(এই লেখা ফ্যাসিস্তের বিরুদ্ধে বাংলা মঞ্চের তরফ থেকে নয়, ব্যক্তিগত অবস্থান ও উপলব্ধিজনিত। এ লেখার কোনও পরিসংখ্যান বা বিশ্লেষণের ত্রুটির জন্য মঞ্চের কোনও দায় নেই।)
এই লেখায় যে উদ্ধৃতি পূর্বপক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, তা গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গুরুচণ্ডা৯-তে প্রকাশিত বিষাণ বসুর ‘দিমিত্রভ পড়িনি, তবু…’ নিবন্ধ থেকে নেওয়া।
‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগান চ্যাম্পিয়ন করার জন্য একটি মঞ্চ গঠিত হয়েছিল। তার প্রথম সভা হয়েছিল মহাজাতি সদনে। সেই সভায় এই স্লোগানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা হয়েছিল, যেসব প্রচণ্ড প্রতর্ক এখন আনীত হচ্ছে, সেসবই মূলত, সে দিনের প্রকাশ্য সভাতেই আলোচিত হয়েছিল। সেদিনের প্রথম বক্তা অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ই এই স্লোগানের সীমাবদ্ধতার বিষয়টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
মঞ্চের তরফ থেকে স্থির হয়েছিল, মঞ্চ যে বৃহত্তর প্রেক্ষিত থেকে বিষয়টি দেখছে, তার কারণেই, এই স্লোগানকে না-এ সীমাবদ্ধ রাখা হবে। এই মঞ্চে বিভিন্ন মত ছিল, যার মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বামেদের ভোট দেওয়ার পক্ষ ছিল, ছিলেন সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার পক্ষাবলম্বীও। অন্যান্য মতও ছিল, যা সেই মতের মানুষজন নিজেদের মত করে প্রকাশ্যে বলেছেন, লিখেছেন। সে ব্যাপারে মঞ্চের তরফ থেকে কোনও আপত্তি করা হয়নি। কারণ, মঞ্চ, প্রথমত, দ্বিতীয়ত, তৃতীয়ত এবং শেষ পর্যন্ত মঞ্চই - পার্টি নয়।
মঞ্চের সমালোচনায় যাঁরা মুখর হয়েছেন, তাঁদের অন্যতম যুক্তি ছিল এই স্লোগানের সীমাবদ্ধতা। সে প্রসঙ্গ যাবার আগে, মঞ্চ ভোট দেবার প্রসঙ্গে কী বলেছে, তা একবার স্পষ্ট জেনে নেওয়া যাক। মঞ্চের বক্তব্য ছিল সরল ও স্পষ্ট। এক লাইনে বলে ফেলার মতই। বিজেপির বিরুদ্ধে যে যেখানে শক্তিশালী, তাঁকে ভোট দিন, বা ভোট দিন আপনার পছন্দের প্রার্থীকে। দুটি আলাদা রাস্তা। পছন্দের প্রার্থী, সর্বদা শক্তিশালী না-ও হতে পারেন। সেটুকু একজন ভোটারের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা, অ্যাসপিরেশনের বিষয়। অ্যাসপিরেশনের বিষয় মঞ্চের শরিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরও। এই মঞ্চের শরিক ছিল সিপিআই এম এল লিবারেশন, সিপিআই এম এল রেড স্টার, এমকেপির মত সংগঠনও, যারা এই নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছিল। তাদের নিজস্ব রাজনীতি, সংগঠন- এসবের কারণেই তারা নিশ্চিত পরাজয় জেনেও সেইসব কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছিল। মঞ্চের তরফ থেকে কোনও নির্দিষ্ট দলকে ভোট দিতে বলা হয়নি।
“আপনার ডেলিবারেট ইচ্ছে ছাড়াই যদি ঠারেঠোরে রাজ্যের বর্তমান শাসকদলকেই ভোট দেওয়ার বার্তা পৌঁছায়, তাহলে সেই ভুল বোঝার দায় শুধুই পাঠক-শ্রোতার 'পরে চাপাতে চাইলে চলবে না - বার্তা যখন আপনি দিচ্ছেন, সেই বার্তা থেকে কে কী সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন, সেটুকুর খেয়াল রাখার দায়িত্ব আপনারই নেওয়া কর্তব্য। ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে যদি ভাসা-ভাসা বার্তা দেন, তাহলে আপনার দায়বদ্ধতা কিম্বা সেই বার্তার সততা নিয়েই সংশয় থাকে।”
সততা বা দায়বদ্ধতা একটু বড় ও অ্যাবস্ট্রাক্ট শব্দ। তা কিছুটা পক্ষ-গোষ্ঠী-অবস্থান-পরিপ্রেক্ষিত নির্ভর। এর বাইরে গিয়ে, এই শব্দগুলিকে ব্রহ্মের মর্যাদা দিলে, নির্বাচনের মত বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব হয় না। মনে রাখতে হবে, নির্বাচন- দেশের যে কোনও প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনই, রণকৌশল হিসেবেই সরকারি বামেরা ধরে নিয়ে থাকেন। তেমন রণকৌশল অবলম্বনের ক্ষেত্রে ব্রহ্মপ্রতিম সততা বা দায়বদ্ধতা প্রত্যাশা করা বা অনুশীলন করা সম্ভব হবে না। উপরোক্ত উদ্ধৃতাংশে বরং আরেকটি দিকে চোখ রাখা যাক - “বার্তা যখন আপনি দিচ্ছেন, সেই বার্তা থেকে কে কী সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন, সেটুকুর খেয়াল রাখার দায়িত্ব আপনারই নেওয়া কর্তব্য।”
এ নেহাৎই নিজেকে বা নিজেদের অগ্রণী অংশের প্রতিনিধি হিসেবে কল্পনা করার ভাবনা, যাঁরা ভোটারকে, নিজেদের চেয়ে একটু কমা মনে করেন, এবং ভোটের ফল মনোমত না হলে, ভোটারকে গাল পাড়েন। এই মঞ্চ যেহেতু কোনও দল নয়, মঞ্চ মাত্র, তারা সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন থেকেছে, এবং তা মঙ্গলজনকও হয়েছে। তারা যে নিজেদের কোনও দলের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়নি, এইটুকুই তাদের মঞ্চ হিসেবে একত্রিত রেখেছে, যদি কোনও সাফল্য বা ব্যর্থতা এই নির্বাচনে তাদের ঘটে থাকে, তার কৃতিত্ব বা অকৃতিত্ব বর্তায় মঞ্চের নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্তে।
উপরোক্ত উদ্ধৃতিতে ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের প্রসঙ্গ এসেছে। বাস্তবিক, পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে এই নির্বাচন ঐতিহাসিক ছিল। এই কলমচির ধারণানুসারে, ২০১১ সালে, রাজ্যের পালাবদলের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই নির্বাচন। কোন পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে একবার সামান্য উল্লেখ করে নেওয়া যাক। ২০১৬ সালের নির্বাচনে, সিপিএম তথা বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। সে জোটের একটি ছবি জনমানসে এখনও বহাল। সূর্যকান্ত মিশ্রকে আলিঙ্গন করেছেন মানস ভুঁইঞা। মানস - সূর্যালিঙ্গনকারী মানস এখন তৃণমূল কংগ্রেসে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে নিজের কেন্দ্র থেকে জয়লাভের পর, সে বছরই তিনি দলত্যাগ করেন। সে বছর নির্বাচনে কংগ্রেস ৪৪টি ও সিপিএম ২৬, সিপিআই ১, ফরোয়ার্ড ব্লক ২ ও আরএসপি ৩টি আসন পেয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বামেরা সাফ হয়ে যায়। বিভিন্ন বাম দুর্গ বলে পরিচিত এলাকা বিজেপির দখলে চলে গিয়েছিল, সে তথ্য, পরিসংখ্যানসহ বহু আলোচিত। ২০১৯ পরবর্তী দু বছরে কংগ্রেস বা সিপিএম কোনও দারুণ রাজনৈতিক ভূমিকা পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে রেখেছে, তেমন উদাহরণ নেইই। জোট হিসেবে তো নয়ই, এমনকী একক দল হিসেবেও, মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্য কোনও আন্দোলনমুখী ভূমিকা তারা রাখেনি। যদিও উক্ত নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে “এই নির্বাচনে তৃতীয় একটি পক্ষ থাকছে, অতীত অগ্রাহ্য করে বিচার করতে পারলে, আমজনতার ইস্যু নিয়ে আপাতত তাঁরাই একমাত্র সরব।”
এই নিবন্ধ নিশ্চিতভাবেই বামফ্রন্টের ছাত্রযুব সংগঠনের নবান্ন অভিযানের পরবর্তীতে লিখিত, ফলে তার প্রভাব নিশ্চিতভাবেই নিবন্ধে পড়েছে। বাস্তবতার বিচার যদি করতে হয়, অন্তত চোখে পড়ার মত রাজনৈতিক কর্মসূচি, গত কয়েক বছরের মধ্যে এই একটি ছাড়া বিরল। নিঃসন্দেহে এ প্রসঙ্গে শ্রমজীবী ক্যান্টিনের প্রসঙ্গ উল্লিখিত হবে, তবে তার সরাসরি রাজনৈতিক অভিঘাত কতদূর সে প্রসঙ্গ পৃথক আলোচনার দাবি রাখে। কিন্তু এই বাক্যবন্ধে অতীত অগ্রাহ্য করার একটা দাবি তোলা হয়েছে। সম্ভবত, তা কিছুটা হলেও লেখার টানে লিখে ফেলা। কারণ, কোনও সময়েই কোনও রাজনৈতিক লেখায় অতীত অগ্রাহ্য করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি তোলা যেতে পারে না, তা হলে তা রাজনৈতিক কোনও সিদ্ধান্তই হতে পারে না। যে কোনও রাজনৈতিক, বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তও, অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নেওয়া হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গেই রাজনৈতিক ভাষ্যে এমপিরিসিজম বা অভিজ্ঞতাবাদ নামক পরিভাষা চালু আছে।
অতীত অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ নিয়ে দীর্ঘায়ত যাত্রা করা যেতে পারে, যা বহু আলোচিত। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ, এলসি-র দাদাগিরি, পাড়ার ক্লাবের রাজনীতিকরণের সূচনা, এসবই শুয়োরের মাংস হয়ে গিয়েছে। বরং ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগানের প্রেক্ষিতেই থাকা যাক। ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগান যখন কিছুটা হলেও পরিচিত হতে শুরু করে, সে সময়েই এক সান্ধ্য কর্মসূচিতে সোশাল মিডিয়ায় নো ভোট টু পোটেনশিয়াল বিজেপি স্লোগান নামিয়ে ফেলা হয়, মোটামুটি সংগঠিত ভাবে। তার একটা নিশ্চিত কারণ ছিল। নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগদানে হিড়িক পড়ে গিয়েছিল, যা বাংলার রাজনীতিতে অভূতপূর্ব। শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপি যোগ সর্বাপেক্ষা বেশি আলোচিত হলেও, সরলা মুর্মুর ঘটনাও কম সাড়া ফেলেনি। হবিবপুর কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হবার সেই প্রার্থী সরলা মুর্মু দল ছাড়েন, এবং বিজেপিতে যোগ দেন। হবিবপুরে বিজেপি জিতেওছে। ফলে সরলা মুর্মু যে বলেছিলেন, তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ালে ভোট দেবার লোক থাকবে না, সে কথা ততটা সত্যি না হলেও (এই কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ৭৩৯৫৬ ভোট পেয়েছেন, বিজেপি প্রার্থী ৯২৯৮২ ভোট পেয়েছেন), তাঁর শঙ্কা যথাযথ ছিল।
হবিবপুর, প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সিপিএমের হাতেই ছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন খগেন মুর্মু। ২০০৬ থেকে পর পর তিন বারের এই সিপিএম বিধায়ক, ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেন, এবং লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাংসদ হন। ২০২১ সালের নির্বাচনে, এই বিধানসভা আসনে বিজেপি জয়লাভ করে।
এরকম উদাহরণ কম নেই। রাজারহাট নিউটাউনের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ের কথাই ধরা যেতে পারে। তিনি ছিলেন রাজারহাট গোপালপুর মিউনিসিপ্যালিটির সিপিএম চেয়ারম্যান, ২০১৫ সালে যোগ দেন তৃণমূলে। আরামবাগের একদা ফরোয়ার্ড ব্লক এমএলএ বিশ্বনাথ কারককেও ধরা যেতে পারে। কিন্তু হেমতাবাদ বিধানসভার উল্লেখ একটু বিস্তারিত ভাবেই করা উচিত।
উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ বিধানসভা আসন ২০১৬ সালের নির্বাচনে জিতেছিল সিপিএম। বিধায়ক হয়েছিলেন দেবেন্দ্রনাথ রায়। ২০১৯ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তাঁর গলায় ফাঁস দেওয়া মৃতদেহ পাওয়া যায়। অভিযোগ ওঠে, শাসকদলের গুন্ডাবাহিনী তাঁকে খুন করেছে। এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবিতে আদালতের শরণাপন্ন হন দেবেন রায়ের স্ত্রী চন্দ্রিমা। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে চন্দ্রিমা রায়কেই প্রার্থী করেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি।
হেমতাবাদ আসনে তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছে। প্রাপ্ত ভোট এরকম, তৃণমূল কংগ্রেস- ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৩৪৬ (৫২.১৪ শতাংশ), বিজেপি - ৮৮ হাজার ৪৮১ (৩৯.৯৫ শতাংশ), আর সিপিএম - ৯২৯৭ (৪.২৩ শতাংশ)। ২০১৬ সালে এই বিধানসভায় দেবেন রায়, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রসে প্রার্থীকে ১৩ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন, সিপিএমের ভোট শেয়ার ছিল ৪১ শতাংশ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ থেকে জয়ী হন বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী। হেমতাবাদ বিধানসভা থেকে তিনি ৮৫ হাজার ৭৩৮ ভোট পেয়েছিলেন। তৃণমূলের কানাইলাল আগরওয়াল ৭৯ হাজার ৫৬২ ভোট পেয়েছিলেন। আর এই রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সিপিএমের মহম্মদ সেলিম। ২০১৬ সালের জেতা বিধানসভা কেন্দ্রে এই শীর্ষ নেতা মোট ১৯২৪৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন।
এই তালিকা, পরিসংখ্যান সহযোগে দীর্ঘায়িত করা যায়। কিন্তু ঘটনা হল, যতই দীর্ঘ হোক, তা কোনও সময়েই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়ার মত দীর্ঘ হবে না। আবার সম্ভাব্য বিজেপি প্রার্থীকে ভোট না দিতে বললে, সে ভোট নিশ্চিতভাবে বামের ঘরে গিয়েই পড়া উচিত, এ কথাও যে হলফ করে বলা চলে, পরিসংখ্যান তেমনও দেখায় না।
বামের ভোট রামে যেতে পারে কিনা, সে নিয়ে বিস্তর চর্চা চলতে পারে, ভোটার কারও পৈতৃক সম্পত্তি কিনা, সে নিয়েও কথা হতে পারে। সে সব কথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পক্ষে জরুরিও। তবে শুকনো পরিসংখ্যান মাঝে মাঝে কিছু ইঙ্গিত দেয়। ঐশী ঘোষের বিধানসভা কেন্দ্র জামুড়িয়ার হিসেব যদি দেখা যায়, এখানে ২০২১ সালে প্রথম তৃণমূল কংগ্রেস জিতল। ১৯৭৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই আসন ছিল সিপিএমের দখলে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয় জেতেন। জামুড়িয়া বিধানসভা কেন্দ্রে তিনি ৭৬ হাজারের বেশি ভোট পান, তৃণমূল কংগ্রেসের মুনমুন সেন ৫৭ হাজার ৯৯৯ ভোট পান, আর সিপিএমের গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি পান ১৫৫৪৯ ভোট।
আমাদের উল্লিখিত নিবন্ধে “ভাসা-ভাসা বার্তা”র প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়েছে। লেখক অনতিতরুণ প্রাজ্ঞ ও রাজনীতি সচেতন। ফলে ধরে নেওয়াই যায়, তিনি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কেও অবহিত। ফলে তিনি জেনে থাকবেন, গত শতকের শেষের দিকের লোকসভা নির্বাচনে, অপ্রতিদ্বন্দ্বী, প্রখর ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে যেখানে শক্তিশালী, সেরকম দলগুলিকে ভোট দেবার রাজনৈতিক লাইন গৃহীত হয়েছিল। তেমনই নির্বাচনের সুবাদে, জ্যোতি বসু-বাজপেয়ীর সেই ছবি, ও বিজেপির ২ থেকে ৮৬ হয়ে যাবার পরিসংখ্যান, দুইই ভারতীয় রাজনীতিতে অমর হয়ে থাকবে। মঞ্চ অন্তত তেমন কোনও ছবির দায় থেকে মুক্ত থেকেছে।
নেতি, একটি অবস্থান। যা দার্শনিকও বটে। কখনও কখনও তা অতি জরুরি অবস্থান, ও রাজনৈতিক ভাবে যথাযথ। কেবলমাত্র বিরোধিতার মধ্যে সুপ্ত থাকে অসংখ্য ইতিবাচক সম্ভাবনার ইঙ্গিত। সেই সম্ভাবনাগুলিকে ছুঁয়ে থাকার জন্য রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। অতিক্রম করতে হয় ক্ষুদ্রতর প্রেক্ষিতের সীমানা। বাস্তবত, যা সাম্প্রতিক দলীয় রাজনীতিতে, দুর্ভাগ্যজনক হলেও অমিল।
বিষাণ বসুর লেখার লিংক পাওয়া যাবে?
এ রকম মঞ্চ আরও হোক
একটা কমিটেড দলের ভোট ট্রান্সফার এমনি এমনি হয়নি ..... ভোট ট্রান্সফারও সত্য তার পিছনের কারনও সত্য ..... ভোটার কারও বাবার সম্পত্তি নয় এটা একটা উদ্দেশ্যপ্রণদিত মিথ্যা.....