাই প্রথমে রেখেছে। অন্য দিকে, বলরামকে তার ঘোর আপত্তি সত্বেও বাজারের মন্দির থেকে শিবের মূর্তিটাকে তুলে এনে পদম গোঁসাইয়ের উঠোনে রেখে দিতে বলেছে। তাহলেই কলোনির মানুষের দৃষ্টি ঐ দানব জাহাজ থেকে সরে যাবে।
৩
একটা জাহাজ আসছে,প্রথম খবর দিয়েছিল নকুল পাথার। জাহাজের মানুষরা নাকি এখানের মাটি খুঁড়ে দেখবে কোনো খনিজ পদার্থ আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে পুরন্দরপুরের মানুষদের এ জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হবে। কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই, কারণ তাদের পাট্টা নেই। তাই সব মানুষের আকর্ষণ এবং আতঙ্ক এখন ঐ জাহাজটার প্রতি। এখান থেকে সরিয়ে আনতে হবে মানুষের দৃষ্টি। মহিন সাহা খুব ভাল করেই জানে এই সংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের দুর্বলতার জায়গা। তাই বলরামকে দিয়ে ঐ শিব ঠাকুরটাকে তুলে আনার কাজটি তাকে করতে হয়েছে। এ হচ্ছে pragmatism-এর এক চূড়ান্ত নমুনা।
আবার বলরামকেই মহিন সাহা দায়িত্ব দিয়েছে জটাইকে চিরকালের জন্য সরিয়ে ফেলার জন্য। সে জানে তমালহরির সঙ্গে খনার বিয়ের আসল বাধাটা ওখানেই। তাই ওকে সরিয়ে ফেলতে হবে।আর এ কাজটাও বলরামই করবে, কারণ বলরাম তার ফেলে দেওয়া লোভের বড়িটি গিলে ফেলেছ।তাই যতক্ষণ না একটা ভয়ঙ্কর ঝড় এসে সবকিছু ওলট-পালট করে দেয় ততক্ষণ বলরামকে যা করতে বলবে মহিন সাহা তা সে করে যাবে, প্রাথমিক জড়তা, অস্বস্তি বা আপত্তি যা-ই থাক।
ঝড় যে আসবেই সেটা বোঝা যাচ্ছিল, শুধু সময়ের অপেক্ষা। এবং এলো। বলরাম জানল সে ওই হাড়গোড়ের ব্যবসার মালিক নয়, কিছুই নয়। এতদিন তাকে মিথ্যে আশার ছলনায় ভুলিয়ে মহিন সাহা অসংখ্য অপকর্ম করিয়ে নিয়েছে। তিন বিঘার দলিলের বয়ানে লেখা আছে, “কোবালা গ্রহীতা শ্রী মহিন চন্দ্র সাহা’’। এখানে লেখকের ভাষায় উল্লেখ করি, “মুহূর্তের মধ্যে বলরামের শরীর থেকে যেন সমস্ত রক্ত বেরিয়ে গেল। এতদিন তাকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়েছে মহিন সাহা। তার নামে জমি কিনে ব্যবসা দেওয়ার স্বপ্ন, তা এই মুহূর্ত থেকে ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে। তার টানটান অহংদীপ্ত এই শরীরটা অবলম্বনহীন লতার মত এলিয়ে পড়েছে। হতাশা, রাগ, ক্ষোভ, অভিমানে বুকের ভেতরটা দাউ দাউ করে জ্বলছে তার এখন”।
এবার মোহমুক্ত বলরাম। ক্রমশ সে ঠিক করে ফেলে এখন সে কী করবে। তার উপলব্ধি হল, পুরন্দরপুরের জমি সাহা কত্তার নয়, আবার তাদেরও নয়। কিন্তু যেহেতু তারা ভোগদখল করে আসছে দীর্ঘদিন তাই তাদেরই বেশি অধিকার এই জমিতে। শচী যখন মহিন সাহার অবদানের কথা বলে, বলরাম তাকে পাল্টা বোঝায়, “মানুষডা আমাগো লাইগ্যা করছে যেমন ত্যামন আবার নিছেও তো কম না”। এবার তাই তাদের নিজের জমি নিজেদেরকেই রক্ষা করতে হবে। এখানে লেখকের ভাষা উল্লেখ করাই সঙ্গত, “চৌদ্দ পুইষ্যের ভিডি ছাইড়া আইয়া এ্যাই দেশে যাও মাডি পাইলাম তারও শিকড় আলগা অওনের অবস্থা অইছে। উপড়াইয়া গ্যালে আবার আমরা কই যাইম? ভাইস্যা চলা জীবনে যে সুখ নাই। আমরা দরকার অয় তো এ্যাই মাডির ল্যাইগ্যা লড়াই দিম”।
“ঠিগই কইছ ঠাকুরপো, লড়াই না দিলে এ্যাই মাডি আমরা রক্ষা করতে পারুম না। এই পিথিবীতে ক্যাউ বাড়তি অইয়া আহে নাই, ভগবান হগলরে বাঁচার মাডি দিয়া যেমন পাডাইছে তেমনই মরণের পর মাডি ন্যাওনের জায়গা দিয়াও পাডাইছে”।
মরণি দৃঢ় গলায় বলল, “তোমরা সকলি মিলি জোট বাঁধো, এই লড়াইতে আমিও আচি তোমাদির সঙ্গে”।
সুধন্য বলল, “এ্যাই মাডির লাইগ্যা লড়াই কিন্তু বড় কডিন লড়াই। মুহে কইলেই কিন্তু অইয়া যাইব না। কলোনির ব্যাবাগডিরে একজোড করন লাগব। ভাইব্যা দেখ বলা”।
“হ হ ভাবনা আমার সারা। এখন থিক্যা আমরা হগলডি এক দলে। তুই যা সিদ্ধান্ত নিবি আমরা মাইন্যা নিম”।
সুধন্যই এই লড়াইয়র নেতা। কেন না বলরাম জানে, সুধন্য দৃঢ়চেতা, আপোসহীন।
মাটির জন্য, জীবনের জন্য, নিজেদের ন্যায়সংগত অধিকারের জন্য প্রস্তুত সকলে। এ এক মহৎ সংগ্রাম। এখানে রয়েছে স্বপ্নের ভূমিকা। যে স্বপ্ন দৈনন্দিন বাস্তবকে পেরিয়ে এক অন্য বাস্তবের জন্য সমষ্টির সংগ্রামকে সংগঠিত করে মুঠিবদ্ধ হাতে। এক অন্য গানের ভোর আনার জন্য।
শেষের কথা
বিষয় নির্বাচন, ঘটনাবহুল দ্বন্দ্ব-সংঘাতপূর্ণ সেই বিষয়কে পর্বে পর্বে বিন্যস্ত করা, চরিত্রনির্মাণ, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সংঘাতের চিত্রণ, বিশেষত নারীচরিত্রের রহস্য, সৌন্দর্য, সংকীর্ণতা এবং মহত্বের অসাধারণ উন্মোচন, নদী-জল ভিত্তিক জীবনের ছবিকে তার নিজস্বতায় প্রতিষ্ঠিত করা এবং সর্বোপরি জীবনকে জয় করা এবং তাকে প্রতিষ্ঠার জন্য জোটবদ্ধ লড়াইয়ের অনিবার্যতা - এ সবই অসামান্য স্বাভাবিকতায় প্রতিষ্ঠিত এই উপন্যাসে। লেখকের মুন্সিয়ানার মূলে আছে এই নিপীড়িত, নিঃস্ব মানুষগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখে পরম মমতা এবং ভালবাসায় তাদের আত্মীয় করে নেওয়া। নইলে এই উপন্যাস রচনা করা সম্ভব হত না। বিশেষত ওপার বাংলার মানুষের কথ্য ভাষার এমন নিপুণ ব্যবহার গভীর বন্ধুত্ব ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়ার উপলব্ধ সত্য যে কত খাঁটি তা অসিত কর্মকারের এই গভীর এবং নিবিড় কর্মে ছত্রে ছত্রে প্রতিফলিত। একেবারেই ত্রুটি নেই,এ কথা আমি বলব না। রাজনীতি, দল এই প্রসঙ্গগুলো এসেছে তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে নয়। সে যাই হোক, অসিত কর্মকার তাঁর যে সৃষ্টি আমাদের উপহার দিলেন তার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকব। ধন্যবাদ অসিত।
নীচে উদ্ধৃত অংশটা পড়ে কিরম যেন বইটার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। যত ভাল ভাল বিশেষণ দেওয়া হোক শেষপর্যন্ত পাঠক নারীচরিত্রেই এইগুলো পেলেন! মনুষ্যচরিত্রেই, এই লেখাটায় বর্ণিত চরিত্রেই সেসব দেখা যাচ্ছে।
এদিকে এই লেখাটা না বুলবুল না পড়াবই কোত্থাও দেখা যাচ্ছে না।
" বিশেষত নারীচরিত্রের রহস্য, সৌন্দর্য, সংকীর্ণতা এবং মহত্বের অসাধারণ উন্মোচন,"
হোসেন মিয়াঁ, কুবের, কপিলা , রাসু , গোপী , আমিনুদ্দী , ময়নাদ্বীপ , পদ্মানদীকে মনে পড়ল।
মার্কেজের আগে বোধ হয় মাণিক আমাদের মননে পঠনে অবস্হান করেন। সেই আলোচনাটা পেলে ভাল লাগতো।
একদম। বিশেষ করে হোসেন মিঞা , কুবের ও গোপী। এবং ময়নাদ্বীপ।