কেরল বিধানসভা ভোটে দুই তৃতীয়াংশ আসন জিতে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছে সিপিএম। অন্য দিকে তারাই পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ শতাংশেরও কম ভোট পেয়ে বিধানসভায় একটিও আসন জিততে পারেনি। সিপিএম সব মিলিয়ে প্রায় ২৮ লক্ষ ভোট পেয়েছে এবারের পশ্চিমবঙ্গের সপ্তদশ বিধানসভা ভোটে। সেটা কতটা কম? তৃণমূল কংগ্রেস শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেই ভোট পেয়েছে প্রায় ৩৫ লক্ষ। তৃণমূলের ভোট উত্তর ২৪ পরগনায় প্রায় ৩১ লক্ষ। এটা ঠিক, সিপিএম প্রার্থী দিয়েছিল ১৩৯ আসনে। তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছিল ২৯২টি আসনে। তবুও টানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা একটা দল মাত্র দশ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে ৪.৭ শতাংশ ভোট পাচ্ছে, সেটা বিস্ময়কর ঘটনা। যথেষ্ট ভাববারও বটে।
একদা বিহার, মহারাষ্ট্র সহ কয়েকটি রাজ্যে যথেষ্ট শক্তি থাকা সত্ত্বেও কমিউনিস্ট পার্টি গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছিল আইডেন্টিটি পলিটিক্সের জোয়ারে (এখন অবশ্য সিপিআই এম-এল ফের কিছুটা শক্তি সংগ্রহ করতে শুরু করেছে বিহারে)। স্বাধীনতার আগে মুম্বাইয়ে বি টি রণদিভে সহ অন্যান্য কমিউনিস্ট নেতাদের উদ্যোগে ‘গিরিন কামগর মজদুর ইউনিয়ন’ নামের যে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠেছিল সেটা সেই সময় ছিল এশিয়ার সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন। পরে আইডেন্টিটি পলিটিক্সের ধাক্কায় সেই সংগঠনও দুর্বল হয়ে যায়।
কেরলে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম আর পশ্চিমবঙ্গে ডাহা ফেল, সিপিএমের এই দশার পিছনে কারণ কী? বিশিষ্ট দলিত বুদ্ধিজীবী, লেখক কাঞ্চা ইলাইয়া শেপার্ড মনে করেন, ‘কাস্ট’-এর বাস্তবতাকে অস্বীকার এবং দশকের পর দশক ধরে উচ্চবর্ণের হাতে পার্টির ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার ফলেই পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের মুছে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কাস্ট-এর বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছে বলেই কেরলে সিপিএম দাপটের সঙ্গে টিকে আছে।
এই মত ঠিক না বেঠিক, সেকথা বলার জন্য এই প্রতিবেদন নয়। এই মত নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার কিনা, এই ভাবনার পিছনে যে যুক্তিগুলো কাঞ্চা ইলাইয়া শেপার্ড দিয়েছেন, তা আদৌ গ্রহণযোগ্য কি না, তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন আছে কি না, সেই প্রশ্নটাই এই লেখার বিষয়।
১৯৭৮ সালে যখন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিন্দেশ্বরীপ্রসাদ মণ্ডলের নেতৃত্বে গঠিত মণ্ডল কমিশন তৈরি হল, সেই সময় কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে সব রাজ্য সরকারের কাছে পশ্চাদপদ জাতি বা ওবিসি সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গে তখন সবে ক্ষমতায় এসেছে সিপিএম। মুখ্যমন্ত্রী পদে জ্যোতি বসু। সেই সময় বামফ্রন্ট সরকার বিনয় চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি এক সদস্যের কমিটি তৈরি করে দেয় বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। বিনয় চৌধুরী কমিটি মণ্ডল কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে কোনও ওবিসি বা পিছিয়ে থাকা বা পশ্চাদপদ জাতির অস্তিত্ব নেই। মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই বক্তব্য নথিবদ্ধ আছে।
সন্তোষ রাণা, কুমার রাণা লিখিত ‘পশ্চিমবঙ্গে দলিত ও আদিবাসী’ বইয়ে ব্যবহৃত একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে শুরু করা যাক।
সিপিএমের মুখপত্র গণশক্তি প্রকাশনী থেকে ‘ডায়াল’ নামে যে টেলিফোন ইনডেক্স প্রকাশিত হয়, সেখানে লেখক, শিল্পী ও সমালোচক শীর্ষক নামের তালিকায় প্রথম ১০০টি নামের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, অন্তত পক্ষে ৯০টি নাম উচ্চবর্ণ বাঙালির। ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্যদের। আবার কেউ যদি পশ্চিমবঙ্গের কোনও একটি গ্রামের একশো দিনের কাজের মাস্টার রোল দেখেন, সেখানে দেখা যাবে, একশো শতাংশই দলিত, ওবিসি বা অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণির মানুষ, আদিবাসী অথবা মুসলমানের নাম। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে রোজগারের জন্য কায়িক শ্রম যাঁরা করেন আর রোজগারের জন্য মানসিক শ্রম যাঁরা করেন, তাঁদের মধ্যে একটা বিভাজন আছে। সেই বিভাজনটা হল, উচ্চবর্ণ আর নিম্নবর্ণের বিভাজন।
আমাদের রাজ্যের শিক্ষিত, প্রগতিশীল ভদ্রলোকশ্রেণি যদিও বিশ্বাস করে, এই বাংলায় ওসব জাত-পাত, ওবিসি-ফোবিসি বা পশ্চাদপদ শ্রেণির মানুষের অস্তিত্ব নেই। শিক্ষিত ভদ্রলোক শ্রেণির মধ্যে যাঁরা মার্ক্সবাদী, তাঁরা মনে করতেন, এখনও করেন, কার্ল মার্ক্সের দেখানো পথেই, ইয়োরোপ বা অন্য অনেক দেশের মতো, নানা সামাজিক, অর্থনৈতিক স্তরের কৃষকের, ভূমিহীন কৃষকের সঙ্গে জোতদার, জমিদারের শ্রেণি-দ্বন্দ্ব বা শ্রমিকের সঙ্গে পুঁজির দ্বন্দ্বই ইতিহাসের চালিকা শক্তি। তাঁদের মতে শ্রেণি হিসেবে কাস্ট বা বর্ণ, ওবিসি ইত্যাদি প্রসঙ্গ এই রাজ্যে অপ্রাসঙ্গিক। বাংলায় এর অস্তিত্ব নেই। শ্রেণিদ্বন্দ্বই সমাজের মধ্যের মূল দ্বন্দ্ব, উচ্চবর্ণের সঙ্গে নিম্নবর্ণের যে দ্বন্দ্ব হাজার বছর ধরে সমাজ শাসন করে এসেছে, সেই দ্বন্দ্বকে গুরুত্ব দিতে নারাজ মার্ক্সবাদীরা।
বিনয় চৌধুরীর মণ্ডল কমিশনকে এই রাজ্যে পশ্চাদপদ শ্রেণি বা ওবিসি নেই চিঠি দিয়ে জানানোর প্রায় ২৩-২৪ বছর বাদে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওবিসি বা পশ্চাদপদ জাতির বা ওবিসিদের তালিকা তৈরি করতে শুরু করে। বলা যায় বাধ্য হয়ে এই কাজে হাত দেওয়া হয়। কারণ ততদিনে, অনেক রাজ্যেই ওবিসি এবং দলিতরা নির্বাচনে বড়ো ভূমিকা পালন করছে, তাঁদের নেতা-নেত্রীরাও বিভিন্ন রাজ্য-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। ওই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণও ঘোষণা করা হয়। মুসলিমদেরও একটা বড়ো অংশ এই তালিকাভুক্ত হন। ২০১০-১১ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত এলাকায় একটি সমীক্ষা হয় পশ্চাদপদ জাতির সংখ্যা ঠিক মতো জানতে। যতটুকু সমীক্ষা হয়েছিল তা থেকে তখন একটা ধারণা হয়েছিল, গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ৩৪ শতাংশ ওবিসি। যদিও এটা সরকারি তথ্য নয়।
এবার পশ্চিমবঙ্গের বাম রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষিতটা একবার দেখে নেওয়া যাক। ২০১৯-এ লোকসভায় সিপিএম একা লড়াই করেছিল। প্রায় সব আসনেই তাদের জমানত জব্দ হয়েছিল। এবং তারা যেখানে যতটুকু ভোট পেয়েছিল, বিধানসভা ধরে ধরে হিসেব করলে ২৯৪টির মধ্যে একটি বিধানসভা আসনেও সিপিএম এগিয়ে ছিল না। ফলে যাঁরা বলছেন সেকুলার ফ্রন্টকে নিয়ে সংযুক্ত মোর্চা গঠনের জন্যই আজ সিপিএমের আসন শূন্য হয়েছে, তাঁরা হাওয়ায় কথা বলছেন। এই রাজ্যে সিপিএম গভীর সঙ্কটে পড়েছে। সংযুক্ত মোর্চা গঠন করে, কিছু কমবয়সিকে সামনে এগিয়ে দিয়ে, প্রার্থী করে অঙ্কটা মেলানোর একটা চেষ্টা করেছিল আলিমুদ্দিন, কিন্তু সফল হয়নি।
‘দ্য নিউজ মিনিট’ ওয়েবসাইটে কাঞ্চা ইলাইয়া শেপার্ড লিখেছেন, ১৯৫৭ সালে কেরলের প্রথম বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সিপিএম নেতা ইলামকুলাম মানাক্কাল শঙ্করণ নামবুদরিপাদ- যাঁকে সবাই ই এম এস নামেই জানেন, তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণ মুখ্যমন্ত্রী। সন্দেহ নেই ইএমএস ছিলেন পণ্ডিত মানুষ। প্রথমবার আড়াই বছরের জন্য, পরেও আরেকবার প্রায় তিন বছরের জন্য কেরলের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। ব্রাহ্মণ মুখ্যমন্ত্রী দিয়ে কেরলের বামপন্থীদের যাত্রা শুরু হলেও, ক্রমে সেই রাজদণ্ড পৌঁছে যায়, শূদ্রদের মধ্যে যাঁদের অবস্থান উপরের দিকে, সেই নায়ারদের হাত ঘুরে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন অর্থাৎ ‘অস্পৃশ্য’ ইজাভা (ezhava) সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির হাতে। ইজাভা সম্প্রদায়, যারা অতি নিম্নবর্ণ, একদা অচ্ছুৎ ছিল, গাছ থেকে নারকেল পাড়া যাদের বংশানুক্রমিক পেশা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ই কে নায়নার ছিলেন নায়ার। পিনারাই বিজয়নের নাম না করে তাঁর ভোটপ্রচার নিয়ে কেরলের কংগ্রেস নেতা জাত তুলে খোঁটা দিয়ে এবারের ভোটের আগে বলেছিলেন, এই প্রথম একজন নারকেল-পাড়িয়ে হেলিকপ্টার চড়ল। বোঝা যায় ঘৃণা এখনও কতটা জমে রয়েছে মজ্জায় মজ্জায়।
জাত এবং রাজনীতি, বিষয়টি বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহলে, এই রাজ্যের বাম রাজনীতির চর্চায়, লেখালেখিতে, ভদ্রলোকি ভাবনায়, কখনই তেমন গুরুত্ব পায়নি। কোনও সম্মানজনক শব্দই বাংলায় নেই এই বিষয়ে। বলা হয় ‘জাত-পাতের রাজনীতি’। এই শব্দবন্ধকে অশিক্ষা, ছোটলোকের ব্যাপার, বিহার, উত্তরপ্রদেশের নিচু মানের রাজনীতির বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবেকানন্দের কথায় অবশ্য শূদ্র জাগরণের কথা এসেছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু সেখান থেকে আমরা কিছু গ্রহণ করিনি। দলিত লেখক কাঞ্চা ইলাইয়া শেপার্ডের মতে পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি প্রথম দিন থেকেই মূলত ভদ্রলোকেদের দখলে চলে যায়। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ব্রাহ্মণ, কায়স্থ এবং বৈদ্যদের মতো উচ্চ বর্ণের নেতারা। তাঁর মতে (নিশ্চয়ই এই মত একশো ভাগ ঠিক নয়, তবে অবজ্ঞা যে আছে তা খুব গোপন ব্যাপারও নয়) বাঙালি ভদ্রলোকদের চোখে শূদ্র বা নমঃশূদ্রদের (দলিত) পরিচয় ‘ছোটলোক’- যাঁদের পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টি, দু’একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে, কখনও নেতা হিসেবে সামনের সারিতে উঠে আসতে দেয়নি। কাঞ্চা ইলাইয়ার মতে, যদিও পশ্চিমবঙ্গের কৃষিজীবী এবং বিভিন্ন কায়িক শ্রমের পেশার মানুষদের যে সমাজ, তার গভীরে এই সব ভদ্রলোক কমিউনিস্টদের প্রায় কারও কোনই শিকড় নেই, কিন্তু পার্টির কর্তৃত্ব তাঁদেরই দখলে। উল্টোদিকে ভদ্রলোক বাঙালি পরিবারে এখনও ছোটলোক, চাষা, নাপিত, ডোম, চাঁড়াল এসব শব্দ গালাগাল হিসেবেই প্রচলিত।
কাঞ্চা ইলাইয়া শেপার্ড তাঁর লেখা নিবন্ধে বলছেন, বাংলার এই দলিতরা বহুদিন বামপন্থীদের সঙ্গে ছিলেন, কিন্তু এখন আর নেই। বাস্তব ঘটনা হল, তাঁদের মধ্যেই সংগঠন তৈরি করেছে এবং সংগঠন বাড়িয়ে চলেছে আরএসএস এবং বিজেপি। দলিত, ওবিসি-ই তাদের সব থেকে বড় শক্তি হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে। এই শক্তির কিছু অংশ তৃণমূলের সঙ্গে, বাকি বড়ো অংশ বিজেপির দিকে। তারা দীর্ঘদিন সিপিএমের সঙ্গে থেকেছে। কিন্তু এখন তারা প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে সিপিএমকে ত্যাগ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতার নাম করে ইলাইয়া বলেছেন, ওই নেতাও কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষনেতাদের মতো উচ্চবর্ণের নন, তাঁর সামাজিক অবস্থান অন্য রাজ্যের যাদবদের সমতুল্য। রাজ্যে ২৭ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা হলেও, মুসলিম নেতারাও সিপিএমের উপরের দিকে জায়গা পান না। বাস্তব ছবিটা হল এমন যে, সিপিএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট টানা ৩৪ বছর এই রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও, এই দীর্ঘ সময়ে রাজ্যে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ কমিশনার, ডিজি, কলকাতা পুরসভার মেয়র, কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কোনও মুসলিমকে দেখা যায়নি। উচ্চবর্ণ বাদে কোনও দলিত বা পশ্চাদপদ জাতির প্রতিনিধিকে এই সব পদে দেখা বিরলতম ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে। কাঞ্চা ইলাইয়া শেপার্ডের মত, সিপিএম নেতৃত্ব শূদ্র, দলিত, ওবিসি এবং মুসলিমদের কমিউনিস্টদের ধর্ম নিরপেক্ষতার কঠোর বাঁধনে বেঁধে রেখেছিল, এগোতে দেয়নি।
১৯৭৭ থেকে ২০০৬, বামফ্রন্টের পূর্ণমন্ত্রীর তালিকা ধরে সন্তোষ রাণা, কুমার রাণার বইয়ে দেখানো হয়েছে, জনসংখ্যার ২৩ শতাংশ দলিত হলেও, মন্ত্রিসভায় তাঁদের উপস্থিতি ১৯৭৭-এ শূন্য, ১৯৮২-তে ৪ শতাংশ, ১৯৮৭-তে ১৪ শতাংশ, ১৯৯১-এ ১০ শতাংশ, ১৯৯৬-এ ৯ শতাংশ, ২০০১-এ ১২ শতাংশ এবং ২০০৬-এ ১২ শতাংশ। মুসলিম জনসংখ্যা ২৫ শতাংশ হলেও, পূর্ণমন্ত্রীর পদ, বামফ্রন্ট আমলে তাঁরা পেয়েছেন, সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ ২০০১ সালের মন্ত্রিসভায়, আর সর্বনিম্ন ৪ শতাংশ ১৯৮২ তে। আদিবাসী পূর্ণমন্ত্রীর সংখ্যা, ১৯৭৭ থেকে ২০০৬, পাঁচ বছর অন্তর এই সময়ে গঠিত সাতটি মন্ত্রিসভার মধ্যে পাঁচটি মন্ত্রীসভায় ছিল শূন্য। বাকি দুটি মন্ত্রিসভায় একবার ৩ শতাংশ আরেকবার ৪ শতাংশ। আদিবাসী জনসংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ৫.৫ শতাংশ। আর এই যে পূর্ণমন্ত্রী হচ্ছেন দলিত, আদিবাসী, মুসলিমদের থেকে, তাঁদের খুব কম সময়ই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পদে দেখা গিয়েছে। ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বদ্যি এই তিন উচ্চবর্ণ ছাড়া অন্য কোনও বর্ণ থেকে পশ্চিমবঙ্গে এখনও কেউ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি। ২০০৬ পর্যন্ত একটি হিসেবে দেখা যাচ্ছে নাটক, সাহিত্য সহ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৭৭ জন পুরস্কার প্রাপক বাঙালির মধ্যে তিন জন দলিত। যদিও পশ্চিমবঙ্গে গড় যে শিক্ষার হার, নমঃশূদ্রদের মধ্যে শিক্ষার হার তার থেকে বেশি। এর কারণ উচ্চবর্ণের হাতে তৈরি স্কুলের পাঠ্যক্রমে বা শিক্ষিত মহলের আলোচনায় সে ভাবে না এলেও, অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই, হরিচাঁদ ঠাকুর এবং গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে, যাঁরা নিজেদের মতুয়া বলে পরিচয় দিয়েছিলেন, সেই নমঃশূদ্রদের মধ্যে একটা নবজাগরণ ঘটে গিয়েছিল বহু বছর আগেই। হরিচাঁদ ঠাকুরের (১৮১২-১৮৮৭) শিক্ষা ছিল, ‘হাতে কাম, মুখে নাম’। অর্থাৎ কাজ করো, শ্রম করো, মুখে হরিনাম করো, ভগবানের কাছে পৌঁছানোর জন্য কোনও ব্রাহ্মণের সাহায্যের প্রয়োজন হবে না। হরিচাঁদ ঠাকুরের ১২টি নির্দেশের মধ্যে কয়েকটি হল, কারও প্রতি বৈষম্য করো না, সন্ন্যাস অবলম্বনের কোনও প্রয়োজন নেই, দীক্ষা নিও না, কোনও গুরুর প্রয়োজন নেই, তীর্থস্থানে যাওয়ার দরকার নেই, অপরের দুর্দশা দূর করার চেষ্টা করবে, সব জীবের প্রতি সদয় হও ইত্যাদি।
হরিচাঁদ ঠাকুরের পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর এই আন্দোলনকে যুক্ত করেছিলেন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের সঙ্গে। গুরুচাঁদ ঠাকুরের মানবতাবাদী আন্দোলনের ফলে চণ্ডাল নামে পরিচিত জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ তাঁর শিষ্যত্ব স্বীকার করেন, তাঁদের নতুন পরিচয় হয় নমঃশূদ্র হিসেবে। ১৯১১ সালে জনগণনায় যাঁদের সংখ্যা ১৮ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। সব মিলিয়ে ১৮১২টি স্কুল খুলেছিলেন তিনি। তাঁর বাণী ছিল, ‘খাও বা না-খাও তাতে কোনও দুঃখ নাই, ছেলেপিলেয় শিক্ষা দাও, এই আমি চাই’। তাঁর নির্দেশ ছিল, শিক্ষা বিস্তার করো, জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা, অস্পৃশ্যতা দূর করো, স্ত্রী-শিক্ষা এবং নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করো। এটাই মতুয়া আন্দোলন। নমঃশূদ্র ছাড়াও নিম্নবর্ণের বহু মানুষ, যেমন কাপালি, পৌণ্ড্র, গোয়ালা, মালো, মুচিরা এই মতুয়া আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সন্তোষ রাণা, কুমার রাণা তাঁদের বইয়ে লিখেছেন, ১৯০৭ সালে গুরুচাঁদ ঠাকুর বাংলার গভর্নরের কাছে নমঃশূদ্র এবং অন্যান্য কৃষকদের প্রতিনিধি হিসেবে একটি দাবিপত্র পেশ করেছিলেন। গুরুচাঁদ ঠাকুর বলতেন, ‘যার দল নাই তার বল নাই’। নমঃশূদ্ররা দেশভাগ চাননি। তাই তাঁদের অনেকেই দেশভাগের বহু পরে ওপার থেকে এপারে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বাংলা থেকে প্রার্থী করে, কংগ্রেসের টিকিটে, নমঃশূদ্র নেতা যোগেন মণ্ডলের উদ্যোগে বাবা সাহেব আম্বেদকারকে যে জিতিয়ে সংবিধান সভায় পাঠানো গিয়েছিল, তার পিছনে মতুয়াদের সমর্থন একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। এই কাজটির জন্য গণতান্ত্রিক বাঙালির নমঃশূদ্র সমাজের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
ফেরা যাক কেরালায়। কাঞ্চা ইলাইয়ার মতে, অন্তত রাজনীতির ক্ষেত্রে, কেরালায় হয়েছে ঠিক উল্টোটা। সেখানে ব্রাহ্মণ এবং শূদ্রদের মধ্যে যাঁদের উপরের দিকে অবস্থান সেই নায়ারদের প্রবল বাধা থাকা সত্ত্বেও সফল হয়নি পশ্চাদপদদের থেকে উঠে আসা নেতৃত্বকে রুখে দিতে। কে আর গৌরী আম্মা, ভি এস অচ্যুতানন্দন, পিনারাই বিজয়নরা ধীরে ধীরে উচ্চবর্ণের নেতৃত্বকে (ব্রাহ্মণ এবং নায়ার) অপসারিত করে নিম্ন বর্ণের নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করেছেন কেরালার মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টিতে।
ইলাইয়া লিখছেন, সিপিএমের পলিটব্যুরোতে পশ্চিমবঙ্গের যে প্রতিনিধিরা আছেন তাঁদের ৯৯ শতাংশই উচ্চবর্ণের। পশ্চিমবঙ্গের সিপিএমের রাজ্য কমিটি, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে দলিত, ওবিসি এবং মুসলিম নেতাদের আতস কাচ দিয়ে খুঁজতে হয়। বরাবরই তা ব্রাহ্মণ, কায়স্থ এবং বৈদ্যদের দখলে বলে মন্তব্য করেছেন এই দলিত লেখক। তাঁর ধারণা দলিতদের বাম নেতৃত্বের উঁচু পদে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে সিপিএমের পলিটব্যুরো একটা বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু কেরালায় ওবিসি এবং দলিত নেতারা কাস্ট-বিরোধী ভদ্রলোক নেতৃত্বকে সরিয়ে দিয়ে নিজেদের নেতৃত্বকে দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। তার ফলেই কেরালায় সিপিএম তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে, আর বাংলায় তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন দলিত, ওবিসি, মুসলিম, আদিবাসী মানুষ। আদর্শের বিচারে নিম্নবর্গের মানুষের বামপন্থীদের সঙ্গেই থাকার কথা ছিল। কিন্তু ছবিটা আমাদের রাজ্যে বদলে যাচ্ছে দ্রুত। তাহলে কি বাংলায় উচ্চবর্ণের দখলে চলে যাওয়া কমিউনিস্ট পার্টি নিঃশব্দে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ‘চণ্ডাল-ওবিসি-মুসলমান-আদিবাসী’-দের বিরুদ্ধে?
চমৎকার লিখেছ। শুধু এক প্যারা এই দলিত, ওবিসি ও আদিবাসীদের মধ্যে বিজেপির উত্থান আর ভোট শতাংশটি দিয়ে দিতে পারতে।
কাঞ্চা ইলাইয়াহকে লাখো সেলাম।
Article e likheche Ezhava untouchable caste. I guess they were an warrior caste with a good amount of land ownership. If they were untouchable, they would have been classified as SC and not OBC.
কি একটা বালছেঁড়া লেখা! ওবিসি কাদের বলব তার সংজ্ঞাটাই লেখেনি।
বেশ তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। মতুয়াদের বিষয়ে এতটা জানা ছিল না। সমৃদ্ধ হলাম।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা। তবে বাংলায় দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করা ব্রাহ্মণ্যবাদের রাজনীতি যে তথাকথিত 'নবজাগরণ'-এর বিষময় কুফল, সেই দিকটি তুলে ধরলে ভালো লাগত। লেখক ফলের কথা যথাযথ বলেছেন, কারণটাও যদি সেই সঙ্গে মৃদু ছঁয়ে যেতেন।
একটি ছোট্ট সংশোধনী - গুরুচাঁদ ঠাকুর ১৮১২টি নয় ১৮৮২টি স্কুল খুলেছিলেন। প্রেসিডেন্সি ডিভিশনে ৫৬৯টি, বর্ধমান ডিভিশনে আদিবাসীদের জন্য ২৪৬টি এবং ঢাকা ডিভিশনে ১০৬৭টি ।
অস্পৃশ্য বোধহয় না। কারণ লিস্টিতে ওরা ওবিসি বা আদার ব্যাকওয়ার্ড কাস্ট।
বাঙালী ব্রাহ্মণ, শুধু বাংলার নয়, সমস্ত ভারতেরই গৌরবের স্থল। বিদ্যা, বুদ্ধি, শাস্ত্রজ্ঞানে তাঁহার কোন-জাতীয় ব্রাহ্মণ হইতেই ন্যূন নহেন, বরং তত্ত্ব বুদ্ধি ও বিচারশক্তিতে তাঁহাদের স্থান সর্বাপেক্ষা উচ্চ। কিন্তু আমরা এখন সে সকল গৌরবের কথা এখানে বলিব না। তাঁহাদিগকে বাংলার গৌরব বলিয়াছি, বাংলায় তাহারা কি করিয়াছেন তাহাই দেখাইব এবং সেই জন্য তাঁহাদের গৌরব করিব।
এই যে এত বড় একটা অনার্য দেশ, এখানে বৌদ্ধ, জৈন এবং অন্যান্য অব্রাহ্মণ ধর্মের এত প্রাদুর্ভাব ছিল, অথচ এখন এ দেশে জৈন বৌদ্ধ দেখিতেও পাওয়া যায় না, তাহাদের কীর্তিকলাপ পর্যন্ত লোকে একেবারে ভুলিয়া গিয়াছে,–চারিদিকের লোকে জানে বাংলা হিন্দুধর্মের দেশ–এটা কে করিল ? কাহার যন্ত্রে, কাহার দূরদর্শিতায়, কাহার নীতিজ্ঞানে এই দেশটা আর্য আচারে, আর্য বিদ্যায়, আর্য ধর্মে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে ? এ প্রশ্নের ত এক উত্তর। বাঙালী ব্রাহ্মণরাই এই কাজটি করিয়াছেন। বাংলায় রাজশক্তি ত তাঁহাদের অনুকূল ছিল না, বরং অনেক স্থানে অনেক সময় ঘোর প্রতিকূলই ছিল। এই রাজশক্তির বিরুদ্ধে অনবরত সংগ্রাম করিয়া দেশটাকে হিন্দু করিয়া তুলা একটা প্রকাণ্ড ব্যাপার, বঙ্গের ব্রাহ্মণের তাহা সুসিদ্ধ করিয়াছেন, আর এমনি ভাবে সুসিদ্ধ করিয়াছেন যে, মুসলমান ঐতিহাসিকেরা জানেন না যে, তাঁহাদের আগমনের সময়েই এদেশে হিন্দু ছাড়া আরও একটা প্রবল ধর্ম ছিল।
উচ্চবর্ণের আধিক্য তো স্বাভাবিক। কারণ তাদের মধ্যেই লেখাপড়া ও জ্ঞান বেশী।
সবই সত্য। কিন্তু কেরালাতে যদি দলিত নেতৃত্ব উঠে আসতেই পারলেন, তবে বাংলাতে কেন পারলেন না? বাংলাতে এরা শাসকশ্রেণির সবচাইতে প্রবল দল, তাও ব্রাহ্মণ্যবাদী বিজেপির দিকেই ঝুঁকছেন কেন? আর ইতি মধ্যে গোটা দেশে দেখা যাচ্ছে, দলিত আদিবাসি অবিসিদের দলগুলোকেই সহজে বিজেপি সঙ্গে নিয়ে নিচ্ছে আর এদের নেতৃত্বকে নিজেদের শরিক করে ফেলছে। এটা হচ্ছে গোটা দেশেই। এর কোনো ব্যাখ্যা কাঞ্চা ইল্লাইয়ার লেখাতেও নেই, বর্তমান লেখাতেও নেই।
সবই সত্য। কিন্তু কেরালাতে যদি দলিত নেতৃত্ব উঠে আসতেই পারলেন, তবে বাংলাতে কেন পারলেন না? বাংলাতে এরা শাসকশ্রেণির সবচাইতে প্রবল দল, তাও ব্রাহ্মণ্যবাদী বিজেপির দিকেই ঝুঁকছেন কেন? আর ইতি মধ্যে গোটা দেশে দেখা যাচ্ছে, দলিত আদিবাসি অবিসিদের দলগুলোকেই সহজে বিজেপি সঙ্গে নিয়ে নিচ্ছে আর এদের নেতৃত্বকে নিজেদের শরিক করে ফেলছে। এটা হচ্ছে গোটা দেশেই। এর কোনো ব্যাখ্যা কাঞ্চা ইল্লাইয়ার লেখাতেও নেই, বর্তমান লেখাতেও নেই।
কাঞ্চা ইল্লাইয়া শেপার্ডদের মতো পণ্ডিতদের সমস্যা হল, এঁরা সব কিছুই বর্ণবাদের চশমা পরে দেখেন।
১. "‘কাস্ট’-এর বাস্তবতাকে অস্বীকার এবং দশকের পর দশক ধরে উচ্চবর্ণের হাতে পার্টির ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার ফলেই পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের মুছে যাওয়ার অন্যতম কারণ"
তাই নাকি? সত্যি, কাঞ্চা ক-ত জানেন, ক-ত বোঝেন। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম এগুলো কোনও ব্যাপারই নয় তাহলে? একটানা ক্ষমতায় থাকার কুফল - সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঔদ্ধত্য, স্বজনপোষণ - এগুলো কিছুই নয়। শুধুমাত্র উচ্চবর্ণের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখাই অন্যতম কারণ!
আচ্ছা, তাহলে ২০০৬ বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ২৩৫টি আসন পেল কিভাবে? তখন উচ্চবর্ণের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল না?
এর ঠিক আগেই পার্টির দোর্দণ্ডপ্রতাপ সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত অনিল বিশ্বাস - তিনি কি ব্রাহ্মণ, কায়স্থ না বৈদ্য?
২০১১তে মুখ্যমন্ত্রী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কোন নিম্নবর্ণের প্রতিনিধি?
২. "সন্দেহ নেই ইএমএস ছিলেন পণ্ডিত মানুষ"
পাণ্ডিত্যের জোরেই কি কেরলের তথা ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন ইএমএস? নাকি ব্রাহ্মণ জাতিপরিচয়ের সুবিধা নিয়েছিলেন তিনি? কোনটা?
৩. "বিবেকানন্দের কথায় অবশ্য শূদ্র জাগরণের কথা এসেছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু সেখান থেকে আমরা কিছু গ্রহণ করিনি।"
স্বামী বিবেকানন্দের এই জিনিসগুলো গ্রহণ করবেন না?
‘ব্রাহ্মণদের মধ্যেই অধিকতর মনুষ্যত্ব-বোধসম্পন্ন মানুষের জন্ম হয়’ - স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৬।
‘গত সংখ্যায় ক্ষত্রিয়দের খুব বাড়ানো হয়েছে, পরের সংখ্যায় ব্রাহ্মণদের খুব প্রশংসা কর, তার পরের সংখ্যায় বৈশ্যদের’- পত্রাবলী, উদ্বোধন, পত্র নং ২৩৯, পৃঃ ৩৯১-৯২।
আর, এঝাভা সম্প্রদায়, যেমন অন্যরাও লিখেছেন, অচ্ছুত বা তফসিলি সম্প্রদায়ের নন।
এমন অর্থহীন, স্ববিরোধী, বাস্তবতাবিবর্জিত লেখা এর চেয়ে বেশি আলোচনার যোগ্য নয়।
কিন্তু tmc তেও তো উচ্চবর্ণের রমরমা। ফিরহাদ হাকিম ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে কেউ আছেন কি? tmc মন্ত্রীসভা ও বিধায়কদের জাতিগত, ধর্মগত বিশ্লেষণ পাশাপাশি রাখলে, এই তত্বের গুরুত্ব পরিষ্কার হবে।
বাস্তুনিষ্ট বিশ্লেষণ | ধন্যবাদ |
কাঞ্চা কি হান্নান মোল্লার নাম শোনেন নি ? অবাক কাণ্ড ! সারা ভারতের সব লোকই (যারা আগে জানতো না ) ওনার নাম শুনেছে গত ছয় মাসে ।
বাংলা থেকে ছ জন আছেন পলিটব্যুরো তে, তো তার মধ্যে দু জন সেলিম এবং হান্নান মোল্লা। মুসলিম বর্গ কিন্তু সব চেয়ে পিছিয়ে পড়া অংশের মধ্যে পড়ে। 99 % কোন অঙ্কে হচ্ছে কেউ পারলে একটু বুঝাবেন।
যুক্তি বড়ই দুর্বল । দেশের প্রধানমন্ত্রী তেলি মানে ও বি সি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেনিয়া মানে তেমন কুলীন নয়, রাষ্ট্রপতি শূদ্রদের মধ্যেও অচ্ছুত জাতের প্রতিনিধি । তবে কী ধরে নেব বিজেপি অত্যন্ত জাতপাত বিরোধী পার্টি? কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের পদবী দেখে তাদের মধ্যে জাতপাত খোঁজাটা ভারী বোকা বোকা ব্যাপার । বাম আমলে যে ভূমি সংস্কার হয়েছে তাতে যারা উপকৃত হয়েছেন তার মধ্যে কত শতাংশ মুসলিম আর নীচুজাতের মানুষ সেই তথ্যটা দিলেন না । আমি খুব পরিষ্কার করে জানতে চাই পশ্চিমবঙ্গে জাতপাতের নামে গত 25 বছর ধরে কটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে । কটি সরকারি নিয়োগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ ভেঙে কাজ হয়েছে । বরং বলতে পারি হালে সবুজ সাথী প্রকল্পে অনগ্রসর শ্রেণী উন্নয়ন দপ্তরের টাকায় সবাইকে সাইকেল দেওয়া হয়েছে । সেই নিয়ে নীচুজাতের মসিহারা কোনো উচ্চবাচ্চা করেন নি । ক্লাস ইকুয়াল টু কাস্ট-এর লাইন বাংলায় চলে না । অবশ্য জোর করে চালালে বাতিল পয়সাও চলে ।
আপনার লেখা নিয়ে আমি কোনও বিতর্ক করার উদ্দেশ্যে এই মন্তব্য লিখছি না... আমার প্রশ্ন ভারতে নানান জাতি, নানান ধর্ম, নানান বর্ণের মানুষের বসবাস, বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয়, অথচ দেখুন এখানে আমরা চৈতন্য, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র, রামমোহন বিবেকানন্দ প্রমুখ অনেককেই দেখেছি ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে, আমার মনে হয় বামপন্থীদের বিশেষ করে ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা এই মানুষগুলোর চর্চা জারি না রাখতে চাাওয়ার কারণেেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারল না।... ফলতঃ এভাবেই পরাভব ঘটল বাামফ্রন্ট-এর... শুধু ভোটে নয় গণ- আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও....
কাঞ্চারা হলেন জাতখোর বুদ্ধিজীবী।
নাম - কাঞ্চা
এই লেখার জন্য পাওনা - কানচাপাটি